মুসলমানদের বিরুদ্ধে লা-মায্হাবীদের আক্রমণের স্বরূপ
১। মায্হাব মানা বা তাক্বলীদ করা এবং মায্হাব্-অবলম্বীদের প্রতি বিরাগ-বিদ্বেষ ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া নিয়েই কথিত “ আহলে হাদীস ” মতবাদের আত্নপ্রকাশ।
তাই, মায্হাব্ ও মায্হাব্পন্থীদের প্রতি ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে অসংগতিপূর্ণ, জঘণ্যতম ও ন্যাক্কারজনক কটুক্তিপূর্ণ বই-পুস্তক তারা বিনামূল্যে ও স্বল্পমূল্যে বিতরণ করে যাচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ তাদের পুস্তকগুলো থেকে কয়েকটি উক্তি নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ
২। লা-মায্হাবীদের বহুল আলোচিত বই “ কাটহুজ্জাতীর জাওয়াব ” বইয়ের লিখক মাওঃ আবু তাহের বর্দ্ধমানী লিখেছেঃ
“ তাক্বলীদ হচ্ছে ঈমানদারদের জন্য শয়তানের সৃষ্ট বিভ্রান্তি। ”
( কাটহুজ্জাতীর জাওয়াবঃ পৃ – ৮৩)
৩। অত্যন্ত বিতর্কিত বই “ তাওহীদী এটম বোম ” বইয়ের প্রণেতা মাওঃ আব্দুল মান্নান সিরাজনগরী (বগুড়া) লিখেনঃ
“ মুক্বাল্লিদগণকে মুসলমান মনে করা উচিত নয় । ”
( তাওহীদী এটম বোমঃ পৃ – ১৫)
৪। রংপুর শোলবাড়ী নিবাসী মোঃ আব্দুল কাদের লিখেনঃ
“ মায্হাবীগণ ইসলাম থেকে বহিষ্কৃত, তাদের মধ্যে ইসলামের কোন অংশ নেই। ”
( তান্বিহুল গাফেলীন, আব্দুল কাদির রচিতঃ পৃ – ৭ )
৫। “ ই’তেছামুস সুন্নাহ ” গ্রন্থের রচয়িতা মাওঃ আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদী লিখেঃ
“ চার ইমামের মুক্বাল্লেদ এবং চার তরিকার অনুসারীগণ মুশরিক ও কাফির। ”
( ইতেছামুস্ সুন্নাহ্: পৃঃ ৭-৮ )
এভাবে জফরুল মুবিন প্রণেতা মৌঃ মুহিউদ্দীন, তরজমানে ওহ্হাবিয়্যাহ প্রণেতা নবাব ছিদ্দীক হাসান খান এবং লা-মায্হাবীদের সর্বশ্রেষ্ঠ ফাতওয়ার কিতাব ফতোয়ায়ে নাজিরিয়ার সংকলক মৌঃ নাজিমুদ্দীন প্রমুখ মায্হাব-অবলম্বীদেরকে কাফির, মুশরিক, বি’দআ’তী ও জাহান্নামী বলে ফতোয়া দিয়েছে।
( দ্রঃ জফরুল মুবিনঃ পৃঃ ১৮৯-২৩০-২২৩; তরজমানে ওহ্হাবিয়্যাহঃ পৃঃ ৩৫-৩৬; ফতোয়ায়ে নাযীরিয়াঃ পৃঃ ১/৬৯-৯৭)
পর্যালোচনা
অথবা সেই যিন্দীক্ব বা নাস্তিকের জন্যই এমন ধারণা-পোষণ শোভা পায়, যার উদ্দেশ্য বা আকাংখা হচ্ছে মুসলমানদের বৃহত্তর অংশের মধ্যে নিরাশা সৃষ্টি করতঃ খোদ দ্বীন ইসলামকেই আংশিক বা পুরোপুরি অচল করে দেয়া। উক্ত ধারণা পোষণকারী শ্রেণীর লোকজন গুটিকয়েক হাদীস মুখস্থ করতঃ শরীয়তের সমস্ত বিধি-বিধান শুধু এই কয়েকটি হাদীসের মধ্যেই সীমিত হবার বদ্ধমূল ধারণা নিয়ে বসে আছে। নিজের অজানা সবকিছুকে তারা অস্বীকার করে চলেছে। ”
( মাক্তুবাতে ইমাম রাব্বানীঃ ২/১০৭-১০৮ মাক্তুব নং – ৫৫ (ফার্সী) )
মুফাসসিরগণের মাযহাবঃ
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিমের উস্তাদ ইমাম ইবনে মঈন (রহঃ) এর মায্হাবঃ
****************************************************
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিমের উস্তাদ, হাদীসের জগতে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বজন স্বীকৃত ইমাম বিশেষত হাদীস যাচাই-বাছাই বা ইল্মুল্ জারহ্ অ-তা’দীলের অতুলনীয় ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী বিদ্যাসাগর ইয়াহ্ইয়া ইবনে মঈন (রহঃ) অসীম জ্ঞানের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও তিনি বল্গাহীন পথ পরিহার করে ইমাম আবু হানীফার তাক্বলীদ করে চলতেন।
এ সম্পর্কে তাঁর নিজের মত দেখুনঃ
“ আমার নিকট গ্রহণযোগ্য ক্বিরাআত হামযার ক্বিরাআত এবং গ্রহণযোগ্য ফিক্বহ ইমাম আবু হানিফার ফিক্বহ। সকল মানুষকেও আমি এর উপর ঐক্যবদ্ধ পেয়েছি। ”
( তারিখে বাগদাদঃ পৃ – ১৩/৩৪৭ )
ইমাম ইবনে মঈন (রহঃ) এর মায্হাব সম্পর্কে ইমাম যাহাবী বর্ণনা করেনঃ
“ ইয়াহইয়া ইবনে মঈন জারহ অ-তা’দীলের ইমাম এবং শীর্ষস্থানীয় হানাফীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। ”
( মা’রিফাতুল্ মুতাকাল্লাম ফীহিম…যাহাবীঃ পৃ – ৭, ছাপা, মিশর ১৩২৪ হিঃ )
ইবনে মঈনের প্রশংসা করতে গিয়ে ইমাম আহমদ (রহঃ) বলেনঃ
“ ইমাম ইবনে মঈন যে হাদীস সম্পর্কে জানেন না সেটি হাদীস নয়। ”
( তাহযীবুত্ তাহযীব, ইবনে মঈনের জীবনী পর্বঃ পৃ – ১১/২৯ )
বস্তুত ইমাম ইবনে মঈন হাদীসের বর্ণনাকারীর সত্যায়ন ও হাদীসের যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সত্যিই অতুলনীয়। তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রতীয়মান হয় যে, অবশ্যই যাচাই-বাছাই করতঃ হাদীসের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠ ও বিশুদ্ধ মায্হাব হিসেবেই তিনি হানাফী মায্হাবকে মনোনীত করেছেন। অতএব, যারা বলে, হানাফী মায্হাব বিশুদ্ধ হাদীস পরিপন্থী, তাদেরকে ন্যায়পরায়ণতা ও আল্লাহর ভয় নিয়ে পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানাচ্ছি।
মুহাম্মদ ইব্নে আব্দুল ওহ্হাব নজদী (রহঃ) এর মায্হাবঃ
লা-মায্হাবীরা দাবী করে থাকে যে, মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওহহাব নজদীও লা-মায্হাবী ছিলেন। কিন্তু তিনি একজন হাম্বলী মায্হাবের অনুসারী ছিলেন এবং তিনি নিজেই স্বীয় মায্হাব সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে বলেছেন।
-দেখুনঃ আল-হাদিয়াতুস্ সুন্নাহঃ পৃ – ৯৯
সাথে সাথে চার মায্হাবের যে কোন একটির ত্বাকলীদ করা যাবে এবং এই চার মায্হাব ছাড়া অন্য কোন মায্হাবের অনুসরণ করা যাবে না বলেও তিনি মত প্রকাশ করেছেন।
-তারীখু নাজদ-আলূসীঃ পৃ – ৫৪-৫৬; ছিয়ানাতুল্ ইনসানঃ পৃ – ৪৭১১
লা মায্হাবীদের অন্যতম মান্যবর ইমাম, ইমাম ইবনে তাইমিয়্যা (রহঃ) এর মায্হাবঃ
*******************************************************
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যা (রহঃ) (মৃঃ ৭২৮ হিঃ) একজন যুগশ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ, আল্লামা ও বিখ্যাত কলম সৈনিক ছিলেন। অসংখ্য রচনাবলী, ফাত্ওয়া ও সমকালীন জিজ্জাসার জবাব তাঁ মহাজ্ঞানের উজ্জ্বল সাক্ষ্য বহন করে। আরব বিশ্বে তিনি আজও শাইখুল ইসলাম হিসেবে স্মরণীয়-বরণীয় হয়ে আছেন। তাঁর গুণগ্রাহী ভক্তবৃন্দদেরকে প্রতারণার মানসে তথাকথিত আহলে হাদীস বা গাইরে মুক্বাল্লিদ ও লা-মায্হাবীরা দাবি করে থাকে যে, ইবনে তাইমিয়্যা গাইরে মুক্বাল্লিদ ও লা-মায্হাবী ছিলেন। আর সকল গাইরে মুক্বাল্লিদরা ইবনে তাইমিয়্যার ত্বাকলীদ করে এবং তাঁরই মায্হাব অনুসরণ করে থাকে।
তাদের এ দাবী যদি মানা হয়, তাহলে প্রমাণিত হয় যে, লা-মায্হাবীরা মায্হাব মানে না বা ত্বাকলীদ করে না বলে জনসাধারণকে কেবল ধোঁকাই দিয়ে যাচ্ছে। অথচ তারা নিজেরাই ইমাম ইবনে তাইমিয়্যার তাক্বলীদ করে এবং তাঁরই মায্হাব অনুসরণ করে চলেছে।
বস্তুত ইবনে তাইমিয়্যা গাইরে মুক্বাল্লিদ বা লা-মায্হাবী ছিলেন মর্মে কেউ কোন তত্ত্ব আদৌ পেশ করতে পারবে না। বরং এটা সর্বজন স্বীকৃত যে, ইবনে তাইমিয়্যা ও তাঁর একান্ত শিষ্য ইবনুল ক্বাইয়্যিম উভয়ই হাম্বলী মায্হাবের অনুসারী ছিলেন। তাঁর রচিত ৩৭ খন্ডে সমাপ্ত অমর গ্রন্থ ‘মাজমুয়াতুল ফাত্ওয়া’ এরই সাক্ষ্য বহন করে।
লা-মায্হাবীদের অন্যতম পুরোধা ছিদ্দীক হাসান খানও ইবনে তাইমিয়্যাকে হাম্বলী মায্হাবের বলেই উল্লেখ করেছেন।
-দেখুনঃ আল-জুন্নাহঃ পৃ – ৩৮
অন্যদিকে লা-মায্হাবীরা যতই বলুক তারা ইবনে তাইমিয়্যাকে অনুসরণ করে, প্রকৃতপক্ষে তাও ভুল।শুধু বিতর্কিত কয়েকটি বিষয় ব্যতীত অসংখ্য-অগণিত বিষয় এমন রয়েছে, যেগুলোতে ইবনে তাইমিয়্যার সঙ্গে গাইরে মুক্বাল্লিদদের কোন মিলে নেই।
উদাহরণস্বরূপ শুধু একটি বিষয় তুলে ধরছিঃ
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যা (রহঃ) তারাবীহর নামায বিশ রাকআত সুন্নাত বলে উল্লেখ করেছেন।
-মাজমুয়ায়ে ফাত্ওয়াঃ খঃ ২৩, পৃ – ১১২
পক্ষান্তরে লা-মায্হাবী বা আহলে হাদীস নামধারী নতুন ফেরকাটি সম্প্রতি বিভিন্ন স্থানে আট রাক্আত তারাবীহর নতুন মতবাদ প্রতিষ্ঠার অপপ্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে
।
পবিত্র মক্কা-মদীনার ইমামগণের মাযহাবঃ
****************************
প্রায় এক হাজার বছর পর্যন্ত চার মায্হাবের অনুসারীগণ চার ইমামের পিছনে ভিন্ন-ভিন্নভাবে জামাআতে নামায আদায় করেছেন। হানাফী মায্হাবের অনুসারীগণ হানাফী মায্হাবের ইমামের পেছনে, মালেকী মায্হাবের অনুসারীগণ মালেকী মায্হাবের ইমামের পেছনে, এভাবে অপর দুটি মায্হাবের অনুসারীগণও তাঁদের স্ব-স্ব মায্হাবের ইমামের পেছনে নামায আদায় করতেন। এ ধারা হারাম শরীফে চলে আসছে প্রায় এক হাজার বছর নাগাদ। কিন্তু ১২১৮ হিজরীর ৮ই মুহাররম বাদশা সাউদ ইবনে আব্দুল আযীয তাঁর সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে উমরার উদ্দেশ্যে মক্কা শরীফ প্রবেশ করেন। তিনি তখন তথাকথিত সংস্কারের নামে যেসব কাজ করেন, তন্মধ্যে একটি হল, তিনি হারাম শরীফে সকল মুসল্লীকে একই ইমামের পিছনে একই সাথে জামাআতে নামায আদায়ের নির্দেশ জারী করেন।
( তারীখে মামলাকাঃ পৃ – ২৫ )
উল্লেখ্য যে, তদানীন্তনকালে সমগ্র বিশ্বের অধিকাংশ মুসলমানই হানাফী মায্হাবের অনুসারী ছিলেন। তৎকালে সমগ্র বিশ্বের শত কোটি মুসলমানের জামাআতে প্রায় অধিকাংশ মুসলমানই হানাফী মায্হাবের অনুসারী ছিলেন। তাই সমগ্র বিশ্ব থেকে হারাম শরীফে আগত এবং সেখানকার স্থানীয় মুসলমানগণের বিশাল জামাআত হানাফী ইমামের পেছনেই সমবেত হতেন। সে সুদীর্ঘকাল যাবৎ হানাফীদেরই রাজত্ব চলে আসছিল। এমতাবস্থায় এ বিশাল জামাআতের অনুসারীগণ মালেকী, শাফেয়ী ও হাম্বলী মায্হাবের সংখ্যালঘু অনুসারীদেরকে ভিন্ন-ভিন্ন জামাআতে নামায আদায় করার সুযোগ দিয়ে উদারতার পরিচয় দিয়েছেন। কিন্তু সংখ্যালঘুরা ক্ষমতায় এসে তাদের মায্হাবের ইমাম ব্যতীত অন্যদের প্রতি নিষেধাজ্ঞা জারী করে সংকীর্ণমনার পরিচয় দিয়েছেন।
তবে আমরা অত্যন্ত গর্বের সাথে বলতে পারি যে, যখন চার ইমাম ছিল তখনও হানাফী, শাফেয়ী, মালেকী ও হাম্বলী মায্হাবেরই ছিল। গাইরে মুক্বাল্লিদ বা লা-মায্হাবীদের কোন ইমাম ছিল না। আর যখন থেকে এক ইমামের ধারা চলছে তখনও কোন না কোন মায্হাবের অনুসারীই ইমাম হয়ে আসছেন। আজ পর্যন্ত গাইরে মুক্বাল্লিদ বা লা-মায্হাবীদের কোন ইমাম পবিত্র মক্কা-মদীনায় নিয়োগ হতে পারে নি।
উল্লেখ্য যে, আব্বাসী যুগের প্রায় পাঁচশ বছর পর্যন্ত পবিত্র মক্কা-মদীনার সকল ইমাম ও বিচারক হানাফী ছিলেন। অতঃপর প্রায় দু’শ বছর খাওয়ারিয্মী ও সালজুক্বীদের অধীনে চলে, তারাও রক্ষণশীল হানাফী ছিলেন। অতঃপর উসমানী ও তুর্কী খেলাফত প্রায় পাঁচশ বছর পর্যন্ত চলে। তারাও সবাই হানাফী ছিলেন।
( আল-খাইরাতুল হিসান-ইবনে হাজার, মক্কী শাফেয়ীঃ পৃ – ৭২ )
মোটকথা, ইসলামী ইতিহাসের সোনালী অধ্যায়ে বারশ বছর পর্যন্ত পবিত্র মক্কা-মদীনায় ইমাম ও খতীবের সুমহান দায়িত্ব হানাফী ইমামগণই আঞ্জাম দিয়ে এসেছেন এবং কাযী ও বিচারকের আসনেও তারাই ছিলেন।
( আল-খাইরাতুল হিসান-ইবনে হাজার মক্কী, শাফেয়ীঃ পৃ – ৭২; রদ্দুল মুহতারঃ পৃ – ১/৭৫ )
লা-মায্হাবীদের কোন ইমাম কখনো নিয়োগ হয়নি এবং বর্তমানেও সেখানের সকল ইমাম কোন না কোন মায্হাবের অনুসারী। আজও তারা পবিত্র রমজানে মাসে বিশ রাক্আত তারাবীহ আদায় করেন। গাইরে মুক্বাল্লিদদের নবাবিষ্কৃত ও মনগড়া মতবাদ আট রাক্আত তারাবীহ ও অন্যান্য ভ্রান্ত প্ররোচনা থেকে তাঁরা আজও সংরক্ষিত।
শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ্ (রহঃ) (মৃঃ ১১৭৬ হিঃ) এর মায্হাবঃ
ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস শাহ্ সাহেব হানাফী মায্হাবের অনুসারী ছিলেন। তাঁর নিজের লিখা কিতাবই এর সাক্ষ্য বহন করে।
শাহ সাহেব ও তাঁর গোটা বংশ যে হানাফী ছিলেন এ মর্মে অনেক গাইরে মুক্বাল্লিদ আলিমও স্বীকৃতি দিয়েছেন। যেমনঃ ছিদ্দীক হাসান খান এর মত দেখুনঃ
-ইতিহাফঃ পৃ – ২৯৭ -আল-হিত্তাঃ পৃ – ৭০ -তরজমানে ওহ্হাবিয়্যাহঃ পৃ – ১১
শাহ আবদুল আযীয মুহাদ্দিসে দেহলবী (রহঃ) (মৃঃ ১২৩৯ হিঃ) এর মায্হাবঃ
তিনি ইংরেজবিরোধী ঐতিহাসিক আযাদী আন্দোলনের বিপ্লবী ঘোষক। শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ্র জ্যেষ্ঠ পুত্র। পূর্বে তথ্য ও তত্ত্ব সহকারে উল্লেখ করেছি যে, শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ (রহঃ) এর গোটা পরিবারই হানাফী ছিলেন। এছাড়া তিনি তার রচনাবলীতে তাক্বলীদ ও মায্হাবের প্রতি বিভিন্নভাবে গুরুত্বারোপ করেছেন। যেমনঃ
-তাফ্সীরে আযীযীঃ সূরা মূলক আয়াত ১০ পৃ – ২৩ -ফাত্ওয়ায়ে আযীযিয়াঃ পৃ – ২/২৪
উপরোক্ত
আলোচনার দ্বারা এটাই প্রমান গায়রে মোকাল্লেদ
সমপ্রদায় ভ্রান্ত হওয়ার ব্যপারে আর কোন সংশয় রইলনা
১। মায্হাব মানা বা তাক্বলীদ করা এবং মায্হাব্-অবলম্বীদের প্রতি বিরাগ-বিদ্বেষ ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া নিয়েই কথিত “ আহলে হাদীস ” মতবাদের আত্নপ্রকাশ।
তাই, মায্হাব্ ও মায্হাব্পন্থীদের প্রতি ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে অসংগতিপূর্ণ, জঘণ্যতম ও ন্যাক্কারজনক কটুক্তিপূর্ণ বই-পুস্তক তারা বিনামূল্যে ও স্বল্পমূল্যে বিতরণ করে যাচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ তাদের পুস্তকগুলো থেকে কয়েকটি উক্তি নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ
২। লা-মায্হাবীদের বহুল আলোচিত বই “ কাটহুজ্জাতীর জাওয়াব ” বইয়ের লিখক মাওঃ আবু তাহের বর্দ্ধমানী লিখেছেঃ
“ তাক্বলীদ হচ্ছে ঈমানদারদের জন্য শয়তানের সৃষ্ট বিভ্রান্তি। ”
( কাটহুজ্জাতীর জাওয়াবঃ পৃ – ৮৩)
৩। অত্যন্ত বিতর্কিত বই “ তাওহীদী এটম বোম ” বইয়ের প্রণেতা মাওঃ আব্দুল মান্নান সিরাজনগরী (বগুড়া) লিখেনঃ
“ মুক্বাল্লিদগণকে মুসলমান মনে করা উচিত নয় । ”
( তাওহীদী এটম বোমঃ পৃ – ১৫)
৪। রংপুর শোলবাড়ী নিবাসী মোঃ আব্দুল কাদের লিখেনঃ
“ মায্হাবীগণ ইসলাম থেকে বহিষ্কৃত, তাদের মধ্যে ইসলামের কোন অংশ নেই। ”
( তান্বিহুল গাফেলীন, আব্দুল কাদির রচিতঃ পৃ – ৭ )
৫। “ ই’তেছামুস সুন্নাহ ” গ্রন্থের রচয়িতা মাওঃ আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদী লিখেঃ
“ চার ইমামের মুক্বাল্লেদ এবং চার তরিকার অনুসারীগণ মুশরিক ও কাফির। ”
( ইতেছামুস্ সুন্নাহ্: পৃঃ ৭-৮ )
এভাবে জফরুল মুবিন প্রণেতা মৌঃ মুহিউদ্দীন, তরজমানে ওহ্হাবিয়্যাহ প্রণেতা নবাব ছিদ্দীক হাসান খান এবং লা-মায্হাবীদের সর্বশ্রেষ্ঠ ফাতওয়ার কিতাব ফতোয়ায়ে নাজিরিয়ার সংকলক মৌঃ নাজিমুদ্দীন প্রমুখ মায্হাব-অবলম্বীদেরকে কাফির, মুশরিক, বি’দআ’তী ও জাহান্নামী বলে ফতোয়া দিয়েছে।
( দ্রঃ জফরুল মুবিনঃ পৃঃ ১৮৯-২৩০-২২৩; তরজমানে ওহ্হাবিয়্যাহঃ পৃঃ ৩৫-৩৬; ফতোয়ায়ে নাযীরিয়াঃ পৃঃ ১/৬৯-৯৭)
পর্যালোচনা
অথবা সেই যিন্দীক্ব বা নাস্তিকের জন্যই এমন ধারণা-পোষণ শোভা পায়, যার উদ্দেশ্য বা আকাংখা হচ্ছে মুসলমানদের বৃহত্তর অংশের মধ্যে নিরাশা সৃষ্টি করতঃ খোদ দ্বীন ইসলামকেই আংশিক বা পুরোপুরি অচল করে দেয়া। উক্ত ধারণা পোষণকারী শ্রেণীর লোকজন গুটিকয়েক হাদীস মুখস্থ করতঃ শরীয়তের সমস্ত বিধি-বিধান শুধু এই কয়েকটি হাদীসের মধ্যেই সীমিত হবার বদ্ধমূল ধারণা নিয়ে বসে আছে। নিজের অজানা সবকিছুকে তারা অস্বীকার করে চলেছে। ”
( মাক্তুবাতে ইমাম রাব্বানীঃ ২/১০৭-১০৮ মাক্তুব নং – ৫৫ (ফার্সী) )
মুফাসসিরগণের মাযহাবঃ
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিমের উস্তাদ ইমাম ইবনে মঈন (রহঃ) এর মায্হাবঃ
****************************************************
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিমের উস্তাদ, হাদীসের জগতে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বজন স্বীকৃত ইমাম বিশেষত হাদীস যাচাই-বাছাই বা ইল্মুল্ জারহ্ অ-তা’দীলের অতুলনীয় ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী বিদ্যাসাগর ইয়াহ্ইয়া ইবনে মঈন (রহঃ) অসীম জ্ঞানের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও তিনি বল্গাহীন পথ পরিহার করে ইমাম আবু হানীফার তাক্বলীদ করে চলতেন।
এ সম্পর্কে তাঁর নিজের মত দেখুনঃ
“ আমার নিকট গ্রহণযোগ্য ক্বিরাআত হামযার ক্বিরাআত এবং গ্রহণযোগ্য ফিক্বহ ইমাম আবু হানিফার ফিক্বহ। সকল মানুষকেও আমি এর উপর ঐক্যবদ্ধ পেয়েছি। ”
( তারিখে বাগদাদঃ পৃ – ১৩/৩৪৭ )
ইমাম ইবনে মঈন (রহঃ) এর মায্হাব সম্পর্কে ইমাম যাহাবী বর্ণনা করেনঃ
“ ইয়াহইয়া ইবনে মঈন জারহ অ-তা’দীলের ইমাম এবং শীর্ষস্থানীয় হানাফীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। ”
( মা’রিফাতুল্ মুতাকাল্লাম ফীহিম…যাহাবীঃ পৃ – ৭, ছাপা, মিশর ১৩২৪ হিঃ )
ইবনে মঈনের প্রশংসা করতে গিয়ে ইমাম আহমদ (রহঃ) বলেনঃ
“ ইমাম ইবনে মঈন যে হাদীস সম্পর্কে জানেন না সেটি হাদীস নয়। ”
( তাহযীবুত্ তাহযীব, ইবনে মঈনের জীবনী পর্বঃ পৃ – ১১/২৯ )
বস্তুত ইমাম ইবনে মঈন হাদীসের বর্ণনাকারীর সত্যায়ন ও হাদীসের যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সত্যিই অতুলনীয়। তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রতীয়মান হয় যে, অবশ্যই যাচাই-বাছাই করতঃ হাদীসের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠ ও বিশুদ্ধ মায্হাব হিসেবেই তিনি হানাফী মায্হাবকে মনোনীত করেছেন। অতএব, যারা বলে, হানাফী মায্হাব বিশুদ্ধ হাদীস পরিপন্থী, তাদেরকে ন্যায়পরায়ণতা ও আল্লাহর ভয় নিয়ে পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানাচ্ছি।
মুহাম্মদ ইব্নে আব্দুল ওহ্হাব নজদী (রহঃ) এর মায্হাবঃ
লা-মায্হাবীরা দাবী করে থাকে যে, মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওহহাব নজদীও লা-মায্হাবী ছিলেন। কিন্তু তিনি একজন হাম্বলী মায্হাবের অনুসারী ছিলেন এবং তিনি নিজেই স্বীয় মায্হাব সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে বলেছেন।
-দেখুনঃ আল-হাদিয়াতুস্ সুন্নাহঃ পৃ – ৯৯
সাথে সাথে চার মায্হাবের যে কোন একটির ত্বাকলীদ করা যাবে এবং এই চার মায্হাব ছাড়া অন্য কোন মায্হাবের অনুসরণ করা যাবে না বলেও তিনি মত প্রকাশ করেছেন।
-তারীখু নাজদ-আলূসীঃ পৃ – ৫৪-৫৬; ছিয়ানাতুল্ ইনসানঃ পৃ – ৪৭১১
লা মায্হাবীদের অন্যতম মান্যবর ইমাম, ইমাম ইবনে তাইমিয়্যা (রহঃ) এর মায্হাবঃ
*******************************************************
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যা (রহঃ) (মৃঃ ৭২৮ হিঃ) একজন যুগশ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ, আল্লামা ও বিখ্যাত কলম সৈনিক ছিলেন। অসংখ্য রচনাবলী, ফাত্ওয়া ও সমকালীন জিজ্জাসার জবাব তাঁ মহাজ্ঞানের উজ্জ্বল সাক্ষ্য বহন করে। আরব বিশ্বে তিনি আজও শাইখুল ইসলাম হিসেবে স্মরণীয়-বরণীয় হয়ে আছেন। তাঁর গুণগ্রাহী ভক্তবৃন্দদেরকে প্রতারণার মানসে তথাকথিত আহলে হাদীস বা গাইরে মুক্বাল্লিদ ও লা-মায্হাবীরা দাবি করে থাকে যে, ইবনে তাইমিয়্যা গাইরে মুক্বাল্লিদ ও লা-মায্হাবী ছিলেন। আর সকল গাইরে মুক্বাল্লিদরা ইবনে তাইমিয়্যার ত্বাকলীদ করে এবং তাঁরই মায্হাব অনুসরণ করে থাকে।
তাদের এ দাবী যদি মানা হয়, তাহলে প্রমাণিত হয় যে, লা-মায্হাবীরা মায্হাব মানে না বা ত্বাকলীদ করে না বলে জনসাধারণকে কেবল ধোঁকাই দিয়ে যাচ্ছে। অথচ তারা নিজেরাই ইমাম ইবনে তাইমিয়্যার তাক্বলীদ করে এবং তাঁরই মায্হাব অনুসরণ করে চলেছে।
বস্তুত ইবনে তাইমিয়্যা গাইরে মুক্বাল্লিদ বা লা-মায্হাবী ছিলেন মর্মে কেউ কোন তত্ত্ব আদৌ পেশ করতে পারবে না। বরং এটা সর্বজন স্বীকৃত যে, ইবনে তাইমিয়্যা ও তাঁর একান্ত শিষ্য ইবনুল ক্বাইয়্যিম উভয়ই হাম্বলী মায্হাবের অনুসারী ছিলেন। তাঁর রচিত ৩৭ খন্ডে সমাপ্ত অমর গ্রন্থ ‘মাজমুয়াতুল ফাত্ওয়া’ এরই সাক্ষ্য বহন করে।
লা-মায্হাবীদের অন্যতম পুরোধা ছিদ্দীক হাসান খানও ইবনে তাইমিয়্যাকে হাম্বলী মায্হাবের বলেই উল্লেখ করেছেন।
-দেখুনঃ আল-জুন্নাহঃ পৃ – ৩৮
অন্যদিকে লা-মায্হাবীরা যতই বলুক তারা ইবনে তাইমিয়্যাকে অনুসরণ করে, প্রকৃতপক্ষে তাও ভুল।শুধু বিতর্কিত কয়েকটি বিষয় ব্যতীত অসংখ্য-অগণিত বিষয় এমন রয়েছে, যেগুলোতে ইবনে তাইমিয়্যার সঙ্গে গাইরে মুক্বাল্লিদদের কোন মিলে নেই।
উদাহরণস্বরূপ শুধু একটি বিষয় তুলে ধরছিঃ
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যা (রহঃ) তারাবীহর নামায বিশ রাকআত সুন্নাত বলে উল্লেখ করেছেন।
-মাজমুয়ায়ে ফাত্ওয়াঃ খঃ ২৩, পৃ – ১১২
পক্ষান্তরে লা-মায্হাবী বা আহলে হাদীস নামধারী নতুন ফেরকাটি সম্প্রতি বিভিন্ন স্থানে আট রাক্আত তারাবীহর নতুন মতবাদ প্রতিষ্ঠার অপপ্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে
।
পবিত্র মক্কা-মদীনার ইমামগণের মাযহাবঃ
****************************
প্রায় এক হাজার বছর পর্যন্ত চার মায্হাবের অনুসারীগণ চার ইমামের পিছনে ভিন্ন-ভিন্নভাবে জামাআতে নামায আদায় করেছেন। হানাফী মায্হাবের অনুসারীগণ হানাফী মায্হাবের ইমামের পেছনে, মালেকী মায্হাবের অনুসারীগণ মালেকী মায্হাবের ইমামের পেছনে, এভাবে অপর দুটি মায্হাবের অনুসারীগণও তাঁদের স্ব-স্ব মায্হাবের ইমামের পেছনে নামায আদায় করতেন। এ ধারা হারাম শরীফে চলে আসছে প্রায় এক হাজার বছর নাগাদ। কিন্তু ১২১৮ হিজরীর ৮ই মুহাররম বাদশা সাউদ ইবনে আব্দুল আযীয তাঁর সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে উমরার উদ্দেশ্যে মক্কা শরীফ প্রবেশ করেন। তিনি তখন তথাকথিত সংস্কারের নামে যেসব কাজ করেন, তন্মধ্যে একটি হল, তিনি হারাম শরীফে সকল মুসল্লীকে একই ইমামের পিছনে একই সাথে জামাআতে নামায আদায়ের নির্দেশ জারী করেন।
( তারীখে মামলাকাঃ পৃ – ২৫ )
উল্লেখ্য যে, তদানীন্তনকালে সমগ্র বিশ্বের অধিকাংশ মুসলমানই হানাফী মায্হাবের অনুসারী ছিলেন। তৎকালে সমগ্র বিশ্বের শত কোটি মুসলমানের জামাআতে প্রায় অধিকাংশ মুসলমানই হানাফী মায্হাবের অনুসারী ছিলেন। তাই সমগ্র বিশ্ব থেকে হারাম শরীফে আগত এবং সেখানকার স্থানীয় মুসলমানগণের বিশাল জামাআত হানাফী ইমামের পেছনেই সমবেত হতেন। সে সুদীর্ঘকাল যাবৎ হানাফীদেরই রাজত্ব চলে আসছিল। এমতাবস্থায় এ বিশাল জামাআতের অনুসারীগণ মালেকী, শাফেয়ী ও হাম্বলী মায্হাবের সংখ্যালঘু অনুসারীদেরকে ভিন্ন-ভিন্ন জামাআতে নামায আদায় করার সুযোগ দিয়ে উদারতার পরিচয় দিয়েছেন। কিন্তু সংখ্যালঘুরা ক্ষমতায় এসে তাদের মায্হাবের ইমাম ব্যতীত অন্যদের প্রতি নিষেধাজ্ঞা জারী করে সংকীর্ণমনার পরিচয় দিয়েছেন।
তবে আমরা অত্যন্ত গর্বের সাথে বলতে পারি যে, যখন চার ইমাম ছিল তখনও হানাফী, শাফেয়ী, মালেকী ও হাম্বলী মায্হাবেরই ছিল। গাইরে মুক্বাল্লিদ বা লা-মায্হাবীদের কোন ইমাম ছিল না। আর যখন থেকে এক ইমামের ধারা চলছে তখনও কোন না কোন মায্হাবের অনুসারীই ইমাম হয়ে আসছেন। আজ পর্যন্ত গাইরে মুক্বাল্লিদ বা লা-মায্হাবীদের কোন ইমাম পবিত্র মক্কা-মদীনায় নিয়োগ হতে পারে নি।
উল্লেখ্য যে, আব্বাসী যুগের প্রায় পাঁচশ বছর পর্যন্ত পবিত্র মক্কা-মদীনার সকল ইমাম ও বিচারক হানাফী ছিলেন। অতঃপর প্রায় দু’শ বছর খাওয়ারিয্মী ও সালজুক্বীদের অধীনে চলে, তারাও রক্ষণশীল হানাফী ছিলেন। অতঃপর উসমানী ও তুর্কী খেলাফত প্রায় পাঁচশ বছর পর্যন্ত চলে। তারাও সবাই হানাফী ছিলেন।
( আল-খাইরাতুল হিসান-ইবনে হাজার, মক্কী শাফেয়ীঃ পৃ – ৭২ )
মোটকথা, ইসলামী ইতিহাসের সোনালী অধ্যায়ে বারশ বছর পর্যন্ত পবিত্র মক্কা-মদীনায় ইমাম ও খতীবের সুমহান দায়িত্ব হানাফী ইমামগণই আঞ্জাম দিয়ে এসেছেন এবং কাযী ও বিচারকের আসনেও তারাই ছিলেন।
( আল-খাইরাতুল হিসান-ইবনে হাজার মক্কী, শাফেয়ীঃ পৃ – ৭২; রদ্দুল মুহতারঃ পৃ – ১/৭৫ )
লা-মায্হাবীদের কোন ইমাম কখনো নিয়োগ হয়নি এবং বর্তমানেও সেখানের সকল ইমাম কোন না কোন মায্হাবের অনুসারী। আজও তারা পবিত্র রমজানে মাসে বিশ রাক্আত তারাবীহ আদায় করেন। গাইরে মুক্বাল্লিদদের নবাবিষ্কৃত ও মনগড়া মতবাদ আট রাক্আত তারাবীহ ও অন্যান্য ভ্রান্ত প্ররোচনা থেকে তাঁরা আজও সংরক্ষিত।
শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ্ (রহঃ) (মৃঃ ১১৭৬ হিঃ) এর মায্হাবঃ
ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস শাহ্ সাহেব হানাফী মায্হাবের অনুসারী ছিলেন। তাঁর নিজের লিখা কিতাবই এর সাক্ষ্য বহন করে।
শাহ সাহেব ও তাঁর গোটা বংশ যে হানাফী ছিলেন এ মর্মে অনেক গাইরে মুক্বাল্লিদ আলিমও স্বীকৃতি দিয়েছেন। যেমনঃ ছিদ্দীক হাসান খান এর মত দেখুনঃ
-ইতিহাফঃ পৃ – ২৯৭ -আল-হিত্তাঃ পৃ – ৭০ -তরজমানে ওহ্হাবিয়্যাহঃ পৃ – ১১
শাহ আবদুল আযীয মুহাদ্দিসে দেহলবী (রহঃ) (মৃঃ ১২৩৯ হিঃ) এর মায্হাবঃ
তিনি ইংরেজবিরোধী ঐতিহাসিক আযাদী আন্দোলনের বিপ্লবী ঘোষক। শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ্র জ্যেষ্ঠ পুত্র। পূর্বে তথ্য ও তত্ত্ব সহকারে উল্লেখ করেছি যে, শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ (রহঃ) এর গোটা পরিবারই হানাফী ছিলেন। এছাড়া তিনি তার রচনাবলীতে তাক্বলীদ ও মায্হাবের প্রতি বিভিন্নভাবে গুরুত্বারোপ করেছেন। যেমনঃ
-তাফ্সীরে আযীযীঃ সূরা মূলক আয়াত ১০ পৃ – ২৩ -ফাত্ওয়ায়ে আযীযিয়াঃ পৃ – ২/২৪
উপরোক্ত
আলোচনার দ্বারা এটাই প্রমান গায়রে মোকাল্লেদ
সমপ্রদায় ভ্রান্ত হওয়ার ব্যপারে আর কোন সংশয় রইলনা
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন