মুসলমানরাই বাংলাদেশের আদিবাসী
মুসলমানরাই বাংলাদেশের আদিবাসী
নূহ (আ.) প্রোপৌত্র বং-ই হলো প্রথম বাঙালি এবং বাংলাদেশের প্রথম muslim and মানুষ। -
মাহমুদ ইউসুফ : শিরোনাম দেখে যে কেউ অবাক হতে পারেন। আর অবাক হবারই কথা। পার্বত্য এলাকার উপজাতিদের যখন সাংবিধানিকভাবে আদিবাসী প্রতিষ্ঠা করার তোড়জোর চলছে তখন এই নিবন্ধ সম্পর্কে অনেকের মনেই খটকা লাগতে পারে। আর কৌতূহল জাগাই স্বাভাবিক। পশ্চিমারা অনেক আগ থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠীকে আদিবাসী মর্যাদায় প্রতিষ্ঠার জন্য তৎপরতা চালাচ্ছে। তাদের সাথে যুক্ত হয়েছে দেশের সেক্যুলার-বাম রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবীদের একাংশ। বিশেষ করে প্রতিবছর ৯ আগস্ট বিশ্ব আদিবাসী দিবসকে সামনের রেখে এদের মাতামাতি যেন অনেকটাই বেড়ে যায়। এই প্রবন্ধ তাদের বক্তব্যের অসারতা প্রমাণ করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।দক্ষিণ বাংলার ইতিহাস গবেষক অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব সিরাজ উদ্দীন আহ্মেদ লিখেছেন, ‘বাকলা-চন্দ্রদ্বীপ বাঙালি জাতির প্রধান আদি বাসস্থান। প্রাগৈতিহাসিককাল থেকে বাঙ জাতি এ অঞ্চলে বাস করত।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘প্রাচীন জনপদগুলো জনগোষ্ঠীর নামানুসারে নামকরণ হয়েছে। বাঙ্গাল জনগোষ্ঠীর নামকরণও বাঙ, কৌম বা গোত্র থেকে হয়েছে। ভাগিরথীর পূর্ব দিকে গাঙ্গেয় বদ্বীপ এলাকায় সুপ্রাচীনকাল থেকে বাঙ জনগোষ্ঠী বাস করত। ... তাদের নামানুসারে বঙ্গ জনপদের নাম।’ আদিমযুগ থেকেই স্থান বা জাতির নামকরণের ক্ষেত্রে ব্যক্তি বিশেষ প্রাধান্য পায়। আধুনিক যুগেও এ প্রথা বিদ্যমান। যেমন বুদ্ধের অনুসারীরা বৌদ্ধ, যীশুখ্রিস্টের অনুসারীরা ক্রিশ্চিয়ান বা খ্রিস্টান, কার্ল মার্কসের অনুসারীরা মার্কসবাদী প্রভৃতি। আবার শ্রীলঙ্কার আদম চূড়া কিংবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি, ভারতের মম তাজমহল ইত্যাদি। উল্লেখ্য পৃথিবীর প্রথম মানুষ হযরত আদম (আ.) জান্নাত থেকে বিতাড়িত হয়ে প্রথম পদার্পণ করেছিলেন সিংহলে। এটি তখন ভারতবর্ষের অন্তর্ভুক্ত ছিল। বর্তমানে স্থানটি শ্রীলঙ্কায়। শ্রীলঙ্কার আদম চূড়া বা অ্যাডাম পিক্ এখনও হযরত আদম (আ.) এর স্মৃতি, ঐতিহ্য ও ঐতিহাসিকতা বহন করে চলেছে। পাহাড়টি শ্রীলঙ্কার দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তের শ্রিপাডা নামক প্রদেশে অবস্থিত। এটি দেশি-বিদেশি পর্যটকদের নিকট একটি আকর্ষণীয় স্থান। মুসলিম, বৌদ্ধ, হিন্দু ও খ্রিস্টান-এই চার ধর্মের অনুসারীদের কাছে পাহাড়টি অতি পবিত্র স্থান। চূড়াটির উচ্চতা ৭৩৬২ ফুট। চূড়ায় হযরত আদম (আ.) এর পায়ের যে চিহ্ন রয়েছে তার দৈর্ঘ্য হচ্ছে ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি এবং চওড়া হচ্ছে ২ ফুট ৬ ইঞ্চি। তাছাড়া আদি মানব আদম (আ.) এর পুত্র হযরত শিষ (আ.) এর কর্মক্ষেত্রও ছিল ভারতে। ভারতের অযোধ্যায় এক মন্দিরের পাশে সুদীর্ঘ কবর আছে। ওই সমাধি হযরত শিষ (আ.) এর বলে কেউ কেউ মনে করেন। তাই বলা যায়, মুসলমানরা শুধু আরব দুনিয়া কিংবা বাংলাদেশের আদিম নিবাসী নয়; গোটা ভারতীয় উপমহাদেশেরই ভূমিপুত্র। ইসলাম, ইহুদি ও খ্রিস্টধর্মের মত অনুযায়ী পৃথিবীর প্রথম মানুষ হযরত আদম (আ.)। তিনি মানবজাতির আদি পিতা এবং ইসলামের প্রথম নবী। বিষয়টি এখন আর শুধু ধর্মীয় উপকথা নয়। ঐতিহাসিকভাবে সত্য। পরবর্তীতে হযরত নূহ (আ.) এর সময় সংঘটিত প্লাবনে তার অনুসারী ৮০-৮৫ জন নাগরিক ব্যতিত সবাই ধ্বংস হয়ে যায়। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় প্লাবনের সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশও এ বন্যা হতে বাদ যায়নি। কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম, আক্রা এবং বদ্বীপ অঞ্চলের অন্যত্র মাটির নিচে বড় বড় প্রস্তর ও উপলখ-ের এক বিরাট স্তর আবিষ্কৃত হয়েছে। এ প্লাবনের সঙ্গে তার যোগ আছে। ঘূর্র্ণিঝড় হতে রক্ষাপ্রাপ্ত নৌকারোহীদের সবাই ছিলেন আল্লাহর অনুগ্রহপ্রাপ্ত মুসলমান। ইসলামের অনুসারী এই কয়েকজন ব্যক্তিই বর্তমান বিশ্ব মানবগোষ্ঠির পূর্ব পুরুষ। তাদের থেকেই সৃষ্ট বর্তমান পৃথিবীর সাতশ’ কোটি নর-নারী। আল কোরআন ও বাইবেলের বক্তব্যও একই সূত্রে গ্রন্থিত। এ প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক ও গবেষক ড. মোহাম্মদ হান্নান লিখেছেন, “হযরত আদম (আ.) থেকে আমাদের এই মানব জাতির শুরু। কিন্তু হযরত নূহ (আ.)-এর সময়ে সমগ্র পৃথিবীতে এক মহাপ্লাবন ঘটেছিল। এই মহাপ্লাবনে দুনিয়ার সকল কিছু ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। কেউ জীবিত ছিল না, শুধু নূহ (আ.)-এর নৌকায় আরোহণ করেছিলেন ৮০ জন নূহের ভক্ত; এই ৮০ জন থেকেই মানব জাতির আবার নতুন যাত্রা। “এই নতুন যাত্রায় জাতিরও সম্পর্ক ছিল। বেঁচে যাওয়া ৮০ জনের মধ্যে ছিলেন হযরত নূহের এক পুত্র; নাম তার ‘হাম’। নূহ তার পুত্র হামকে বললেন, ‘তুমি মানব বসতি স্থাপনের জন্যে চলে যাও পৃথিবীর দক্ষিণ দিকে’। পিতার নির্দেশ পেয়ে হাম চলে এলেন আমাদের এশিয়া মহাদেশের কাছাকাছি। সেখানে এসে তিনি তার জ্যেষ্ঠ পুত্র হিন্দকে পাঠালেন ভারতের দিকে। অনেকে মনে করেন, হামের পুত্র হিন্দের নাম অনুসারেই ভারতের নাম হয়েছে হিন্দুস্তান। “হিন্দের দ্বিতীয় পুত্রের নাম ছিল ‘বঙ্গ’। এই ‘বঙ্গ’-এর সন্তানরাই বাঙালি বলে পরিচিতি লাভ করে। এই গল্প সত্যি হলে বলতে হবে বাঙালির আদি পুরুষ হচ্ছেন ‘বঙ্গ’।”অষ্টাদশ শতাব্দির ঐতিহাসিক গোলাম হোসেন সলীম লিখেছেন, ‘হযরত নূহ (আ.) এর পুত্র হামের জ্যেষ্ঠ সন্তান হিন্দ হিন্দুস্তানে আসার দরুণ এই অঞ্চলের নাম তার নামানুসারে রাখা হয়। সিন্ধু জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার সাথে এসে সিন্ধু দেশে বসতি স্থাপন করায় এই অঞ্চলের নাম তারই নামানুসারে সিন্ধু রাখা হয়। হিন্দের দ্বিতীয় পুত্র বং (বঙ্গ)-এর সন্তানেরা বাংলায় উপনিবেশ স্থাপন করেন। আদিতে বাংলার নাম ছিলো বং।’ শেখ আবুল ফজল আলামি ছিলেন মুঘল সম্রাট আকবরের মন্ত্রী, সভাসদ এবং নবরতেœর একজন। আবুল ফজল বাঙ্গাল ও বাঙ্গালাহ নামের উৎপত্তি সম্পর্কে তার আইন-ই-আকবরী গ্রন্থে লিখেছেন, ‘বাঙ্গালাহ’র আদি নাম ছিলো ‘বঙ্গ’। প্রাচীনকালে এখানকার রাজারা ১০ গজ উঁচু ও ২০ গজ বিস্তৃত প্রকা- ‘আল’ নির্মাণ করতেন। এ থেকেই ‘বাঙ্গাল’ এবং ‘বাঙ্গালাহ’ নামের উৎপত্তি।’ কিন্তু ‘আল’ কে বাংলা বা সংস্কৃত ভাষার শব্দ বা বর্ণ সমষ্টি বলে মনে হয় না। বাংলাদেশ-ভারতে শব্দটির ব্যাপক ব্যবহারও দেখা যায় না। ‘আল’ সেমেটিক বা আরবি ভাষা থেকে উদ্ভুত। সেমেটিক ভাষায় ‘আল’ অর্থ আওলাদ, সন্তান-সন্তুতি ও বংশধর। এ অর্থে (বং+আল) বঙাল বা বঙ্গাল (অর্থাৎ বং-এর বংশধর) শব্দের উৎপত্তি হতে পারে। এখনও গ্রামে-গঞ্জে বংশ বা প্রজন্ম বুঝাতে আহ্ল বা আল শব্দ বুঝানো হয়। তাই বলা যায় হযরত নূহ (আ.) প্রোপৌত্র বং-ই হলো প্রথম বাঙালি এবং বাংলাদেশের প্রথম মানুষ। এ বিষয়ে ড. মোহাম্মদ হান্নান এর বক্তব্য প্রাণিধানযোগ্য। তিনি লিখেছেন, ‘... বাঙালির প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাসের প্রাপ্ত নিদর্শনের সময়কালের সাথে নূহ (আ.)-এর পৌত্র এবং প্রপৌত্রদের আগমনের সময়পর্বকে ড. মরিস বুকাইলির অনুমানের সাথে মেলানো সম্ভব। প্রাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনাদি কম করে হলেও দশ হাজার বছরের প্রাচীন এবং বাংলাদেশের সভ্যতা ও বাঙালি জনমানুষের বসতি এই সময়পর্বেরই ধারাবাহী। এ কথা অনুমান করতে দ্বিধা থাকা উচিত নয়।’ আর তার ধর্মীয় পরিচয় ছিল ইসলাম। তাই মুসলমানরাই বাংলাদেশের আদিবাসী এবং আদিম নাগরিক। আর আদিম বা আদি শব্দ দুটির উৎপত্তিও ‘আদম’ থেকে হওয়ার সম্ভাবনাই অধিক। এদেশের মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, উপজাতিসহ সকল সম্প্রদায়ই এ শব্দটি নিশঙ্কচিত্তে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় লেখ্য এবং কথ্য উভয় ভাষাতেই ব্যবহার করে। অন্যদিকে জনসংখ্যা গণনা ও পরিসংখ্যানের ক্ষেত্রে ‘আদমশুমারি’ শব্দটি বহুল ব্যবহৃত। এক্ষেত্রেও একই বক্তব্য প্রযোজ্য।ওপরে উল্লিখিত ‘বং’ জাতির পরবর্তী জনগোষ্ঠীই হয়ত অস্ট্রো-এশিয়াটিক অথবা অস্ট্রিক বা নিষাদ নামে পরিচিতি পেয়েছে। ‘কোনো কোনো ইতিহাসবিদ এদেরকেই বাংলাদেশের আদিম মানবগোষ্ঠী আখ্যা দিয়েছেন’। এখন প্রশ্ন হলো বং জাতি মুসলিম হলে পরবর্তী অস্ট্রিক-নিষাদ-দ্রাবিড়দের ধর্মীয় পরিচয় সম্পর্কে ধারণা নেয়ার সুযোগ কোথায়? এ কথা সত্য সময়ের বিবর্তনে মানুষ বিভিন্ন মতাদর্শ গ্রহণ করে। যুগে যুগে মানুষ ও রাষ্ট্র প্রণীত নানা মতবাদের সৃষ্টি হয়েছে দুনিয়ার বুকে। কালক্রমে এদেশে বিভিন্ন ধর্মাদর্শ ও মতবাদ প্রবর্তিত হয়। এখানের বং জাতিও তাওহীদবাদী ধর্ম পরিত্যাগ করে একসময় ভ্রান্ত আকিদা বিশ্বাসে আসক্ত হয়ে পড়ে। তখন তাদের মৌলিক জাতিসত্তাও বদলে যায়। মুর্তিপূজা, জড় পূজা, সূর্য পূজা, প্রতীক পূজা, প্রকৃতি পূজা তাদেরকে গ্রাস করে। ফলে স্বভাবতই তারা মূল ধর্মবিশ্বাস থেকে বিচ্যুত হয়ে মানব রচিত মতবাদ গ্রহণ করে। তাই মুসলমানরাই যে বাংলাদেশের প্রাচীন বাসিন্দা সেক্ষেত্রে পরবর্তী ধর্মবিশ্বাসের বিষয়টি কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে না।অন্যদিকে কোনো কোনো ঐতিহাসিক দ্রাবিড় জাতিকে বাঙালির আদি মানুষ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ‘আর্যোপনিবেশের পূর্বে যে প্রাচীন জাতি ভূমধ্যসাগর হতে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত স্বীয় অধিকার বিস্তার করেছিল তাহারাই বোধ হয় ঋগে¦দের দস্যু এবং তাহারাই ঐতরেয় আরণ্যকে বিজেতৃগণ কর্তৃক পক্ষী নামে অভিহিত হইয়াছে। এই প্রাচীন জাতিই বংগ মগধের আদিম অধিবাসী।’ ভারতবর্ষে দ্রাবিড়দের আগমন ঘটেছে সুপ্রাচীনকালে, প্রাগৈতিহাসিককালে এবং তারা এসেছে সেমেটিকদের আদি আবাসভূমি পশ্চিম এশিয়া থেকে। অর্থাৎ ব্যাবিলন বা মেসোপটেমিয়াই ছিলো দ্রাবিড়দের উৎপত্তিস্থল। সেমেটিক সভ্যতার উৎস সামের প্রোপৌত্র এবং হযরত নূহ (আ.)-এর সপ্তম অধস্তন বংশধর আবু ফীর ছিলেন উপমহাদেশের দ্রাবিড়দের আদি পুরুষ। অতএব, দেখা যায় দ্রাবিড়রা ছিল অহিভিত্তিক ধর্ম ইসলামের অনুসারী। এই তৌহিদী আদর্শের কারণেই আর্য হিন্দুদের সাথে তাদের সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে ওঠে। মানবসভ্যতার ইতিহাসে যত দ্বন্দ্ব-সংঘাত, যুদ্ধ-বিগ্রহ সংঘটিত হয়, তার অধিকাংশই ঘটে ধর্ম ও আদর্শিক কারণে। যেমন: ইব্রাহীম-নমরুদের দ্বন্দ্ব, ফিরআউন-মুসার সংঘর্ষ, আর্য-অনার্য সংঘাত, মহানবী (সা.) ও মুশরিক-ইহুদিদের সংঘাত, তারিক-রডারিক সংঘর্ষ, ঘুরী-পৃথ্বিরাজ যুদ্ধ, ঐতিহাসিক ক্রুসেড, হিটলারের ইহুদি নিধন, রাশিয়ায় ধর্মের মূলোৎপাটন কিংবা উইলিয়াম বুশের ইরাক-আফগানিস্তান অভিযান সবই আদর্শিক সংগ্রাম। আর্য হিন্দু-দ্রাবিড় সহস্র বছরব্যাপী যে বিরোধ চলছিলো সেটা শুধু ঔপনিবেশিক তৎপরতা ছিল না; বরং তার মূলে ছিল ধর্ম-রাজনীতি-আদর্শ-নৈতিকতা। তাই দেখা যায় দ্রাবিড়রাও যদি এদেশের প্রাচীন অধিবাসী হয় তাহলেও বলা যায় মুসলিমরাই বাংলাদেশের ভূমিপুত্র।ভৌগোলিক দিক বিশ্লেষণ করলেও দেখা যাবে মুসলমানরাই বাংলাদেশের আদিম অধিবাসী। ‘দশ কুমার চরিত’ হিন্দু ধর্ম সম্পর্কিত একটি প্রাচীন গ্রন্থ। এ গ্রন্থে প্রাচীন বাংলাদেশ সম্পর্কে যে তথ্য সন্নিবেশিত হয়েছে তা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। সে সম্পর্কে শ্রী অক্ষয় কুমার দত্ত লিখেছেন, ‘দশ কুমার চরিতের প্রথম ও চতুর্থ উচ্ছ্বাসে কাল যবন-দ্বীপ এবং ষষ্ঠ-উচ্ছ্বাসে যবন ও যবন পোতের প্রসঙ্গ আছে। এইচ এইচ উইলসন ওই যবন জাতি, যবন-পোতকে আরব জাতি ও আরব পোত বলিয়া বিবেচনা করিয়াছেন।’ অতএব বাংলাদেশের সাথে আরব, অ্যারাবিয়ান সংস্কৃতি ভাষার যোগসূত্র বিদ্যমান। অতীতকাল থেকেই আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্য ও যাতায়াতের সহজপথ সামুদ্রিক পানিপথ। ‘প্রতিটি উল্লেখযোগ্য সামুদ্রিক বন্দরেই আরবি ভাষা বুঝত ও বলত’। অর্থাৎ পৃথিবীর বড় বড় সামুদ্রিক বন্দর ও পানিপথগুলোতে আরব ও সেমেটিকদের আধিপত্য ছিল। বাংলাদেশ হলো একটি ট্রানজিট পয়েন্ট। এখানে এ সত্যটি অধিক প্রযোজ্য। আরবরাই পৃথিবীতে প্রথম সভ্যতার আলো ছড়ায়। তারাই প্রথম লিপি বা বর্ণমালার উদ্ভাবন করেছেন। দক্ষিণ আরব বা ইয়েমেন ও ব্যাবিলন ছিল সভ্যতার আদি উৎসভূমি। পৃথিবীতে সকল দেশের সভ্যতা একই সময়ে একই সাথে সৃষ্টি হয়নি। সেমেটিক বা ইসলাম অনুসারী আদিযুগের মানুষেরাই পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তরে নতুন নতুন সভ্যতার জন্ম দেয়। তাই প্রাচীন বাংলাদেশও মুসলমানদেরই সৃষ্টি। আর্য ব্রাহ্মণ্যবাদীরা বাংলাদেশের অধিবাসীদের দস্যু, ¤েচ্ছ ও অসুর বলতো। ভিন্ন ধর্মমতের কারণেই তারা বাঙালিদের বিরুদ্ধে এরূপ আক্রোশ ও বিদ্বেষভাব পোষণ করতো বলে আমরা মনে করি। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এ. এল, বালাম আর্যদের ওপর গবেষণা করে তার বিবরণীতে লিখেছেন, ‘আর্যরা নিরক্ষর ও বর্বর। নাগরিক সভ্যতার সাথে তাদের কোনো পরিচয় ছিল না। তারা যাযাবর জীবন-যাপন করতো এবং তাদের গোত্রপতির নেতৃত্বে হানাহানিতে লিপ্ত থাকত। রাষ্ট্রীয় ধারণা তাদের মাঝে সম্পূর্ণ অনুপস্থিত ছিল।’ রাজা গশতাসাপ-এর আমলে ইরানে ধর্ম নিয়ে মতবিরোধ, আত্মকলহ ও পরিণামে ভীষণ যুদ্ধ-বিগ্রহ শুরু হয়। যরদাশত বা যরথ্রুষ্ট সেখানে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ঘোষণা করে ইসলামের বাণী প্রচার করেন। বাদশাহ গশতাসপ তার সভাসদসহ এ ধর্মমত গ্রহণ করেন। কিন্তু কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসে মগ্ন আর্য হিন্দু প-িত-পুরোহিতের দল পিতৃপুরুষের ধর্মের দোহাই দিয়ে জনসাধারণকে ক্ষেপিয়ে তোলে। ফলে নবদীক্ষিত মুসলমানরা তাদের বিরুদ্ধে জিহাদে অবতীর্ণ হয়। ফলে পৈতৃক ধর্ম ও শিরকবাদী সংস্কৃতি নিয়ে যাযাবর আর্যরা বিদ্রোহী মুশরিকদের নিয়ে হিন্দুস্থানসহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে চলে আসে। ভারতে এসেই তারা স্থানীয় অধিবাসীদের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। হরপ্পা মহেঞ্জোদারোসহ প্রাচীন সমৃদ্ধশালী সভ্যতাগুলো ধ্বংস করে। ইরানের ব্যর্থতা এখানে তারা সুদে-আসলে আদায় করে। ইসলাম ধর্ম বিকাশের কারণেই তাদেরকে ইরান ত্যাগ করতে হয়। প্রতিশোধ গ্রহণ করে ভারতে এসে। তাতে ধারণা করা যায় ইরান ও ভারতের দুই সম্প্রদায়ই একই ধর্মবিশ্বাসের (ইসলাম) অন্তর্ভুক্ত ছিল।হিন্দুরা ভারত ভূমির আদিম নিবাসী ছিলেন না; দেশান্তর হতে আগমন করে এ স্থানে অবস্থিত হয়েছেন। প্রাচীনতার দিক থেকে হিন্দু-বৌদ্ধ এদেশে অপেক্ষাকৃত নতুন সম্প্রদায়। হিন্দুদের আদি নিবাস নিয়ে প-িতগণ একমত হতে পারেননি। কেউ বলেছেন তুর্কিস্তান বা রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চল, কারও মতে ইরান, অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরী বা বোহেমিয়া। তবে অধিকাংশের মতে দক্ষিণ রাশিয়া। এরা আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ অব্দে এ উপমহাদেশের আগমন করেন। তাদের আক্রমণ ও লুণ্ঠনের ফলে দ্রাবিড় অধ্যুষিত সিন্ধু সভ্যতা ধ্বংস হয়। এরপর তারা পাঞ্জাবের পঞ্চনদ অঞ্চলে উপনিবেশ স্থাপন করেন। (চলবে)লেখক : গবেষক - See
more at: http://www.dailyinqilab.com/2014/08/01/195316.php#sthash.ZGl7L2wi.I6XpXjof.dpuf
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন