আমি নাকি তাবলিগী নই!
বর্তমান সময়ের বহুল আলোচিত তাবলীগ জামাতের সংকট ও তার থেকে উত্তরণে যখন মুহাক্কিক ওলামায়ে কেরাম ফিকির করেন তখন আমাদের কিছু দ্বীনি ভাই যারা স্বল্প শিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষিত হলেও দাওয়াতের মেহনতে দ্বিনের কিছু বুঝ এসেছে দ্বীনের উপর চলতে শিখেছেন আলহামদুলিল্লাহ,
তারাই বর্তমানে মুহাক্কিক ওলামাদের যাচ্ছা তাই ব্যবহার করছেন, বিভিন্ন বিদ্বেষমূলক অপমান জনক শব্দ ও ব্যবহার করতে পিছপা হন না।যা কোন দিন কাম্য নয়।
কিন্তু বর্তমান সংকট উত্তরণে
মুনাজিরে জামান মাওলানা নূরুল ইসলাম ওলীপুরী হাফিজাহুল্লাহ গতকাল টঙ্গীর অজাহাতি জোড়ে আলোচনার শুরুতে বলেছেন- আমাকে বলা হয় আমি নাকি তাবলিগি নই!
অথচ তাবলিগ বিরোধীদের সাথে আমি যে পরিমাণ বাহাস, মুনাজারা করেছি তা আপনাদের অজানা নয়৷ আমি তাবলিগবিরোধীদের আপত্তি সমূহের জবাব দিয়েছি৷
চিল্লা-ছয় নম্বর কোরআন-হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত করেছি৷ আর কারণে আমাকে গালিগালাজ এমনকি মারধর পর্যন্ত খেতে হয়েছে৷ এরপরও আমি যদি তাবলিগি না হই তাহলে কে তাবলিগি? চিল্লা দিলেই যদি তাবলিগি হওয়া যায় তাহলে সাদ সাহেব তো চিল্লা দেন নি তাহলে তিনি তাবলীগী হলেন কি ভাবে?
সাদ ভক্তদের দাবি- সাদ সাহেব যা বলেন তা ইলহামী৷ বাংলাদেশের আলেমগণ এইসব কথা বুঝার ক্ষমতা রাখে না৷
ওলিপুরী সাহেবের জবাব: বাংলাদেশের আলেমগণ সাদ সাহেবের ইলহামি কথা বুঝুক বা না বুঝুক সেটা পরের বিষয়-
আল্লাহ তাঁর নবীকে বলেছেন-
بلغ ما انزل اليك
"হে নবী! আপনার প্রতি যে ওহি নাজিল করা হয় আপনি তা প্রচার করুন৷" অর্থাৎ নবীকে আল্লাহ ওহির তাবলিগ করতে বলেছেন আর সাদ সাহেব করেন ইলহামের তাবলিগ৷ সুতরাং সাদ সাহেবের তাবলিগ নবীর তাবলিগ নয়৷ বরং ইলহামের তাবলিগ৷ আর ইলহাম দুই প্রকার৷ একটা আল্লাহর পক্ষ থেকে হয় আরেকটা শয়তানের পক্ষ থেকে হয়৷ যে ইলহাম কোরআন-সুন্নাহর মোয়াফেক হয় সেটা আল্লাহর পক্ষ থেকে ধরা হবে৷ আর যে ইলহাম কোরআন-সুন্নাহ বিরোধী সেটা শয়তানের পক্ষ থেকে৷ সাদ সাহেবের কথা যেহেতু কোরআন-সুন্নাহর খেলাফ তাই তার ইলহাম শয়তানের তরফ হতে আসে৷
উপরোক্ত কথা গুলো মোনাজেরে ইসলাম ( বিশেষত তাবলীগ নিয়ে) কওমীর রাহবর আল্লামা নুরুল ইসলাম অলিপুরী দামাত বারকাতুহু ১৩/১০/২০১৮ টঙ্গির জোডে বলেছেন বহুত আফসোস করে।
আমাদের অনেক এতায়াতী ভাই দের বলতে শুনেছি যারা নাকি তথাকথিত চিল্লা দেয়নি তারা নাকি তাবলিগ সম্পর্কে কোন কথা বলার অধিকার রাখেনা! ( লা-হাওলা ও-য়ালা কুয়্য়াতা ইল্লাবিল্লাহ) কতটুকু মূর্খ হলে এমন কথা বলতে পারে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। তাবলীগ একটি ব্যপক শব্দ তাবলীগ ইসলামের গুরুত্ব পূর্ণ একটি অংশ কিন্তু তার কাজের পরিধি বিশাল,মাওঃ ইলিয়াছ রহঃ এর প্রচলিত তাবলীগ তার একটি ক্ষুদ্তম একটি অংশ মাত্র।
কিন্তু এ প্রচলিত তাবলীগের উপর আরোপিত হাজারো প্রশ্নের জবাব এ দেশের হাজারো লাখো কওমী ওলামায়ে কেরাম লেখনির মাধ্যমে, ওয়াজের মাধ্যমে, মুনাজেরার মাধ্যমে, খোতবার মাধ্যমে, সাধারন আলাপ আলোচনার মাধ্যমে কোরান হাদিসের অকাট্য দলিল দ্বারা দিয়েছেন।
যদিও তারা অনেকে চিল্লা বা সাল লাগানোর সূযোগ হয়নি দ্বীনের মহান দায়িত্বে থাকার কারণে। আবার অনেকে চিল্লা বা সাল ও লাগিয়েছেন, তাবলীগি ভাইদের মেহনতকে এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করেছেন। সমর্থন যুগিয়েছেন, অনেকে মসজিদের মিম্বার ছেডে দিয়েছেন তাবলীগের মেহনতে আসা সাথীদের, যখন মানুষ ঘুমে বিভোর তখন ওলামায়ে কেরাম রাত জেগে মোতালায়া করে কোরআন হাদিসের নির্যাস ও উসুল থেকে তাবলীগের পক্ষে লেখনীর মাধ্যমে বই লেখেছেন,বাতেলের জবাব দিয়েছেন। এমন ওলামায়ে কেরাম যখন মুরুব্বিদের রেখে যাওয়া প্রানের এ আমানত সম্পর্কে বা বর্তমান তাবলীগের সংকট থেকে ছহি তরিকার উপর উত্তরনের জন্য ফিকির করেন তাদের কে বলা হয় তারা তাবলীগের কেউ নয়!
হায় আফসোস!
হায় আফসোস!
হাজারে আফসোস।
আল্লাহর কাছে হেদায়েতের দোয়া ছাডা আর কিছুই করার নেই আমাদের। কারণ আমাদের কিছু এতায়াতী ভাইয়েরা সহ আল্লামা সাদ সাহেব শুধু মাত্র তাবলীগের এ কাজ কে আসল ও মূল কাজ বা দ্বীনকে এ ছয় উসুলের মধ্যে সীমাবদ্ধ করার কারণে তাদের এ সমস্যা টা হয়েছে। ওলামায়ে কেরাম চাচ্ছেন তাদের এ ভূল ভাঙতে। এবং ছহী ভাবে দ্বীনের প্রচার প্রসার করতে।
যারা বর্তমান সংকট নিয়ে ইতস্হতায় আছেন তাদের প্রতি, ঃ
আকুল নিবেদন --
তাবলীগের এ সংকট মুহুর্তে বাডাবাডি না করে অযথা তর্কে না জডিয়ে উভয় পক্ষের প্রকাশিত বই ও দেওবন্দের ফতোয়া গুলো, ভাল ভাবে পডে চিন্তা করুন, অযথা কাদাছডাছডি কাম্য নয়,
ফেইজবুকের তথ্য দিয়ে মুল্ ায়ন করতে পারবেন না, নিরপেক্ষ ভাবে ধারাবাহিক বই গুলো পডলে অনেক ভূল ভাঙ্গবে,
আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাত্র সংগ্রহ কৃত ১৩ টি বইয়ের মাত্র ৫/৬ টি অধ্যয়নেই মুল সমস্যা কি সমাধান কি তা কিছুটা অনূধাবনে সক্ষম হয়েছি অথচ এর আগে বিক্ষিপ্ত ভাবে ফেইজবুক সহ অন্যান্ মাধ্যমে অনেক কিছু পডলেও ধোঁয়াশা কাটেনি।
সকল কওমী ওলামায়ে কেরাম
তোলাবায়ে এজাম ১০০% প্রত্ক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে তাবলীগের কাজের পক্ষে কিন্তু সকলের চেষ্টা হল কাজটাকে নিখুঁত ভাবে পরিচালনা করা,
যদিও কেউ কেউ বেফাঁস মন্তব্য করে থাকেন, সেটা কাম্য নয়, সর্বাবস্হায় সংযমী হওয়া প্রয়োজন।
তাছাডা হয়তো তারাও কোন দুঃখ - বেদনা নিয়ে এমন মনতব্ করে থাকেন, কারণ লাখো কোটি সাধারণ জনগন সহ আলেম ওলামা ও তাবলীগ সংশ্লিষ্ট মুরিব্বিদের জান-মাল আর সময় দিয়ে কোরবান করা বিশ্ব ব্যপি সমাদিত ও প্রসংশিত হক্কানিয়তের জান্ডাবহনকারী প্রিয় তাবলীগি জামায়াতের কর্মকান্ড যেন কারো কোন কর্ম বা কথার দ্বারা বাটা পরে না যায়, কোন বাতেল ফেরকায় যেন পরিনত হয়ে না যায়,
যেমনটি ৫/৩/১৪৩৮ তাং দারুলউলুম দেওবন্দের ৯৬/৩ নং ফতোয়া ( ৪ পৃষ্ঠার) ফতোয়াতে ও শংকা প্রকাশ করা হয়েছিল, এ শংকা থেকে হয়তো কেউ বাজে মন্তব্য ও করতে পারেন।তবে হক যেন হক হিসাবে টিকে থাকতে পারে, সেটাই সবার কাম্য।
গত কিছুদিন আগে মাদারে এলমী জামেয়া ইসলামিয়া পটিয়ায় ওজাহাতি জোডে ওস্তাদে মুহতারম আল্লামা আবদুল হালীম বোখারী সাহেব মাঃ জিঃ আফসোস করে একটা কথা বলেছিলেন যে,
"আমাদের অনেক মুরুব্বি গন আখেরী জামানায় ইমাম মাহদীর আগমনের কাল্পনিক স্বপ্ন দেখতেন এ জামা'য়াত থেকে"
আর সেই জামায়াতের মধ্যে যদি কোন বিচ্যুতী পরীলক্ষীত হয় সত্যিই আফসোসের বিষয়।
আমরা আশা করি বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বের আহলেহক ওলামায়ে কেরাম ও তাবলীগের মুরুব্বিদের
সন্মিলিত প্রচেষ্টা আর দোআয় তাবলীগ তার আপনগতিতে হক্কানিয়তের জান্ডাবহন করে এগিয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
কেন সা'দ সাহেবের বিরোধীতা ?
------------------------ কারন নিম্নরূপ- ------------------
তিনি বিভিন্ন মজমাতে বয়ান করতে গিয়ে যে সকল মন্তব্য /বয়ান করেছেন সে গুলো দারুল উলুম দেওবন্দে ও সংরক্ষন আছে তা থেকে কিছু নিন্মে দেয়া হল।
----
১. ক্যামেরাওয়ালা মোবাইল রাখা হারাম। কারো পকেটে ক্যামেরা বিশিষ্ট মোবাইল রেখে নামায পড়লে তার নামায শুদ্ধ হবে না।
২. যেই উলামায়ে কেরাম ক্যামেরাওয়ালা মোবাইল রাখেন, তাঁরা উলামায়ে ছূ। বারবার কসম করে বলেন, তাঁরা হলেন উলামায়ে ছূ। এমন আলেমরা হল গাধা।
৩. মোবাইলে কুরআন শরীফ পড়া এবং শোনা, প্রস্রাবের পাত্র থেকে দুধ পান করার মতো। পেসাবদানী ছে পানি পিনা হাঁয়'।
৪. কুরআন শরীফ শিখিয়ে যাঁরা বেতন গ্রহণ করেন, তাঁদের বেতন বেস্যার উপার্জনের চেয়ে খারাপ। যেই ইমাম এবং শিক্ষকরা বেতন গ্রহণ করেন, তাদের আগে বেস্যারা জান্নাতে প্রবেশ করবেন।
৫. মাদরাসা গুলোতে যাকাত না দেয়া হোক। মাদরাসায় যাকাত দিলে যাকাত আদায় হবে না। সারা আলমের মাদরাসা গুলো যাকাত নিয়ে হারাম কাজ করতেছে।
৬. রাসূল স. এর বাই'আতের পর কেবল তিন জনের বাই'আত পূর্ণতা পেয়েছে, আর সবার বাই'আত অপূর্ণ। তিনজন হলেন, (ক) শাহ ইসমাঈল শহীদ রহ. (খ) মাও. মুহা. ইলিয়াছ রহ. (গ) মাও. মুহা. ইউসূফ রহ.।
৭. মাও. সা'আদ বিভিন্ন ইজতিমায় একাধিকবার সুন্নাতকে তিন প্রকার বলে বয়ানে বলে থাকেন, ইবাদাতের সুন্নাত, দাওয়াতের সুন্নাত এবং আচার-আচরণের সুন্নাত।
৮. দাওয়াতের পথ নবীর পথ, তাছাউফের পথ নবীর পথ নয়।
৯. আযান হল-তাশকীল, নামায হল-তারগীব আর নামাযের পরে আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়া হল-তারতীব।
১০. রাসূল স. দাওয়াত ইলাল্লাহ'র কারণে ইশারের নামায দেরীতে পড়ছেন। অর্থাৎ নামাযের চেয়ে দাওয়াতের গুরুত্ব বেশি।
১১. হযরত ইউসূফ আ. 'উযকুরনী ইনদা রাব্বিক' বলে গাইরুল্লাহ'র দিকে নযর দেয়ার কারণে অতিরিক্ত সাত বছর জেলখানায় থাকতে হয়েছে।
১২. হযরত মুসা আ. দাওয়াত ছেড়ে দিয়ে কিতাব আনতে চলে গেছেন। দাওয়াত ছেড়ে চলে যাওয়ার কারণে পাঁচলক্ষ সাতত্তর হাজার লোক মুরতাদ হয়েগেছেন।
১৩. হযরত যাকারিয়া আ. আল্লাহকে বাদ দিয়ে গাছের কাছে আশ্রয় চাইলেন ফলে শাস্তি ভোগ করতে হল।
১৪. হযরত মূসা আ. থেকে এক বড় ভুল হয়েগেছে (এই ইবারতাটা হুবাহু মওদুদী সাহবের ইবারত)। এবং তিনি অপরাধ করে বসছেন। এই জন্য তিনি ক্বওমকে ছেড়ে আল্লাহর সান্বিধ্য লাভের জন্য নির্জনতা গ্রহণ করলেন।
১৫. আমাদের কাজের (তাবলিগী) সাথে লেগে থাকা এবং মাওলানা ইলিয়াছ ও মাওলানা ইউসূফ সাহেবের কিতাব পড়বে, অন্য কোন কিতাব পড়বে না।
১৬. হযরত মূসা আ. কর্তৃক হযরত হারুন আ. কে নিজের স্থলাভিষিক্ত বানানো উচিত হয় নি।
১৭. সকাল সকাল কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করা এবং নফল নামায পড়ার একটা অর্থ বুঝে আসে কিন্তু আল্লাহ আল্লাহ জিকির কী অর্জন হয়? কিছুই হয় না।
১৮. এ-তাবলীগী কাজ, এছাড়া দীনের যত কাজ আছে-দীনি ইলম শিখানো, দীনি ইলম শিখা, আত্মশুদ্ধি, কিতাবাদি রচনা করা; কোনটাই নবুওয়াতী কাজ না।
১৯. মাদরাসার শিক্ষকগণ মাদরাসায় খিদমাত করার কারণে দুনিয়াবী ধ্যান্দায় জড়িয়ে পড়ছে, এই জন্য তাদের দীনের মেহনতে সময় দেয়া দরকার।
২০. কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা বান্দাকে জিজ্ঞাস করবেন, তা’লীমে বসছিলে কি না, গাস্ত করছিলে কি না?
২১. প্রত্যেক সাহাবী অপর সাহাবীর বিরুদ্ধাচরণ করছেন।
২২. হিদায়েতের সম্পর্ক যদি আল্লাহর হাতে হতো, তাহলে নবী পাঠাতেন না।
২৩. আপনাদের কাছে সবচাইতে বড় গোনাহ চুরি-যেনা, এর চাইতে বড় গোনাহ হল, খুরুজ না হওয়া। তাই হযরত কা’ব ইবনে মালেকের সাথে পঞ্চাশ দিন পর্যন্ত কথা-বার্তা বন্ধ রাখা হয়।
২৪. কুরআন শরীফ বুঝে-শুনে তেলাওয়াত করা ওয়াজিব। না বোঝে তেলাওয়াত করলে ওয়াজিব তরকের গোনাহ হবে। ইত্যাদি ইত্যাদি।
সুত্র...... সা'দ সাহেবের আসল রূপ
হে আল্লাহ দেওবন্দের এই সন্তানকে হেফাজত করুণ!
ওয়ামা তাওফীকে ইল্লা-বিল্লাহ
চলবে----
এম এম আবদুল্লাহ ভূঁইয়া
প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক নূরুল গনি ইসলামী একাডেমী কাটাছরা মিরসরাই চট্টগ্রাম।
নিন্মে দেওবন্দের ফতোয়ার কপি সহ এ্যাড করা হল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন