Translate

শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

কোরবানীর ইতিহাস/ জবিহুল্লাহ হযরত ইসমাইল? না হযরত ইসহাক আঃ ?



এম আবদুল্লাহ ভূঁইয়া মক্কা মোয়াজ্জমাহ

 হযরত আদম আঃ এর পুত্র হাবীল-কাবীল এর বিবাহ কে কেন্দ্র করেই সর্ব প্রথম কোরবনীর ইতিহাসের সূচনা হয়েছিল . মূলত
 কুরবানীর বিধান আল্লাহ প্রদত্ত সকল শরীয়তেই বিদ্যমান ছিল
 কুরবানীর ইতিহাস ততোটাই প্রাচীন যতোটা প্রাচীন মানব অথবা ধর্মের ইতিহাস। আল্লাহ পুরস্তির কুরবানী নামক এ মহান নিদর্শন মানব জাতির প্রতি আল্লাহ প্রদত্ত সকল শরীয়তেই কার্যকর ছিলো। সকল নবীর উম্মতকেই কুরবানী করতে হয়েছে। প্রত্যেক উম্মতের ইবাদতের এ ছিল একটা অপরিহার্য অংশ। আল্লাহতায়ালার এ বিধান মানব জাতির সৃষ্টি লগ্ন থেকেই কার্যকর হয়ে আসছে ।
 মানব সভ্যতার সুদীর্ঘ ইতিহাস এটাই সাক্ষ্য দেয় যে, পৃথিবীর সব জাতি ও সম্প্রদায় কোন না কোন ভাবে আল্লাহর দরবারে নিজেদের প্রিয় বস্তু উৎসর্গ করে । এটাই মানুষের চিরন্তন স্বভাব বা ফিতরাত। এ ফিতরাতের স্বীকৃতি প্রদান করে মহান আল্লাহ তায়ালা সুস্পষ্ট ভাবে ঘোষণা করেছেন ঃ
وَلِـكُل�‘ِ اُم�‘َةٍ جَعَـل�’ـنَا مَن�’سَكًا لِ�‘ـيَـذ�’كُرُو�’ا اس�’مَ اللهِ عَلى مَـا رَزَقَـهُم�’ مِن�’ بَـهِيـ�’مَةِ ال�’اَن�’ـعَـامِ
“আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্যে কুরবানীর এক বিশেষ রীতি পদ্ধতি নির্ধারণ করে দিয়েছি, যেন তারা ওসব পশুর উপর আল্লাহর নাম নিতে পারে যে সব আল্লাহ তাদেরকে দান করেছেন”। { সূরা আল হজ্জ-৩৪}
আমাদের কুরবানী সুন্নাতে ইবরাহীমী
========================
কুরবানী ইবাদত হিসেবে যদিও আদম আ. এর যুগ হতে হয়ে আসছে কিন্তু পরবর্তীতে হযরত ইবরাহীম আ. এর এক ঐতিহাসিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশেষ বৈশিষ্ট্য নিয়ে শুরু হয়েছে। আমরা হযরত ইবরাহীম আ. এর মিল্লাতের উপর প্রতিষ্ঠিত আছি।
 এ মিল্লাতের প্রতিষ্ঠাতা ও মুসলিম জাতির পিতা হচ্ছেন হযরত ইবরাহীম আ.।
তিনি যেমন আল্লাহর নির্দেশে জীবনের সবচাইতে প্রিয় বস্তু- পুত্র ইসমাঈলকে তাঁর উদ্দেশ্যে কুরবানী করতে প্রস্তুত ছিলেন, ঈদুল আয্হার দিন মুসলমানরাও তেমনি পশু কুরবানীর মাধ্যমে নিজেদের প্রিয়তম জান-মাল আল্লাহর পথে কুরবানী করার সাক্ষ্য প্রদান করেন।
 মুসলিম মিল্লাতের পিতা হযরত ইবরাহীম আ. এর সেই মহত্ব ও মাকবুল কুরবানীকে শাশ্বত রূপদানের জন্যেই আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসূল সা. এই দিনে মুসলমানদেরকে ঈদুল আয্হা উপহার দিয়েছেন এবং এ কুরবানী করার নির্দেশ দিয়েছেন।
http://www.youtube.com/watch?v=aBozqJO978s 
 http://www.youtube.com/watch?v=683sbkzULwY&feature=related 


জবিহুল্লাহ হযরত ইসমাইল? না হযরত ইসহাক ? আঃ
===========================================
কুরআন মজীদের ৩৭ তম সূরা ‘আসসাফফাত’ এ যবাহ (কুরবানী)-এর ঘটনা উল্লেখ রয়েছে। পরিপূর্ণ বিশ্লেষণসহ পূর্বাপর তা লক্ষ্য করা জরুরি। ইরশাদ হয়েছে-

قالوا ابنوا له بنيانا فألقوه في الجحيم فأرادوا به كيدا فجعلنهم الاسفلين. وقال انى ذاهب الى ربى سيهدين. رب هب لى من الصلحين. فبشرنه بغلم حليم. فلما بلغ معه السعى قال يبنى انى ارى فى المنام انى اذبحك فانظر ماذا ترى قال يابت افعل ما تؤمر ستجدنى ان شاء الله من الصبرين. فلما اسلما وتله للجبين. ونادينه ان يابرهيم. قد صدقت الرءيا انا كذلك نجزى المحسنين. ان هذا لهو البلؤا المبين. وفدينه بذبح عظيم. وتركنا عليه فى الخرين. سلم على ابرهيم. كذلك نجزى المحسنين. انه من عبادنا المؤمنين. وبشرنه باسحق نبيا من الصلحين. وبركنا عليه وعلى اسحق ومن ذريتهما محسن وظالم لنفسه مبين.
তারা পরস্পর বলল, ইবরাহীমের জন্য একটি অগ্নিকুণ্ড প্রস্তুত কর এবং তাঁকে সে জ্বলন্ত অগ্নিতে নিক্ষেপ কর। মোটকথা তারা ইবরাহীমের অনিষ্ট করার ইচ্ছা করল। সুতরাং আমি তাদেরকে অধঃপতিত করে দিলাম। এবং ইবরাহীম বললেন, আমি তো আমার রব্বের দিকে ফিরে যাচ্ছি, তিনি আমাকে (উত্তম স্থানে) পৌঁছে দিবেনই। (দুআ করলেন,) হে আমার রব্ব! আমাকে একটি সুসন্তান দান করুন। অতঃপর আমি তাঁকে ধৈর্য্যশীল প্রকৃতির একটি পুত্রসন্তানের সুসংবাদ দিলাম। অনন্তর যখন পুত্রটি তাঁর সাথে চলাফেরা করার মতো বয়সে উপনীত হল, তখন তিনি বললেন, বৎস! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, তোমাকে যবেহ করছি। অতএব তুমিও চিন্তা কর, তোমার কী মত?

তিনি বললেন, আব্বাজান! আপনি যে বিষয়ে আদিষ্ট হয়েছেন, পূর্ণ করুন, ইনশাআল্লাহ আমাকে ধৈর্য্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন। ফলকথা, যখন তাঁরা আত্মসমর্পণ করলেন এবং পিতা পুত্রকে কাত করে শায়িত করলেন এবং আমি তাঁকে ডেকে বললাম, হে ইবরাহীম! নিশ্চয়ই আপনি স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখিয়েছেন। আমি বিশিষ্ট বান্দাদেরকে এরূপই পুরস্কার প্রদান করে থাকি। প্রকৃতপক্ষেও তা ছিল একটি বড় পরীক্ষা। আর আমি তার পরিবর্তে একটি শ্রেষ্ঠ যবেহের পশু দান করলাম। এবং আমি তাঁর জন্য পশ্চাতে আগমনকারীদের মধ্যে এই বাক্য থাকিতে দিলাম যে, ইবরাহীমের প্রতি সালাম হোক। আমি বিশিষ্ট বান্দাদেরকে এরূপই পুরস্কার প্রদান করে থাকি। নিঃসন্দেহে তিনি আমার ঈমানদার বান্দাগণের অন্যতম ছিলেন। আর আমি তাঁকে ইসহাক সম্বন্ধে সুসংবাদ প্রদান করলাম যে, তিনি নবী, (এবং) সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হবেন। আর আমি ইবরাহীম ও ইসহাকের প্রতি বরকতসমূহ নাযিল করেছি। এবং তাঁদের উভয়ের বংশে অনেক নেক লোকও রয়েছে এবং অনেকে এমনও রয়েছে, যারা প্রকাশ্যে নিজেদের ক্ষতি সাধন করছে।-সূরা সাফফাত : ৯৭-১১৩


 উপরোক্ত আয়াতসমূহ ও সামনে উল্লেখিত এ সম্পর্কিত অন্যান্য আয়াতসমূহ সামনে রেখে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো লক্ষ্য করা দরকার।

 ১। সূরা সাফফাত-এর উপরোক্ত আয়াতসমূহে ইবরাহীম আ.-এর দু’জন সন্তানের সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে। প্রথম সন্তানের নাম উল্লেখ করা হয়নি; বরং غلام حليم (ধৈর্য্যশীল প্রকৃতির একটি পুত্রসন্তান) উল্লেখ করে তার কুরবানীর ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। এরপর দ্বিতীয় পুত্রসন্তানের সুসংবাদ নামসহ উল্লেখ করা হয়েছে-فبشرنه بإسحق ।
এ কথা সর্বজনস্বীকৃত যে, ইবরাহীম আ.-এর মাত্র দুজন পুত্রসন্তান ছিলেন : ইসমাঈল ও ইসহাক। সুতরাং একজন অর্থাৎ ইসহাক আ.-এর উল্লেখ নামসহ হলে অপরজন, যাকে غلام حليم (ধৈর্য্যশীল প্রকৃতির একটি পুত্রসন্তান) আখ্যা দিয়ে তার কুরবানীর ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে সে ইসমাঈল আ. ছাড়া আর কে হবেন?

ইসহাক আ.-এর আলোচনা তো কুরবানীর ঘটনার পরে উল্লেখ করা হয়েছে এবং তাঁর সুসংবাদ তো নিজের ‘একমাত্র পুত্র’ ইসমাঈলকে কুরবানী করার আদেশ পালনে সফলতার পুরস্কার হিসাবে প্রদান করা হয়েছে। আয়াতের বর্ণনাভঙ্গি থেকেই তা সুস্পষ্ট।

 ২। কুরবানীর ঘটনা যে পুত্রের সঙ্গে সংঘটিত হয়েছে তাকে কুরআন মজীদে (সূরা সাফফাত (৩৭) : ১০৭) غلام حليم (ধৈর্য্যশীল প্রকৃতির একটি পুত্রসন্তান) আখ্যা দেওয়া হয়েছে। অথচ ইসহাক আ.কে তো غلام عليم (বড় বিদ্বান সন্তান) আখ্যা দেওয়া হয়েছে। দেখুন : সূরা হিজর (১৫) : ৫৩; সূরা যারিয়াত (৫১) : ২৮
 বোঝা গেল, غلام حليم দ্বারা ইসমাইল আ. উদ্দেশ্য। যিনি নিঃসঙ্কোচে নিজের জীবন উৎসর্গ করাকে বরণ করে নিলেন। এরচেয়ে বড় حلم (সহনশীলতা) আর কী হতে পারে?
কুরআন মজীদে ইসমাঈল আ.কে من الصابرين (ধৈর্য্যশীল) বলেও আখ্যা দেওয়া হয়েছে। (দেখুন : সূরা আম্বিয়া (২১) : ৮৫) এ গুণটিই উপরোক্ত আয়াতসমূহে কুরবানীর ঘটনায় (সূরা সাফফাত (৩৭) : ১০২) উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ কুরআন মজীদের কোথাও ইসহাক আ.-এর জন্য এ গুণের উল্লেখ নেই।
 ৩। যে পুত্রের সঙ্গে কুরবানীর ঘটনা সংঘটিত হয়েছে তার সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ তাআলা ইবরাহীম আ.-এর দুআর পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর সুসংবাদ প্রদান করেছেন। ইরশাদ হয়েছে-
رب هب لى من الصلحين. فبشرنه بغلم حليم.
 (তরজমা) হে আমার রব্ব! আমাকে একটি সুসন্তান দান করুন। অতঃপর আমি তাঁকে ধৈর্য্যশীল প্রকৃতির একটি পুত্রসন্তানের সুসংবাদ দিলাম।-সূরা সাফফাত (৩৭) : ১০০-১০১
 আর ইসহাক আ. (غلام عليم)-এর জন্মের সুসংবাদ ইবরাহীম আ.-এর দুআ ছাড়াই বৃদ্ধ বয়সে ফেরেশতাদের মুখে প্রদান করা হয়েছে। যার কারণে তিনি অনেকটা অবাকও হয়েছেন যে, আমি তো বৃদ্ধ। তাছাড়া আমার স্ত্রীও বৃদ্ধা ও বন্ধ্যা তাহলে সন্তান কীভাবে হবে? বিবি (সারা রা.)ও বিস্মিত হয়েছেন এবং এই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছেন। কুরআন মজীদে (সূরা হুদ (১১) : ৬৯-৭৫; সূরা হিজর (১৫) : ৫১-৫৬; সূরা যারিয়াত (৫১) : ২৪-৩০) এ ঘটনা বিস্তারিতভাবে উল্লেখ রয়েছে।
 লক্ষ্যণীয় বিষয় এই যে, দুআ ব্যতীত যে غلام (পুত্রসন্তান)-এর সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে তার নাম ইসহাক। সূরা হুদ (১১:৭১) এ তা স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। আর সূরা সাফফাত (৩৭: ১০০-১০১) এ কথা সুস্পষ্ট যে, কুরবানীর ঘটনা যে পুত্রের সঙ্গে সংঘটিত হয়েছে তার সুসংবাদ ইবরাহীম আ.-এর দুআর পরিপ্রেক্ষিতে প্রদান করা হয়েছে। সুতরাং তা ইসহাকের নয়, ইসমাঈলের ঘটনা।
 আল-কুরআন মজীদে স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে, কুরবানীর আদেশ শুধু পরীক্ষামূলক ছিল। আর পরীক্ষার স্বার্থ তখনই অর্জিত হতে পারে যদি তা ইসমাঈলকে কুরবানী করার আদেশ হত। কেননা, ইসহাক আ.-এর সুসংবাদ প্রদানের সময় আরো দুটি বিষয়ের সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছিল। প্রথমত তার ভবিষ্যত প্রজন্ম থেকে ইয়াকুব জন্মলাভ করবেন। দ্বিতীয়ত তিনি (অর্থাৎ ইসহাক আ.) নবী মনোনীত হবেন।
 প্রথম বিষয়ের আলোচনা সূরা হুদ ((১১) :৭১) এবং দ্বিতীয় বিষয়টি সূরা সাফফাত ((৩৭):১১২) উল্লেখ রয়েছে। যেহেতু তাঁর সম্পর্কে পূর্ব থেকেই এ দুটি বিষয়ের সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে তাই তিনি পরীক্ষার বস্তু হতে পারেন না। কেননা, পূর্ববর্তী সুসংবাদের কারণে পরীক্ষিত ব্যক্তি (ইবরাহীম আ.) অবগত আছেন যে, এই সন্তান বড় হবে। এমনকি তাঁর বংশে ইয়াকুব জন্মলাভ করবেন এবং তিনি নবী মনোনীত হবেন। আর আল্লাহ তাআলা এসব স্পষ্ট দুটি সুসংবাদ প্রদানের পর এর পরিপন্থী কোনো নির্দেশ কখনো দিবেন না। এই পরীক্ষা ইসমাঈল আ.-এর জন্যই প্রযোজ্য, যার জন্মের সুসংবাদের সাথে এমন কোনো সুসংবাদ যোগ করা হয়নি যা পরীক্ষার প্রতিবন্ধক হতে পারে।
 মোটকথা, কুরআন মজীদের উল্লেখিত আয়াতসমূহ এবং বর্ণনাভঙ্গী দ্বারা এই বিষয়টি অকাট্যভাবে প্রতীয়মান হয় যে, কুরবানীর ঘটনা ইসহাক আ.-এর নয়; বরং ইবরাহীম আ.-এর অপর পুত্র ইসমাঈল আ.-এর। এ সম্পর্কিত আরো ইঙ্গিত (যা অনেক সময় স্পষ্ট বর্ণনা থেকেও অধিক তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে থাকে) কুরআন মজীদে বিদ্যমান রয়েছে, এখানে কেবল চারটি বিষয় উপস্থাপন করা হল।
 একটু লক্ষ্য করলেই বোঝা যাবে যে, এত সব আলোচনার পর যাবীহুল্লাহ (যার সঙ্গে কুরবানীর ঘটনা সংঘটিত হয়েছে) কে নাম উল্লেখ করে (ইসমাঈল) নির্দিষ্টকরণের কোনো প্রয়োজন ছিল না। তাছাড়া এই বর্ণনাভঙ্গিটিও নাম উল্লেখের তুলনায় কম স্পষ্ট নয়।
 এ বিষয়ে আরো জানতে সূরা সাফফাতের সংশ্লিষ্ট আয়াতসমূহের তাফসীর তাফসীরে ইবনে কাসীর খণ্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ১৬-২১; তাফসীরে উসমানী পৃষ্ঠা : ৫৮৩-৫৮৪; তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন খণ্ড : ৭, পৃষ্ঠা : ৪৬২-৪৬৬;, তাফহীমুল কুরআন খণ্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ২৯৭-৩০১ দেখা যেতে পারে।
* বাংলা ভাষায় কুরআন মজীদের সর্বপ্রথম অনুবাদক হিসাবে খ্যাত জনাব গিরিশ চন্দ্র সূরা সাফফাতের সংশ্লিষ্ট আয়াতের অর্থ করেছেন- হে আমার প্রতিপালক, তুমি আমাকে সাধুদিগের (একজন) দান কর। অবশেষে আমি তাহাকে প্রশান্ত বালকের (এস্‌মায়িল নামক পুত্রের) সুসংবাদ দান করিলাম।- কোরআন শরীফ (হরফ প্রকাশনী, কলকাতা-৭ থেকে মুদ্রিত), পৃষ্ঠা : ৫১৩, সূরা সাফফাত : ৯৯-১০০
 হায়, যদি আমাদের দেব নারায়ণ মহেশ্বর বাবুও এই সহজ-সত্য বিষয়টি অনুধাবন করতেন!!!
২। বাইবেলের বর্ণনার আলোকে
 যেহেতু কট্টরপন্থী ইহুদী ও খৃষ্টান সমপ্রদায়ই কুরআনের এই বাস্তবতাকে অস্বীকার করে এবং কুরবানীর ঘটনাটি ইসহাক আ.-এর সঙ্গেই সংঘটিত হয়েছে বলে মনে করে। তাই বাইবেলের আলোকেও এই বিষয়ে আলোচনা করা সমীচীন মনে হল।
 বাইবেল পুরাতন নিয়মের প্রথম কিতাব ‘আদি পুস্তক’-এর ১৬, ১৭, ২১ ও ২২ নং অধ্যায়ে ইসমাঈল ও ইসহাক আ.-এর সুসংবাদ ও জন্মের আলোচনা এবং কুরবানীর ঘটনাও উল্লেখ রয়েছে। যেখানে নিচের বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে বিদ্যমান রয়েছে :
১। অব্রাহামের ছিয়াশি বছর বয়সে ইশ্মায়েলের জন্ম হয়েছিল।-আদি পুস্তক ১৬: ১৬
 ২। অব্রাহামের বয়স যখন একশো বছর তখন তাঁর ছেলে ইসহাকের জন্ম হয়েছিল।-আদি পুস্তক ২১:৫
 বোঝা গেল যে, বাইবেলের বর্ণনা অনুযায়ীও ইসমাঈল জেষ্ঠপুত্র ছিলেন, যিনি ইসহাক থেকে ১৪ বছরের বড়। আর ১৪ বছর পর্যন্ত ইসমাঈলই ইবরাহীম আ.-এর একমাত্র পুত্র ছিলেন। আদি পুস্তকের (Genesis : ) ২২তম অধ্যায়ে (২২:২) কুরবানীর যে আদেশ দেওয়া হয়েছে তাতে only son (একমাত্র পুত্র) কে কুরবানী করার কথা রয়েছে। (বাইবেলের বাংলা তরজমায় ‘অদ্বিতীয় পুত্র’ কথাটি ভুল।)


স্পষ্টত বড় পুত্র ইসমাঈলের বর্তমানে ইসহাক একমাত্র পুত্র হতে পারেন না। তবে ইসহাকের জন্মের ১৪ বছর পূর্ব পর্যন্ত ইসমাঈল একমাত্র পুত্র ছিলেন। সুতরাং বাইবেলের বর্ণনা অনুযায়ীও কুরবানীর ঘটনা ইসমাঈলের সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট। এ বিষয়ে বাইবেলের তরজমাসমূহে ইসহাকের উল্লেখ স্পষ্ট ভ্রান্তি, যা বাইবেলের স্পষ্ট বর্ণনাসমূহেরও পরিপন্থী।
 অক্সফোর্ড থেকে প্রকাশিত Short Encyclopedia Of Islam -এর অনুসরণে ইসলামিক ফাউণ্ডেশন কর্তৃক সংকলিত ও প্রকাশিত ‘সংক্ষিপ্ত ইসলামী বিশ্বকোষ’-এর নিম্নোক্ত দুটি আলোচনা লক্ষ্য করা যেতে পারে
:
‘‘ইসমাঈল (اسمعيل) (‘আ) একজন প্রসিদ্ধ নবী, বীবী হাজিরাঃ-এর গর্ভজাত হযরত ইবরাহীম (‘আ)-এর জ্যেষ্ঠপুত্র। ইসমা‘ঈল শব্দটির হিব্রু প্রতিশব্দ হইল ...।
হযরত ইবরাহীম (‘আ)-এর ৮৬ বৎসর বয়সে তাঁহার জন্ম (Genesis, ১৬:১-১৬)। তিনি ছিলেন কুরাইশ ও উত্তর ‘আরবের ‘আদনান বংশীয় অধিবাসিগণের আদি পিতা। তাঁহার জন্মের অল্প কিছুদিন পর পিতা ইবরাহীম (‘আ) আল্লাহর ইচ্ছায় তাঁহাকে ও তাঁহার মাতাকে বর্তমানে যেখানে কা‘বাঃ অবস্থিত সেখানে এক জনমানবহীন মরু প্রান্তরে রাখিয়া আসেন। ...।
ইবরাহীম (‘আ) তাঁহার প্রচার ক্ষেত্র কানআান-এর দিকে চলিয়া গিয়াছিলেন। কিছুদিন পর তিনি আসিয়া দেখিলেন, ইসমাঈল (‘আ) কিছুটা বড় এবং পিতার সহিত চলাফেরা করিতে সক্ষম হইয়াছেন। তখন ইবরাহীম (‘আ) একদা স্বপ্নে তাঁহাকে কুরবানী করিতে আদিষ্ট হন। জাগ্রত হইয়া তিনি পুত্রকে বলিলেন, ‘‘হে পুত্র আমি স্বপ্নে দেখিলাম, আমি তোমাকে কুরবানী করিতেছি, তুমি কি বল? তিনি বলিলেলন, হে পিতা, আপনি যাহা করিতে আদিষ্ট হইয়াছেন তাহাই করুন। আপনি, ইনশাআল্লাহ আমাকে ধৈর্য্যশীল দেখিতে পাইবেন (৩৭ঃ১০২)।’’ পুত্রকে কুরবানী করিবার উদ্দেশ্যে ইবরাহীম (‘আ) এক প্রান্তরে (মিনা) উপস্থিত হইলেন। ইবরাহীম (‘আ) পুত্রের গলায় ছুরি চালাইবেন-এমন সময় আল্লাহর তরফ হইতে আওয়ায শুনিলেন, ‘‘হে ইবরাহীম! তুমি তোমার স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করিয়াছ। আমি এই প্রকারেই সৎকর্মশীল ব্যক্তিদিগকে পুরস্কৃত করি (৩৭:১০১-১০৫)।’’
অতঃপর আল্লাহ ইবরাহীম (‘আ)কে পুত্রের পরিবর্তে এক পশু দান করিলেন কুরবানীর জন্য (৩৭: ১০৭)। তখন হইতে ইসমাঈল (‘আ) যাবীহুল্লাহ নামে খ্যাত হইলেন। মুসলিম বিশ্ব তখন হইতে একই দিবসে সেই মহান কুরবানীর অনুষ্ঠান করিয়া থাকে আত্মোৎসর্গের প্রতীকরূপে। কুরবানী সংক্রান্ত আয়াতে ইসমাঈল (‘আ)-এর নামটির উল্লেখ নাই। এই সুযোগে য়াহুদী ও খৃস্টান লেখকগণ তাহাদের নিকটতম পূর্বপুরুষ, সারার-এর গর্ভজাত ইবরাহীম (‘আ)-এর দ্বিতীয় পুত্র ইসহাক (‘আ) কে যাবীহুল্লাহ নামে আখ্যায়িত করেন।
 তাহাদের এই দাবী ভ্রান্ত। কারণ বাইবেলোক্ত Thine only son Genesis ২২:২) ইবরাহীম (‘আ)-এর একমাত্র পুত্র নহেন। তাঁহার পূর্বে ইসমাঈলের জন্ম হইয়াছিল। Genesis, ১৬:১৬ অনুযায়ী ইবরাহীম (‘আ)-এর ৮৬ বৎসর বয়সে ইসমাঈলের জন্ম এবং Genesis ২১:৫ অনুযায়ী ১০০ বৎসর বয়সে ইসহাকের জন্ম। সুতরাং ইসহাক তাঁহার প্রথম পুত্রও নহেন। যদি হইতেন তাহা হাইলে দ্বিতীয় পুত্রের জন্মের পূর্বক্ষণ পর্যন্ত তাঁহাকে একমাত্র পুত্র বলা হইত। কুরআনের কথায় ইসহাকের জন্মের সুসংবাদ আসিয়াছিল প্রথম পুত্র ইসমাঈলের জন্ম এবং কুরবানী অনুষ্ঠানের পর ৩৭:১১২)।
খলীফা উমার ইবন ‘আবদিল-‘আযীয একদা জনৈক ইসলামে দীক্ষিত য়াহুদীকে এই সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করিলে তিনি বলেন, য়াহুদীরা জানে, ইসমাঈলই প্রকৃত যাবীহ। তবে তাহারা আপনাদের প্রতি ঈর্ষবশত ইহা স্বীকার করে না।’’-সংক্ষিপ্ত ইসলামী বিশ্বকোষ, ইসলামিক ফাউণ্ডেশন, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ১৮৫-১৮৬
‘‘ইসহাক (اسحاق) (‘আ) ইনি বাইবেলোক্ত Issac । তাল্‌মুদ (Rosh hash-shana পৃষ্ঠা ১১) অনুসারে তাঁহার জন্ম হইয়াছিল Foaest of passah -এর সময়। মুসিলম কিংবদন্তী অনুসারে তাঁহার জন্ম ‘আাশূরা-র রাত্রিতে (আছ-ছা‘লাবী, পৃ. ৬০; আল-কিসাঈ, পৃ. ১৫০)। ইবরাহীম (‘আ)-এর নিয়ম এই ছিল যে, কোনো দরিদ্র অর্থাৎ পথিক মেহমানরূপে উপস্থিত হইলে তবে তিনি তাহার সহিত আহার করিতেন। একদা কতিপয় ফিরিশতা মানুষের রূপ ধারণ করিয়া তাঁহার মেহমান হইলেন। তাঁহাদেও আপ্যায়নের জন্য তিনি একটি ভর্জিত গো-বৎস তাঁহাদের সামনে উপস্থিত করিলেন। তাঁহারা আহার্য গ্রহণ করিতেছেন না দেখিয়া তিনি বিস্মিত এবং কিঞ্চিৎ ভীত হইলেন। মেহমানগণ তাঁহাকে জানাইলেন, তাহারা ফিরিশতা। লূত (‘আ)-এর অবাধ্য উম্মাঃকে শাস্তি দানের জন্য তাঁহারা প্রেরিত হইয়াছেন। অতঃপর ফিরিশতাগণ তাঁহাকে তাঁহার স্ত্রী সারা-র গর্ভজাত একটি পুত্রসন্তান লাভের সুসংবাদ প্রদান করেন। সারাঃ এই সুসংবাদ শ্রবণে অতিশয় আশ্চার্যন্বিতা হইলেন, (১১ঃ৬৯-৭৩), কারণ তাঁহার বয়স ছিল নব্বই এবং তাঁহার স্বামীর বয়স একশত বৎসর (Genesis, ১৭:১৮)। ইহার পর ইসহাক (‘আ) জন্মগ্রহণ করেন। বাইবেলে উক্ত হইয়াছে, ইবরাহীম (‘আ) আল্লাহর আদেশে ইসহাককে কুরবানী করিতে উদ্যত হইয়াছিলেন (Genesis, ২২:২)। কিন্তু ইহা ভ্রামাত্মক, কারণ উক্ত শ্লোকে Issac -কে Thine only son বলা হইয়াছে। অথচ ইসহাক-এর জন্মের পূর্বে ইসমাঈল ছিলেন only son । অন্যপক্ষে Issac যে ইবরাহীমের ২য় পুত্র-বাইবেলের বর্ণনায় ইহাও সুস্পষ্ট। ইসমাঈলের বংশধরগণই সেই কুরবানীর আদর্শ আজ পর্যন্ত বজায় রাখিয়াছে, ইসহাক ও তৎপুত্র য়া’কুবের বংশধর ইহাতে শরীক নহে।
 ইসহাক (‘আ) ফিলিস্তীনের হেবরন নামক স্থানে তাঁহার পৈতৃক আবাসস্থলেই বাস করিতেন (মাওদূদী, তাফহীমুল-কুরআন ২ঃ৩৮১)। এখানে তিনি তাঁহার পিতার স'লাভিষিক্তরূপে বসবাস করিতে থাকেন। তিনি যথাসময়ে নুবূওয়াত প্রাপ্ত হন। ইহার পুত্র য়া’কুব (আ), বাইবেলের Jacob ইসরাঈলীদের আদি পিতা।’’-সংক্ষিপ্ত ইসলামী বিশ্বকোষ, ইসলামিক ফাউণ্ডেশন খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ২০০-২০১)
 * তাছাড়া বাইবেলের সবচেয়ে বিশুদ্ধতম বর্ণনা, যা ‘ইঞ্জিলে বারনাবাস’ নামে প্রসিদ্ধ, তাতে ৪৩ ও ৪৪ নং অধ্যায়ে ঈসা আ.-এর স্পষ্ট বাণী উল্লেখ রয়েছে যে, কুরবানীর ঘটনা ইসমাঈল আ.-এর, ইসহাক আ.-এ��
 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন