কুরবানী
আরবি শব্দ,
আরবিতে কুরবানুন, কুরবুন শব্দ থেকে নির্গত যার অর্থ নৈকট্য, উৎসর্গ, বিসর্জন ও ত্যাগ ইত্যাদি।
একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত এবং ইসলামে...র একটি অন্যতম ঐতিহ্য। শরীয়তের পরিভাষায়, আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে যুলহজ্জ মাসের ১০, ১১ ও ১২ এ তিনটি দিনে আল্লাহর নামে নির্দিষ্ট নিয়মে হালাল পশু যবেহ করাই হল কুরবানী।
ত্যাগ-তিতিক্ষা ও প্রিয়বস্তু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করাই কুরবানীর তাৎপর্য।
প্রচলিত কুরবানী হযরত ইবরাহীম -এর অপূর্ব আত্মত্যাগের ঘটনারই স্মৃতিবহ। হাদীসে বর্ণিত আছে, ‘রাসূলুল্লাহ -এর সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! এ কুরবানী কী? তিনি বললেন, ‘এটা তোমাদের পিতা ইবরাহীম -এর সুন্নাত।’ তাঁরা বললেন, এতে আমাদের কি কল্যাণ নিহিত আছে? তিনি বললেন, ‘এর প্রত্যেকটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকি রয়েছে।’ তাঁরা পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, বকরীর পশমেও কি তাই? জবাবে তিনি বললেন, ‘বকরীর প্রতিটি পশমের বিনিময়েও একটি করে নেকি আছে।’ মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইবরাহীম থেকে অব্যাহত ভাবে চলে আসছে কুরবানীর ঐতিহ্য ধারা।
আজ থেকে পাঁচ হাজার বছর আগে হজরত ইবরাহীম স্বপ্নাদিষ্ট হয়েছিলেন প্রিয়তম বস্তু তথা তাঁর পুত্র ইসমাইল -কে কুরবানী করার জন্য। সে অনুযায়ী তিনি পরম করুণাময় আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য প্রিয়পুত্রকে কুরবানী দিতে উদ্যত হন। কিন্তু মহান আল্লাহর ইচ্ছায় তাঁকে আর শেষ পর্যন্ত পুত্রকে কুরবানী দিতে হয়নি। ইসমাইল -এর পরিবর্তে কুরবানী হয় একটি পশু। মহান আল্লাহর এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন হজরত ইবরাহীম । এই সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমাকে তুলে ধরাই ঈদুল আযহার পশু কুরবানীর প্রধান মর্মবাণী। কুরবানীর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিলের পাশাপাশি মানবিক গুণাবলির বিকাশ সাধন, চিন্তার স্বচ্ছতা, ত্যাগের মহিমা, হৃদয়ের উদারতা সবকিছু মিলে কুরবানীর এক স্মরণীয় অধ্যায়।
কার উপর কুরবানী ওয়াজিব ?
সুস্থ মস্তিষ্ক, প্রাপ্তবয়স্ক, মুকীম (মুসাফির নয় এমন ব্যক্তি) ব্যক্তিই ১০ যুলহজ্জ ফজর হতে ১২ যুলহজ্জ সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে নিসাব (সাড়ে সাত তোলা সোনা অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা অথবা সেই পরিমাণ নগদ অর্থ) পরিমাণ সম্পদের মালিক হয় তবে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব।
কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার জন্য যাকাতের নিসাবের মতো সম্পদের এক বছর অতিবাহিত হওয়া শর্ত নয়। বরং যে অবস্থায় সাদাকায়ে ফিতর ওয়াজিব হয় সেই অবস্থায় কুরবানীও ওয়াজিব হবে।
কুরবানী না করার পরিনাম ---
নেক আমলসমূহের মধ্যে কুরবানী একটি বিশেষ আমল। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ সবসময় কুরবানী করেছেন এবং সামর্থ থাকা সত্ত্বেও কুরবানী বর্জনকারী ব্যক্তির প্রতি তিনি সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন। মহানবী বলেন, ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানী করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।’
কুরবানীর এ ফযীলত হাসিল করতে হলে প্রয়োজন সেই আবেগ-অনুভূতি, প্রেম-ভালবাসা ও ঐকান্তিকতা যা নিয়ে কুরবানী করেছিলেন আল্লাহর খলীল হযরত ইবরাহীম । কেবল গোশত ও রক্তের নাম কুরবানী নয়। বরং আল্লাহর রাহে নিজের সম্পদের একটি অংশ বিলিয়ে দেওয়ার এক দৃপ্ত শপথের নাম কুরবানী। গোশত খাওয়ার নিয়তে কুরবানী করলে তা আল্লাহর নিকট কবুল হবে না। কেননা আল্লাহ তাআলার নিকট গোশত ও রক্তের কোন মূল্য নেই। মূল্য আছে কেবল তাকওয়া, পরহেযগারী ও ইখলাসের। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহর কাছে কখনো যবেহকৃত পশুর গোশত ও রক্ত পৌঁছবে না, পেঁৗঁছবে কেবল তাকওয়া [সূরা আল-হজ্জ: ৩]।
অতএব আমাদের একান্ত কর্তব্য, খাঁটি নিয়ত-সহকারে কুরবানী করা এবং তা থেকে শিক্ষার্জন করা। নিজেদের আনন্দে অন্যদের শরীক করা ঈদুল আযহার শিক্ষা। কুরবানীকৃত পশুর গোশত তিন অংশে ভাগ করে এক অংশ নিজের জন্য সংরক্ষণ, দ্বিতীয় অংশ আত্মীয়-স্বজনকে প্রদান এবং তৃতীয় অংশ সমাজের অভাবগ্রস্থ ও দরিদ্র মানুষের মাঝে বিলিয়ে দেওয়া ইসলামের বিধান। কুরবানীকৃত পশুর চামড়া অনাথ আশ্রম, এতিমখানা ও মাদরাসায় পড়–য়া দরিদ্র শিক্ষার্থীদের ভরণপোষণের জন্য প্রদান করলে দ্বিবিধ সওয়াব হাসিল হয়।
এক দুঃখী মানুষের সাহায্য দ্বিতীয় দীনী শিক্ষার বিকাশ। প্রকৃতপক্ষে কুরবানীদাতা কেবল পশুর গলায় চুরি চালায় না, বরং সে তো চুরি চালায় সকল প্রবৃত্তির গলায় আল্লাহর প্রেমে পাগলপারা হয়ে। এটিই কুরবানীর মূল নিয়ামক ও প্রাণশক্তি।
এ অনুভূতি ব্যতিরেকে যে কুরবানী করা হয় তা হযরত ইবরাহীম ও ইসমাঈল -এর সুন্নাত নয়, এটা এক রসম তথা প্রথা মাত্র। এতে গোশতের ছড়াছড়ি হয় বটে কিন্তু সেই তাকওয়া হাসিল হয় না যা কুরবানীর প্রাণশক্তি। পশু কুরবানীর মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে মানুষের মধ্যে বিরাজমান পশু শক্তি, কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, পরনিন্দা, পরশ্রীকাতরতা ইত্যাদি রিপুগুলোকেই কুরবানী দিতে হয়। আর হালাল অর্থে অর্জিত পশু কুরবানীর মাধ্যমে তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটানো হয়। আমরা চাই ব্যক্তি, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে সকল অনিশ্চয়তা-শঙ্কা দূর হোক। হিংসা-হানাহানি ও বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে কুরবানীর আনন্দে শামিল হয়ে সকলের মধ্যে সাম্য ও সহমর্মিতার মনোভাব জাগিয়ে তুলতে হবে।আরো দেখুন
৷
উপরোক্ত লেখাটি ডঃ আ ফ ম খাদিল কতৃক রচিত , মাসীক আত্ -তাওহীদ সম্পাদক
*********************************************
পৃথিবীতে মানব সভ্যতার ইতিহাসের মতো কুরবানীর ইতিহাসও প্রাচীন। কুরবানীর বিধান ছিলো না, এমন কোনো জাতির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন : ‘আমি প্রত্যেক জাতির জন্য কুরবানী নির্ধারণ করেছি।' [সুরা হাজ : ৩৪]। তবে যুগে যুগে কুরবানীর নিয়ম-পদ্ধতি ভিন্ন ভিন্ন ধারায় ছিলো। হাসান বসরী (রহ.) এর মতে, সূরা আল কাওছারে বর্ণিত ‘ফাসল্লি লি রবিবকা অনহার' অর্থাৎ ‘আপনি আপনার রবের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করুন এবং কুরবানী করুন' আয়াতটি নাযিল করে মহান আল্লাহ তাআলা ঈদুল আযহার সালাত আদায় ও কুরবানীর নির্দেশ দান করেন। [আহকামুল কুরআন, ৩য় খন্ড, পৃ. ৪৭৫]। আল্লাহর নির্দেশে আদিষ্ট হয়ে ২য় হিজরীতে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঈদুল আযহার সালাত আদায় ও কুরবানী করেন। সেই হতে প্রতিবছর মুসলিম উম্মাহ যথারীতি কুরবানী করে আসছে। এ হিসেবে মুসলিম উম্মাহ এ বছর ১৪৩৩তম কুরবানী কার্যক্রম পরিচালনা করবে। একজন সচেতন মুসলিম হিসেবে কুরবানী কী, কেন কুরবানী করতে হবে, কীভাবে কুরবানী করতে হবে, কুরবানীর শিক্ষাই-বা কী? ইত্যাদি বিষয়ে সম্যক জ্ঞান থাকা আমাদের একান্ত আবশ্যক।
কুরবানীর পশু সংক্রান্ত জরুরি মাসায়েল
যেসব পশু দিয়ে কুরবানী দেয়া যাবে : গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া, দুম্বা, উট ইত্যাদি পশু কুরবানী দেয়া যাবে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে এই যে, গরু, মহিষ কমপক্ষে দুই বছরের হতে হবে। ছাগল, ভেড়া, দুম্বা কমপক্ষে এক বছরের হতে হবে। উট কমপক্ষে পাঁচ বছরের হতে হবে। অবশ্য ছয় মাসের ভেড়া যদি দেখতে মোটাতাজা হয় এবং এক বছর বয়সের মনে হয় তাহলে তা দিয়ে কুরবানী বৈধ। -হেদায়া, শামী, আলমগীরী
যে পশুই কুরবানী দেয়া হোক না কেন তা হতে হবে সুস্থ ও সবল। কুরবানীর পশু চয়নের ক্ষেত্রে মনে রাখবে, এই পশুটি আল্লাহর দরবারে উপহার দেয়া হচ্ছে। তাই উৎকৃষ্ট পশু উপহার দেয়া উচিত। দুনিয়াতে আমরা কোনো উচ্চ পদাধিকারী ব্যক্তির নিকট যদি কোন উপহার পাঠাই, তাহলে সবচে' ভাল এবং উৎকৃষ্ট জিনিসটি পাঠাই। তাহলে মহান আল্লাহর নিকট পাঠানো জিনিস কেন উৎকৃষ্ট হবে না?
পশুর মধ্যে যেসব ত্রুটি থাকলে কুরবানী দেয়া যাবে না : (১) যে পশুর দৃষ্টিশক্তি নেই। (২) যে পশুর শ্রবণশক্তি নেই। (৩) এই পরিমাণ লেংড়া যে, জবাই করার স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে না। (৪) লেজের অধিকাংশ কাটা। (৫) কানের অধিকাংশ কাটা। (৬) অত্যন্ত দুর্বল, জীর্ণ-শীর্ণ প্রাণী। (৭) গোড়াসহ শিং উপড়ে গেছে। (৮) পশু এমন পাগল যে, ঘাস পানি ঠিকমত খায় না। মাঠেও ঠিকমত চরানো যায় না। (৯) জন্মগতভাবে কান নেই। (১০) দাঁত মোটেই নেই বা অধিকাংশ নেই। (১১) স্তনের প্রথমাংশ কাটা। (১২) রোগের কারণে স্তনের দুধ শুকিয়ে গেছে। (১৩) ছাগলের দুটি দুধের যে কোন একটি কাটা। (১৪) গরু বা মহিষের চারটি দুধের যেকোন দুটি কাটা। (১৫) জন্মগতভাবে একটি কান নেই।
পশুর মধ্যে যেসব ত্রুটি থাকলে কুরবানী দেয়া যাবে : (তবে উত্তম হচ্ছে পরিপূর্ণ সুস্থ পশু দেয়া, ত্রুটিযুক্ত প্রাণী না দেয়া) (১) পশু পাগল, তবে ঘাস-পানি ঠিকমত খায়। (২) লেজ বা কানের কিছু অংশ কাটা, তবে অধিকাংশ আছে। (৩) জন্মগতভাবে শিং নেই। (৪) শিং আছে, তবে ভাংগা। (৫) কান আছে, তবে ছোট। (৬) পশুর একটি পা ভাংগা, তবে তিন পা দিয়ে সে চলতে পারে। (৭) পশুর গায়ে চর্মরোগ। (৮) কিছু দাঁত নেই, তবে অধিকাংশ আছে। স্বভাবগত এক অন্ডকোষ বিশিষ্ট পশু। (১০) পশু বয়োবৃদ্ধ হওয়ার কারণে বাচ্চা জন্মদানে অক্ষম। (১১) পুরুষাঙ্গ কেটে যাওয়ার কারণে সঙ্গমে অক্ষম।
কতজন মিলে একটি পশু কুরবানী দিতে পারবে : ছাগল, ভেড়া, দুম্বা ইত্যাদি পশু শুধু এক ব্যক্তি কুরবানী দিতে পারবে। গরু, মহিষ, উট সর্বোচ্চ সাত ব্যক্তি মিলে কুরবানী দিতে পারবে। অনেকে মনে করে থাকে, কুরবানীর পশুতে একাধিক শরীক থাকলে অংশ নির্ধারণ করতে হবে বেজোড় সংখ্যা হিসেবে।
শরীক হতে হবে তিনজন, পাঁচজন বা সাতজন- এই ধারণা ঠিক নয়। সঠিক বিষয় হচ্ছে এই যে, এক থেকে সাত পর্যন্ত যে কোন অংশে পশুটিকে ভাগ করা যাবে। তাই দু'জন, তিনজন, চারজন, পাঁচজন, ছয়জন ও সাত ব্যক্তি মিলে একটি পশু কুরবানী দিতে পারবে।
একাধিক শরীক থাকলে করণীয় : একাধিক শরীক থাকলে লক্ষণীয় বিষয় এই যে, অংশহিসেবে ভাগ যেন যথার্থ হয়। প্রাপ্য অংশের চেয়ে কেউ যেন কম বা বেশি না পায়। আরেকটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, কারো যেন নিয়তে গড়মিল না থাকে। কোন অংশীদারের যদি শুধু মাংস খাওয়া উদ্দেশ্য হয় তাহলে কারো কুরবানী হবে না। এজন্য কুরবানী শুদ্ধ হওয়ার জন্য সবার নিয়ত শুদ্ধ হওয়া জরুরি।
ভাল পশু ক্রয়ের পর ত্রুটিযুক্ত হয়ে গেলে : কুরবানীর উদ্দেশ্যে ভাল পশু ক্রয়ের পর যদি তা এই পরিমাণ ত্রুটিযুক্ত হয়ে যায়, যা দ্বারা কুরবানী জায়েজ হবে না তাহলে দেখতে হবে ক্রেতা ধনী না দরিদ্র? ক্রেতা যদি দরিদ্র হয় তাহলে সেই ত্রুটিযুক্ত পশু দিয়েই সে কুরবানী দিবে। আর যদি ক্রেতা ধনী হয়, তাহলে দ্বিতীয় আরেকটি পশু কিনে কুরবানী দিতে হবে। প্রথমটি দিয়ে কুরবানী শুদ্ধ হবে না। (ফতোয়ায়ে শামী, ৫ম খন্ড, ২৮৪ পৃষ্ঠা)
পশু জবাই করার জন্য যেসব শর্তঃ ইসলামী শরীয়তে পশু জবাই করার জন্য তিনটি শর্ত রয়েছে। (১) জবাইকারী ব্যক্তি মুসলমান হতে হবে। (২) জবাই করার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করতে হবে। (৩) পশুর খাদ্যনালী, শ্বাসনালী ও গলায় অবস্থিত অন্যান্য রগ ভালভাবে কাটতে হবে। (জাওয়াহিরুল ফিকহ, ২য় খন্ড, ৩৭৫ পৃষ্ঠা।)
জবাই করার নিয়মাবলী : (১) জবাই করার পূর্বে পশুকে ঘাস, পানি ইত্যাদি ভালভাবে খাওয়াতে হবে। কোরবানীর প্রাণীকে ক্ষুধার্থ বা পিপাসার্ত রাখা অন্যায়। (২) পশুকে কোরবানী করার স্থানে টেনে হিঁচেড়ে নেয়া অন্যায়। (৩) জবাই করার জন্য পশুকে শোয়াতে হবে সহজ সুন্দরভাবে। কঠোরভাবে নয়। (৪) কেবলার দিকে ফিরিয়ে শোয়াতে হবে, বাম পার্শ্বের উপর। (৫) পশুর চার পায়ের মধ্যে তিনটি বাঁধবে। (৬) আগে থেকেই ছুরি ধারা দিয়ে রাখবে। ভোঁতা ছুরি দিয়ে জবাই করবে না। (৭) ছুরি যদি ধরাতে হয় তাহলে পশুর সামনে ধারাবে না। আড়ালে ধারাবে। (৮) কোরবানীর পশু শোয়ানোর পর ছুরি ধারানো অন্যায়। বরং আগে থেকেই ধার দিয়ে নিবে (ফতোয়ায়ে রহীমিয়া, ১ম খন্ড, ৯৮ পৃষ্ঠা) (৯) গলায় জবাই করতে হবে। (১০) এমনভাবে জবাই করা যাবে না যাতে গলা পুরাপুরি আলাদা হযে যায়। (১১) জবাই করার সময় ‘বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার' বলতে হবে। (১২) যাতে দ্রুত জবাই হয়ে যায় এবং পশুর কষ্ট কম হয় সেদিকে খেয়াল রাখবে। (১৩) একটি পশুকে আরেকটি পশুর সামনে জবাই না করা ভাল। (১৪) পশুর প্রাণ বের হওয়ার পূর্বে চামড়া খসানোর কাজ শুরু না করা। (১৬) ঘাড়ের দিক থেকে জবাই করা যাবে না। (১৭) বিখ্যাত সাহাবী হযরত ইবনে আববাস রা. এর মত অনুযায়ী ঘাড়ের দিকে থেকে জবাইকৃত পশুর গোশত খাওয়া বৈধ নয়। (জাওয়াহিরুল ফিক্হ, ২য় খন্ড, ২৭৩ পৃষ্ঠা)
প্রতি বছর আমরা পশু কোরবানী করে থাকি। গোস্ত নিজেরা খাই এবং অন্যকে দেই। চামড়া বিক্রি করে গরীবদের মাঝে সে অর্থ বিলিয়ে দেই। এ বিষয়ে ইসলামের দিকনির্দেশনা পুরাপুরিভাবে আমরা অনেকেই জানি না। তাই গোস্ত বণ্টন সম্পর্কে শরীয়তের বিধান জেনে নেই।
(১) কোরবানীর পশুর গোস্ত তিন ভাগ করে এক ভাগ গরীব মানুষকে, এক ভাগ আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীকে দিবে। বাকি এক ভাগ নিজে খাবে। (২) আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশী গোস্ত নিতে আসবে এই অপেক্ষা না করে নিজ দায়িত্বে তাদের ঘরে গোস্ত পৌঁছে দেয়া উচিত। (৩) যদি একাধিক শরীক থাকে তাহলে গোস্ত ভাগ করবে ওজন করে। অনুমান বা আন্দাজ করে নয়। কারণ অনুমান করে ভাগ করলে বেশকম হতে পারে, যা গুণাহের কারণ। (৪) যে কসাই গোস্ত তৈরি করে দিবে তাকে আলাদাভাবে কাজের জন্য মজুরি দিতে হবে। মজুরি হিসেবে কোরবানীর গোস্ত দেয়া জায়েজ নেই। তার প্রাপ্য মজুরি দেয়ার পর লিল্লাহ গোস্ত আলাদা দেবে। (৫) কারো ভাগে যদি পায়া, ক্ষুর, মাথা বা কোন হাড্ডি বেশি যায় তাহলে তার অংশ থেকে গোস্ত একটু কমিয়ে দিতে হবে। যেন গড়ে সমান হয়। (৬) কোরবানী যেহেতু আল্লাহর জন্য করা হয়, তাই এতে নিজে ভোগ করার চেয়ে গরীব মানুষের মুখে হাসি ফুটানোর চেষ্টা বেশি করা উচিত। (৭) কোরবানীর গোস্ত নিজে খাবে, অন্যকে খাওয়াবে, যতদিন ইচ্ছা রেখে খাওয়া যায়, এতে কোন বাধা নেই। (৮) পশুর রশি ও গলার মালা ইত্যাদি দান করে দিতে হবে।
চামড়া সংক্রান্ত আলোচনা : (১) কোরবানীর পশুর চামড়া নিজে ব্যবহার করতে পারবে। (২) চামড়া যদি বিক্রি করা হয় তাহলে তার মূল্য অবশ্যই গরীব মানুষের মধ্যে দান করে দিতে হবে। নিজে ব্যবহার করা যাবে না। (৩) চেষ্টা করা উচিত চামড়ার টাকা পরিবর্তন না করে হুবহু দান করে দিতে।
কোরবানীর সাথে আকিকা দেয়া যায় কিনা : কোরবানীর সাথে আকিকা দেয়া যায়। এতে কোন সমস্যা নেই। কোরবানীর গোস্তের মতো আকিকার গোস্তও নিজে খেতে পারবে, অপরকে খাওয়াতে পারবে, দিতেও পারবে। ছেলের আকিকা হলে দুইটি ছাগল অথবা গরুতে দুই শরীক এবং মেয়ের আকিকা হলে একটি ছাগল অথবা গরুতে এক শরীক দিতে হবে। যেমন একটি হাদীসে এসেছে, বিখ্যাত সাহাবী হযরত আমর ইবনে শোয়াইব (রা.) বলেন, প্রিয় নবী (সা.) বলেন, যার সন্তান হয় সে যদি চায় আকিকা দিতে, তাহলে ছেলে সন্তান হলে দুটি ছাগল এবং মেয়ে সন্তান হলে একটি ছাগল আকিকা দিবে। আবু দাউদ, নাসায়ী। এখানে আরেকটি বিষয় জানা জরুরি। তা এই যে, যদি কারো ছেলে সন্তান হয় এবং তার দুটি ছাগল আকিকা দেয়ার সামর্থ না থাকে তাহলে একটি ছাগল দিলেই হবে। অনুরূপভাবে গরু-মহিষে দুই শরীক দিতে সক্ষম না হলে এক শরীক দিলেও চলবে।
প্রিয় পাঠক! এখানে একটি ভুল ধারণার অবসান হওয়া উচিত। কেউ মনে করতে পারে, এখানে মেয়ে সন্তান হলে মাত্র একটি ছাগল দেয়ার কথা বলা হয়েছে। আর ছেলে হলে দুটি। এতে করে ছেলেদের মর্যাদা বেশি দেয়া হয়েছে। এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। কোনভাবেই ছেলের মর্যাদা বেশি দেয়া হয়নি। কারণ, আকিকা দেয়া হয় সন্তানের উপর থেকে বিপদ আপদ যেন দূর হয়ে যায় এই উদ্দেশ্যে। সাধারণত ছেলে সন্তানের উপর বিপদ আপদ বেশি আসে এবং মেয়ে সন্তানের উপর কম আসে। তাই আল্লাহর রাসূল (সা.) ছেলের জন্য দুই এবং মেয়ের জন্য একটি ছাগল আকিকা দিতে বলেছেন।
পশু কোরবানীর সাথে পশুত্বের কোরবানী করতে হবে
আমরা মানুষ। আমাদের মধ্যে যেমন ফেরেশতার স্বভাব আছে তেমনি পশুর স্বভাবও আছে। মানুষের মধ্যে যত ভালো গুণ রয়েছে, সেগুলো হলো-ফেরেশতার স্বভাব। আর হিংসা, বিদ্বেষ, ঘৃণা, অন্যায়ভাবে কারো উপর আক্রমণ করা, মানুষের ধন-সম্পদ অবৈধভাবে দখল করা, কারো অধিকার কেড়ে নেয়া ইত্যাদি হলো পশুর স্বভাব। পবিত্র কোরবানী ঈদে আমরা পশু কোরবানী করে থাকি। কুরবানীর মূল ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে এই উপলক্ষে অর্জিত তাকওয়া বা আল্লাহভীতি দ্বারা নিজের পশু স্বভাবকে কোরবানী করি না। তাই আমাদের সমাজ থেকে অন্যায় অবিচার দূর হয় না। যদি পশু কোরবানীর সাথে সাথে আমরা নিজেদের পশুস্বভাবকেও কোরবানী করতে পারি, তবেই আমাদের সমাজ হবে সুখময়, শান্তিময় ও আনন্দময়। আল্লাহর রাসূল (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের আমলে মানুষ যেরূপ শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে জীবন যাপন করেছে, অনুরূপ পবিত্র স্বভাবের অধিকারী হয়ে আজও সেরূপ শান্তি ও নিরাপত্তা আমরা লাভ করতে পারি। এ জন্যে আমাদেরকে সাহাবায়ে কেরামের গুণাবলী অর্জন করতে হবে। তাদের মাঝে ছিল সব উত্তম গুণাবলী। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর মহা ত্যাগের মহা স্মৃতি পবিত্র কুরবানী অনুষ্ঠান থেকে লব্ধ শিক্ষা দ্বারা আমরা যাতে নিজেদের চরিত্র গঠন করতে পারি, আল্লাহ আমাদের সেই তাওফিক দিন। এটাই একমাত্র কামনা।
আরবি শব্দ,
আরবিতে কুরবানুন, কুরবুন শব্দ থেকে নির্গত যার অর্থ নৈকট্য, উৎসর্গ, বিসর্জন ও ত্যাগ ইত্যাদি।
একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত এবং ইসলামে...র একটি অন্যতম ঐতিহ্য। শরীয়তের পরিভাষায়, আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে যুলহজ্জ মাসের ১০, ১১ ও ১২ এ তিনটি দিনে আল্লাহর নামে নির্দিষ্ট নিয়মে হালাল পশু যবেহ করাই হল কুরবানী।
ত্যাগ-তিতিক্ষা ও প্রিয়বস্তু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করাই কুরবানীর তাৎপর্য।
প্রচলিত কুরবানী হযরত ইবরাহীম -এর অপূর্ব আত্মত্যাগের ঘটনারই স্মৃতিবহ। হাদীসে বর্ণিত আছে, ‘রাসূলুল্লাহ -এর সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! এ কুরবানী কী? তিনি বললেন, ‘এটা তোমাদের পিতা ইবরাহীম -এর সুন্নাত।’ তাঁরা বললেন, এতে আমাদের কি কল্যাণ নিহিত আছে? তিনি বললেন, ‘এর প্রত্যেকটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকি রয়েছে।’ তাঁরা পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, বকরীর পশমেও কি তাই? জবাবে তিনি বললেন, ‘বকরীর প্রতিটি পশমের বিনিময়েও একটি করে নেকি আছে।’ মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইবরাহীম থেকে অব্যাহত ভাবে চলে আসছে কুরবানীর ঐতিহ্য ধারা।
আজ থেকে পাঁচ হাজার বছর আগে হজরত ইবরাহীম স্বপ্নাদিষ্ট হয়েছিলেন প্রিয়তম বস্তু তথা তাঁর পুত্র ইসমাইল -কে কুরবানী করার জন্য। সে অনুযায়ী তিনি পরম করুণাময় আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য প্রিয়পুত্রকে কুরবানী দিতে উদ্যত হন। কিন্তু মহান আল্লাহর ইচ্ছায় তাঁকে আর শেষ পর্যন্ত পুত্রকে কুরবানী দিতে হয়নি। ইসমাইল -এর পরিবর্তে কুরবানী হয় একটি পশু। মহান আল্লাহর এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন হজরত ইবরাহীম । এই সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমাকে তুলে ধরাই ঈদুল আযহার পশু কুরবানীর প্রধান মর্মবাণী। কুরবানীর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিলের পাশাপাশি মানবিক গুণাবলির বিকাশ সাধন, চিন্তার স্বচ্ছতা, ত্যাগের মহিমা, হৃদয়ের উদারতা সবকিছু মিলে কুরবানীর এক স্মরণীয় অধ্যায়।
কার উপর কুরবানী ওয়াজিব ?
সুস্থ মস্তিষ্ক, প্রাপ্তবয়স্ক, মুকীম (মুসাফির নয় এমন ব্যক্তি) ব্যক্তিই ১০ যুলহজ্জ ফজর হতে ১২ যুলহজ্জ সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে নিসাব (সাড়ে সাত তোলা সোনা অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা অথবা সেই পরিমাণ নগদ অর্থ) পরিমাণ সম্পদের মালিক হয় তবে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব।
কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার জন্য যাকাতের নিসাবের মতো সম্পদের এক বছর অতিবাহিত হওয়া শর্ত নয়। বরং যে অবস্থায় সাদাকায়ে ফিতর ওয়াজিব হয় সেই অবস্থায় কুরবানীও ওয়াজিব হবে।
কুরবানী না করার পরিনাম ---
নেক আমলসমূহের মধ্যে কুরবানী একটি বিশেষ আমল। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ সবসময় কুরবানী করেছেন এবং সামর্থ থাকা সত্ত্বেও কুরবানী বর্জনকারী ব্যক্তির প্রতি তিনি সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন। মহানবী বলেন, ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানী করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।’
কুরবানীর এ ফযীলত হাসিল করতে হলে প্রয়োজন সেই আবেগ-অনুভূতি, প্রেম-ভালবাসা ও ঐকান্তিকতা যা নিয়ে কুরবানী করেছিলেন আল্লাহর খলীল হযরত ইবরাহীম । কেবল গোশত ও রক্তের নাম কুরবানী নয়। বরং আল্লাহর রাহে নিজের সম্পদের একটি অংশ বিলিয়ে দেওয়ার এক দৃপ্ত শপথের নাম কুরবানী। গোশত খাওয়ার নিয়তে কুরবানী করলে তা আল্লাহর নিকট কবুল হবে না। কেননা আল্লাহ তাআলার নিকট গোশত ও রক্তের কোন মূল্য নেই। মূল্য আছে কেবল তাকওয়া, পরহেযগারী ও ইখলাসের। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহর কাছে কখনো যবেহকৃত পশুর গোশত ও রক্ত পৌঁছবে না, পেঁৗঁছবে কেবল তাকওয়া [সূরা আল-হজ্জ: ৩]।
অতএব আমাদের একান্ত কর্তব্য, খাঁটি নিয়ত-সহকারে কুরবানী করা এবং তা থেকে শিক্ষার্জন করা। নিজেদের আনন্দে অন্যদের শরীক করা ঈদুল আযহার শিক্ষা। কুরবানীকৃত পশুর গোশত তিন অংশে ভাগ করে এক অংশ নিজের জন্য সংরক্ষণ, দ্বিতীয় অংশ আত্মীয়-স্বজনকে প্রদান এবং তৃতীয় অংশ সমাজের অভাবগ্রস্থ ও দরিদ্র মানুষের মাঝে বিলিয়ে দেওয়া ইসলামের বিধান। কুরবানীকৃত পশুর চামড়া অনাথ আশ্রম, এতিমখানা ও মাদরাসায় পড়–য়া দরিদ্র শিক্ষার্থীদের ভরণপোষণের জন্য প্রদান করলে দ্বিবিধ সওয়াব হাসিল হয়।
এক দুঃখী মানুষের সাহায্য দ্বিতীয় দীনী শিক্ষার বিকাশ। প্রকৃতপক্ষে কুরবানীদাতা কেবল পশুর গলায় চুরি চালায় না, বরং সে তো চুরি চালায় সকল প্রবৃত্তির গলায় আল্লাহর প্রেমে পাগলপারা হয়ে। এটিই কুরবানীর মূল নিয়ামক ও প্রাণশক্তি।
এ অনুভূতি ব্যতিরেকে যে কুরবানী করা হয় তা হযরত ইবরাহীম ও ইসমাঈল -এর সুন্নাত নয়, এটা এক রসম তথা প্রথা মাত্র। এতে গোশতের ছড়াছড়ি হয় বটে কিন্তু সেই তাকওয়া হাসিল হয় না যা কুরবানীর প্রাণশক্তি। পশু কুরবানীর মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে মানুষের মধ্যে বিরাজমান পশু শক্তি, কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, পরনিন্দা, পরশ্রীকাতরতা ইত্যাদি রিপুগুলোকেই কুরবানী দিতে হয়। আর হালাল অর্থে অর্জিত পশু কুরবানীর মাধ্যমে তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটানো হয়। আমরা চাই ব্যক্তি, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে সকল অনিশ্চয়তা-শঙ্কা দূর হোক। হিংসা-হানাহানি ও বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে কুরবানীর আনন্দে শামিল হয়ে সকলের মধ্যে সাম্য ও সহমর্মিতার মনোভাব জাগিয়ে তুলতে হবে।আরো দেখুন
৷
উপরোক্ত লেখাটি ডঃ আ ফ ম খাদিল কতৃক রচিত , মাসীক আত্ -তাওহীদ সম্পাদক
*********************************************
পৃথিবীতে মানব সভ্যতার ইতিহাসের মতো কুরবানীর ইতিহাসও প্রাচীন। কুরবানীর বিধান ছিলো না, এমন কোনো জাতির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন : ‘আমি প্রত্যেক জাতির জন্য কুরবানী নির্ধারণ করেছি।' [সুরা হাজ : ৩৪]। তবে যুগে যুগে কুরবানীর নিয়ম-পদ্ধতি ভিন্ন ভিন্ন ধারায় ছিলো। হাসান বসরী (রহ.) এর মতে, সূরা আল কাওছারে বর্ণিত ‘ফাসল্লি লি রবিবকা অনহার' অর্থাৎ ‘আপনি আপনার রবের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করুন এবং কুরবানী করুন' আয়াতটি নাযিল করে মহান আল্লাহ তাআলা ঈদুল আযহার সালাত আদায় ও কুরবানীর নির্দেশ দান করেন। [আহকামুল কুরআন, ৩য় খন্ড, পৃ. ৪৭৫]। আল্লাহর নির্দেশে আদিষ্ট হয়ে ২য় হিজরীতে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঈদুল আযহার সালাত আদায় ও কুরবানী করেন। সেই হতে প্রতিবছর মুসলিম উম্মাহ যথারীতি কুরবানী করে আসছে। এ হিসেবে মুসলিম উম্মাহ এ বছর ১৪৩৩তম কুরবানী কার্যক্রম পরিচালনা করবে। একজন সচেতন মুসলিম হিসেবে কুরবানী কী, কেন কুরবানী করতে হবে, কীভাবে কুরবানী করতে হবে, কুরবানীর শিক্ষাই-বা কী? ইত্যাদি বিষয়ে সম্যক জ্ঞান থাকা আমাদের একান্ত আবশ্যক।
কুরবানীর পশু সংক্রান্ত জরুরি মাসায়েল
যেসব পশু দিয়ে কুরবানী দেয়া যাবে : গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া, দুম্বা, উট ইত্যাদি পশু কুরবানী দেয়া যাবে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে এই যে, গরু, মহিষ কমপক্ষে দুই বছরের হতে হবে। ছাগল, ভেড়া, দুম্বা কমপক্ষে এক বছরের হতে হবে। উট কমপক্ষে পাঁচ বছরের হতে হবে। অবশ্য ছয় মাসের ভেড়া যদি দেখতে মোটাতাজা হয় এবং এক বছর বয়সের মনে হয় তাহলে তা দিয়ে কুরবানী বৈধ। -হেদায়া, শামী, আলমগীরী
যে পশুই কুরবানী দেয়া হোক না কেন তা হতে হবে সুস্থ ও সবল। কুরবানীর পশু চয়নের ক্ষেত্রে মনে রাখবে, এই পশুটি আল্লাহর দরবারে উপহার দেয়া হচ্ছে। তাই উৎকৃষ্ট পশু উপহার দেয়া উচিত। দুনিয়াতে আমরা কোনো উচ্চ পদাধিকারী ব্যক্তির নিকট যদি কোন উপহার পাঠাই, তাহলে সবচে' ভাল এবং উৎকৃষ্ট জিনিসটি পাঠাই। তাহলে মহান আল্লাহর নিকট পাঠানো জিনিস কেন উৎকৃষ্ট হবে না?
পশুর মধ্যে যেসব ত্রুটি থাকলে কুরবানী দেয়া যাবে না : (১) যে পশুর দৃষ্টিশক্তি নেই। (২) যে পশুর শ্রবণশক্তি নেই। (৩) এই পরিমাণ লেংড়া যে, জবাই করার স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে না। (৪) লেজের অধিকাংশ কাটা। (৫) কানের অধিকাংশ কাটা। (৬) অত্যন্ত দুর্বল, জীর্ণ-শীর্ণ প্রাণী। (৭) গোড়াসহ শিং উপড়ে গেছে। (৮) পশু এমন পাগল যে, ঘাস পানি ঠিকমত খায় না। মাঠেও ঠিকমত চরানো যায় না। (৯) জন্মগতভাবে কান নেই। (১০) দাঁত মোটেই নেই বা অধিকাংশ নেই। (১১) স্তনের প্রথমাংশ কাটা। (১২) রোগের কারণে স্তনের দুধ শুকিয়ে গেছে। (১৩) ছাগলের দুটি দুধের যে কোন একটি কাটা। (১৪) গরু বা মহিষের চারটি দুধের যেকোন দুটি কাটা। (১৫) জন্মগতভাবে একটি কান নেই।
পশুর মধ্যে যেসব ত্রুটি থাকলে কুরবানী দেয়া যাবে : (তবে উত্তম হচ্ছে পরিপূর্ণ সুস্থ পশু দেয়া, ত্রুটিযুক্ত প্রাণী না দেয়া) (১) পশু পাগল, তবে ঘাস-পানি ঠিকমত খায়। (২) লেজ বা কানের কিছু অংশ কাটা, তবে অধিকাংশ আছে। (৩) জন্মগতভাবে শিং নেই। (৪) শিং আছে, তবে ভাংগা। (৫) কান আছে, তবে ছোট। (৬) পশুর একটি পা ভাংগা, তবে তিন পা দিয়ে সে চলতে পারে। (৭) পশুর গায়ে চর্মরোগ। (৮) কিছু দাঁত নেই, তবে অধিকাংশ আছে। স্বভাবগত এক অন্ডকোষ বিশিষ্ট পশু। (১০) পশু বয়োবৃদ্ধ হওয়ার কারণে বাচ্চা জন্মদানে অক্ষম। (১১) পুরুষাঙ্গ কেটে যাওয়ার কারণে সঙ্গমে অক্ষম।
কতজন মিলে একটি পশু কুরবানী দিতে পারবে : ছাগল, ভেড়া, দুম্বা ইত্যাদি পশু শুধু এক ব্যক্তি কুরবানী দিতে পারবে। গরু, মহিষ, উট সর্বোচ্চ সাত ব্যক্তি মিলে কুরবানী দিতে পারবে। অনেকে মনে করে থাকে, কুরবানীর পশুতে একাধিক শরীক থাকলে অংশ নির্ধারণ করতে হবে বেজোড় সংখ্যা হিসেবে।
শরীক হতে হবে তিনজন, পাঁচজন বা সাতজন- এই ধারণা ঠিক নয়। সঠিক বিষয় হচ্ছে এই যে, এক থেকে সাত পর্যন্ত যে কোন অংশে পশুটিকে ভাগ করা যাবে। তাই দু'জন, তিনজন, চারজন, পাঁচজন, ছয়জন ও সাত ব্যক্তি মিলে একটি পশু কুরবানী দিতে পারবে।
একাধিক শরীক থাকলে করণীয় : একাধিক শরীক থাকলে লক্ষণীয় বিষয় এই যে, অংশহিসেবে ভাগ যেন যথার্থ হয়। প্রাপ্য অংশের চেয়ে কেউ যেন কম বা বেশি না পায়। আরেকটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, কারো যেন নিয়তে গড়মিল না থাকে। কোন অংশীদারের যদি শুধু মাংস খাওয়া উদ্দেশ্য হয় তাহলে কারো কুরবানী হবে না। এজন্য কুরবানী শুদ্ধ হওয়ার জন্য সবার নিয়ত শুদ্ধ হওয়া জরুরি।
ভাল পশু ক্রয়ের পর ত্রুটিযুক্ত হয়ে গেলে : কুরবানীর উদ্দেশ্যে ভাল পশু ক্রয়ের পর যদি তা এই পরিমাণ ত্রুটিযুক্ত হয়ে যায়, যা দ্বারা কুরবানী জায়েজ হবে না তাহলে দেখতে হবে ক্রেতা ধনী না দরিদ্র? ক্রেতা যদি দরিদ্র হয় তাহলে সেই ত্রুটিযুক্ত পশু দিয়েই সে কুরবানী দিবে। আর যদি ক্রেতা ধনী হয়, তাহলে দ্বিতীয় আরেকটি পশু কিনে কুরবানী দিতে হবে। প্রথমটি দিয়ে কুরবানী শুদ্ধ হবে না। (ফতোয়ায়ে শামী, ৫ম খন্ড, ২৮৪ পৃষ্ঠা)
পশু জবাই করার জন্য যেসব শর্তঃ ইসলামী শরীয়তে পশু জবাই করার জন্য তিনটি শর্ত রয়েছে। (১) জবাইকারী ব্যক্তি মুসলমান হতে হবে। (২) জবাই করার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করতে হবে। (৩) পশুর খাদ্যনালী, শ্বাসনালী ও গলায় অবস্থিত অন্যান্য রগ ভালভাবে কাটতে হবে। (জাওয়াহিরুল ফিকহ, ২য় খন্ড, ৩৭৫ পৃষ্ঠা।)
জবাই করার নিয়মাবলী : (১) জবাই করার পূর্বে পশুকে ঘাস, পানি ইত্যাদি ভালভাবে খাওয়াতে হবে। কোরবানীর প্রাণীকে ক্ষুধার্থ বা পিপাসার্ত রাখা অন্যায়। (২) পশুকে কোরবানী করার স্থানে টেনে হিঁচেড়ে নেয়া অন্যায়। (৩) জবাই করার জন্য পশুকে শোয়াতে হবে সহজ সুন্দরভাবে। কঠোরভাবে নয়। (৪) কেবলার দিকে ফিরিয়ে শোয়াতে হবে, বাম পার্শ্বের উপর। (৫) পশুর চার পায়ের মধ্যে তিনটি বাঁধবে। (৬) আগে থেকেই ছুরি ধারা দিয়ে রাখবে। ভোঁতা ছুরি দিয়ে জবাই করবে না। (৭) ছুরি যদি ধরাতে হয় তাহলে পশুর সামনে ধারাবে না। আড়ালে ধারাবে। (৮) কোরবানীর পশু শোয়ানোর পর ছুরি ধারানো অন্যায়। বরং আগে থেকেই ধার দিয়ে নিবে (ফতোয়ায়ে রহীমিয়া, ১ম খন্ড, ৯৮ পৃষ্ঠা) (৯) গলায় জবাই করতে হবে। (১০) এমনভাবে জবাই করা যাবে না যাতে গলা পুরাপুরি আলাদা হযে যায়। (১১) জবাই করার সময় ‘বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার' বলতে হবে। (১২) যাতে দ্রুত জবাই হয়ে যায় এবং পশুর কষ্ট কম হয় সেদিকে খেয়াল রাখবে। (১৩) একটি পশুকে আরেকটি পশুর সামনে জবাই না করা ভাল। (১৪) পশুর প্রাণ বের হওয়ার পূর্বে চামড়া খসানোর কাজ শুরু না করা। (১৬) ঘাড়ের দিক থেকে জবাই করা যাবে না। (১৭) বিখ্যাত সাহাবী হযরত ইবনে আববাস রা. এর মত অনুযায়ী ঘাড়ের দিকে থেকে জবাইকৃত পশুর গোশত খাওয়া বৈধ নয়। (জাওয়াহিরুল ফিক্হ, ২য় খন্ড, ২৭৩ পৃষ্ঠা)
কোরবানীর পশুর গোস্ত বণ্টন ও চামড়া সম্পর্কিত মাসায়েল :
প্রতি বছর আমরা পশু কোরবানী করে থাকি। গোস্ত নিজেরা খাই এবং অন্যকে দেই। চামড়া বিক্রি করে গরীবদের মাঝে সে অর্থ বিলিয়ে দেই। এ বিষয়ে ইসলামের দিকনির্দেশনা পুরাপুরিভাবে আমরা অনেকেই জানি না। তাই গোস্ত বণ্টন সম্পর্কে শরীয়তের বিধান জেনে নেই।
