যুগে যুগে আল্লাহ্‌ অনেক জাতীকে ধ্বংস করে দিয়েছেন, নিঃচিহ্ন জাতের ভেতর আমরা শুধু আদ,সামূদ ও কাওমে লূতের কথাই জানি। আর এই ৩ জাতীর ভেতর সবচেয়ে ভয়ংকর ভাবে ধ্বংস করা হয়েছে কাওমে লূতকে।
 এই ৩ জাতীকে আল্লাহ্‌ এভাবেই ধ্বংস করেছে যে আজ এদের কোন বংশধর পর্যন্ত নেই, এদের আবাসস্থলকে এমন ভাবে ধ্বংস করা হয়েছে যে-তা আর কোনদিনও আবাদ হয়নি। মানুষের সাথে এটাই আল্লাহ্‌’র পার্থক্য, মানুষের ধ্বংসলীলা যতোই মারাত্বক হোক না কেন সেইসব শহর আবারও গড়ে উঠে; কিন্তু আল্লাহ্‌ ধ্বংস করলে তা আর কোনদিনও গড়ে ওঠে না। যেমনঃ কোনইয়ে আরান্‌চ, এই বিখ্যাত শহর ৪বার ধ্বংস হয় ও ৪বার গড়ে ওঠে। কিন্তু কাওমে লূতের দু’টি প্রধান শহর সাদূম ও আমূরাহ্‌ আজ নিঃচিহ্ন।
 কি এমন করেছিলো কাওমে লূত, যার কারণে আল্লাহ্‌ এদের এমন ভয়ংকর শাস্তি দিলেন? 

তাফসীরে রুহুল মা’আনীর মতে এই জাতী ১/মদ্যপান, ২/নাচ-গান, ৩/ঢিল ছোড়া, ৪/কবুতরবাজী করা, ৫/দাড়ি কামানো ও গোঁফ বড় রাখা, ৬/শিস বাজানো, ৭/পুরুষের রেশমী কাপড় পড়া ও ৮/সমকামীতায় লিপ্ত ছিল। 

এসবের ভেতর সবথেকে নিকৃষ্ঠতম ও মূল অপরাধ ছিল সমকামীতা, আরো স্পষ্ট করে বলতে হয় পুং-মৈথুন। কাওমে লূত-ই বিশ্বের ১ম নিকৃষ্ঠ ও জঘন্য জাতী যারা বিশ্বের বুকে ১ম বারের মতো এই বিকৃত কামাচারের উদ্ভাবন করে। তাদের আগে বা তাদের জামানায় এই ভয়াবহ নোংরা কাজ সম্পর্কে কারও কোন ধারণাই ছিল না। 

সমকামীতা এমনই এক পাপ যে- ইসলামে ব্যাভিচারের শাস্তি রজম হলেও সাহাবা(রাঃ)এদের আগুনে পুড়িয়ে মারার ব্যাপারে ঐক্যমত হয়েছেন।
 বিশ্বের সর্ব নিকৃষ্ঠ এই জাতীর নামকরণ হয়েছে আল্লাহ্‌’র নাবী লূত(আঃ)এর নামানুসারে। কারণ আল্লাহ্‌ লূত(আঃ)কে এই ভয়ংকর পাপীদের সুপথে আনার জন্যে তাঁকে নাবুওয়াত দান করেন, এবং আল্লাহ্‌’এ নির্দেশে লূত(আঃ) মিছর থেকে এই পাপপুরীতে গিয়ে ইসলাম প্রচার করেন। লূত(আঃ) বাইবেল ও ওল্ড টেষ্টামেন্টে “Lat” ও সাদূম Sodom ও আমুরাহ্‌ “Gomorrah” নামে খ্যাত। 

শুধু মুসলিমরাই নয়, খ্রীষ্টান ও ইয়াহুদী প্রত্নতত্ত্ববিদেরা যারা সাদূম ও আমুরাহ্‌ নিয়ে গবেষণা করছে তারা প্রত্যেকেই ধার্মিক ও সমকামীতার মত নিকৃষ্ঠ বিকৃতিকে ঘৃণা করেন। 

প্রত্ন চিত্র সহকারে   
আর আমার কাজ হচ্ছে প্রত্নপ্রমাণ দিয়ে এটা প্রমাণ করে দেওয়া যে- কুরআনের প্রতিটা কথাই সত্য। আমি আপনাদের দেখাবো এই পাপীষ্ঠ জাতী কিভাবে ধ্বংস হলো, কুরআন এব্যাপারে কি বলে ও আশ্চর্য্যজনক ভাবে তা কিভাবে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের সাথে মিলে যায়। ঠিক কি কারণে ও কিভাবে কাওমে লূত ধ্বংস হয় সেটা জানানোই আমার কাজ। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে কেউ যদি সমকামীদের প্রতি বিন্দুমাত্র করুণাও দেখাতে চান- তা থেকে দূরে থাকা। এবং যারা বর্তমান BAL সরকারের সমর্থক তাদের নিশ্চিত ধ্বংসের বার্তা শোনানো, কারণ বাংলাদেশের ইতিহাসে বর্তমান BAL সরকার-ই ১মাত্র সমকামীদের ম্যাগাজিন “রুপবান” প্রকাশের অনুমতি দিয়েছে। 

কাওমে লূতের বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের আগে তাদের স্বভাব-চরিত্র সম্পর্কে কিছু জেনে নেয়া যাক, কাওমে লূত ১টি #রাজ্য
প্রতিষ্ঠা করে যা পবিত্র উরদুন(জর্দান)নদীর তীরবর্তি অঞ্চলে বিস্তার লাভ করে। এদের প্রধান শহর/রাজধানী ছিল দু’টি সাদূম(Sodom) ও আমুরাহ্‌(Gomorrah), সিন্ধু সভ্যতায় হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারোর যেমন স্থান; কাওমে লূতের রাজ্যেও সাদূম ও আমুরাহ্‌’র তেমন স্থান। তাদের প্রধান রাজধানী ছিল সাদূম(বাইবেলে বর্ণিত Sodom), এটা শুধু তাদের রাজধানী ছিল না বরং এটা ছিল সমগ্র বিশ্বের ১ম সমকামী শহর ও সর্বকালের সর্ব নিকৃষ্ঠ পাপীদের রাজধানী। 

সাদুম(Sodom)এর অধিবাসীরা সবাই পায়ুচারে অভ্যস্থ ছিল বিধায় পায়ুকামী(Bugger)রা আজও Sodomy নামে অভিহিত হয়ে থাকে। 

এদের পুরুষদের নিকৃষ্ঠতম স্বভাব ছিল যে-তাদের নারীদের প্রতি কোন আগ্রহ-ই ছিল না, বরং তারা পশুত্বের সীমানাও পেরিয়ে তাদের বিকৃত লালসা চরিতার্থ করার জন্য দাড়িগোফ বিহীন বালকদের বেছে নিতো। 
(কিন্তু আজকাল দাডি গোপ বিহীন ছাডাও কিছু কুরুচির  বয়স্করা এ নির্লজ্জ কাজে  জডিত।)
এবং পাপপুরী সাদূম এর রাজা থেকে শুরু করে প্রজা সবাই এই কুকর্মে জড়িত ছিল-১মাত্র লূত(আঃ) ও তার পরিবার বাদে। 

আর উনারা এসেই ছিলেন মিছর থেকে, লূত(আঃ) এই জঘন্য জাতীর লোক ছিলেন না বরং তিনি ছিলেন ইব্‌রাহীম খালিলুল্লাহ্‌(আঃ)এর আপন ভাই হারানের পুত্র। লূত(আঃ)এর পিতা হারান এর নামানুসারেরি সিরিয়ার হার্‌রান শহর নামাঙ্কিত। 

তাদের অন্যান্য কুকর্মের কিছু ঘটনা এখানে উল্লেখ করছিঃ আবদুল ওয়াহাব নাজ্জার থেকে বর্ণিতঃ “কোন সওদাগর সাদূম,আমুরাহ্‌ বা তাদের(কাওমে লূত) কোন শহরে এলে তারা সবাই সেই সওদাগরের কাছে ভীড় জমাতো মাল-সামান দেখার ছলে। কিন্তু তারা জিনিসগুলো খুব ভালো লেগেছে এই বলে সবাই নিজের পছন্দমত কিছু না কিছু উপহার হিসাবে নিয়ে চলে যেতো। এভাবে সওদাগরের সব মাল-সামানই লুট হয়ে যেতো। সওদাগর যখন রাগে দুঃখে চিৎকার/কান্নাকাটি করতো তখন তাদের ভেতর থেকে ২/১জন করে এসে ২/১টি জিনিস নিয়ে এসে বলতোঃ ‘আমি তোমার কাছে এগুলো নিয়েছিলাম, কিন্তু তুমি যখন আপত্তি জানাচ্ছো তাই ফিরিয়ে দিচ্ছি’। কিন্তু প্রত্যেক লোকই তাদের লুটকরা জিনিস থেকে বেছে বেছে সর্ব নিকৃষ্ঠ জিনিসগুলোই আনতো। এটা দেখে সেই সওদাগর বলতোঃ ‘সবই যখন চলে গিয়েছে তখন এই ২/১টা নিয়ে কি হবে? যাও এটাও নিয়ে যাও’। এভাবেই অভিনব পদ্ধতিতে প্রত্যেক সওদাগরের মালপত্র লুটে নেওয়া হতো”। 

উবাইদুল্লাহ্‌ সিন্ধী থেকে বর্ণিত আরেকটি আজব ঘটনা এখানে উল্লেখ করছিঃ “ইব্‌রাহীম(আঃ) ও সারাহ্‌(আঃ) তাদের ভ্রাতুষ্পুত্র লূত(আঃ)এর খবরাখবর জানার জন্য তাদের ভৃত্য আল ইয়া’রাজ দামেশ্‌কীকে সাদূমে প্রেরণ করলেন। কিন্তু উনি শহরে ঢুকতে না ঢুকতেই এক পাপীষ্ঠ ঢিল মেরে উনার মাথা ফাটিয়ে দিলো। এবং রক্তবেড়ুবার পর সামনে এসে আল ইয়ারাজকে বললোঃ ‘আমি যে তোমার মাথাকে রক্তে রঞ্জিত করে দিলাম, তার পারিশ্রমিক দাও’। আল ইয়ারাজ এই অদ্ভুত দাবী পূরণ করতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করলে সেই সাদূমী কাফের তাঁকে তাদের আদালতে নিয়ে গেলো। সব শুনে সাদূমী বিচারক(?) রায় দিলো আল-ইয়া রায যেনো ঐ সাদূমিকে রক্তপাতের পারিশ্রমিক দেয়। তখন ক্রুদ্ধ আল ইয়ারাজ ১টি পাথর দিয়ে বিচারকের মাথা ফাঁটিয়ে রক্তপাতের পর বললেনঃ আমিও তোমার মাথা রক্তে রঞ্জিত করে দিলাম, এবারে আমার পারিশ্রমিক ঐব্যক্তিকে দিয়ে দাও। তারপর আল ইয়ারাজ সাদূম থেকে পালিয়ে ইব্‌রাহীম(আঃ)এর কাছে এই আজব পাপীদের ঘটনা বললেন”। 

লূত(আঃ)কে যখন আল্লাহ্‌ এই জাতীকে সুপথে আনার জন্য প্রেরণ করলেন, তখন আল্লাহ্‌’র নাবী লূত(আঃ) এই পাপরাজ্যে এসে হতবাক হয়ে দেখলেন এরা এমন এক জাতী যারা বিশ্বের এমন কোন পাপ নেই যা করে না ও এমন একটা ভালো কাজও নেই যেটা ভুল করেও করে। তাদের সবথেকে মারাত্বক কুকর্ম ছিল ‘সমকামীতা’, তারা যে শুধু বালকদেরই নারীর পরিবর্তে বেছে নিতো তাই নয়-বরং তারা প্রকাশ্যে এই নিকৃষ্ঠমত কর্ম করতো, ভরা মসলিসে এই কর্ম করা গর্বের ব্যাপার হিসাবে চিহ্নিত হতো ও লোকেরা এই নিয়ে গর্ব করতো ও প্রকাশ্যে আলোচনা করতো যে-কে এই কাজে কত পারদর্শি ও কে কতজন বালকের সঙ্গে এই কুকর্ম করেছে! 

লূত(আঃ) তাদের বললেন..........
লূত(আঃ) এই জাতীকে অনেক বোঝালেন, এব্যাপারে আল্লাহ্‌ বলেনঃ “এবং লূতকে প্রেরণ করেছিলাম। সে তার জাতীকে বলেছিলো ‘তোমরা এমন কুকর্ম করছো যা তোমাদের পূর্বে বিশ্বের কেউ করেনি! তোমরা তো কাম তৃপ্তির জন্য নারী ছেড়ে পুরুষদের কাছে গমন করো, তোমরা তো সীমালঙ্ঘনকারী জাতী’। উত্তরে তার জাতী শুধু বললো-‘এদেরকে{লূত(আঃ) ও সামান্য কিছু মু’মীন} জনপদ থেকে বহিষ্কৃত কর, এরা তো এমন ব্যক্তি যারা পবিত্র হতে চায়”( সূরা আল-আরাফ্‌, আয়াহ্‌-৮০-৮২)। 

অর্থাৎ এই বিকৃত কামাচারীরা বোঝাতে চেয়েছিলো-আমরা যখন খারাপ কাজ করি তাহলে তোমাদের আমাদের এখানে থাকার দরকার কি? তোমরা পবিত্র ব্যক্তি তোমাদের তো ভালো জায়গায় থাকা উচিত। আর একারণেই তারা লূত(আঃ)কে বহিষ্কার করার ভয় দেখালো। কিন্তু লূত(আঃ) এতেও দমলেন না তিনি তাদের প্রকাশ্য মাজলিসে হাজির হয়ে বললেনঃ “তোমরা কি পুরুষে উপগত হচ্ছো না? তোমরা তো রাজাহানি করে থাকো ও নিজেদের মাজলিসে প্রকাশ্যে ঘৃণ্যকর্ম করে থাকো”(সূরা আনকাবুত, আয়াহ্‌-২৯)। 

জওয়াবে তার নিকৃষ্ঠ সম্প্রদায় বললোঃ “উত্তরে তার জাতী বললো-‘আমাদের জন্য আল্লাহ্‌’র আযাব নিয়ে এসো, যদি তুমি সত্যবাদী হও”। বছরের পর বছর ধরে চেষ্ঠার পরও যখন তারা সুপথে ফিরলো না, উলটো আল্লাহ্‌’র নাবীকে ভয় দেখালো; আল্লাহ্‌ তখন তাদের ধ্বংস করে দিতে সিদ্ধান্ত নিলেন। ইব্‌রাহীম(আঃ) তখন কেন’আন(ফিলিস্তীন) বাস করতেন, তখন হঠাৎ একদিন ৩জন ব্যক্তি এলো। ইব্‌রাহীম(আঃ) মেহ্‌মান ছাড়া খুব কমই খেয়েছেন, তাই তিনি ১টি বাছুর জবাই করেই তা দিয়ে কাবাব তৈরী করলেন। কিন্তু মেহ্‌মানরা খেতে আপত্তি জানালো, ইব্‌রাহীম(আঃ) তখন চিন্তিত হয়ে পরলেন; কারণ তৎকালে ১মাত্র শত্রুরাই সাধারণত কারও বাসায় কিছু খেতো না। ইব্‌রাহীম(আঃ) এর এই উদ্বেগ লক্ষ্য করে মেহ্‌মানদের ভেতর প্রধান ব্যক্তি{জিব্‌রাইল(আঃ)} জানালেনঃ আমি জিব্‌রাঈল আমরা ফেরেশতা চিন্তার কিছু নেই। কুরআনের ভাষায়ঃ “ইব্‌রাহীম বললেন-‘হে আল্লাহ্‌’র প্রেরিত ফেরেশতাগণ! তোমরা কিজন্য এসেছো? আমরা অপরাধী জাতীর প্রতি প্রেরিত হয়েছি। যেনো আমরা তাদের প্রতি পাথর বর্ষণ করি। এটা(পাথর) চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে আপনার প্রতিপালকের তরফ থেকে সীমা লঙ্ঘনকারীদের জন্যে”(সূরা আয্‌ যারিয়াত, আয়াহ্‌-৩১-৩৪)। সূরা আনকাবুতে ব্যাপারতি এভাবে এসেছে-“আর যখন আমার প্রেরিত ফেরেশতাগণ ইব্‌রাহীমের নিকট শুভ সংবাদ{ইসহাক(আঃ)এর জন্মের) নিয়ে গেলো, তখন উক্ত ফেরেশতাগণ ইব্‌রাহীমকে বললো-‘আমরা সেই জনপদের লোকদের ধ্বংস করব, যেখানে লূত(আঃ)এর জাতী বাস করে। কারণ সেখানকার অধিবাসীরা খুবই খারাপ’। ইব্‌রাহীম(আঃ) বললেন-‘সেখানে তো লূত রয়েছে। সেখানে আযাব না দেওয়া উচিত’। ফেরেশতারা বললো-‘সেখানে কে অবস্থান করছে আমরা সবাই অবগত আছি। আমরা তাঁকে এবং তার সহচরবৃন্দকে রক্ষা কোরব, শুধু তার স্ত্রীকে ব্যতীত, কারণ সে আযাবে পতিত হওয়ার লোকদের অর্ন্তভুক্ত হবে”(আয়াহ্‌-৩১-৩২)। 

আল্লাহ্‌ ইব্‌রাহীম(আঃ)এর এই উদ্বেগকে লক্ষ্য করে প্রশংসা করে বলেনঃ “অতঃপর যখন ইব্‌রাহীমের ভয় চলে গেলো এবং তার কাছে আমার সুসংবাদ পৌছুলো, তখন তিনি লূতের জাতী সম্পর্কে আমার সঙ্গে বিতর্ক করতে লাগলেন নিঃসন্দেহে ইব্‌রাহীম ধৈর্য্যশীল,ব্যাথার ব্যাথী ও দয়ালু। হে ইব্‌রাহীম এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ কোরো না। নিশ্চই তাদের উপর আযাব আসবে, যা কোন ক্রমে টলবার নয়”(সূরা হুদ, আয়াহ্‌-৭৪-৭৬)। 

এরপর মানুষরুপি আযাবের ফেরেশতারা লূত(আঃ)এর জাতীর রাজ্যের দিকে রওয়ানা হলো। আমি সবাইকে সূরা আয্‌-যারিয়াতের ৩৩-৩৪ নং আয়াতের এই অংশটা সবাইকে মনে রাখার জন্য বিশেষ ভাবে অনুরোধ করছিঃ

খুব মনোযোগ দিয়েপডুন   

 “আমরা অপরাধী জাতীর প্রতি প্রেরিত হয়েছি। যেনো আমরা তাদের প্রতি পাথর বর্ষণ করি। এটা(পাথর) চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে আপনার প্রতিপালকের তরফ থেকে সীমা লঙ্ঘনকারীদের জন্যে”। আল্লাহ্‌ পাথর চিহ্নিত করে দিয়েছেন তাদের প্রতি বর্ষণ করার জন্য। কি ছিল সেই পাথরে? কি সেই চিহ্ন? 

আযাবের ফেরেশতারা রওয়ানা হওয়ার পরঃ ফেরেশতারা লূত(আঃ)এর বাড়ীতে আসার পর তার সাদূমীরা দল বেধে তাঁর বাড়ীতে হাজির হলো, যেহেতু ফেরেশতারা এসেছিলো সুন্দর যুবকের বেশে । এই নোংরা লোকগুলো লূত(আঃ)এর কাছে যুবকদের (ফেরেশতাদের ) দাবী করে বসলো, যাতে তাদের সাথে বিকৃত কুকর্ম করতে পারে। লূত(আঃ) তাদের ধিক্কার দিয়ে বললেনঃ “হে আমার জাতী তোমাদের লজ্জা করে না? তোমাদের মাঝে কি বিবেক সম্পন্ন একজন মানুষঅ নাই যে অন্তত মনুষ্যত্বের খাতিরে সত্যকে অনুধাবণ করতে পারে? তোমরা কেন তোমাদের কামরিপু চরিতার্থ করার জন্য স্বাভাবিক ও ন্যায়ানুগ পদ্ধতিতে নারীদের তোমাদের জীবণ সঙ্গিনী করার বদলে এই অভিশপ্ত ও নির্লজ্জ পন্থা অনুসরণ করছো”? এতে তারা ক্রুদ্ধভাবে জানালো যে-“তুমি কেন এদের আশ্রয় দিলে? আমরা কি তোমাদের রাজ্যের লোককে আশ্রয় দিতে নিষেধ করিনি”? লূত(আঃ) বললেনঃ “এরা আমার কন্যা, ( (উম্মতের কন্যা) দের জন্য এরা পবিত্র সুতরাং আল্লাহ্‌কে ভয় করো এবং আমার মেহ্‌মানদের প্রতি অন্যায় আচরণ করে আমাকে হেয় কোরো না। তোমাদের মাঝে কি কোন ভালো মানুষ নেই”?(সূরা-হুদ, আয়াহ্‌-৮০)

 অর্থাৎ কাওমে লূতের সেই পুরুষদের সাথে তাদের স্ত্রীরাও হৈ হৈ করতে করতে এসেছিলো, আর প্রত্যেক নবী তার নিজ সম্প্রদায়ের জন্য পিতৃতুল্য। তাই লূত(আঃ) সেই পাপীষ্ঠদের পত্নীদের কন্যা সন্মোদ্ধন করে তাদেরকে গ্রহণ করতে বলেছিলেন। কিন্তু বিকৃত কামাচারীরা তাঁকে জানালো-“তুমি তো ভালো করেই জানো-নারীদের প্রতি আমাদের কোন আগ্রহ নেই”।
 লূত(আঃ) তখন তার যুবক মেহমানদের সম্মান সম্পর্কে চিন্তিত হয়ে বললেন “তোমাদের উপর যদি আমার শক্তি থাকতো! অথবা আশ্রয় নিতে পারতাম কোন শক্তিশালী দলেন”(সূরা-হুদ, আয়াহ্‌-৮১) 

যুবকরুপি ফেরেশতা তখন লূত(আঃ)কে জানালোঃ “হে লূত, আমরা আপনার রবের প্রেরিত ফেরেশতা। ওরা কখনই আপনার কাছে পৌছাতে পারবে না। সুতরাং আপনি রাতের কোন ১সময় আপনার পরিবারবর্গসহ বেড় হয়ে পড়ুন এবং আপনাদের মাঝে কেউ পেছন ফিরে তাকাবেন না, কিন্তু আপনার স্ত্রী যাবে না। ওদের যা ঘটবে তারও তাই ঘটবে। প্রভাত ওদের জন্য নির্ধারিত কাল। প্রভাত কি কাছাকাছি নয়?”(সূরা-হুদ, আয়াহ্‌-৮২)। লূত(আঃ) সেই রাতেই তার পরিবারবর্গকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লেন, সাথে তার স্ত্রীও চললেন। লূত(আঃ) স্ত্রী ছিলেন সাদূমী জাতীভুক্ত, আর লূত(আঃ) ছিলেন আক্কাদী জাতীভুক্ত মানুষ।লূত(আঃ)এর স্ত্রী তার সম্প্রদায়ের বিকৃতকর্মের সমর্থক-এটা জানার পর লূত(আঃ) তার স্ত্রীকে বহু বুঝিয়েও ঠিক করতে পারেননি। লূত(আঃ)এর স্ত্রী #মাথায়_করে নিয়ে যাচ্ছিলেন ১টি মাটির লম্বা ঘড়া-যাতে তার সঞ্চিত অর্থ ছিল,
শহরের সীমা ছেড়ে বেড়িয়ে আসার পর তার মন পাপরাজ্যের জন্য কেঁদে উঠলো ও সে লূত(আঃ)এর নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে পেছন ফিরে তাঁকালো। শাস্তিসরুপ সেও আযাবের শিকার হলো ও জমাট বাঁধা #লবণের_মূর্তিতে পরিণত হলো।
তার সম্পর্কে আল্লাহ্‌ বলেনঃ “আল্লাহ্‌ সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের জন্য নূহ ও লূতের স্ত্রীদের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন,ওরা ছিল আমার দুই সৎকর্মশীল দাসের অধীন।কিন্তু ওরা তাদের প্রতি বে-ঈমানী করেছিলো, ফলে নূহ্‌ ও লূত ওদেরকে আল্লাহ্‌’র আযাব থেকে হিফাযত করতে পারলো না এবং ওদের বলা হলো-জাহান্নামে প্রবেশকারীদের সাথে তোমরাও ওতে প্রবেশ করো”(সূরাঃ আত্‌-তাহ্‌রিম, আয়াহ্‌-১০)।

 উল্লেখ্য যে নূহ(আঃ)এর স্ত্রীর নাম ছিল ওয়া্গিলা ও লূত(আঃ)এর স্ত্রীর নাম ছিল-“ওয়ালিহা”। ওয়ালিহা লবণের মূর্তি হয়ে আজও ঠিক ওভাবেই দাঁড়িয়ে আছে-যেমন ভাবে সে পেছন ফিরে তাঁকিয়েছিলো। মূর্তিটি ২০ফুট লম্বা-মাথায় ধরা ঘড়া বাদে মূল মূর্তির উচ্চতা ১৮ফুট, অর্থাৎ তখনকার মানুষ এত লম্বা হতো।৷ 
(এবার গজব কেমন হয়েছিল তা জানবো) 

কিন্তু কি হয়েছিলো ওয়াহিলার পেছনে সাদূম ও আমুরাতে?
(কপি-পেষ্ঠ বর্জনীয়)কি হয়েছিলো ওয়ালিহা’র পেছনে? কুরআনের একাধিক সূরায় ও বাইবেলের শ্লোকে লূত(আঃ)এর জাতীর ভয়াবহ পরিণতির উল্লেখ আছে।  

সূরা-হিজরের ৭৫ নং আয়াতে বলা আল্লাহ্‌ বলেছেনঃ “অতঃপর সূর্যোদয়ের সাথে সাথে মহানাদ ওদেরকে আঘাত করলো এবং আমি নগরসমূহ উল্টিয়ে দিলাম এবং ওদের উপর কংকর বর্ষণ করলাম,অবশ্যই এতে পর্যবেক্ষণ শক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য নিদর্শন রয়েছে”। সূরা হুদের ৮০-৮৩ নং আয়াতে আল্লাহ্‌ এদের সম্পর্কে বলেছেনঃ “অত:পর যখন আমার হুকুম আসলো তখন আমি নগরসমূহ উল্টিয়ে দিলাম এবং ওদের উপর ক্রমাগত বর্ষণ করলাম কংকর, যা তোমার রবের কাছে চিহ্নিত ছিলো। এইস্থান সীমা লঙ্ঘনকারীদের হতে দূরে নয়”। সূরা আশ্‌-শুয়ারাহ্‌’র ১৭০-১৭৫ নং আয়াতে আল্লাহ্‌ বলেছেনঃ “অতঃপর আমি তাঁকে ও তার পরিবারবর্গকে হিফাযাত করলাম এক বৃদ্ধা ব্যতীত, যে ছিল ধ্বংসপ্রাপ্তদের অর্ন্তগত।অতঃপর অপর সকলকে ধ্বংস করলাম। তাদের উপর আযাব সরুপ বৃষ্টি বর্ষণ করেছিলাম,যাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছিলো তাদের জন্য এবৃষ্টি ছিলো কতো নিকৃষ্ঠ! এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে,কিন্তু ওদের অধিকাংশই মু’মীন নয়। তোমার রব তিনি তো পরাক্রমশালী পরম দয়ালু”।  

আজাবের সারাংশ 
কুরআন থেকে তাদের ধ্বংস সম্পর্কে যা জানা যায় তার 
সারকথা হচ্ছেঃ ১/প্রথমেই বিকট এক শব্দে সমস্থ প্রাণী নিজ নিজ স্থানেই মারা যায়, 
২/তারপর তাদের নগরসমূহকে উলটে দেওয়া হয়।
 ৩/এবং সবশেষে তাদের জনপদের উপর “আল্লাহ্‌ কর্তৃক চিহ্নিত” বিশেষ পাথরের বৃষ্টিপাত করা হয়। 
বাইবেল মতেঃ “সডোম ও গামোরাবাসীদের ধ্বংসের বিকট চিৎকার আমার কাছেও পৌছেছিলো, কিন্তু তা তাদের দুঃখজনক পাপের চাইতে বেশি ছিলো না”(বুক অব জেনিসিস, অধ্যায়-১৮, শ্লোকঃ২০-২১)। ইনজিল শারীফকে খ্রীষ্টানরা বিকৃত করে ফেললেও আজও এখানে অনেক অবিকৃত সত্য আছে- আল্লাহ্‌’র নিদর্শন সরুপ। আশ্চর্য্যর ব্যাপার হচ্ছে দু’টি সূত্রই এখানে একমত যে সাদূম(Sodom)ও আমুরাহ্‌(Gomorrah)কে বিকট শব্দ(চিৎকার) দ্বারা ধ্বংস করা হয়েছে। কুরআনে আল্লাহ্‌ বারবার বলেছেন যে “বিশেষ ভাবে চিহ্নিত” পাথরের বৃষ্টিদ্বারা এদের ধ্বংস করা হয়েছে। 

লূত(আঃ)এর বাড়ীতে যে ৩জন ফেরেশতা গিয়েছিলেন, তাদের মাঝে প্রধান ছিলেন ফেরেশতাদের সর্দার জিব্‌রাঈল(আঃ) ও বাকী দু’জন ছিলেন আযাবের ফেরেশতা।প্রথমেই এমন বিকট শব্দ(উৎস জানা যায়নি) করা হয় যে পাপপূরীর বাসিন্দারা ঐ শব্দেই শেষ হয়ে যায়। তারপর জিবরাঈল(আঃ) আল্লাহ্‌’র হুকুমে তাদের গোটা ভূখন্ডটি শূন্য তুলে ফেলে ( আকাশে তুলে নিয়ে যায় কোন কোন রেওয়ায়েতে আছে আসমানের দিকে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পশু পাখি ও মানুষের চেচামেচিও আসমানের ফেরেশতারা শুনতে পায়)  এর পর   আবার   উলটো করে ঠিক সেইস্থানেই নিক্ষেপ করেন। 

সেইস্থান(যেখানে ছিল বিকৃত জাতীর রাজধানী) সেই হতে বিরাট এক হ্রদের সৃষ্টি হয়, যা #বাহ্‌রুল_মাওত বা মৃত সাগর নামে খ্যাত, 
ইংরেজীতে একেই Dead Sea বলা হয়। এর স্থানীয় নাম বাহ্‌রুল লূত বা লূত সাগর। আজও স্থানীয় খ্রীষ্টান,ইয়াহুদী ও মুসলিমদের যদি কুখ্যাত সাদূম(Sodom) নগরীর অবস্থান সম্পর্কে জিজ্ঞাস করা হয় তো-তারা এই মৃত সাগরই দেখিয়ে দেয়; হাজার হাজার বছর যাবত বংশ পরম্পরায় তারা এটাই শুনে এসেছে। 

 এই সাগরকে মৃত সাগর বলার কারণ হলো- এই সাগরে কোন প্রাণের স্পন্ধন নেই, এখানে লবণের মাত্রা এত বেশি যে-কোন জীবই এই পানিতে বাঁচতে পারে না। আরেকটি আজব ব্যাপার হচ্ছে এই বাহ্‌রুল মাওতের পানিতে কোন জিনিসই ডুবে না-#ভেসে_থাকে!
লবণের মাত্রা এখানে এত বেশি যে-পানির মাঝে এখানে সেখানে #লবণের_স্তম্ভভেসে থাকে।
জিব্‌রাঈল(আঃ) কাওমে লূতের রাজ্যকে শূন্যে উঠিয়ে এতো জোরে ফেলেছিলেন যে এই মৃত সাগর-ই হচ্ছে বিশ্বের স্থলভাগের গভীরতম স্থান! 

সমুদ্র সমতল থেকে এর গভীরতা ৪,০০ মিটার!!আরেকটি আজব ব্যাপার হচ্ছে এর পানিতে কোন ধাতব বস্ত ফেলালে নিদৃষ্ট সময়ের পর তা বিকৃত হয়ে যায়, এই #সাইকেলের অবস্থাই দেখুন। 
এ গুলো সব আল্লাহর গজবের নিদর্শন মানব জাতি যাতে এথেকে শিক্ষা নিতে পারে।  সমকামীরা যাতে শিক্ষা নিতে পারে।     

এখানে অনেকেই আছেন যারা এব্যাপারে অবিশ্বাসী ও কূটতর্ক করেন, তাদের উদ্দেশ্যে বলছি-‘অপেক্ষা করুন সামনের পর্বে মৃত সাগরই যে কাওমে লূতের বাসস্থান ছিল তার প্রমাণ দেবো ইনশা আল্লাহ্’।

 এতো গেলো তাদের ভূখন্ডের কথা, কিন্তু বিশেষ ভাবে চিহ্নিত পাথরের কি হবে? যার কথা আল্লাহ্‌ বারবার বলেছে ও যেই পাথরের বৃষ্টি তাদের নিঃচিহ্ন করেছে.................. আসুন জেনে নেয়া যাক ---++ 


কাওমে লূতের প্রত্নপ্রমাণ ও কিছু  নিদর্শনঃ১৯৭৫ সালে সিরিয়ার হিমস প্রদেশের ইবলা শহরে প্রাচীন এক রাজপ্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়, যেখানে এক ধ্বংসপ্রাপ্ত পাঠাগারে পাওয়া যায় ৭,০০০ পোড়ামাটির লিপি। তার ভেতরের ১টি লিপি ছিল আমুরাহ্‌’র রাজা #বিরশা’র,
কিউনিফর্ম লিপিতে লেখা যেখানে লেখা ছিলঃ “সমতল ভূমির সম্বৃদ্ধ রাজ্য আমুরাহ্‌’র রাজা বিরশা’র উদ্দেশ্যে”। বাইবেলে আমুরাহ্‌ Gomorrah নামে পরিচিত, বাইবেলের বুক
-অব-জেনিসিসে কাওমে লূতের ৫টি শহরের উল্লেখ আছে; যার ভেতর Sodom(সাদূম) ও Gomorrah(আমুরাহ্‌) প্রধান, বাকী ৩টি শহর হচ্ছে Admah,Zeboiim ও Zoar। ইসলামী সূত্র সমূহে কাওমে লূতের প্রধান শহর হিসাবে সাদূম ও আমূরাহ্‌’র উল্লেখ আছে, বিরশা’র এই পোড়ামাটির লিপি থেকে জানা যাচ্ছে যে- কাওমে লূতের রাজধানী ছিল আমুরাহ্‌। কিন্তু সাদূমও ঠিক সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক যেনো সিন্ধু সভ্যতার হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো। ঘটনা এখানেই শেষ নয়, মৃত সাগরের পশ্চিমে ইসরাঈলী অংশে ১টি গুহায় হিব্রু ও কিউইনিফর্মে লিখা একাধিক প্রাচীন বই পাওয়া গিয়েছে, তার ভেতরে ধাতব পাতে লেখা ১টি #প্রাচীন_বইতে
স্পষ্ট করে পাপপুরী সাদূম ও আমুরাহ্‌’র কথা লিখা আছে। এখানে উল্লেখি হয়েছে “সম্বৃদ্ধ সাদূম ও আমুরাহ্‌ শহরকে স্রষ্টা উলটে দেন ও আগুনে পাথরের বৃষ্টি দিয়ে ধ্বংস করে দেন। এখন যেখানে লূত সাগর অবস্থিত সেখানেই ছিল সাদূম ও আমুরাহ্‌।সেই ভয়াবহ বৃষ্টির অগ্নিকান্ডের ফলে সাদূমী জাতীর দেশ পুড়ে ছাই হয়ে যায়”। 

অগ্নিকান্ড ও পাথুরে বৃষ্টি “বিশেষ ভাবে চিহ্নিত” পাথরের কথায় পরে আসছি, তার আগে কয়েকটি ভয়ংকর প্রত্নপ্রমাণের কথা বলছিঃ উরদূনের(জর্দান) #বাব_আদ_দারা
ঠিক মৃত সাগরের #তীরবর্তি ধ্বংসাবশেষ,
যেখানে ১০ একর জুড়ে ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে। আর এখানেই পাওয়া গিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তম প্রাচীন কবরস্থান, সেখানে সমাহিত আছে ২লাখ মানুষের কংকাল! ফরেসসিক রিপোর্ট মতে “এরা অপঘাতে মারা গিয়েছে, কি সেই অপঘাত কেউ জানে না; কিন্তু এটা নিশ্চিত যে-এরা প্রত্যেকেই অস্বাভাবিক ভাবে মারা গিয়েছে। এই বাব আদ দারা’র নগর প্রাচীরের ধ্বংসাবশেষের কাছে পাওয়া গিয়েছে এক প্রহরীর কংকাল, #যার খুলি অর্ধেকই
গায়েব! বিশেষজ্ঞদের মতে কোন ভাব্রী পাথর এর মাথায় অর্ধেক নিঃচিহ্ন করে দিয়েছে, পাশেই পাওয়া গেছে এমন এক কংকাল যেটা দেখে মনে হয়- প্রবল বাতাসের এই ব্যক্তি ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গিয়েছে। এটাই কি সাদূম? –না, কারণ মৃত সাগরের লিপি,কুরআন ও বাইবেলের মতে মূল পাপীদের কেন্দ্র সাদূম ও আমুরাহ্‌ মৃত সাগরের বুকে হারিয়ে গেছে চিরদিনের মতো। বিশেষজ্ঞদের মতে বাব-উল-দারা কাওমে লূতের দেশের উপকন্ঠ ছিল। সব থেকে ভয়ানক নিদর্শনটি পাওয়া গিয়েছে মৃত সাগরের তীর থেকে জর্দানের অংশ থেকে। সেটি হচ্ছে আর্তনাদরত এক #মানুষের_মুখ,
সেই মুখটি পাথর হয়ে যাওয়া লবণের। ফরেনসিক রিপোর্ট অনুযায়ী এটা প্রাকৃতিক-কোন মানুষের তৈরী নয়- আর মানুষের পক্ষে লবণকে পাথর বানিয়ে তা দিয়ে মূর্তি বানানো সম্ভব নয়। রিপোর্ট মতে এই মুখটির পাথুরে লবণ লবণ থেকে পাথর হওয়ার পরে নির্মিত নয়- বরং লবণের এই স্তর সাথে সাথেই এই রুপ ধারণ করেছিলো। অর্থাৎ লবণ থেকে পাথর হওয়ার বয়স একই। এটা ঠিক যেনো জর্দানের Mujib Natural reserve এ অবস্থিত লূত(আঃ)এর স্ত্রী ওয়ালিহা’র মূর্তির মতো। ওয়ালিহার এই #মূর্তি দেখেই বোঝা যায় প্রাকৃতিক- মানুষের তৈরী নয়,
তাই এই নিয়ে পরীক্ষাও করা হয়নি। শুধু এটা ছাড়া যে- এটাও পাথর হয়ে যাওয়া লবণের তৈর! এই #আতঙ্কিত_মানুষের_মুখ
ও ওয়ালিহার মূর্তি এবং সেই সাথে মৃত সাগরের চারিপাশে লবণের গুটিকা ও সাগরের বুকে #লবণের_দেওয়াল
দৃষ্টে এটা প্রমাণিত হয় যে- “আল্লাহ্‌ এই বিকৃত কামাচারীদের প্রস্তরীভূত লবণে পরিণত করে অভিনব ও ভয়াবহ শাস্তি দেন”। 

এবারে আসা যাক সেই ‘বিশেষ ভাবে চিহ্নিত’ পাথর ও প্রস্তর বৃষ্টি এবং অগ্নিকান্ডের দিকে...............
(বিশেষভাবে চিহ্নিত পাথর)
কাওমে লূতের ধ্বংসের ৩টি পর্যায় ছিলঃ ১/বিকট শব্দ-যা শুনেই সমস্ত জীব মারা যায়, ২/তাদের বসতি শুন্যে তুলে উল্টিয়ে নিচে নিক্ষেপ করা, ৩/বিশেষ ভাবে চিহ্নিত পাথরের বৃষ্টি এবং ২য় পর্যায় পর্যন্ত বলা হয়েছিলো, ৩য় বিষয়ে বলার আগে ২য় বিষয়ের ১টি ব্যাপারে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছিঃ Ralph E.Bancy নামক এক গবেষক সাদূম ও আমুরাহ্‌ ধ্বংসের সত্যতায় বিশ্বাস করতেন ও সেজন্যে তিনি আরও প্রমাণ সংগ্রহের জন্য Dead Sea এর নিচে ক্যামেরা নিয়ে নামেন। ফলাফল যা পাওয়া যায়, তাতে তিনি আরও আস্তিক হয়ে ওঠেন। 

লূত সাগরের তলদেশে কোন ধ্বংসাবশেষের চিহ্ন মাত্রও পাওয়া যায় নি, যদিও ইসকান্দারিয়া ও বিমনী দ্বীপে সাগরের নিচেও ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গিয়েছে! ধ্বংসাবশেষ পাওয়া না যাওয়ার কারণ হচ্ছে-“কোন জমীন উলটে দিলে ধ্বংসাবশেষের চিহ্ন মাত্রও পাওয়ার কথা নয়”। Ralph E.Bancy আমুরাহ্‌(Gomorrah) শহরের খোঁজ করছিলেন, এই আমুরাহ্‌-ই ছিল কাওমে লূতের রাজ্য; এর প্রমাণ হচ্ছে ইবলা শহরে প্রাপ্ত কাওমে লূতের রাজা বিরশা’র ট্যাবলেড, যেখানে তাঁকে আমুরাহ্‌’র রাজা হিসাবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য সাগরের সাথে মৃত সাগরের মূল পার্থক্য এটাই যে-এর বালুর পরিমাণ বিশ্বের যে কোন সাগরের চাইতে ৬% বেশি। আর বিশ্বে লূত সাগরের মতো ২য় কোন জলাভূমি নেই- যেখানে লবণের পরিমাণ এত বেশি ও পানির পরিমাণ এত কম। বস্তুত নীল রঙের যেই তরল লূত সাগরে দেখা যায়- তার ভেতরে লবণ ও অন্যান্য উপাদানের পরিমাণ বেশি ও পানির পরিমাণ খুবই কম। কোন জীব এখানে জন্মানো তো দূরের কথা । ভুল করেও যদি কোন ব্যাঙ বা মাছ চলে যায়-তবে তা মরে বিকৃত দেহে ভেসে উঠে। আর এই সাগরের তলদেশে ক্যামরা নিয়ে হন্য হয়ে খুঁজেও র্যাকলফ কিছুই পাননি, এই #লবণের_স্তম্ভ ছাড়া।
এবারে আসছি বিশেষ ভাবে চিহ্নিত পাথরের দিকে, সূরা আন্‌কাবুতের ৩১ নং আয়াতে বলা হয়েছে “ওরা(ফেরেশতা) বললোঃ ‘আমাদের এক অপরাধী জাতীর প্রতি প্রেরণ করা হয়েছে, ওদের উপর মাটির ঢিলা নিক্ষেপ করার জন্য, যা সীমালঙ্ঘনকারীদের জন্য চিহ্নিত আছে আপনার রবের কাছে”। সূরা হিজরের ৭৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে “ওদের উপর কঙ্কর বর্ষণ করলাম, অবশ্যই এতে পর্যবেক্ষণ শক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য নিদর্শন রয়েছে”। সূরা হুদের ৮৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে “ওদের উপর ক্রমাগত বর্ষণ করলাম কঙ্কর, যা তোমার রবের কাছে চিহ্নিত ছিলো”। সূরা আশ্‌-শুয়ারাহ্‌’র ১,৭৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে “তাদের উপর আযাব সরুপ বৃষ্টিবর্ষণ করেছিলাম,যাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছিলো তাদের জন্য এবৃষ্টি ছিল কত নিকৃষ্ঠ! এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে”। 

 এসব আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাস্‌সিররা বলেনঃ “আল্লাহ্‌ কাওমে লূতের উপর ‘বিশেষভাবে চিহ্নিত’ পাথরের বৃষ্টি বর্ষণ করেছিলেন”। খ্রীষ্ঠান পাদ্রী ও ইয়াহুদী রাব্বিরাও এব্যাপারে একমত, কারণ বাইবেল ও ওল্ড টেষ্টামেন্টের ব্যাখ্যা ও শ্লোকেও তাই আছে! কিন্তু কি ছিল এই পাথরে? কি ছিল তার বিশেষত্ব?
(বিশেষ ভাবে চিহ্নিত পাথর ও পাথরের বৃষ্টি)
পাথর সম্পর্কিত কুরআনের আয়াহ্‌গুলো আবার তুলে দিয়ে আলোচনা শুরু করছিঃ সূরা আন্‌কাবুতের ৩১ নং আয়াতে বলা হয়েছে “ওরা(ফেরেশতা) বললোঃ ‘আমাদের এক অপরাধী জাতীর প্রতি প্রেরণ করা হয়েছে, ওদের উপর মাটির ঢিলা নিক্ষেপ করার জন্য, যা সীমালঙ্ঘনকারীদের জন্য চিহ্নিত আছে আপনার রবের কাছে”। সূরা হিজরের ৭৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে “ওদের উপর কঙ্কর বর্ষণ করলাম, অবশ্যই এতে পর্যবেক্ষণ শক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য নিদর্শন রয়েছে”। সূরা হুদের ৮৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে “ওদের উপর ক্রমাগত বর্ষণ করলাম কঙ্কর, যা তোমার রবের কাছে চিহ্নিত ছিলো”। সূরা আশ্‌-শুয়ারাহ্‌’র ১,৭৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে “তাদের উপর আযাব সরুপ বৃষ্টিবর্ষণ করেছিলাম,যাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছিলো তাদের জন্য এবৃষ্টি ছিল কত নিকৃষ্ঠ! এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে”। 

আগেই বলেছি কাওমে লূতের রাজধানী ছিল আমুরাহ্‌তে, কারণঃ প্রথমতঃ কাওমে লূতের রাজা বিরশার লেখমালায় তাঁকে আমুরাহ্‌’র রাজা হিসাবেই আখ্যায়িত করা হয়েছে। দ্বিতীয়তঃ মৃত সাগরের ইজরায়েলী অংশে অবস্থিত #গুহা থেকে প্রাপ্ত Dead sea scroll
এর মতে লূত সাগরের দক্ষিণাংশে সাদূম(Sodom) ও উত্তরে আমুরাহ্‌(Gomorrah) অবস্থিত ছিল, এবং তৃতীয়তঃ লূত(আঃ)এর স্ত্রী ওয়ালিহার মূর্তিটির অবস্থান প্রমাণ করে যে- মহাপাপী জাতীর রাজধানী আমুরাহ্‌(Gomorrah) বর্তমান জর্দানের কার্‌খ প্রদেশের Mujib Nature reserve-এ অবস্থিত ছিল। কারণ মুফাস্‌সির, ইসলামের ইতিহাস,বাইবেল ও প্রাচীন বিবরণী মতেঃ “লূত(আঃ)এর স্ত্রী ওয়ালিহা শহর থেকে লূত(আঃ)এর সাথে চলে আসেন, কিন্তু আবার যাওয়ার জন্য শহরের দিকে তাঁকাতেই লবণের মূর্তিতে পরিণত হয়। আর মূর্তিটি পশ্চিমমুখী থাকায় স্পষ্ট বোঝা যায় যে- পাপপুরী আমুরাহ্‌ বর্তমানে মুজিব নেচার রিজার্ভের তীরে লূত সাগরে অবস্থিত ছিল। সেই মতে সাদূম ও আমুরাহ্‌’র অবস্থান ছিল #এই,
সাদূম(Sodom) ছিল কুখ্যাত পাপপুরী যার সমস্ত পুরুষ অধিবাসীরাই ছিল সমকামী, আর আমুরাহ্‌ ছিল সেই জাতীর রাজধানী, যেখানে সব ধরণের পাপকাজ চলতো। বাইবেলের বুক-অব-জেনিসিসের ১৯ নং অধ্যায়ের ২৭ নং শ্লোকে বলা হয়েছেঃ “পরের দিন(ফেরেশতা আসার পর) ভোরে আব্রাহাম{ইবরাহীম(আঃ)} জেগে উঠে এবং আমাকে স্মরণ করেন(প্রার্থনা/নামায)। সে নিচে সডোম ও গামোরাহ্‌’র দিকে তাঁকিয়ে দেখে সমগ্র স্থান থেকে ঘন ধোঁয়া উঠছে, ঠিক যেমন অগ্নিকান্ড থেকে ওঠে”। অর্থাৎ কাওমে লুতের গোটা বসতিতে ভয়াবহ ধরণের অগ্নিকান্ড ঘটেছিলো। এই #মানচিত্র
দেখেই ঘটনার ভয়াবহতা উপলব্ধি করতে পারবেন, তাঁকিয়ে দেখুন- কোথায় মামরের সেই বৃক্ষ আর কোথায় সডোম আর গামোরাহ! ইব্‌রাহীম(আঃ) যেই গাছের নিচে দাঁড়িয়ে কাওমে লূতের ধ্বংসাবশেষের দিকে তাঁকিয়ে ছিলেন তা #Oak_of_Abradam বা
ইব্‌রাহীম(আঃ)এর ওকে গাছ নামে খ্যাত, এটি বর্তমানে ফিলিস্তীনের পশ্চিমতীরে অবস্থিত। এই আমুরাহ্‌’র ধ্বংসাবশেষের কাদা নামে পরিচিত #সাদা_বস্তুর সাথে
ছাড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য পাথর। #এগুলো মূলত গন্ধকের পাথর,
গন্ধক(Sulphur) হচ্ছে বারুদ তৈরীর মূল উপাদান- ১টা দাহ্য পদার্থ! আর এই গন্ধকের পাথরেই ভর্তি পুরো আমুরাহ্‌, ঠিক #‎এমন ভাবে অনেক পাথরই এখানে ছাড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। হাজার হাজার বছর পরও এগুলো আজও কার্যকর! এই গন্ধকগুলো কাদামাটি নামে খ্যাত সাদা পদার্থের মাঝে জড়িয়ে আছে, আশ্চর্য্যের ও ভয়ংকর ব্যাপার হচ্ছে-“পরীক্ষা করে জানা গিয়েছে এগুলো মোটেও কাদামাটি নয়-‘এগুলো ছাই’, হাজার হাজার বছর ধরে থাকতে থাকলে মাটির মক্ত হয়ে গিয়েছে”! গবেষক Alex Mvuka Npung ও Sunbury Technological Centre এর Andy Geatches এর ৬টি গন্ধক পাথর নিয়ে পরীক্ষা করে দেখেছেন যে- এদের প্রত্যেকের ভেতর রাসায়নিক উপাদানের পরিমাণ হুবহু এক! যা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে অসম্ভব, কারণ প্রাকৃতিক কোন বস্তুর ক্ষেত্রে এমনটি পূর্বে আর ঘটেনি বা কেউ শুনেওনি। এবং তারা ৯৯% বিশুদ্ধ সাধারণ গন্ধকের সাথে আমুরাহ্‌’র গন্ধক পাথরের #তুলনামূলক পরীক্ষা করে ফেখেছেন যে-সাধারণ গন্ধক যেখানে ধুলাবালি ছাড়াই ৯৯% বিশুদ্ধ,
সেখানে এই গন্ধক পাথর ছাই দিয়েও ১১৫% বিশুদ্ধ। আমার কথায় কেউ অবিশ্বাস করতেই পারে, তাই উপরের বিশেষজ্ঞদের নাম গুলো দিয়ে দিলাম! তারা এও বলেছেন যে- হাজার হাজার বছর যাবৎ পরে থাকতে থাকতে এগুলোর তেজষ্ক্রিয়তা হ্রাস পাচ্ছে!! তার মানে ১বার চিন্তা করে দেখুন- এই পাথর গুলো কত তেজস্ক্রীয় ছিল- যখন এগুলো নিক্ষিপ্ত হয়! আমুরাহ্‌’র এই গন্ধক পাথরের বিশেষত্বের কথাই আল্লাহ্‌ কুরআনে বলেছেন- যার ভেতরে পর্যবেক্ষণ শক্তির অধিকারীদের জন্যে নিদর্শন রয়েছে, গন্ধকের বৈশিষ্ট ও ক্ষমতাই সেই নিদর্শন। আল্লাহ্‌ প্রথমত বিকট শব্দে কাওমে লূতের অধিবাসীদের প্রাণ সংহার করেন। তারপর জিব্‌রাঈল(আঃ) কাওমে লূতের পাপ জমীন শুন্য উঠিয়ে উলটো করে নিক্ষেপ করেন। যার ফলে বিশ্বের গভীরতম স্থান(স্থলে) মৃত সাগরের জন্ম হয়। তারপর সেই ধ্বংসপ্রাপ্ত জমীনের উপর এই মারাত্বক ভয়াবহ পাথরের বৃষ্টি বর্ষণ করেন। এই পাথর তখন আরও তেজস্ক্রীয় থাকায় জমীনে পরার সাথে সাথেই জ্বলে ওঠে ফলে বিরাট অগ্নিকান্ড ঘটে ও কাওমে লূতের জমীন পুড়ে ছাই হয়ে যায়। #এই_পাথর গুলোই সেই পাথর এগুলো এত সজোরে নিক্ষিপ্ত হয় যে-
কাওমে লূতের পাপ জমীনের ভেতরে গেঁথে যায় ও তার চারিপাশের স্থানসমূহকে জ্বলে ছাই করে দেয়। এই পাথর এতোই ভয়ানক যে- ভেতরে আরও গন্ধক রয়ে যায়- যেগুলো ছাইয়ের স্তরের কারণে নিভে যেতে বাধ্য হয়। এখন আমরা যেই Brimstone দেখতে পাই সেগুলো সেই মারাত্বক পাথরের উচ্ছিষ্ট কিয়দংশ!  


কেমন ছিল- সেই পাপপুরী সাদূম ও আমুরাহ্‌? চলুন সেই পাপপুরীর নগর প্রাচীরের ধ্বংসাবশেষ থেকে ঘুড়ে আসি
(বর্তমানে পাপপুরী আমুরাহ্‌’র সন্ধানে)
আল্লাহ্‌ কুরআনে কাওমে লূতের সমগ্র জনপদকে শুন্যে তুলে উলটে ফেলানোর কথা বলেছেন, এবং তা করেওছেন। আর সমকামী রাজ্যের রাজধানী আমুরাহ্‌কেও তাই করেছেন, কিন্তু এই শহরের এক বিরাট অংশকে নিদর্শন হিসাবে টিকিয়ে রেখেছেন। এসম্পর্কে আল্লাহ্‌ কুরআনের সূরা হিজরের ৭৫ নং আয়াতে বলেছেনঃ “অবশ্যই এতে পর্যবেক্ষণ শক্তি সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য নিদর্শন রয়েছে”। সূরা শুয়ারাহ্‌’র ১৭৪ নং আয়াতে বলেছেনঃ “এতে অবশ্যই নিদর্শন আছে”। বাইবেলে বর্ণিত পিটারের ভাষ্যমতে “সডোম(সাদূম) ও গামোরাহ্‌(আমুরাহ্‌)শহরকে আমি জ্বালিয়ে ছাইতে পরিণত করেছি তাদের ধর্ম বিরোধী কাজের জন্য, এবং তা নিদর্শন হিসাবে রেখেছি যাতে সবাই নিন্দা করে”(অধ্যায়-২, শ্লোক-৬)। “লূত জর্ডন উপত্যকার দিকে তাঁকিয়ে দেখলো সমগ্র ভূমি সমতল ও জলসঞ্চিত উর্বর- স্রষ্ঠার বাগানের মতো, মিছর ভূমির মতো,যোওরের দিকে; ধ্বংসের পূর্বে সডোম ও গামোরাহ্‌ এমনই ছিলো। তাই লূত জর্ডনের সমগ্র সমভূমিকে নির্বাচন করেছিলো”(বুক-অব-জেনিসিস,অধ্যায়-১৩, শ্লোক-১০; বাইবেল)। ব্যাবিলনে আবিষ্কৃত কাওমে লূতের #প্রাচীন_ইতিহাস_গ্রন্থ মতেও “সাদূম ও আমুরাহ্‌কে” জ্বালিয়ে ছাই করে দেওয়া হয়েছিলো-
আধুনিক জর্দানের মাদাবা প্রদেশ জাব আল-লূত(লূতের পাহাড়)/জাব আস-সাদূম(সডোমের পাহাড়) নামে ১টি স্থান আছে, লূত(আঃ)এর অভিশপ্তা স্ত্রীর মূর্তির অদূরেই তা অবস্থিত। দূর থেকে দেখলেও প্রত্নতত্ত্বে সাধারণ জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তিদের মনেই সন্দেহ জাগবে- এটা নিশ্চই কোন #বিরাট_শহর,
যা সুউচ্চ প্রাচীরের ঘেরা। বাইবেল ও প্রাচীন ইতিহাস গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে- সাদূম ও আমুরাহ্‌ ছিল ২টি সম্বৃদ্ধ শহর, যা সুউচ্চ ইমারত ও স্থাপনা দ্বারা সজ্জিত ছিল। সমকামীদের রাজধানী ছিল সেযুগের অন্যতম সুবিশাল, ঐশ্বর্যময় ও দুর্ভ্যেদ্য শহর; যা পরপর #দুইটি_দেওয়ালে বেষ্টিত ছিল।
দূর থেকে দেখলেও বোঝা যায়- এটা মোটেও ক্ষয়জাত পর্বত নয়, এটা মানুষের তৈরী, কারণ দূর থেকেও চোখে পরবে #পাহাড়ের_গাঁয়ে_খিলান,
কাছে গেলেই দেখা যাবে পরপর ২টি দেওয়ালে ঘেরা পাহাড়ের উপর প্রতিষ্ঠিত #পাপপুরী-আমুরাহ্‌।
কাছে গেলেই দেওয়া যাবে জ্বলে যাওয়া খাড়া #দেওয়াল,
#প্রহরাকক্ষটা তো স্পষ্টই বোঝা যায়।
প্রাচীন মিছরীয়,হিট্টাইট,সুমেরীয় ও হিব্রু সভ্যতার স্থাপত্যের সাথে কাওমে লূতের স্থাপত্যের অসম্ভব মিল দেখা যায়। এই ছবিগুলো দেখুনঃ আমুরাহ্‌’র এই স্থাপনা নিঃসন্দেহে #সুমেরীয়_জিগুরাত ও মূর্তির মতো ছিল।
মাথার মতো এই স্থাপনা ছিল সন্দেহাতীত ভাবে #মিছরীয়_স্ফিংসের অনুকরণে তৈরী!
আর পুরু এই স্তম্ভদ্বয় ঠিক যেনো প্রাচীন হিব্রু নগরী #আল_কুদ্‌স(জেরুজালেম)এর প্রাচীর!
গোটা শহরটি পাহাড়ের উপর পরপর দু’টি প্রাচীরে ঘেরা ছিল-ঠিক #এরকম!
প্রত্নতত্ত্ববিদরা তথাকথিত এই পাহাড়ে পরীক্ষা করে আশ্চর্য্য ফলাফল জানিয়েছেন, কাদামাটি মনেকরা হলো এটা আসলে তা নয়, বরং হাজার হাজার বছর ধরে থাকতে থাকতে ছাই জমাট বেঁধে কাদার মতো শক্ত হয়ে গেছে। আজব ব্যাপার হচ্ছে-এর উপরের অংশটা শক্ত, চাপ দিলেই ভেতর থেকে #এভাবেই বেড়িয়ে আসে ছাইয়ের ধুলো!
অর্থাৎ মানুষ যেটাকে জাব আল-লূত/ জাব আস-সাদূম নামে চিনে সেটি আসলে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া কুখ্যাত আমুরাহ্‌ শহর! এই শহরের মন্দির,মূর্তি,প্রহরাকক্ষ,দূর্গ সবই আজ সেই রকমই আছে- ঠিক যেমন আগে ছিলো। পার্থক্য কেবল এটাই যে-এখন তা ছাইয়ে পরিণত হয়ে গেছে। ততোধিক আশ্চর্য্যের ব্যাপার হচ্ছে-“কিভাবে এই ছাইয়ের শহর এখনও প্রকৃতির বিরুপতার মাঝে টিকে আছে-এটা কি আল্লাহ্‌’র নিদর্শন নয়”? সবশেষের ছবিতে পুরো ব্যাপারটি খোলসা করে দিচ্ছি, #এই_ছবিটি দেখুনঃ
এতে লালচে রঙা অংশটি প্রাকৃতিক পাহাড়, আর ধূসর অংশটিই পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া কুখ্যাত পাপপুরী আমুরাহ্‌। কিভাবে ১টা শহরের গোটা স্থাপনা এমন কি পাথর ও লোহার পর্যন্ত পুড়ে ছাই হয়ে গেলো? বিশেষজ্ঞরা এর উত্তর খুঁজে পেয়েছেন, আর সেটি হচ্ছেঃ “কল্পনাতীত ভাবে বেশি দাহ্যক্ষমতা সম্পন্ন আগুনে এই শহরটিই ছাইতে পরিণত হয়ে গিয়েছে, আর সেই ভয়ংকর অগ্নিকান্ডের মূল কারণ ছোট ছোট পাথর, যা গন্ধক জমাট বেঁধে পাথরে পরিণত হয়েছে”
আল্লাহ্‌’র গজবে ধ্বংস হয়ে যাওয়া জাতী সমূহের ইতিহাসে আর কোনটিতেই আমি এতোটা মারাত্বক-ভয়াবহ আঘাত দেখিনি- যা কাওমে লূতে পেয়েছি। নূহ্‌(আঃ)এর জাতী, আদ ও সামূদ জাতীকেও এভাবে ধ্বংস করা হয়নি। যেমনটা করা হয়েছিলো কাওমে লূতের সাথে। কারণ কুরআনের ভাষায় বলতে হয় “তাদের আগে এমন কুকর্ম আর কেউ করেনি”। পশু-পাখিদের ভেতর দেখুন- কোন নিকৃষ্ঠ নোংরা পশুকেও দেখবেন না –সমকামীতার মতো অদ্ভুত কুকর্ম করতে, কিন্তু এরা করে তাহলে চিন্তা করে দেখুন এরা কোন পর্যায়ের জঘন্য? নিঃসন্দেহে এরা মনুষ্যত্বের সীমা এমনকি পশুত্বের সীমাও অতিক্রম করে গিয়েছে- কোন অজানা স্তরের দিকে- ব্যাকরণবিদরা যার আখ্যা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। কাওমে লূতকে এমন ভয়াবহ ভাবে ধ্বংস করার পরও, তাদের ধ্বংসাবশেষ ও প্রমাণ দুন্‌ইয়ার বুকে অটুট থাকার পরও সমকামীতার মতো বিকৃত কুকর্ম কিন্তু বন্ধ হয়ে যায়নি। আমাদের জানা বহু বিখ্যাত ব্যক্তি ছিল সমকামী। আমি এখানে কুখ্যাত কিছু পুরুষ সমকামীর তালিকা দিচ্ছিঃ ~প্রাচীন গ্রীসঃ প্রাচীন গ্রীসে সমকামীতা মহামারীর মতো ছিলো। এই নিকৃষ্ঠ কর্মটিকে পৌরুষের প্রতীক বলে মনেকরা হতো। অধিকাংশ গ্রীক দার্শনিক ও ব্যক্তিত্বই ছিল সমকামী। তাদের তালিকা দিলে এখানেই দিন শেষ হয়ে যাবে, তাই কুখ্যাত কিছু সমকামীর নাম বলছিঃ১/সক্রেটিস(বিশিষ্ট? দার্শনিক) ২/প্লেটো(রিপাবলিকার রচয়িতা) ৩/এরিষ্টটল(রাষ্ট বিজ্ঞানের জনক?) ৪/আলেকজান্ডার(Alexander the Gay), ৫/৭ম টলেমী(ক্লিওপেট্রার বাবা), ৬/লিওনিডাস(৩,০০ সিনেমার সেই বীর স্পার্টান রাজা) প্রমুখ~প্রাচীন ইতালীঃ প্রাচীন ইতালী নাকি গ্রীস সমকামীতায় বড় ছিল? আমি নিশ্চিত এমন প্রশ্ন করলে যে কোন ইতিহাসবিদেরই বাকরোধ হয়ে যাবে, ও মনেমনে হিসাব করতে করতে শেষে পাগল হয়ে যাবে। তাই এখানে কিছু অতি কুখ্যাত সমকামীর নাম দিচ্ছিঃ ১/জুলিয়াস সীজার, ২/সম্রাট অক্টেভিয়ান আগাষ্টাস সীজার, ৩/সম্রাট হেড্রিয়ান, ৪/সম্রাট নিরো, ৫/সম্রাট ক্লডিয়াস, ৬/সম্রাট কালিগুলা, ৬/সম্রাট কমোডাস, ৭/সম্রাট তাইবেরিয়াস, ৮/সম্রাট ট্রজান, ৯/মাইকেল এঞ্জেলো, ১০/লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি প্রমুখ।~ইংল্যান্ডঃ ইংল্যান্ডের এত রাজা ও রাণী সমকামী ছিল যে এই ক্ষুদ্র পরিসরে তা দেওয়া সম্ভব নয়,তাও সংক্ষেপে দিলামঃ১/রাজা রিচার্ড(রিচার্ড দ্য লায়নহার্ট) ২/রাজা উইলিয়াম দ্য সেকেন্ড, ৩/রাজা এড্‌ওয়ার্ড দ্য সেকেন্ড, ৪/রাজা ১ম জেমস্‌, ৫/রাজা উইলিয়াম দ্য থার্ড, ৬/উইলিয়াম শেক্সপিয়ার(ইংরেজী সাহিত্যের জনক?) প্রমুখ।~মুসলিমদের ভেতরেঃআশ্চর্য্য/অবিশ্বাস্য মনেহলেও ১০০% সত্যিঃ ১/সুলতান জালাল-উদ-দ্বীন ফিরুঝ শাহ্‌ খাল্‌জী(হিন্দুস্তানের খাল্‌জী বংশের প্রতিষ্ঠাতা), ২/সুলতান কুতুব-উদ-দ্বীন মুবারক শাহ্‌ খাল্‌জী(হিন্দুস্তানের খাল্‌জী সুলতান), ৩/বাদশাহ্‌ বাবুর(হিন্দুস্তানে মোগল বংশের প্রতিষ্ঠাতা) এবং ৪/নাওয়াব মীর জা’ফার আলী খান(বাংলার নওয়াব ও কুখ্যাত বিশ্বাসঘাতক)। সবশেষে বলতে চাইঃ “যারা সবগুলো পর্ব পড়েছেন- নিশ্চই দেখতে পেয়েছেন ও প্রমাণ পেয়েছেন ‘আল্লাহ্‌ কিভাবে কাওমে লূতের নাম নিশানা দুন্‌ইয়ার বুক থেকে মুছে দিয়েছেন’? যদি প্রমাণ পেয়ে থাকেন ও বিশ্বাস করে থাকেন তাহলে আজ থেকেই তাদের ঘৃণা করুনঃ ১/যারা সমকামী, ২/যারা তাদের সমর্থক, ৩/যারা তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল তাদের প্রত্যেককে বর্জন করুন ও বাঁধা দিন। কাওমে লূত আমি একারণেই লিখেছি যে-সম্প্রতী সমকামীদের সমর্থনে ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয় সমর্থন দিচ্ছে ও বর্তমান বাকশাল সরকার বাংলাদেশের ইতিহাসে ১ম বারের মতো সমকামীদের পবিত্র “রুপবান” এর লাইসেন্স দিয়েছে, এবং তারাও সমকামীদের প্রতি সহানুভূতিশীল”। ১টি ঘটনা দিয়ে শেষ করছিঃ “একবার জিব্‌রাঈল(আঃ) আল্লাহ্‌কে জিজ্ঞাস করলেনঃ ‘হে আল্লাহ্‌ আমার জানতে ইচ্ছে করছে- আপনার হুকুমে আমি অনেক জাতীকে ধ্বংস করে দিয়েছি যদিও তাদের ভেতর কিছু কামেল ব্যক্তিও ছিল, এব্যাপারে যদি আমাকে পথ দেখাতেন’? আল্লাহ্‌ তখন বললেনঃ ‘কারণ যদিও তারা খুব কামেল ছিল কিন্তু তারা সেইসব অনাচার বন্ধে কিছুই করেনি, তাই আমি তাদের ধ্বংস করে দিয়েছি”। আরেকটি হাদীসে পড়েছিলাম আল্লাহ্‌ বলেনঃ “কারণ তাদের কপাল কখনই আমার দ্বীনের চিন্তায় কুঞ্চিত হয়নি-তারা নিজেদের নিয়েই ছিল”। তাই বলছি দুন্‌ইয়ায় সুখে নিরাপদে থাকার ইচ্ছা বাদ দিন- যদি ঐপাড়ে সুখে থাকতে চান। আসুন তাদের বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ হই যাদের কুকর্মের কারণে আস্ত ১টা জাতী দুন্‌ইয়া থেকে গায়েব হয়ে গিয়েছে। এটা ভুলে যাবেন না আল্লাহ্‌ সমস্থকিছুর মালিক, তাই আমরা তার পথে থাকলে তার ঘৃণার বিষয়গুলোর বিপক্ষে লড়াই করলে নিশ্চই সে আমাদের পাশে থাকবে। কিন্তু কোন শক্তি-ক্ষমতাবান মানুষকে খুশী করার জন্যে তাদের ভয়ে এসব অপকর্ম গুলোকে কোন ভাবেই সমর্থন করার প্রশ্নই আসেনা।
আসুন আমরা সবাই এমন ঘৃনীত পাপকে নিশ্চিহ্ন করার প্রয়াস চালাই। আল্লাহ আমাদের সহায় হউক। আমিন।       
সংকলিত 
এম এম আবদুল্লাহ ভূঁইয়া  
প্রতিষ্ঠাতা  পরিচালক 
নূরুলগনি ইসলামিএকাডেমী কাটাছরা জোরারগঞ্জ মিরসরাই চট্টগ্রাম