আহলে
হাতবিরোধ দীসের সাথে আহলে সুন্নাতের সাথে যে সব ক্ষেত্রে
মতবিরোধ
*******************************
১. তাকলীদ প্রসঙ্গ সাহাবা,তাবেঈন ও তাবে-তাবেঈন অর্থাৎ চার মাযহাবের ইমামগণের তাকলীদ করাকে তারা বিদ‘আত বা শিরক বলে। অথচ কুরআন ও হাদীসের আলোকে ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত’-এর নীতি-আদর্শ হলো, যে ব্যক্তি ইজতিহাদ করার যোগ্যতা, তার জন্য ইজতিহাদ করা জরুরী। তাকলীদ করা অবৈধ। আর যার মাঝে ইজতিহাদের যোগ্যতা নেই, তার জন্য কোনো এক মুজতাহিদ ইমামের মাযহাবের তাকলীদ করা ওয়াজিব।
২. আল্লাহর গুনাবলী প্রসঙ্গ কুরআন, হাদীসে এমন কিছু শব্দ দ্বারা আল্লাহ তা‘আলার গুনাবলির বিবরণ আছে, যেগুলোর বাহ্যিক অর্থে আল্লাহর আকৃতি,দেহ ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রমাণিত হয়। এধরনের আয়াত ও হাদীসের ক্ষেত্রে “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত”এর মতাদর্শ হলো, এগুলোর বাহ্যিক অর্থ গ্রহণ করা হবে না। কারণ বাহ্যিক অর্থ গ্রহণ করলে কুরআনের আয়াতليس كمثله شيئ وهو السميع البصير অর্থাৎ “আল্লাহর সমতুল্য কিছুই নেই, তিনি শুনেন ও দেখেন”।(সূরা শুয়ারা-১১) এর পরিপন্থী হয়ে কুরআন অমান্য করার নামান্তর হয়। কিন্তু আমাদের দেশের আহলে হাদীস এ নীতিতে বিশ্বাসী নয়। তারা এমন মতাদর্শের অনুসারী যা “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত” এর মাপকাঠিতে পড়ে না। বরং তারা “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত”এর ইমামদ্বয় যথাক্রমে আবুল হাসান আশআরী ও আবু মানসুর মাতুরীদিকে পথভ্রষ্ট ও গোমরাহ বলে প্রচার করে।
৩. দোয়ার মধ্যে উসিলা প্রসঙ্গ
কুরআন-হাদীসের যেসব অবস্থায় উসিলা দিয়ে দোয়া করার ফযিলত ও বৈধতা প্রমাণিত “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত”সে উসিলাকে যথাযথ স্থানে বৈধ বা মুস্তাহাব মনে করেন। সারকথা হল, জীবিত বা মৃতব্যক্তি নিজের আমল ও অন্যের আমল দ্বারা উসিলা গ্রহণ সর্বাবস্থায় জায়েয। কারণ এ সবগুলোর মূলকথা হলো, আল্লাহ তা‘য়ালার উসিলা ধারণ। অথচ লা-মাযহাবীরা এ বিষয়ে গোঁড়ামির পথ অবলম্বন করে, বৈধকে অবৈধ সাব্যস্ত করে। যা বহু আয়াত ও হাদীসের অপব্যাখ্যার শামিল।
৪.ঝাড়-ফুঁক
কুরআনের আয়াত,আল্লাহর নাম এবং হাদীসে বর্ণিত দোয়াসমূহ দ্বারা ঝাড়-ফুঁক, তাবিজ-কবজ করা “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত”এর নীতি-আদর্শে বৈধ। তবে লা-মাযহাবীরা এ নিয়ে চরম বাড়াবাড়ি ও একগুঁয়েমীর নীতি অবলম্বন করে তাবিজ-কবজকে কুফর আখ্যায়িত করে।
‘আল-লুমআত শরহে মিশকাত’-এ উল্লেখ আছে ,
وهي جائزة بالقرآن والاسماء الالهية ومافي معناها بالاتفاق
ঝাড়-ফুঁক কুরআন, আসমায়ে হুসনা ও অনুরূপ অর্থ বিশিষ্ট বাক্য দ্বারা জায়েয ও বৈধ। তবে যে কালামের অর্থ জানা যায় না, অনারবী ভাষায় শিরকযুক্ত কালাম দ্বারা তাবিজ-কবজ,ঝাড়-ফুঁক করলে এবং এগুলোর নিজস্ব ক্ষমতা আছে মনে করলে তা অবৈধ বলে বিবেচিত হবে। যে হাদীসে ঝাড়-ফুঁক ও তাবিজকে শিরক বলা হয়েছে তা উপরোক্ত কারণ পাওয়া যাওয়ার শর্তে বলা হয়েছে।
৫. রাসূলের রওযা যিয়ারতের নিয়তে মদিনা যাওয়া প্রসঙ্গ
আমাদের দেশের আহলে হাদীসগণ আল্লামা ইবনে তাইমিয়া ও কাজী ইয়াজ রহ.-এর ব্যক্তিগত মতামতের উপর ভিত্তি করে সাহাবা, তাবেঈনের আমল ও আদর্শের বিপরীতে এ নিয়ে নতুন বিতর্ক ও ফিতনার সূত্রপাত ঘটাচ্ছে। এ ব্যাপারে তাদের বক্তব্য হল, মুসলমান মদিনা শরীফে যাবে একমাত্র মসজিদে নববীতে নামায পড়ার নিয়তে। রওযা শরীফ যিয়ারতের নিয়তে মদিনা গমন অবৈধ, কারণ হাদীস শরীফে এসেছে- لاتشدوا الرحال الا الي ثلثة مساجد…الخ “মসজিদে নববী, হারাম শরীফ ও মসজিদে আকসা ছাড়া অন্য কোনো কিছুর উদ্দেশ্যে সফর করা যাবে না”।
হাদীসের উক্ত ব্যাখ্যা নিতান্ত ইবনে তাইমিয়ার নিজস্ব ব্যাখ্যা। অথচ সকল মুহাদ্দিসগণ এর ব্যাখ্যা এভাবে দিয়েছেন যে, উক্ত তিন মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন মসজিদের উদ্দেশ্যে সফর করা যাবে না। অর্থাৎ তিনটি মসজিদ ছাড়া অন্য কোনো মসজিদের উদ্দেশ্যে সফর করা এ হাদীসের নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত। অন্যান্য স্থানে সফর করার বিষয়টি এর অন্তর্ভুক্তই নয়। এটাই সঠিক ব্যাখ্যা। তাহলে রওযা যিয়ারতের উদ্দেশ্যে গমন কিভাবে অবৈধ। কারণ এর অনুকূলে হাদীস পাওয়া যায়। তাছাড়া আল্লামা আইনী ও আসকালানী রহ.সহ সকল মুহাদ্দিস এ ব্যাখ্যাকে সঠিক বলেছেন। তাই রাসূলের রওযা যিয়ারতের উদ্দেশ্যে মদিনা গমন করা শরীয়তসম্মত।
৬. জুম‘আর খুতবা অনারবীতে পড়া প্রসঙ্গ
সম্প্রতি আহলে হাদীসরা জুম‘আর খুতবা অনারবীতে ও আঞ্চলিক ভাষায় পড়ার কথা বলে থাকে। এ প্রসঙ্গে তাদের কোনো দলীল-প্রমাণ নেই। কারণ রাসূল স. ও সাহাবাদের যুগে কখনো অনারবীতে খুতবা দেয়ার প্রমাণ মেলে না। সাহাবিদের মধ্যে যারা ভিন্ন ভাষাভাষী ছিলেন, তারাও নিজেদের দেশে মাতৃভাষায় খুতবা পড়েননি। একারণেই ইসলামের প্রথম যুগ থেকে আজ পর্যন্ত, পৃথিবীর পূর্ব থেকে পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত বহু ভাষার মুসলমান থাকা সত্ত্বেও কেবলমাত্র আরবী ভাষায়ই খুতবা পড়ার নিয়ম চালু হয়ে আসছে।
হ্যাঁ, লা-মাযহাবীদের নিকট শুধু যুক্তি ও কিয়াস আছে।
অথচ তারা যুক্তি কিয়াসের বিরোধী। তারা শুধু কুরআন,হাদীস মানার দাবী করে থাকে। এ বিষয়ে কুরআন,হাদিস বাদ দিয়ে মনগড়া যুক্তির ভিত্তিতে অনারবী ভাষায় খুতবা পড়ার প্রথা চালু করা “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত”এর মৌলিক আদর্শ ও মাপকাঠি বিরোধী। তাই তারা এ বিষয়েও “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত”থেকে বহির্ভূত।
৭. নামাযে মুক্তাদির সূরা ফাতেহা পড়া,জোরে আমীন বলা,
বার বার হাত উঠানো প্রসঙ্গ
এ বিষয়গুলো এমন যে, রাসূল স. থেকে এসব বিষয়ে বিভিন্ন রকম বিবরণ পাওয়া যায়। ফলে এর ব্যাখ্যায় মাযহাবের ইমামগণ মতবিরোধ করেছেন। মুজতাহিদগণের মতামত দেয়ার অধিকার কুরআন-সুন্নাহ কর্তৃক প্রমাণিত। যারা মুজতাহিদ নন, তারা যে ইমামের তাকলীদ করেন সে ইমামের মতানুসারে আমল করাই “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত”এর আদর্শ। যেমন, মুক্তাদি নামাযে ফাতেহা পড়া। এ ব্যাপারে বিভিন্ন রকম আয়াত ও হাদীস রয়েছে। ইমাম শাফেয়ী রহ. ফাতেহা পড়াকে ওয়াজিব বলেছেন, তাই শাফেয়ী মাযহাবের অনুসারীদের জন্য ইমামের পিছনে ফাতেহা পড়াই “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত”-এর আদর্শ।
ইমাম আবু হানিফা রহ. ইমামের পিছনে ফাতেহা পড়াকে নাজায়েয বলেছেন, তাই হানাফিদের জন্য ইমামের পিছনে ফাতেহা না পড়াই “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত”-এর আদর্শ।
পক্ষান্তরে লা-মাযহাবীরা মুজতাহিদও নন যে, নিজেরাই একটি স্বতন্ত্র মত উদ্ভাবন করবেন। আবার কোন মাযহাবের অনুসারীও নন যে, ইমামের মাযহাব মতে আমল করবেন। তাহলে মুক্তাদি হয়ে ইমামের পিছনে সূরায়ে ফাতেহা পড়াও তাদের জন্য সুন্নাত হবেনা, না পড়াও সুন্নাত বলে গণ্য হবে না। তা সত্ত্বেও ইমাম আবু হানিফা রহ. এর মত মুজতাহিদের ইজতিহাদকে ভুল আখ্যা দিয়ে সূরা ফাতিহা পড়ার উপর চেঁচামেচি করা আহলে সুন্নাতের আদর্শ পরিপন্থী, যা তারা করে থাকেন।
মুজতাহিদ না হয়ে কোন মুজতাহিদের তাকলীদ না করে নামাযে বার বার হাত উঠানো বা না উঠানো কোনোটিই সুন্নাতের অনুকরণ হবে না। আমীন জোরে বললেও সুন্নাতের অনুকরণ হবে না। আস্তে বললেও হবে না। তাই এসব বিষয়ে নিজস্ব মতামত প্রকাশ করা “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত”-এর আদর্শ পরিপন্থী। তাই তারা এসব ব্যাপারেও “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত”বিরোধী।
৮. তাসাওফ ও আত্মশুদ্ধির ব্যাপারে বাড়াবাড়ি
শরীয়ত ও তরীকত উভয়ই ইসলামের অঙ্গ,একটি অপরটির পরিপূরক। ইসলামে শরীয়তবিহীন তরীকতের যেমন অনুমোদন নেই, তেমনি তরীকতবিহীন শরীয়তেরও কোনো মূল্য নেই। মানুষের বিবেক যেন পাহারা দিচ্ছে শরীয়তকে, আর অন্তর পাহারা দিচ্ছে তরীকতকে। সাহাবায়ে কিরাম, আসলাফ এ আদর্শের উপরই প্রতিষ্ঠিত ছিলেন।
তাই “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত”-এর আদর্শ হলো, যেভাবে শরীয়তের যাহেরী বিধানের উপর আমল করা জরুরী। তদ্রুপ ইখলাস, তাকওয়া,সবর, শোকর প্রভৃতি আত্মার গুনাবলি অর্জন এবং রিয়া, অহংকার, হিংসা-বিদ্বেষ প্রভৃতি অন্তরের ব্যাধিগুলো দূর করাও মুমিনের উপর ওয়াজিব।
ইরশাদ হয়েছে, قد افلح من زكها وقد خاب من دسها অর্থাৎ “সফলকাম সে, যে নিজের তাযকিয়া তথা আত্মশুদ্ধি করে” আর আত্মশুদ্ধির এ সাধনাকে বলা হয় আধ্যাত্মিক সাধনা। হাদীসের ভাষায় এর নাম ইহসান। যা বুখারী শরীফের ঐতিহাসিক ‘হাদীসে জিবরাঈল’-এ উল্লেখ হয়েছে।
কুরআন-হাদিস এবং সাহাবাদের অনুকরণে তাসাওফকে জরুরী মনে করা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আদর্শ।
তবে এতে অতিমাত্রায় আসক্তি কুরআন-সুন্নাহ বিকৃতির শামিল, যা ভণ্ডপীরের স্বভাব। এটা যেমন হারাম ও বাতিল বলে গণ্য, তেমনি ভাবে হাদীসের ইহসানের ব্যাখ্যা না মেনে আধ্যাত্মিক সাধনাকে শিরক বা বিদ‘আত বলা, যা লা-মাযহাবীদের আদর্শ তাও বাতিল ও ভ্রষ্টতা এবং কুরআন-হাদীস বিকৃতি।
১. তাকলীদ প্রসঙ্গ সাহাবা,তাবেঈন ও তাবে-তাবেঈন অর্থাৎ চার মাযহাবের ইমামগণের তাকলীদ করাকে তারা বিদ‘আত বা শিরক বলে। অথচ কুরআন ও হাদীসের আলোকে ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত’-এর নীতি-আদর্শ হলো, যে ব্যক্তি ইজতিহাদ করার যোগ্যতা, তার জন্য ইজতিহাদ করা জরুরী। তাকলীদ করা অবৈধ। আর যার মাঝে ইজতিহাদের যোগ্যতা নেই, তার জন্য কোনো এক মুজতাহিদ ইমামের মাযহাবের তাকলীদ করা ওয়াজিব।
২. আল্লাহর গুনাবলী প্রসঙ্গ কুরআন, হাদীসে এমন কিছু শব্দ দ্বারা আল্লাহ তা‘আলার গুনাবলির বিবরণ আছে, যেগুলোর বাহ্যিক অর্থে আল্লাহর আকৃতি,দেহ ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রমাণিত হয়। এধরনের আয়াত ও হাদীসের ক্ষেত্রে “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত”এর মতাদর্শ হলো, এগুলোর বাহ্যিক অর্থ গ্রহণ করা হবে না। কারণ বাহ্যিক অর্থ গ্রহণ করলে কুরআনের আয়াতليس كمثله شيئ وهو السميع البصير অর্থাৎ “আল্লাহর সমতুল্য কিছুই নেই, তিনি শুনেন ও দেখেন”।(সূরা শুয়ারা-১১) এর পরিপন্থী হয়ে কুরআন অমান্য করার নামান্তর হয়। কিন্তু আমাদের দেশের আহলে হাদীস এ নীতিতে বিশ্বাসী নয়। তারা এমন মতাদর্শের অনুসারী যা “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত” এর মাপকাঠিতে পড়ে না। বরং তারা “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত”এর ইমামদ্বয় যথাক্রমে আবুল হাসান আশআরী ও আবু মানসুর মাতুরীদিকে পথভ্রষ্ট ও গোমরাহ বলে প্রচার করে।
৩. দোয়ার মধ্যে উসিলা প্রসঙ্গ
কুরআন-হাদীসের যেসব অবস্থায় উসিলা দিয়ে দোয়া করার ফযিলত ও বৈধতা প্রমাণিত “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত”সে উসিলাকে যথাযথ স্থানে বৈধ বা মুস্তাহাব মনে করেন। সারকথা হল, জীবিত বা মৃতব্যক্তি নিজের আমল ও অন্যের আমল দ্বারা উসিলা গ্রহণ সর্বাবস্থায় জায়েয। কারণ এ সবগুলোর মূলকথা হলো, আল্লাহ তা‘য়ালার উসিলা ধারণ। অথচ লা-মাযহাবীরা এ বিষয়ে গোঁড়ামির পথ অবলম্বন করে, বৈধকে অবৈধ সাব্যস্ত করে। যা বহু আয়াত ও হাদীসের অপব্যাখ্যার শামিল।
৪.ঝাড়-ফুঁক
কুরআনের আয়াত,আল্লাহর নাম এবং হাদীসে বর্ণিত দোয়াসমূহ দ্বারা ঝাড়-ফুঁক, তাবিজ-কবজ করা “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত”এর নীতি-আদর্শে বৈধ। তবে লা-মাযহাবীরা এ নিয়ে চরম বাড়াবাড়ি ও একগুঁয়েমীর নীতি অবলম্বন করে তাবিজ-কবজকে কুফর আখ্যায়িত করে।
‘আল-লুমআত শরহে মিশকাত’-এ উল্লেখ আছে ,
وهي جائزة بالقرآن والاسماء الالهية ومافي معناها بالاتفاق
ঝাড়-ফুঁক কুরআন, আসমায়ে হুসনা ও অনুরূপ অর্থ বিশিষ্ট বাক্য দ্বারা জায়েয ও বৈধ। তবে যে কালামের অর্থ জানা যায় না, অনারবী ভাষায় শিরকযুক্ত কালাম দ্বারা তাবিজ-কবজ,ঝাড়-ফুঁক করলে এবং এগুলোর নিজস্ব ক্ষমতা আছে মনে করলে তা অবৈধ বলে বিবেচিত হবে। যে হাদীসে ঝাড়-ফুঁক ও তাবিজকে শিরক বলা হয়েছে তা উপরোক্ত কারণ পাওয়া যাওয়ার শর্তে বলা হয়েছে।
৫. রাসূলের রওযা যিয়ারতের নিয়তে মদিনা যাওয়া প্রসঙ্গ
আমাদের দেশের আহলে হাদীসগণ আল্লামা ইবনে তাইমিয়া ও কাজী ইয়াজ রহ.-এর ব্যক্তিগত মতামতের উপর ভিত্তি করে সাহাবা, তাবেঈনের আমল ও আদর্শের বিপরীতে এ নিয়ে নতুন বিতর্ক ও ফিতনার সূত্রপাত ঘটাচ্ছে। এ ব্যাপারে তাদের বক্তব্য হল, মুসলমান মদিনা শরীফে যাবে একমাত্র মসজিদে নববীতে নামায পড়ার নিয়তে। রওযা শরীফ যিয়ারতের নিয়তে মদিনা গমন অবৈধ, কারণ হাদীস শরীফে এসেছে- لاتشدوا الرحال الا الي ثلثة مساجد…الخ “মসজিদে নববী, হারাম শরীফ ও মসজিদে আকসা ছাড়া অন্য কোনো কিছুর উদ্দেশ্যে সফর করা যাবে না”।
হাদীসের উক্ত ব্যাখ্যা নিতান্ত ইবনে তাইমিয়ার নিজস্ব ব্যাখ্যা। অথচ সকল মুহাদ্দিসগণ এর ব্যাখ্যা এভাবে দিয়েছেন যে, উক্ত তিন মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন মসজিদের উদ্দেশ্যে সফর করা যাবে না। অর্থাৎ তিনটি মসজিদ ছাড়া অন্য কোনো মসজিদের উদ্দেশ্যে সফর করা এ হাদীসের নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত। অন্যান্য স্থানে সফর করার বিষয়টি এর অন্তর্ভুক্তই নয়। এটাই সঠিক ব্যাখ্যা। তাহলে রওযা যিয়ারতের উদ্দেশ্যে গমন কিভাবে অবৈধ। কারণ এর অনুকূলে হাদীস পাওয়া যায়। তাছাড়া আল্লামা আইনী ও আসকালানী রহ.সহ সকল মুহাদ্দিস এ ব্যাখ্যাকে সঠিক বলেছেন। তাই রাসূলের রওযা যিয়ারতের উদ্দেশ্যে মদিনা গমন করা শরীয়তসম্মত।
৬. জুম‘আর খুতবা অনারবীতে পড়া প্রসঙ্গ
সম্প্রতি আহলে হাদীসরা জুম‘আর খুতবা অনারবীতে ও আঞ্চলিক ভাষায় পড়ার কথা বলে থাকে। এ প্রসঙ্গে তাদের কোনো দলীল-প্রমাণ নেই। কারণ রাসূল স. ও সাহাবাদের যুগে কখনো অনারবীতে খুতবা দেয়ার প্রমাণ মেলে না। সাহাবিদের মধ্যে যারা ভিন্ন ভাষাভাষী ছিলেন, তারাও নিজেদের দেশে মাতৃভাষায় খুতবা পড়েননি। একারণেই ইসলামের প্রথম যুগ থেকে আজ পর্যন্ত, পৃথিবীর পূর্ব থেকে পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত বহু ভাষার মুসলমান থাকা সত্ত্বেও কেবলমাত্র আরবী ভাষায়ই খুতবা পড়ার নিয়ম চালু হয়ে আসছে।
হ্যাঁ, লা-মাযহাবীদের নিকট শুধু যুক্তি ও কিয়াস আছে।
অথচ তারা যুক্তি কিয়াসের বিরোধী। তারা শুধু কুরআন,হাদীস মানার দাবী করে থাকে। এ বিষয়ে কুরআন,হাদিস বাদ দিয়ে মনগড়া যুক্তির ভিত্তিতে অনারবী ভাষায় খুতবা পড়ার প্রথা চালু করা “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত”এর মৌলিক আদর্শ ও মাপকাঠি বিরোধী। তাই তারা এ বিষয়েও “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত”থেকে বহির্ভূত।
৭. নামাযে মুক্তাদির সূরা ফাতেহা পড়া,জোরে আমীন বলা,
বার বার হাত উঠানো প্রসঙ্গ
এ বিষয়গুলো এমন যে, রাসূল স. থেকে এসব বিষয়ে বিভিন্ন রকম বিবরণ পাওয়া যায়। ফলে এর ব্যাখ্যায় মাযহাবের ইমামগণ মতবিরোধ করেছেন। মুজতাহিদগণের মতামত দেয়ার অধিকার কুরআন-সুন্নাহ কর্তৃক প্রমাণিত। যারা মুজতাহিদ নন, তারা যে ইমামের তাকলীদ করেন সে ইমামের মতানুসারে আমল করাই “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত”এর আদর্শ। যেমন, মুক্তাদি নামাযে ফাতেহা পড়া। এ ব্যাপারে বিভিন্ন রকম আয়াত ও হাদীস রয়েছে। ইমাম শাফেয়ী রহ. ফাতেহা পড়াকে ওয়াজিব বলেছেন, তাই শাফেয়ী মাযহাবের অনুসারীদের জন্য ইমামের পিছনে ফাতেহা পড়াই “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত”-এর আদর্শ।
ইমাম আবু হানিফা রহ. ইমামের পিছনে ফাতেহা পড়াকে নাজায়েয বলেছেন, তাই হানাফিদের জন্য ইমামের পিছনে ফাতেহা না পড়াই “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত”-এর আদর্শ।
পক্ষান্তরে লা-মাযহাবীরা মুজতাহিদও নন যে, নিজেরাই একটি স্বতন্ত্র মত উদ্ভাবন করবেন। আবার কোন মাযহাবের অনুসারীও নন যে, ইমামের মাযহাব মতে আমল করবেন। তাহলে মুক্তাদি হয়ে ইমামের পিছনে সূরায়ে ফাতেহা পড়াও তাদের জন্য সুন্নাত হবেনা, না পড়াও সুন্নাত বলে গণ্য হবে না। তা সত্ত্বেও ইমাম আবু হানিফা রহ. এর মত মুজতাহিদের ইজতিহাদকে ভুল আখ্যা দিয়ে সূরা ফাতিহা পড়ার উপর চেঁচামেচি করা আহলে সুন্নাতের আদর্শ পরিপন্থী, যা তারা করে থাকেন।
মুজতাহিদ না হয়ে কোন মুজতাহিদের তাকলীদ না করে নামাযে বার বার হাত উঠানো বা না উঠানো কোনোটিই সুন্নাতের অনুকরণ হবে না। আমীন জোরে বললেও সুন্নাতের অনুকরণ হবে না। আস্তে বললেও হবে না। তাই এসব বিষয়ে নিজস্ব মতামত প্রকাশ করা “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত”-এর আদর্শ পরিপন্থী। তাই তারা এসব ব্যাপারেও “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত”বিরোধী।
৮. তাসাওফ ও আত্মশুদ্ধির ব্যাপারে বাড়াবাড়ি
শরীয়ত ও তরীকত উভয়ই ইসলামের অঙ্গ,একটি অপরটির পরিপূরক। ইসলামে শরীয়তবিহীন তরীকতের যেমন অনুমোদন নেই, তেমনি তরীকতবিহীন শরীয়তেরও কোনো মূল্য নেই। মানুষের বিবেক যেন পাহারা দিচ্ছে শরীয়তকে, আর অন্তর পাহারা দিচ্ছে তরীকতকে। সাহাবায়ে কিরাম, আসলাফ এ আদর্শের উপরই প্রতিষ্ঠিত ছিলেন।
তাই “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত”-এর আদর্শ হলো, যেভাবে শরীয়তের যাহেরী বিধানের উপর আমল করা জরুরী। তদ্রুপ ইখলাস, তাকওয়া,সবর, শোকর প্রভৃতি আত্মার গুনাবলি অর্জন এবং রিয়া, অহংকার, হিংসা-বিদ্বেষ প্রভৃতি অন্তরের ব্যাধিগুলো দূর করাও মুমিনের উপর ওয়াজিব।
ইরশাদ হয়েছে, قد افلح من زكها وقد خاب من دسها অর্থাৎ “সফলকাম সে, যে নিজের তাযকিয়া তথা আত্মশুদ্ধি করে” আর আত্মশুদ্ধির এ সাধনাকে বলা হয় আধ্যাত্মিক সাধনা। হাদীসের ভাষায় এর নাম ইহসান। যা বুখারী শরীফের ঐতিহাসিক ‘হাদীসে জিবরাঈল’-এ উল্লেখ হয়েছে।
কুরআন-হাদিস এবং সাহাবাদের অনুকরণে তাসাওফকে জরুরী মনে করা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আদর্শ।
তবে এতে অতিমাত্রায় আসক্তি কুরআন-সুন্নাহ বিকৃতির শামিল, যা ভণ্ডপীরের স্বভাব। এটা যেমন হারাম ও বাতিল বলে গণ্য, তেমনি ভাবে হাদীসের ইহসানের ব্যাখ্যা না মেনে আধ্যাত্মিক সাধনাকে শিরক বা বিদ‘আত বলা, যা লা-মাযহাবীদের আদর্শ তাও বাতিল ও ভ্রষ্টতা এবং কুরআন-হাদীস বিকৃতি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন