Translate

মঙ্গলবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

মিরসরাই পাইলট হাই স্কুল মাঠে ইসলামী মহা সন্মেলন ৬ইমার্চ ২০১৩ ,সফলতা কামনা করছি

আসছে আগামী ৬ইমার্চ ২০১৩ ইং চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বার মিরসরাই পাইলট হাই স্কুল মাঠ প্রাঙ্গনে , মিরসরাই তাফসীর কমিটির উদ্দ্যোগে অনুষ্ঠিত ইসলামী মহা সন্মেলনের সফলতা কামনা করছি ৷

জাতির এ মহা ক্লান্তি লগ্নে এরকম মহা সন্মেলন যেন আমাদের দেশ ও জাতির হেদায়েতের উছিলা হয় এটাই আল্লাহর দরবারে কামনা করছি ৷

উল্লেখ্য মিরসরাই পাইলট হাই স্কুল মাঠ সহ মিরসরাইর বারৈয়ার হাই , আবুরহাট , বডতাকিয়া , শান্তিরহাট ,ভরদ্বাজ হাট ,সহ অন্যান্য স্হানে "' মিরসরাই ইসলাম প্রচার সংস্হার ঊদ্দ্যোগে ও আমরা অনেক ইসলামি সন্মেলনের আয়োজন করেছিলাম , এখনও হচ্ছে ৷ এতে সাধারন মানুষের মধ্যে ও একটা ইমানী চেতনা জাগ্রত হয়, যেটা এক জন তাওহিদী জনতার রুহের খোরাক ও বটে ৷

উল্লেখ্য সারা বাংলাদেশে যে পরিমান ইসলমী সন্মেলন সভা সেমিনার হয়ে থাকে সত্যিই এটা প্রশংসার দাবী রাখে ৷ ইসলমী সন্মেলন সভা সেমিনার ও ইসলামী সেম্পুজিয়ামের আয়োজনের দিক থেকে বিশ্বের ২য় স্হানে, ১ম স্হানেই রয়েছে ইন্দোনিশিয়া ৷

১২১ জন ব্লগারদের লেখা '' স্বপ্ন দিয়ে বোনা '' বইটি পাওয়া যাবে


১২১ জন ব্লগারদের লেখা নিয়ে
''স্বপ্ন দিয়ে বোনা ''
বইটি মিরসরাই, ফেনী ,সিতাকুন্ড, ছাগলনাইয়া ও নোয়া খালী, সোনাগাজীর ব্লগার গন , বা সাধারন পাঠকরা উপরোক্ত ঠিকানায় যোগাযোগ করতে পারেন , আপনার পছন্দের কপিটি এখনই সংগ্রহ করুন

মাওঃ মাহমুদুর রহমান

সিনিয়র শিক্ষক আবুর হাট মনিরুল ইসলাম মাদ্রাসা

পোঃ আবুর হাট , থানা মিরসরাই , চট্টগ্রাম

mob ; 01818209544

email:- mahmudbinnur64@gmail.com

সোমবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

আবুর হাট মনিরুল ইসলাম মাদ্রাসা মিরসরাই ইসলামী মহাসন্মেলন 2013

আসছে আগামী 5ই মার্চ ২০১৩ ইং চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বার মিরসরাইর উম্মুল মাদারিস্   ,আবুর হাট মনিরুল ইসলাম   উদ্দ্যোগে অনুষ্ঠিত ১০৬তম বাৎসরীক  ইসলামী মহা সন্মেলনের সফলতা কামনা করছি ৷
জাতির এ মহা ক্লান্তি লগ্নে এরকম মহা সন্মেলন যেন আমাদের দেশ ও জাতি সহ প্রতিষ্ঠানের শুভাকাঙ্খিদের  হেদায়েতের উছিলা হয় এটাই আল্লাহর দরবারে কামনা করছি ৷
 এতে সাধারন মানুষের মধ্যে যেমন একটা ইমানী চেতনা জাগ্রত হয়, তেমনি মাদ্রাসার সাবিক আবস্হা অবলোকন করার সুযোগ হয় , যেটা এক জন তাওহিদী জনতার রুহের খোরাক ও বটে ৷

অত্র প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম মাওঃ এলাহী বখশ ছাঃ রঃ এর সূযোগ্য সন্তান ওস্তাদুল আছাতেজা  মাওঃ নুরুল হুদা ছাঃ মাঃ জিঃ এর অক্লান্ত পরিশ্রমে  অত্র মাদ্রাসা  দিন দিন শিক্ষা দিক্ষায় উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছন , মিরসরাইতে  জমাতে উলা পযন্ত { বি এ }এটাই প্রথম  কওমী মাদ্রাসা  ৷ যদিও পরবতিতে অন্যান্য  প্রতিষ্ঠানে ও  চালু হয় ৷ আমি ব্যক্তিগত ভাবে অত্র প্রতিষ্ঠানের অতি নগন্য ছাত্র হিসাবে অত্র প্রতিষ্ঠানের সাবিক মঙ্গল কামনা করছি ৷
  উল্লেখ্য সারা বাংলাদেশে যে পরিমান ইসলামী সন্মেলন সভা সেমিনার হয়ে থাকে সত্যিই এটা প্রশংসার দাবী রাখে ৷ ইসলামী সন্মেলন সভা সেমিনার ও ইসলামী সেম্পুজিয়ামের আয়োজনের দিক থেকে  বাংলাদেশ বিশ্বের ২য় স্হানে, ১ম স্হানেই রয়েছে ইন্দোনিশিয়া ৷ 







১২১ জন ব্লগারদের লেখা নিয়ে
''স্বপ্ন দিয়ে বোনা ''
বইটি মিরসরাই, ফেনী ,সিতাকুন্ড, ছাগলনাইয়া ও নোয়া খালী, সোনাগাজীর ব্লগার গন , বা সাধারন পাঠকরা উপরোক্ত ঠিকানায় যোগাযোগ করতে পারেন , আপনার পছন্দের কপিটি এখনই সংগ্রহ করুন

মাওঃ মাহমুদুর রহমান

সিনিয়র শিক্ষক আবুর হাট মনিরুল ইসলাম মাদ্রাসা

পোঃ আবুর হাট , থানা মিরসরাই , চট্টগ্রাম

mob ; 01818209544

email:- mahmudbinnur64@gmail.com



চট্টগ্রাম নামের উৎস ৪৮টি

চট্টগ্রাম নামের উৎস
বৈচিত্রময়ী চট্টগ্রামের নামও বৈচিত্রে ভরা। খ্রিষ্টীয় দশক শতকের আগে চট্টগ্রাম নামের অস্তিত্ব ছিল না। অর্থাৎ চট্টগ্রাম নামের কোন উৎসের সন্ধান পাওয়া যায় না। তাই দেখা যায় যে, সুপ্রাচীনকাল থেকে এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন পরিব্রাজক, ভৌগোলিক এবং পন্ডিতগণের লিখিত বিবরণে, অঙ্কিত মানচিত্রে, এখানকার শাসক গৌড়ের সুলতান ও রাজাদের মুদ্রায় চট্টগ্রামকে বহু নামে খ্যাত করেছিলেন। এ পর্যন্ত চট্টগ্রামের ৪৮টি নাম পাওয়া গেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‌‌-সুহ্মদেশ, ক্লীং, রম্যভূমি, চাতগাঁও, চট্টল, চৈত্যগ্রাম, সপ্তগ্রাম, চট্টলা, চক্রশালা, শ্রীচট্টল, চাটিগাঁ, পুস্পপুর, চিতাগঞ্জ, চাটিগ্রাম ইত্যাদি।[৫] কিন্তু কোন নামের সঙ্গে পাঁচজন একমত হন না। সে সব নাম থেকে চট্টগ্রামের নাম উৎপত্তির সম্ভাব্য ও চট্টগ্রামের নামের সঙ্গে ধ্বনিমিলযুক্ত তেরটি নামের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরা হলো।[৬]
  • চৈত্যগ্রাম: চট্টগ্রামের বাঙালি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অভিমত এই যে, প্রাচীনকালে এখানে অসংখ্য বৌদ্ধ চৈত্য অবস্থিত ছিল বলে এ স্থানের নাম হয় চৈত্যগ্রাম। চৈত্য অর্থ বৌদ্ধমন্দির কেয়াং বা বিহার। এই চৈত্যের সঙ্গে গ্রাম শব্দ যুক্ত হয় বলে চৈত্যগ্রাম নামের উদ্ভব হয়। পরবর্তীকালে চৈত্যগ্রাম নাম বিবর্তিত হয়ে চট্টগ্রাম রূপ প্রাপ্ত হয়।
  • চতুঃগ্রাম: ব্রিটিশ আমলের গেজেটিয়ার লেখক ও'মলি সাহেবের মতে, সংস্কৃত চতুঃগ্রাম শব্দ থেকে চট্টগ্রাম নামের উৎপত্তি। চতুঃ অর্থ চার। চতুঃ শব্দের সঙ্গে গ্রাম শব্দ যুক্ত হয়ে চতুঃগ্রাম হয়। চতুঃগ্রাম বিবর্তিত হয়ে চট্টগ্রাম রূপ প্রাপ্ত হয়।
  • চট্টল: চট্টগ্রামের তান্ত্রিক ও পৌরাণিক নাম ছিল চট্টল। হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন তন্ত্র ও পুরাণগ্রন্থে চট্টল নামের উল্লেখ দেখা যায়।
দেবী পুরাণ চন্ডিকা খন্ডেঃ
বিন্ধ্য পর্বতমারভ্য বিন্ধ্যাচলাবধি প্রিয়ে,
অশ্বাক্রান্তেতি বিখ্যাতং বিষ্ণুলোকেষু দুর্লভং,
বিন্দু পর্বত মারভ্য যাবৎ চট্টল বাসিনী,
চুড়ামণি তন্ত্রেঃ
চট্টলে দক্ষ বাহুর্যে ভৈরবচন্দ্র শেখরঃ,
ব্যক্ত রূপা ভগবতী ভবানীতন্ত্র দেবতা।
বারাহী তন্ত্রেঃ
চট্টলে দক্ষিণোবাহু ভৈরবচন্দ্র শেখরঃ,
সস্যৈব কতিদেশস্থো বিরূপাক্ষ মহেশ্বর।
কলৌস্থানঞ্চ সর্ব্বোষাৎ দেষানাৎ চট্টল শুভে।
যোগিনী তন্ত্রেঃ
সাদ্ধ ত্রিকোটি দেবানাৎ বসতিশ্চৎ চট্টল শুভে।
ত্রিপুরার রাজমালাঃ
গ্রন্থকারের মতে প্রাচীনকালে এখানে চট্টভট্ট নামক কুলীন ব্রাহ্মণ জাতির নিবাস ছিল বলে এই স্থানের নামকরণ হয়েছিল চট্টল।
  • শ্যাৎগাঙ্গ: বার্ণোলী সাহেবের মতে আরবি শ্যাৎগাঙ্গ শব্দ বিবর্তিত হয়ে চট্টগ্রাম নামের উদ্ভব হয়েছে। শ্যাৎ অর্থ বদ্বীপ, গাঙ্গ অর্থ গঙ্গানদী। চট্টগ্রাম গঙ্গানদীর মোহনাস্থিত বদ্বীপ- প্রাচীন আরব বণিক-নাবিকদের এই ধারণা থেকে এর নামকরণ করা হয়েছিল শ্যাৎগাঙ্গ। পরবর্তীকালে শ্যাৎগাঙ্গ নাম বিবর্তিত হয়ে চট্টগ্রাম নামের উৎপত্তি।
  • চিৎ-তৌৎ-গৌং: খ্রিষ্টীয় দশম শতকের মধ্যবর্তীকাল অবধি ফেনী নদীর দক্ষিণ তীর থেকে নাফ নদীর উত্তর তীরের মধ্যবর্তী ভূভাগটির চট্টগ্রাম নাম প্রচলিত ছিল না। তখন এই ভূরাজ্যটি আরাকানরাজ্যভূক্ত ছিল। তৎকালীন আরাকানরাজ সুলতইং চন্দ্র ৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে নিজ অধিকৃত রাজ্যাংশের উক্ত ভূভাগের বিদ্রোহী 'সুরতন'কে ( সুলতানকে ) দমন করতে এসে সসৈন্য আধুনিক সীতাকুন্ড থানার কুমিরার কাউনিয়া ছড়ার দক্ষিণ তীর অবধি অগ্রসর হন এবং সেখানে একটি পাথরের বিজয়স্তম্ভ নির্মাণ করে তাতে চিৎ-তৌৎ-গৌং (যুদ্ধ করা অনুচিত) বাণী উৎকীর্ণ করে স্বদেশে ফিরে যান। তখন থেকে এই ভূভাগটি চিৎ-তৌৎ-গৌং নামে খ্যাত হয়। আরাকানের প্রাচীন রাজাদের ইতিহাস রাজোয়াং সূত্রে এ তথ্য জানা যায়। কালক্রমে চিৎ-তৌৎ-গৌং নাম বিবর্তিত হয়ে চট্টগ্রাম নামের উদ্ভব হয়।
  • চাটিগ্রাম: সম্ভবত রাজোয়াং বর্ণিত উপরোক্ত চিৎ-তৌৎ-গৌং নামটি মধ্যযুগে বিবর্তিত ও সংস্কৃতায়িত হয়ে চাটিগ্রাম রূপ প্রাপ্ত হয়। গৌড়ের রাজা গণেশ দনুজমর্দন দেবের ১৩৩৯-১৩৪০ শকাব্দে ও রাজা মহেন্দ্র দেবের ১৩৪০ শকাব্দে চট্টগ্রামে তৈরি মুদ্রায় টাকশালের নাম চাটিগ্রাম উল্লেখ দেখা যায়। বাংলার সুলতান সৈয়দ আলাউদ্দিন হোসেন শাহ্‌ ( ১৪৯৩-১৫১৯ খ্রি. ) ও সৈয়দ নাসির উদ্দিন নশরত শাহ্‌র আমলে (১৫১৯-১৫৩২ খ্রি.) কবীন্দ্র পরমেশ্বর বিরচিত পরাগলী মহাভারতে এবং বৈষ্ণব সাহিত্য চৈতন্য-ভাগবত প্রভৃতিতে চাটিগ্রাম নামের উল্লেখ রয়েছে।
  • চাটিগাঁ: চট্টগ্রামের মুসলমানদের মধ্যে প্রচলিত জনশ্রুতি থেকে জানা যায় যে, প্রাচীনকালে চট্টগ্রাম ছিল জ্বীনপরী অধ্যুষিত দেশ। পীর বদর শাহ্‌ এখানে আগমন করে অলৌকিক চাটির (মৃৎ-প্রদীপ) আলোর তেজের সাহায্যে জ্বীনপরী বিতাড়িত করার ফলে এই স্থানের নাম হয় চাটিগাঁ।
  • চতকাঁও/চাটগাঁও: চাটিগাঁর ফারসি রূপ চতকাঁও বা চাটগাঁও। বাংলার সুলতান গিয়াসুদ্দিন আজম শাহ্‌র (১৩৮৯-১৪০৯ খ্রি.) ও সুলতান জালালুদ্দিন মোহাম্মদ শাহ্‌র (১৪১৮-১৪৩২ খ্রি.) মুদ্রায় চতকাঁও টাকশালের নাম উৎকীর্ণ দেখা যায়। ১৩৯৭ খ্রিস্টাব্দে লিখিত সুবিখ্যাত সুফি সাধক মুজাফফর শামস বলখির চিঠিতে চাটগাঁও নামের উল্লেখ দেখা যায়।
  • সুদকাওয়ান: আফ্রিকা মহাদেশের অন্তর্গত মরক্কোর অধিবাসী ইবনে বতুতা ১৩৪৬ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে বঙ্গ ও আসাম পরিভ্রমণ করেন। তিনি তাঁর ভ্রমণকাহিনীতে চট্টগ্রামকে সুদকাওয়ান নামে উল্লেখ করেন।
  • চাটিকিয়াং: চীন দেশ থেকে ১৪০৯, ১৪১২, ১৪১৫, ১৪২২ বা ১৪২৩, ১৪২৯ ও ১৪৩২ খ্রিস্টাব্দে মোট সাতবার বাংলার সুলতানদের দরবারে রাজদূত প্রেরিত হয়েছিল। তাদের লিখিত বিবরণে চট্টগ্রামকে চাটিকিয়াং রূপে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
  • শাতজাম: তুর্কি সুলতান সোলায়মানের রেডফ্লিটের ক্যাপ্টেন সিদি আলী চেহেলভি ১৫৫৪ খ্রিস্টাব্দে জাহাজযোগে ভারত মহাসাগরীয় দেশসমূহ পরিভ্রমণ করেন। এবং এ সময় তিনি আরাকান থেকে চট্টগ্রামের সমুদ্র উপকূল হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আগমন করেন। তাঁর ভ্রমণকাহিনীতে চট্টগ্রামের নাম শাতজাম নামে লিপিবদ্ধ হয়েছে।
  • চার্টিগান: পরিব্রাজক রালফ ফিচ ১৫৫০ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম পরিভ্রমণ করেন। তাঁর লিখিত ভ্রমণকাহিনীতে চট্টগ্রামের নাম চার্টিগান রূপে লিপিবদ্ধ হয়েছে।
  • জেটিগা: ১৬৬০ খ্রিস্টাব্দে ফ্যান্ডেন ব্রুক অঙ্কিত মানচিত্রে চট্টগ্রামের নাম জেটিগা রূপে লিখিত 
http://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%9A%E0%A6%9F%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A6%97%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A7%87%E0%A6%B0_%E0%A6%87%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B8 



 

কওমী মাদ্রাসার সিলেবাস ও কিছু প্রাসঙ্গিক ভাবনা

কওমী মাদরাসা পাঠ্যক্রম’ এর জন্য আর্কাইভ; ক্যাটাগরি

কওমী মাদরাসা সিলেবাস : প্রাসঙ্গিক ভাবনা


মাওলানা কাজী ফজলুল করিম
ভূমিকা : ইদানীং কওমী মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থার নেসাব তথা পাঠ্যক্রম বা সিলেবাস সম্পর্কে পরিমার্জন ও পরিবর্ধনের আওয়াজ বিভিন্ন দিক থেকে বিভিন্নভাবে বার বার ধ্বনিত হচ্ছে। যেসব লোক এই সমস্ত দ্বীনি মাদরাসাসমূহের নিয়মনীতির সাথে সরাসরি জড়িত নন এবং যাঁদের এ শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে কোনো বাস্তব অভিজ্ঞতা নেই, তাদের পক্ষ থেকেও এহেন অনধিকারচর্চামূলক বক্তব্য দিতে দেখা যাচ্ছে। বিষয়টি এতই জোড়েশোরে আলোচিত হচ্ছে যে, এ ক্ষেত্রে অনেক কওমীপড়ুয়া নবীন আলেমগণও এই শিক্ষাব্যবস্থার ইতিহাস-ঐতিহ্য, বিশেষত্ব, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও যৌক্তিকতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ উদাসীন হয়ে তাদের সুরে সুর মিলিয়ে সিলেবাসে পরিবর্তন ও পরিমার্জনের আওয়াজ তুলে ধরছেন। এই নাজুক পরিস্থিতিতে কওমী মাদরাসার সিলেবাসের ইতিহাস-ঐতিহ্য, বিশেষত্ব, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও যৌক্তিকতা সম্পর্কে মৌলিক চিন্তা-ফিকিরের প্রয়োজন পূর্বের যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি বলে অনুভূত হচ্ছে। কওমী মাদরাসা সিলেবাসের ইতিহাস-ঐতিহ্য : কওমী মাদরাসায় প্রচলিত সিলেবাস বা পাঠ্যক্রমের গোড়াপত্তনকারী মোল্লা নেযামুদ্দীন সাহালবী (রহ.)। তিনি ১০৮৮/৮৯ হিজরী মোতাবেক ১৬৭৭/৭৮ ঈসাব্দে ভারতের উত্তর প্রদেশের সাহালী শহরে জন্মগ্রহণ করেন। মোল্লা নেযামুদ্দীন সাহালবী স্বীয় পিতা মোল্লা কুতুবুদ্দীন শহীদ (রহ.)-এর নিকট প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। ১১০৩ হিজরী মোতাবেক ১৬৯১ ঈসাব্দে সাহালী শহরের দুষ্কৃতিকারীরা মোল্লা কুতুবুদ্দীনকে শহীদ করে তাঁর গ্রন্থাগার ও সমূদয় সম্পদসহ বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেয়। তখন মোল্লা নেযামুদ্দীন (রহ.)-এর বয়স ছিল ১৩ কিংবা ১৪। কৈশোরের এই বয়সে তিনি চলে যান লাক্ষেœৗ। অনেক কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করে ২৪ বছর বয়সে শিক্ষা সমাপ্ত করেন এবং ৪০ বছর বয়সে শাহ আব্দুর রাযযাক (রহ.) (মৃত্যু-১১৩৬ হিজরী/১৭২৩ ঈসাব্দ)-এর নিকট কাদেরীয়া তরীকায় বায়’আত হন। তিনি ৭৫ বছর বয়সে ৯ জুমাদাল উলা, বুধবার ১১৬১ হিজরী মোতাবেক ১৭৪৮ ঈসাব্দে ইন্তেকাল করেন। (সূত্র : ইসলামী বিশ্বকোষ, চতুর্দশ খ-, পৃষ্ঠা-১১৭) উপমহাদেশের মুসলমানদের জন্য তাঁর সবচেয়ে বড় অবদান হলো, তিনি ইলমে দ্বীনের বিভিন্ন বিষয়ে ইলম অর্জনপূর্বক গুরুত্বপূর্ণ কিতাবগুলো এমন পর্যায়ক্রমিকভাবে বিন্যস্ত করেন, যার ফলে উপমহাদেশে ইসলামী শিক্ষা পদ্ধতি একটি পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করে। এই কারণে আজো এই পদ্ধতিকে ‘দরসে নেযামী’ নামে আখ্যায়িত করা হয়। মোল্লা নেযামুদ্দীন সাহালবী (রহ.) কর্তৃক প্রবর্তিত ‘দরসে নেযামী’ সিলেবাস ষোলো কলায় পূর্ণতা পায় শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলবী (রহ.) (জন্ম : ১৭০৩ ঈসাব্দ, মৃত্যু : ১৭৬৫ ঈসাব্দ)-এর তত্ত্বাবধানে। দরসে নেযামী সিলেবাসের শেষ বর্ষকে দাওরায়ে হাদীসের বর্ষ নাম দিয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয় সিহাহ সিত্তাহসহ মুয়াত্তা মালেক, মুয়াত্তা মুহাম্মাদ ও তহাবী শরীফ। কালের বিবর্তনে ১৮৬৬ ঈসাব্দের ৩০ মে মোতাবেক ১৫ মুহাররম ১২৮৩ হিজরী ভারতের উত্তর প্রদেশে হযরত মাওলানা কাসেম নানুতবী (রহ.) (জন্ম : ১৮৩২ ঈসাব্দ, মৃত্যু : ১৮৮০ ঈসাব্দ) প্রতিষ্ঠা করেন দারুল উলুম দেওবন্দ। তখন এই দারুল উলুম দেওবন্দে যে সিলেবাস বা পাঠ্যক্রম গ্রহণ করা হয় তা ছিল ওই মোল্লা নেযামুদ্দীন সাহালবী (রহ.)-এর ‘দরসে নেযামী’ যা শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলবী (রহ.) কর্তৃক পূর্ণাঙ্গতা পেয়েছিল। দারুল উলুম দেওবন্দের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা কাসেম নানুতবী (রহ.) দেওবন্দ মাদরাসায় উক্ত দরসে নেযামী সিলেবাসকে আরো সুসংহত ও যুগোপযোগী করার প্রয়াস পান। তিনি হিজরী ত্রয়োদশ শতক অর্থাৎ খ্রিষ্টীয় ্ঊনবিংশ শতাব্দীতে দিল্লি, লাক্ষেèৗ ও খায়রাবাদে যে তিন ধরনের ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র গড়ে উঠেছিল সেগুলোর মাঝে সমন্বয় সাধন করেন। দিল্লি কেন্দ্রের তাফসীর ও হাদীস চর্চা, লাক্ষেèৗয়ের ফিকহ চর্চা এবং খায়রাবাদের কালাম ও দর্শন চর্চার সমন্বিত পাঠ্যক্রম দারুল উলুম দেওবন্দে প্রবর্তন করা হয়। দারুল উলুম দেওবন্দে প্রবর্তিত পাঠ্যক্রমই বর্তমানে বাংলাদেশের কওমী মাদরাসাসমূহে নেসাব বা সিলেবাস হিসেবে বিদ্যমান। (সূত্র : ইসলামী বিশ্বকোষ, ত্রয়োদশ খ-, পৃষ্ঠা-৫৫৩) কওমী মাদরাসা সিলেবাসের বিশেষত্ব : মোল্লা নেযামুদ্দীন সাহালবী (রহ.) প্রবর্তিত দরসে নেযামী সিলেবাসের বিশেষত্ব নি¤œরূপ : (এক) তিনি এই সিলেবাস প্রণয়নে সংক্ষিপ্তকরণ নীতির প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখেন। (দুই) প্রতিটি বিষয়ের জন্য একাধিক কিতাব নির্বাচন করেন। (তিন) কিছু কিছু বিষয়ে নির্দিষ্ট কিতাবের বাছাইকৃত অংশ সিলেবাসভুক্ত করেন। (চার) শিক্ষার্থীরা যেন অধ্যয়ন কালে গভীর ভাবে চিন্তা-গবেষণা করার প্রশিক্ষণ পায় সেজন্য প্রতিটি বিষয়ের একটি করে জটিল কিতাব সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত করেন। (পাঁচ) শিক্ষার্থীরা যেন প্রতিটি বিষয়ের বিষয়বস্তু সহজেই আয়ত্ত করতে সক্ষম হয়, সেই দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিটি বিষয়ের একটি করে সহজবোধ্য কিতাবও সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করেন। (ছয়) সিলেবাস এমনভাবে সাজানো হয়, যাতে করে একজন শিক্ষার্থী প্রতিটি বিষয়কে সংক্ষিপ্তভাবেও পেশ করতে সক্ষম হয়, আবার ওই বিষয়কেই বিস্তারিতভাবেও তুলে ধরতে সক্ষম হয়। উদাহরণস্বরূপ হেদায়াতুন্নাহু, কাফিয়া ও শরহেজামী কিতাবের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে। যথাক্রমে প্রথম কিতাবটি বিস্তারিত, দ্বিতীয় কিতাবটি সংক্ষিপ্ত, তৃতীয় কিতাবটি আবার গবেষণামূলক বিস্তারিত। (সাত) শিক্ষার্থীদের চিন্তার ভারসাম্য যেন ঠিক থাকে এবং কোনো একটি মতের দিকে যেন অন্ধভাবে ঝুঁকে না পড়ে সেজন্য দর্শন শাস্ত্রকেও সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। (আট) সিলেবাস এমনভাবে সাজানো হয়, যাতে একজন শিক্ষার্থী এই পাঠ্যক্রম সমাপ্ত করে অন্য কিতাবাদি যত কঠিনই হোক না কেন, তা যেন বুঝতে সক্ষম হয়। (নয়) পাঠ্যক্রমে সকল দ্বীনি বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যাতে করে মধ্যম ধরনের মেধাসম্পন্ন শিক্ষার্থীরাও ষোল-সতের বছর বয়সে শিক্ষা সমাপ্ত করতে পারে। (দশ) এমন সব কিতাবের সমন্বয় ঘটানো হয়েছে, যাতে করে আপন পক্ষের সমর্থনের মনোভাবের চেয়ে চিন্তাশক্তি প্রখর হয়। (এগার) এই পাঠ্যক্রমের মাধ্যমে এমন সব আলেম তৈরি হবে, যারা মুসলমানদের ধর্মীয় ব্যাপারে যে কোনো আক্রমণকে কুরআন ও হাদীসের পাশাপাশি যুক্তি ও চিন্তার সাহায্যে প্রতিহত করতে সক্ষম হবে। (বারো) এই পাঠ্যক্রম এমনভাবে সাজানো হয়, যাতে করে মুতাকাদ্দিমীন (প্রাচীন) আলেমদের সাথে বর্তমান কালের আলেমদের চিন্তা ও গবেষণার সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে না যায়। (সূত্র :ইসলামী বিশ্বকোষ, চতুর্দশ খ-, পৃষ্ঠা-১১৯) বর্তমানে কওমী মাদরাসাগুলোতে নিন্মোক্ত বিষয়সমূহ পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে : (১)আল-কুরআন (২) তাজবীদ-কুরআন পঠননীতি (৩) ইলমুল ক্বিরাআত-কুরআনের উচ্চারণনীতি (৪)তাফসীর-কুরআনের ব্যাখ্যা (৫) উসূলে তাফসীর-কুরআন ব্যাখ্যার নীতিমালা (৬) উলূমুল কুরআন- কুরআনের শাস্ত্রীয় জ্ঞান (৭) আল-হাদীস (৮) উসূলে হাদীস-হাদীস ব্যাখ্যার নীতিমালা (৯) উলূমুল হাদীস-হাদীসের শাস্ত্রীয় জ্ঞান (১০) ফিক্বহ-ইসলামী আইন (১১) উসূলে ফিক্বহ-ইসলামী আইনের নীতিমালা (১২) উলূমুল ফিক্বহ-ইসলামী আইনের শাস্ত্রীয় জ্ঞান(১৩)ফিক্বহে মুক্বারান-তুলনামূলক ইসলামী আইন (১৪) ইলমুল ফারায়েয-উত্তারাধিকার সম্পদ বণ্টন আইন (১৫) ইলমুল আক্বাইদ – ঈমানবিষয়ক জ্ঞান (১৬) মানতিক- যুক্তিবিদ্যা (১৭) ফালসাফা- দর্শনশাস্ত্র (১৮) আরবী ভাষা ও সাহিত্য (১৯) উর্দু (২০) বালাগাত- শব্দালংকার (২১) ফাসাহাত- বাক্যালংকার (২২) ইলমে মা’আনী-শব্দ তত্ত্ব (২৩) ইলমে বয়ান- বাক্য তত্ত্ব (২৪) ইলমে বাদী- বাচনিক তত্ত্ব (২৫) ইলমে নাহু-বাক্য প্রকরণ (২৬) ইলমে সরফ- শব্দ প্রকরণ (২৭) ইলমে লুগাহ- শব্দ কোষ (২৮) ইলমে তারিখ-ইতিহাস (৩০) সীরাত- রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর জীবনী। এ ছাড়া প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের বাংলা, অংক, ইংরেজি, সমাজ, বিজ্ঞান ও ফার্সি শিক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন মাদরাসায় কারিগরি প্রশিক্ষণ, আধুনিক প্রযুক্তি তথা কম্পিউটার প্রশিক্ষণকেন্দ্র রয়েছে। কওমী মাদরাসা সিলেবাসের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য : কওমী মাদরাসা সিলেবাসের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য মৌলিক অর্থে দারুল উলূম দেওবন্দের ৪টি বুনিয়াদ তথা বুনিয়াদে আরবাআ’র মাঝে প্রতিফলিত হয়েছে। দারুল উলূম দেওবন্দের ৪টি মৌলিক ভিত্তির প্রথমটি হলো : তাওহীদে খালিস (বিশুদ্ধ একত্ববাদ)। তাই, কওমী মাদরাসা সিলেবাসের মৌলিক একটি উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীদেরকে খাঁটি একত্ববাদে দীক্ষিত করা। তাওহীদকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থায় এখানকার শিক্ষার্থীরা তাওহীদের শিক্ষা বুকে ধারণ করে ছড়িয়ে পড়বে বিশ্বময়। দারুল উলূম দেওবন্দের দ্বিতীয় মৌলিক ভিত্তি হলো : ইত্তিবায়ে সুন্নাত (সুন্নাতের অনুসরন)। তাই, কওমী মাদরাসা সিলেবাসের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীরা যেন ইলম অর্জনের সাথে সাথে সুন্নাতে নববীরও অনুসারী হয়। দারুল উলূম দেওবন্দের তৃতীয় মৌলিক ভিত্তি হলো : তায়াল্লুক মা’আল্লাহ (আল্লাহর সাথে গভীর সম্পর্ক)। তাই কওমী মাদরাসার সিলেবাসে একজন শিক্ষার্থী জ্ঞান অর্জন করার পর কেবল মাত্র তখনই পূর্ণ যোগ্যতাসম্পন্ন আলেম হতে পারবে, যখন ওই শিক্ষার্থী ইলম অর্জনের পর কোনো আহলুল্লাহ তথা কোনো আল্লাহ ওয়ালার সোহবতে (সান্নিধ্যে) থেকে ইলমে তাসাউফের গভীর সাগরে ডুব দিয়ে আল্লাহর সাথে গভীর সম্পর্ক স্থাপনে সক্ষম হবে। দারুল উলূম দেওবন্দের চতুর্থ মৌলিক ভিত্তি হলো : ই’লায়ে কালিমাতুল্লাহ (আল্লাহর বিধান সুউচ্চকরণ)। তাই, এই সিলেবাসের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হলো, একজন শিক্ষার্থী তার ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নে নিজের জানমাল ও সময় কুরবান করে জান্নাতে আল্লাহর দীদার লাভে ধন্য হবে। বিজ্ঞানী, গণিতবিদ কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হওয়া উদ্দেশ্য নয় : আমাদের অনেক হিতাকাক্সক্ষী ভাইদের পক্ষ থেকে অনেক সময় এ ধরনের প্রস্তাব আসতে থাকে যে, এ সমস্ত মাদরাসার সিলেবাসে ‘বিজ্ঞান’ ‘গণিত’ ও ‘ইঞ্জিনিয়ারিং’ ইত্যাদির মানসম্পন্ন শিক্ষার ব্যবস্থা হওয়া চাই। তাহলে যে সকল আলেম এ সমস্ত মাদরাসা থেকে বের হবেন, তাঁরা দ্বীনি ইলমের সাথে সাথে এ সমস্ত বিষয়েও পুরোপুরি দক্ষতা ও দূরদর্শিতার অধিকারী হবেন। এ মতটি যত ভালো নিয়তেই পেশ করা হোক না কেন, এটা একেবারেই অপরিণামদর্শী মত। যার ভিত্তি মূলত দ্বীনি মাদরাসার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্পর্কে অজ্ঞতার ওপর প্রতিষ্ঠিত। প্রকৃতপক্ষে দ্বীনি মাদরাসাসমূহের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হলো : এমন যোগ্যতাসম্পন্ন আলেম তৈরি করা, যারা কুরআন-সুন্নাহ ও এতদসংশ্লিষ্ট জ্ঞানসমূহে বিজ্ঞ ও পারদর্শী হবেন। আর এ লক্ষ্য-উদ্দেশ্য অর্জন করার জন্য যে মানসিক একাগ্রতা ও পূর্ণ মনোযোগের প্রয়োজন, তাতে এক ব্যক্তি একই সময়ে উঁচুমানের আলেমে দ্বীনও হবেন আবার সাথে সাথে যোগ্য ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী অথবা অর্থনীতিবিদও হবেন, এটা আকাশ কুসুম কল্পনা ছাড়া আর কিছু নয়। আজ যদি কোনো ব্যক্তি ডাক্তারি বিদ্যাকে নিজের নির্দিষ্ট বিষয় হিসেবে নির্ধারণ করে নেয় এবং মেডিক্যাল সায়েন্সে নৈপূণ্য অর্জন করে, তখন কোনো বুদ্ধিমান তার সম্পর্কে এ আপত্তি করতে পারে না যে, সে ডাক্তার হওয়ার সাথে সাথে ইঞ্জিনিয়ার কেন হয়নি? অথবা যদি কোনো ব্যক্তি ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে ডিগ্রি লাভ করে, তখন তার ওপর কোনো বিবেকবান এ প্রশ্ন করে না যে, মেডিক্যাল সায়েন্সে সে কেন পড়েনি? (সূত্র : কওমী মাদরাসার নেসাব ও নেযাম-দরসে নেযামীর কিতাবসমূহের পাঠদান পদ্ধতি। মূল : আল্লামা তাকী উসমানী, অনুবাদ : মাওলানা মুহাম্মাদ ওমর ফারুক, পৃষ্ঠা-১৫) হস্তশিল্প অথবা কারিগরি শিক্ষা দেওয়াও উদ্দেশ্য নয় : কোনো কোনো ব্যক্তি কওমী মাদরাসাসমূহের হিতাকাক্সক্ষী ও সহমর্মী হয়ে এখানে হস্তশিল্প ও কারিগরি শিক্ষার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। যাতে করে উলামায়ে কেরাম অর্থনৈতিক দিক থেকে সমাজের বোঝা না হয়ে নিজ যোগ্যতায় জীবনোপকরণের ব্যবস্থা করে বিনিময় ছাড়া দ্বীনের খিদমত আঞ্জাম দিতে পারেন। এই মতামতটি যদিও অত্যন্ত সুনিয়তে পেশ করা হয় এবং বাহ্যিকভাবে খুবই সুন্দর মনে হয়, কিন্তু বাস্তবে এই মতামতটিও সুচিন্তিত ও সুগভীর মতামত নয়। কেননা, কুরআন ও হাদীসের ন্যায় এমন একটি ব্যাপক বিষয়ের ওপর পারদর্শিতা অর্জনের পাশাপাশি হস্তশিল্প ও কারিগরি বিষয়ে সময় ব্যয় করা বাস্তবতার নিরিখে আসলে কোনো সুযোগ নেই। যেখানে চব্বিশ ঘণ্টা সময় ব্যয় করে কুরআন-হাদীস ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যোগ্যতা অর্জন করা কঠিন, সেখানে হস্তশিল্প ও কারিগরি শিক্ষার পেছনে সময় ব্যয় করার সময় কোথায়? তা ছাড়াও অন্য কোনো বিষয়ভিত্তিক শিক্ষা অর্জনকারীদের বেলায় এমন পরামর্শ তো দেয়া হচ্ছে না! কারণ, তারা তাদের বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান থেকে সমাজে যে সেবা দিয়ে থাকেন, সেই সেবার মাধ্যমে তাদের জীবিকার চাহিদা পূরণ হয়ে থাকে। তাহলে উলামায়ে কেরাম যদি সমাজের দ্বীনি চাহিদাসমূহ পূরণ করে সমাজের সেবা দিয়ে থাকেন, এ ক্ষেত্রে সেই মাধ্যম থেকে তাদের আর্থিক সুবিধা প্রাপ্তির বিষয়টিকে ‘সমাজের বোঝা’ বা ‘সমাজের করুণার পাত্র’ বলে মন্তব্য করা নির্বুদ্ধিতার পরিচয় নয় কি? যদি কোনো ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, অর্থনীতিবিদ বা বিজ্ঞানী নিজ বিভাগ থেকে সমাজে সেবা প্রদান করেন এবং এর ভিত্তিতে সমাজ তাকে আর্থিক সুবিধা প্রদান করে, তবে এটা না তার প্রতি কোনো করুণা, আর না এ কারণে তাকে ‘সমাজের বোঝা’ বা ‘সমাজের করুণার পাত্র’ বলে মন্তব্য করা ঠিক হবে। বরং সমাজের অন্যান্য পেশাজীবী মানুষের সেবা সমাজের সব মানুষ সব সময় গ্রহণ করে না। কিন্তু উলামায়ে কেরামের দ্বীনি সেবা সমাজের সব মানুষের সব সময় প্রয়োজন। তাই সমাজের সর্বস্তরের মানুষের ওপর উলামায়ে কেরামের প্রয়োজন পূরণের দায়িত্ব অনেক অনেক বেশি। (সূত্র : কওমী মাদরাসার নেসাব ও নেযাম- দরসে নেযামীর কিতাবসমূহের পাঠদান পদ্ধতি। মূল : আল্লামা তাকী উসমানী, অনুবাদ : মাওলানা মুহাম্মাদ ওমর ফারুক, পৃষ্ঠা-১৭) বিষয়ভিত্তিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্বীকৃত একটি পন্থা এবং সময়ের দাবি : যদি কোনো বিজ্ঞানবিষয়ক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞান শিক্ষার ওপর পূর্ণ জোর দেয়া হয়, তখন কোনো ব্যক্তি সেখানে এ আপত্তি পেশ করে না যে, এ প্রতিষ্ঠানে সাহিত্য, কবিতা অথবা কমার্স বিষয়ের শিক্ষা কেন দেয়া হয় না? কোনো কমার্স কলেজে এ প্রশ্ন করা হয় না যে, এখান থেকে ইঞ্জিনিয়ার কেন তৈরি হয় না? কোনো ল’ কলেজের ব্যাপারেও এ মতামত শোনা যায়নি যে, এর মধ্যে জ্যোতির্বিদ্যাও শিক্ষা দেয়া উচিত! তাহলে, তাফসীর হাদীস ফিক্বাহ ও দ্বীনসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো কি এমন শিক্ষা নয় যে, এগুলোর শিক্ষাদানের জন্য নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান থাকবে, সে সমস্ত প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণরূপে এ বিষয়গুলোর ওপর চেষ্টা-মেহনত করে এগুলোর খিদমত আঞ্জাম দেবে এবং এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ উলামা তৈরি করবে? কওমী মাদরাসাসমূহের সিলেবাস অক্ষুণœ রেখে আপন গতিতে থাকতে দেয়া যৌক্তিক দাবি : যদি কওমী মাদরাসাসমূহের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ইসলামী শিক্ষায় দক্ষ ব্যক্তি গঠনের প্রতি নিবদ্ধ হয়, আর সেখান থেকে কোনো ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী বা অর্থনীতিবিদ তৈরি না হয়, তবে এ নিয়ে আপত্তি ও হৈচৈ করার কিছু নেই। বরং যে পরিমাণ ইসলামী শিক্ষা শরীয়তের দৃষ্টিতে ফরজে আইন ওই পরিমাণ ইসলামী শিক্ষা প্রতিটি বিষয়ভিত্তিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামূলকভাবে চালু করা ফরজ। ইলমে দ্বীনের খিদমত সমাজের কোনো প্রয়োজনের অন্তর্ভুক্ত নয় কি? মুসলিম সমাজে এমন আলেমের প্রয়োজন নেই কি, যারা তাদের দ্বীনি চাহিদাগুলো পূরণ করবে? সমাজের নিত্যনতুন সমস্যাগুলোর শরয়ী সমাধান দেবে? মুসলিম সন্তানদেরকে দ্বীনি শিক্ষা দেবে? তাদের ভবিষ্যত ইসলামী জীবনের সংরক্ষণের জন্য নিজের পুরো জীবন ওয়াকফ করবে? দ্বীনের ওপর আগ্রাসী ফিতনাসমূহের কার্যকর মোকাবিলা করতে পারবে? হ্যাঁ, অবশ্যই এমন একদল আলেম থাকা চাই। নতুবা ইসলাম ও মুসলিম সমাজের চরম ক্ষতি হয়ে যাবে। তাই কওমী মাদরাসা সিলেবাসে পরিবর্তন বা পরিমার্জনের আওয়াজ না তুলে বরং দ্বীনি বিষয়ের সংশ্লিষ্ট বিষয়াদিতে আধুনিক বিষয়াদির অবতারণা করে পাঠদান পদ্ধতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে হবে। উদাহরণস্বরূপ হেদায়া কিতাবের ‘কিতাবুল বুয়ু’ পাঠদান কালে আধুনিক অর্থনীতি ও ব্যাংকিংয়ের আলোচনা, মানতিক ও ফালসাফা পাঠদান কালে যুক্তিবিদ্যা ও দর্শনশাস্ত্রের পরিভাষাগত আলোচনা, মুখতাসারুল মা’আনী পাঠদান কালে বাংলা ভাষাতত্ত্ব ও অলংকারশাস্ত্রগত আলোচনা ইত্যাদি। আর আধুনিক বিশ্বে দ্বীন প্রচারের স্বার্থে প্রাসঙ্গিক বিষয়াদি যেমনÑকম্পিউটার, ইন্টারনেট ইত্যাদির শিক্ষা প্রয়োজন অনুসারে নিজ নিজ উদ্যোগে শিখে নিতে হবে। সব বিষয়কেই সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজন নেই। যে ব্যক্তি যে বিষয়ে বিশেষ পারদর্শিতা অর্জন করতে চায়, কেবল সেই বিষয়কেই ওই ব্যক্তির জন্য সিলেবাসভুক্ত করা উচিত। সিলেবাসের দোষ নয়, দোষ আমাদের অলসতা ও অযোগ্যতার : আজ কওমী মাদরাসার সিলেবাসকে যুগোপযোগী মনে করা হচ্ছে না। এর কারণ যদি দ্বীনি বিষয় ছাড়া সমাজের অন্য বিষয়ের ওপর পারদর্শিতার কথা বলা হয়, তাহলে আপত্তিটা যথার্থ নয়। কেননা, কওমী মাদরাসার উদ্দেশ্যই হলো দ্বীনি বিষয়ে পারদর্শিতা অর্জন করা। আর যদি দ্বীনি বিষয়ে পারদর্শিতার কথা বলা হয়, তাহলে নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, দ্বীনি বিষয়ে পারদর্শিতা অর্জনের ক্ষেত্রে কওমী মাদরাসার সিলেবাসের চেয়ে উত্তম কোনো সিলেবাস সত্যিই পৃথিবীতে বিরল। এই সিলেবাসে পড়ালেখা করেই নিকট অতীতেও বিশ্বসেরা ওলামায়ে কেরাম তৈরি হয়েছেন এবং হচ্ছেন। সুতরাং বলাই যায় যে, মৌলিক অর্থে সিলাবাসের দোষ নয়, দোষ আমাদের অলসতা ও অযোগ্যতার।
লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া শামসুল উলুম। নিশিন্দারা (কারবালা মাদরাসা) বগুড়া। ব-সধরষ : শভ.শধৎরস@ুধযড়ড়.পড়স

সোমবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

হাটহাজারী মাদ্রাসার বার্ষিক মাহফিল ও দস্তারবন্দী সম্মেলনে [2013 ]আল্লামা শাহ্ আহ্মদ শফী

হাটহাজারী মাদ্রাসার বার্ষিক মাহফিল ও দস্তারবন্দী সম্মেলনে আল্লামা শাহ্ আহ্মদ শফী
জাতির আবেগ-অনুভূতিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে নাস্তিক ও ইসলামের দুশমনরা তরুণ সমাজকে বিভ্রান্ত করে ইসলামের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে
---------------------------------------------------------------------------------------------
উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ ও প্রাচীন দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আল-জামিয়াতুল আহ্লিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার বার্ষিক মাহ্ফিল ও দস্তারবন্দী সম্মেলন গতকাল (১৫ ফেব্রুয়ারী শুক্রবার) লক্ষাধিক মুসল্লীর অংশগ্রহণে আখেরী মুনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয়েছে। সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে জামিয়ার মহাপরিচালক এবং বাংলাদেশ ক্বওমী মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান, শীর্ষ আলেম, পীরে কামেল আল্লামা শাহ্ আহ্মদ শফী বলেছেন, উলামা-মাশায়েখ, দাড়ি-টুপিধারী ও নামাযীদের বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী ইসলামের দুশমনরা প্রশাসনের ছত্রছায়ায় হিংসাত্মক আক্রমণ ও ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়িয়ে এ দেশকে ইরাক ও আফগানিস্তানের পরিণতি ভোগ করানোর এক গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। ইসলাম, মুসলমান, উলামা-মাশায়েখ ও মাদ্রাসার বিরুদ্ধে কোন ষড়যন্ত্রই এদেশের জনসাধারণ বরদাশত করবে না। জাতির আবেগ-অনুভূতিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে নাস্তিক ও ইসলামের দুশমনরা তরুণ সমাজকে বিভ্রান্ত করে ইসলামের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে এবং দেশব্যাপী বেহায়াপনা, উলঙ্গপনা, ব্যভিচার ছড়িয়ে দিয়ে মুসলমানদের ঈমান-আমল ও সভ্যতা-সংস্কৃতিকে ধ্বংসে নতুন আরেক ষড়যন্ত্র শুরু করছে। কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন পাশ করা হবে না মর্মে বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসলেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে সরকার শুরু থেকেই ইসলাম বিরোধীদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যাচ্ছে। যারা দ্বীন ঈমানের হেফাজতের কথা বলছে, তাদের নির্দয়, নির্মমভাবে দমন করা হচ্ছে। জেল-জুলুম ও ফাঁসির ভয় দেখানো হচ্ছে। তিনি হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার হাজার বার হোক, তাতে আমাদের কোন আপত্তি নেই, কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে আলেম সমাজ, মাদ্রাসা, দাড়ি-টুপি, পর্দা তথা দ্বীন-ইসলামের বিরুদ্ধে যে কোন ষড়যন্ত্রে এদেশের আলেম সমাজ ও তৌহিদী জনতা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করবে না। তিনি সরকারের প্রতি অবিলম্বে ইসলাম, মুসলমান, নামাযী, দাড়ি-টুপীধারীদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত সকল অপতৎপরতা বন্ধের আহ্বান জানান।
আল্লামা শাহ্ আহ্মদ শফী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আজ সর্বত্র ইসলামকে হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টা চলছে। আমাদের অনৈক্য আর নিজ ধর্মের মধ্যে কতিপয় গোমরাহ ও ধর্মবিরোধীর কারণেই বিধর্মীরা সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে। বর্তমানে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এবং চিহ্নিত নাস্তিকরা যেভাবে একের পর এক ইসলামের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার মূলক আঘাত হানার প্রয়াস এবং দাড়ি-টুপীধারী পুরুষ ও পর্দানশীন নারীদের উপর হামলা চালানোর মত বর্বরতা ও দুঃসাহস দেখাচ্ছে, তাতে কোন মুসলমানই উদ্বিগ্ন না হয়ে পারে না।
আল্লামা শাহ্ আহ্্মদ শফী আত্মশুদ্ধি প্রসঙ্গে বলেন, তাক্বওয়া তথা খোদা ভীতি ছাড়া পরিপূর্ণ মুমিন হওয়া যায় না। অপরদিকে আল্লাহ্র ভয় মানুষের অন্তরে না থাকার ফলে সমাজে অপরাধ প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। অন্তরে খোদাভীতি থাকলে কারো পক্ষে শরীয়তের হুকুম লঙ্ঘন করা, হারাম পথে চলা, অনাচার-ব্যভিচারে জড়িয়ে পড়া, জুলুম-অত্যাচারে লিপ্ত হওয়া কিছুতেই সম্ভব নয়। তিনি বলেন, খোদাভীতির অপর নাম তাক্বওয়া, আর এই তাক্বওয়া থেকে দূরে থাকার কারণেই বর্তমানে দেশে-বিদেশে মুসলমানগণ নানাভাবে পর্যুদস্ত ও নির্যাতিত হচ্ছে। মুসলমানদেরকে এই দুর্দশা থেকে রেহাই পেতে পূর্ণাঙ্গ তাক্বওয়া অর্জনের পাশাপাশি ঈমানী শক্তি নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে শান্তি ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে হবে। তিনি সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে মুসলমানদেরকে এক কালিমার ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
আল্লামা শাহ্ আহ্্মদ শফী আরো বলেন, ইসলামে অসত্য, অন্যায়, সন্ত্রাস ও ষড়যন্ত্রের কোন স্থান নেই। ইসলাম ন্যায় ও শান্তির ধর্ম। ইসলামকে অনুসরণ করতে পারলে এদেশে কোন হানাহানি ও সন্ত্রাস থাকবে না। আর ইসলামী শিক্ষায়ও কোন প্রকার সন্ত্রাসের স্থান নেই। অথচ দেশে বিদেশে আজ ইসলাম ও মুসলমানদেরকে নেতিবাচকভাবে চিত্রিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান ধর্মাবলম্বীরা নিজ নিজ ধর্ম পালন করলে, ধর্মীয় তৎপরতা চালালে এবং তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে কেউ অংশ নিলে কেউ মৌলবাদী, প্রগতি বিরোধী ও যুদ্ধাপরাধী হয় না। অথচ নামায আদায় ও দাড়ি-টুপী পরলে অথবা ইসলাম ধর্মীয় কোন আচার-অনুষ্ঠানে অংশ নিলেই প্রগতি বিরোধী, দেশ বিরোধী ও মৌলবাদীর রং লাগানো হয়।
তিনি বলেন, নৈতিকতা ও সততার অভাবে দেশ আজ দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে। এমতাবস্থায় সুশাসন ও সুনাগরিক তৈরীর জন্য শিক্ষার সর্বস্তরে ধর্মকে বাধ্যতামূলক করা দরকার। ধর্মহীন শিক্ষানীতি প্রণীত হওয়ার ফলে নতুন প্রজন্ম ইসলামের ভাবাদর্শ থেকে ছিটকে পড়ে নৈতিক ও চারিত্রিক অধঃপতনের দিকে দ্রুত ধাবিত হয়ে পড়ছে। যার কুফল ইতিমধ্যেই আমরা অবলোকন করতে শুরু করেছি। সুদ-ঘুষ, চুরি-ডাকাতি, খুনখারাবি, ধর্ষণ-ব্যভিচার বিরামহীনভাবে বাড়ছে। আল্লামা শাহ্্ আহমদ শফী তার বয়ানের এক পর্যায়ে উপস্থিত মুসল্লীদেরকে সম্বোধন করে বলেন যে, আপনারা আমার মুখে মুখে বলুন- চুরি করব না, ডাকাতি করব না, ঘুষ খাব না, বোমাবাজি করব না, ব্যভিচার-ধর্ষণ করব না, সন্ত্রাস-রাহাজানি করব না, কাউকে হত্যা করব না, কারো প্রতি জুলুম অত্যাচার করব না, কারো সম্পদ অত্মসাত করব না ইত্যাদি। তিনি এ পর্যায়ে শ্রোতাদের প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, এরপরও কি আমাদেরকে সন্ত্রাসী, বোমাবাজি বলবেন?
গতকাল (১৫ ফেব্রুয়ারী) শুক্রবার অনুষ্ঠিত হাটহাজারী মাদ্রাসার দস্তারবন্দী ও বার্ষিক ইসলামী সম্মেলনে আরো যেসব ইসলামী নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন, মাওলানা নূরুল ইসলাম ওলীপুরী, মাওলানা মোস্তফা আল-হোসাইনী, মুফতী নূর আহমদ, মুফতী আব্দুচ্ছালাম চাটগামী, মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ্্ বাবুনগরী, মাওলানা হাফেজ মুহাম্মদ জুনাইদ বাবুনগরী, মাওলানা আব্দুল মালেক হালিম, মাওলানা মুহাম্মদ নোমান মেখলী, মাহমুদুল হাসান ফতেপুরী, মাওলানা সালাহ উদ্দীন নানুপুরী, মাওলানা লোকমান, মুফতী জসীম উদ্দীন, মাওলানা সৈয়দ আলম আরমানী, আজিজুল হক আল-মাদানী, মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী, ড. আ.ফ.ম. খালেদ হোসেন, মাওলানা নজির আহমদ প্রমুখ।
সম্মেলনে হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা হাফেজ মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, সংবিধান সংশোধন করে ধর্মনিরপেক্ষ নীতি সংযোজনের পর থেকে নাস্তিক ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ইসলম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে একের পর এক যেভাবে দুঃসাহস দেখিয়ে দেশের বিভিন্নস্থানে একের পর এক মসজিদে হামলা ও ভাংচুর চালাচ্ছে, আমাদের প্রাণের স্পন্দন হযরত মুহাম্মদ (সা.)এর বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করছে, বয়োবৃদ্ধ দাড়ি-টুপীধারীদের উপর উঠতি তরুণরা যেভাবে বর্বর আচরণ করছে, তাতে আমরা হতভম্ব ও বিস্মিত না হয়ে পারছি না। একজন বৃদ্ধের দাড়ি টেনে ধরে পুলিশের সামনে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা যেভাবে নাজেহাল করেছে, তাতে শুধু আমি নই, দেশের কোটি কোটি মুসলমান আঘাত পেয়েছেন বলে আমার বিশ্বাস। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে একজন মুসলমানের দাড়ি টেনে ধরে নাজেহাল করা হবে, এটা ভাবতেও হতবাক হতে হয়। তিনি বলেন, আল্লাহ্্র নবী দাড়ি রাখতেন, সাহাবায়ে কেরাম, ওলী-আউলিয়া এবং উলামা-মাশায়েখগণ দাড়ি রাখেন, নামাযী দ্বীনদার মুসলমানগণ দাড়ি রাখেন। অথচ আজ ঢালাওভাবে দাড়িধারীদেরকে রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী বলা হচ্ছে। আসলে যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবী এটা একটা খোলস মাত্র। এদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, ইসলামকে এদেশ থেকে চিরতরে মুছে ফেলা। তিনি বলেন, নাস্তিক-মুরতাদ ও ক্ষমতাসীন মহলের ইসলামবিদ্বেষী এ আচরণের বিরুদ্ধে সর্বস্তরের আলেম-ওলামা ও জনসাধারণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
বি-বাড়ীয়া দারুল আরকাম মাদ্রাসার পরিচালক আল্লামা সাজেদুর রহ্্মান বলেন, বর্তমান বিশ্বে ইসলাম ও মুসলিম মিল্লাতের বিরুদ্ধে পরিচালিত ইহুদী-খ্রীস্টান মিশনারি ও ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীদের সর্বাত্মক আগ্রাসনের কবলে বাংলাদেশের ইসলামপন্থী মুসলমানরা তথাকথিত নাস্তিক্যবাদী ও ফ্যাসিবাদীদের আস্ফালনে সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। সম্প্রতি যুদ্ধাপরাধীর বিচারের ধুয়া তুলে সারা দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। ঢাকার শাহবাগ, চট্টগ্রামের জামালখান, খুলনা, সিলেটসহ সারাদেশে যুদ্ধঅপরাধীদের বিচারের নামে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ভূড়িভোজ, উন্মাদনা, উলঙ্গ ও বেহায়াপনা বিনোদন ও নাটক চলছে। তাদের প্রধান টার্গেটে পরিণত হয়েছে এ দেশের আলেম-ওলামা, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও ইসলামী ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। এখানে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা তরুণ প্রজন্মের আবরণে আওয়ামী নাস্তিক্যবাদী, ফ্যাসিবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জাড়িত। এখানে যারা বক্তৃতা দিচ্ছেন, তাদের বক্তব্যে দেশে গৃহযুদ্ধসহ নৈরাজ্যমূলক কর্মকা-ের উসকানি প্রদানের পাশাপাশি ইসলাম ও দাঁড়ি-টুপির বিরুদ্ধে বিষোদ্গারমূলক অপপ্রচার। তাদের হাতে প্রতিদিনই ইসলামপন্থী ও আলেম-উলামাদের নাজেহাল হবার সচিত্র সংবাদ পত্রিকার পাতা খুললেই আমরা দেখতে পাচ্ছি। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচারে কারো আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু বিচারের নামে প্রহসনের নাটক করে যদি সেটাকে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার ষড়যন্ত্র করা হয়, যার স্পষ্ট লক্ষণ শাহবাগের তৎপরতায় আমরা দেখতে পাচ্ছি, তাহলে এদেশের আলেম সমাজসহ সর্বস্তরের তৌহিদী জনতা বসে থাকবে না।
সম্মেলনে চট্টগ্রাম হাইলধর মাদ্রাসার পরিচালক আল্লামা আব্দুল মালেক হালিম বলেন, সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতি ও লুটপাটসহ সকল ব্যর্থতা থেকে জনগণের দৃষ্টিকে অন্যদিকে ফেরাতে সরকার শাহবাগ চত্বরে সাজানো নাটক মঞ্চস্থ করছে। চরম ইসলাম বিদ্বেষী শাহরিয়া কবীর, ফতোয়া নিষিদ্ধকারী বিচারপতি গোলাম রব্বানী, ধর্মহীন শিক্ষানীতির অন্যতম প্রবক্তা জাফর ইকবাল গং এবং মহানবী (সা.) সম্পর্কে অশ্লীল ও অত্যন্ত ঘৃণ্যভাবে কটূক্তি ও গালিগালাজকারী আসিফ মহিউদ্দীনসহ আরো অনেক নাস্তিক ও ইসলাম বিদ্বেষীরা তাদের নীল নকশা বাস্তবায়নে এদেশকে ইসলাম শূন্য করার শপথ নিয়ে সরলমনা তরুণ প্রজন্মকে বিভিন্ন এজেন্সীর মাধ্যমে প্ররোচণা দিয়ে তথাকথিত মুক্তি যুদ্ধের চেতনায় উজ্জিবিত করে বিপদগামী করার ঘৃণ্য মানসে শাহবাগের নাটকের খলনায়ক বনেছে। সাংস্কৃতিক জগতকে বেলেল্লাপানার করাল গ্রাসে নিশ্চিহ্ন করার পর এবার তারা রাজনৈতিকক অঙ্গন থেকে ইসলামকে বিতাড়িত করার জন্য যেন যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। সম্প্রতি যুদ্ধাপরাধের বিচারের ধুয়া তুলে যে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে, তা নিছক কোনো গতানুগতিক রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের অংশ নয়। বরং এটা এমন এক রাজনৈতিক এজেন্ডা, যার পেছনে ইসলামকে এদেশ থেকে সমূলে উৎখাতের এক সুগভীর ষড়যন্ত্র। বামপন্থী ও সেক্যুলার রাজনীতির সমর্থক অল্প বয়সের তরুণরা আজ যেভাবে দাড়ি-টুপীধারী নামাযীদের উপর আক্রমণ চালাচ্ছে, এতে চরম উদ্বিগ্ন না হয়ে পারা যায় না।
তিনি বলেন, আমাদের অনৈক্য আর নিজ ধর্মের মধ্যে কতিপয় গোমরাহ ও ধর্মবিরোধীর কারণেই বিধর্মীরা সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে। ইসলামে অসত্য, অন্যায়, সন্ত্রাস ও ষড়যন্ত্রের কোন স্থান নেই। ইসলাম ন্যায় ও শান্তির ধর্ম। ইসলামকে অনুসরণ করতে পারলে এদেশে কোন হানাহানি ও সন্ত্রাস থাকবে না।
চট্টগ্রাম বাবুনগর মাদ্রাসার পরিচালক আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, কলেজ পড়–য়া এক তরুণ পুলিশের সামনে একজন বয়স্ক মুরুব্বিকে দাড়ি ধরে যেভাবে মারধর করেছে, এরকম অবস্থা সমাজে আরও ঘটতে থাকলে জমিনে সরাসরি আল্লাহর গযব নেমে আসবে। তিনি বলেন, দাড়ি রাখার অপরাধে এটা করা হলে আল্লাহ্ তাদের ক্ষমতার রশি টেনে তাদের অবশ্যই ক্ষমতাচ্যুত করবেন। অতীতে এ ধরেণের বহু নজির রয়েছে। মুসলমানদের বিরুদ্ধে এমন আগ্রাসন ও অত্যাচারে আমাদের চুপ থাকা মোটেও উচিত হবে না।
উল্লেখ্য, সম্মেলনের শেষে বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে জামিয়ার বিগত বৎসরের প্রায় ২ সহস্রাধিক দাওরায়ে হাদীস (টাইটেল) উত্তীর্ণ তরুণ আলেমকে বিশেষ সম্মান সূচক পাগড়ী প্রদান করা হয়। বিশেষ সমাবর্তনে জামিয়া প্রধান হযরত আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী তরুণ আলেমদের উদ্দেশ্যে উপদেশমূলক দীর্ঘ বক্তব্য রেখে বলেন, তোমরা ইসলামের আদর্শ ও শান্তির বাণী প্রচার করার জন্য দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়। সম্মেলনে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাজার হাজার উলামায়ে কিরাম ছাড়াও লক্ষাধিক মুসল্লী অংশগ্রহণ করেন। আখেরী মুনাজাতে জামিয়া প্রধান দেশের ও বিশ্বের সকল মুসলমানের শান্তি, ঐক্য ও সমৃদ্ধি কাম
http://noorbd.com/news.php?id=363

না করে বিশেষ মুনাজাত পরিচালনা করেন। এ সময় সমগ্র ক্যাম্পাস জুড়ে কান্নার রোল পড়ে যায়।

সোমবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

ভালবাসা দিবস কি ও সমাজে এর ক্ষতিকর প্রভাব

বিশ্ব ভালবাসা দিবস কি :
এক নোংরা ও জঘন্য ইতিহাসের স্মৃতিচারণের নাম বিশ্ব ভালবাসা দিবস। এ ইতিহাসটির বয়স সতের শত সাঁইত্রিশ বছর হলেও ‘বিশ্ব ভালবাসা দিবস’ নামে এর চর্চা শুরু হয় সাম্প্রতিক কালেই। দুই শত সত্তর সালের চৌদ্দই ফেব্রুয়ারির কথা। তখন রোমের সম্রাট ছিলেন ক্লডিয়াস। সে সময় ভ্যালেন্টাইন নামে একজন সাধু, তরুণ প্রেমিকদেরকে গোপন পরিণয়-মন্ত্রে দীক্ষা দিত। এ অপরাধে সম্রাট ক্লডিয়াস সাধু ভ্যালেন্টাইনের শিরশ্ছেদ করেন। তার এ ভ্যালেন্টাইন নাম থেকেই এ দিনটির নাম করণ করা হয় ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ যা আজকের ‘বিশ্ব ভালবাসা দিবস’।
বাংলাদেশে এ দিবসটি পালন করা শুরু হয় ১৯৯৩ইং সালে। কিছু ব্যবসায়ীর মদদে এটি প্রথম চালু হয়। অপরিণামদর্শী মিডিয়া কর্মীরা এর ব্যাপক কভারেজ দেয়। আর যায় কোথায় ! লুফে নেয় বাংলার তরুণ-তরুণীরা। এরপর থেকে ঈমানের ঘরে ভালবাসার পরিবর্তে ভুলের বাসা বেঁধে দেয়ার কাজটা যথারীতি চলছে। আর এর ঠিক পিছনেই মানব জাতির আজন্ম শত্রু শয়তান এইডস নামক মরণ-পেয়ালা হাতে নিয়ে দাঁত বের করে হাসছে। মানুষ যখন বিশ্ব ভালবাসা দিবস সম্পর্কে জানত না, তখন পৃথিবীতে ভালবাসার অভাব ছিলনা। আজ পৃথিবীতে ভালবাসার বড় অভাব। তাই দিবস পালন করে ভালবাসার কথা স্মরণ করিয়ে দিতে হয়! আর হবেই না কেন! অপবিত্রতা নোংরামি আর শঠতার মাঝে তো আর ভালবাসা নামক ভালো বস্তু থাকতে পারে না। তাই আল্লাহ তা‘আলা মানুষের হৃদয় থেকে ভালবাসা উঠিয়ে নিয়েছেন।
বিশ্ব ভালবাসা দিবসকে চেনার জন্য আরও কিছু বাস্তব নমুনা পেশ করা দরকার। দিনটি যখন আসে তখন শিক্ষাঙ্গনের শিক্ষার্থীরা বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তো একেবারে বেসামাল হয়ে উঠে। নিজেদের রূপা-সৌন্দর্য উজাড় করে প্রদর্শনের জন্য রাস্তায় নেমে আসে। শুধুই কি তাই ! অঙ্কন পটীয়সীরা উল্কি আঁকার জন্য পসরা সাজিয়ে বসে থাকে রাস্তার ধারে। তাদের সামনে তরুণীরা পিঠ, বাহু আর হস্তদ্বয় মেলে ধরে পছন্দের উল্কিটি এঁকে দেয়ার জন্য। তারপর রাত পর্যন্ত নীরবে-নিবৃতে প্রেমিক বা প্রেমিকার সাথে খোশ গল্প। এ হলো বিশ্ব ভালবাসা দিবসের কর্মসূচি! বিশ্ব ভালবাসা দিবস না বলে বিশ্ব বেহায়াপনা দিবস বললে অন্তত নামকরণটি যথার্থ হতো।
বিশ্ব ভালবাসা দিবস পালনের ক্ষতিকর কিছু দিক :
১. ভালবাসা নামের এ শব্দটির সাথে এক চরিত্রহীন লম্পটের স্মৃতি জড়িয়ে যারা ভালবাসার জয়গান গেয়ে চলেছেন, পৃথিবীবাসীকে তারা সোনার পেয়ালায় করে নীল বিষ পান করিয়ে বেড়াচ্ছেন।
২. তরুণ-তরুণীদের সস্তা যৌন আবেগকে সুড়সুড়ি দিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলা ও ফাসাদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। অথচ আল্লাহ তা‘আলা ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের ভালবাসেন না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَيَسْعَوْنَ فِي الْأَرْضِ فَسَادًا وَاللَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُفْسِدِينَ


‘‘আর তারা তো পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করে বেড়ায়। আর আল্লাহ ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের ভালবাসেন না।’’(সূরা আল মায়িদাহ : ৬৪)
৩. নৈতিক অবক্ষয় দাবানলের মত ছড়িয়ে যাচ্ছে।
৪. নির্লজ্জতা ও বেহায়াপনা জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি লাভ করছে। যারা ঈমানদারদের সমাজে এ ধরণের অশ্লীলতার বিস্তার ঘটায়, দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের জন্য আল্লাহ তা‘আলা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
إِنَّ الَّذِينَ يُحِبُّونَ أَنْ تَشِيعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِينَ آمَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ


‘‘ যারা মু’মিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে তাদের জন্য আছে দুনিয়া ও আখিরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি..।’’(সূরা আন-নূর :১৯)
বস্তুত যে সমাজেই চরিত্র-হীনতার কাজ ব্যাপক, তথায় আল্লাহর নিকট থেকে কঠিন আযাব সমূহ ক্রমাগত অবতীর্ণ হওয়া অবধারিত, আব্দুল্লাহ ইবন ‘উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন :
… لَمْ تَظْهَرِ الْفَاحِشَةُ فِي قَوْمٍ قَطُّ حَتَّى يُعْلِنُوا بِهَا إِلَّا فَشَا فِيهِمُ الطَّاعُونُ وَالْأَوْجَاعُ الَّتِي لَمْ تَكُنْ مَضَتْ فِي أَسْلَافِهِمِ…
‘‘যে জনগোষ্ঠীর মধ্যে নির্লজ্জতা প্রকাশমান, পরে তারা তারই ব্যাপক প্রচারেরও ব্যবস্থা করে, যার অনিবার্য পরিণতি স্বরূপ মহামারি, সংক্রামক রোগ এবং ক্ষুধা-দুর্ভিক্ষ এত প্রকট হয়ে দেখা দিবে, যা তাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে কখনই দেখা যায় নি।’’(ইবনু মাজাহ, কিতাবুল ফিতান, হাদিস নং-৪০০৯)
৫. তরুণ-তরুণীরা বিবাহ পূর্ব দৈহিক সম্পর্ক গড়তে কোন রকম কুণ্ঠাবোধ করছে না। অথচ তরুণ ইউসুফ আলাইহিস সালামকে যখন মিশরের এক রানী অভিসারে ডেকেছিল, তখন তিনি কারাবরণকেই এহেন অপকর্মের চেয়ে উত্তম জ্ঞান করেছিলেন। রোমান্টিক অথচ যুব-চরিত্রকে পবিত্র রাখার জন্য কী অতুলনীয় দৃষ্টান্ত! আল্লাহ জাল্লা শানুহু সূরা ইউসুফের ২৩-৩৪ নম্বর আয়াত পর্যন্ত এ ঘটনা বর্ণনা করেছেন এ ভাবে-
‘‘সে যে স্ত্রীলোকের ঘরে ছিল সে তার কাছ থেকে অসৎকাজ কামনা করল ও দরজাগুলো বন্ধ করে দিল এবং বলল, ‘আস।’ সে বলল, ‘আমি আল্লাহ্‌র আশ্রয় প্রার্থনা করছি, তিনি আমার প্রভু; তিনি আমার থাকার সুন্দর ব্যবস্থা করেছেন। নিশ্চয়ই সীমালঙ্ঘনকারীরা সফলকাম হয় না। সে রমণী তো তার প্রতি আসক্ত হয়েছিল এবং সেও তার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ত যদি না সে তার প্রতিপালকের নিদর্শন দেখতে পেত। আমি তাকে মন্দ-কাজ ও অশ্লীলতা হতে বিরত রাখার জন্য এভাবে নিদর্শন দেখিয়েছিলাম। সে তো ছিল আমার বিশুদ্ধচিত্ত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত। ওরা উভয়ে দৌড়ে দরজার দিকে গেল এবং স্ত্রীলোকটি পিছন হতে তার জামা ছিঁড়ে ফেলল, তারা স্ত্রীলোকটির স্বামীকে দরজার কাছে পেল। স্ত্রীলোকটি বলল, ‘যে তোমার পরিবারের সাথে কুকর্ম কামনা করে তার জন্য কারাগারে প্রেরণ বা অন্য কোন মর্মন্তুদ শাস্তি ছাড়া আর কি দণ্ড হতে পারে? ইউসুফ বলল, ‘সে-ই আমার কাছ থেকে অসৎকাজ কামনা করছিল।’ স্ত্রীলোকটির পরিবারের একজন সাক্ষী সাক্ষ্য দিল, ‘যদি তার জামার সামনের দিক থেকে ছিঁড়ে থাকে তবে স্ত্রীলোকটি সত্য কথা বলেছে এবং পুরুষটি মিথ্যাবাদী, কিন্তু তার জামা যদি পিছন দিক থেকে ছিঁড়ে থাকে তবে স্ত্রীলোকটি মিথ্যা বলেছে এবং পুরুষটি সত্যবাদী। গৃহস্বামী যখন দেখল যে, তার জামা পিছন দিক থেকে ছেঁড়া হয়েছে তখন সে বলল, ‘নিশ্চয়ই এটা তোমাদের নারীদের ছলনা, তোমাদের ছলনা তো ভীষণ। হে ইউসুফ! তুমি এটা এড়িয়ে যাও এবং হে নারী! তুমি তোমার অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর; তুমিই তো অপরাধী। নগরের কিছু সংখ্যক নারী বলল, ‘আযীযের স্ত্রী তার যুবক দাস হতে অসৎকাজ কামনা করছে, প্রেম তাকে উন্মত্ত করেছে, আমরা তো তাকে স্পষ্ট ভুলের মধ্যে দেখছি। স্ত্রীলোকটি যখন ওদের কানা-ঘুষার কথা শুনল, তখন সে ওদেরকে ডেকে পাঠাল, ওদের জন্য আসন প্রস্তুত করল, ওদের সবাইকে একটি করে ছুরি দিল এবং ইউসুফকে বলল, ‘ওদের সামনে বের হও।’ তারপর ওরা যখন তাঁকে দেখল তখন ওরা তাঁর সৌন্দর্যে অভিভূত হল এবং নিজেদের হাত কেটে ফেলল। ওরা বলল, ‘অদ্ভুত আল্লাহর মাহাত্ম্য! এ তো মানুষ নয়, এ তো এক মহিমান্বিত ফেরেশতা। সে বলল, ‘এ-ই সে যার সম্বন্ধে তোমরা আমার নিন্দা করেছ। আমি তো তার থেকে অসৎকাজ কামনা করেছি। কিন্তু সে নিজেকে পবিত্র রেখেছে; আমি তাকে যা আদেশ করেছি সে যদি তা না করে, তবে সে কারারুদ্ধ হবেই এবং হীনদের অন্তর্ভুক্ত হবে। ইউসুফ বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! এ নারীরা আমাকে যার দিকে ডাকছে তার চেয়ে কারাগার আমার কাছে বেশী প্রিয়। আপনি যদি ওদের ছলনা হতে আমাকে রক্ষা না করেন তবে আমি ওদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ব এবং অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হব। তারপর তার প্রতিপালক তার ডাকে সাড়া দিলেন এবং তাকে ওদের ছলনা হতে রক্ষা করলেন। তিনি তো সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।(অনুবাদ, সূরা ইউসুফ : ২৩-৩৪)
৬. শরীরে উল্কি আঁকাতে যেয়ে নিজের ইয্‌যত-আব্রু পরপুরুষকে দেখানো হয়। যা প্রকাশ্য কবিরা গুনাহ। যে ব্যক্তি উল্কি আঁকে এবং যার গায়ে তা আঁকা হয়, উভয়য়ের উপরই আল্লাহর লা‘নত বর্ষিত হয়। রাসূলুল্লাহ () বলেন,
لَعَنَ اللَّهُ الْوَاصِلَةَ وَالْمُسْتَوْصِلَةَ وَالْوَاشِمَةَ وَالْمُسْتَوْشِمَةَ *
‘‘যে ব্যক্তি পর-চুলা লাগায় এবং যাকে লাগায়; এবং যে ব্যক্তি উল্কি আঁকে এবং যার গায়ে আঁকে, আল্লাহ তাদেরকে অভিসম্পাত করেন।’’(বুখারী,কিতাবুল লিবাস,হাদিস নং৫৪৭৭)
মূলত যার লজ্জা নেই, তার পক্ষে এহেন কাজ নেই যা করা সম্ভব নয়। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
إِذَا لَمْ تَسْتَحِ فَاصْنَعْ مَا شِئْت
‘‘যদি তোমার লজ্জা না থাকে তাহলে যা ইচ্ছা তাই করতে পার।’’(বুখারী, কিতাবু আহাদীসিল আম্বিয়া, হাদিস নং৩২২৫)
৭. ভালবাসা দিবসের নামে নির্লজ্জতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে যিনা-ব্যভিচার, ধর্ষণ ও খুন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
… وَلَا فَشَا الزِّنَا فِي قَوْمٍ قَطُّ إِلَّا كَثُرَ فِيهِمُ الْمَوْتُ…
‘‘যে জনগোষ্ঠীর-মধ্যেই ব্যভিচার ব্যাপক হবে, তথায় মৃত্যুর আধিক্য ব্যাপক হয়ে দেখা দেবে।’’(মুয়াত্তা মালিক, কিতাবুল জিহাদ, হাদিস নং-৮৭০)
উপরোক্ত আয়াত ও হাদিসগুলোর ভাষ্য কতটা বাস্তব বর্তমান বিশ্বের বাস্তব চিত্র এর প্রমাণ বহন করে। অবাধ যৌন মিলনের ফলে “AIDS” নামক একটি রোগ বর্তমানে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এটা এমনি মারাত্মক যে, এ রোগে আক্রান্ত হলে এর কোন আরোগ্য নেই। কিছু পরিসংখ্যান দিলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে :
1. বিশ্বের ১৪০ কোটিরও বেশী লোক থেকে ১৯৮৮ সালের আগস্ট পর্যন্ত এক লক্ষ এগার হাজারেরও বেশী “AIDS” রোগীর তালিকা পাওয়া গিয়েছে।’’(আব্দুল খালেক, নারী,(ই,ফা,বা.ঢাকা,১৯৮৪ইং) পৃ. ৯৬)
2. ১৯৯২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ২,৪২,০০০ এইডস রোগীর সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। এর মধ্যে ১,৬০,০০০ মৃত্যু বরণ করেছিল। ১৯৯২ সালের গবেষণালব্ধ তথ্য মতে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত ৫০ লক্ষ্য এইডস রোগী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে।(Baron& Byrne, Ibid., P. 329)
3. ৩০ শে ডিসেম্বর ১৯৯৬ এর Time International’ পত্রিকায় পরিবেশিত তথ্য মতে, ৬৫ লক্ষ জীবন ছিনিয়ে নিয়েছে এই ঘাতক ব্যাধি। আগামী ৫ বৎসরে আরও ৩ কোটি লোক মারা যাবে এই রোগে।(মাসিক পৃথিবী, (ঢাকা, ডিসেম্বর, ১৯৯৯), পৃ. ৫)
4. বিশ্ব এইডস দিবস ২০০০-এর প্রাক্কালে জাতিসংঘ যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে তাতে বলা হয়েছে : ‘‘ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক সেবনকারী এবং সমকামিতা, ইতর রীতির যৌনতার মাধ্যমে পূর্ব ইউরোপ, রাশিয়া, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, ল্যাটিন-আমেরিকা ক্যারিবীয় অঞ্চল ও এশিয়ায় এইডস দেখা দিয়েছে। আফ্রিকার কয়েকটি দেশে প্রতি তিনজনের একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ এইডস আক্রান্ত। শিশুদের ৮০ ভাগ এই রোগের ভাইরাসে আক্রান্ত। আফ্রিকার উপ-সাহারা এলাকায় এ বছর ১০ লাখেরও বেশী লোক এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপে নতুন করে এইডস দেখা দিয়েছে। মাত্র একবছরে এইডস রোগীর সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। উত্তর আফ্রিকা এবং মধ্য প্রাচ্যেও নতুন করে এইডস সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে।’’(রয়টার্স, দৈনিক ইনকিলাব, (ঢাকা, ২রা ডিসেম্বর ২০০০ ইং) পৃ .১-২)
5. ৬. জাতিসংঘের দেয়া তথ্য মতে : ‘‘বিশ্বে ৩ কোটি ৬০ লাখ লোক এইডসে আক্রান্ত ২০০০ইং সনে ৫০ লাখ লোক নতুন করে এইডসে আক্রান্ত হয়েছে।’’(প্রাগুক্ত)
6. ৭. ‘‘বিশ্ব এইডস দিবসের আলোচনা সভায় (ঢাকা) বাংলাদেশের তৎকালীন সমাজকল্যাণ, প্রতি মন্ত্রী ড. মোজাম্মেল হোসেনের দেয়া তথ্য মতে, বাংলাদেশে এইডস ভাইরাস বহনকারী রোগীর সংখ্যা একুশ হাজারের বেশী।’’(দৈনিক ইনকিলাব, (স্টাফ রিপোর্টার, বিশ্ব এইডস দিবসে ঢাকায় আলোচনা সভা, ২রা ডিসেম্বর, ২০০০ ইং) পৃ.১)
সিফিলিস-প্রমেহ : বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আমেরিকার শতকরা ৯০% অধিবাসী রতিজ দুষ্ট ব্যাধিতে আক্রান্ত। সেখানকার সরকারী হাসপাতালগুলিতে প্রতি বৎসর গড়ে দুই লক্ষ সিফিলিস এবং এক লক্ষ ষাট হাজার প্রমেহ রোগীর চিকিৎসা করা হয়। (Encyclopedia Britannica, V. 23, P. 45.) এছাড়াও আমেরিকায় প্রতি বৎসর ত্রিশ-চল্লিশ হাজার শিশু জন্মগত সিফিলিস রোগে মৃত্যুবরণ করে। ( আঃ খালেক, নারী, (ঢাকা : ই.ফা. বা., ১৯৮৪ ইং), পৃ. ৯৬)
Dr. Laredde বলেন— ফ্রান্সে প্রতি বৎসর কেবল সিফিলিস ও তদ-জনিত রোগে ত্রিশ হাজার লোক মারা যায়। (প্রাগুক্ত)
হার্পিস রোগ :
ব্যভিচারের কারণে জননেন্দ্রিয়ে সৃষ্ট অত্যন্ত পীড়াদায়ক রোগ হলো Genital Herpes. মার্কিন জনসংখ্যার শতকরা দশ ভাগ (জনসংখ্যা ২৬ কোটি ধরলে তার ১০% হয় ২ কোটি ৬০ লক্ষ) এই রোগে আক্রান্ত। এটাই সব নয়। প্রত্যেক বৎসর প্রায় ৫০০,০০০ মানুষের নাম এই মারাত্মক হার্পিস রোগীদের তালিকায় নতুন করে যুক্ত হচ্ছে। (Baron & Byrne, Social psychology : Understanding Human Interaction, P. 329.)
৮. বিশ্ব ভালবাসা দিবসের এসব ঈমান বিধ্বংসী কর্ম-কাণ্ডের ফলে মুসলিম যুব-মানস ক্রমশ ঈমানি বল ও চেতনা হারিয়ে ফেলছে।
৯. মানুষের হৃদয় থেকে তাকওয়া তথা আল্লাহর ভয় উঠে যাচ্ছে।
প্রিয় মুমিন-মুসলিম ভাই-বোনেরা ! ভালবাসা কোন পর্বীয় বিষয় নয়। এটি মানব জীবনের সুখ-শান্তির জন্য একটি জরুরি সার্বক্ষণিক মানবিক উপাদান। সুতরাং আমাদের মধ্যে ভালবাসা ও সৌহার্দ বৃদ্ধির জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শিখানো সার্বক্ষণিক পন্থাটি অবলম্বন করি।
বিশ্ব ভালবাসা দিবসের নামে এসব ঈমান বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড হতে আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে হেফাযত করুন। শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই যেন কাউকে ভালবাসি এবং শত্রুতাও যদি কারো সাথে রাখতে হয়, তাও যেন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই রাখি। আমীন !!!

সূত্র-

http://www.quraneralo.com/valentine-day-part-2/

ভালোবাসা দিবস আমাদের সংস্কৃতি নয় ,সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদের ফতোয়া

ভালোবাসা দিবস আমাদের সংস্কৃতি নয়

গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ বা ‘ভালোবাসা দিবস’ নামে নতুন একটি দিবস উদযাপন করা হচ্ছে। আগে শুধু এ দেশেই নয়, বেশির ভাগ মুসলিম দেশেই এটা পালিত হতো না। হোটেল মালিকসহ ব্যবসায়ীদের একটি অংশও ব্যবসায় মুনাফার স্বার্থে এটাকে উৎসাহ জোগাচ্ছেন। ‘ভালোবাসা দিবসে’র ইতিহাস ও ভিত্তি কী? ড. খালিদ বেগ এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করেছেন। সেখান থেকে কিছু কথা তুলে ধরা জরুরি।

বিজাতীয় সংস্কৃতি চর্চা করছে যেসব মুসলমান, তাদের বেশির ভাগই জানে না যে, আসলে তারা কী করছে। তারা অন্ধভাবে অনুকরণ করছে তাদের সাংস্কৃতিক নেতৃবর্গকে, যারা তাদের মতোই অন্ধ।

যাকে নির্দোষ আনন্দ মনে করা হচ্ছে, তার শেকড় যে পৌত্তলিকতায় প্রোথিত হতে পারে, এটা ওরা বোঝেই না। যে প্রতীকগুলো তারা আঁকড়ে ধরেছে, সেগুলো হয়তোবা (ধর্মীয়) অবিশ্বাসের প্রতীক। আর যে ধ্যানধারণা তারা ধার নিয়েছে, তা হতে পারে কুসংস্কার। এসব কিছু হয়তো ইসলামের শিক্ষার সম্পূর্ণ পরিপন্থী।

‘ভালোবাসা দিবস’-এর প্রচলন ইউরোপের বেশির ভাগ দেশ থেকে স্বাভাবিকভাবেই উঠে গিয়েছিল। তবে ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রে এটা উদযাপিত হতো। দিবসটি হঠাৎ করে বহু মুসলিম দেশে গজিয়ে উঠেছে।

ভালোবাসা দিবসের উৎপত্তি নিয়ে কাহিনী-কিংবদন্তি প্রচুর। এটা স্পষ্ট, খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে রোমানরা এটা শুরু করেছিল পৌত্তলিক পার্বণ হিসেবে। 'উর্বরতা ও জনসমষ্টির দেবতা' লুপারকাসের সম্মানার্থেই এটা করা হতো। এর প্রধান আকর্ষণ ছিল লটারি। ‘বিনোদন ও আনন্দে’র জন্য যুবকদের মাঝে যুবতীদেরকে বণ্টন করে দেয়াই ছিল এই লটারির লক্ষ্য। পরবর্তী বছর আবার লটারি না হওয়া পর্যন্ত যুবকরা এই ‘সুযোগ’ পেত।

ভালোবাসা দিবসের নামে আরেকটি ঘৃণ্য প্রথা ছিল, যুবতীদের প্রহার করা। সামান্য ছাগলের চামড়া পরিহিত দুই যুবক একই চামড়ার তৈরি বেত দিয়ে এ নির্যাতন চালাত। উৎসর্গিত ছাগল ও কুকুরের রক্তে এই যুবকদের শরীর থাকত রঞ্জিত। এ ধরনের 'পবিত্র ব্যক্তি'দের 'পবিত্র' বেতের একটি আঘাত খেলে যুবতীরা আরো ভালোভাবে গর্ভধারণ করতে পারবে বলে বিশ্বাস করা হতো।
খ্রিষ্টধর্ম এই কুপ্রথা বন্ধ করার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। এই প্রয়াসের অংশ হিসেবে প্রথমে মেয়েদের বদলে সন্ন্যাসীদের নামে লটারি চালু হলো। মনে করা হয়েছিল, এর ফলে যুবকরা তাদের জীবনকে অনুসরণ করবে। খ্রিষ্টধর্ম এ ক্ষেত্রে শুধু এটুকুই সফল হলো যে, ভালোবাসা দিবসের নাম ‘লুপারক্যালিয়া’ থেকে ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ হয়েছে। গেলাসিয়াস নামের পোপ ৪৯৬ খ্রিষ্টাব্দে এটা করেন সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন নামের সন্ন্যাসীর সম্মানার্থে। তবে ৫০ জন ভ্যালেন্টাইনের কথা শোনা যায়। তাদের মধ্যে মাত্র দুজন সমধিক পরিচিত। অবশ্য তাদের জীবন ও আচরণ রহস্যাবৃত। একটি মত অনুসারে, ভ্যালেন্টাইন ছিলেন ‘প্রেমিকের সন্ন্যাসী’। তিনি একবার কারাবন্দী হয়েছিলেন। কিন্তু পড়ে যান কারাগারের অধিকর্তার কন্যার প্রেমে।

লটারি নিয়ে মারাত্মক সঙ্কট দেখা দেয়ায় ফরাসি সরকার ১৭৭৬ খ্রিষ্টাব্দে ভ্যালেন্টাইন দিবস উদযাপন নিষিদ্ধ করে দেয়। এদিকে, সময়ের সাথে সাথে একপর্যায়ে ইতালি, অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি ও জার্মানি থেকে দিবসটি বিদায় নেয়। সপ্তদশ শতকে পিউরিটানরা যখন বেশ প্রভাবশালী ছিল, তখন ইংল্যান্ডেও ভালোবাসা দিবস নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে ১৬৬০ খ্রিষ্টাব্দে রাজা দ্বিতীয় চার্লস আবার এটি পালনের প্রথা চালু করেন।

ইংল্যান্ড থেকে ভ্যালেন্টাইন গেল ‘নতুন দুনিয়া’য়; অর্থাৎ আমেরিকায়। সেখানে উৎসাহী ইয়াঙ্কিরা পয়সা কামানোর বড় সুযোগ খুঁজে পেল এর মাঝে।

ইসথার এ হাওল্যান্ডের মতো কেউ কেউ সর্বপ্রথম ১৮৪০ সালে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ভ্যালেন্টাইন ডে কার্ড বের করেন। হাওল্যান্ড প্রথম বছরই পাঁচ হাজার ডলার দামের কার্ড বিক্রি করেছিলেন। তখন ‘পাঁচ হাজার ডলার’ মানে অনেক। এরপর থেকে ‘ভ্যালেন্টাইন শিল্প’ জমজমাট হয়ে ওঠে।

‘হ্যালোউইন’-এর ক্ষেত্রেও ভ্যালেন্টাইনের ঘটনা ঘটেছে। ওই উৎসবে ভূত-পেত্নীর মতো পোশাক পরে দৈত্যদানব পূজার প্রাচীন পৌত্তলিক প্রথার পুনরাবৃত্তি করা হয় মাত্র। খ্রিষ্ট্রধর্ম পুরনো নাম বদলিয়ে ‘হ্যালোউইন’ রাখলেও উৎসবটির ভিত্তি রয়ে গেছে পৌত্তলিকতাকেন্দ্রিক।

পৌত্তলিক জাতির মানুষরা ভূত-প্রেতকে খুব ভয় পেত। বিশেষ করে তাদের জন্মদিনে ভয়টা যেত বেড়ে। মানুষের দৈনন্দিন জীবনে পরিবর্তনের মুহুর্তে যেমন বয়সের বছরপূর্তি­ এসব অপশক্তি আরো বেশি বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ায় বলে বিশ্বাস করা হতো। তাই পরিবার-পরিজন হাসি-আনন্দে সে ব্যক্তিকে ঘিরে রাখা হতো, যার জন্মদিন পালন করা হতো। তাদের বিশ্বাস, এভাবে মন্দ থেকে তাকে রক্ষা করা যায়।

ইসলামবিরোধী ধ্যান-ধারণা ও বিশ্বাসে যেসব প্রথা ও উৎসবের মূল নিহিত, সেগুলোর ব্যাপারে ইসলাম উদাসীন থাকবে বলে কি মনে করা যায়?

অবিরাম মিডিয়ার প্রচারণাসহ নানাভাবে বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক প্রোপাগান্ডা চলছে। এটা একটা বিরাট ট্র্যাজেডি যে, এ অবস্থায় মুসলমানরাও ভ্যালেন্টাইন, হ্যালোউইন ভূত, এমনকি সান্তাক্লসকে আলিঙ্গন করছে।” ড. খালিদ বেগের এই গুরুত্বপূর্ণ অভিমতগুলো লন্ডনের ইমপ্যাক্ট ইন্টারন্যাশনাল সাময়িকীর মার্চ ২০০১ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল।

কথা হলো পৌত্তলিকতা ও কুসংস্কারের ওপর যার ভিত্তি, সেই ভ্যালেন্টাইন ডে বাংলাদেশের মতো কোনো দেশে­ যেখানে প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ মুসলিম, পালন করা উচিত নয়। ইসলাম আমাদেরকে শিখিয়েছে সবাইকে প্রকৃত অর্থেই ভালোবাসতে। এটা বিশেষ কোনো দিবস, এভাবে উদযাপনের ওপর নির্ভর করে না। আমাদের দেশে ‘ভালোবাসা দিবস’ কিছু তরুণ-তরুণীর অবাধ মেলামেশার উপায়ে পরিণত হয়েছে। এটা মুসলিম সংস্কৃতির অংশ নয়। অশ্লীলতা বাড়িয়ে দেয়­ পাশ্চাত্য সংস্কৃতির এমন কোনো কিছু আমাদের দেশে চলতে দেয়া অনুচিত। বাংলাদেশসহ মুসলিম দেশগুলোতে এসব বন্ধ করার ব্যাপারে পণ্ডিত ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিক, শিক্ষক, ইমাম, সমাজকর্মী প্রমুখের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
============
সত্যি আমরা আমাদের দূর্ভাগা জাতি। আমরা না জানি নিজেদের ধর্ম, না জানি নিজেদের কৃষ্টি ও সভ্যতা। এজন্য প্রথমেই এগিয়ে আসা উচিত্‌ রাষ্ট্রকে। কিন্তু অতি পরিতাপের বিষয় আমাদের দেশের রাষ্ট্র প্রধান থেকে শুরু করে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী যখন "ভ্যালেন্টাইন্‌স ডে বা ভালোবাসা দিবসে" নিজেদেরকে ঐ দিবসে উপস্থিত থেকে জনসাধারণকে ভালোবাসা দিবসে সামিল হওয়ার জন্য আহ্বান জানায়। বক্তৃতা ও বিবৃতি দিয়ে বিদেশী অপসংস্কৃতিকে পালনের জন্য সহজ-সরল মানুষগুলোকে আহ্বান জানায়। বিশেষকরে উড়তি বয়সের তরুন-তরুনী, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে মেয়েরা বেশি আকৃষ্ট হয়। এই সংস্কৃতি শুধু বেহায়াপনা তৈরী করে না সমাজে বিশৃংখলা সৃষ্টি করে। মুক্তমনা সংস্কৃতির নামে সমাজে আজ নারী প্রগতিবীদ ও কিছু সুশীল! সমাজপতিরা উদার মানসিকতার কথা বলে, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে, নারীদের বেপর্দা করে রাস্তায় নামিয়ে দিয়েছে। সন্তান-সন্ততিদের মায়ের স্নেহ ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করেছে। অথচ ইসলাম কখনো নারীকে অন্তপুরে বন্দি রাখতে বলেনি। পর্দা করে সকল কাজে অংশীদার হতে বলেছে। আমাদের দূর্ভাগ্য ইসলামের আলেম সমাজ সম্প্রদায় এই কথাগুলো প্রচার করতে ব্যর্থ হয়েছে। ইসলাম যে একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান তা সমাজে তুলে ধরতে অক্ষম হচ্ছে। দেখবেন অনেকের পিতা মাতা আছেন যাঁরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন তবে তাদের ছেলে-মেয়েরা এই সমস্ত অপসংস্কৃতিতে অংশগ্রহণ করছে। তাই আমি মনে করি সর্বপ্রথমে পরিবারের পিতা-মাতাকে সন্তানের মঙ্গলের জন্য এগিয়ে আসা উচিত্‌। আজ শহর থেকে গ্রামেও এই ভালোবাসা দিবস ছড়িয়ে গেছে। গ্রামের ছাত্র-ছাত্রীরা তাঁদের সহজ-সরল বাবা মাকে ভুল বুঝিয়ে অর্থ নিয়ে এই অপসংস্কৃতিকে পালন করছে। আজ ইউরোপ আমেরিকায় ভালোবাসার নামে দিনে দুপুরে সবারই সামনে যেভাবে ভালোবাসার প্রমাণ দেয় তা পশু প্রবৃত্তিকেও ছাড়িয়ে গেছে।





ভালবাসা দিবস সম্পর্কে সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদের ফতোয়া
(ফতোয়া নং ২১২০৩ তারিখঃ ২৩-১১- ১৪২০ হি. )

ফতোওয়াটি সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদে বিশ্লেষণের পর এই মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়েছে যে, কুরআন সুন্নাহর স্পষ্ট প্রমাণাদি দ্বারা এ কথা অকাট্যভাবে প্রমাণিত যে, ইসলামে ঈদ বা উৎসবের দিন মাত্র দু'টি। সালাফে সালেহীনগণও এ বিষয়ে একমত হয়েছেন। ইসলামে স্বীকৃত ঈদ দুটির একটি হল ঈদুল ফিতর, অপরটি হল ঈদুল আজহা বা কুরবানির ঈদ। উল্লিখিত ঈদ দু'টি ব্যতীত যত ঈদ বা উৎসব আছে, হোক না তা কোন ব্যক্তির সাথে সম্পৃক্ত, বা কোন গোষ্ঠীর সাথে সম্পৃক্ত, বা কোন ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত, তা বিদআত। মুসলমানদের তা পালন করা বা পালন করতে বলা বৈধ নয় এবং এ উপলক্ষে আনন্দ প্রকাশ করা ও এ ব্যাপারে কিছু দিয়ে সাহায্য করাও নিষেধ। কেননা এ ধরনের কাজ আল্লাহ তা'আলার সীমা লঙ্ঘন বৈ অন্য কিছু হবে না। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সীমা লঙ্ঘন করবে সে নিজের উপর অত্যাচার করবে। এ ধরনের কালচার বিধর্মীদের অনুসরনের কল্পে গ্রহণ করা হলে অপরাধ আরো মারাত্বক হবে। কারণ এর মাধ্যমে তাদের সদৃশ্যতা গ্রহণ করা এবং তাদেরকে এক ধরনের বন্ধু বানানো হয়। অথচ আল্লাহ তাআলা মুমিনদেরকে এ থেকে বারণ করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, من تشبه بقوم فهو منهم যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের সাথে সদৃশ্যতা অবলম্বন কর সে তাদের দলভুক্ত বলে গণ্য। ভালবাসা দিবস পালন করাও এ নিষেধের অন্তর্ভুক্ত। কেননা এটি খৃষ্টানদের উৎসব। যে মুসলমান আল্লাহ এবং পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে তার জন্য এ কাজ করা দেয়া বা এই দিনে কাউকে ফুল বা অন্যকোনো উপহার দেয়া বৈধ নয়। বরং তার কর্তব্য হল আল্লাহ এবং তার রাসূলের হুকুম পালন করা এবং আল্লাহর শাস্তি ও গযব আসে এমন কাজ থেকে নিজে দূরে থাকা ও অন্যদের দূরে রাখা।
অতএব এ দিবসকে কেন্দ্র করে পানাহার করা, ক্রয়-বিক্রয় করা, কোন কিছু প্রস্তুত করা বা উপঢৌকন দেয়া, চিঠি-পত্র চালাচালি করা ও প্রচার-পত্র বিলি করা অবৈধ। এ সমস্ত কাজের মাধ্যমে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানি করা হয়। আল্লাহ তা'আলা বলেন,
وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ المائدة2

ফতোয়াটি যারা সত্যায়ন করেছেন :
সৌদি আরবের গবেষণা ও ফতোয়া প্রদান বিষয়ক স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ও সদস্যবৃন্দ:
আব্দুল আযিয বিন আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আলে শেখ
২.সদস্য: সালেহ বিন ফাওজান আল-ফাওজান
সদস্য: আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান আল-গদইয়ান
৪. সদস্য: বকর বিন আব্দুল্লাহ আবু জায়েদ

http://www.islamhouse.com/p/192807