আহলে হাদীস দলের সংজ্ঞাতেই প্রতারণা
যে দলের রেজিষ্ট্রেশন হয়েছে ইংরেজদের কাছ থেকে সে দলের সংজ্ঞার মাঝে ধোঁকাবাজী ও প্রতারণা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। ওদের সংজ্ঞার মাঝেই ধোঁকাবাজী আছে এটা বুঝার সহজ পদ্ধতি হল-
আপনি তাদের জিজ্ঞেস করুন-আহলে হাদীস কাকে বলে?
ওরা বলবে-কুরআন ও সহীহ হাদীস মানার নাম আহলে হাদীস।
তাহলে কি দাঁড়াল? যারা কেবল কুরআন ও সহীহ হাদীস মানে তাদের বলা হয় আহলে হাদীস। মানে তারা কোন ব্যক্তির অনুসরণ [যার আরবী হল তাক্বলীদ] করে না।
এবার তাদের জিজ্ঞেস করুন-কোন হাদীসকে আল্লাহ তায়ালা সহীহ বা দুর্বল বলেছেন কুরআনে? বা নবীজী সাঃ কোন হাদীসকে সহীহ বা দুর্বল বলেছেন হাদীসে?
ওরা বলবে-না বলেন নি।
আপনি তখন তাদের বলুন-হাদীস সহীহ বা দুর্বল হওয়ার বিষয় যেহেতু আল্লাহ ও বলেননি, নবীজী সাঃ ও বলেননি তাই তারা নিজেরা হাদীসকে সহীহ বা দুর্বল বলে আহলে হাদীস হওয়া থেকে বের হয়ে যায়। কারণ তারা না আল্লাহ, না নবী। তাদের কোন অধিকার নেই কোন হাদীসকে সহীহ বা দুর্বল বলা। যেহেতু কেবল কুরআন ও সহীহ হাদীস মানার নাম হল আহলে হাদীস। আর কুরআনে কোন হাদীসকে সহীহ বা দুর্বল বলা হয়নি। সেই সাথে হাদীসেও নবীজী সাঃ কোন হাদীসকে সহীহ বা দুর্বল বলেননি। তাই কোন হাদীসকে সহীহ বা দুর্বল বলার মানেই হল এরা নিজেদের হয়তো আল্লাহ নয়তো নবী দাবি করছে। যদি বলে আল্লাহ বা নবী দাবি করেনা, বরং সহীহ বা দুর্বল বলে থাকে হাদীস বিশারদ মুহাদ্দিসদের বক্তব্যের আলোকে। তাহলেও তারা আর আহলে হাদীস থাকে না।
কারণ মুহাদ্দিসীনদের কথা মানা, মানেই হল অনুসরণ করা যাকে আরবীতে বলা হয় তাক্বলীদ। আর তাক্বলীদ হল ওদের ভাষায় শিরক। মুহাদ্দিসীনদের কথা মানা মানেই অনুসরণ তথা তাকলীদ। আর তাক্বলীদ করার মাধ্যমে তারা নিজেদের বক্তব্য অনুযায়ী শিরকী কাজ করে। অথবা সেই মুহাদ্দিসকে আল্লাহ বা নবী [নাউজুবিল্লাহ] দাবি করে। দাবি যদি না করে তাহলে তারা কিছুতেই স্বীয় সংজ্ঞা অনুযায়ী আহলে হাদীস থাকতে পারে না। হয়তো নিজেকে আল্লাহ বা নবী দাবিদার হয় [নাউজুবিল্লাহ], নতুবা মুহাদ্দিসীনদের তাক্বলীদ করে হয় ওদের ভাষায় শিরককারী, কিংবা মুহাদ্দিসীনদেরই আল্লাহ বা নবী দাবিদার হবে [নাউজুবিল্লাহ]।
সুতরাং ওরা মুখে কুরআন ও সহীহ হাদীস মানার কথা বললেও তারা নিজেদের এ দাবিতে হাদীসের প্রকারভেদ ও সংজ্ঞাতেই ঠিক থাকতে পারে না। অথচ সাধারণ মানুষকে বিজ্ঞ ব্যক্তিদের অনুসরণ করা ছাড়া শুধু কুরআন ও সহীহ হাদীসের উপর আমল করার প্রচারণা করে একটি মিথ্যা ও প্রতারণামূলক মতবাদের দিকেই আহবান করে।
যাচাই বাছাই ছাড়া আহলে হাদীস মতবাদের দিকে আহবানকারী নবীর হাদীস অনুযায়ী মিথ্যাবাদী
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ أَنَّ النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- قَالَ « كَفَى بِالْمَرْءِ إِثْمًا أَنْ يُحَدِّثَ بِكُلِّ مَا سَمِعَ (سنن ابى داود-كتاب الأدب، باب فِى التَّشْدِيدِ فِى الْكَذِبِ، رقم الحديث-4994)
অনুবাদ-হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-যা শুনে তা’ই বলতে থাকা [যাচাই বাছাই ছাড়া] ব্যক্তি মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ঠ। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৯৯৪, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৩০, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৭, মুসনাদে ইবনুল জিদ, হাদীস নং-৬২৭, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৮২০১, মুসনাদুশ শিহাব, হাদীস নং-১৪১৫, মাশকিলুল আসার লিত তাহাবী, হাদীস নং-১৯৮০, মুসনাদে আব্দুল্লাহ বিন মুবারক, হাদীস নং-১৯, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-২৬১৩১}
সুতরাং যেসব আহলে হাদীস মতাদর্শীরা তাদের আহলে হাদীস হওয়ার সংজ্ঞার এ ধোঁকাবাজী সম্পর্কে যাচাই বাছাই ছাড়াই নিজেদের মতবাদের দিকে সরলপ্রাণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার জন্য ডাকে ওরা নবীজী সাঃ এর হাদীসের ভাষায় মিথ্যাবাদী।
আমাদের বিশ্বাস অনুযায়ী তাক্বলীদের পর্যায়
আমাদের আক্বিদা হল সরাসরি কুরআন ও সুন্নাহই অনুসরণীয় সেসব ক্ষেত্রে যেসব ক্ষেত্রে কুরআন হাদীসের বর্ণনা সুষ্পষ্ট। তাতে কোন প্রকার অস্পষ্টতা নেই। সাথে সাথে পরস্পর বিরোধী কোন বর্ণনা হাদীসে বা কুরআনে নেই। সেসব ক্ষেত্রে কারো তাকলীদ করা জায়েজ নয়। আমরা সেসব ক্ষেত্রে কারো তাকলীদ বা অনুসরণ করিও না। যেমন নামায ফরয, রোযা ফরয, হজ্ব ফরজ ইত্যাদী।
কিন্তু যেসব ক্ষেত্রে আয়াত বা হাদীসের অর্থ বোধগম্য নয় কঠিন। বা পরস্পর বিরোধী বর্ণনা হাদীসে এসেছে। যেমন ইমামের পিছনে মুক্তাদী কিরাত পড়বে কি না? আমীন জোরে বলবে না আস্তে বলবে? সেসব ক্ষেত্রে নবীজী সাঃ এর বলা শ্রেষ্ঠ যুগের কুরআন সুন্নাহ সম্পর্কে বিজ্ঞ মুজতাহিদ ব্যক্তির ব্যাখ্যার আলোকে কুরআন সুন্নাহর উপর আমল করি। যে মুজতাহিদদের ক্ষেত্রে আল্লাহর নবী বলেছেন-
عَنْ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « إِذَا حَكَمَ الْحَاكِمُ فَاجْتَهَدَ فَأَصَابَ فَلَهُ أَجْرَانِ وَإِذَا حَكَمَ فَاجْتَهَدَ فَأَخْطَأَ فَلَهُ أَجْرٌ
হযরত আমর বিন আস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-“যখন কোন বিশেষজ্ঞ হুকুম দেয়, আর তাতে সে ইজতিহাদ করে তারপর সেটা সঠিক হয়, তাহলে তার জন্য রয়েছে দু’টি সওয়াব। আর যদি ইজতিহাদ করে ভুল করে তাহলে তার জন্য রয়েছে একটি সওয়াব। {সহীহ বুখারী, হাদিস নং-৬৯১৯, সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-৩৫৭৬, সহীহ মুসলিম, হাদিস নং-৪৫৮৪}
তারা ভুল করলেও এক নেকি পাবে, আর সঠিক করলে ডাবল নেকি তাদের ব্যাখ্যাকে অনুসরণ করি। ব্যক্তিকে অনুসরণের জন্য নয়, বরং তিনি কুরআন সুন্নাহ সম্পর্কে বিজ্ঞ হওয়ার কারণে, এবং নবীজী সাঃ এর বলা শ্রেষ্ঠ যুগের ব্যক্তিত্ব হওয়ায় নিজের ইচ্ছা ও বুঝের উপর নির্ভর না করে বিজ্ঞ ব্যক্তির ব্যাখ্যার আলোকে কুরআন সুন্নাহর উপর আমল করি।
অন্ধ তাক্বলীদ কাকে বলে?
আজ কালের কিছু লোক এই অপবাদ ছড়ায় যে, এটাতো অন্ধ তাকলীদ।
আফসোস! এই বেচারারা অন্ধ তাকলীদের অর্থও জানেনা। অন্ধ তাকলীদ এটাকে বলে, যেখানে অন্ধ অন্ধের পিছনে চলে। তখন উভয়ে কোন গর্তে নিপতিত হয়। এটা অন্ধ তাকলীদ। আর যদি অন্ধ দৃষ্টিবান মানুষের পিছনে চলে, তো এই দৃষ্টিবান ব্যক্তি এই অন্ধকেও তার চোখের বরকতে সকল গর্ত থেকে বাঁচিয়ে নিয়ে যাবে। আর মানজিলে মাকসাদে পৌঁছিয়ে দিবে।
আইয়িম্মায়ে মুজতাহিদীন (নাউজুবিল্লাহ) অন্ধ নয়। তারা দৃষ্টিবান। তারা কুরআন সুন্নাহ ও সাহাবাদের ফাতওয়া ও জীবনাচার সম্পর্কে, সেই সাথে আরবী ভাষাসহ ইলমী সকল বিষয়ে প্রাজ্ঞ।
তবে অন্ধ ব্যক্তি আছে। আছে অন্ধ মুকাল্লিদও। যারা নিজেরাও অন্ধ। তাদের পথিকৃত ও অন্ধ। অর্থাৎ তাদের ইজতিহাদের চোখ নাই। এই জন্যই নবীজী সাঃ বলেছেন যে, যে মুর্খকে দ্বীনের পথিকৃত বানায়, সেই মুর্খ নিজেও গোমড়া হয়, আর তার অনুসারীদেরও গোমড়া করে। এর নাম অন্ধ তাকলীদ।
আল্লাহ তায়ালা নিষ্পাপ নবী সাঃ আর পূণ্যবান মুজতাহিদীনদের গবেষণা-সম্পাদনার উপর আমলে করার তৌফিক দান করুন। আর নব্য নব্য ফেতনা থেকে হিফাযত করুন।
তাক্বলীদের অস্বিকারকারীরা নিজেদের পিতার পরিচয় পেতে পারে না
তাক্বলীদ মানেই হল বিশ্বস্ত ব্যক্তিকে মানা। যাকে যে বিষয়ে প্রাজ্ঞ ও নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি মনে হয় তাকে মানার নামই তাক্বলীদ। কথিত আহলে হাদীস গোষ্ঠি যেহেতু বিশ্বস্ত ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তির তাক্বলীদকে শিরক বলে তাই তারা নিজেদের পিতাকে পিতা বলতে পারবে না। কারণ পিতা কে? এটা জানার জন্য মায়ের উপর বা কাছের আত্মীয় স্বজনের কথার তাক্বলীদ করতে হয়।
যেহেতু মায়ের কথা ছাড়া ও স্বীকারোক্তিকে বিশ্বাস ও মানা তথা তাক্বলীদ করা ছাড়া পিতার পরিচয় পাওয়া যায় না, আর আমরা যেহেতু তাক্বলীদকে স্বীকার করি তাই আমরা আমাদের পিতাকে চিনি মায়ের বক্তব্য অনুযায়ী। মাকে অনুসরণ করে, মাকে বিশ্বাস করে। তাকে বিশ্বাসভাজন মনে করে।
কিন্তু কথিত আহলে হাদীসরা যেহেতু তাক্বলীদকে শিরক বলে। নির্ভরযোগ্য ব্যক্তির অনুসরণ তথা তাক্বলীদকে মানে না, তাই তারা তাদের পিতার পরিচয় পেতে পারে না। কারণ পিতাকে চিনতে হলে মাকে বিশ্বাস করতে হবে। মায়ের কথার তাক্বলীদ করতে হবে। আর তাক্বলীদ শিরক হওয়ায় তারা তা করতে পারে না। তাই তারা হয়ে যাবে পিতাহীন জারজ।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
সহকারী মুফতী-জামিয়াতুল আস’আদ আল ইসলামিয়া-ঢাকা
ইমেইল-jamiatulasad@gmail.com
lutforfarazi@yahoo.com
যে দলের রেজিষ্ট্রেশন হয়েছে ইংরেজদের কাছ থেকে সে দলের সংজ্ঞার মাঝে ধোঁকাবাজী ও প্রতারণা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। ওদের সংজ্ঞার মাঝেই ধোঁকাবাজী আছে এটা বুঝার সহজ পদ্ধতি হল-
আপনি তাদের জিজ্ঞেস করুন-আহলে হাদীস কাকে বলে?
ওরা বলবে-কুরআন ও সহীহ হাদীস মানার নাম আহলে হাদীস।
তাহলে কি দাঁড়াল? যারা কেবল কুরআন ও সহীহ হাদীস মানে তাদের বলা হয় আহলে হাদীস। মানে তারা কোন ব্যক্তির অনুসরণ [যার আরবী হল তাক্বলীদ] করে না।
এবার তাদের জিজ্ঞেস করুন-কোন হাদীসকে আল্লাহ তায়ালা সহীহ বা দুর্বল বলেছেন কুরআনে? বা নবীজী সাঃ কোন হাদীসকে সহীহ বা দুর্বল বলেছেন হাদীসে?
ওরা বলবে-না বলেন নি।
আপনি তখন তাদের বলুন-হাদীস সহীহ বা দুর্বল হওয়ার বিষয় যেহেতু আল্লাহ ও বলেননি, নবীজী সাঃ ও বলেননি তাই তারা নিজেরা হাদীসকে সহীহ বা দুর্বল বলে আহলে হাদীস হওয়া থেকে বের হয়ে যায়। কারণ তারা না আল্লাহ, না নবী। তাদের কোন অধিকার নেই কোন হাদীসকে সহীহ বা দুর্বল বলা। যেহেতু কেবল কুরআন ও সহীহ হাদীস মানার নাম হল আহলে হাদীস। আর কুরআনে কোন হাদীসকে সহীহ বা দুর্বল বলা হয়নি। সেই সাথে হাদীসেও নবীজী সাঃ কোন হাদীসকে সহীহ বা দুর্বল বলেননি। তাই কোন হাদীসকে সহীহ বা দুর্বল বলার মানেই হল এরা নিজেদের হয়তো আল্লাহ নয়তো নবী দাবি করছে। যদি বলে আল্লাহ বা নবী দাবি করেনা, বরং সহীহ বা দুর্বল বলে থাকে হাদীস বিশারদ মুহাদ্দিসদের বক্তব্যের আলোকে। তাহলেও তারা আর আহলে হাদীস থাকে না।
কারণ মুহাদ্দিসীনদের কথা মানা, মানেই হল অনুসরণ করা যাকে আরবীতে বলা হয় তাক্বলীদ। আর তাক্বলীদ হল ওদের ভাষায় শিরক। মুহাদ্দিসীনদের কথা মানা মানেই অনুসরণ তথা তাকলীদ। আর তাক্বলীদ করার মাধ্যমে তারা নিজেদের বক্তব্য অনুযায়ী শিরকী কাজ করে। অথবা সেই মুহাদ্দিসকে আল্লাহ বা নবী [নাউজুবিল্লাহ] দাবি করে। দাবি যদি না করে তাহলে তারা কিছুতেই স্বীয় সংজ্ঞা অনুযায়ী আহলে হাদীস থাকতে পারে না। হয়তো নিজেকে আল্লাহ বা নবী দাবিদার হয় [নাউজুবিল্লাহ], নতুবা মুহাদ্দিসীনদের তাক্বলীদ করে হয় ওদের ভাষায় শিরককারী, কিংবা মুহাদ্দিসীনদেরই আল্লাহ বা নবী দাবিদার হবে [নাউজুবিল্লাহ]।
সুতরাং ওরা মুখে কুরআন ও সহীহ হাদীস মানার কথা বললেও তারা নিজেদের এ দাবিতে হাদীসের প্রকারভেদ ও সংজ্ঞাতেই ঠিক থাকতে পারে না। অথচ সাধারণ মানুষকে বিজ্ঞ ব্যক্তিদের অনুসরণ করা ছাড়া শুধু কুরআন ও সহীহ হাদীসের উপর আমল করার প্রচারণা করে একটি মিথ্যা ও প্রতারণামূলক মতবাদের দিকেই আহবান করে।
যাচাই বাছাই ছাড়া আহলে হাদীস মতবাদের দিকে আহবানকারী নবীর হাদীস অনুযায়ী মিথ্যাবাদী
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ أَنَّ النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- قَالَ « كَفَى بِالْمَرْءِ إِثْمًا أَنْ يُحَدِّثَ بِكُلِّ مَا سَمِعَ (سنن ابى داود-كتاب الأدب، باب فِى التَّشْدِيدِ فِى الْكَذِبِ، رقم الحديث-4994)
অনুবাদ-হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-যা শুনে তা’ই বলতে থাকা [যাচাই বাছাই ছাড়া] ব্যক্তি মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ঠ। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৯৯৪, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৩০, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৭, মুসনাদে ইবনুল জিদ, হাদীস নং-৬২৭, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৮২০১, মুসনাদুশ শিহাব, হাদীস নং-১৪১৫, মাশকিলুল আসার লিত তাহাবী, হাদীস নং-১৯৮০, মুসনাদে আব্দুল্লাহ বিন মুবারক, হাদীস নং-১৯, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-২৬১৩১}
সুতরাং যেসব আহলে হাদীস মতাদর্শীরা তাদের আহলে হাদীস হওয়ার সংজ্ঞার এ ধোঁকাবাজী সম্পর্কে যাচাই বাছাই ছাড়াই নিজেদের মতবাদের দিকে সরলপ্রাণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার জন্য ডাকে ওরা নবীজী সাঃ এর হাদীসের ভাষায় মিথ্যাবাদী।
আমাদের বিশ্বাস অনুযায়ী তাক্বলীদের পর্যায়
আমাদের আক্বিদা হল সরাসরি কুরআন ও সুন্নাহই অনুসরণীয় সেসব ক্ষেত্রে যেসব ক্ষেত্রে কুরআন হাদীসের বর্ণনা সুষ্পষ্ট। তাতে কোন প্রকার অস্পষ্টতা নেই। সাথে সাথে পরস্পর বিরোধী কোন বর্ণনা হাদীসে বা কুরআনে নেই। সেসব ক্ষেত্রে কারো তাকলীদ করা জায়েজ নয়। আমরা সেসব ক্ষেত্রে কারো তাকলীদ বা অনুসরণ করিও না। যেমন নামায ফরয, রোযা ফরয, হজ্ব ফরজ ইত্যাদী।
কিন্তু যেসব ক্ষেত্রে আয়াত বা হাদীসের অর্থ বোধগম্য নয় কঠিন। বা পরস্পর বিরোধী বর্ণনা হাদীসে এসেছে। যেমন ইমামের পিছনে মুক্তাদী কিরাত পড়বে কি না? আমীন জোরে বলবে না আস্তে বলবে? সেসব ক্ষেত্রে নবীজী সাঃ এর বলা শ্রেষ্ঠ যুগের কুরআন সুন্নাহ সম্পর্কে বিজ্ঞ মুজতাহিদ ব্যক্তির ব্যাখ্যার আলোকে কুরআন সুন্নাহর উপর আমল করি। যে মুজতাহিদদের ক্ষেত্রে আল্লাহর নবী বলেছেন-
عَنْ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « إِذَا حَكَمَ الْحَاكِمُ فَاجْتَهَدَ فَأَصَابَ فَلَهُ أَجْرَانِ وَإِذَا حَكَمَ فَاجْتَهَدَ فَأَخْطَأَ فَلَهُ أَجْرٌ
হযরত আমর বিন আস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-“যখন কোন বিশেষজ্ঞ হুকুম দেয়, আর তাতে সে ইজতিহাদ করে তারপর সেটা সঠিক হয়, তাহলে তার জন্য রয়েছে দু’টি সওয়াব। আর যদি ইজতিহাদ করে ভুল করে তাহলে তার জন্য রয়েছে একটি সওয়াব। {সহীহ বুখারী, হাদিস নং-৬৯১৯, সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-৩৫৭৬, সহীহ মুসলিম, হাদিস নং-৪৫৮৪}
তারা ভুল করলেও এক নেকি পাবে, আর সঠিক করলে ডাবল নেকি তাদের ব্যাখ্যাকে অনুসরণ করি। ব্যক্তিকে অনুসরণের জন্য নয়, বরং তিনি কুরআন সুন্নাহ সম্পর্কে বিজ্ঞ হওয়ার কারণে, এবং নবীজী সাঃ এর বলা শ্রেষ্ঠ যুগের ব্যক্তিত্ব হওয়ায় নিজের ইচ্ছা ও বুঝের উপর নির্ভর না করে বিজ্ঞ ব্যক্তির ব্যাখ্যার আলোকে কুরআন সুন্নাহর উপর আমল করি।
অন্ধ তাক্বলীদ কাকে বলে?
আজ কালের কিছু লোক এই অপবাদ ছড়ায় যে, এটাতো অন্ধ তাকলীদ।
আফসোস! এই বেচারারা অন্ধ তাকলীদের অর্থও জানেনা। অন্ধ তাকলীদ এটাকে বলে, যেখানে অন্ধ অন্ধের পিছনে চলে। তখন উভয়ে কোন গর্তে নিপতিত হয়। এটা অন্ধ তাকলীদ। আর যদি অন্ধ দৃষ্টিবান মানুষের পিছনে চলে, তো এই দৃষ্টিবান ব্যক্তি এই অন্ধকেও তার চোখের বরকতে সকল গর্ত থেকে বাঁচিয়ে নিয়ে যাবে। আর মানজিলে মাকসাদে পৌঁছিয়ে দিবে।
আইয়িম্মায়ে মুজতাহিদীন (নাউজুবিল্লাহ) অন্ধ নয়। তারা দৃষ্টিবান। তারা কুরআন সুন্নাহ ও সাহাবাদের ফাতওয়া ও জীবনাচার সম্পর্কে, সেই সাথে আরবী ভাষাসহ ইলমী সকল বিষয়ে প্রাজ্ঞ।
তবে অন্ধ ব্যক্তি আছে। আছে অন্ধ মুকাল্লিদও। যারা নিজেরাও অন্ধ। তাদের পথিকৃত ও অন্ধ। অর্থাৎ তাদের ইজতিহাদের চোখ নাই। এই জন্যই নবীজী সাঃ বলেছেন যে, যে মুর্খকে দ্বীনের পথিকৃত বানায়, সেই মুর্খ নিজেও গোমড়া হয়, আর তার অনুসারীদেরও গোমড়া করে। এর নাম অন্ধ তাকলীদ।
আল্লাহ তায়ালা নিষ্পাপ নবী সাঃ আর পূণ্যবান মুজতাহিদীনদের গবেষণা-সম্পাদনার উপর আমলে করার তৌফিক দান করুন। আর নব্য নব্য ফেতনা থেকে হিফাযত করুন।
তাক্বলীদের অস্বিকারকারীরা নিজেদের পিতার পরিচয় পেতে পারে না
তাক্বলীদ মানেই হল বিশ্বস্ত ব্যক্তিকে মানা। যাকে যে বিষয়ে প্রাজ্ঞ ও নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি মনে হয় তাকে মানার নামই তাক্বলীদ। কথিত আহলে হাদীস গোষ্ঠি যেহেতু বিশ্বস্ত ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তির তাক্বলীদকে শিরক বলে তাই তারা নিজেদের পিতাকে পিতা বলতে পারবে না। কারণ পিতা কে? এটা জানার জন্য মায়ের উপর বা কাছের আত্মীয় স্বজনের কথার তাক্বলীদ করতে হয়।
যেহেতু মায়ের কথা ছাড়া ও স্বীকারোক্তিকে বিশ্বাস ও মানা তথা তাক্বলীদ করা ছাড়া পিতার পরিচয় পাওয়া যায় না, আর আমরা যেহেতু তাক্বলীদকে স্বীকার করি তাই আমরা আমাদের পিতাকে চিনি মায়ের বক্তব্য অনুযায়ী। মাকে অনুসরণ করে, মাকে বিশ্বাস করে। তাকে বিশ্বাসভাজন মনে করে।
কিন্তু কথিত আহলে হাদীসরা যেহেতু তাক্বলীদকে শিরক বলে। নির্ভরযোগ্য ব্যক্তির অনুসরণ তথা তাক্বলীদকে মানে না, তাই তারা তাদের পিতার পরিচয় পেতে পারে না। কারণ পিতাকে চিনতে হলে মাকে বিশ্বাস করতে হবে। মায়ের কথার তাক্বলীদ করতে হবে। আর তাক্বলীদ শিরক হওয়ায় তারা তা করতে পারে না। তাই তারা হয়ে যাবে পিতাহীন জারজ।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
সহকারী মুফতী-জামিয়াতুল আস’আদ আল ইসলামিয়া-ঢাকা
ইমেইল-jamiatulasad@gmail.com
lutforfarazi@yahoo.com
তারা যে বিষয় গুলো নিয়ে বিরোধ করছে.সে বিষয়ে দলিল সহ কয়েকটি বইয়ের নাম জানতে চাই
উত্তরমুছুনতোহফায়ে আহলে হাদীস
মুছুনthanks
মুছুনআস-সালামু-আ'লাইকুম,
উত্তরমুছুনখুব খারাপ মানের একটা লেখা। একজন আ'লেমের কাছ থেকে এমন লেখা আশা করিনি। যুক্তি, দলিল সব্য সস্তা মানের।
আমি নিজেও হানাফী মাযহাবের লোক। কিন্তু বিশ্বাস করি রাসুল (সাঃ) -এর নামে যে যাই বলবে তাকেই সঠিক মানতে হবে, এটা ঠিক না। হাদীস দুর্বল হতে পারে যদিও কুরআন বা হাদীসে একে সহিহ, দুর্বল, বানোয়াট এমন শ্রেণীবিভাগ করা নাই। আপনি কি বলতে চাছেন হাদিস সবই সহিহ?
--পাটোয়ারী
ভালল করে পোষ্টটা পড়ুন। ভূল ভেঙ্গে যাবে
উত্তরমুছুনভালল করে পোষ্টটা পড়ুন। ভূল ভেঙ্গে যাবে
উত্তরমুছুন