Translate

মঙ্গলবার, ৩১ জুলাই, ২০১৮

মৃত ব্যক্তির নামে কোরবানী দেয়া যাবে কি?এবং কোরবানীর সাথে আক্বিকাহ করা যাবে কি?

মৃত ব্যক্তির নামে কোরবানি দেওয়া যাবে কি যাবে না?

 

প্রশ্ন : আমার পিতা গত বছর ইন্তেকাল করেছেন। আমি তার নামে কোরবানি করার নিয়ত করেছি। প্রশ্ন হল, মৃত ব্যক্তির নামে দেওয়া কোরবানির গোশত কী করতে হবে? তার অংশের পুরো গোশতই কি সদকা করতে হবে, নাকি নিজেরাও তা খেতে পারব?

উত্তর : মূলত কোরবানি যথাসময়ে জীবিত ব্যক্তির তরফ থেকেই হওয়া বাঞ্ছনীয়। অবশ্য ইচ্ছা করলে তার সওয়াবে জীবিত অথবা মৃত আত্মীয়-স্বজনকেও শরীক করতে পারে। যেহেতু আমরা দেখি রাসূলুল্লাহ [সা.] ও তাঁর সাহাবাগণ নিজেদের এবং পরিবার-পরিজনদের তরফ থেকে কোরবানি করতেন। অনেকের ধারণা কোরবানি শুধু মৃত ব্যক্তিদের জন্য বা তাদের পক্ষ থেকে করা হবে। এ ধারণা মোটেই ঠিক নয়। মৃত ব্যক্তির তরফ থেকে পৃথক কোরবানি করার কোন দলীল নেই। তবে মৃত ব্যক্তিদের জন্য কোরবানি করা জায়েয ও একটি সওয়াবের কাজ। কোরবানি একটি সাদকা। আর মৃত ব্যক্তির নামে যেমন সদকা করা যায় তেমনি তার নামে কোরবানিও দেয়া যায়। মৃতব্যক্তি এর দ্বারা উপকৃত হবে, ইনশাআল্লাহ।

মৃত ব্যক্তি যদি কোরবানির জন্য ওসিয়ত না করে থাকে তবে তার পক্ষ থেকে দেওয়া কোরবানির গোশতের হুকুম সাধারণ কোরবানির মতো; নিজেরাও খেতে পারবে অন্যদেরকেও দিতে পারবে। পুরোটা সদকা করা জরুরি নয়। তবে মৃত ব্যক্তি যদি অসিয়ত করে যায় এবং তার সম্পদ দ্বারাই কোরবানি করা হয়ে থাকে তাহলে এ কোরবানির পুরো গোশত সদকা করা জরুরি। এ থেকে নিজেদের খাওয়া জায়েয হবে না। [ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/২৯৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৭৩; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৫২; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩৩৫]

তবে একটি কথা মনে রাখতে হবে যে, একটি কোরবানিকে নিজের তরফ থেকে না দিয়ে কেবলমাত্র মৃতের জন্য নির্দিষ্ট করা ঠিক নয় এবং এতে আল্লাহ তাআলার সীমাহীন করুণা থেকে বঞ্চিত হওয়া উচিত নয়। বরং উচিত হচ্ছে, নিজের নামের সাথে জীবিত-মৃত অন্যান্য আত্মীয়-পরিজনকে কোরবানির নিয়তে শামিল করা। যেমন- আল্লাহর নবী (সা.) কোরবানি জবেহ করার সময় বলেছেন, হে আল্লাহ! এ (কোরবানি) মুহাম্মাদের তরফ থেকে এবং মুহাম্মাদের বংশধরের তরফ থেকে। সুতরাং তিনি নিজের নাম প্রথমে নিয়েছেন এবং সেই সঙ্গে বংশধরদেরকেও তার সওয়াবে শরীক করেছেন।

কোরবানির গরুতে আকিকা দেওয়া যাবে নাকি যাবে না?

প্রশ্ন : জুমআর বয়ানে খতীবসাহেব বললেন, ‘অনেকে কুরবানীর সাথে আকীকার অংশ দিয়ে থাকেন এভাবে করা জায়েয নয়। কুরবানির সাথে আকীকার অংশ দিলে আকিকা আদায় হবে না।’ সঠিক মাসআলাটি জানতে চাই!

উত্তর : কুরবানি ও আকীকা আলাদাভাবেই করা উচিৎ। তবে একত্রে করলে আদায় হবে না তা নয়। একত্রে করলেও কুরবানী-আকীকা দুটোই আদায় হবে। কারণ আকীকাও এক ধরনের কুরবানী। হাদীস শরীফে আকীকার উপরও ‘নুসুক’ শব্দের প্রয়োগ হয়েছে। আর এখানে ‘নুসুক’ অর্থ কুরবানী। হাদীসের আরবী পাঠ এই-

سئل رسول الله صلى الله عليه وسلم عن العقيقة، فقال : لا أحب العقوق كأنه كره الاسم، قالوا يا رسول الله! نسألك عن أحدنا يولد له، فقال : من أحب منكم أن ينسك عن ولده فليفعل، على الغلام شاتان مكافأتان، وعلى الجارية شاة.

[দ্র. আলমুসান্নাফ, আব্দুর রাযযাক : ৭৯৬১; আলমুসনাদ, আহমদ : ৬৭১৩, ৬৭২২; আসসুনান, আবু দাউদ (আকীকা অধ্যায়)২৮৪২; আস-সুনান, নাসায়ী : ৭/১৬২, ১৬৩; আলমুসান্নাফ, ইবনে আবী শাইবা ১২/৩২৪ হাদীস : ২৪৭২৭; আলমুসতাদরাক,হাকিম, ৫/৩৩৭, হাদীস : ৭৬৬৬]

سئل رسول الله صلى الله عليه وسلم عن العقيقة، فقال : لا يحب الله العقوق، من ولد له منكم ولد فأحب أن ينسك عنه فليفعل.

[দ্র. আলমুসান্নাফ, ইবনে আবী শাইবা ১২/৩২১, হাদীস : ২৪৭২২; আলমুয়াত্তা, ইমাম মালিক, আকীকা অধ্যায়, হাদীস : ৬৫৮]

আকীকাও যখন এক প্রকারের কোরবানী তখন একটি গরু বা উট দ্বারা একাধিক ব্যক্তির (সাত জন পর্যন্ত) আলাদা-আলাদা কুরবানী আদায় হওয়ার হাদীসগুলো থেকে কুরবানী-আকীকা একত্রে আদায়েরঅবকাশও প্রমাণিত হয়। এটা শরীয়তের পক্ষ হতে প্রশস্ততা যে, গরু বা উটের ক্ষেত্রে একটি‘জবাই’ সাত জনের সাতটি জবাইয়ের স্থালাভিষিক্ত গণ্য হয়। একারণে একটি উট বা গরু সাতজনের পক্ষে যথেষ্ট হয়। সহীহ মুসলিমে সাহাবী জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, ‘আমরা হজ্বের ইহরামবেঁধে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে বের হলাম। তিনি আমাদেরকেআদেশ করলেন যেন প্রত্যেক উট ও গরুতে সাতজন করে শরীক হয়ে কুরবানী করি।’ [সহীহমুসলিম, কিতাবুল হজ্ব, হাদীস : ১৩১৮/৩৫১]

خرجنا مع رسول الله صلى الله عليه وسلم مهلين بالحج، فأمرنا رسول الله صلى الله عليه وسلم أن نشترك في الإبل والبقر، كل سبعة منا في بدنة.

অন্য বর্ণনায় আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘(একটি) গরু সাতজনের পক্ষহতে এবং (একটি) উট সাতজনের পক্ষ হতে (কুরবানী করা যাবে)।’

البقرة عن سبعة والجزور عن سبعة.

[আস-সুনান, আবু দাউদ, হাদীস : ২৮০১, কিতাবুল আযাহী]

সারকথা, ‘নুসুক’ বা কুরবানীর ক্ষেত্রে শরীয়তের প্রতিষ্ঠিত মূলনীতি এই যে, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বারক্ষেত্রে একটি ‘জবাই’ (إراقة الدم) দ্বারা একটি কুরবানী আদায় হলেও উট ও গরুর ক্ষেত্রে একটি‘জবাই’ দ্বারা সাতটি কুরবানী আদায় হতে পারে। অর্থাৎ এখানে ‘জবাইয়ে শরীক হওয়া’ও (সর্বোচ্চসাত জনের) কুরবানী আদায়ের পক্ষে যথেষ্ট। আকীকাও যেহেতু ‘নুসুক’ বা কুরবানী তাই এ মূলনীতিতে আকীকাও শামিল থাকবে। সুতরাং ‘একটি পশু জবাই’ করা দ্বারা যেমন তা আদায় হবে, তেমনি নির্ধারিত নিয়মে ‘জবাইয়ে শরীক হওয়ার’ (شركة في دم) দ্বারাও তা আদায় হবে।

সুতরাং এ প্রশ্নের অবকাশ নেই যে, ‘আকীকায় তো পশু জবাই করতে বলা হয়েছে। অতএব অন্ততএকটি পশু জবাইয়ের দ্বারাই তা আদায় হতে পারে।’ কারণ শরীয়তের দৃষ্টিতে পশু জবাই (إراقة الدم)-এর দায়িত্ব যেমন একটি পশু জবাই করার দ্বারা আদায় হয় তেমনি নির্ধারিত পশুতে ‘শরীকহওয়ার’ দ্বারাও (شركة في دم) আদায় হয়। আকীকার ক্ষেত্রে এই মূলনীতি প্রযোজ্য নয় বলে দাবি করলে ব্যতিক্রমের বিধান সম্বলিত দলীল লাগবে। আমাদের জানামতে এমন কোনো দলীল নেই।  

গ্রন্থনা ও সম্পাদনা : মাওলানা মিরাজ রহমান
সৌজন্যে : মাসিক আল-কাউসার

ইসলামে শ্রমের মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম

ইসলামে শ্রমের মর্যাদা ও গুরুত্ব : ইবরাহীম খলিলুল্লাহ ছাদেকী
শ্রমের গুরুত্ব
ইসলামি সমাজের প্রত্যেক নাগরিককে জীবিকার্জন করতে হবে, রিজিক অন্বেষণে বিচরণ করতে হবে বিস্তৃত এই পৃথিবীতে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন। তিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে সুগম করেছেন। অতএব তোমরা তার পৃষ্ঠে বিচরণ কর এবং তার দেয়া রিযিক আহরণ কর। [সূরা মুলূক : ১৫]
শ্রম বলতে বুঝায় কোন দ্রব্যের উৎপাদনে বা রাষ্ট্রের সেবায় ব্যক্তির একক বা যৌথ প্রয়াস। শ্রম দারিদ্র মোকাবেলার একমাত্র প্রথম হাতিয়ার। সম্পদ উপার্জনের প্রধান মাধ্যম। মানুষকে আল্লাহ তাআলা পৃথিবীতে প্রতিনিধি করে প্রেরণ করেছেন। আর পৃথিবীকে আবাদ ও বসবাস যোগ্য করার অন্যতম উপাদান হল শ্রম।

শ্রমের ব্যাপারে ইসলামের মূলনীতি

১. ইসলাম প্রত্যেক নাগরিককে স্ব-স্ব যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও আগ্রহের বিত্তিতে যে কোন কর্মক্ষেত্র নির্বাচন করার অবাধ স্বাধীনতা দান করে। রাষ্ট্রের বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কোন নির্দিষ্ট কর্মক্ষেত্রে কোন নাগরিককে গ্রহণ করতে বাধ্য করে না। অনুরূপ ইসলামে নিষিদ্ধ এবং ব্যক্তি ও সমাজের বস্তুগত ও আধ্যাত্মিক ক্ষতিকর কর্ম  ছাড়া যে কোন কাজে ইসলাম বাধা সৃষ্টি করে না।
২. যে রাষ্ট্রের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ইসলামি  ব্যবস্থা ও বিধি বিধান বলবৎ আছে, সে রাষ্ট্রে প্রত্যেকে নিজের শ্রমের ফসল ভোগ করতে পারে এবং নিজের মৌলিক
প্রয়োজন ও পারিবারিক চাহিদা পূরণ করতে পারে। ইসলামি ব্যবস্থায় কোন শ্রমিক নিজের শ্রমের ফল ও ফসল থেকে বঞ্চিত হতে পারে না। শ্রমিক তার ঘাম শুকাবার আগে শ্রমের বিনিময় প্রাপ্ত হবে। [আল-হাদীস] এটা ইসলামের শিক্ষা। শ্রমের বিনিময় দানে কোন ধরণের গড়িমসি চলবে না। শ্রমের যথাযথ মূল্য না দেয়া একটি জুলুম। আর জুলুম ইসলামের দৃষ্টিতে জঘন্য অপরাধ। অতএব একজন শ্রমিক তার শ্রমের পর্যাপ্ত অর্থ উপার্জন করে শ্রমিক স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির মালিক হতে পারে। আর ইসলামও চায় অর্থ, সম্পত্তির মাধ্যমে একজন মানুষ সূখী জীবন গড়ে তুলক, যেন সে অন্য কারও মুখাপেক্ষী না হয়।

রিযিক অন্বেষণে শ্রমদান ইবাদত

অনেকে ইবাদতে নিমগ্ন হওয়ার নাম করে উপার্জন হতে বিরত হন। তাদের মতে মানুষকে ইবাদতের জন্য যেহেতু সৃষ্টি করা হয়েছে তাই ইবাদতই করে থাকব। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, জ্বিন ও মানুষকে আমি আমার উপাসনার জন্যই সৃষ্টি করেছি। [সূরা জারিয়াত : ৫৬]
তাই নিজের স্বার্থ রক্ষার জন্য আল্লাহর ইবাদতে বিঘœতা সৃষ্টি করা যাবে না। আল্লাহর হক্ব আদায়ের জন্য অবশ্যই পুরোপুরি ইবাদতে নিবেদিত প্রাণ হতে হবে। সন্নাসিরা যেমন বসে উপাসনামগ্ন থাকে। এ শ্রেণীকে রাসূল সা. শিক্ষা দিয়েছেন যে, ইসলামে সন্ন্যাসবাদ নেই। পার্থিব কাজ-কর্ম যখন বিশুদ্ধ নিয়তে, ইসলামি বিধিবিধান লংঘন না করে সম্পাদন করা হয়, তাও ইবাদতে পরিগণিত হয়। মানুষ যখন নিজের স্বার্থ, পরিবারের লালন, আত্মীয়-স্বজনের দয়া এবং সৎকাজে সহায়তা দানের জন্য রোজগার করে, তা জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহর একটি অংশ হিসেবে ধর্তব্য হয়। অতএব রিযিক সন্ধানে শ্রম, চাকরি ও ব্যবসা বাণিজ্য ইত্যাদির মাধ্যমে যে কেউ রিযিক অন্বেষণ করতে গেলে তা ইবাদতের পরিপন্থী নয়। বরং রিযিক অন্বেষণে শ্রম দান করা এটাও একটি বৃহৎ ইবাদত। কেননা বিশ্বস্ত ও সত্যবাদী ব্যবসায়ীগণ সিদ্দীক ও শহীদগণের সঙ্গে থাকবে। ব্যবসা ইবাদত, ব্যবসায় শ্রম দেয়া সুন্নতে নববী। অতএব ব্যবসা কিংবা অন্য ক্ষেত্রে হালাল উপার্জন করার জন্য শ্রম দান করা ইবাদত হওয়ার ক্ষেত্রে কোন সন্দেহের অবকাশ নাই।

বিদেশে শ্রম দানে ইসলামের উৎসাহ

অনেকে নিজের দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায় বেকারত্ব গ্রহণ করেন। রোজগারের জন্য তারা স্বজন ত্যাগ করতেও আগ্রহী নয়। বিদেশে কাজের সুযোগ পেয়েও তারা দেশে দারিদ্রতা ও বেকারত্ব নিয়ে বাস করেন। ইসলাম এ শ্রেণীর মানুষকে দেশ ত্যাগের জন্য উৎসাহিত ও প্রবাসী জীবন গ্রহণ করতে উদ্ভুদ্ধ করেন। রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন- “প্রবাসে যাও ধনী হতে পারবে।” [তাবরাণী আওসাত : ৫/৩২৪ হাঃ ৯৬৫৭]
আল্লাহ তাআলা বলেছেন, যে আল্লাহর পথে দেশত্যাগ করবে, সে পৃথিবীতে অনেক স্থান ও স্বচ্ছলতা পাবে। [সূরা নিসা : ১০০]
অতএব কর্ম সংস্থানের জন্য  দেশ ত্যাগ করা ইসলামের  পরিপন্থী নয়। ইসলাম  তাকে পরিপূর্ণ (ঝঁঢ়ঢ়ড়ৎঃ)  সমর্থন করে। এজন্য  আমাদের উচিত হবে,  আল্লাহ প্রদত্ব শ্রম দিয়ে   নিজের আর্থিক উপার্জনের ব্যবস্থা করি, সুন্দর পরিবার  গঠন করি, শ্রমদানে মানুষকে উৎসাহিত করি, বেকারত্ব রোধ করি, ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধের চেষ্টা করি। নিজেরে শ্রমের মাধ্যমে নিজের সুন্দর জীবন গঠন করা হয়। আর বিক্ষাবৃত্তি হল সর্ব ধর্মে স্বীকৃত ঘৃণিত কাজ। তাই আসুন মানবজাতিকে ঘৃণিত কাজ থেকে বাঁচাই। আর নিজের শ্রমের মাধ্যমে নিজে প্রতিষ্ঠিত হই। অপরকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য চেষ্টা করি। আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন আমাদেরকে তাওফিক দান করুন। আমীন।
লেখক : প্রাবন্ধিক, তরুণ ইসলামি গবেষক।

আল জান্নাতের অন্নান্য পাতা

নির্বাচিত

ইসলামের প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় নারীর অবদান : ড. মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী

নারী ও পুরুষের সমন্বিত প্রয়াস ও অংশীদারিত্বে মানব জাতির বিকাশ হয়েছে। সমাজ ও সভ্যতা নির্মাণে নারী বা পুরুষ কারো ভূমিকা কোন অংশে কম নয়। কিন্তু ইতিহাসের বাস্তবতা হচ্ছে, মানব জাতি যখন যেখানে আসমানী শিক্ষা হতে দূরে সরে গেছে, সেখানে সমাজের

মানবজীবনে মহানবী সা. এর সীরাতের গুরুত: ড. মোহাম্মদ আরিফুর রহমান

মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. হচ্ছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল। আল্লাহ তায়ালা তাঁকে সর্বশেষ নবী হিসেবে মনোনীত করেছেন। তাঁর মহান আদর্শ ও পূতপবিত্র চরিত্রের জন্য তিনি মানবজাতির ইতিহাসে সর্বোত্তম ব্যক্তিত্ব। মানবজীবনে তাঁর সীরাতের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। আইয়্যামে জাহিলিয়াতের ঘোর

খ্রিস্টান ধর্মযাজকদের দৃষ্টিতে নবীজির সত্যতা: শামসুদ্দীন সাদী

পৃথিবীতে আগমনের পূর্বেই বিভিন্ন আসমানি কিতাবে নবীজির আগমনের সুসংবাদ ও আলামত লিপিবদ্ধ ছিল। সর্বপ্রথম যেই রমজানে নবীজির ওপর ওহি অবতীর্ণ হয়, জিবরাইলের প্রচ- চাপায় নবীজি জ্বরে আক্রান্ত হন। শরীরে কম্পন আরম্ভ হয়। কোনো মতে বাড়িতে এসে হযরত খাদিজাকে বললেন, আমাকে

ঈদুল ফিতর উদযাপন : তাৎপর্য ও শিক্ষা / মাওলানা আহমদ মায়মূন

দুনিয়ার সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাচীনকাল থেকে উৎসব দিবস পালনের রেওয়াজ চলে আসছে। লোকেরা উৎসবের দিন সাজগোজ করে বের হয় এবং আনন্দ-ফুর্তি করে। জীবনের কান্তি-অবসাদ দূর করে মন-মেজাজকে প্রফুল্ল করে তোলার জন্য আনন্দ উৎসবের আয়োজন করা মানুষের জীবনের অপরিহার্য অনুষঙ্গ। ইরানের

সুখি দাম্পত্য জীবন গড়তে রাসূল সা. এর আদর্শ / ড. মুফতী আবদুল মুকীত আযহারী

বিবাহে সচ্ছলতা বিবাহ করা ও করানো মুসলমানের জন্য একটি কর্তব্য। আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমাদের মধ্যে যারা অবিবাহিত (পুরুষ হোক বা নারী) তাদেরকে বিবাহ করিয়ে দাও এবং তোমাদের মধ্যে দাসদাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ণ, তাদেরও (বিবাহ করিয়ে দাও)। যদি তারা অভাবী হয়

আল-কুরআনে সাহাবীদের যত জিজ্ঞাসা : হালাল বস্তুনিচয়-সংক্রান্ত জিজ্ঞাসা / মাওলানা মুজিবুর রহমান

[জুন সংখ্যার পর] পালক পুত্র বধু নিজ পুত্রবধূ হারাম। এ ব্যাপারে কারো কোন দ্বিমত নাই। তদ্রƒপ পালকপুত্রবধূ হালাল এ ব্যাপারে কোন দ্বিমত নাই। কারণ, আল্লাহ তাআলা পালকপুত্রকে নিজ পুত্রের মতো মর্যাদা প্রদান করেননি। এরশাদ হচ্ছে, আল্লাহ তোমাদের মুখে-ডাকা পুত্রকে ঔরসজাত

বিয়েতে অবহেলিত কিছু আমল / মুফতী পিয়ার মাহমুদ

বিয়ের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান ও চিকিৎসা যেভাবে মানব জীবনের অপরিহার্য প্রয়োজন, শিা-দীার প্রয়োজনীয়তা যেভাবে যুক্তিতর্কের ঊর্ধ্বে, একজন যৌবনদীপ্ত মানুষের সুস্থ জীবন যাপনের জন্য বিয়ের অপরিহার্যতা তেমনই। তাই ইসলামে এর গুরুত্ব অপরিসীম। ফযীলত ও মর্যাদা তুলনাহীন। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে,

সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাব কুরআন মাজীদ / এইচ. এম. মুশফিকুর রহমান

যাবতীয় কল্যাণ, সর্বপ্রকার জ্ঞান-গরিমা, প্রজ্ঞা ও রহস্যের আধার হল আলকুরআন। একে অনুসরণ করেই দুনিয়া ও আখিরাতে পাওয়া যায় সুখের সন্ধান, মেলে সঠিক পথের দিশা। আলকুরআন মহান আল্লাহর বাণীর অপূর্ব সমাহার বিস্ময়কর এক গ্রন্থের নাম। আলকুরআন আল্লাহর প থেকে অবতীর্ণ সংরতি

ঈদের আনন্দ নিভে গেল আবদুল মালেক মুজাহিদ

কতিপয় লোক বড়ই দুর্ভাগা হয়ে থাকে। তারা পিতামাতার অধিকার সমূহের প্রতি আদৌ পরোয়া করে না। স্ত্রী প্রেমে তারা এতই উন্মত্ত হয়ে পড়ে যে, মাতাপিতাকে সম্পূর্ণরূপে ভুলে বসে। মাতাপিতার আকাঙ্খার প্রতি মোটেই সম্মান প্রদর্শন করে না। এটা এরূপই এক হতভাগ্য ব্যক্তির

সম্পাদকীয় : স্বাগতম জান্নাতের প্রস্তুতি মাস রমযান

পবিত্র মাহে রমযান উপলক্ষে মাসিক আল-জান্নাতের অগণিত পাঠক-পাঠিকা, মু‘মিন মুসলমান ভাইবোনদের প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানাচ্ছি। মাহে রমজানের সাথে আল- জান্নাতের একটি সম্বন্ধ আছে। এই সম্বন্ধ তার নামের কারণে। হয়তবা প্রতিমাসে তাতে যে লেখাগুলো ছাপা হয়, তারও কারণে। কেননা,

পবিত্র রোযার বিধান : শিক্ষা ও উদ্দেশ্য / মাওলানা আহমদ মায়মূন

রমজানের রোযার বিধান দিতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেন, তোমাদের জন্য রোযা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছে তোমাদের পূর্ববর্তীদের জন্য; যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পার। [সূরা বাকারা: ১৮৩] রোযাকে আরবীতে সওম বলা হয়। ‘সওম’ মানে বিরত থাকা,

অফুরান রহমত ও বরকতের বেহেশতি সওগাত তারাবীহ্ নামায / ড. মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী

মাহে রমযানের একটি বিশেষ আকর্ষণ নামাযে তারাবীহ্। বলা যায়, এটি এ মাসের আধ্যাত্মিক অলংকার ও সৌন্দর্য। রমযানের চাঁদ দেখা যাওয়ার পরই শুরু হয় এ নামায। মুসল্লীদের ঢল নামে মসজিদে মসজিদে। যারা অবহেলায় এতদিন ঠিকমত নামায আদায় করেনি, তারাও সারীবদ্ধ হয়

মাসিক আল-জান্নাত

সোমবার, ৩০ জুলাই, ২০১৮

পুদিনা বা না- না পাতার অসম্ভব গুনাগুন

পুদিনা পাতার অবিশ্বাস্য ৪৩ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা
পুদিনা একটি সাধারণ আগাছা ধরনের গাছ। কাণ্ড ও পাতা বেশ নরম। কাণ্ডের রঙ বেগুনি, পাতার রঙ সবুজ। ছোট গুল্ম জাতীয় এই গাছের পাতা ডিম্বাকার, পাতার কিনারা খাঁজকাটা ও সুগন্ধীযুক্ত হয়। পাতা কিছুটা রোমশ ও মিন্টের তীব্র গন্ধযুক্ত । পুদিনা পাতার মূল, পাতা, কান্ড সহ সমগ্র গাছই ওষুধীগুনে পরিপূর্ণ। বিশ্বের অনেক দেশেই পুদিনার গাছ জন্মে। এর পাতা সুগন্ধি হিসাবে রান্নায় ব্যবহার করা হয়।

অন্যান্য স্থানীয় নামঃ Mint, nana।
বৈজ্ঞানিক নামঃ Mentha spicata ।
এটি Lamiaceae পরিবারের অন্তর্গত।

পুদিনা পাতার গুনাগুণঃ
১। গরমে ত্বকের জ্বালাপোড়া ও ফুসকুরি সমস্যায় কয়েকটি পুদিনার পাতা চটকে গোসলের পানিতে মিশিয়ে গোসল করলে ভালো কাজ হয়।

২। মুখের দুর্গন্ধ দুর করতে পুদিনা পাতা পানির সাথে মিশিয়ে কুলি করুন।উপকার পাবেন।

৩। পুদিনা পাতা হজম শক্তি বাড়ায়,মুখের অরুচি ও গ্যাসের সমস্যা দুর করে,কর্মক্ষমতা বৃদ্বি করে ও শরীর ঠান্ডা রাখে।

৪। পুদিনা ত্বকের যে কোনো সংক্রমণকে ঠেকাতে অ্যান্টিবায়োটিকের কাজ করে। শুকনো পুদিনা পাতা ফুটিয়ে পুদিনার পানি তৈরি করে ফ্রিজে রেখে দিন। এক বালতি পানিতে দশ থেকে পনেরো চামচ পুদিনার পানি মিশিয়ে গোসল করুন। এর ফলে গরমকালে শরীরে ব্যাকটেরিয়া জনিত বিশ্রী দুর্গন্ধের হাত থেকে রেহাই পাবেন, কেননা পুদিনার অ্যাস্ট্রিঞ্জেন্ট গুণ অতুলনীয়। ঘামাচি, অ্যালার্জিও হবে না।

৫। পুদিনা পাতার রস তাৎক্ষণিক ব্যথানাশক উপাদান হিসেবে কাজ করে। পুদিনা পাতার রস চামড়ার ভেতর দিয়ে নার্ভে পৌঁছে নার্ভ শান্ত করতে সহায়তা করে। তাই মাথা ব্যথা বা জয়েন্টে ব্যথা উপশমে পুদিনা পাতা ব্যবহার করা যায়। মাথা ব্যথা হলে পুদিনা পাতার চা পান করতে পারেন। অথবা তাজা কিছু পুদিনা পাতা চিবিয়ে খেতে পারেন। জয়েন্টে ব্যথায় পুদিনা পাতা বেটে প্রলেপ দিতে পারেন।

৬। পুদিনা পাতার চা শরীরের ব্যাথা দুর করতে খুবই উপকারি।

৭। মাইগ্রেনের ব্যাথা দুর করতে নাকের কাছে টাটকা পুদিনা পাতা ধরুন।এর গন্ধ মাথাব্যাথা সারাতে খুবই উপকারি।

৮। কোন ব্যাক্তি হঠাত করে অগ্গান হয়ে গেলে তার নাকের কাছে পুদিনা পাতা ধরুন।সেন্স ফিরে আসবে।

৯। অনবরত হেচকি উঠলে পুদিনা পাতার সাথে গোলমরিচ পিষে ছেকে নিয়ে রসটুকু পান করুন।কিছুক্ষনের মধ্যেই হেচকি বন্ধ হয়ে যাবে।

১০। গোলাপ, পুদিনা, আমলা, বাঁধাকপি ও শশার নির্যাস একসঙ্গে মিশিয়ে টোনার তৈরি করে মুখে লাগালে তা ত্বককে মসৃণ করে তোলে।

১১। পুদিনা পাতায় রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইটোনিউট্রিয়েন্টসের চমৎকারী গুনাগুণ যা পেটের যে কোনো সমস্যার সমাধান করতে পারে খুব দ্রুত। যারা হজমের সমস্যা এবং পেটের ব্যথা কিংবা পেটের অন্যান্য সমস্যায় ভুগে থাকেন তারা খাবার পর এককাপ পুদিনা পাতার চা খাওয়ার অভ্যাস করুন। ৬/৭টি তাজা পুদিনা পাতা গরম পানিতে ফুটিয়ে মধু মিশিয়ে খুব সহজে পুদিনা পাতার চা তৈরি করতে পারেন ঘরে।

১২। পুদিনাপাতা পুড়িয়ে ছাই দিয়ে মাজন বানিয়ে দাত মাজলে মাড়ি থাকবে সুস্থ,দাত হবে শক্ত ও মজবুত।

১৩। দীর্ঘদিন রোগে ভুগলে বা কোষ্ঠ্যকাঠিন্য থাকলে অনেক সময় অরুচি হয়।এক্ষেত্রে পুদিনা পাতার রস ২ চা চামচ,কাগজি লেবুর রস ৮-১০ ফোটা,লবণ হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে সকাল বিকাল ২ বেলা খান।এভাবে ৪-৫ দিন খেলে অরুচি দুর হয়ে যাবে।

১৪। তাত্ক্ষনিকভাবে ক্লান্তি দুর করতে পুদিনা পাতার রস ও লেবুর রস একসংে মিশিয়ে পান করুন।ক্লান্তি নিমিষেই দুর হয়ে যাবে।

১৫। কফ দুর করতে পুদিনা পাতার রস,তুলসী পাতার রস,আদার রস ও মধু একসাথে মিশিয়ে খান।পুরোনো কফ দুর করতেও এই মিস্রণ অতুলনীয়।

১৬। সুস্থ হার্টের জন্য পুদিনা পাতা অনেক উপকারী। এটি রক্তে কলেস্টরেল জমতে বাধা প্রদান করে। ফলে হার্ট থাকে সুস্থ।

১৭। যেকোনো কারনে পেটে গ্যাস জমে গেলে পুদিনা পাতা কার্যকরী ভুমিকা পালন করে। পুদিনার রস ২ চা চামচ, সামান্য লবন, কাগজী লেবুর রস ৮/১০ ফোঁটা, হালকা গরম পানির সাথে মিশিয়ে সারাদিন ২-৩ বার খেলে পেটে গ্যাস ভাব কমে আসে।

১৮। পিত্তে শ্লেষ্মার জ্বর, অম্লপিত্ত, আমাশা, অজীর্ণ, উদরশূল, প্রভৃতির কারনে অনেকসময় আমাদের বমি বমি ভাব আসে। এসময় পুদিনার শরবতের সাথে এক চা চামুচ তেঁতুল মাড় ও চিনি মিশিয়ে খেলে বমিভাদ দূর হয়ে যায়।

১৯। পুদিনা পাতার রস উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত পুদিনা পাতার রস খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে থাকে।

২০। পুদিনার শেকড়ের রস উকুননাশক হিসেবে খুবই কার্যকরী, এমনকি পাতাও। পুদিনার পাতা বা শেকড়ের রস চুলের গোড়ায় লাগান। এরপর একটি পাতলা কাপড় মাথায় পেঁচিয়ে রাখুন। এক ঘণ্টা পর চুল শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে অন্তত দু বার এটা করুন। এক মাসের মধ্য চুল হবে উকুনমুক্ত।

২১। মেয়েদের অনিয়মিত পিরিয়ডের যন্ত্রণা থেকে সেরে ওঠার জন্য পুদিনা পাতা বেশ উপকারী।

২২। পুদিনা ত্বককে শীতল করে। খাবারের সঙ্গে নিয়মিত খেলে শরীরের ত্বক সতেজ হয়, সজীব ভাব বজায় থাকে। মৃত কোষকে দূর করে মৃসণ করে তোলে ত্বক। সেজন্য, আধা কাপ পুদিনা পাতা বাটা ও পরিমিত বেসন দিয়ে পেস্ট করে মুখে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট পর মুখ ধুয়ে নিলে, উপকার পাওয়া যায়।

২৩। ব্রণ দূর করতে ও ত্বকের তৈলাক্তভাব কমাতে তাজা পুদিনাপাতা বেটে ত্বকে লাগান। দশ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। ব্রণের দাগ দূর করতে প্রতিদিন রাতে পুদিনা পাতার রস আক্রান্ত স্থানে লাগান। সম্ভব হলে সারারাত রাখুন। নতুন কমপক্ষে ২/৩ ঘণ্টা। তারপর ধুয়ে ফেলুন। মাস খানেকের মাঝেই দাগ দূর হবে।

২৪। পুদিনা পাতার রস শ্বাস-প্রশ্বাসের নালী খুলে দেওয়ার কাজে সহায়তা করে। ফলে যারা অ্যাজমা এবং কাশির সমস্যায় পড়েন তাদের সমস্যা তাৎক্ষণিক উপশমে পুদিনা পাতা বেশ কার্যকরী। খুব বেশি নিঃশ্বাসের এবং কাশির সমস্যায় পড়লে পুদিনা পাতা গরম পানিতে ফুটিয়ে সেই পানির ভাপ নিন এবং তা দিয়ে গার্গল করার অভ্যাস তৈরি করুন।

২৫। পেটের পীড়ায়ঃ এটি ইরেটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম [ আইবিএস ] এবং দীর্ঘস্থায়ী বদহজমের বিরুদ্ধে খুবই কার্যকর। এছাড়াও পুদিনা কোলনের পেশী সংকোচন নিয়ন্ত্রন করে।

২৬। অ্যাজমাঃ পুদিনায় রোজমেরিক এসিড নামের এক ধরনের উপাদান থাকে। এটি প্রাকপ্রদাহী পদার্থ তৈরীতে বাধা দেয়। ফলে অ্যাজমা হয় না। এছাড়াও এ ঔষধি প্রোস্টসাইক্লিন তৈরীতে বাধা দেয়। তাতে শাসনালী পরিষ্কার থাকে।

২৭। রোদে পোড়া ত্বকের জ্বালাপোড়া কমাতে পুদিনা পাতার রস ও অ্যালোভেরার রস একসঙ্গে মিশিয়ে ত্বকে লাগান। পনেরো মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।

২৮। পুদিনা পাতা ক্যান্সার প্রতিরোধের ক্ষমতা রাখে। পুদিনা পাতার পেরিলেল অ্যালকোহল যা ফাইটোনিউরিয়েন্টসের একটি উপাদান দেহে ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধিতে বাঁধা প্রদান করে।

২৯। পুদিনার তাজা পাতা পিষে মুখে লাগিয়ে কিছুক্ষণ পর যদি তা ধুয়ে ফেলা যায়, তা হলে মুখের তৈলাক্ত ভাব দূর হয়ে যায়। ব্রণ ওঠাও বন্ধ হয়।

৩০। পুদিনার পাতা ভালো করে পিষে তার রস ভালো করে মাথায় ব্যবহার করেন। যাদের চুলে উকুন আছে, তারা খুব উপকার পাবেন।

৩১। অরুচিতেঃ রোগে ভোগার পর, পেটে বায়ু জমে ও কোষ্ঠ বদ্ধতায় অরুচি আসে। একই রকম খাদ্য দীর্ঘদিন খেলে অরুচি আসে। এ সব ক্ষেত্রে পুদিনার সরবত ( পুদিনার রস ২ চা চামচ, সামান্য লবন, কাগজী লেবুর রস্‌ ৮/১০ ফোঁটা, হাল্কা গরম পানি পোয়া খানিক একত্রে মিশয়ে ) সকাল বিকাল দিনে দুই বার ৫/৭ দিন খেলে অরুচি চলে যায়। পুদিনা পাতা বেটে পানিতে গুলে শরবত করা যায়। সে ক্ষেত্রে কাঁচা পাতা ৮/১০ গ্রাম নিতে হবে।

৩২। মুত্রাল্পতায়ঃ অনেক রোগে প্রস্রাব কম হয়। কিন্তু যে ক্ষেত্রে ঠান্ডা গরমের ফলে সাময়িক ভাবে অল্প অল্প প্রস্রাব হতে থাকে কোনো কোনো সময় দাহ হতে থাকে, সে ক্ষেত্রে পুদিনা পাতা ৮/১০ গ্রাম বেটে তাতে সামান্য লবন ও কাগজী লেবুর রস্‌ পোয়াখানিক ঠান্ডা পানি মিশিয়ে শরবত করে দিনে ২/৩ বার খেতে হবে। অন্য কোনো রোগে মূত্রাল্পতা হলে সেক্ষেত্রে এটা ব্যবহার করা যাবে কিনা সেটা নির্ভর করবে রোগের ধরনের ঊপর এবং চিকিৎসকের বিচার ধারার উপর।

৩৩। শিশুদের অতিসারেঃ পাতলা দাস্ত, সেই সাথে পেট মোচড় দিয়ে ব্যথা, কোন কোন ক্ষেত্রে অল্প আম –সংযুক্ত দাস্ত, সেই সাথে পেট ফাঁপা, হিক্কা বমি বমি ভাব, প্রস্রাবও সরলি হচ্ছেনা, শিশু কিছুই খেতে চাচ্ছেনা। এক্ষেত্রে পুদিনা পাতার রস্‌ ৮/১০ ফোঁটা আল্প একটু চিনি ও লবন সহযোগে এক ঘন্টা অন্তর কয়েকবার খাওয়াতে হবে। কখন কি ভাবে কতবার খাওয়াতে হবে সেটা নির্ভর করবে রোগীর সুস্থতার ক্রমের দিকে লক্ষ রেখে। বয়স আনুপাতে মাত্রাটা ঠিক করে নিতে হবে।

৩৪। পুদিনার চাঃ বেশী চা খেলে শরীর খারাপ হতে পারে। ঠিক চাএর মত করে চায়ের পাতার বদলে পুদিনা পাতা ও সেই সাথে দুধ চিনি গোল মরিচ ও মৌরি দিয়ে এই চা তৈরী করতে হবে। এই চা খেতে সুস্বাদু এবং খেলে তৃপ্তি হয়।

হাকিমি ও ইউনানি মতেঃ- পুদিনা পাতা খেলে শরীরে তাপ বাড়ে। শরীরের দূষিত পদার্থ মলের সাহায্যে বেরিয়ে যায়। পাকস্থলি ও বুকের ও কিডনির যাবতীয় গ্লানি ও ক্লেদ দূর হয়।

৩৫। যাদের হজমশক্তি কম তারা পুদিনার শরবত ও চাটনি খেলে উপকার পাবেন।

৩৬। পাতলা পায়খানা হলে পুদিনাপাতা বেশ উপকারী।

৩৭। হঠাৎ সানস্ট্রোক করলে পুদিনার শরবত খেলে উপকার পাবেন।

৩৮। পুদিনাপাতার সালাদ খেলে পেটে গ্যাস হয় না। হজম হয়।

৩৯। পুদিনা মেয়েদের রক্তশূন্যতা পূরণ করে।

৪০। মায়ের বুকে দুধ বাড়ে।

৪১। যারা প্রস্রাব সমস্যায় ভুগছেন তারা এক গ্লাস পানিতে কয়েক ফোঁটা পুদিনাপাতার রস, সামান্য লবণ ও অল্প চিনি দিয়ে শরবত খান প্রস্রাব পরিষ্কার হবে।

৪২। মাইগ্রেন বা আধকপালে মাথা ধরায় পুদিনাপাতা বেটে মাথায় লাগালে মাথাব্যথা ভালো হয়।

৪৩। যাদের বুক ধড়ফড় করে তারা পুদিনাপাতা খেলে উপকার হবে।