(১) কোরবানীর পশুর গোস্ত তিন ভাগ করে এক ভাগ গরীব মানুষকে, এক ভাগ আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীকে দিবে। বাকি এক ভাগ নিজে খাবে। (২) আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশী গোস্ত নিতে আসবে এই অপেক্ষা না করে নিজ দায়িত্বে তাদের ঘরে গোস্ত পৌঁছে দেয়া উচিত। (৩) যদি একাধিক শরীক থাকে তাহলে গোস্ত ভাগ করবে ওজন করে। অনুমান বা আন্দাজ করে নয়। কারণ অনুমান করে ভাগ করলে বেশকম হতে পারে, যা গুণাহের কারণ। (৪) যে কসাই গোস্ত তৈরি করে দিবে তাকে আলাদাভাবে কাজের জন্য মজুরি দিতে হবে। মজুরি হিসেবে কোরবানীর গোস্ত দেয়া জায়েজ নেই। তার প্রাপ্য মজুরি দেয়ার পর লিল্লাহ গোস্ত আলাদা দেবে। (৫) কারো ভাগে যদি পায়া, ক্ষুর, মাথা বা কোন হাড্ডি বেশি যায় তাহলে তার অংশ থেকে গোস্ত একটু কমিয়ে দিতে হবে। যেন গড়ে সমান হয়। (৬) কোরবানী যেহেতু আল্লাহর জন্য করা হয়, তাই এতে নিজে ভোগ করার চেয়ে গরীব মানুষের মুখে হাসি ফুটানোর চেষ্টা বেশি করা উচিত। (৭) কোরবানীর গোস্ত নিজে খাবে, অন্যকে খাওয়াবে, যতদিন ইচ্ছা রেখে খাওয়া যায়, এতে কোন বাধা নেই। (৮) পশুর রশি ও গলার মালা ইত্যাদি দান করে দিতে হবে।
চামড়া সংক্রান্ত আলোচনা : (১) কোরবানীর পশুর চামড়া নিজে ব্যবহার করতে পারবে। (২) চামড়া যদি বিক্রি করা হয় তাহলে তার মূল্য অবশ্যই গরীব মানুষের মধ্যে দান করে দিতে হবে। নিজে ব্যবহার করা যাবে না। (৩) চেষ্টা করা উচিত চামড়ার টাকা পরিবর্তন না করে হুবহু দান করে দিতে।
কোরবানীর সাথে আকিকা দেয়া যায় কিনা : কোরবানীর সাথে আকিকা দেয়া যায়। এতে কোন সমস্যা নেই। কোরবানীর গোস্তের মতো আকিকার গোস্তও নিজে খেতে পারবে, অপরকে খাওয়াতে পারবে, দিতেও পারবে। ছেলের আকিকা হলে দুইটি ছাগল অথবা গরুতে দুই শরীক এবং মেয়ের আকিকা হলে একটি ছাগল অথবা গরুতে এক শরীক দিতে হবে। যেমন একটি হাদীসে এসেছে, বিখ্যাত সাহাবী হযরত আমর ইবনে শোয়াইব (রা.) বলেন, প্রিয় নবী (সা.) বলেন, যার সন্তান হয় সে যদি চায় আকিকা দিতে, তাহলে ছেলে সন্তান হলে দুটি ছাগল এবং মেয়ে সন্তান হলে একটি ছাগল আকিকা দিবে। আবু দাউদ, নাসায়ী। এখানে আরেকটি বিষয় জানা জরুরি। তা এই যে, যদি কারো ছেলে সন্তান হয় এবং তার দুটি ছাগল আকিকা দেয়ার সামর্থ না থাকে তাহলে একটি ছাগল দিলেই হবে। অনুরূপভাবে গরু-মহিষে দুই শরীক দিতে সক্ষম না হলে এক শরীক দিলেও চলবে।
প্রিয় পাঠক! এখানে একটি ভুল ধারণার অবসান হওয়া উচিত। কেউ মনে করতে পারে, এখানে মেয়ে সন্তান হলে মাত্র একটি ছাগল দেয়ার কথা বলা হয়েছে। আর ছেলে হলে দুটি। এতে করে ছেলেদের মর্যাদা বেশি দেয়া হয়েছে। এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। কোনভাবেই ছেলের মর্যাদা বেশি দেয়া হয়নি। কারণ, আকিকা দেয়া হয় সন্তানের উপর থেকে বিপদ আপদ যেন দূর হয়ে যায় এই উদ্দেশ্যে। সাধারণত ছেলে সন্তানের উপর বিপদ আপদ বেশি আসে এবং মেয়ে সন্তানের উপর কম আসে। তাই আল্লাহর রাসূল (সা.) ছেলের জন্য দুই এবং মেয়ের জন্য একটি ছাগল আকিকা দিতে বলেছেন।
পশু কোরবানীর সাথে পশুত্বের কোরবানী করতে হবে
আমরা মানুষ। আমাদের মধ্যে যেমন ফেরেশতার স্বভাব আছে তেমনি পশুর স্বভাবও আছে। মানুষের মধ্যে যত ভালো গুণ রয়েছে, সেগুলো হলো-ফেরেশতার স্বভাব। আর হিংসা, বিদ্বেষ, ঘৃণা, অন্যায়ভাবে কারো উপর আক্রমণ করা, মানুষের ধন-সম্পদ অবৈধভাবে দখল করা, কারো অধিকার কেড়ে নেয়া ইত্যাদি হলো পশুর স্বভাব। পবিত্র কোরবানী ঈদে আমরা পশু কোরবানী করে থাকি। কুরবানীর মূল ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে এই উপলক্ষে অর্জিত তাকওয়া বা আল্লাহভীতি দ্বারা নিজের পশু স্বভাবকে কোরবানী করি না। তাই আমাদের সমাজ থেকে অন্যায় অবিচার দূর হয় না। যদি পশু কোরবানীর সাথে সাথে আমরা নিজেদের পশুস্বভাবকেও কোরবানী করতে পারি, তবেই আমাদের সমাজ হবে সুখময়, শান্তিময় ও আনন্দময়। আল্লাহর রাসূল (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের আমলে মানুষ যেরূপ শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে জীবন যাপন করেছে, অনুরূপ পবিত্র স্বভাবের অধিকারী হয়ে আজও সেরূপ শান্তি ও নিরাপত্তা আমরা লাভ করতে পারি। এ জন্যে আমাদেরকে সাহাবায়ে কেরামের গুণাবলী অর্জন করতে হবে। তাদের মাঝে ছিল সব উত্তম গুণাবলী। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর মহা ত্যাগের মহা স্মৃতি পবিত্র কুরবানী অনুষ্ঠান থেকে লব্ধ শিক্ষা দ্বারা আমরা যাতে নিজেদের চরিত্র গঠন করতে পারি, আল্লাহ আমাদের সেই তাওফিক দিন। এটাই একমাত্র কামনা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন