Translate

শনিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

বিদায়ী তাওয়াফের বিধান

বিদায়ী তাওয়াফের বিধানাবলী
হজ শেষে মক্কা শরীফ থেকে যখন বিদায় নেয়ার প্রস্তুতি নেবেন তখন বিদায়ী তাওয়াফ করবেন। বিদায়ী তাওয়াফের পর মক্কায় আর অবস্থান করবেন না। এ তাওয়াফে রম্ল নেই। এ তাওয়াফ হল হজে সর্বশেষ কাজ। 

বিদায়ী তাওয়াফের বিধানাবলী 
১- প্রশ্ন : বিদায়ী তাওয়াফ কখন করতে হয়? 
উত্তর : হজ শেষে মক্কা শরীফ থেকে যখন বিদায় নেয়ার প্রস্তুতি নেবেন তখন বিদায়ী তাওয়াফ করবেন। বিদায়ী তাওয়াফের পর মক্কায় আর অবস্থান করবেন না। এ তাওয়াফে রম্ল নেই। এ তাওয়াফ হল হজে সর্বশেষ কাজ। 
 ২ প্রশ্ন : হানাফী মাযহাবে বিদায়ী তাওয়াফের হুকুম কি? 
উত্তর :ওয়াজিব। এটা ছুটে গেলে দম দিতে হবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, لاَ يَنْفِرَنَّ أَحَدٌ حَتَّى يَكُونَ آخِرُ عَهْدِهِ بِالْبَيْتِ কাবাঘরে বিদায়ী তাওয়াফ করা ছাড়া যেন কেউ দেশে ফিরে না যায়। (মুসলিম ১৩২৭) 
৩ প্রশ্ন : বিদায়ী তাওয়াফের সময় যদি মেয়েদের হায়েয শুরু হয়ে যায় তাহলে কি করবে? 
উত্তর : হায়েযওয়ালী মেয়েদের বিদায়ী তাওয়াফ করা লাগবে না। ইবনে আববাস রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হায়েযওয়ালী মেয়েদেরকে এ বিষয়ে রুখসত দেয়া হয়েছে।’’ (বুখারি ও মুসলিম) 

৪- প্রশ্ন : বিদায়ী তাওয়াফ কি হজে অন্তর্ভুক্ত কোন কাজ নাকি পৃথক ইবাদত? 

উত্তর :হানাফী মাযহাবে এটা হজে অন্তর্ভুক্ত এবং এটা ওয়াজিব। কোন কোন মাযহাবে এটাকে হজে বহির্ভূত পৃথক ইবাদত হিসেবে ও পালন করা হয়। তাদের মতে মক্কাবাসী বা মক্কায় অবস্থানরত ভিন দেশী এবং বহিরাগত লোকেরা মক্কা থেকে সফরে বের হলে বিদায়ী তাওয়াফ করা লাগবে এবং এটা বছরের যে কোন সময়েই হোক না কেন। 

৫- প্রশ্ন : বিদায়ী তাওয়াফ কাদের উপর ওয়াজিব? 
উত্তর : এ তাওয়াফটি শুধুমাত্র তাদের জন্য যারা মীকাতের বাইরে থেকে আসবেন এবং আবার নিজ দেশে চলে যাবেন। এ বিষয়ে সর্বসম্মত রায় হল, যারা মক্কাবাসী অথবা বাহিরের লোক মক্কায় বসবাস করেন তাদের বিদায়ী তাওয়াফ করা লাগবে না। হানাফী মাযহাবের মতে মীকাতের ভিতরে অবস্থানকারী লোকজনেরও বিদায়ী তাওয়াফ নেই। যেমন হাদ্দা, বাহরা ও জেদ্দার লোকজনের। তবে মীকাতের বাহিরে অবস্হান কারীদের বা মীকাতের বাহিরে সফর কারীদের বিদায়ী তাওয়াফ লাগবে।
৬- প্রশ্ন : বিদায়ী তাওয়াফের ক্ষেত্রে সাধারণতঃ কি কি ভুল হাজীরা করে থাকে?

 উত্তর :ভুলগুলো নিম্নরূপ : (১) বিদায়ী তাওয়াফ না করেই মক্কা ত্যাগ করে এতে ওয়াজিব ছুটে যায়। (২) ১১ই যিলহজে কেউ কেউ মক্কা ত্যাগ করে চলে যায়। যেতে হবে ১২ তারিখের দুপুরের পর কংকর নিক্ষেপ শেষ করে। 
৭- প্রশ্ন : বিদায়ী তাওয়াফের পর সাঈ করা লাগে কি? 
উত্তর : না। 

৮= হজ্ব করার পর মক্কার বাহিরে সফর করলে বিদায়ী তাওয়াফের বিধান 
উত্তর :   হজ শেষে অনেকে সৌদি আরবের বিভিন্ন এলাকায় দুরে বা কাছে বেডাতে যান তখন  একটা কথা খেয়াল করতে হবে যে ঐ এলাকাটি মীকাতের ভিতরে না বাহিরে কারন হাজী সাহেবানদের হজের শেষে বিদায়ী তাওয়াফ করে বের হতে হয় । এটা ওয়াজিব ।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, لاَ يَنْفِرَنَّ أَحَدٌ حَتَّى يَكُونَ آخِرُ عَهْدِهِ بِالْبَيْتِ কাবাঘরে বিদায়ী তাওয়াফ করা ছাড়া যেন কেউ দেশে ফিরে না যায়। (মুসলিম ১৩২৭)

হজ শেষে  বিদায়ী তাওয়াফটি শুধুমাত্র তাদের জন্য যারা মীকাতের বাইরে থেকে আসবেন এবং আবার নিজ দেশে চলে যাবেন তাদের জন্য ওয়াজিব। তাছাডা এ বিষয়ে সর্বসম্মত রায় হল, যারা মক্কাবাসী অথবা বাহিরের লোক মক্কায় বসবাস করেন তাদের বিদায়ী তাওয়াফ করা লাগবে না। হানাফী মাযহাবের মতে মীকাতের ভিতরে অবস্থানকারী লোকজনেরও বিদায়ী তাওয়াফ নেই। যেমন হাদ্দা, বাহরা ও জেদ্দার লোকজনের। তবে মীকাতের বাহিরে অবস্হান কারীদের বা মীকাতের বাহিরে সফর কারীদের বিদায়ী তাওয়াফ লাগবে।

যেমন হজ শেষে অনেকে তায়েফ দাম্মাম তথা মীকাতের বাহিরে সফর করেন তখন  মক্কার থেকে বের হতে হলে তাকে বিদায়ী তাওয়াফ করে বের হতে হবে। এবং সফর শেষে যদি মক্কায় পূনঃ গমন করেন তখন ইহরাম পরেই আগমন করবেন এবং ওমরাহ পালন করবেন এবং পুনঃ দেশে পেরার সময় বিদায়ী তাওয়াফ করেই বের হবেন । এক্ষেত্রে তাকে ২ বার বিদায়ী তাওয়াফ করতে হবে।

৯= প্রশ্ন   মক্কার বাসিন্দা যদি হজ্জ করার পর মক্কা ছেড়ে চলে যেতে চান তার উপর কি বিদায়ী তাওয়াফ আছে?  গৃহ পরিচারিকা পাঁচ বছর যাবৎ মক্কাতে চাকুরী করছেন। এখন হজ্জ করতে চান। হজ্জের পরপর তিনি ফাইনাল এক্সিট নিয়ে তার দেশে ফেরত যাবেন। তার উপর কি বিদায়ী তাওয়াফ আছে?

উত্তর:

আলহামদুলিল্লাহ।

মক্কার বাসিন্দাদের উপর বিদায়ী তাওয়াফ নেই। কারণ বিদায়ী তাওয়াফ ওয়াজিব হয় বায়তুল্লাহকে বিদায় জানানোর কারণে। এই কারণ মক্কাবাসীদের মধ্যে পাওয়া যায় না। যেহেতু মক্কা তাদেরই দেশ। বিদায়ী তাওয়াফ যে হজ্জের রুকন নয় শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া সে কথা আলোচনা করতে গিয়ে বলেন: এ কারণে মক্কাবাসীর উপর তাওয়াফে কুদুম ও তাওয়াফে বিদা’ (বিদায়ী তাওয়াফ) নেই। যেহেতু তাদের ক্ষেত্রে এ কার্যকারণ অনুপস্থিত। কারণ তারা তো মক্কার দিকে আগমন (কুদুম) করে আসেনি; কিংবা মক্কাকে বিদায় (বিদা’) দিয়েও যাবে না; যেহেতু তারা সেখানেই থাকে।[মাজমুউল ফাতাওয়া (২৬/২৬১)]

শাইখ বিন বায (রহঃ) বলেন:

মক্কাবাসীর উপর বিদায়ী তাওয়াফ নেই। সমাপ্ত[ফাতাওয়া ১৭/৩৯৩]

হারামের ভেতরে অবস্থানকারী সকলের ক্ষেত্রে এ বিধান প্রযোজ্য। 

ইবনে কুদামা বলেন: যার গৃহ হারাম এলাকার ভেতরে সে মক্কাবাসী; তার উপর বিদায়ী তাওয়াফ নেই।[আল-মুগনি (৩/২৩৭)]

কিন্তু কোন মক্কাবাসী যদি হজ্জ আদায় করার পরপর মক্কা ছেড়ে চলে যেতে চায় তাহলে মক্কা থেকে বের হওয়ার পূর্বে তাকে বিদায়ী তাওয়াফ করতে হবে।

নববি (রহঃ) বলেন: আমাদের মাযহাবের আলেমগণ বলেন, যে ব্যক্তি হজ্জ শেষ করার পর মক্কাতে অবস্থান করার নিয়ত করেছে তার উপর বিদায়ী তাওয়াফ নেই। এ বিষয়ে কোন মতভেদ নেই। হোক না এ ব্যক্তি মূলত মক্কার অধিবাসী কিংবা ভিনদেশী। আর যদি মক্কা থেকে তার নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য অথবা অন্য কোথাও যাওয়ার জন্য বের হতে চায় তাহলে সে বিদায়ী তাওয়াফ করবে।[আল-মাজমু ৮/২৫৪]

শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন: যদি কোন মক্কাবাসী হজ্জ আদায় করে হজ্জের পরপর সফর করতে চান তাহলে তিনি বিদায়ী তাওয়াফ করবেন। দলিল হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামে বাণী: “তোমাদের কেউ বের হবে না যতক্ষণ না তার সর্বশেষ আমল হয় বায়তুল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত”[সহিহ মুসলিম (১৩২৭)] এটি একটি আম বা সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য সাধারণ দলিল। অতএব, আমরা মক্কাবাসীকে বলব: আপনি যেহেতু হজ্জের দিনগুলোতে সফর করছেন এবং আপনি হজ্জও আদায় করেছেন সুতরাং আপনি বিদায়ী তাওয়াফ না করে সফর করবেন না।[ফাতাওয়া ২৩/৩৩৯]

পূর্বোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে প্রশ্নকারী নারীর উপর বিদায়ী তাওয়াফ করা অনিবার্য; যদি তিনি হজ্জ আদায়ের পরপর সফর করতে চান।

আল্লাহই ভাল জানেন 




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন