দাওয়াত ও তাবলীগের মেহনতে আলেমদের অবদান অপরিসীম।
ইদানিং তথাকথিত এতায়াতপন্থী নামধারী কিছু তাবলীগি সাথীদের আচরণে আমরা মর্মাহত।তারা যে ভাবে দ্বীনের অতন্দ্র পহরী ওলামাদের শানে বেয়াদবীমূলক আচরণ শুরু করেছেন সত্যিই বেদনাহত। আমরা আবশ্যই এমনটা দীর্ঘ ১০/১৫ বছর থেকেই আশংকায় ছিলাম যা বর্তমানে দৃশ্য মান হয়েছে।
হজরতজী ইলিয়াস রহঃ প্রথমেই বুঝেছিলেন, যদি ওলামায়ে কেরাম আমার এই মেহনত নিয়ে আপত্তি করেন, তাহলে এই কাজ চলবে না।
.
তাই এই মেহনতের রূপরেখা তিনি সর্বপ্রথম ওলামায়ে কেরামের কাছে পেশ করেছিলেন।কিন্তু সে ইতিহাস কথিত এতায়াত সাথীরা ভুলে গেছেন
হজরত মুফতি কেফায়াতুল্লাহ রহঃ ছিলেন দেওবন্দের প্রধান মুফতি। তাকে বলা হতো মুফতিয়ে আজম হিন্দ। তিনিই ছিলেন হজরতজী ইলিয়াস রহঃ এর প্রথম সহযোগী। কুরআন-সুন্নাহর সাথে মিলিয়ে তিনিই সর্বপ্রথম মেহনতের রূপরেখার প্রতি ইতমিনান প্রকাশ করেছিলেন।
উপমহাদেশের দ্বিতীয় ব্যক্তি হজরতজী যার সমর্থন মেহনতের জন্য অত্যাবশ্যক মনে করেছিলেন, তিনি হচ্ছেন হজরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রহঃ। থানবী রহঃ এর সমর্থন আদায়ের জন্য এক জামাতকে তিনি বিশেষ হেদায়াত দিয়ে থানাভবন এলাকায় রোখ করেছিলেন। হজরত সৈয়দ আবুল হাসান আলী নদভী রহঃ ‘ হজরত ইলিয়াস রহঃ ও তাঁর দ্বীনি দাওয়াত’ কিতাবে সবিস্তারে এ ঘটনা লিপিবদ্ধ করেছেন। থানবী রহঃ জামাতের কারগুজারী শুনে জামাতকে কিছু হাদিয়া দিয়েছিলেন। জামাতের জিম্মাদার সেই হাদিয়া হজরতজীর কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। হজরতজী সেই হাদিয়া দেখে এত খুশী হয়েছিলেন, তার জবান দিয়ে এই কথা বের হয়েছিলো, ‘ এই মেহনতের সাথে যখন হজরত থানবীর হাতের বরকত যোগ হয়েছে, ইন শা আল্লাহ এই মেহনত চলবে।
সেই প্রথম সারির ওলামায়ে কেরাম, যাদের দোয়া, সমর্থন এই মেহনতের ভিতকে মজবুত করে দিয়েছিলো।
আরবদের কাছে এই মেহনতকে পরিচিত করার উদ্দেশ্যে সর্বপ্রথম যাকে নির্বাচন করা হয়েছিলো, তিনি সৈয়দ আবুল হাসান আলী নদভী রহঃ। নিঃসন্দেহে সে সময় মেহনতকে আরবদের কাছে পেশ করার জন্যে তিনিই যোগ্যতম ব্যক্তি ছিলেন।
মেহনতের সাথে ওলামায়ে কেরামের সমর্থন এভাবে পাশাপাশি এগিয়ে চলেছে।
‘তাবলীগে তো ভালো আলিম নেই ‘ – অভিযোগের জবাবে দেওবন্দের তৎকালিন প্রধান মুফতি মুফতি মাহমুদ হাসান গঙ্গুহী রহঃ এ জবাব দিয়েছিলেন, আমি তাবলীগেরই মুফতি। তাবলীগই আমাকে মুফতি বানিয়েছে।
তাবলীগের দ্বারা ইসলাহে নফস কতটুকু হবে এ সংশয়ের জবাবে দেওবন্দের তৎকালিন মুহতামিম হজরত ক্বারী তৈয়ব সাহেব রহঃ এই জবাব দিয়েছিলেন, ‘ নিশ্চয় দাওয়াত ও তাবলীগের কাজের মধ্যে ইসলাহে নফস আছে। ‘
তাবলীগের কাজের সমালোচনার জবাবে ওলামায়ে কেরাম বার বার কলম ধরেছেন। তাঁদের কিতাবাদি এর পক্ষে সাক্ষী হয়ে আছে। শায়খুল হাদীস রহঃ এর ‘ তাবলীগ জামাতের সমালোচনা এবং এর জবাব’ এই বিষয়ে প্রথম বই।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর হজরত আল্লামা শাহ আহমদ শফী দামাত বারাকাতুহুম একদম তরুন বয়সে দাওয়াতের মেহনতের পক্ষে কলম ধরেছেন। তাঁর রচিত ‘দাওয়াত ও তাবলীগ-একটা জিহাদ ‘ এ বিষয়ে একটা মাইলফলক। আফসোসের সাথে বলতে হয়, চট্টগ্রামের কিছু অবুঝ সাথী ‘হেফাজতে ইসলাম লাভলেইন মারকায দখল করতে আসছে ‘ জানিয়ে থানায় জিডি করে এবং মারকাযে পুলিশ মোতায়েন করে, যা তাবলীগের জন্য এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। অথচ সেদিন পুলিশ মারকাযে এক অভাবনীয় দৃশ্য প্রত্যক্ষ করে অবাক হয়। হাজার হাজার তালেবে ইলম ও শীর্ষ স্হানীয় ওলামায়ে কেরামের সেদিন বেডিং কাঁধে শান্তিপূর্ণ উপস্থিতি পুলিশকেও এ-কথা বলতে বাধ্য করে, ‘ এর নাম মারকায দখল করতে আসা?’
হজরত মুফতিয়ে আজম রহঃ ‘তাবলীগ করা কি ফরজ? ‘- এর এমন এক হিকমতপূর্ণ জবাব দিয়েছেন, যা তাবলীগের সাথীদের মুখে মুখে এখনও শোনা যায়। তিনি বলেছেন, তাবলীগ হলো উম্মুল ফারায়েজ -সব ফরজের মা। একজন বিজ্ঞ আলিমের একটা উক্তিই দাওয়াতের মেহনতকে হাজারগুন এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট প্রমানিত হয়েছে।
পটিয়ার মুফতি সাহেব রহঃ এর এই উক্তিটিও মেহনতের কার্যকারিতা বুঝানোর জন্যে প্রবাদবাক্য তুল্য -‘ তাবলীগ হলো চলতি-ফিরতি মাদ্রাসা।’
মুফতিয়ে আজম রহঃ একদিনের জন্যও তাবলীগে যাওয়ার সুযোগ করতে পারেন নি, কিন্তু
তাঁর লিখনী, তাঁর বক্তব্য চট্টগ্রামের মতো বৈরী এলাকায় দাওয়াতের মেহনতের গ্রহনযোগ্যতা তৈরিতে বিশাল ভূমিকা রেখেছে।
বাংলাদেশে দাওয়াতের মেহনতের রূপকার হচ্ছেন হজরত আল্লামা শামসুল হক ফরিদপুরী রহঃ। তিনিই সর্বপ্রথম বাংলাদেশে তাবলীগের কাজ শুরু করার জন্য হজরত মাওলানা আব্দুল আজিজ খুলনাবী রহঃকে, যিনি বড় হুজুর রহঃ নামে প্রসিদ্ধ, দাওয়াতের কাজ শিখে আসার জন্য নিজামুদ্দিন পাঠান এবং মানুষের কাছে দাওয়াতের কাজের গ্রহনযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য স্বয়ং নিজে নিজের শত দ্বীনি ব্যস্ততার মাঝেও প্রতি বছর চিল্লা দিতেন।
যে সাথী এ ইতিহাস মনে রাখবে, সে কখনও ওলামার বিরুদ্ধে, মাদ্রাসার বিরুদ্ধে জবান খুলবে না। মাদ্রাসা ও ওলামাদের বিরুদ্ধে যে সব প্রোপাগান্ডা বামপন্থি ও নাস্তিকেরা চালিয়ে আসছে, সে কথাগুলি কিভাবে একজন তাবলীগওয়ালার মুখ দিয়ে উচ্চারিত হতে পারে? ‘ তারা হেফাজত, তারা পাকিস্তানপন্থী, তারা জঙ্গি’ – এ সব বাক্য পাগড়ি পরিহিত একজন তাবলীগওয়ালার মুখে কিছুতেই মানায় না, মানাতে পারে না।
বরং আলিম-ওলামাই এই মেহনতের প্রাণ। ওলামাদের অান্তরিক রাহবারিই এই মেহনতের আসল চালিকাশক্তি।
মারকাযের বাইরের ওলামাদেরও আক্রমন করবো, আবার মারকাযের সাথে সংশ্লিষ্ট ওলামাদেরও চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করবো- এ কিছুতেই একজন প্রকৃত তাবলীগওয়ালার কাজ হতে পারে না। আমরা যদি তাবলীগি পরিচয়ে পরিচিত কারও মুখ থেকে এ ধরনের কথা শুনি, তাহলে আমাদের মনে করতে হবে এ বর্ণচোরা, ইসলামেরই কোন দুশমন বদ মতলবে তাবলীগের বেশ ধরেছে। ইলিয়াসী ফিকরে যে ফিকরবান, তার মুখ দিয়ে কখনোই এমন বাক্য বের হতে পারে না। সময় এসেছে প্রকৃত তাবলীগওয়ালা চেনার।
আর যে ভাইটি একান্তই অবুঝ, না বুঝে এ সব বাক্য উচ্চারণ করছে, আমাদের সবার দায়িত্ব তাকে বুঝিয়ে ফিরিয়ে আনার। হজরত গঙ্গুহী রহঃ এর বাক্য, যা আমার হৃদয়ে সদা ভীতির সঞ্চার করে,
” যারা ওলামাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করতো, তাদের কবর খুলে দেখো, তাদের চেহারা কিবলা থেকে ফিরিয়ে উল্টোমুখী করে দেয়া হয়েছে।”
এর সাথে
আমি আরও মনে করি যে,
ওলামায়ে কেরাম কাজের বিরোধী না বরং এ কাজের ১০০% সহায়ক কিন্তু ইদানিং মাও সাদ সাহেবের কোরআান সুন্নাহ বহির্ভূত কিছু কর্ম কান্ড মন্তব্য সমগ্র বিশ্বের ওলামায়ে কেরাম কে ভাবিয়ে তুলেছে, তাই বিশেষত দেওবন্দের ওলামায়ে কেরাম ৮/৯ বছর ধরে গোপনে সংশোধনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত ফতোয়া জারী করতে বাধ্য হয়েছে। তাইতো তাবলীগের অবুঝ সাথীরা ক্ষেপে গেলেন। কিন্তু যারা ছমজদার সাথী আল্লাহর জন্য তাবলীগ করেন তারা ঠিকই বুঝতে সক্ষম হয়েছে।
কিন্তু খুব আফসোস লাগে যখন তাবলীগের সাধারণ একজন সাথী যখন বলে যে মাও মাহমুদুল হাসান সাহেব ও মাও জুনাইদ বাবুনগরী গংরা তো তাবলীগে সময় লাগায়নী তারা তাবলীগের উপদেষ্টা হয় কি করে বা তাবলীগ সম্পর্কে কি বুঝবে?
হায় আফসোস এ গন্ড মুর্খ তাবলীগের সাথীর জন্য যে মাও মাহমুদুল হাসান ও জুনাইদ বাবুনগরীর গংদের একদিনের বা এক ঘন্টার চিন্তা চেতনা আর মেহনত বা খেদমতকে এক পাল্লায় দিলে সেই কথিত "এতায়াত" বা সা'দ পন্থীর মত লাখো কুটিজনকে একপাল্লায় দিলে সেই মাও আহমদ শফি বাবুনগরী/ মাহমুদুল হাছান এর এক ঘন্টার মেহনত তার চেয়ে ভারী হবে।
তাছাডা মাও ইলিয়াস ছাঃ রহ সে সময় যে সকল ওলামায়ে কেরামের পরামর্শ আর দিক নির্দেশনায় তাবলীগের কাজ এগিয়ে নিয়েছিলেন যেমন আশরাফ আলী থানবী কারী তৈয়ব সাহেব, রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী প্রমুখ কেউ তাবলীগে সময় লাগায়নি কিন্তু তাবলীগের উপদেষ্টার ভূমিকায় ছিলেন। সেটাও তাবলীগের অন্তর্ভুক্ত, কারণ তাবলীগ মানে শুধু মসজিদে বসে বসে তাবলীগ নয় বরং এটা দ্বীন প্রচারের অসংখ্য পদ্ধতির একটি।
২. তাবলিগ জামাতের চলমান সংকট!
রক্তের আঁচড়ে লেখা কিছু কথা!
‘পাকিস্তানপন্থী তাবলিগ’ এবং কিছু দুঃখগাঁথা!!
মুফতি লুৎফুর রহমান ফরায়েজী: সাহেবের এ লেখাটি সঙ্গে সংযোজন করা হল।
এমন দিনও দেখতে হবে কখনো কল্পনায়ও আসেনি।
এ সুন্দর সাজানো বাগান।
আমরা এর বাইরের সৌন্দর্যে যেমন মুগ্ধ হয়েছি।
তেমনি সাময়িক সময়ের মেহমান হয়ে আরো বেশি আকৃষ্ট হয়েছি এ বাগানের সুঘ্রাণে।
আমরা ছিলাম যার একান্ত ভক্ত। অনুরক্ত।
যে তাবলিগের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে ছলকে উঠতো আমাদের রক্ত। লেখায় বয়ানে, বক্তৃতায় আমরা প্রতিবাদ করতাম।
দলিলের আলোকে সমুচ্চ করে তুলতাম দাওয়াত ও তাবলিগের মানহাজ ও পদ্ধতিকে।
ভারত, পাকিস্তান বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্বের হক্কানি উলামাগণ পূর্ণাঙ্গ সাপোর্ট দিয়েছে তাবলিগ জামাতকে।
কখনো তাবলিগের মুরুব্বী সেজে মাতব্বরী করার খাহেশ জাহির করেননি বরেণ্য কোন শাইখুল হাদিস কিংবা আল্লামা। যে যার কাজে দরস-তাদরীস, ফিকহ-ফাতওয়া নিয়েই মগ্ন ছিলেন। সময় পেলে তাবলিগি মুরুব্বীদের অধীনেই দ্বীনী তাকাজায় শরিক হতেন। নিজেরা কখনো তাদের আসনে বসার ইচ্ছে প্রকাশ আগেও করেননি, এখনো নয়।
বিজ্ঞ উলামাগণের মত কুরআন ও হাদিসের শিক্ষা প্রদান, মুফতিয়ানে কেরামের মত ফিকহ ও ফাতওয়া নিয়ে সুচিন্তিত মত পেশ করার সময়, সুযোগ, অনেক ক্ষেত্রে যোগ্যতা যেমন তাবলিগি মুরুব্বীদের অনেকেরই নেই, তেমনি তাবলিগের সাথীদের মত সব কিছু ছেড়ে দিয়ে তাবলিগের মারকাজে পড়ে থেকে এ কাজে জড়িয়ে থাকার সুযোগ বিজ্ঞ উলামা হযরতের নেই।
তাই উভয় জামাত উভয় জামাতকে মুহাব্বত করেন।
ভালবাসেন। কল্যাণকামী।
সবাই সবার কাজ করে যাচ্ছেন।
নিষ্ঠার সাথে।
এক জামাত অন্য জামাতের সহযোগী। হিতাকাঙ্ক্ষী।
বিরোধী বা প্রতিপক্ষ নয়।
ইখলাস, লিল্লাহিয়্যাত, রবের সন্তুষ্টির জন্য সব কিছু কুরবান করা, খিদমতে খালক, উত্তম চরিত্র, অন্যকে প্রাধান্য দেয়ার মানসিকতা, বড়দের শ্রদ্ধা, ছোটদের স্নেহ, সুন্নতের পাবন্দ, সাহাবা আজমাঈনের আখলাকের জলন্ত প্রতিচ্ছবি, ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য ছিল তাবলিগি সাথী ও মুরুব্বীদের প্রধান পরিচয়। পুরো বিশ্ব জোরে এ কাজের দ্যুতি দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ার পিছনে ছিল এসব আখলাকী চালিকাশক্তি।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ নববী মেহনতের কাজের ভিতরে জমা বাঁধছিল কিছু ময়লা। আবর্জনা।
যা আমাদের অজান্তেই নষ্ট করে দিচ্ছিল সুন্দর সাজানো বাগানের পরিবেশ।
আল্লাহ হিফাযত করুন।
#এ সংকটের জন্য দায়ী কারা?
আমি আল্লাহর কসম করে বলতে পারি, দৃঢ়তার সাথে বলতে পারি, তাবলিগের এ চলমান সংকটের জন্য দেওবন্দের ফাতওয়া, কিংবা বাংলাদেশের উলামাগণের প্রতিবাদ মোটেও দায়ী নয়। হতেই পারে না।
তাবলিগের চলমান সংকট বিষয়ে বাংলাদেশের শীর্ষ উলামাগণ সভা করেছেন ২০১৭ সালের ১১ই নভেম্বর।
আর দারুল উলুম দেওবন্দ মাওলানা সাদ সম্পর্কে তাদের অনাস্থার ফাতওয়া প্রদান করেন বিগত ৫ই ডিসেম্বর ২০১৬ সালে।
তাহলে তাবলিগ বিষয়ে দারুল উলুম দেওবন্দ ও বাংলাদেশের উলামাগণের অবস্থান পরিস্কার করা হয় সর্বোচ্চ ২০১৬ সালের শেষ দিকে এবং ২০১৭ সালে। কিন্তু তাবলিগের সংকট কি এ ফাতওয়া প্রকাশ ও বাংলাদেশের উলামা হযরতের মিটিং এর পর সৃষ্টি হয়েছে?
নিজামুদ্দিন বা কাকরাইলের সাথে সম্পৃক্ত কোন মুরুব্বী বা কোন সাথী এ দাবি কী করতে পারবেন? পারবেন না। কারণ উক্ত ফাতওয়ার কারণে এ সংকট তৈরি হয়নি। এ ঝগড়া অনেক আগের। বহু আগের। সেই ২০১২/১৩ সাল থেকে শুরু। কিংবা আরো পুরোনো।
২০১৪ মুশফিক স্যার মরহুম এবং জনাব ওয়াসীফ সাহেবের গণ্ডগোল তাবলিগি সাথীদের সবারই জানা। তাহলে তাবলিগের চলমান সংকট ২০১৭ সালে সৃষ্ট না ২০১৩ সালে?
উলামাগনের কারণে তৈরি না নিজেদের ক্ষমতার দ্বন্দ নিয়ে তৈরি?
উলামায়ে কেরাম কিছুতেই এ সংকট তৈরির জন্য দায়ী নয়। দ্বন্দ সংঘাত যখন হাতাহাতি, দাড়ি টানাটানি, ক্যাডার বাহিনী দিয়ে মাস্তানী পর্যন্ত গড়ায়, তখন উলামাগণের কাছে এর সমাধানের জন্য চিঠির পর চিঠি আসতে থাকে। আমি অধমের মত নগণ্য ব্যক্তির কাছেও অসংখ্য মেইল ও চিঠি এসেছে বিগত কয়েক বছরে। কিন্তু লজ্জায় চুপ ছিলাম। কাকে বলবো? কিভাবে বলবো? কে মানবে আমার কথা?
দারুল উলুম দেওবন্দ! ঠিক একইভাবে এ সংকটের জন্য দায়ী নয়। দারুল উলুম দেওবন্দ বিশ্বব্যাপী প্রসিদ্ধ একটি দীনী দরসগাহ। ইলমে ওহির বাতিঘর। যেখান থেকে কুরআন ও সুন্নাহের আলো বিচ্ছুরিত হয় দুনিয়াব্যাপী। মাওলানা সাদ সাহেবের কুফরী বক্তব্য নির্ভর বয়ান বিষয়ে দারুল উলুমে প্রশ্ন এলে দীনী দায়িত্ব পালনার্থে তারা মাসআলার সমাধান দিয়েছেন।
ব্যক্তি মাওলানা সাদের বক্তব্যের কুরআন ও হাদিস ভিত্তিক সমাধান পেশ করেছেন। তাবলিগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল বিষয়ে কোন মন্তব্য করেননি। বা তাদের মসনদ দখল করার কোন হীন খাহেশও জাহির করেননি।
সুতরাং এ ফাতওয়া প্রদানকে আরো তিন চার বছর আগে থেকে চলতে থাকা ঝগড়ার ইন্ধনদাতা হিসেবে উপস্থাপন করা ঘৃণ্য ও নীচ মানসিকতা ছাড়া আর কী হতে পারে? সুতরাং প্রতিটি বিবেকবান মানুষের কাছেই পরিস্কার হবার কথা যে, দারুল উলুম দেওবন্দের ফাতওয়া বা বাংলাদেশের উলামাগণের পদক্ষেপ তাবলিগের চলমান সংকটের জন্য কোন অংশেই দায়ী নয়।
এটি তাদের পুরনো ঝগড়া। পুরনো বিবাদ। যা তাদের নিজেদের মজলিশে শুরা সদস্য এবং মুরুব্বীদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা। দেওবন্দ ও বাংলাদেশের শীর্ষ উলামাগণ এর জন্য কোন অংশেই দায়ী ছিলেন না। এখনো নয়। উলামাগণ তাদের মুরুব্বীর আসনে বসার বা নিজে মুরুব্বী সেজে তাবলিগ জামাতকে নিয়ন্ত্রণ করার ইচ্ছে আগেও কখনো জাহির করেননি এখনো নয়। তাই উলামায়ে কেরামকে এ সংকটের জন্য দায়ী করা চরম অপবাদ ছাড়া আর কিছু নয়।
#তাবলিগি ভাই! তোমার মুখের এ কী ভাষা?
তাবলিগকে হেফাজতীরা দখল করতে চায়! পাকিস্তানপন্থী উলামারা তাবলীগের নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়! কওমি মাদরাসায় ছাত্র ভর্তি করার আগে ভেবে নিন আপনার সন্তান কী করবে!
ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিঊন। তাবলিগের সাথী নামধারী কতিপয় সাথীদের উপরোক্ত বক্তব্য নির্ভর ভিডিও যখন দেখি, অঝর ধারায় অধমের চোখ দিয়ে পানি ঝরছিল। যখন কম্পোজ করছি তখনো অধমের চোখগুলো ঝাপসা হয়ে আসছে বারবার। ভিডিওটি দেখার পর থেকে সারারাত বিছানায় এপাশ উপাশ করে কাটিয়েছি। হায়! আমি এ কি দেখলাম? এ কি শুনতে পাচ্ছি? আমি কার জন্য কাঁদি। কার ব্যথায় ব্যথিত হই।
আজকের এ দিনটির জন্যই কি রাতকে দিন বানিয়েছিলাম। রাতের পর রাত নির্ঘুম কাটিয়েছিলাম। আমার তাবলীগ। আমাদের তাবলীগ। আমার তাবলিগি ভাইটা আমাকে, আমাদের এ কী বলছে?
হেফাজতি।
কী এই হেফাজত? হেফাজত কি কোন এক ব্যক্তির দল?
এটি কি শুধুই একটি সংগঠন? না, কস্মিনকালেও না।
এটি একটি আন্দোলন।
ঈমানি আন্দোলন। নবি প্রেমিকের দিলের স্পন্দন।
নাস্তিকের বিরুদ্ধে মুমিনের গর্জন। নবীর দুশমনের বিরুদ্ধে আশেকে রাসূলের হুংকারের নাম হেফাজতে ইসলাম।
হেফাজতের কোন নেতার বিরুদ্ধে আপনার অভিযোগ থাকতেই পারে।
থাকাটাও যৌক্তিক। কিন্তু মূল হেফাজতে ইসলামের সেই স্প্রিট, সেই চেতনার প্রতি আপনি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাতে পারেন না। কোন মুমিন পারে না। এতো নবির প্রতিই দুশমনির নিদর্শন। ‘
হেফাজতী’ বলে গালিটাতো নাস্তিক বা তার দোসরদের। নবির দুশমনের।
কিন্তু হে আমার সাথী।
হে আমার বন্ধু, তোমার জবানে এ গালি উঠলো কি করে?
তোমার ঈমান কোথায়? তোমার বিবেক কোথায়?
তোমাকে কে এমন অন্ধ বানিয়ে দিল? কে তোমাকে এমন বধির বানিয়ে দিল? তুমি কী বলছো একবার ভেবেছো কী?
#পাকিস্তানপন্থী!
যতবার অধমকে আল্লাহ তাবলিগের স্থানীয় মারকাজে যাবার তৌফিক দিয়েছেন। বড়দের কাছাকাছি যাবার চেষ্টা করেছি। বাংলাদেশের অনেক পুরানো সাথীদের জবানে শুনতাম পুরো বিশ্বে তাবলীগের মেহনত ছড়ানোর পিছনে পাকিস্তানীদের একনিষ্ট মেহনতের কথা কেউ অস্বিকার করতে পারবে না। তাদের সাথে জামাতে গেলে কোন নিস্তার নেই।
সারাদিনই দাওয়াত দেবার মেহনতে থাকেন। অনেক কষ্ট করেন। অনেক মুজাহাদা করেন। পাকিস্তানীদের মেহনতের তুলনা হয় না। উম্মতের প্রতি এত দরদ, এত মোহাব্বত পাকিস্তানীদের ছাড়া নজীর পাওয়া ভার। আজকে হঠাৎ সেই পাকিস্তানি তাবলীগের সাথীরা হয়ে গেলেন জঘন্য। নিকৃষ্ট। খারাপ। আফসোস! বড়ই আফসোস!
প্রশ্ন হল, বাংলাদেশের উলামা হযরতগণ কিভাবে পাকিস্তানপন্থী হলেন? উলামাগণের কারণে তো এ সংকট তৈরি হয়নি। তৈরি হয়েছে ভেতরগত কারণে। তাহলে উলামাগণকে পাকিস্তানপন্থী বলে কাকে খুশি করতে চাচ্ছেন? খালিস দ্বীনী এ মেহনতকে আর কত নিচে নামাতে চাচ্ছেন আপনারা?
শেষ পর্যন্ত ভারত পাকিস্তান ইস্যু পর্যন্ত টেনে আনছেন। ইন্নালিল্লাহ। আল্লাহর পানাহ।
#বাংলাদেশের আলেমদের কেন দোষারোপ করেন?
পাকিস্তানে মাওলানা সাদ নিষিদ্ধ। অষ্ট্রেলিয়ার সিডনি থেকে মাওলানা সাদের কট্টর অনুসারীদের পিটিয়ে বের করে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশে মাওলানা সাদকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপ। একই হালাত ভারতে।
একই অবস্থা লন্ডনসহ পুরো বিশ্বে। পাকিস্তান, অষ্ট্রেলিয়া, লন্ডন, ভারতে এই গ্রুপিং এর জন্য কি বাংলাদেশের উলামাগণ দায়ী?
অষ্ট্রেলিয়া, ভারত, লন্ডনের মাওলানা সাদ বিরোধীরাও কী পাকিস্তানপন্থী?
বাংলাদেশের উলামাগণ তাবলিগের মারকাজের মুরুব্বী সাজতে আগেও যেমন আগ্রহী ছিলেন না। এখনো নয়। আর এ সংকটের জন্য বাংলাদেশের উলামাগণ মোটেও দায়ী নয়। তাই বাংলাদেশের সম্মানিত উলামা হযরত, এবং দারুল উলুম দেওবন্দের সেরেতাজ উলামাগণকে দোষারোপ করে নিজের আমলনামায় গোনাহ না লিখাতে সকল সাথীদের প্রতি উদাত্ত আহবান করছি।
#শেষ কথা
কী লিখবো? কিভাবে লিখবো? বুঝতে পারি না। যদি আমার চোখের পানিতে জমিন ভিজে গেলে থেমে যেতো এ বিতর্ক, তবে আমি তাই করতাম। চিৎকার করে কাঁদতাম। মাতম করে কাঁদতাম।
এ কোন সময়ে আসলাম? এও কী দেখতে হল? কী বলে সান্ত্বনা দেব নিজেকে? ভাষা নেই। সমঝ যেখানে থমকে গেছে। বুদ্ধি যেখানে স্তব্ধ। জবান যেখানে বাকরুদ্ধ। কলম যেখানে নিথর। কিছু বলতে পারি না। অসহ্য এক দাহনে জ্বলছি। পুড়ে ছাই হচ্ছে সব। চিৎকার করতে পারি না। কলজে ছেড়া ব্যথায় কুঁকড়ে যাচ্ছে সব, মুখ ফুটে বলতে পারি না কিছুই।
আহ! আর কতোদিন এ অসহ্য দাহনে জ্বলবো জানি না।
হে মালিক! পারওয়ার দিগার। তোমার রহমান গুণের কসম লাগে মালিক! এ যাতনা দূর কর। এ সংকট সমাধান করে দাও। ফিরিয়ে দাও স্থিতিশীলতা।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মনে তোমার ভয় দিয়ে দাও।
সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হবার তাওফিক দাও।
এ মকবুল মেহনতকে তার সেই পূর্বের রূহানী পরিবেশে ফিরিয়ে দাও।
আমাদের সকলকে তোমার গোলাম হিসেবে কবুল কর। আমীন।
আল্লাহ পাক আমাদের হক বুঝার তাওফিক দিন আমিন।
এম এম আবদুল্লাহ ভূঁইয়া
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন