Translate

মঙ্গলবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৮

ইমাম মাহদীর আগমন বার্তা আলামত ও পরিচয়।তাঁর আগমন কি ২০২৬ সালেই

বর্তমান সময়ে অতন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল কেয়ামতের পূর্বে ইমাম মাহদীর আগমন বার্তা। যা টল্কঅপদা ওয়াল্ড হিসাবে গন্য, তাই সে  সম্পর্কে জানা  অত্যন্ত জরুরী বিষয়।
কারণ অনেক ভন্ড মাহদীর দাবীদার ও বের হবে তাই সঠিক আলামত জানা জরুরী।
তাই আসুন আমরা সঠিক
সহিহ হাদিসের আলোকে ইমাম মাহদি (আ)-এর আগমন-ভবিষৎবাণী সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

সহীহ হাদিসে ইমাম মাহদী

হাদিসে ইমাম মাহদী সম্পর্কে যেসব ভবিষৎবাণী রয়েছে সেটিকে অপব্যাখ্যা দিয়ে এ যাবৎ বহু জনে নিজেদের ‘ইমাম মাহদী’ দাবি করেছে। তাদের কারণে দ্বীনি জ্ঞানশূন্য সহজ সরল মানুষরাই বেশি প্রতারিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক তথ্যভাণ্ডার উইকিপিডিয়া’র লিংক নিচে দেয়া হল। ইমাম মাহদী সম্পর্কে একদম সংক্ষেপে দারুন কিছু কথা সেখানে তুলে ধরা হয়েছে। যাচাই করতে এখানে (উইকিপিডিয়া) ক্লিক করুন।

ইমাম মাহদীর পরিচয়

নাম ও বংশ :

ইমাম মাহদীর প্রকৃত নাম ‘মুহাম্মদ‘। (আবু দাউদ, হাদিস নং ৩৬০১)। উপনাম : আবু আব্দুল্লাহ / আবুল কাশেম। উপাধি : মাহদি (আ)

হাদিসে এসেছে, মাহদি আমার বংশে ফাতেমা’র সূত্রধরে আগমন করবে। (আবু দাউদ, হাদিস নং ৩৬০৩/৪২৮৪)।

হাদিসে আরো এসেছে “মাহদি আমার বংশে হবে। কোনো এক রজনীতে মহান স্রষ্টা তাঁকে ঐশ্বর্য দান করবেন ও সংশোধন করবেন।” (সুনানে ইবনে মাজাহ, বিশৃঙ্খলা অধ্যায়; হাদিস নং ৪০৮৫, সনদ সহিহ) ।

উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা (রা) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূল (সা) বলেছেন, আশ্চর্য হচ্ছি এ ভেবে যে, আমার উম্মতের মধ্য হতে একটি দল বায়তুল্লায় আশ্রয় নেয়া এক ব্যক্তিকে আক্রমণ করতে অগ্রসর হবে। যখন তারা মরুপ্রান্তর পাড়ি দেবে তখন তাদেরকে জমিনের ভেতর ধসে দেয়া হবে।” (সহিহ বুখারি, ব্যবসা অধ্যায়, বাজার পরিচ্ছেদ এবং সহিহ মুসলিম, হা/২৮৮২ ফেতনা অধ্যায়, তিরমিযী হা/১২৭৬) ।

এখানে বায়তুল্লায় আশ্রয় নেয়া এক ব্যক্তি বলে ইমাম মাহদি (আ)-কেই বুঝানো উদ্দেশ্য। কারণ তিনি কুরাইশী এবং কেয়ামত পূর্বমুহূর্তে আল্লাহ তায়ালার সম্মানিত খলিফা হয়ে আসবে।

জন্ম ও জন্মভূমি 

তিনি স্বাভাবিকভাবে মানুষের মতই মাতাপিতার ওরসে জন্ম লাভ করবেন। তাঁর জন্মস্থল নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তবে কানজুল উম্মাল কিতাবের (হা/৩৯৬৭১) একটি রেওয়ায়েত দ্বারা বুঝা যায় যে, তাঁর জন্মস্থল হবে ‘মদিনা‘।
.
কিন্তু হযরত ইবনে উমর (রা) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন “হে কূফাবাসী তোমরা ইমাম মাহদি’র আগমনে অত্যন্ত সৌভাগ্যবান।” এতে এও বুঝা যায় যে, ‘কূফা‘ শহর তাঁর জন্মস্থল হতে পারে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ, হা/৩৩১২১ এবং ৩৮৭৯৮)।

ইমাম মাহদির বৈশিষ্ট্য 

তাঁর শারিরীক গঠন মাধ্যম। ললাট দীপ্তিময়, উজ্জ্বল, ডাগর চক্ষুবিশিষ্ট। সম্মুখের উজ্জ্বল দাঁতগুলো ফাঁকা। ঘন দাড়ি বিশিষ্ট। সাদা ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করবেন ইত্যাদি। তখন তাঁর বয়স থাকবে চল্লিশ। (তাবারানী ফিল-কাবীর, হা/৭৪৯৫; এর সনদ দুর্বল হলেও ভিন্ন হাদিস দ্বারা এসব সমর্থিত) ।

হাদিসে আরো এসেছে “মাহদি আমার বংশধর। তিনি উজ্জ্বল ললাটের ও উঁঁচা নাসিকা বিশিষ্ট হবেন। পৃথিবীকে ন্যায় নীতি ও ইনসাফ দ্বারা ভরপুর করে দেবেন। তিনি সাত বছর শাসন করবেন।” (সুনানে আবু দাউদ : হা/৪২৮৫; এর সনদ সহিহ) ।

উল্লেখ্য, কেউ কেউ ইমাম মাহদীর নামের পর “আলাইহিস সালাম” (সংক্ষেপে “আ:“) লিখে থাকেন। হযরত বিবি মরিয়ম, বিবি আসিয়া, আদি মাতা বিবি হাওয়া আর হযরত খিজির এবং যুলকরনাইন বাদশা উনাদের নামের পরেও দোয়া স্বরূপ “আ:” লিখা থাকে। অথচ উনাদের কেউ নবী ছিলেন না। তেমনি ইমাম মাহদীকেও “নবী” মনে করা ভুল। কেননা হযরত মুহাম্মদ (সা:)-ই সর্বশেষ নবী। উনার পরে নবুওতের দরজায় তালা লেগে গেছে। এখন আর সেই তালা খুলার সাধ্য কারো নেই। তবে হিজরী একাদশ শতাব্দীর প্রখ্যাত মুজাদ্দিদ শায়খ সাইয়িদ আহমদ সারহিন্দি (রহঃ) তিনি স্বীয় “মাকতূবাত” কিতাবের ৪র্থ খন্ডের ৫৮৭ নং পৃষ্টায় ইমাম মাহদীর নামের শেষাংশে “রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু” লিখেছেন। তাই আমাদেরও উচিৎ এই নিয়মেই লিখা।

যুগে যুগে ভণ্ড মাহদি 

বিভিন্ন হাদিসে ইমাম মাহদি (রা:) এর আবির্ভাবের সুসংবাদ থাকায় একশ্রেণীর অসাধু লোক নিজেদের “মাহদি” দাবি করেছিল। এখনো তা অব্যাহত রয়েছে। ভারত উপমহাদেশেরকাদিয়ানী ফেতনার প্রতিষ্ঠাতা মির্যা গোলাম আহমদ ১৮৯১ সালে নিজেকে ইমাম মাহদী এবং ঈসা ইবনে মরিয়ম দাবি করেছিল। সে জোরদার ভাবে তা প্রচারও করত। যদিও সে পরবর্তীতে তথা ১৯০১ সালে হঠাৎ ‘নবী‘ দাবি করেছিল।  মির্যা গোলাম আহমদ  কাদিয়ানী ১৯০৮ সালে পাকিস্তানের লাহোর মারা যান। মুসলমানদের আন্দোলনের ফলে পাক সরকার ১৯৭৪ সালের ৭-ই সেপ্টেম্বর  কুরআন-সুন্নাহ’র আলোকে কাদিয়ানী সম্প্রদায়কে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা দেয়। তারপর থেকেই  এরা নিজেদের সকল কার্যক্রম ব্রিটেন আর ইস্রাইলের হাইফা শহরে সরিয়ে নেয়। সকল মুসলমানের দৃষ্টিতে কাদিয়ানি জামাত  ‘কাফের’ এবং ইসলামের মোড়কে একটি নিকৃষ্ট মুরতাদ গোষ্ঠী । 

কে হবেন ইমাম মাহদি?

“মাহদি” শব্দের অর্থ পথপ্রদর্শক। কেয়ামত পূর্বমুহূর্ত তিনি মুসলিম জাতির প্রাণ রক্ষা ও সহায়তা করবেন বিধায় তাকে মাহদি উপাধি প্রদান করা হয়েছে। তিনি কুরাইশ বংশে হযরত ফাতেমা’র আওলাদ হতে আসবেন। হাদিসে এসেছে “আল্লাহ তায়ালা আমার বংশ হতে এক ব্যক্তিকে প্রেরণ করবেন। আমার নামেই তাঁর নাম, তাঁর পিতার নাম আমার পিতার নামেই থাকবে।”

(সহিহ আল-জামে, হা/৫০৭৩, মুসনাদে আহমদ ৩/২৬-২৭, তিরমিযী, হা/২২৩২)।

ইমাম মাহদি (রা:) তিনি বায়তুল্লাহ শরিফেই আত্মপ্রকাশ করবেন। দাজ্জাল আর হযরত মসীহে ঈসা এবং প্রতিশ্রুত ইমাম হযরত মাহদি সবার সময়কাল একই হবে। প্রতিশ্রুত ইমাম হযরত মাহদি’র জীবদ্দশাতেই বিশ্বে ইসলামী স্টেট প্রতিষ্ঠা হবে, তিনি ৭/৮/৯ বছর খেলাফত করবেন অতপর স্বাভাবিকভাবে ইন্তেকাল করবেন। যারা উপরুল্লিখিত আলোচনাদি স্মরণে রাখবেন তারা আমৃত্যু ভণ্ডদের প্রতারণায় কিছুতেই বিভ্রান্ত হবেননা।

হাদিসে বিশ্বনবীর ভবিষৎবাণী 

ইমাম মাহদি (রা:) কেয়ামত পূর্বমুহূর্তে বায়তুল্লাহ শরিফে আশ্রয় নেবেন। দুশমন তাঁকে হত্যা করার জন্য বায়তুল্লাহ শরিফে আক্রমণ করবে।

১- সহিহ মুসলিম শরিফে (হা/২৮৮৪) এবং মুসনাদে আহমদ কিতাবে (হা/২৪৭৮২) এসেছে “আশ্চর্যজনক ব্যাপার হল, আমার উম্মতের একটি দল বায়তুল্লায় আশ্রয় নেয়া এক কুরাইশীকে হত্যাকরার জন্য অগ্রসর হবে। দলটি মরুভূমিতে অবস্থানরত অবস্থায় ভূমিকম্পের সম্মুখীন হবে।” উল্লেখ্য, এখানে “কুরাইশী” বলে ইমাম মাহদি (রা:)-ই উদ্দেশ্য।

২- হাদিসে এসেছে “আসমান থেকে এক ব্যক্তির নামধরে ডাকা হবে। তাঁকে কোনো নিম্নশ্রেণীর মানুষ প্রত্যাখ্যান করবেনা, কোনো বিত্তশালী ও ক্ষমতাবান লোকেও অগ্রাহ্য করবেনা।”

(মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ, হা/৩৭৭৫৫, হাদিসটি হাসান স্তরের হাদিস)।

৩- হযরত ইবনে মাসউদ (রা:) থেকে বর্ণিত, সূর্যের মাঝে যখন একটি আশ্চর্যজনক চিহ্ন প্রকাশ পাবে, ইমাম মাহদি তখনি আত্মপ্রকাশ করবেন।

(মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হা/২০৭৭৫, ইমাম বুখারীর উস্তাদ ইমাম নাঈম ইবনে হাম্মাদ, হাদিস নং ৯৫১; হাদিসটির সনদ সহিহ) ।

৪- হযরত উম্মে সালমা (রা:) হতে বর্ণিত, মহানবী (সা:) ইরশাদ করেন, তৎকালীন খলিফার ইন্তিকালে জনগণের মাঝে মতানৈক্য পরিদৃশ্য হবে। মদীনার জনৈক বিশেষ ব্যক্তি (ইমাম মাহদী) নিজের পরিচয় গোপন রেখে মক্কায় পাড়ি জমাবেন। মক্কাবাসীরা ইমাম মাহদীকে খলিফা বানানোর জন্য অন্বেষণ করতে গিয়ে তাঁকে বের করে ফেলবেন। যদিও তিনি এ দায়িত্ব গ্রহণ করতে সন্তুষ্টচিত্ত থাকবেন না। তা সত্ত্বেও লোকেরা রুকনে হাজার ও মাকামে ইবরাহীম এর মাঝে তার হাতে আনুগত্যের বাইয়্যাত করবেন। … লোকেরা জানতে ও দেখতে পেরে শামের আবদালগণ, ইরাকের জনগণ দলে দলে তাঁর হাতে উক্ত স্থানে আনুগত্যের শপথ নিবেন। (সুনানু আবু দাউদ-২ /২৩৯)

৫- হাদিসে এসেছে, রাসূলেপাক (সা) বলেছেন “শেষ যামানায় এক ব্যক্তি খলিফা হয়ে আসবেন। তিনি মানুষের মাঝে সম্পদ বণ্টন করবেন।

(সহিহ মুসলিম, ফেতনা অধ্যায়, মুসনাদে আহমদ, ৩/৮০)।

৬- হযরত আয়েশা (রা) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূল (সা) বলেছেন, আশ্চর্য হচ্ছি এ ভেবে যে, আমার উম্মতের মধ্য হতে একটি দল বায়তুল্লায় আশ্রয় নেয়া এক ব্যক্তিকে আক্রমণ করতে অগ্রসর হবে। যখন তারা মরুপ্রান্তর পাড়ি দেবে তখন তাদেরকে জমিনের ভেতর ধসিয়ে দেয়া হবে।”

(সহিহ বুখারি, ব্যবসা অধ্যায়, বাজার পরিচ্ছেদ এবং সহিহ মুসলিম, হা/২৮৮২ ফেতনা অধ্যায়, তিরমিযী হা/১২৭৬) ।

এখানে বায়তুল্লায় আশ্রয় নেয়া এক ব্যক্তি বলে ইমাম মাহদি (আ)-কেই বুঝানো উদ্দেশ্য। কারণ তিনি কুরাইশী এবং আল্লাহ তায়ালার খলিফা।
.
৭- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : শেষ যামানায় আমাদের বংশ হতে তিন ব্যক্তি আগমন করবেন। ছাফফাহ, মানসূর এবং ইমাম মাহদি।

(বায়হাক্বী, দালায়েলুন নবুওয়াত ৬/৫১৪, তারিখে বাগদাদ ১/৬৩, তারিখে ইবনে কাসীর ৬/২৫১, হাকিম ৪/৫১৪)

৮- হাদিসে এসেছে, রাসূলেপাক (সা) বলেছেন : আমার উম্মতের মাঝে মাহদির আত্মপ্রকাশ হবে। তিনি সর্বনিম্ন সাত বছর আর সর্বোচ্চ নয় বছর শাসনকার্য পরিচালনা করবেন।

(সুনানে ইবনে মাজাহ, ইমাম মাহদি পরিচ্ছেদ, হা/৪০৮৩; হাদিসটির সনদ সহিহ) ।

৯- বিশিষ্ট তাবেয়ী ও বুখারীর অন্যতম বর্ণনাকারী হযরত মুহাম্মদ ইবনে শিরীন (রহ) হতে বর্ণিত যে, “ইমাম মাহদি (রা:) এ উম্মতের মধ্য থেকেই আসবেন। তিনি হযরত ঈসা (আ)-এর ইমামতি করবেন। “

(মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ, হা/৩৮৮০৪)

১০- বিশিষ্ট তাবেয়ী ও বুখারীর অন্যতম বর্ণনাকারী হযরত সাঈদ ইবনে মুছাইয়্যেব (রহ) বলেন, শেষ যামানায় মানুষ নানা দল-উপদলে বিভক্ত হবে। পরস্পরে মতবিরোধ ছড়িয়ে পড়বে। আসমানের দিগন্তে একটি ঝুলন্ত হাত প্রকাশ পাবে আর আসমান থেকে আহবান করবে যে, ওই ব্যক্তিই তোমাদের নেতৃত্বদানকারী মহান পুরুষ।”

(ইমাম বুখারীর উস্তাদ ইমাম নাঈম ইবনে হাম্মাদ, হাদিস নং ৯৭২; হাদিসটির সনদ দুর্বল) ।

১১- হাদিসে এসেছে “তোমাদের মধ্য হতে তিনটি দল ধনভাণ্ডার নিয়ে সংঘাতে লিপ্ত হবে। সবাই নিজেদের ইমাম মাহদি (রা:)-এর অনুসারী হওয়ার দাবি করবে। এদের একটি দল টিকে থাকবে। … যখন তোমরা তাঁদের নেতাকে দেখতে পাবে তখন তাঁর হাতে বাইয়াত নেবে। যদিও শীতল বরফের উপর হামাগুড়ি দিয়ে যেতে হয়, তবুও। অবশ্যই এ ব্যক্তিই আল্লাহ তায়ালার খলিফা ইমাম মাহদি।”

(সুনানে ইবনে মাজাহ, হা/৪০৮৪; হাদিসটির সনদ সহিহ, তাযকিরাহ : ৫৭৫, ইমাম তাহের পাটনী)।

.
হাদিসে আরো এসেছে, রাসূলেপাক (সা) বলেছেন “শেষ যামানায় এক ব্যক্তি খলিফা হয়ে আসবেন। তিনি মানুষের মাঝে সম্পদ বণ্টন করবেন।

(সহিহ মুসলিম, ফেতনা অধ্যায়, মুসনাদে আহমদ, ৩/৮০)।

আশাকরি ইমাম মাহদি (আ) এর আগমন নিয়ে ইসলামী জ্ঞানশূন্য একশ্রেণীর কথিত আধুনিক বন্ধুদের তাবৎ সন্দেহ ও সংশয় নিরসন হবে। যারা বুখারি এবং মুসলিম শরিফে ইমাম মাহদি (রা:)-এর আলোচনা না থাকার দাবি তোলে থাকেন তাদের সেই অজ্ঞতাজনিত দাবিও এবার ফিরিয়ে নেবেন।

ইমাম মাহদি বিষয়ক হাদিসগুলোর মান 

যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ও মুফাসসির সর্বজনখ্যাত আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী (রহ) ইমাম মাহদীর আগমন সংক্রান্ত হাদীসসমূহ সংকলন করে একটি আলাদা পুস্তিকাই লিখে গেছেন। যা তার الحاوي للفتاوي (হাভী লিল-ফাতাওয়া) গ্রন্থের ২য় খন্ডে রয়েছে। তাতে ২১৩-২৪৭ পৃষ্ঠা পর্যন্ত মোট ৩০ পৃষ্ঠাব্যাপী ইমাম মাহদী সংক্রান্ত হাদীসসমূহ সংকলিত হয়েছে। এরপর সুয়ূতী (রহ) লিখেছেন : আবুল হাসান মুহাম্মাদ ইবনে হুসাইন বলেন, “ইমাম মাহদীর আগমন সংক্রান্ত হাদীসসমূহ মুতাওয়াতির।”

হাফেয ইবনে হাজার (রহ) ফাতহুল বারীতে (৬/৫৬৯) লিখেছেন, “আবুল হাসান ‘মানাকিব আশ-শাফেয়ী’-তে লিখেছেন, ইমাম মাহদী নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উম্মত হবেন এবং ঈসা (আ) তার পিছনে নামায পড়বেন। তার আগমন সংক্রান্ত হাদীসসমূহ মুতাওয়াতির।”

সুতরাং ইমাম মাহদীকে অস্বীকার করার অর্থ, মুতাওয়াতির হাদীস দ্বারা প্রমাণিত অকাট্য বিষয়কে অস্বীকার করা। অতএব এ ধরনের চিন্তা ও বিশ্বাস থেকে বেঁচে থাকা জরুরি।

আরেকটি কথা হল, কোনো হাদিস সহিহ বা দুর্বল হওয়ার মানদণ্ড কিন্তু বুখারি মুসলিম বুঝায়না। যারা এ দুটিকে হাদিস সহিহ হবার মানদণ্ড বানিয়ে রাখেন তা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। কারো মনগড়া ব্যাপার নিয়ে আমি তর্কে জিততে চাইনা। কারণ, হাদিস সহিহ অথবা দুর্বল হয় সনদের বিশুদ্ধতার উপর ভিত্তি করে।

কোনো হাদিসের সনদ তথা বর্ণনা সূত্র যদি ক্রুটিযুক্ত হয়, তখন সেটি সহিহ বুখারি বা মুসলিম শরিফে স্থান নেবার পরেও যেমন সহিহ হিসেবে আখ্যায়িত হবেনা, তেমনি কোনো বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত হাদিস যদি অন্য কোনো হাদিস গ্রন্থে পাওয়া যায়, তখন সেটিকে দুর্বল বা অনিরাপদ বলা যাবেনা। এটাই ঊসূলে হাদিস।
আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে হক্ব বুঝার পর তা গ্রহণ করার তাওফিক দিন, আমীন।

সূত্র -ঃ 

লেখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী।

ইমেইল – nabifeni44@gmail.com

তাকমিল : দারুলউলুম আল হোসাইনিয়া ওলামাবাজার সোনাগাজি, ফেনী। 

হাদীস শরীফে ইমাম মাহদীর গ্রামের নাম কাদ’আ বা কাদেয়া?

মাহদী (আঃ) এর আগমন ২০২৬ সালেই !
===============================
পুরো বিশ্বে এখন অশান্তির দাবানল।সিরিয়ায় বর্তমানে যে যুদ্ধ  চলমান দুনিয়ার কোন শক্তি তা বন্ধ  করতে পারবেনা। এই  অসম যুদ্ধে  বিশ্বের ৮০ টি  রাস্ট্র  জড়িয়ে পড়বে। সর্বশেষ এটাই হবে  ৩য় বিশ্ব  যুদ্ধ  বা হাদীসের ভাষায় দুনিয়ার আখেরী লড়াই। হাদীস অনুযায়ী আল্লাহর হুকুমে একমাত্র ইমাম মাহদী আঃ ছাড়া অশান্ত  বিশ্বে কেউ শান্তির নীড় বুনতে পারবেনা। তাই  বর্তমানে,, কবে আসছে ইমাম মাহদী,,  এই  প্রতীক্ষা ও কৌতুহল  তাবৎ বিশ্বে আলোড়ন তুলেছে। মাহদী আঃ এর আগমন কাল সংক্রান্ত   অসংখ্য ছহী হাদীসে বিবরিত  লক্ষণ সমুহের মধ্যে  সবচেয়ে মনপুতঃ, যুক্তিগ্রাহ্য, সহজ বোধ্য এবং অকাট্য হচেছ, নিন্ম বর্ণীত  তথ্যটি  -

নিচের ৫ টি হাদীসে বলা হয়েছে যে বছর রমজান মাসে সুর্য গ্রহণ ও চন্দ্র গ্রহণ হবে সেই বছরই  ইমাম মাহদী আঃ এর আগন ঘটবে। আর হাদীসে একথাও পরিস্কার বলা আছে যে মহা বিশ্বের শুরু থেকে  শেষ অবধি এমন কারবার মাত্র  ১বারই ঘটবে। হাদীস গুলো দ্রস্টব্যঃ

১- আল বুরহান ফী আলামাতি  মাহদী গ্রন্থের ৩৮ প্ স্টায় আল্লামা মুত্তাকী রহঃ একটি হাদীস উল্যেখ করেছেন, যেখানে নবীজি সাঃ এরশাদ করেন, যে বছর রমজানের প্রথম দিকে সুর্যগ্রহণ এবং একই রমজানের শেষের দিকে চন্দ্র গ্রহণ হবে সেই বছরই  মাহদীর আবির্ভাব হবে।
২- আল কাওলুল মুখতাছার কিতাবের ৫৩ প্ স্টায় উল্যেখিত হাদীসে বলা হয়েছে, যে বছর রমজান মাসে উভয় গ্রহণের ঘটনা ঘটবে ঐ বছরই মাহদীর আবির্ভার ঘটবে।
৩- ইমামুল আকবর আলী বিন ওমরের,, দারে কুতনী গ্রন্থে আনীত হাদীসে বলা হয়েছে  ইমাম মাহদীর আগমনের ২ টি নিদর্শন রয়েছে যা আকাশ মন্ডল ও ভু মন্ডল তৈরীর পর থেকে আজোবধি কখনো সংঘটিত হয়নি ।
নিদর্শন দুটি হল  একই মাসে ২ গ্রহণ হওয়া।
৪- মুজাদ্দেদে  আলফেছানী রহঃ এর,, মাকতুবাতে রাব্বানী অর্থাৎঃ রাব্বানীর পত্রাবলী )  এর ৩৮০ নাং পত্রে  বলা হয়েছে  যে বছর রমজান মাসের শুরুর দিকে সুর্য গ্রহণ ও ১৪ ই রমজান চন্দ্র গ্রহণ হবে সে বছরই মাহদী আঃ এর আবির্ভাব ঘটবে।
৫- বিশ্ব বিখ্যাত মুফাছিছর আল্লামা ইমাম কুরতুবী রহঃ রচিত,, মুখতাছার তাযকিয়াহ  গ্রন্থের  ৪৪০ পাতায় বলা হয়েছে  ইমাম মাহদী আঃ এর আগমনের পুর্বে দুটি  গ্রহণ একই রমজান মাসেই  ঘটবে। 
সব হাদীস একটি দাবীই পরিস্কার করেছে, যে একই রমজানে চন্দ্র ও সুর্য গ্রহণের বছরই মাহদী আঃ আসবেন।  এখন সেই বহুল আরাদ্য  সালটা কবে নাগাদ !  এটা বের করতে পারলেই ইমাম মাহদীর আগমনের বছর বলা যাবে।
তাহলে আসুন ঃ
প্রথমে প্রতি বছর রমজান কত তারিখে শুরু হবে তা বের করা হয়েছে। ২০১৯ সালের রমজান কত তারিখে শুরু হবে - ২০২০ সালের রমজান কত তারিখে শুরু হবে ইত্যাদি। এভাবে ২০৫০ সাল পর্যন্ত একটি  তালিকা বানানো হয়েছে।
২য়তঃ - প্রতি বছরের রমজানের কোন কোন তারিখে চন্দ্র ও সুর্য গ্রহণ হবে সেটা বের করার জন্য  ( ঘ অ ঝ অ)  এর ওয়েবসাইট  ব্যবহার করা হয়েছে। যেখানে আগামী ১০০ বছরে চন্দ্র ও সুর্য গ্রহণ কোন কোন তারিখে হবে  তার ডাটা টেবিল আকারে উল্যেখ আছে।  আমেরিকান মহাকাশ গবেষণা প্রতিসঠান( নাসা)  হচেছ দুনিয়ার সবচে বড় ও নিখুুঁৎ  মহাকাশ গবেষণা ইনিস্টিটিউট  - এই নাসা বিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করে বিশাল বিশাল সরকারী প্রজেক্টের মাধ্যমে নির্ভুলভাবে গবেষণা চালিয়ে বলতে পারে যে, প্রতি  বছর কোন মাসের কোন তারিখে, কত মিনিটে, কত সেকেন্টে চন্দ্র ও সুর্য গ্রহণ হবে।
৩য় ঃ এরপর রমজানের তালিকা ও চন্দ্র, সুর্য গ্রহণের তালিকা পাশাপাশি রেখে দেখা গেল যে ২০২৬ সালে যে তারিখে রমজান শুরু হবে সেই দিন সুর্য গ্রহণ হবে এবং এই একই রমজানের ১৫ তারিখে চন্দ্র গ্রহণ হবে। নাসার চুল ছেড়া তথ্য মতে ২০২৬ সালে রমজান শুরু হবে ১৮  ফেব্রুয়ারী।   আর তার আগের দিন ১৭ ফেব্রুয়ারী সুর্য গ্রহণ হবে। ঐ বছর রমজানের ১৫ তারিখ পড়ে  ৩রা মার্চ। আর নাসার অংক অনুযায়ী চন্দ্র গ্রহণ হবে এই  ৩রা মার্চই । 

ফলাফল  = হাদীস ও নাসার তথ্য মতে  ২০২৬ সালেই  শান্তির দুত  ইমাম মাহদী আঃ এর শুভ আবির্ভাবের  সম্ভাবনা  সবচে  প্রবল।
তবে  সর্বজ্ঞানের সঠিক আঁধার কেবল মাত্র আমার আল্লাহই।

সংকলক
আবদুল্লাহ ভূইয়াঁ 
প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক
নুরুলগনি ইসলামি একাডেমি  কাটাছরা মিরসরাই চট্টগ্রাম  বাংলাদেশ
abdullahnezami123@gmail.com
01829318114
00966504967863
আগস্ট ২৮, ২০১৮ ১:২০

মঙ্গলবার, ২১ আগস্ট, ২০১৮

আকীকা ও কোরবানী এক সাথে করা ও বকরীর পরিবর্তে গরু দিয়ে ৭ ম দিনে না করের পরে করার বিধান

প্রশ্ন:
বিষয়:  আকীকা ও কুরবানী প্রসঙ্গে
মুহতারাম,
আমাদের দেশে অধিকাংশ মানুষ কুরবানীর সাথে আকীকাও দিয়ে থাকেন, অথচ কুরবানী ও আকীকা সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটি আমল। রাসূল সা. বলেছেন সন্তান জন্মের সপ্তম দিনে তার নাম রাখবে ও আকীকা করবে এবং তার চুল কাটবে (তিরমীযি শরীফ:৪২২৯-৪২৩১) জন্মের সপ্তম দিন যদি কুরবানীর দিন না হয় সে ক্ষেত্রে কুরবানীর দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করার অনুমতি কে দিল?
দ্বিতীয়ত-
আকীকার পশু সংক্রান্ত যত হাদীস এসেছে সবগুলোতেই বকরীর কথা এসেছে তাহলে বকরীর পরিবর্তে উট,মহিষ গরু জবাই করার অনুমতি কে দিল? রাসূল সা. এর যুগে কি এসব পশু ছিল না? না-কি রাসূলের কথা বাহিরেও ইসলাম আছে!
তৃতীয়ত-
একই পশুতে কুরবানী ও আকীকা শুদ্ধ হওয়ার অনেক ফিকহের কিতাবে দেখা যায়, এই মতটি গ্রহনযোগ্য হলে কিসের ভিত্তিতে? আলোচিত বিষয়গুলো কুরআন হাদীস ভিত্তিক সমাধান প্রদান করে বাধিত করবেন।

নিবেদক
মাওলানা ইলিয়াস
মুহতামিম,  মহিউস্সুন্নাহ মাদরাসা মাগুরা

উত্তর:
الجواب باسم ملهم الصدق والصواب
প্রথমত-
আকিকা সন্তান জন্মের সপ্তম দিনেই করতে হবে অন্য কোন দিনে করা যাবে না শরীয়তের আলোকে কথাটি সঠিক নয়। বরং পরবর্তী দ্বিতীয় সপ্তম  (১৪তম দিন) ও তৃতীয় সপ্তম (২১তম দিন) আকীকা করার কথাও হাদীসে পাওয়া যায়। যেমন-
হাদীস নং ১
হযরত বুরায়দা রা. থেকে বর্ণিত-
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ্রالْعَقِيقَةُ تُذْبَحُ لِسَبْعٍ، أَوْ أَرْبَعَ عَشْرَةَ، أَوْ إِحْدَى  عِشْرِينَগ্ধ( المعجم الاوسط:৩/৩৭৮, رقم:৪৮৮২)
অর্থ: হযরত বুরায়দা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেন সন্তান জন্মের সপ্তম দিন আকীকা কর। সপ্তম দিনে সম্ভব না হলে ১৪মত দিন, তাতেও সম্ভব না হলে একুশতম দিন।
উক্ত হাদীসের সনদে যদিও কিছুটা দূর্বলটা রয়েছে, কিন্তু বিষয়টি ফজীলত সংক্রান্ত হওয়ায় এবং সর্বযুগের ইমাম, ফকিহ ও মুহাদ্দিসগণের উক্ত হাদীসের উপর আমল থাকায় ও সহীহ হাদীস এর সমর্থনে থাকায় এবং এর বিপক্ষে শরয়ী কোন দলীল না থাকায় উক্ত উক্ত হাদীসটি আমলের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য বিবেচিত।
হাদীস নং ২
আম্মাজান হযরত আয়েশা রা. এ বিষয়ে লম্বা এক হাদীসের শেষাংশে বলেন-
فقالت عائشة رضي الله عنها : لا بل السنة أفضل عن الغلام شاتان مكافئتنان و عن الجارية شاة تقطع جدولا و لا يكسر لها عظم فيأكل و يطعم و يتصدق و ليكن ذاك يوم السابع فإن لم يكن ففي أربعة عشر فإن لم يكن ففي إحدى و عشرين  هذا حديث صحيح الإسناد و لم يخرجاه تعليق الذهبي قي التلخيص  (المستدرك:৪/২৩৮، رقم:৭৫৯৫)
অর্থ- ... বরং আকীকার সুন্নাত হলো সন্তান জন্মের সপ্তম দিনে, সম্ভব না হলে ১৪তম দিনে, তাতেও সম্ভব না হলে একুশতম দিন। ছেলে হলে ২টি, আর মেয়ে হলে ১টি বকরী জবাই করা।
হাকেম রহ. বলেন হাদীসটি সনদের বিচারে সহীহ। সুতরাং উক্ত হাদীসদ্বয়ের মাধ্যমে একুশতম দিন পর্যন্ত আকীকা করার প্রমাণ পাওয়া গেলেও তবে কেউ যদি একুশতম দিনে করতে না পারে তাহলে পরবর্তীতে যেকোন সময় করা যাবে। হাদীসের মর্ম এটাই এবং এব্যাপারেও একাধিক হাদীস পাওয়া যায়। নিম্বে কয়েকটি পেশ করা হলো।
হযরত আনাস  রা. থেকে বর্ণিত-
عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ্রعَقَّ عَنْ نَفْسِهِ بَعْدَ مَا بُعِثَ نَبِيًّا  ( المعجم الاوسط:২/২৮৩, رقم:৯৯৪)
অর্থ: আনাস রা. বলেন, রাসূল সা. নবুওয়াত প্রাপ্তির পর নিজেই নিজের পক্ষ থেকে আকীকা করেছিলেন।
অথচ এই আকীকা ৭,১৪,২১ তম দিনে ছিলনা। চল্লিশ বছর পরেই আকীকা করা হয়েছিল। এই মর্মে তাবেয়ীন ও সালাফদের বিভিন্ন আমলও পাওয়া যায়। যেমন-
হযরত হাসান বসরী রা. থেকে বর্ণিত-
عن الحسن البصرى اذا لم يعق عنك فعق عن نفسك وان كيت رجلا (اعلاء السنن:১৬/৭৮২১)
অর্থ- যদি তোমার পক্ষ থেকে আকীকা করা না হয়ে থাকে,তাহলে নিজেই নিজের আকীকা করে নাও। যদিও প্রাপ্ত বয়স্ক হউ না কেন।
ইমাম তিরমীযি রহ. সুনানে তিরমীযিতে-(৩/৫১৩, হা.১৫২২) আকীকার হাদীস বর্ণনার শেষে তার ব্যাখ্যায় বলেন-
আহলে ইলম সকলের নিকটে সন্তান জন্মের সপ্তম দিনে আকীকা করা মুস্তাহাব। তবে সপ্তম দিনে আকীকা করতে না পারলে ১৪তম দিনে করবে, তাতেও সম্ভব না হলে একুশতম দিনে আকীকা করবে।
উপরোক্ত হাদীস সাহাবা ও তাবেয়ীদের ফাতাওয়ার আলোকে প্রমাণ হলো যে, ২১তম দিনে আকীকা করতে না পারলে পরবর্তী যেকোন সময় করলে আকীকার সুন্নাত আদায় হবে।
সুতরাং কেউ যদি সপ্তম দিনের পর কুরবানীর জন্তুর সাথে আকীকা করে তার শরীয়ত সম্মত। রাসূলে কারীম সা. সাহাবা ও তাবেয়ীদের আমল দ্বারা প্রমাণিত। হ্যাঁ, কুরবানীর সাথে আকীকা করার জন্য সপ্তম দিনে আকীকা করার সুযোগ থাকা সত্বেও তা বিলম্ব করা অনুত্তম। এতে কারো দ্বিমত নেই।

দ্বিতীয়ত-
এ দাবীটিও সঠিক নয় যে, আকীকার পশু সংক্রান্ত যত হাদীস এসেছে সবগুলোতেই বকরীর কথা এসেছে। তাই আকীকা শুধু বকরী দিয়েই করতে হবে এটা কোন জরুরী বিষয় না, কারণ রাসূল সা. বকরী দিয়ে আকীকা করা একথার দলীল হয় না যে, শুধু বকরী দিয়েই আকীকা করতে হবে। অন্য কোন পশু দিয়ে করা যাবে না। বরং রাসূল সা. এর হাদীস ও সাহাবায়ে কেরামের আমল দ্বারা প্রমাণ মিলে যে, আকীকা উট, গরু, বকরী ইত্যাদি যেসকল জন্তু দিয়ে কোরবানী করা যায় সেসকল জন্তু দিয়েও আকীকা করা যায়। নিম্বে কয়েকটি দলীল পেশ করা হলো-
হাদীস নং ১
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : مَنْ وُلِدَ لَهُ غُلامٌ فَلْيَعِقَّ عَنْهُ مِنَ الإِبِلِ أَوِ الْبَقَرِ أَوِ الْغَنَمِ (المعجم الصغير:১/৮৪، رقم شاملة:২২৯)
অর্থ- হযরত আনাস রা. বলেন- নবী করিম সা. ইরশাদ করেন, যার সন্তান ভুমিষ্ট হবে সেযেন সন্তানের পক্ষ থেকে উট, গরু, বকরী যেকোন একটি জবেহ করে আকীকা করে।
উক্ত হাদীস নিযে বিতর্ক থাকলেও ইমাম ইবনে হাজর রহ. এই হাদীসকে দলীল হিসেবে পেশ করেন। (ফাতহুল বারী-১১/৯)
হাদীস নং ২
عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ أُرَاهُ عَنْ جَدِّهِ قَالَ سُئِلَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- عَنِ الْعَقِيقَةِ فَقَالَ ্র لاَ يُحِبُّ اللَّهُ الْعُقُوقَ. كَأَنَّهُ كَرِهَ الاِسْمَ وَقَالَ ্র مَنْ وُلِدَ لَهُ وَلَدٌ فَأَحَبَّ أَنْ يَنْسُكَ عَنْهُ فَلْيَنْسُكْ عَنِ الْغُلاَمِ شَاتَانِ مُكَافِئَتَانِ وَعَنِ الْجَارِيَةِ شَاةٌ (سنن ابى داود:৩/১২২৯، رقم:২৮৪২)
অর্থ- নবী করিম সা. ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তির সন্তান ভূমিষ্ট হয় সে যেন সন্তানের পক্ষ থেকে نْسُك )  ( তথা পশু জবেহ কর। আকীকার ক্ষেত্রে এ হাদীসে নুসুক তথা জন্তু জবাইয়ের কথা দ্বারা বুঝা যায় বকরী আকীকা করা জরুরী না। উট, গরু দিয়েও করা যায়। সাহাবাগণের কয়েকটি আসার দেখুন-
১।
عن قتادة ان انس ابن مالك كان يعق عن بنيه الجزور  (معجم الكبير:৬৮৫)
হযরত আনাস রা. উট জবেহ করে সন্তানদের আকীকা দিয়েছেন।
আল্লামা হাইছামী রহ. বলেন, উক্ত সনদে সকল বর্ণনাকারী সহীহ। (মাজমাউজজাওয়ায়েদ:৪/৯৪)
২।
عن عطاء عن أم كرز و أبي كرز قالا : نذرت امرأة من آل عبد الرحمن بن أبي بكر إن ولدت امرأة عبد الرحمن نحرنا جزورا فقالت عائشة رضي الله عنها : لا بل السنة أفضل عن الغلام شاتان مكافئتنان و عن الجارية شاة تقطع جدولا و لا يكسر لها عظم فيأكل و يطعم و يتصدق و ليكن ذاك يوم السابع فإن لم يكن ففي أربعة عشر فإن لم يكن ففي إحدى و عشرين  (المستدرك: ২৩৮/৪، رقم: ৭৫৯৫)
অর্থ- হযরত আবু কুরযা বলেন, আব্দুর রহমান ইবনে আবু বকরের পরিবারস্থ এক মহিলা এই মান্নত করল যে, যদি আব্দুর রহমানের স্ত্রী সন্তান প্রসব করে তাহলে আমরা উট জবেহ করে আকীকা করব। একথা শুনে হযরত আয়েশা রা. বলেন- না, (উট দিয়ে নয়) বরং উত্তম হলো ছেলের জন্য দুটি, আর মেয়ের জন্য একটি বকরী জবেহ দেয়া।
বি.দ্র. উক্ত হাদীছে আম্মাজান রা. উটের কথা শুনে না করার অর্থ হচ্ছে এটাকে উত্তম পরিপন্থি বলা। উট দিয়ে আকীকা করলে আকীকার সুন্নাত আদায় হবে না একথা বলা নয়। অন্যথায় রাসূল সা. এর উপরোক্ত হাদীসের সাথে সাংঘর্ষিক দেখা দিবে, আর এটাই সকল মাযহাবের ইমামগণের ফাতাওয়া। সুতরাং প্রমাণ হলো আকীকা শুধু বকরী দিয়ে নয় বরং কুরবানী করা বৈধ এমন সকল জন্তু- উট, গরু, মহিষ, ভেড়া, বকরী, দুম্বার যেকোন একটি দিয়ে আকীকা করা জায়েয।

তৃতীয়ত:
আকীকা ও কুরবানী একই জন্তুতে কারা যায় কি-না?
আকীকা ও কুরবানী একই সাথে একই পশুতে দিলে আদাই না হওয়ার উল্লেখযোগ্য কোন কারণ নেই। তবে একই সাথে দেওয়ার ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো হাদীস না থাকায় শরীকদারদের মাকসাদ ও উদ্দেশ্যের প্রতি লক্ষ রেখে জমহুর ফুকাহা ও মুহাক্কিক উলামায়ে কেরামের ফাতাওয়া হলো একই পশুতে কুরবানী ও আকীকা আদায় হবে। কারণ শরীকানা কুরবানী সহীহ হওয়ার জন্য শর্ত হলো সকল শরীকদারদের নিয়্যত শুধু এক আল্লাহর সন্তুষ্টি হওয়া। আর উভয় আমল হতে হবে ”কুরবত” সাওয়াবের উদ্দেশ্যে আল্লাহর সন্তুষ্টি চিত্তে করা। যদিও উভয়ের ধরন ভিন্ন, তবে মাকাসাদ ও উদ্দেশ্য এক। তাই আকীকা ও কুরবানী একসাথে সহীহ বলে গণ্য হবে, তবে পৃথক পৃথক হওয়া ও আকীকা বকরী দিয়ে করাই ভালো।
সারকথা, আকীকা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় হালাল জন্তুর রক্ত প্রবাহের নাম। পর্যায়ক্রমে ৭,১৪,২১ তম দিলে করা অতি উত্তম বা উত্তম। এর পরে করলেও আকীকার সুন্নাত আদায় হবে। বকরী  দ্বারা করা উত্তম তবে উট,গরু এ জাতীয় পশু দ্বারা করলেও মূল আকীকার সুন্নাত আদায় হবে। পৃথকভাবে বকরী দিয়ে করা উত্তম কিন্তু কুরবানীর সাথেও আদায় হবে। কারণ উভয় আমলের মাহাত্ম হচ্ছে “কুরবত” আল্লাহর সন্তুষ্টি। এটাই মুজতাহিদ ইমামগণের ফাতাওয়া ও সিদ্ধান্ত। আমরা সবাই মুকাল্লিদ আমাদের কাজ ইমামের অনুসরণে কুরআন সুন্নাহ মান্য করে চলা, আমাদের চেয়ে অনেক বেশী শরীয়ত বুঝতেন মাযহাবের ইমামগণ, তাদেরকে ডিঙ্গিয়ে অতি মাত্রায় জ্ঞানী হওয়ার দাবী করাই বোকামী ও ফিতনার কারণ। আল্লাহ সকলকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন ॥

الادلة الشرعية
سنن ابى داود:৩/১২২৯، رقم:২৮৪২
عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ أُرَاهُ عَنْ جَدِّهِ قَالَ سُئِلَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- عَنِ الْعَقِيقَةِ فَقَالَ ্র لاَ يُحِبُّ اللَّهُ الْعُقُوقَ. كَأَنَّهُ كَرِهَ الاِسْمَ وَقَالَ ্র مَنْ وُلِدَ لَهُ وَلَدٌ فَأَحَبَّ أَنْ يَنْسُكَ عَنْهُ فَلْيَنْسُكْ عَنِ الْغُلاَمِ شَاتَانِ مُكَافِئَتَانِ وَعَنِ الْجَارِيَةِ شَاةٌ

فتح البارى:১১/৯
وَاسْتَدَلَّ بِإِطْلَاقِ الشَّاة وَالشَّاتَيْنِ عَلَى أَنَّهُ لَا يُشْتَرَط فِي الْعَقِيقَة مَا يُشْتَرَط فِي الْأُضْحِيَّة ، وَفِيهِ وَجْهَانِ لِلشَّافِعِيَّةِ ، وَأَصَحّهمَا يُشْتَرَط وَهُوَ بِالْقِيَاسِ لَا بِالْخَبَرِ ، وَيُذْكَر الشَّاة وَالْكَبْش عَلَى أَنَّهُ يَتَعَيَّن الْغَنَم لِلْعَقِيقَةِ ، وَبِهِ تَرْجَمَ أَبُو الشَّيْخ الْأَصْبِهَانِي وَنَقَلَهُ اِبْن الْمُنْذِر عَنْ حَفْصَة بِنْت عَبْد الرَّحْمَن بْن أَبِي بَكْر ، وَقَالَ الْبَنْدَنِيجِيُّ مِنْ الشَّافِعِيَّة : لَا نَصَّ لِلشَّافِعِيِّ فِي ذَلِكَ ، وَعِنْدِي أَنَّهُ لَا يُجْزِئُ غَيْرهَا ، وَالْجُمْهُور عَلَى إِجْزَاء الْإِبِل وَالْبَقَر أَيْضًا ، وَفِيهِ حَدِيث عِنْد الطَّبَرَانِيّ وَأَبِي الشَّيْخ عَنْ أَنَس رَفَعَهُ " يَعُقّ عَنْهُ مِنْ الْإِبِل وَالْبَقَر وَالْغَنَم " وَنَصَّ أَحْمَد عَلَى اِشْتِرَاط كَامِلَة ، وَذَكَرَ الرَّافِعِيّ بَحْثًا أَنَّهَا تَتَأَدَّى بِالسَّبْعِ كَمَا فِي الْأُضْحِيَّة وَاللَّهُ أَعْلَم .

الفقه الاسلامى وادلته:৪/২৭৪৮، مكتبة رشيديه
تذبح يوم سابع ولادة المولود، ويحسب يوم الولادة من السبعة. فإن ولدت ليلاً، حسب اليوم الذي يليه. وعند المالكية: يحسب يوم الولادة إن ولد قبل الفجر أو معه، ولا يعد اليوم الذي ولد فيه، إن ولد بعد الفجر. وقيل عندهم: يحسب إن ولد قبل الزوال لا بعده. ويندب الذبح ضحى إلى الزوال لا ليلاً. وصرح الشافعية والحنابلة: أنه لو ذبح قبل السابع أو بعده، أجزأه. وأضاف الحنابلة والمالكية: لا يعق غير الأب، ولا يعق المولود عن نفسه إذا كبر، لأنها مشروعة في حق الأب، فلا يفعلها غيره. واختار جماعة من الحنابلة: أن للشخص أن يعق عن نفسه استحباباً. ولا تختص العقيقة بالصغر، فيعق الأب عن المولود، ولو بعد بلوغه؛ لأنه لا آخر لوقتها

فقه السنة:৩-১/১০০৬ دار الحديث
والذبح يكون يوم السابع بعد الولادة إن تيسر، وإلا ففي اليوم الرابع عشر وإلا ففي اليوم الواحد والعشرين من يوم ولادته، فإن لم يتيسر ففي أي يوم من الايام. ففي حديث البيهقي: تذبح لسبع، ولاربع عشر، ولاحدي وعشرين.

بدائع الصنائع:৫/৩০৮ زكريا،
وَلَنَا أَنَّ الْقُرْبَةَ في إرَاقَةِ الدَّمِ وإنها لَا تَتَجَزَّأُ لِأَنَّهَا ذَبْحٌ وَاحِدٌ فَإِنْ لم يَقَعْ قُرْبَةً من الْبَعْضِ لَا يَقَعُ قُرْبَةً من الْبَاقِينَ ضَرُورَةَ عَدَمِ التَّجَزُّؤِ وَلَوْ أَرَادُوا الْقُرْبَةَ الْأُضْحِيَّةَ أو غَيْرَهَا من الْقُرَبِ أَجْزَأَهُمْ سَوَاءٌ كانت الْقُرْبَةُ وَاجِبَةً أو تَطَوُّعًا أو وَجَبَتْ على الْبَعْضِ دُونَ الْبَعْضِ وَسَوَاءٌ اتَّفَقَتْ جِهَاتُ الْقُرْبَةِ أو اخْتَلَفَتْ... وَلَنَا أَنَّ الْجِهَاتِ وَإِنْ اخْتَلَفَتْ صُورَةً فَهِيَ في الْمَعْنَى وَاحِدٌ لِأَنَّ الْمَقْصُودَ من الْكُلِّ التَّقَرُّبُ إلَى اللَّهِ عز شَأْنُهُ وَكَذَلِكَ إنْ أَرَادَ بَعْضُهُمْ الْعَقِيقَةَ عن وَلَدٍ وُلِدَ له من قَبْلُ لِأَنَّ ذلك جِهَةُ التَّقَرُّبِ إلَى اللَّهِ تَعَالَى عز شَأْنُهُ بِالشُّكْرِ على ما أَنْعَمَ عليه

البحر الرائق:৯/৩২৪ زكريا
يجوز بالجاموس لانه نوع من البقر... لان جوازها عرف بالشرع... الخ
والله اعلم بالصواب। 

মুফতি মিজানুর রহমান। সাইদ