ভারতবর্ষে
গাইরে মুক্বাল্লিদদের উৎপত্তি
মৌঃ আব্দুল হক্ব বেনারসী কর্তৃক ১২৪৬ হিজরীতে
প্রায় দু’শত বছর ইংরেজদের গোলামীতে আবদ্ধ ছিল ভারত উপমহাদেশের
সমস্ত মুসলমান। এ দেশের মুসলিম কৃষ্টি-কালচার ও ধর্মীয় ঐতিহ্যকে বিলুপ্ত করে তাদের
শাসন-শোষণ স্থায়ী করার হীন প্রচেষ্টায় ইংরেজ বেনিয়ারা বহুমুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।
কেবল ১৮৫৭ ইংরেজীর আযাদী আন্দোলনে তারা ৫৫ হাজার মুসলমানকে শহীদ করে। ১৮৬৪ থেকে ১৮৬৭
পর্যন্ত ৩ বছরে হিংস্র হানাদাররা ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে শহীদ করে ১৪ হাজার আলেমকে। আগুনে
পুড়িয়ে ও গুলি করে শহীদ করে অসংখ্য আলেম-উলামা ও নিরীহ মুসলমানদেরকে। ইজ্জতহরণ ও অমানবিক
নির্যাতনের শিকার হয় অসংখ্য মুসলিম মা-বোন। কারাবরণ করেন হাজার-হাজার মুসলমান। কেবল
দিল্লী শহরেই তারা জ্বালিয়ে ভস্মীভূত করে প্রায় দশ হাজার মাদ্রাসা।
চলমান শতাব্দীর
ঘোর জাহিলিয়্যাত ও ভয়াবহ ফিতনা সৃষ্টিকারী তথাকথিত “ আহলে হাদীস ” নামধারী, যারা মুকাল্লিদ
তথা মাযহাব অবলম্বীদেরকে “
নবোদ্ভাসিত
” বা তাক্বলীদ নামক
বিদয়া’তে লিপ্ত বলে
অপবাদ দিয়ে আসছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, তাদের ন্যায় এমন অনেক ভ্রান্ত দলই রয়েছে, যারা নিজেদের ইতিহাস সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ।
আর যারা নিজেদের সম্পর্কে জ্ঞান রাখে না, তারা অন্যদের সমালোচনা কিভাবে করতে পারে, তা আমার কেন, কারও বুঝে আসার কথা নয়। আর
ভারত মহাদেশে ইংরেজদের আগমনের পূবে কোন ধরনের ধর্মীয় ফেরকাবন্দি দলা দলি ছিলনা , ইংরেজ কতৃক এ
দলাদলির গোডা পর্তন হয় ৷ তাই এখানে সূচনালগ্নে
গাইরে মুকাল্লিদ্দেরকে তাদের জন্মকাল এবং উৎপত্তিস্থল স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যাতে করে
সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, তাক্বলীদ
করা বিদ্য়া’ত নাকি তাক্বলীদ্-বিমূখী
হওয়া বিদ্য়া’ত।
“
মুযাহেরে
হক্ব ” কিতাবের স্বনামধন্য
লেখক মাওলানা “ কুতুব উদ্দীন
” তাঁর “ তুহ্ফাতুল আরব ওয়াল আযম ” গ্রন্থে গাইরে মুক্বাল্লিদ্দের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশের
বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন,
যার সার-সংক্ষেপ
নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ
“
সাইয়্যেদ
আহমদ শহীদ, মাওলানা ইসমাইল
শহীদ ও মাওলানা আব্দুল হাই (রহঃ) পাঞ্জাবে আগমন করার পরপরই কতিপয় বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারীর
সমন্বয়ে চার মায্হাবের ইমামগণের তাক্বলীদ অস্বীকারকারী নতুন ফিরক্বাটির সূত্রপাত লক্ষ্য
করা যায়, যারা হযরত সাইয়্যেদ
আহমাদ শহীদ (রহঃ) এর মুজাহিদ বাহিনীর বিদ্রোহী গ্রুপের সদস্য ছিল, এদের মূখপাত্র ছিল মৌলভী আব্দুল হক্ব বেনারসী
(মৃত-১২৭৫হিঃ)।=======
একদিকে হুসাইন
আহমাদ মাদানী রহঃ এর ফাতওয়া যে, “ইংরেজদের
দলে ঢুকা হারাম”। ভারত দারুল
হরব জেহাদ ফরজ , আর আশরাফ আলী থানবী রহঃ এর ফাতওয়া যে, “ইংরেজদের পণ্য ব্যবহার হারাম”।
অপরদিকে ইংরেজদের
পদলেহী, পা চাটা গোলাম
একদল ঈমান বিক্রেতাদের ক্রয় করে নিল। তাদের মাঝে ছিল বাটালবী। আর আহমদ রেজা খান ,তাদের মাঝে একজন কিতাব লিখল-“আল ইকতিসাদ ফি মাসায়িলিল জিহাদ”। যাতে সে লিখে যে, ইংরেজদের শাসন ইসলামী রাষ্ট্র। আর ইংরেজদের
বিরুদ্ধে জিহাদ করা হারাম।====
{সে যুগে আহমদ
রেযা খানের সাথে আবদুল মজীদ বদায়ূনী ও আবদুল হামিদ বদায়ূনী নামক দুই ভাই-যাদের প্রথমোক্তজন
সরকারী ‘শামসুল উলামা’ খেতাব এবং ১৯২২ সালে গভর্ণর হারকোট বাটলারের
দরবার থেকে একটি তমঘা ও সম্মানসূচক তরবারী লাভ করেছিলেন। (প্রাগুক্ত, পৃ. ২৭২) } এই বই লিখার পর তাকে শামসুল উলামা উপাধী দেয়া
হয়, তাকে মেডেল দেয়া
হয়। অনেক পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
যখন এদেশের মানুষ
দেখল যে, ওরা ইংরেজদের
দালাল। তখন তাদের “ওহাবী” বলে গালি দেয়া শুরু হয়। ওহাবী সেই যুগে তাদের
বলা হত-যারা দেশের গাদ্দার।
তার এ ধরণের অসংখ্য ভ্রান্ত
কর্মকান্ডের কারণে সাইয়্যেদ আহমদ শহীদ (রহঃ) ১২৪৬ হিজরীতে গাদ্দারীর কারনে তাকে মুজাহিদ বাহিনী থেকে বহিষ্কার করেন। তখনই গোটা
ভারতবর্ষের সকল ধর্মপ্রাণ জনগণ, বিশেষ করে
সাইয়্যেদ আহমাদ শহীদ (রহঃ) এর খলিফা ও মুরীদগণ হারামাইন শরীফাইনের তদানীন্তন উলামায়ে
কিরাম ও মুফতীগণের নিকট এ ব্যাপারে ফত্ওয়া তলব করেন। ফলে সেখানকার তৎকালীন চার মায্হাবের
সম্মানীত মুফতীগণ ও অন্যান্য উলামায়ে কেরাম সর্বসম্মতিক্রমে মৌঃ আব্দুল হক্ব বেনারসী
ও তার অনুসারীদেরকে
পথভ্রষ্ট ও বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী ফিরক্বা বলে অভিহিত করেন এবং মৌঃ আব্দুল হক্বকে ক্বতল
(হত্যা) করার নির্দেশ প্রদান করেন।
(এ ফতওয়া ১২৫৪ হিজরীতে তান্বীহুদ্দাল্লীন নামে প্রকাশ করা হয়, এখনো দেশের বিশিষ্ট লাইব্রেরীতে এর কপি সংরক্ষিত
রয়েছে।)মৌঃ আব্দুল হক্ব বেনারস পলায়ন করতঃ কোনভাবে আত্নরক্ষা পায়। সেখানে গিয়ে তার
নবাবিষ্কৃত দলের প্রধান হয়ে সরলমনা জনসাধারণের মধ্যে তার বিষাক্ত মতবাদ ছড়াতে থাকে।”(তুহ্ফাতুল আরব ওয়াল আযমঃ পৃঃ ১৬ খঃ ২, আল-নাজাতুল কামেলাঃ পৃঃ ২১৪, তান্বীহুদ্দাল্লীন, পৃঃ ৩১)
উপরোক্ত বিবরণ
থেকে এ কথাই প্রতীয়মান হয় যে, মৌঃ আব্দুল
হক্ব বেনারসী কর্তৃক ১২৪৬ হিজরীতে ভারতবর্ষে গাইরে মুক্বাল্লিদ তথা লা-মায্হাবী নামক
নতুন ফিরক্বাটির সূত্রপাত হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে সে গাদ্দার “
ওহ্হাবী
” হিসেবে পরিচিত
ছিল।
কিন্তু সে নিজেকে “ মুহাম্মদী ” বলে প্রচার করতো। পরবর্তীতে “ ইংরেজের বিরুদ্ধে জিহাদ করা হারাম ” এ মর্মে ফত্ওয়া দিয়ে ইংরেজের দালাল হিসেবে
চিহ্নিত হয়। এবং এ সুযোগে সে সরকারী কাগজ-পত্র থেকে “ ওহ্হাবী ” নাম রহিত করে আহলে হাদীস নাম বরাদ্দ
করতে সক্ষম হয়। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, নবোদ্ভাসিত এ ফিরক্বাটিই আজ নিজেদের ব্যতীত
অন্যান্য সবাইকে নবোদ্ভাসিত বা বিদ্য়া’তী বলে অপবাদ দিয়ে যাচ্ছে। এটা সত্যিই দুঃখজনক নয় কি ৷
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন