Translate

মঙ্গলবার, ২৭ মার্চ, ২০১২

বাংলাদেশে কাদিয়ানী তৎপরতা

 abdullah nezami  bhuiya




কাদিয়ানীরা যেহেতু মির্যা কাদিয়ানীকে নবী মানে। প্রিয় নবীজি (সাঃ) এর পর যে কোন প্রকার নবুওয়তের দাবী করা উম্মতের সর্ববাদী মতে কুফর। মির্যা কাদিয়ানী ও তার ভক্তরাও দলমত নির্বিশেষে সকল উলামায়ে কিরামের সর্ববাদী মতে নিঃসন্দেহে কাফির।


আর মির্যা গোলাম আহমদ ও তার অনুসারীদেরকে কেউ যদি মুসলমান মনে করে, তারাও উম্মতের ইজ্‌মা (ঐক্যমত) অনুযায়ী কাফির।

এই কারণেই বিশ্বের প্রায় সব কয়টি মুসলিম রাষ্ট্রে তাদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম কাফির বলে ঘোষনা করা হয়েছে এবং তাদের সর্বপ্রকার প্রচার প্রোপাগান্ডা নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে। এমনকি ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়ার ন্যায় সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতেও কাদিয়ানী ও বাহাঈ
---============
ধর্মবলম্বীদেরকে অমুসলিম কাফির বলে রাষ্ট্রীয়ভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

বাংলাদেশ যদিও দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র বলে দাবী করে আসছে, তবুও রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলাদেশে এ উভয় সমপ্রদায়কে আজও অমুসলিম বলে ঘোষনা করা হয়নি।

এ উভয় সমপ্রদায় সর্ম্পকে বিশ্বের সকল দল ও মতের উলামায়ে কেরামের সর্ববাদী মতে কাফির বলে ঘোষনা করা সত্তেও বাংলাদেশ সরকার ইসলামের চিহ্নিত শত্রু সাম্রাজ্যবাদী চক্রের সন্তষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে তাদেরকে অমুসলিম কাফির ঘোষনা করছে না। এ উভয় সমপ্রদায়ের ব্যাপারে সরকারের ভ্রান্ত নীতির ফলে উভয় ধর্মাবলম্বীরা বাংলাদেশকে তাদের জন্য উর্বর চারন ভূমি হিসেবে বেছে নিয়েছে।

ব্যাপক গন-আন্দোলন ও তৎকালীন সৌদী বাদশাহ মরহুম ফয়সালের চাপের কারণে পাকিস্তানের ভুট্রো সরকার ১৯৭৪ সালে কাদিয়ানীদেরকে অমুসলিম ঘোষনা করেন।

এ ঘোষনার পর কাদিয়ানী ধর্ম মতের সূতিকাগার লন্ডনে তাদের প্রধান কেন্দ্র স্থাপন করে। বৃটেন ও বর্তমান বিশ্বে সাম্রাজ্যবাদীদের প্রধান দেশ আমেরিকা তাদের পৃষ্টপোষকতা করছে এবং কাদিয়ানী ধর্ম মত প্রচারের জন্য লক্ষ্য-কোটি ডলার তাদেরকে দিচ্ছে।

মুসলিম দেশ সমূহের মধ্যে কেবলমাত্র বাংলাদেশেই তাদের ধর্ম প্রচারের সুযোগ রয়েছে। তাই বর্তমানে তাদের দৃষ্টি বাংলাদেশের উপর নিবদ্ধ হয়ে আছে। তাছাড়া আফ্রিকার নওমুসলিমদেরকেও ধর্মচ্যুত করার কাজে তারা ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছে।

এমনিতে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ। তদুপরি সাইক্লোন, বন্যা, সিডর, ঝড়, তুফান ও ফসলহানী এ দেশে লেগেই আছে। এ দেশে এমন অনেক এলাকা রয়েছে যে সব এলাকায় দ্বীনী শিক্ষার দারুন অভাব রয়েছে। লর্ড ম্যাকেলের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা আজও এ দেশে প্রচলিত রয়েছে।

যারা নিজস্ব ব্যবস্থায় দ্বীনের প্রাথমিক জ্ঞান লাভ না করে সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিতি হচ্ছে, তারা উইলিয়াম হান্টারের ভাষায় �যদি ও খৃষ্টান হয় না তথাপি মুসলমানও থাকে না�। কাদিয়ানীরা এ সব সুযোগের যথাযথ ব্যবহার করে তথাকথিত শিক্ষিত ও অশিক্ষিত মুসলমানদেরকে নানা কলা কৌশলে কাদিয়ানি ধর্মমতের প্রতি আকৃষ্ট করে চলছে। এবং বর্তমানে আমাদের দেশে কাদিয়াদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলছে।

১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম ও ঢাকায় মাত্র গুটি কয়েক কাদিয়ানি ছিল। পাকিস্তান আমলে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান হাতে আগত কাদিয়ানী আমলাদের সাহায্যে তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে আরম্ভ করে। আইয়ুব খাঁনের শাসনামলে তাঁর ব্যক্তিগত উপদেষ্টা ছিল মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর দৌহিত্র এম, এম, আহমদ। এম, এম, আহমদ আইয়ুব খাঁনকে দিয়ে পঞ্চগড়ের সীমান্তবর্তী এলাকায় কাদিয়ানীদের জন্য দু-শ একর জমি বরাদ্ধ করিয়েছিল।

সেখানে এখন আহমদ নগর নাম দিয়ে কাদিয়ানীদের বিরাট কলোনী গড়ে উঠেছে। পাকিস্তান আমলে জনৈক কাদিয়ানী অফিসাররের চেষ্টা তদবীরের ফলে চুয়াডাঙ্গায় ও কাদিয়ানীদের এক বিরাট এলাকা গড়ে ঊঠে। অনেকের ধারনা বর্তমানে ব্রাহ্মনবাড়িয়ার চেয়ে চুয়াডাঙ্গায় কাদিয়ানীরা সংখ্যায় বেশী রয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় ও সমগ্র বাংলাদেশে কাদিয়ানীদের সংখ্যা কয়েক হাজারের বেশী ছিল না।

আর বর্তমানে তাদের বেশী পৌছেছে। আমাদের প্রশ্ন, এসব কাদিয়ানী কোত্থেকে এসেছে? এরা কি পাকিস্তান থেকে মাইগ্রেশন করে বাংলাদেশে এসেছে? মোটেই না। এদেশের কোন হিন্দু,খৃষ্টান কিংবা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী কি কাদিয়ানী ধর্ম গ্রহণ করেছে বলে কেউ বলতে পারে? তারা মুসলমান ব্যাতীত অন্য কেন ধর্মাবলম্বীদের নিকট তাদের ধর্মমত প্রচার করে না, আর ঐ সব ধর্মাবলম্বীদের কেউ তাদের ধর্ম গ্রহণও করে না। সরকারের ভ্রান্ত নীতির ফলে তারা নিজেদেরকে মুসলমান পরিচয় দিয়ে কেবলমাত্র মুসলমানদেরকে মুরতাদ(দ্বীন ত্যাগী) বানাচ্ছে। সুতারং বলতে হবে, আজ বাংলাদেশে লক্ষাধিক কাদিয়ানী রয়েছে, এরা সকলেই এদেশের মুসলমান। নানা কলা কৌশল ও লোভ প্রলোভনের মাধ্যমে তাদেরকে ধর্মচ্যুত করে কাদিয়ানী ধর্মমতের জালে আবদ্ধ করে কাফির বানিয়েছে।


কাদিয়ানী ধর্মমতালম্বীদের তৎপরতা যে কি ভয়াবহ রূপ ধারণা করছে তা কল্পনা ও করা যায় না। তাদের প্রকাশিত আহমদী শত বার্ষিকীতে বলা হয়েছে বাংলাদেশে তাদের ৯৩টি কেন্দ্র রয়েছে। আমরা বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পারছি ১৯৯০ সালের মে মাস পর্যন্ত জরিপে তাদের কেন্দ্রের সংখ্যা ১১০টি পৌছে যা বর্তমান জরিপে ৫০০ এর বেশী পৌছাবে।



মুসলমানদেরকে মুরতাদ বানানোর জন্য তাদের পাঁচটি পৃথক সংগঠন রয়েছে।

(১) মজলিসে আনসারুল্লাহঃ-

এ সংগঠনের সদস্য কেবল মাত্র ৪০ এর উর্দ্ধে যাদের বয়স পৌছেছে তারা হয়ে থাকে। এ সংগঠন সাধারণ মুসলমান, সরকারী কর্মচারী ও শিক্ষিত লোকদের মধ্যে কাদিয়ানী ধর্মমতের প্রচার করে থাকে। এ সংগঠনের উল্লেখ যোগ্য কাজ হচ্ছে, রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে জড়িত ব্যাক্তিবর্গ ও সংবাদ পত্র সেবিকাদেরকে কাদিয়ানী ধর্মমতের দিকে আকৃষ্ট করা।

(২) মজলিসে খোদ্দামে আহমাদীয়াঃ

এ সংগঠনের সদস্য তারা হয়ে থাকে যাদের বয়স ১৫ বছরের উর্দ্ধে এবং ৪০ এর কম। এ সংগঠনের কাজ হচ্ছে যুবকদেরকে কাদিয়ানী ধর্মমতের প্রতি আকৃষ্ট করা। তারা নানা কৌশলে যুবকদেরকে কাদিয়ানী অফিসারদের মাধ্যমে চাকুরী দানের প্রলোভন এবং শিক্ষিত বেকারদেরকে বৃটেন, আমেরিকাসহ ইউরোপের দেশে প্রেরণের প্রলোভন দেখিয়ে কাদিয়ানী ধর্মমতে দীক্ষিত করার চেষ্টা চালায়। এ সাহায্য দান ও উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য বিদেশে প্রেরণের প্রলোভন দেখিয়ে কাদিয়ানী ধর্মমতে দীক্ষিত করার তৎপরতা চালিয়ে যাওয়া। এ সংগঠনের শিক্ষার্থী ছাত্রদের মধ্যে ব্যাপকহারে কাদিয়ানী পুস্তক-পুস্তিকা ও প্রচার পত্র সমূহ বিতরন করে থাকে।

(৩) মজলিসে আত্‌ফালুল আহমাদীয়াঃ

এ সংগঠনের সদস্যদের বয়সের সীমারেখা হয়েছে ১৫ বছর বা তার কম। এ সংগঠন দ্বারা কাদিয়ানী কর্ম বয়সি ছেলেরা তাদের সমবয়সী মুসলমান ছেলেদের নিকট কাদিয়ানীদের কর্তৃক রচিত শিশু সাহিত্য বন্টন করে। যেমন তারা মুসলমান কচি কাঁচাদের নিকট এসে ভাল মুসলমান হই এই জাতীয় প্রচার পত্র বিলি করে মুসলিম শিশুদের অন্ত-রে কাদিয়ানী মতবাদের প্রতি আকার্ষণ সৃষ্টি করে। বিশেষ করে শহরের তথাকথিত অভিজাত পরিবারের মুসলমানরা তাদের সন্তান সন্ততিদেরকে ইসলাম মৌলিক ও প্রাথমিক শিক্ষা দান করাটা অপ্রয়োজনীয় মনে করে থাকে। এদের ছেলেদের অন্তরে ইসলাম সম্পর্কে কোন ধারণাই থাকে না। এদের মধ্যে পূর্বোক্ত প্রচার পত্র সমূহ বিলি করে তাদের অন্তরে কাদিয়ানী ধর্মমতের বীজ বপন করা হয়। উপরোক্ত তিনটি সংগঠন পুরুষ ও কিশোরদের মধ্যে কাজ করে থাকে।



আর মহিলাদের মধ্যে কাদিয়ানী ধর্মমত প্রচারের জন্য দুটি পৃথক সংগঠন রয়েছে।
*********************************************

১। লাজনা এমাইল্লাহঃ

১৫ বছর বয়সের উর্দ্ধ বয়সী মহিলারা এ সংগঠনের সদস্যা হয়ে থাকে। এ সংগঠনের সদস্যা মহিলারা শহর, বন্দর ও গ্রামাঞ্চলে বাড়ি গিয়ে মহিলাদের মধ্যে কাদিয়ানী ধর্মমতের পুস্তকাদি বিলি করে থাকে। এবং সুযোগ পেলে কাদিয়ানী ধর্মমতের প্রতি আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে মহিলাদেরকে লোভ-লালসা ও প্রলোভন দিয়ে থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশে এ সংগঠনের ৮০/৮৫ টি কেন্দ্র কার্যরত রয়েছে।

২। ১৫ বছর বয়সের কম বয়সের কিশোরীদের মধ্যে প্রচার কার্য্য পরিচালনার জন্য নাসেরাত নামে একটি পৃথক সংগঠন রয়েছে।

এ সংগঠনের কিশোরীরা তাদের সম বয়স্কা কিশোরীদেরকে কাদিয়ানী মতবাদের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করে থাকে। সমবয়সী কিশোরীদের সাথে স্কুল কলেজে বন্ধুত্ব পেতে কাদিয়ানীদের বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানে তাদেরকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে কাদিয়ানী মতবাদকে খাঁটি ইসলাম বলে বুঝান হয়ে থাকে। এভাবে কাদিয়ানীরা সুপরিকল্পিতভাবে সমগ্র দেশে কাদিয়ানী ধর্মমতের প্রচারাভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। এমন কোন সুকৌশল নেই যা তাদের প্রচারকদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয় না। মিথ্যা বলাও মিথ্যা ধর্মালম্বীদের জন্য স্বাভাবিক ব্যাপার। তাছাড়া অর্থ লোভত আছেই। এ ছাড়াও প্রয়োজনে নারীর লোভ দেখানও তাদের পুর্বসূরী খৃষ্টানদের থেকে তারা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে। এভাবে তারা বাংলাদেশে সুপরিকল্পিতভাবে তাদের প্রচারাভিযান চালিয়ে শত-সহস্র মুসলমানকে কাফির মুরতাদ বানাচ্ছে।


আর আমরা কি করছি?


রবিউল আউয়াল মাসে সমগ্র দেশে সীরাতুন্নবী সম্মেলন ঈদে মিলাদুন্নবীর নামে লাখো লাখো টাকা ব্যয় করছি এবং নবীজী (সঃ)-এর প্রতি মহব্বত প্রদর্শনের ওয়াজ করে বেড়াচ্ছি।

সপ্তাহকাল, পক্ষকাল ব্যাপী মহা আড়ম্বরের সহিত তাফসীর মাহফিল করছি। সারা বছর ওয়াজ মাহফিল, ইসলামী সম্মেলন, মহা-সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আমরা এ সবের উপকারিতাকে অস্বীকার করছি না, কিন্ত বাতিল যেভাবে সুসংহত হয়ে নবীজীর খতমে নবুওতের রাজ সিংহাসনের উপর আক্রমণ চালাচ্ছে, আমরা তার মোকাবিলায় কি করছি? আমাদের মাদরাসা সমূহ কি নবীজির সঃ) দ্বীনের সংরক্ষণ ও প্রচারের উদ্দেশ্যে কায়েম করা হয় নাই? যতি সত্যিই দ্বীন প্রচারের উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে, তাবে নবীজির (সঃ) নবুওয়তের সার্বভৌমত্ব আজ আক্রান্ত এবং খতমে নবুওয়তের রাজ সিংহাসনে দাজ্জালের চেলারা দাজ্জাল মির্যা কাদিয়ানীকে উপবিষ্ট করার জন্য রাত্র দিন কাজ করে যাচ্ছে। আমরা তাদের মোকাবিলায় কি করছি। সরলমনা দ্বীন দরদী মুসলমানদের স্বার্থ হাসিলের অপকৌশলে লিপ্ত আছি কি না? এই বাতিলের মোকাবেলায় কিছু করাতো দূরের কথা বরং যারা কিছু করতে অগ্রসর হচ্ছে কৌশলে তাদের প্রতি অভক্তি সৃষ্টি করে পরোক্ষভাবে কাদিয়ানীদের সহযোগিতা করছি কি না?

এভাবে হাদীছে বর্ণিত উলামায়ে ছু-এর দলভুক্ত হয়ে যাচ্ছি কি না? অপরের সমালোচনার পরিবর্তে এখনও কি আমাদের আত্ম সমালোচনার সময় আসেনি? এদিকে প্রিয় নবীজী (সঃ) এর সরলমনা উম্মতরা কাদিয়ানীদের ফাঁদে পড়ে কাফির মুরতাদ হচ্ছে। রোজ হাশরের মাঠে আমরা নবীজির (সঃ) নিকট হাউজে কাউছারের পানির জন্য গেলে কি এ অবস্থায় আমাদের ভাগ্যে সে পবিত্র হিম শীতল পানি জুটবে?
ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড : কাদিয়ানী ফেৎনা এম আবদুল্লাহ ভূঁইয়া
বিষয়শ্রেণী: ধর্ম-চিন্তা

শুক্রবার, ৯ মার্চ, ২০১২

রাসূল (সাঃ) এর সাথে বিয়ের সময় আয়শা (রাঃ) র বয়স ৬ বছর ছিল এটা এক বিরাট ঐতিহাসিক ভুল তথ্য।

রাসূল (সাঃ) এর সাথে বিয়ের সময় আয়শা (রাঃ) র বয়স ৬ বছর ছিল এটা এক বিরাট ঐতিহাসিক ভুল তথ্য।




abdullah nezami
nurulgoni islamic  aqademi
 mirshari 
chittagong
 b d

 রাসুল (সাঃ) এর সম্বন্ধে বলা হয় তিনি হযরত আয়েশা (রাঃ) কে আয়েশার ৬ বছর বয়সে বিয়ে করেছিলেন। অথচ আমি অনুসন্ধান করে দেখতে পেলাম রাসূল (সাঃ) এর সাথে বিয়ের সময় হযরত আয়শা (রাঃ) র বয়স মাত্র ৬ বছর ছিল এটা মস্তবড় এক ঐতিহাসিক ভ্রান্তি।

সহীহ বুখারী, মুসলিম সহ অনেক হাদীস গ্রন্থে হযরত আয়েশা (রাঃ) র বয়স নিয়ে যে রেফারেন্স এসেছে তা হাইসাম (বা হিসাম) বিন উরওয়াহ কর্তক বর্নিত একটি হাদিসেরই উৎস এবং এটা সম্বন্ধে সংশয় প্রকাশ করবার মতো যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

তার মধ্যে প্রথম কারণ হলো হাদীসের কোন বিষয়বা রাসুল (সাঃ) এর জীনযাপন পদ্ধতি কোনভাবেই আল কোরআনের বক্তব্যের সাথে সাংঘর্ষিক হতে পারেনা। কাজেই বিবাহযোগ্য বয়সের বিষয়ে আল কোরআনের যে নির্দেশ, এই ঘটনা তার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তাহলে? উত্তর একটাই, এই হাদীসটা সঠিক নয়, সঠিক হতেই পারেনা।

যা হোক, এবারে আসি ঐতিহাসিক সত্যগুলো নিয়েঃ

রাসুল (সাঃ) এর সাথে আয়েশা (রাঃ) র বিয়ে হয় ৩য় হিজরী সনের সাওয়াল মাসে যা ইংরেজী ৬২৩-৬২৪ সাল।

যদিও বলা হয় হযরত আয়েশা (রাঃ)র জন্ম ৬১৪ খৃষ্টাব্দে কিন্তু সহীহ বুখারীতে এসেছে আল কোরআনের ৫৪ তম অধ্যায় নাজিল কালে আয়েশা (রাঃ) একজন কিশোরী (Jariyah) বয়স্কা ছিলেন। উল্লেখ্য ৫৪তম উক্ত অধ্যায় নাযিল হয় ৬১২ খৃষ্টাব্দের দিকে। সে হিসাবে হযরত আয়েশার বয়স তখন ১০ বছর হলেও ৬২৩-৬২৪ খৃষ্টাব্দ সালে তাঁর বয়স কোনভাবেই ২০ বছরের নিচে নয়।

(Sahih Bukhari, kitabu'l-tafsir, Arabic, Bab Qaulihi Bal al-sa`atu Maw`iduhum wa'l-sa`atu adha' wa amarr)

অধিকাংশ বর্ণনাকারির মতে হযরত আয়েশা (রাঃ) বদরের যুদ্ধ (৬২৪ খৃষ্টাব্দে) ও ওহুদের যুদ্ধে (৬২৫ খৃষ্টাব্দে) অংশগ্রহন করেছেন। উল্লেখ্য যে রাসুল (সাঃ) এর বাহিনীতে ১৫ বছর এর কম বয়স্ক কেউ গ্রহনযোগ্য ছিলনা এবং তাদের ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। সুতরাং সেসময় যে হযরত আয়েশার বয়স ৬ বা ৯ ছিলনা তা বলাই বাহুল্য।

A narrative regarding Ayesha's participation in the battle of `Uhud is given in Bukhari, (Kitabu'l-jihad wa'l-siyar, Arabic, Bab Ghazwi'l-nisa' wa qitalihinna ma`a'lrijal; that all boys under 15 were sent back is given in Bukhari, Kitabu'l-maghazi, Bab ghazwati'l-khandaq wa hiya'l-ahza'b, Arabic).

অধিকাংশ ইতিহাসবিদ মতে হযরত আয়েশার বোন আসমা ছিলেন তাঁর চেয়ে দশ বছরের বড়। ইতিহাস থেকে জানা যায় আসমা ৭৩ হিজরী সনে যখন মৃত্যুবরণ করেন তাঁর বয়স ছিল ১০০ বছর। সে হিসাবে ১লা হিজরীতে তাঁর বয়স হয় ২৭ বছর। তাহলে সে হিসেবে হযরত আয়েশার বয়স যে তখন ১৭ র কম ছিলনা তা বোঝা যায়। তাহলে ৬২৩-৬২৪ খৃষ্টাব্দ তাঁর বয়স ১৮/১৯ বছর।
(For Asma being 10 years older than Ayesha, see A`la'ma'l-nubala', Al-Zahabi, Vol 2, Pg 289, Arabic, Mu'assasatu'l-risalah, Beirut, 1992. Ibn Kathir confirms this fact, [Asma] was elder to her sister [Ayesha] by ten years" (Al-Bidayah wa'l-nihayah, Ibn Kathir, Vol 8, Pg 371, Arabic, Dar al-fikr al-`arabi, Al-jizah, 1933). For Asma being 100 years old, see Al-Bidayah wa'l-nihayah, Ibn Kathir, Vol 8, Pg 372, Arabic, Dar al-fikr al-`arabi, Al-jizah, 1933). Ibn Hajar al-Asqalani also has the same information: "She [Asma (ra)] lived a hundred years and died in 73 or 74 AH." Taqribu'l-tehzib, Ibn Hajar Al-Asqalani, Pg 654, Arabic, Bab fi'l-nisa', al-harfu'l-alif, Lucknow).

প্রখ্যাত ঐতিহাসিক আল তাবারী র বই থেকে পাওয়া যায় হযরত আবু বকর (রাঃ) র চার সন্তান ছিলেন যাঁরা সকলেই ইসলামপূর্ব যুগে জন্মগ্রহন করেন। (ইসলামপূর্ব যুগ ৬১০ খৃষ্টাব্দ শেষ হয়)। তাহলে নিশ্চয়ই হযরত আয়েশা (রাঃ) র জন্ম ৬১০ খৃষ্টাব্দ এর পূর্বে। সে হিসাবেও তিনি বিবাহের সময় ৬/৯ বছর বয়স্কা ছিলেন না।

Tarikhu'l-umam wa'l-mamlu'k, Al-Tabari, Vol 4, Pg 50, Arabic, Dara'l-fikr, Beirut, 1979).

আরেক প্রখ্যাত ঐতিহাসিক ইবনে হাইসাম থেকে জানা যায় হযরত আয়েশা (রাঃ) হযরত উমর ইবন আল খাত্তাব (রাঃ) এর বেশ আগে ইসলাম গ্রহন করেন। (উমর ইবন আল খাত্তাব (রাঃ) ৬১৬ খৃষ্টাব্দে ইসলাম গ্রহন করেন)। আবার হযরত আবু বকর (রাঃ) ইসলাম গ্রহন করেন ৬১০ খৃষ্টাব্দে। সুতরাং হযরত আয়েশা (রাঃ) ও ৬১০ এর কাছাকাছি সময়েই ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন। তার অর্থ আবারো দাঁড়ায় যে তিনি ৬১০ খৃষ্টাব্দের আগেই জন্মগ্রহন করেছিলেন এবং কোন ধর্ম গ্রহন করবার নূন্যতম বয়স (৬/৭ হলেও) তাঁর ছিল। তাহলে ৬২৩-৬২৪ সালে তার বয়স প্রায় ১৮-২০ হয়।
(Al-Sirah al-Nabawiyyah, Ibn Hisham, vol 1, Pg 227 – 234 and 295, Arabic, Maktabah al-Riyadh al-hadithah, Al-Riyadh)

হাম্বলি মাযহাবের ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল তাঁর মুসনাদ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন বিবি খাদিযাহ (রাঃ) র মৃত্যুর পরে (৬২০ খৃষ্টাব্দ) হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জন্য খাউলাহ নামের একজন ২টা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসেন। যার মধ্যে হযরত আয়েশার (রাঃ) র কথা উল্লেখ করবার সময় একজন পূর্ণবয়স্ক যুবতী হিসেবেই উল্লেখ করেন কোন ছোট্ট শিশু হিসেবে নয়।

(Musnad, Ahmad ibn Hanbal, Vol 6, Pg 210, Arabic, Dar Ihya al-turath al-`arabi, Beirut).

আবার ইবনে হাযর আল আসকালানি র মতে হযরত ফাতেমা (রাঃ) আয়েশা (রাঃ) র থেকে ৫ বছর বড় ছিলেন। আর ফাতেম (রাঃ) র জন্মের সময় রাসুল (সাঃ) এর বয়স ছিল ৩৫ বছর। সে হিসেবে আয়েষা (রাঃ) র জন্মের সময় মুহাম্মদ (সাঃ) এর বয়স ৪০ হবার কথা। আর তাঁদের বিয়ের সময় আয়েশা (রাঃ) ৬/৯ না বরং ১৪-১৫ বছর বয়স হবার কথা।

(Al-isabah fi tamyizi'l-sahabah, Ibn Hajar al-Asqalani, Vol 4, Pg 377, Arabic, Maktabatu'l-Riyadh al-haditha, al-Riyadh,1978)

ওপরের আলোচনার মূল বিষয়বস্তু হলো হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সাথে বিয়ের সময় যে ৬/৯ বছরের শিশু ছিলেননা সেটাই দেখানো। আর কোন হাদীস যদি আল কোরআনের নির্দেশনার সাথে অসামন্জস্যপূর্ণ হয় তাহলে নিশ্চিতভাবেই সেই হাদীসের ওপর ভরসা রাখা যুক্তিযুক্ত না। তা সে বুখারী মুসলিম বা সমস্ত সিহাহ সিত্তাহতেই থাকুকনা কেন। আর এই বৈপরিত্য ধরবার জন্য নিজেদের বিবেককেও ব্যাবহার করা উচিত সকল মুসলমানের।

খোদ আল কোরআনেও যেখানে বিবাহ যোগ্য বয়সের বিষয়ে প্রাপ্তবয়সকে ইঙ্গিত করা হয়েছে সেখানে মহানবী (সাঃ) নিজে কিভাবে তার বিপরীতে যেতে পারেন?

হয়ত আমার ভুল হতে পারে কিন্তু দয়া করে যুক্তি সংগত বিপরীত প্রমান উপস্থাপন না করে অযথা এই বিষয়ে কেউ কটু কথা বলবেন না।