#হাটহাজারী_মাদরাসায়_জামায়াত_শিবিরের_হামলা
=================================
রাত সাড়ে ৯টা। আনুমানিক শ'খানেক সশস্ত্র যুবক একটি ট্রাকযোগে মাদরাসার গেটের সামনে নেমে বিভিন্ন শ্লোগান দিয়ে মাদরাসার ভেতরে ডুকে পড়ে। তারপর ৩/৪টা পটকা ফুটিয়ে ছাত্র-শিক্ষকদের সন্ত্রস্ত করার চেষ্টা চালায়। কয়েক গ্রুপে বিভক্ত হয়ে একদল দফতরে ইহতেমাম, আরেকদল দাওরায়ে হাদীসের নৈশকালীন ক্লাস চলাকালে দাওরার শ্রেণিকক্ষের দিকে এবং আরেকটি দল পাঠাদানের জন্য ব্যবহৃত মাইকের সেট রাখা কক্ষের দিকে অগ্রসর হয়।
১৯৮৫সালের ১০ডিসেম্বর রোজ মঙ্গলবার এ ঘটনা ঘটে।
১ম দল ধমকি ও অশালীন কথা বলে মুহতামিম সাহেবের বন্ধ দরজা ভাঙার চেষ্টা চালায়। ২য় দল দারুল হাদীসে উঠে মুসলিম শরীফের ক্লাসরত ছাত্রদের উপর আক্রমণ চালায় এবং লাথি দিয়ে কিতাবপত্র এদিক সেদিক ফেলে দিতে থাকে। এসময় দরসদানকারী মুহাদ্দিস মুফতি আযম আহমদুল হক উপায়ন্তর না দেখে সেখানেই সিজদা পড়ে আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করতে থাকেন।
ইত্যবসরে হোস্টেলে অবস্থানরত ছাত্ররা মাদরাসার সম্পদ, মুহতামিম সাহেব এবং শিক্ষকদের রক্ষার্থে এগিয়ে আসে। ইট-পাটকেল ছুড়ে আক্রমণকারিদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। (উল্লেখ্য, তাদের হাতে ছিল বিস্ফোরক দ্রব্য, দা, ছুরি, কিরিচ, লোহার রড, লাঠি ও মরিচের গুড়া ইত্যাদি। মারাত্মকভাবে সন্ত্রস্ত করতে এনেছিল খেলনা পিস্তল। সাথে আনে মাদরাসার রুম-গেট বন্ধ করতে বিপুল পরিমাণে তালা।)
এদিকে দপ্তরে ইহতিমাম আক্রান্ত হলে মুহতামিম সাহেব থানা এবং শহরের উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের টেলিফোনযোগে সংবাদ জানিয়ে সাহায্যের আবেদন করে।
'মুহতামিম সাহেব খুন হয়েছেন' এমন সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে কয়েক হাজার এলাকাবাসি দ্রুত এসে মাদরাসার গেটে জড়ো হয়। কিন্তু ভেতর থেকে গেট বন্ধ থাকায় প্রবেশ করতে পারেনি। এর কিছুক্ষণের মধ্যে পুলিশের দল পৌছে যায়।
এসময় মুহতামিম সাহেব মাইকে সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে নিজের অক্ষত থাকার কথা ঘোষণা দিয়ে পুলিশদের ভেতরে প্রবশের অনুরোধ জানায়। পুলিশের সাথে অনেক মানুষ ঢুকে পড়ে। এরপর ছাত্র-জনতা চতুর্দিক থেকে আক্রমণকারিদের মুকাবেলা করে। এরই মধ্যে শহর থেকে পুলিশের রিজার্ভ ফোর্স এসে পৌঁছে।
উভয় ফোর্স যৌথভাবে অল্পসময়ে ৪১জন আক্রমণকারিদের গ্রফতার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। অনেকে দেয়াল টপকে পালিয়ে যায়।
সংঘর্ষে অনেকে হতাহত হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে প্রশাসন ১৪৪ধারা জারি করে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে শহরের একটি মাদরাসা, ভার্সিটি এবং কলেজের ছাত্ররা ছিলো।
নীল নকশা উদ্ধার :
ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ হামলার বিস্তারিত তথ্য সম্বলিত আগাম নকশা উদ্ধার করে।
নকশায় কোন কোন ভবনে কে কে অংশ নিবে, কে কোন দায়িত্ব পালন করবে এবং হামলাকারির সংখ্যা বর্ণনা রয়েছে। আরো ছিলো, টেলিফোন, মাইক ও গেটের দায়িত্বশীলদের তালিকা। এমনকি কিরিচ, ছুরি, লাঠি, বোতল, মরিচের গুড়া, তালা ও বিস্ফোরক দ্রব্যের বিস্তারিত বিবরণ নকশায় উল্লেখ ছিলো।
হামলার মূল উদ্দেশ্য :
হামলাকারিদের মূল উদ্দেশ্য ছিলো :
এক. তৎকালীন মুহতামিম সাহেবকে অপসারণ করে নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগ। দুই. বর্তমান শিক্ষকদের বহিষ্কার করে নতুন শিক্ষক নিয়োগ।
তিন. মাদরাসার কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি গঠন।
চার. ভিন্নমতালম্বী ছাত্রদের বহিষ্কার করে নতুন ছাত্র ভর্তি।
পাঁচ. মাদরাসার নতুন প্রশাসন সম্পর্কে প্রচার ও পত্র-পত্রিকায় সংবাদ পরিবেশন।
উপমহাদেশের অন্যতম এই দীনি প্রতিষ্ঠানে অনেকবার হামলা করতে চেষ্টা করেছে বেদাতি-জামাতিরা। কিন্তু আল্লাহর বিশেষ রহমতে প্রতিবারই তারা ব্যর্থ হয়েছে এবং ধুলিস্মাৎ হয়েছে তাদের নীল নকশা। আর ১৯৮৫ সালের উক্ত ঘটনা ছিলো হাটহাজারী মাদরাসায় হামলাকারীদের পরাজয়ের ইতিহাসের করুণ ও কালো অধ্যায়।
তথ্যসূত্র : দারুল উলুম হাটহাজারীর ইতিহাস, পৃষ্ঠা ১৪৬-১৪৮। লেখক মুফতী জসীম উদ্দীন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন