ভারতবর্ষে ওহাবী-সুন্নী
দ্বন্দ্বের সূচনা
১.
তৎকালীন
১৮৫৭ ইংরেজীর আযাদী আন্দোলনে ভারত উপমহাদেশে
দখলদার ব্রিটিশ বেনিয়াদের বিরুদ্ধে আজাদী আন্দোলনের প্রক্কালের ইতিহাস রচনা করতে গিয়ে
, এল বিভান জোনস
লেখেন, গোঁড়া মৌলবীরা
সাইয়েদ আহমদ শহীদের অনুসারীদের কট্টর সংস্কার আন্দোলনকে ওহাবীটজম বলে কুৎসা রটায়।
(Nicknamed them
Wahhabies) The people of the mosque, p. 206 (London 1932)
২. ঐতিহাসিক পি
হার্ডি লেখেন, The follwers of Syed
Ahmad Barelvi Continued to maintain an active guerrilla war on the North West
frontier in the region of Black mountain … . the Ulama were a potential
political force and that it was necessary to divided them politically from the
supporters of Syed Ahmad Brelvi
অর্থাৎ সৈয়দ
আহমদ বেরলভীর অনুসারীরা ভারতবর্ষের উত্তর সীমান্তের কালোপাহাড় এলাকায় একটি গেরিলাযুদ্ধ
অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছিল। … আলেমসমাজ
আরো একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক শক্তিরূপে বিরাজমান ছিল। তাই তাদেরকে রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত
করে সাইয়েদ আহমদ বেরলভীর অনুসারীদের থেকে সরিয়ে আনাটা অপরিহার্য হয়ে ওঠে। (দি মুসলিমস
অব ব্রিটিশ ইন্ডিয়া পৃ. ২৬৮)
৩. দেওবন্দী আলেমগণ
ক্রমাগত ব্রিটিশ শাসন বিরোধী ফতোয়া দিয়ে যাচ্ছিলেন। পি হার্ডি বলেন,
The collection of fatwas by Deobandi
ulama are of immence importance for understanding the pre-ocopations of Indian
Muslims.
অর্থাৎ দেওবন্দী
আলেমগণের ফতোয়া সংকলনগুলো পরাধীন ভারতের মুসলমানদের মন ও মনন গঠনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
বিবেচিত হত। (প্রাগুক্ত পৃ. ১৭১)
৪. এমতাবস্থায়
বৃটিশ সরকারের জন্যে যা অত্যন্ত দরকারী হয়ে পড়েছিল তা হচ্ছে-
For every Alim who issued a fatwa that
India was Dar-ul-Harb there would be one who declared that it was Dar-ul-Islam.
Deoband represented the first response.
অর্থাৎ এমন প্রত্যেক
আলেম যিনি বলেন হিন্দুস্তান দারুল হরব বা শত্রুকবলিত রাষ্ট্র, তার জবাবে আরো একজন করে আলেম থাকা অপরিহার্য
যিনি বলবেন, না, হিন্দুস্তান দারুল ইসলাম। দেওবন্দ ছিল প্রথমোক্ত
দলের প্রতিনিধিত্বকারী।
৫. পক্ষান্তরে
আহমদ রেযা খান ঐ দ্বিতীয় অপ্রিয় দায়িত্বটি গ্রহণ করলেন। হার্ডির ভাষায়-
Ahmad Reza Khan of Barilvi issued a
fatwa declaring India to be Dar-ul-Islam, marking it a sin to associate with
infidels.
অর্থাৎ আহমদ রেযা
খান ভারতবর্ষকে দারুল ইসলাম বলে ঘোষণা করে বিধর্মীদের (হিন্দুদের) সঙ্গে মিলে চলা
(স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিচালনা) কে পাপ বলে ঘোষণা দেন। (প্রাগুক্ত পৃ. ২৬৮)
এ-ই হল ভারতীয়
উপমহাদেশে ওহাবী-সুন্নী দ্বন্দ্বের ইতিহাস। যাদের জন্যে আলেমরা এ মহান জিহাদ (?) শুরু করেছিলেন সেই ইংরেজ জাতির ঐতিহাসিকরা
তা ধরিয়ে দিয়েছেন। ঐ যুগে তিনি আজীবন যালেম বিজাতীয় বিদেশী সরকারের সমর্থন অব্যাহতভাবে
যুগিয়ে গেছেন। এমনকি তার মৃত্যুর বছর ১৯২১ সালে খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনের বিরুদ্ধে
সরকার পরে আলেমরা একটি সম্মেলন আহবান করেছিলেন।
ফ্রান্সিস রবিনসন
এ তথ্যটি ফাঁস করে দিয়ে মন্তব্য করেন-
He had considerable influence with the
masses but was not favoured by educated Muslims.
সাধারণ মানুষের
উপর {আহমদ রেযা খান} তার বেশ প্রভাব ছিল, কিন্তু শিক্ষিত মুসলমানরা তাকে পসন্দ করতেন না। (সেপারিটিজম
এমাঙ ইন্ডিয়ান মুসলিমস,
পৃ. ৪২২)
সে যুগে আহমদ
রেযা খানের সাথে আবদুল মজীদ বদায়ূনী ও আবদুল হামিদ বদায়ূনী নামক দুই ভাই-যাদের প্রথমোক্তজন
সরকারী ‘শামসুল উলামা’ খেতাব এবং ১৯২২ সালে গভর্ণর হারকোট বাটলারের
দরবার থেকে একটি তমঘা ও সম্মানসূচক তরবারী লাভ করেছিলেন। (প্রাগুক্ত, পৃ. ২৭২)
গেইল মেনান্ট
লেখেন, সরকারী মোসাহেবীর
পুরস্কার স্বরূপ আবদুল মজীদ লক্ষ্ণৌর সরকার সমর্থক ক্যানিং কলেজের অধ্যাপকের চাকুরি
এবং আবদুল হামিদ লক্ষ্ণৌ ঈদগাহর ইমামতি লাভ করতে সমর্থ হয়েছিলেন। (দি খিলাফত মুভমেন্ট
দিল্লী অক্সফোর্ড ফ্রেম ১৯৮২, পৃ. ২৭২)
বর্তমানে ‘ওহাবী তত্ত্ব’ পুনঃআবিষ্কারকারীগণ সেই নোংরা ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি
করে জানান দিলেন,
ব্রিটিশ
বেনিয়ারা ৬৫ বছর পূর্বেই এদেশ থেকে পাততাড়ি গোটাতে বাধ্য হলেও
তাদেরনিমক হালাল
অনুগামীরা এখনো বেঁচে আছেন এবং যে কোন বাতিল শক্তিকেই তারা মদত যোগাতে সদা প্রস্ত্তত
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন