Translate

রবিবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৮

মাও সাদ সাহেবের বক্তব্যের বিশ্লেষণ

তাবলীগ জামাআতে বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারি সাদের আসল রূপ

আকাবিরের মেহনতে তৈরী দাওয়াত ও তাবলীগের ময়দানে মাওলানা সা’আদ সাহেব আকাবিরের প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা দেখিয়ে জনপ্রিয়তা লাভ করেন। কিন্তু যখনই মাওলানা যুবায়রুল হাসান (রাহ.)এর ইন্তিকাল হলো তখনই মাওলানা সা’আদ সাহেবের আসল রূপ বেরিয়ে আসে।

নিম্নে মাও. সা’আদ সাহেবের আহলুস সুন্নত ওয়াল জামাআত বিরোধী কিছু বক্তব্য তুলে ধরা হলো-

১. “কোনো ফরযের কারণে দাওয়াতী সফর ছাড়া যাবে না। রোযা ছাড়তে পারেন, ছাহাবায়ে কেরাম রমযানে রোযা ছেড়ে দিতেন, কিন্তু আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়ার কাজে ছাড় দিতেন না।”

মন্তব্য: নামাজ-রোযা ফরযে আইন। দাওয়াত ফরযে আইন নয়। তাই দাওয়াতের জন্য কোনো ফরয নষ্ট করা হারাম। তবে যেকোনো সফরের অবস্থায় রোযা না রাখার অনুমতি আছে।

২. “শুধু ইবাদাতের উপর আল্লাহর নুসরত আসেনা। এ জন্য যে, ইবাদত দীনের নুছরত নয়। মুসলমানদের উপর মাল খরচ করাও দীনের নুসরত নয়। মানুষ বিধবা, এতীম-মিসকীনের জন্য টাকা-পয়সা খরচ করে, মসজিদ তৈরী করে, আর মনে করে ইসলামের সাহায্য করছি, এটা ভুল ধারণা। ইসলামের জন্য মাল খরচ করাতো সীরাতে কোথাও পাওয়া যায়নি। সাহাবায়ে কেরাম যত মাল খরচ করেছেন সব মুসলমানদের নুসরত করার জন্য খরচ করেছেন- কাউকে সাওয়ারী, হাতিয়ার, তীর-তলোয়ার দিয়েছেন। এসব মুসলমানের নুসরত, ইসলামের নয়। ইসলামের নুসরত দাওয়াত দেওয়া।”

মন্তব্য: তাঁর এই উক্তিগুলো ভুল এবং অনেক আয়াত ও হাদীস বিরোধী। ইসলাম ও মুসলমানের নুসরতকে ভিন্নভাবে মূল্যায়ন করা গোমরাহী, দীন নয়।

৩. “কিসরার রাজত্ব ধ্বংস হওয়ার কারণ রাসূল স.এর চিঠি ছিঁড়ে ফেলা নয় বরং দাওয়াত অস্বীকার করা।”

মন্তব্য: পরিস্কার মিথ্যা কথা! কোন কিতাবে এ ধরণের মন্তব্য নেই। দাওয়াত অস্বীকারতো অনেকেই করেছে।

৪. “প্রত্যেককে মসজিদে নিয়ে দাওয়াত দেওয়া সুন্নত, মসজিদের বাহিরে দাওয়াত দেওয়া সুন্নত বিরোধী।”

মন্তব্য: এটা সা’দ সাহেবের অসত্য কথা। খাইরুল কুরুনের প্রচলন ছিল তা’লিম মসজিদে, দাওয়াত মসজিদের বাহিরে। গোটা ক’জন ছাড়া লক্ষাধিক সাহাবা মসজিদের বাহিরের দাওয়াতে মুসলমান হয়েছেন। বুখারী শরীফে আছে, মসজিদের বাহিরের দাওয়াত না দেওয়ার প্রস্তাব মুনাফিক আব্দুল্লাহ বিন উবাই দিয়েছিলো।

৫. “তাবলীগের ছয় নাম্বার পরিপূর্ণ দীন।”

মন্তব্য: তাহলে তাবলীগ ছাড়া সকল মুসলমান কী বে-দীন? তাবলীগের ৮০ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম ব্যক্তি যিনি ছয় নাম্বারকে পূর্ণ দীন আখ্যা দিলেন।

৬. “যারা তাবলীগ করেন না ওই সব উলামাদের কথা শুনবেন না। তাদের থেকে দীনি মাসআলাও জিজ্ঞাসা করবেন না।”

মন্তব্য: এটা উলামাদের থেকে মুসলমানদেরকে দূরে রাখার জন্য ইহুদী-খৃষ্টানদের অনেক পুরাতন প্রোগ্রাম।

৭. “ছাহাবাগণ মুসলমান হওয়ার পর মদীনা ছেড়ে বাড়ী যাওয়াকে মুরতাদ হওয়া মনে করতেন।”

মন্তব্য: সাহাবাগণের উপর এটা একটা মিথ্যা অপবাদ। কোনো সাহাবী বাড়ী যাওয়াকে ইরতেদাদ মনে করতেন না। হাজার হাজার সাহাবা মদীনায় না থেকে বাড়ী চলে গেছেন। তারা কী মুরতাদ হয়ে গেছেন?

৮. বিভিন্ন সময় তিনি বলেন: “আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে বলছি”।

মন্তব্য: তাহলে কী তাঁর কাছে ওহী আসে?

৯. “ভোটের সময় চিহ্ন হিসাবে (আঙুলে) যে রং লাগানো হয়, তার কারণে নামায হয় না। তাই ভোট না দেওয়া উচিত।”

মন্তব্য: ভোটদান থেকে বিরত থাকা নয়, বরং রং উঠিয়ে অযূ করে নামায পড়তে হবে। ভারতের মুসলমানদেরকে ভোট থেকে বিরত রেখে মাওলানা কার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে মাঠে নেমেছেন?

১০. “বিভিন্ন আয়াতে তিনি বলেন, মুফাসসিরীন এই আয়াতের কোনো এক তাফসীর করেছেন, উলামা কোনো এক তাফসীর করে থাকেন, কিন্তু আমি তার এই তাফসীর করে থাকি। এটা শুনো। এটাই সঠিক তাফসীর!”

মন্তব্য: এটা তাফসীর বির-রায় (মনগড়া তাফসীর), যা মওদুদী দর্শন। এ ধরণের মুফাসসিরদেরকে হাদীসে জাহান্নামী বলা হয়েছে- من فسّر القرآن برأيه فليتبوأ مقعده من النار.

১১. “ক্যামেরাওয়ালা মোবাইল রাখা হারাম। পকেটে ক্যামেরাওয়ালা মোবাইল রেখে নামায হয় না। যে আলেমগণ ক্যামেরাওয়ালা মোবাইল রাখাকে ‘জায়েয’ বলেন, তারা উলামায়ে ছু’। বারবার কসম খেয়ে তিনি বলেন, তারা হলো উলামায়ে ছু’। এমন আলেমরা হলো গাধা! গাধা! গাধা!”

মন্তব্য: এটা সা’আদ সাহেবের মনগড়া ইসলাম। শরিয়তে মুহাম্মদীর কোনো কিতাবে এই মাসআলা নেই। সা’আদ সাহেবের ভক্তরা কি সেসব নামায কাযা করেছেন? যদি কাযা না করে থাকেন তাহলেতো তারা সা’দ সাহেবের পক্ষ নিয়েছেন হকের জন্য নয়, শুধু উলামাদের বিরোধীতার জন্য।

১২. “মোবাইল ফোনে কুরআন শরীফ পড়া এবং শোনা প্রশ্রাবের পাত্র থেকে দুধ পান করার মতো!”

মন্তব্য: তাহলে যে কাপড় পরে স্ত্রীর সাথে সহবাস করা হয়, যে মাইক গান-বাজনায় ব্যবহার হয় এবং যে ডেকোরেটরের জিনিসপত্র দিয়ে নাচ-গানের আয়োজন করা হয়, সেই কাপড় পরে নামায পড়া, সেই মাইক নামায ও ওয়াজ-নসীহতে ব্যবহার করা এবং ডেকোরেটরের সেই সামান দিয়ে কোনো তাবলীগী ইজতেমার আয়োজন করা কি জায়েয নয়?

১৩. “কুরআন শরীফ শিখিয়ে যারা বেতন গ্রহণ করেন, তাদের বেতন বেশ্যার উপার্জনের চেয়েও খারাপ। যে ইমাম এবং শিক্ষক বেতন গ্রহণ করেন, বেশ্যারা তাদের আগে জান্নাতে যাবে!”

মন্তব্য: ইসলাম ধর্ম কি এতই নিকৃষ্ট যে, যেসব উলামাদের মাধ্যমে এই দ্বীন সংরক্ষিত তাদের জীবনের উপার্জন বেশ্যার উপার্জনের চেয়ে খারাপ? তাহলে হাজার বছর থেকে পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ উলামা ও ইমামগণ সা’আদ সাহেবের মতে হারামখোর ছিলেন? নাউযুবিল্লাহ! সা’আদ সাহেবের ভক্তরা কি বেতনধারী ইমামদের পিছনে নামায পড়া ছেড়ে দিয়েছেন?

১৪. “রাসূল সা. এর পর কেবল তিনজন লোকের ‘বাইআত’ পূর্ণতা পেয়েছে। আর বাকি সবার বাইআত অপূর্ণ। সেই তিনজন হলেন, শাহ ইসমাঈল শহীদ, মাওলানা মুহাম্মদ ইলিয়াস এবং মাওলানা মুহাম্মদ ইউসুফ।”

মন্তব্য: শাহ ইসমাঈল শহীদের শায়েখ সৈয়দ আহমদ শহীদ, মাও. ইলিয়াস রাহ. এর শায়েখ মাওলানা খলীল আহমদ সাহারনপুরী, মাওলানা ইউসুফ রাহ. এর শায়েখ শাইখুল হাদীস মাওলানা যাকারিয়া রাহ. এই তিন জনের বাইআত পূর্ণতা লাভ করতে পারল না, আবার তাদের মুরিদদের বাইআত পূর্ণতা লাভ করল কীভাবে? তাছাড়া হাসান বসরী, খাজা আব্দুল ওয়াহিদ, ফুযায়ল বিন ইয়ায, ইবরাহীম বিন আদহাম, শাকীক বলখী, জুনায়েদ বাগদাদী, হুযায়ফা মার’আসী, মুঈনুদ্দীন চিশতী, কুতবুদ্দীন বখতিয়ার কাকী, ফরীদুদ্দীন শাকরগঞ্জী, নেযামুদ্দীন আওলিয়া, আলাউদ্দীন ছাবের কালয়ারী, মুজাদ্দিদে আলফে সানী, শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলবী, হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী, নানুতবী, গাঙ্গুহী, থানবী ও হুসাইন আহমদ মাদানী সহ লক্ষ লক্ষ আওলিয়ায়ে কেরামের বাইআত নাকিস ও অসম্পূর্ণ থাকল? শুধুমাত্র ইসমাঈল শহীদ, ইলয়াস রাহ. ও ইউসুফ রাহ. এর বাইআত পূর্ণতা লাভ করল, সা’আদ সাহেব তা বুঝলেন কীভাবে? এবং এ ধরণের ফালতু মন্তব্যের কী প্রয়োজন ছিল?

১৫. “দাওয়াত আগে ইবাদত পরে। দেখুন, আযান আগে নামায তার পরে।”

মন্তব্য: তাহলে কি যারা তাবলীগ করেন না, তাদের নামায হবে না?

১৬. ‘দাওয়াতের পথ’ হলো নবীর পথ, ‘তাসাউফের পথ’ নবীর পথ না।

১৭. “এই এক তাবলীগই নবুওতের কাজ। এ ছাড়া দ্বীনের যত কাজ আছে: দ্বীনি ইলম শিখানো, দ্বীনি ইলম শিখা, আত্মশুদ্ধি, কিতাবাদী রচনা করা কোনোটাই নবুওতের কাজ না।”

মন্তব্য: নিশ্চয় দাওয়াত নবীর পথ, তবে ১. তিলাওয়াতে কুরআন, ২. তা’লীমে কিতাব ও সুন্নাহ, ৩. এবং তাযকিয়াহও নবীর পথ। কুরআন শরীফে ইরশাদ হচ্ছে-

১- ربنا وابعث فيهم رسولا منهم يتلوا عليهم آياتك ويعلمهم الكتاب والحكمة ويزكيهم

২- لقد منّ الله على المؤمنين إذ بعث فيهم رسولا من أنفسهم، يتلوا عليهم آيته ويزكيهم ويعلمهم الكتاب والحكمة

৩- هو الذي بعث في الاميين رسولا منهم يتلوا عليهم آياته ويزكيهم ويعلمهم الكتاب والحكمة

৪- كما ارسلنا فيكم رسولا منكم يتلوا عليكم آياتنا ويزكيكم ويعلمكم الكتاب والحكمة –

সা’আদ সাহেবের নবীওয়ালা এক পথকে স্বীকার করে বাকী তিন পথকে অস্বীকার করা কুরআন মাজীদের উল্লিখিত চারটি আয়াতকে অস্বীকার করার নামান্তর।

১৮. “মাদরাসাগুলোতে যাকাত না দেওয়া হোক। মাদরাসায় যাকাত দিলে যাকাত আদায় হবে না।”

মন্তব্য: গরীব ছাত্ররা মাদরাসায় পড়ার কারণে কি তাদের জন্য যাকাত হারাম হয়ে যায়? আসলে তিনি উলামা বিদ্বেষী এক ফিরকা তৈরী করতে চান, তাই তার এসব মন্তব্য।

১৯. “আযান হলো ‘তাশকীল’ (প্ল্যান-পরিকল্পনা)। নামায হলো ‘তারগীব’ (পরিকল্পনা বাস্তবায়নে উদ্বুদ্ধকরণ)। আর নামাযের পর আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়া হলো ‘তারতীব’ (পরিকল্পনার মূল বাস্তবায়ন)।”

মন্তব্য: নামাযকে তারগীব বলে প্রকারান্তরে সা’আদ সাহেব শতাধীক আয়াতকে অস্বীকার করলেন। কারণ, নামায হল ইবাদতে মাকছূদা। মওদূদী সাহেব নামাযকে তামরীন বলেছেন, আর সা’আদ সাহেব বলেছে তারগীব। উভয়টাই গুমরাহী, আহলুস্ সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকীদা বিরোধী।

২০. “রাসূল সা. দাওয়াত ইলাল্লাহর বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইশার নামাযকে পর্যন্ত বিলম্ব করে পড়েছেন। অর্থাৎ, নামাযের চেয়ে দাওয়াতের গুরুত্ব বেশি।”

২১. “এই কাজে নামাজ থেকে মাশওয়ারার গুরুত্ব বেশী।”

মন্তব্য: এটা এক নতুন মতবাদ। জামাত-শিবিরের লোকজনের নিকট নামাজ-রোজার চেয়ে ইসলামী আন্দোলনের গুরুত্ব বেশী। আর সা’আদ সাহেবের নিকট নামায-রোযার চেয়ে দাওয়াতের গুরুত্ব বেশী। উভয়টাই গোমরাহী। নামায-রোযা ফরযে আইন। তাই হাজার দাওয়াত ও হাজার মাশওরাহ একত্র করলে এক রাকাত নামাযের সমান হবে না।

২২. “হযরত ইউসুফ আ. أذكرني عند ربك বলে গাইরুল্লাহর দিকে দৃষ্টি দেওয়ার কারণে তাঁকে অতিরিক্ত সাত বছর জেলখানায় থাকতে হয়েছে।”

মন্তব্য: আর সা’আদ সাহেবকে গাইরুল্লার দিকে দৃষ্টি না দেওয়ার কারণে একদিনও জেলে যেতে হয়নি। তাই কি?

২৩. “হযরত মূসা আ. দাওয়াত ছেড়ে দিয়ে কিতাব আনতে চলে গেছেন। দাওয়াত ছেড়ে চলে যাওয়ার কারণে ৫ লাখ ৮৮ হাজার লোক মুরতাদ হয়ে যায়।”

মন্তব্য: হযরত মূসা আ. নিজে যাননি, তাঁকে আল্লাহ তায়ালা ডেকে নিয়েছেন। ইরশাদ হচ্ছে- وواعدنا موسى ثلثين ليلة وأتممناها بعشر، فتم ميقات ربه اربعين ليلة. – সা’আদ সহেব বলেন, আল্লাহ তায়ালার ডাকে মুসা আ. এর কওমকে ছেড়ে যাওয়া উচিত হয়নি। সা’আদ সাহেব নবীগণের কাজ-কর্মকে উচিত অনুচিত নির্ণয় করার অধিকার পেলেন কার পক্ষ থেকে?

২৪. “হযরত মূসা আ. থেকে বড় এক ভুল হয়ে গেছে এবং তিনি এক অপরাধ করে ফেলেছেন- জামাআত এবং কওমকে ছেড়ে তিনি আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের জন্য ‘নির্জনতা’ অবলম্বন করেছেন।”

মন্তব্য: সা’আদ সাহেব এই মন্তব্য করে মুলহিদ ও যিন্দীকের কাতারে শামিল হওয়ার পথ সুগম করলেন।

২৫. “হযরত মূসা আ. কর্তৃক হযরত হারুন আ. কে নিজের স্থালাভিষিক্ত বানানোও অনুচিৎ কাজ হয়েছে।”

মন্তব্য: আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- وقال موسى لأخيه هارون اخلفني في قومي واصلح ولا تتبع سبيل المفسدين – আল্লাহ তায়ালার কাছে যদিও মূসা আ. এর এই কাজ পছন্দনীয়, কিন্তু সা’আদ সাহেবের কাছে কাজটি অপছন্দনীয় হিসেবে গণ্য হয়েছে। এখন সা’আদ সাহেবের ভক্তগণ কার পক্ষ নেবেন? সা‘আদ সাহেবের, না আল্লাহর?

২৬. “হযরত যাকারিয়া আ. আল্লাহকে ছেড়ে গাছের কাছে আশ্রয় চাইলেন। ফলে শাস্তি ভোগ করতে হলো।”

মন্তব্য: কিন্তু সা’আদ সাহেব কোনো গাছের কাছে আশ্রয় না নিয়ে যমুনা পাড়ের মাস্তানদের আশ্রয় নেওয়ায় পুরাতন সব বুযুর্গদেরকে নিযামুদ্দীন থেকে বের করতে সক্ষম হয়েছেন।

২৭. “প্রত্যেক সাহাবী অপর সাহাবীর বিরুদ্ধাচরণই করেছেন।”

মন্তব্য: মওদূদী সাহেব না থাকলেও সমস্যা নেই, সা’আদ সাহেবের মত যোগ্য স্থলাভিষিক্ত বিদ্যমান রয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-

১. فألّف بين قلوبكم فأصبحتم بنعمته إخوانا.

২. يؤثرون على أنفسهم ولو كان بهم خصاصة.

৩. وألّف بين قلوبهم.

৪. أشدّاء على الكفار رحماء بينهم.

সা’আদ সাহেবের বক্তব্য উল্লিখিত আয়াতগুলোর বিরুদ্ধে। নিযামুদ্দীন থেকে মুরব্বীদেরকে বের করে দেয়ার মাস্তানিকে হালকা করার জন্য সাহাবাদের উপর তার এই মিথ্যা তোহমত ও অপবাদ।

২৮. “আমাদের কাজের সাথে লেগে থাকা সাথীরা কেবল মাওলানা ইলিয়াস এবং মাওলানা ইউসুফ সাহেবের মালফুজাতই পড়বে। এগুলো ছাড়া অন্য কিতাবাদি পড়বে না।”

মন্তব্য: এভাবে সা’আদ সাহেব অনেক দিন থেকে ফাযায়েলে আমাল ও ফাযায়েলে সাদাকাতকে তাবলীগ থেকে বাদ দেওয়ার অপচেষ্টা করছেন।

২৯. “মু’জিযার সম্পর্ক কেবল দাওয়াতের সাথে। নবুওয়াতের সাথে এর সম্পর্ক নেই।”

মন্তব্য: সা’আদ সাহেব ইসলামে ভ্রান্ত আকীদার এক নতুন সংযোজন করলেন। উম্মতের এই প্রথম ব্যক্তি যিনি মু’জিযাকে অস্বীকার করলেন।

৩০. “সকাল-সকাল কুরআন তিলাওয়াত করা এবং নফল নামায পড়ার তো একটা অর্থ বুঝে আসে। কিন্তু আল্লাহ আল্লাহ বলে যিকির করে কী অর্জন হয়? কিছুই অর্জন হয় না!”

মন্তব্য: এটা আহলে হাদীসের আকীদা, আহলুসসুন্নাত ওয়াল জামাতের নয়।

৩১. “মাদরাসার উস্তাদরা বেতন নেওয়ার কারণে দুনিয়াবী ধান্দায় জড়িয়ে আছে। এ কারণে দ্বীনের খেদমতের জন্যও তাদের কিছু সময় দেওয়া উচিত।”

মন্তব্য: অর্থাৎ তাঁর মতে হাজার বছর থেকে লক্ষ লক্ষ উলামায়ে কেরাম বেতন নিয়ে যে কোরআন-হাদীসের তা’লীম দিচ্ছেন, তা দীনের খেদমত নয় দুনিয়ার ধান্ধা!

৩২. “কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা বান্দাকে জিজ্ঞেস করবেন, তা’লীমে বসেছিলে কি না? গাশ্ত করেছিলে কি না?”

মন্তব্য: কিয়ামতের দিন বান্দাকে কী জিজ্ঞেস করা হবে সব কুরআন হাদীসে বর্ণিত আছে। সা’আদ সাহেব যা বললেন, তাতো কুরআন-হাদীসে কোথাও নেই। বস্তুতঃ সা’আদ সাহেব আল্লাহর উপর অসত্য অপবাদ আরোপ করলেন- ومن أظلم ممن افترى على الله كذبا.

৩৩. “হিদায়াতের ব্যাপার যদি আল্লাহর হাতে হতো, তাহলে নবী পাঠাতেন না।”

মন্তব্য: আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- إنك لا تهدي من احببت ولكن الله يهدي من يشاء – কুরআন মাজীদের শাতাধিক আয়াতে প্রমাণিত যে, হিদায়াত আল্লাহর হাতে এবং এটা ইসলামের একটি মৌলিক আকিদা। কিন্তু সা’আদ সাহেব তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেন অদৃশ্যের কোন শক্তির এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য?

৩৪. “কুরআন শরীফ বুঝে-শুনে তিলাওয়াত করা ওয়াজিব। তরজমা না জেনে তিলাওয়াত করলে তরকে ওয়াজিবের গুনাহ হবে।”

মন্তব্য: “এটা মওদুদী ও আহলে হাদীসের আকিদা, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের নয়।”

৩৫. “আপনাদের কাছে সবচাইতে বড় গুনাহ- চুরি, যিনা। ঠিকই এটা বড় গুনাহ। তবে তার চাইতে বড় গুনাহ হলো খুরুজ না হওয়া। তাই হযরত কা’ব ইবনে মালেকের সাথে ৫০ দিন পর্যন্ত কথাবার্তা বন্ধ রাখা হয়।”

মন্তব্য: যদি তাই হয়, তাহলে চোরের শাস্তি, হাত কাটা বটেতো খুরুজ না হলে কোন অঙ্গ কাটতে হবে? পৃথিবীর যত মানুষ দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ করে না, তারা ব্যভিচারি ও চোরের চেয়ে নিকৃষ্ট? নাউযুবিল্লাহ!

৩৬. “যিকিরের অর্থ আল্লাহ আল্লাহ বা অন্যান্য তসবীহাত পড়া নয়, যিকিরের আসল অর্থ আল্লাহর আলোচনা করা।”

মন্তব্য: এটা সা’আদ সাহেবের ভ্রান্ত মতবাদ। প্রচুর আয়াত ও হাদীসে বর্ণিত সব তাসবীহাত ও যিকিরকে তিনি অস্বীকার করলেন হিদায়াত না থাকার কারণে। হাদীসের কিতাবাদিতে তাসবীহাত ও যিকিরের পরিস্কার অধ্যায় রয়েছে।

৩৭. “কথা পৌঁছিয়ে দেয়া দ্বীনের দাওয়াত নয়, বরং স্বশরীরে গিয়ে দাওয়াত দেওয়া, অন্তরে কথা বসিয়ে দেওয়া হল দাওয়াত। প্রচার মাধ্যমে দাওয়াত দিলে দায়িত্ব আদায় হবে না।”

মন্তব্য: ‘অন্তরে কথা বসিয়ে দেওয়া’ জাহিলী মন্তব্য। কারণ এটা আল্লাহর কাজ, বান্দার নয়। পারস্য ও রোমের বাদশাদের কাছে রাসূল সা. চিঠির মাধ্যমে যে দাওয়াত দিলেন, হযরত উমর বিন আব্দুল আযীয ও মুজাদ্দিদে আলফে ছানী প্রমুখগণ চিঠির মাধ্যমে যে দাওয়াত দিলেন তাতে কি দাওয়াতের দায়িত্ব আদায় হয়নি?

৩৮. “রাসূল স. হযরত যয়নব রা. এর ওলীমায় গোস্ত-রুটির আয়োজন করায় লাঞ্ছনা ভুগতে হয়েছে।”

মন্তব্য: রাসূল স. আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রা. কে বলেন, أولمْ ولو بشاةٍ সা’আদ সাহেব এক সুন্নতকে লাঞ্ছনার কারণ সাব্যস্ত করলেন কোনো দলীল ভিত্তিক না মূর্খতার কারণে?

৩৯. “তাওবা কবুলের তিনটি শর্ত মানুষ জানে। কিন্তু চতুর্থ শর্ত ‘আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়া’ মানুষ ভুলে গিয়েছে।”

মন্তব্য: তওবা কবুলের চতুর্থ শর্ত কোরআন-হাদীসে কোথাও নেই, এটা শরিয়তে অতিরিক্ত সংযোজন। যা ইসলামের দৃষ্টিতে কুফুরী।

৪০. “খারিজী লুকমা গ্রহণযোগ্য নয়, খারিজী লুকমা গ্রহণ করলে নামায ফাসিদ হয়ে যায়।”

মন্তব্য: উলামায়ে কেরাম সা’আদ সাহেবের ভুল ধরলেন, তাঁকে এবং উম্মতকে গোমরাহী থেকে রক্ষা করার জন্য। তাই তার খুশি হওয়ার কথা ছিলো। পক্ষান্তরে তিনি খারিজী লুকমা গ্রহণ করা যাবে না বলে তা প্রত্যাখ্যান করলেন। তাতে বুঝা যায় তার এসব উল্টা-পাল্টা মন্তব্য ভুলবশতঃ নয় বরং প্রোগ্রাম ভিত্তিক।

৪১. “আছহাবে কাহাফের সাথে বাঘ ছিল, কুকুর নয়।”

মন্তব্য: কুরআন মাজীদে কুকুরের কথা বলা হয়েছে বাঘ নয়! وكلبهم باسط ذراعيه بالوصيد. – কোরআন মাজীদে তাহরীফ ও পরিবর্তন কুফুরী।

৪২. “দাওয়াতে আল্লাহর মদদ আসে, ইবাদতে নয়। ”

মন্তব্য: এটা কুরআন সুন্নাহ বিরোধী মন্তব্য। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, واستعينوا بالصبر والصلوة অর্থাৎ নামাজ ও সবরের মাধ্যমে আল্লাহর মদদ চাও। এভাবে অনেক আমলের সাথে নুসরতের কথা কুরআন-হাদীসে বিদ্যমান রয়েছে।

৪৩. “দ্বীনের নুসরত করলে আল্লাহর মদদ আসে, মুসলমানের নুসরতে মদদ আসে না।”

মন্তব্য: কুরআন-হাদীসের কোথাও তার এই মিথ্যা মন্তব্য পাওয়া যায়নি। বরং হাদীসে বর্ণিত الله في عون العبد ما كان العبد في عون اخيه , এ ধরণের অনেক হাদীস রয়েছে।

৪৪. “দ্বীনের উপর চলনেওয়ালা দ্বীনদার বটে, দ্বীনের খেদমতগার নয়। দায়ী হলো দ্বীনের খেদমতগার।”

মন্তব্য: দ্বীনদারকে ইসলামী ভাষায় متشرّع و متديّن বলা হয় এবং কুরআনে পাকে দ্বীনদারকে সালেহীন, মুত্তাকীন ও মুহসিনীন ইত্যাদি বলা হয়েছে। দ্বীনের খেদমতগারের কোনো পরিভাষা কুরআন-হাদীসে নেই।

৪৫. “সুরা জুমআয় وابتغوا من فضل الله অর্থ দীনের দাওয়াত দেওয়া।”

মন্তব্য: এটা তার মনগড়া তাফসীর, যা পরিষ্কার হারাম।

৪৬. “মাশওয়ারার গুরুত্ব নামাযের চেয়ে বেশী। নামাযের জন্য মসজিদে আসার চেয়ে মাশওয়ারার জন্য মসজিদে আসা বেশী জরুরী। ”

৪৭. “মাশওয়ারা থেকে চলে যাওয়া জিহাদ থেকে পলায়নের মত কবীরা গুনাহ।”

মন্তব্য: এটা কোরআন-সুন্নাহ বিরোধী শরিয়তের রূপ-রেখা। যা পরিস্কার কুফুরী।

৪৮. দু’বছর পূর্বে তিনি বলেন, খোদার কসম! আমি আমীর, আমাকে যে আমীর মানবে না সে জাহান্নামী।

মন্তব্য: নিজে ঘোষণা দিয়ে আমীর হওয়া নাজায়েয। তার এতা‘আতও নাজায়েয।

৪৯. “প্রকাশ্যে গুনাহ করা বেহায়ায়ী ও নির্লজ্জতা নয় বরং আল্লাহর  কসম! গোপনে গুনাহ করা বেহায়ায়ী।”

মন্তব্য: তাই তাঁর মতে মসজিদ-মাদরাসায়, হাঁটে-ঘাটে উলঙ্গ হওয়া বেহায়াপনা নয়, বরং ঘরের ভিতরে উলঙ্গ হওয়া বেহায়াপনা। এবং রাস্তায়-বাজারে যিনা-ব্যভিচার বেহায়াপনা নয়, বরং গোপনে করা বেহায়াপনা। তার এই মন্তব্য পাগলের প্রলাপ ছাড়া কিছুই নয়।

৫০. নিযামুদ্দীন আলমী মারকায, তা কেয়ামত পর্যন্ত মারকায-ই থাকবে।

মন্তব্য: তিনি কি আলিমুল গাইব? তিনি জানলেন কীভাবে যে কেয়ামত পর্যন্ত মারকায থাকবে?

এসব কথাবার্তার কারণে তিনি সীমালঙ্গনকারী। আর কোরআন শরীফে সীমালঙ্গনকারীর এতায়াতকে হারাম বলা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ولا تطيعوا أمر المسرفين.   অর্থ: তোমরা সীমালঙ্গনকারীদের এতায়াত করো না।

মাওলানা সা’আদ সাহেবের কথা-বার্তায় মনে হয়, তার মানসিক সমস্যা আছে। তিনি ব্রেনের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন। আর যদি তা না হয়, তাহলে তিনি কোনো এজেন্সি কর্তৃক পরিচালিত (এটার সম্ভাবনাই বেশি)। ইসলাম বিরোধী বিভিন্ন এজেন্সি গত একশত বছরে হাজার হাজার কোটি ডলার খরচ করে ইসলামের এমন ক্ষতি করতে পারেনি, যা সা’আদ সাহেবের মাধ্যমে করেছে। এক ব্যক্তির মাধ্যমে পৃথিবীর প্রত্যেক মসজিদ ও মহল্লায় গ্রুপিং ও ফেৎনা-ফাসাদ সৃষ্টি করে অশান্তির ভাইরাস পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে দিয়েছে। আল্লাহর কারিশমা পুরো বিশ্বে যত দুই নম্বর লোক, যাদের ব্যক্তিগত জীবনে এবং পরিবারে দীনি পরিবেশ নেই এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে হালাল-হারামের পার্থক্য নেই তারাই সা‘আদ সাহেবের পক্ষ অবলম্বন করেছে।

ইহুদ-নাসারারা সব সময় এই মেহনত চালু রেখেছে যে, যেকোনো কৌশলে মুসলমানদেরকে উলামা ও মাদরাসা থেকে বিচ্ছিন্ন করতে হবে। তাহলে মুসলমানদেরকে মুরতাদ বানাতে কোনো বাধা থাকবে না। আজ সারা বিশ্বে সা’আদ সাহেবের ভক্তরা উলামা ও মাদরাসার শত্রু ও সমালোচক।

আমাদের এ বছরের বিশ্ব ইজতেমাকে প- করার জন্য সা’আদ সাহেব ও ওয়াসিফ গংরা এমন কোনো কৌশল বাকি রাখেনি যা তারা করেনি। কিন্তু আল্লাহর ফযল ও তাঁর নুসরতে ইজতেমা আশাতীত কামিয়াব হয়েছে এবং ইজতেমার শত্রু “ফেরকায়ে সা’আদিয়া” পরাজিত ও লজ্জিত হয়েছে। আলহাম্দুলিল্লাহ।

উলামা, বিশ্ব ইজতেমা ও কাকরাইলের শূরা বিরোধী ফিরকায়ে সা’আদিয়া থেকে আমরা দূরে থাকি এবং নিজ নিজ মারকাযকে এই ফেরাকার ফিৎনা থেকে পাক রাখি।

اللهم ارنا الحقّ حقّا وارزقنا اتباعه وارنا الباطل باطلا وارزقنا اجتنابه.

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন