Translate

মঙ্গলবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

হরতালের ইতিহাস ও অর্থ এবং হরতালে মানুষ কেন, একটা পিপিলীকাকে ও আগুনে পুড়ে মারার অনুমতি ইসলামে নেই,

মানুষ মানুষকে পুড়িয়ে মারছে। পেট্রোল মেরে আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠা আগুনে দগ্ধ হচ্ছে নিরপরাধ মানুষ। সে জানতেও পারছে না কী তার অপরাধ। সংবাদপত্রের পাতা  আর টিলিভিশনে আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্চোযম ফেইজবুকে চোখ রাখা যায় না। এমন নির্মম, বীভৎসতা কিভাবে দেখি। কেঁদে ওঠে মন। সবাই ক্ষমতার জন্য কেউ ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায় আবার কেউ ক্ষমতায় যেতে চায় ,  হায়রে মানুষ, আর কত নিচে নামবে? আর কত মানুষ পুড়ে মরবে, কবে আসবে শান্তি? মানুষ হত্যা মহাপাপ। ইসলাম কোনো রকম হত্যাকাণ্ডকে সমর্থন করে না। অথচ উভয় দলের নেতাকর্মী সবাই প্রায়  মুসলমান। আবার অনেকে ইসলামের নামে রাজনিতীও করেন।


কেবল মানুষ হত্যা নয়, জমিনে ফ্যাসাদ ও অশান্তি সৃষ্টিও মহাপাপ। যারা এসব কাজ করছে, এসব কাজের সঙ্গে যারা জড়িত, যারা ইন্ধনদাতা, তাদের সবাইকেই আখেরাতে কঠিন আজাবের মুখোমুখি হতে হবে। ইসলাম শান্তির ধর্ম। সব মানুষের, সব সম্প্রদায়ের অধিকার ইসলামে রয়েছে।


সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ইসলাম  কখনো সমর্থিত নয়। অপরাধ ছাড়া মানুষ হত্যা যেন সব মানুষকেই হত্যা করা।
কোরআনে বলা হয়েছে, 'যে ব্যক্তি হত্যার বদলে হত্যা ও জমিনে ফ্যাসাদ সৃষ্টির অপরাধ ছাড়া কাউকে হত্যা করল, সে যেন সব মানুষকেই হত্যা করল'- (সুরা মায়েদা : ৩২)।

'আল্লাহ যার হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করো না' (সুরা বনি ইসরাইল : ৩৩)। 'যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মুমিনকে হত্যা করবে, তার পরিণতি হলো স্থায়ীভাবে জাহান্নাম।
আল্লাহ তায়ালা তার প্রতি ক্রোধান্বিত থাকবেন, তার প্রতি অভিসম্পাত করবেন এবং তার জন্য প্রস্তুত রাখবেন ভয়ানক শাস্তি'- (সুরা নিসা : ৯৩)। '


তোমরা পৃথিবীতে গোলযোগ সৃষ্টি করবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ ফাসাদ সৃষ্টিকারীকে পছন্দ করেন না'- (সুরা কাসাস : ৭৭)। '


'গোলযোগ সৃষ্টি করা তো হত্যার চেয়েও বড় কঠিন অপরাধ'- (সুরা বাকারা : ২১)।

মানুষ কেন  বিনা প্রয়োজনে একটা পিপীলিকা ও আগুনে পুডে মারার বিধান ইসলামে নেই । আগুনে পুড়ে শাস্তি দেয়া একমাত্র স্রষ্টার জন্যই মানায় অন্য কারো জন্য নয় ।
আর সেখানে আশরাফুল মাখলুকাত  মানুষকে পুড়িয়ে মারা কত বড়  জগন্য অপরাধ। এমনকি যুদ্ধ ক্ষেত্রে এমন জালাও পোড়াও সমর্থন করেনা ইসলাম ।


আমি ব্যক্তিগত ভাবে এক গীফট্ সপে কাজ করি , কিন্তু মাঝে মধ্যে গরম গ্লুগ্যান দিয়ে   কাজ করার  সময় আঙ্গুলে চেকা লাগলে  মনে হয় ে  যেন প্রান বাহির হওয়ার আবস্হা  অনুভব করি । আর সেখানে একটা মানুষকে  সারা গায়ে আস্হা আগুন লাগিয়ে এমন নিসংস্ব  ভাবে হত্যা , কি যন্ত্রনাদায়ক ভূক্তভূগি ছাড়া কেউ তা অনূধাবন করা সম্ভবনা

তাছাড়া মানুষের  মত প্রকাশের স্বাধীনতা  ও ধর্মীয় স্বাধীনতা  ও ধর্মের জ্ঞান না  থাকার কারনেই আজকে আমাদের দেশে এমন জগন্য কর্মকান্ড সংঘঠিত হচ্ছে । যদিও এর দায় কেউ স্বীকার করছেনা।



হরতালের ইতিহাস
==============

হরতাল করা আমাদের দেশের গণতান্ত্রিক অধিকার হলেও তাতে মানুষ হত্যা, সম্পদ ধ্বংস,অগ্নিসংযোগ অরাজকতা সৃষ্টি করে মানুষের ভোগান্তি সৃষ্টির অধিকার নেই। 

পৃথিবীতে হরতাল অবরোধের ইতিহাস তালাশ করলে আমরা দেখতে পাই যে,

১৭৮৬ সালে আমেরিকার ছাপাখানার শ্রমিকরা, ১৯২০ সালে জার্মানে রাজনৈতিক কারণে, ১৯২৬ সালে ব্রিটেনে কয়লা শ্রমিকরা দাবি আদায়ের জন্য স্ট্রাইকের কৌশল ব্যবহার করেন, সেই থেকেই হরতাল । ভারতে রাজীব গান্ধী র হাত ধরে উপমহাদেশেও তার প্রচলন ঘটে।

‘হর’ অর্থ প্রত্যেক, ‘তাল’ অর্থ তালা। অর্থাৎ প্রতি দরজায় তালা।

প্রাথমিক যুগে প্রতিবাদকারীরা স্বেচ্ছায় দোকান-পাট, কর্মক্ষেত্র ইত্যাদি বন্ধ রাখত। কোনো ন্যায্য বিষয়ে জনগণ স্বেচ্ছায়, স্বতঃস্ফূর্তভাবে সব কিছু বন্ধ রেখে প্রতিবাদ জানালে ইসলাম তার বিরোধিতা করে না।

তবে কালক্রমে হরতালের পরিবর্তিত কালচার-সংস্কৃতি, রূপ ও চিত্রের আলোকে প্রচলিত হরতাল ইসলাম কোনোভাবেই সমর্থন করে না। ‘নিজে জ্বলো এবং অন্যকে জ্বালাও’ ইসলাম যেহেতু এর কোনো নীতিকে কোনো অবস্থায়ই সমর্থন করে না, তাই ইসলাম হিংসা-বিদ্বেষকেও হারাম করেছে। আবার বারুদের সৃষ্ট আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ানো নীতিকেও কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। আর এটাকে মানবতাবিরোধী গর্হিত অপরাধ হিসেবে গণ্য করেছে। 

’ ফতোয়ায়ে হাক্কানিয়াতে বলা হয়েছে, বর্তমানে হরতাল-অবরোধ বিভিন্ন পদ্ধতিতে পালন করা হয়। কোনো কোনো হরতালে এমন হয়, তার মধ্যে হত্যা, লুটতরাজ, পাথর নিক্ষেপ, ভাঙচুর, চলন্ত গাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করা হয়ে থাকে। ইসলাম এ ধরনের কর্মসূচিকে সমর্থন করে না (ফতোয়ায়ে হাক্কানিয়া, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৫৬)।

ইসলামে কোনো মানুষকে অন্যায়ভাবে হত্যার ব্যাপারে যতো কঠিন সতর্কবাণী এসেছে, অন্য কোনো গোনাহের ব্যাপারে তা আসেনি।

মানুষ কেন বিনা প্রয়োজনে একটা পিপীলিকা ও আগুনে পুডে মারার বিধান ইসলামে নেই । 

আর সেখানে আশরাফুল মাখলুকাত মানুষকে পুড়িয়ে মারা কত বড় জগন্য অপরাধ। এমনকি যুদ্ধ ক্ষেত্রে এমন জালাও পোড়াও সমর্থন করেনা ইসলাম । 

আগুনে পুড়ে শাস্তি দেয়া একমাত্র স্রষ্টার জন্যই মানায় অন্য কারো জন্য নয় ।যা পরকালে আল্লাহর নাফরমানদের জন্যই নির্ধারীত ।

আমি ব্যক্তিগত ভাবে এক গীফট্ সপে কাজ করি , কিন্তু মাঝে মধ্যে গরম গ্লুগ্যান দিয়ে কাজ করার সময় আঙ্গুলে চেকা লাগলে মনে হয় যেন প্রান বাহির হওয়ার আবস্হা । আর সেখানে একটা মানুষকে সারা গায়ে আস্হা আগুন লাগিয়ে এমন নিশংস্ব ভাবে হত্যা , কি যন্ত্রনাদায়ক !

ভূক্তভূগি ছাড়া কেউ তা অনূধাবন করা সম্ভবনা ,

তাছাড়া মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা না থাকার কারনেই আজকে আমাদের দেশে এমন জগন্য কর্মকান্ড সংঘঠিত হচ্ছে । যদিও এর দায় কেউ স্বীকার করছেনা। মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত বলেই এমন পথ বেচে নিচ্ছে বলে মনে হয়





হরতালের অর্থ ও ইতিহাস কোন ধরনের হরতাল বৈধ-অবৈধ

হরতাল করা আমাদের দেশের গণতান্ত্রিক অধিকার হলেও তাতে মানুষ হত্যা, সম্পদ ধ্বংস,অগ্নিসংযোগ অরাজকতা সৃষ্টি করে মানুষের ভোগান্তি সৃষ্টির অধিকার নেই। 

পৃথিবীতে হরতাল অবরোধের ইতিহাস তালাশ করলে আমরা দেখতে পাই যে,

১৭৮৬ সালে আমেরিকার ছাপাখানার শ্রমিকরা, ১৯২০ সালে জার্মানে রাজনৈতিক কারণে, ১৯২৬ সালে ব্রিটেনে কয়লা শ্রমিকরা দাবি আদায়ের জন্য স্ট্রাইকের কৌশল ব্যবহার করেন, সেই থেকেই হরতাল । ভারতে রাজীব গান্ধী র হাত ধরে উপমহাদেশেও তার প্রচলন ঘটে।

‘হর’ অর্থ প্রত্যেক, ‘তাল’ অর্থ তালা। অর্থাৎ প্রতি দরজায় তালা।

প্রাথমিক যুগে প্রতিবাদকারীরা স্বেচ্ছায় দোকান-পাট, কর্মক্ষেত্র ইত্যাদি বন্ধ রাখত। কোনো ন্যায্য বিষয়ে জনগণ স্বেচ্ছায়, স্বতঃস্ফূর্তভাবে সব কিছু বন্ধ রেখে প্রতিবাদ জানালে ইসলাম তার বিরোধিতা করে না।

তবে কালক্রমে হরতালের পরিবর্তিত কালচার-সংস্কৃতি, রূপ ও চিত্রের আলোকে প্রচলিত হরতাল ইসলাম কোনোভাবেই সমর্থন করে না। ‘নিজে জ্বলো এবং অন্যকে জ্বালাও’ ইসলাম যেহেতু এর কোনো নীতিকে কোনো অবস্থায়ই সমর্থন করে না, তাই ইসলাম হিংসা-বিদ্বেষকেও হারাম করেছে। আবার বারুদের সৃষ্ট আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ানো নীতিকেও কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। আর এটাকে মানবতাবিরোধী গর্হিত অপরাধ হিসেবে গণ্য করেছে। 

’ ফতোয়ায়ে হাক্কানিয়াতে বলা হয়েছে, বর্তমানে হরতাল-অবরোধ বিভিন্ন পদ্ধতিতে পালন করা হয়। কোনো কোনো হরতালে এমন হয়, তার মধ্যে হত্যা, লুটতরাজ, পাথর নিক্ষেপ, ভাঙচুর, চলন্ত গাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করা হয়ে থাকে। ইসলাম এ ধরনের কর্মসূচিকে সমর্থন করে না (ফতোয়ায়ে হাক্কানিয়া, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৫৬)।

ইসলামে কোনো মানুষকে অন্যায়ভাবে হত্যার ব্যাপারে যতো কঠিন সতর্কবাণী এসেছে, অন্য কোনো গোনাহের ব্যাপারে তা আসেনি।

মানুষ কেন বিনা প্রয়োজনে একটা পিপীলিকা ও আগুনে পুডে মারার বিধান ইসলামে নেই । 

আর সেখানে আশরাফুল মাখলুকাত মানুষকে পুড়িয়ে মারা কত বড় জগন্য অপরাধ। এমনকি যুদ্ধ ক্ষেত্রে এমন জালাও পোড়াও সমর্থন করেনা ইসলাম । 

আগুনে পুড়ে শাস্তি দেয়া একমাত্র স্রষ্টার জন্যই মানায় অন্য কারো জন্য নয় ।যা পরকালে আল্লাহর নাফরমানদের জন্যই নির্ধারীত ।

আমি ব্যক্তিগত ভাবে এক গীফট্ সপে কাজ করি , কিন্তু মাঝে মধ্যে গরম গ্লুগ্যান দিয়ে কাজ করার সময় আঙ্গুলে চেকা লাগলে মনে হয় যেন প্রান বাহির হওয়ার আবস্হা । আর সেখানে একটা মানুষকে সারা গায়ে আস্হা আগুন লাগিয়ে এমন নিশংস্ব ভাবে হত্যা , কি যন্ত্রনাদায়ক !

ভূক্তভূগি ছাড়া কেউ তা অনূধাবন করা সম্ভবনা ,

তাছাড়া মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা না থাকার কারনেই আজকে আমাদের দেশে এমন জগন্য কর্মকান্ড সংঘঠিত হচ্ছে । যদিও এর দায় কেউ স্বীকার করছেনা। মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত বলেই এমন পথ বেচে নিচ্ছে বলে মনে হয়।

মঙ্গলবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

মাইকে জোরে জিকির কতটুকু যুক্তিযুক্ত ও আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা

আললাহর জিকির করা অত্যন্ত ভাল কাজ, সকলেই আল্লাহর জিকির করতে হবে ,তবে তাহল শরিয়তের গন্ডিতে থেকেই
জোরে বা আস্তে জিকির উভয়টা জায়েয এতে কোন সন্দেহ নেই ।
কিন্তু জোরে জিকির করতে গিয়ে অপরের ক্ষতি হয় এমন জিকির কাম্য নয় ।যেমন আমাদের দেশে অনেক  মসজিদে ফজরের পর মাইকে জিকির করা হয় ,এমন বিকট আওয়াজে জিকির করা হয় তাতে করে অনেকেই কমপ্লেইন করে থাকেন , যেমন আমি ব্যক্তিগত ভাবেও দেখেছি যে সমস্যা গুলো সামনে এসেছে ,
যেমন
1 অনেকে ঐ সময় ( মহিলা পুরুষ) নিজ ঘরে  ফজরের নামাজ আদায় করে থাকেন কিন্তু  বিকট আওয়াজের কারনে সূরা কেরাত ও ঠিক ভাবে  পড়তে পারেনা ,
2 অনেক  তাহাজ্জত গুজার ফজরের নামাজের পর একটু ঘুমান কিন্তু এতে করে তাঁর ঘুমের ক্ষতি হয় ।
3 অনেক রূগি থাকেন শব্দ দূষনের কারণে তার ক্ষতি হয়।
4 অনেক শিশু সন্তানের ঘুমের ক্ষতি হয়।
5 অনেকে বাডিতে বসে  ঐ সময় কোরআন তেলাওয়াত করেন বা অধ্যয়ন করেন, কিন্তু আওয়াজের কারনে তা ঠিক ভাবে মন লাগিয়ে তেলাওয়াত ও অধ্যয়ন করতে  পারেনা ।
6 হয়তো কোন ছাত্র ফজরর পর অধ্যয়ন করতে চাইলে ঠিক ভাবে তা হয়না ।
7 শবে বরাতের রাত্রে আমি দেখেছি নিজ বাড়িতে একাগ্রচিত্তে কিছু এবাদত বন্দেগী বা দোয়া দরুদ ইত্যাদি পডবে, কিন্তু  এশার পর থেকে মাইকে বিকট আওয়াজে জিকির বা থেমে আলোচনা করার  কারনে  এবাদতে  মনোনিেশ করতে পারেনা  ।
    ইত্যাদি সমস্যা গুলো আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে অনেকেই শেকায়েত করেছেন 
  এবং আমি নিজেও ভূক্তভূগী তাই মাইকে জিকির করা কত টুকু উচিত কি উচিত না  মাইকে জিকির কতটুকু যুক্তিযুক্ত  ঐ কথা টুকু নীচের আলোচনা থেকেই বুঝতে পারবেন 

  এম এম আবদুল্লাহ ভূঁইয়া 

জোরে ও আস্তে যিকিরের সীমা

(৮) ماذهب إليه الفقيه أبوجعفرالهندواني (توفي ৩৬২) والإمام أبوبكر محمد بن الفضل من أنه لابد في الجهر من اسماع غيره فأدني الجهر عنده إسماع غيره ولوكان واحدا وأدني السر إسماع نفسه لامجرد تصحيح الحروف وهو الصحيح كمافي الوقاية والنقاية وملتقي الأبحر وهو مختار شيخ الاسلام وقاضي خان وصاحب المحيط والحلواني كمافي معراج الدراية واختاره شراح الوقاية والنقاية وملتقي الأبحر وشراح الهداية وعامة اصحاب الفتوي وفي المضمرات هو المختار (سباحة الفكر في الجهر بالذكر ص ১৮)

{৮} অর্থ : হযরত ফকীহ আবু জাফর হিন্দাওয়ানী (রহ.) [মৃত্যু ৩৬২ হিজরী] এবং হযরত ইমাম আবুবকর মুহাম্মদ ইবনে ফজল (রহ.) বলেন, জোরে যিকির হওয়ার জন্য আবশ্যক হল এতটুকু আওয়াজ হতে হবে যা অন্যরা শুনতে পায়। আর জোর যিকিরের নিম্ন স্তর হল কমপক্ষে একজন শুনতে পায়। আর আস্তে যিকিরের নিম্ন স্তর হল, এতটুকু আওয়াজে হতে হবে যাতে নিজে শোনা যায় শুধু শব্দ উচ্চারণ করলেই হবে না, এটাই বিশুদ্ধ মত। এমনই উল্লেখ আছে, 'বিকায়া', 'নিকায়া', 'মুলতাকল আবহুর' নামক কিতাবসমূহে। আর শায়খুল ইসলাম, কাজী খান এবং মুহীত কিতাবের লেখক হালওয়ানী (রহ.) এমনই বলেছেন। যা উল্লেখ আছে 'মিরাজুল দিরায়া' নামক কিতাবে। এ মতটি গ্রহণযোগ্য হিসাবে সীকৃতি দিয়েছেন, 'বিকায়া' 'নিকায়া' 'মুলতাকুল-আবহুর' 'হেদায়া ইত্যাদি কিতাবের ব্যাখ্যাকারীগণ এবং গ্রহণযোগ্য সমস্ত মুফতী সাহেবগণ। 'মুজমারাত' নামক কিতাবে উল্লেখ আছে, এ মতটিই বেশী গ্রহণযোগ্য। (সিবাহাতুল ফিকির ফিজ জিহরী বিয যিকির ১৮ পৃ.)

 وفي الدر المختار ؛ أدني المخافتة إسماع نفسه ومن بقربه فلو سمع رجل أو رجلان فليس بجهر انتهي ؛ قال ابن عابدين في رد المحتار ... أدني المخافتة إسماع نفسه أومن بقربه من رجل أورجلين ؛ مثلا وأدني الجهر إسماع غيره ممن ليس بقربه كأهل الصف الأول ؛ وأعلاه لاحد له انتهي كلامه ؛ (سباحة الفكر في الجهر بالذكر ص ১৯)

{৯} অর্থ : দুররুল মুখতার নামক কিতাবে আছে, আস্তে আওয়াজের সর্বনিম্ন সীমা হল নিজে শুনতে পারা এবং নিকটবর্তী কেউ শুনতে পারা। যদি একজন বা দুইজন শুনতে পায় তাহলে সেটাও জোরে হিসাবে ধরা হবে না। বরং তা আস্তে আওয়াজের মধ্যেই থাকবে। এর ব্যাখ্যায় হযরত আল্লামা শামী (রহ.) ফতোয়া শামীতে বলেন, আস্তের সর্বনিম্ন সীমা হল নিজে শুনতে পারা এবং নিকটবর্তী কেউ শুনতে পারা। যেমন পাশের একজন বা দুইজন শুনতে পেল। আর জোরে যিকিরের সর্বনিম্ন স্তর হল এতটুকু আওয়াজে বলা যা নিকটে নয় এমন কেউ শুনতে পান। যেমন নামাজের প্রথম কাতারের মুসল্লিগণ। তবে জোরের সর্বোচ্চ আওয়াজের কোন সীমা নেই। (সিবাহাতুল ফিকরী ফিজ জিহরী বিয-যিকরি, ১৯ পৃ.)

সূরা আরাফের ২০৫ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় জালালাইন শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ "জুমাল" ও "ছাবী" গ্রন্থে উল্লেখ আছে,

السر هوان مخفى الصوت بحيث يسمعه المتكلم دون غيره وماعداه الجهرُ

অর্থ : আস্তে ঐ আওয়াজকে বলা হয়, যা বক্তা নিজে ব্যতীত অন্য কেউ শুনতে পায় না। এ ছাড়া সকল আওয়াজকেই জেহের বা জোরে বলা হয়। এ ব্যাখ্যায় সর্বনিম্ন আওয়াজ ঐ আওয়াজকে বলা হল, যা শুধু নিজে শুনা যায়। এ ছাড়া সকল উচ্চ আওয়াজকেই জেহের বা জোরে বলা হল। সুতরাং এখন স্পষ্ট যে আয়াতে মধ্যম আওয়াজ বলতে কোন আওয়াজকে বলা হচ্ছে অর্থাৎ চিৎকারের চাইতে কম এবং নিজে শুনা যায় তার চেয়ে বেশী আওয়াজে যিকির করার কথা বলা হচেছ। এ কিতাবে এর পর আরো উল্লেখ আছে

الا أن تقول ذلك اصطلاح الفقهاء بل السركما قالوا الجهر ما يسمعه البعيد

অর্থ : উল্লেখিত ব্যাখ্যা দ্বারা যদি জোরে আওয়াজের সীমা বুঝতে কষ্ট হয় তাহলে ব্যাখ্যাকারী স্পষ্টভাবে বলেন, এসব হল ফকীহগণের পরিভাষা মাত্র। মূলতঃ জোরে আওয়াজ ঐ আওয়াজকে বলা হয় যা দূরের মানুষ শুনতে পায়। আর খফী বা আস্তে আওয়াজের সীমা হল যা শুধু নিজ কানে শুনা যায়। "শরহে বেকায়া" নামক কিতাবে উল্লেখ আছে যে,

ادنى الجهر اسماع غيره وأدنى المخافة اسماع نفسه وهو الصحيح

অর্থ : জোরে আওয়াজের সর্বনিম্ন সীমা হল, যা অন্যকে শুনানো যায়। আর আস্তে আওয়াজের সর্বনিম্ন সীমা হল, যা নিজ কানে শুনা যায়। এ ব্যাখ্যাই সঠিক। (শরহে জালালাইন জুমাল ও ছাবী)


বন্ধুরা এবার আপনারাই চিন্তা করুন মাইকে বড় করে জিকির করা যাবে কি যাবেনা আপনারাই সিদ্ধান্ত নিন । 

মৌলানা আবদুল্লাহ ভূঁইয়া 
কাটাছরা,মিরসরাই,
চট্টগ্রাম 

বুধবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

ভালোবাসা দিবস আমাদের সংস্কৃতি নয়,ভালোবাসা দিবস নামক সামাজিক এ ক্যান্সার থেকে আপনার সন্তানদের দূরে রাখুন।

ভালোবাসা দিবস আমাদের সংস্কৃতি নয়,ভালোবাসা দিবস নামক সামাজিক এ  ক্যান্সার থেকে আপনার সন্তানদের  দূরে রাখুন।
এম এম আবদুল্লাহ ভূঁইয়া ,

গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ বা ‘ভালোবাসা দিবস’ নামে নতুন একটি দিবস উদযাপন করা হচ্ছে। আগে শুধু এ দেশেই নয়, বেশির ভাগ মুসলিম দেশেই এটা পালিত হতো না। হোটেল মালিকসহ ব্যবসায়ীদের একটি অংশও ব্যবসায় মুনাফার স্বার্থে এটাকে উৎসাহ জোগাচ্ছেন। ‘ভালোবাসা দিবসে’র ইতিহাস ও ভিত্তি কী? ড. খালিদ বেগ এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করেছেন। সেখান থেকে কিছু কথা তুলে ধরা জরুরি।
বিজাতীয় সংস্কৃতি চর্চা করছে যেসব মুসলমান, তাদের বেশির ভাগই জানে না যে, আসলে তারা কী করছে। তারা অন্ধভাবে অনুকরণ করছে তাদের সাংস্কৃতিক নেতৃবর্গকে, যারা তাদের মতোই অন্ধ।



যাকে নির্দোষ আনন্দ মনে করা হচ্ছে, তার শেকড় যে পৌত্তলিকতায় প্রোথিত হতে পারে, এটা ওরা বোঝেই না। যে প্রতীকগুলো তারা আঁকড়ে ধরেছে, সেগুলো হয়তোবা (ধর্মীয়) অবিশ্বাসের প্রতীক। আর যে ধ্যানধারণা তারা ধার নিয়েছে, তা হতে পারে কুসংস্কার। এসব কিছু হয়তো ইসলামের শিক্ষার সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
‘ভালোবাসা দিবস’-এর প্রচলন ইউরোপের বেশির ভাগ দেশ থেকে স্বাভাবিকভাবেই উঠে গিয়েছিল। তবে ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রে এটা উদযাপিত হতো। দিবসটি হঠাৎ করে বহু মুসলিম দেশে গজিয়ে উঠেছে।


ভালোবাসা দিবসের উৎপত্তি নিয়ে কাহিনী-কিংবদন্তি প্রচুর। এটা স্পষ্ট, খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে রোমানরা এটা শুরু করেছিল পৌত্তলিক পার্বণ হিসেবে। 'উর্বরতা ও জনসমষ্টির দেবতা' লুপারকাসের সম্মানার্থেই এটা করা হতো। এর প্রধান আকর্ষণ ছিল লটারি। ‘বিনোদন ও আনন্দে’র জন্য যুবকদের মাঝে যুবতীদেরকে বণ্টন করে দেয়াই ছিল এই লটারির লক্ষ্য। পরবর্তী বছর আবার লটারি না হওয়া পর্যন্ত যুবকরা এই ‘সুযোগ’ পেত।
ভালোবাসা দিবসের নামে আরেকটি ঘৃণ্য প্রথা ছিল, যুবতীদের প্রহার করা। সামান্য ছাগলের চামড়া পরিহিত দুই যুবক একই চামড়ার তৈরি বেত দিয়ে এ নির্যাতন চালাত। উৎসর্গিত ছাগল ও কুকুরের রক্তে এই যুবকদের শরীর থাকত রঞ্জিত। এ ধরনের 'পবিত্র ব্যক্তি'দের 'পবিত্র' বেতের একটি আঘাত খেলে যুবতীরা আরো ভালোভাবে গর্ভধারণ করতে পারবে বলে বিশ্বাস করা হতো। খ্রিষ্টধর্ম এই কুপ্রথা বন্ধ করার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। এই প্রয়াসের অংশ হিসেবে প্রথমে মেয়েদের বদলে সন্ন্যাসীদের নামে লটারি চালু হলো। মনে করা হয়েছিল, এর ফলে যুবকরা তাদের জীবনকে অনুসরণ করবে। খ্রিষ্টধর্ম এ ক্ষেত্রে শুধু এটুকুই সফল হলো যে, ভালোবাসা দিবসের নাম ‘লুপারক্যালিয়া’ থেকে ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ হয়েছে। গেলাসিয়াস নামের পোপ ৪৯৬ খ্রিষ্টাব্দে এটা করেন সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন নামের সন্ন্যাসীর সম্মানার্থে। তবে ৫০ জন ভ্যালেন্টাইনের কথা শোনা যায়। তাদের মধ্যে মাত্র দুজন সমধিক পরিচিত। অবশ্য তাদের জীবন ও আচরণ রহস্যাবৃত। একটি মত অনুসারে, ভ্যালেন্টাইন ছিলেন ‘প্রেমিকের সন্ন্যাসী’। তিনি একবার কারাবন্দী হয়েছিলেন। কিন্তু পড়ে যান কারাগারের অধিকর্তার কন্যার প্রেমে।



লটারি নিয়ে মারাত্মক সঙ্কট দেখা দেয়ায় ফরাসি সরকার ১৭৭৬ খ্রিষ্টাব্দে ভ্যালেন্টাইন দিবস উদযাপন নিষিদ্ধ করে দেয়। এদিকে, সময়ের সাথে সাথে একপর্যায়ে ইতালি, অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি ও জার্মানি থেকে দিবসটি বিদায় নেয়। সপ্তদশ শতকে পিউরিটানরা যখন বেশ প্রভাবশালী ছিল, তখন ইংল্যান্ডেও ভালোবাসা দিবস নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে ১৬৬০ খ্রিষ্টাব্দে রাজা দ্বিতীয় চার্লস আবার এটি পালনের প্রথা চালু করেন।



ইংল্যান্ড থেকে ভ্যালেন্টাইন গেল ‘নতুন দুনিয়া’য়; অর্থাৎ আমেরিকায়। সেখানে উৎসাহী ইয়াঙ্কিরা পয়সা কামানোর বড় সুযোগ খুঁজে পেল এর মাঝে।
ইসথার এ হাওল্যান্ডের মতো কেউ কেউ সর্বপ্রথম ১৮৪০ সালে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ভ্যালেন্টাইন ডে কার্ড বের করেন। হাওল্যান্ড প্রথম বছরই পাঁচ হাজার ডলার দামের কার্ড বিক্রি করেছিলেন। তখন ‘পাঁচ হাজার ডলার’ মানে অনেক। এরপর থেকে ‘ভ্যালেন্টাইন শিল্প’ জমজমাট হয়ে ওঠে।


‘হ্যালোউইন’-এর ক্ষেত্রেও ভ্যালেন্টাইনের ঘটনা ঘটেছে। ওই উৎসবে ভূত-পেত্নীর মতো পোশাক পরে দৈত্যদানব পূজার প্রাচীন পৌত্তলিক প্রথার পুনরাবৃত্তি করা হয় মাত্র। খ্রিষ্ট্রধর্ম পুরনো নাম বদলিয়ে ‘হ্যালোউইন’ রাখলেও উৎসবটির ভিত্তি রয়ে গেছে পৌত্তলিকতাকেন্দ্রিক।

পৌত্তলিক জাতির মানুষরা ভূত-প্রেতকে খুব ভয় পেত। বিশেষ করে তাদের জন্মদিনে ভয়টা যেত বেড়ে। মানুষের দৈনন্দিন জীবনে পরিবর্তনের মুহুর্তে যেমন বয়সের বছরপূর্তি­ এসব অপশক্তি আরো বেশি বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ায় বলে বিশ্বাস করা হতো। তাই পরিবার-পরিজন হাসি-আনন্দে সে ব্যক্তিকে ঘিরে রাখা হতো, যার জন্মদিন পালন করা হতো। তাদের বিশ্বাস, এভাবে মন্দ থেকে তাকে রক্ষা করা যায়।


ইসলামবিরোধী ধ্যান-ধারণা ও বিশ্বাসে যেসব প্রথা ও উৎসবের মূল নিহিত, সেগুলোর ব্যাপারে ইসলাম উদাসীন থাকবে বলে কি মনে করা যায়?
অবিরাম মিডিয়ার প্রচারণাসহ নানাভাবে বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক প্রোপাগান্ডা চলছে। এটা একটা বিরাট ট্র্যাজেডি যে, এ অবস্থায় মুসলমানরাও ভ্যালেন্টাইন, হ্যালোউইন ভূত, এমনকি সান্তাক্লসকে আলিঙ্গন করছে।” ড. খালিদ বেগের এই গুরুত্বপূর্ণ অভিমতগুলো লন্ডনের ইমপ্যাক্ট ইন্টারন্যাশনাল সাময়িকীর মার্চ ২০০১ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল।
কথা হলো পৌত্তলিকতা ও কুসংস্কারের ওপর যার ভিত্তি, সেই ভ্যালেন্টাইন ডে বাংলাদেশের মতো কোনো দেশে­ যেখানে প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ মুসলিম, পালন করা উচিত নয়। ইসলাম আমাদেরকে শিখিয়েছে সবাইকে প্রকৃত অর্থেই ভালোবাসতে। এটা বিশেষ কোনো দিবস, এভাবে উদযাপনের ওপর নির্ভর করে না। আমাদের দেশে ‘ভালোবাসা দিবস’ কিছু তরুণ-তরুণীর অবাধ মেলামেশার উপায়ে পরিণত হয়েছে। এটা মুসলিম সংস্কৃতির অংশ নয়। অশ্লীলতা বাড়িয়ে দেয়­ পাশ্চাত্য সংস্কৃতির এমন কোনো কিছু আমাদের দেশে চলতে দেয়া অনুচিত। বাংলাদেশসহ মুসলিম দেশগুলোতে এসব বন্ধ করার ব্যাপারে পণ্ডিত ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিক, শিক্ষক, ইমাম, সমাজকর্মী প্রমুখের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
============


সত্যি আমরা দূর্ভাগা জাতি।

আমরা না জানি নিজেদের ধর্ম, না জানি নিজেদের কৃষ্টি ও সভ্যতা। এজন্য প্রথমেই এগিয়ে আসা উচিত্‌ রাষ্ট্রকে।

কিন্তু অতি পরিতাপের বিষয় আমাদের দেশের রাষ্ট্র প্রধান থেকে শুরু করে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী যখন "ভ্যালেন্টাইন্‌স ডে বা ভালোবাসা দিবসে" নিজেদেরকে ঐ দিবসে উপস্থিত থেকে জনসাধারণকে ভালোবাসা দিবসে সামিল হওয়ার জন্য আহ্বান জানায়। বক্তৃতা ও বিবৃতি দিয়ে বিদেশী অপসংস্কৃতিকে পালনের জন্য সহজ-সরল মানুষগুলোকে আহ্বান জানায়। বিশেষকরে উড়তি বয়সের তরুন-তরুনী, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে মেয়েরা বেশি আকৃষ্ট হয়।

এই সংস্কৃতি শুধু বেহায়াপনা তৈরী করে না সমাজে বিশৃংখলা সৃষ্টি করে। মুক্তমনা সংস্কৃতির নামে সমাজে আজ নারী প্রগতিবীদ ও কিছু সুশীল! সমাজপতিরা উদার মানসিকতার কথা বলে, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে, নারীদের বেপর্দা করে রাস্তায় নামিয়ে দিয়েছে। সন্তান-সন্ততিদের মায়ের স্নেহ ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করেছে। অথচ ইসলাম কখনো নারীকে অন্তপুরে বন্দি রাখতে বলেনি।

পর্দা করে সকল কাজে অংশীদার হতে বলেছে।
 অনেকের পিতা মাতা আছেন যাঁরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন তবে তাদের ছেলে-মেয়েরা এই সমস্ত অপসংস্কৃতিতে অংশগ্রহণ করছে। তাই আমি মনে করি সর্বপ্রথমে পরিবারের পিতা-মাতাকে সন্তানের মঙ্গলের জন্য এগিয়ে আসা উচিত্‌। আজ শহর থেকে গ্রামেও এই ভালোবাসা দিবস ছড়িয়ে গেছে। গ্রামের ছাত্র-ছাত্রীরা তাঁদের সহজ-সরল বাবা মাকে ভুল বুঝিয়ে অর্থ নিয়ে এই অপসংস্কৃতিকে পালন করছে। আজ ইউরোপ আমেরিকায় ভালোবাসার নামে দিনে দুপুরে সবারই সামনে যেভাবে ভালোবাসার প্রমাণ দেয় তা পশু প্রবৃত্তিকেও ছাড়িয়ে গেছে।
অনেক অমুসলিম দেশে হোটেল রেস্তোরা গুলো অগ্রীম বুকিং দিয়ে রাখতে হয় ,ঐ দিনটি প্রেমিক প্রেমিকাদের ভালবাসার প্রমান স্বরূপ , কথিত আছে যে সারা বছর টানকী মারার পর ঐ দিন নাকী চুডান্ত ফলাফল পাওয়ার দিন হিসাবে তাদের কাছে গন্য করা হয় । ছি, ছি , ছি, এই নগ্নতাকে ধিক্কার জানাই এই বেহায়া পনাকে , ধিক্কার জানাই এই স্বঘোষিত  বেইশ্যা  দিবস কে ।

ভালবাসা দিবস কি ? ও সমাজে এর ক্ষতিকর প্রভাব, a ক্যান্সার থেকে আপনার সন্তানদের দূরে রাখুন।

ভালবাসা দিবস কি ও সমাজে এর ক্ষতিকর প্রভাব

বিশ্ব ভালবাসা দিবস কি : 
এক নোংরা ও জঘন্য ইতিহাসের স্মৃতিচারণের নাম বিশ্ব ভালবাসা দিবস। এ ইতিহাসটির বয়স সতের শত সাঁইত্রিশ বছর হলেও ‘বিশ্ব ভালবাসা দিবস’ নামে এর চর্চা শুরু হয় সাম্প্রতিক কালেই। দুই শত সত্তর সালের চৌদ্দই ফেব্রুয়ারির কথা। তখন রোমের সম্রাট ছিলেন ক্লডিয়াস। সে সময় ভ্যালেন্টাইন নামে একজন সাধু, তরুণ প্রেমিকদেরকে গোপন পরিণয়-মন্ত্রে দীক্ষা দিত। এ অপরাধে সম্রাট ক্লডিয়াস সাধু ভ্যালেন্টাইনের শিরশ্ছেদ করেন। তার এ ভ্যালেন্টাইন নাম থেকেই এ দিনটির নাম করণ করা হয় ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ যা আজকের ‘বিশ্ব ভালবাসা দিবস’।এই দিসবতো পালনীয় নয় বরং একে থুথু নিক্ষেপ করা উচিত।এটা ভালবাসার নামে "গজব দিবস" "বিশ্ব বেহায়া" দিবস নাম হওয়া উচিত।
বাংলাদেশে এ দিবসটি পালন করা শুরু হয় ১৯৯৩ইং সালে। কিছু ব্যবসায়ীর মদদে এটি প্রথম চালু হয়। অপরিণামদর্শী মিডিয়া কর্মীরা এর ব্যাপক কভারেজ দেয়। আর যায় কোথায় ! লুফে নেয় বাংলার তরুণ-তরুণীরা। এরপর থেকে ঈমানের ঘরে ভালবাসার পরিবর্তে ভুলের বাসা বেঁধে দেয়ার কাজটা যথারীতি চলছে। আর এর ঠিক পিছনেই মানব জাতির আজন্ম শত্রু শয়তান এইডস নামক মরণ-পেয়ালা হাতে নিয়ে দাঁত বের করে হাসছে। মানুষ যখন বিশ্ব ভালবাসা দিবস সম্পর্কে জানত না, তখন পৃথিবীতে ভালবাসার অভাব ছিলনা। আজ পৃথিবীতে ভালবাসার বড় অভাব। তাই দিবস পালন করে ভালবাসার কথা স্মরণ করিয়ে দিতে হয়! আর হবেই না কেন! অপবিত্রতা নোংরামি আর শঠতার মাঝে তো আর ভালবাসা নামক ভালো বস্তু থাকতে পারে না। তাই আল্লাহ তা‘আলা মানুষের হৃদয় থেকে ভালবাসা উঠিয়ে নিয়েছেন।

বিশ্ব ভালবাসা দিবসকে চেনার জন্য আরও কিছু বাস্তব নমুনা পেশ করা দরকার। দিনটি যখন আসে তখন শিক্ষাঙ্গনের শিক্ষার্থীরা বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তো একেবারে বেসামাল হয়ে উঠে। নিজেদের রূপা-সৌন্দর্য উজাড় করে প্রদর্শনের জন্য রাস্তায় নেমে আসে। শুধুই কি তাই ! অঙ্কন পটীয়সীরা উল্কি আঁকার জন্য পসরা সাজিয়ে বসে থাকে রাস্তার ধারে। তাদের সামনে তরুণীরা পিঠ, বাহু আর হস্তদ্বয় মেলে ধরে পছন্দের উল্কিটি এঁকে দেয়ার জন্য। তারপর রাত পর্যন্ত নীরবে-নিবৃতে প্রেমিক বা প্রেমিকার সাথে খোশ গল্প। এ হলো বিশ্ব ভালবাসা দিবসের কর্মসূচি! বিশ্ব ভালবাসা দিবস না বলে বিশ্ব বেহায়াপনা দিবস বললে অন্তত নামকরণটি যথার্থ হতো।
বিশ্ব ভালবাসা দিবস পালনের ক্ষতিকর কিছু দিক : 
১. ভালবাসা নামের এ শব্দটির সাথে এক চরিত্রহীন লম্পটের স্মৃতি জড়িয়ে যারা ভালবাসার জয়গান গেয়ে চলেছেন, পৃথিবীবাসীকে তারা সোনার পেয়ালায় করে নীল বিষ পান করিয়ে বেড়াচ্ছেন।
২. তরুণ-তরুণীদের সস্তা যৌন আবেগকে সুড়সুড়ি দিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলা ও ফাসাদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। অথচ আল্লাহ তা‘আলা ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের ভালবাসেন না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَيَسْعَوْنَ فِي الْأَرْضِ فَسَادًا وَاللَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُفْسِدِينَ 

‘‘আর তারা তো পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করে বেড়ায়। আর আল্লাহ ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের ভালবাসেন না।’’(সূরা আল মায়িদাহ : ৬৪)
৩. নৈতিক অবক্ষয় দাবানলের মত ছড়িয়ে যাচ্ছে।
৪. নির্লজ্জতা ও বেহায়াপনা জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি লাভ করছে। যারা ঈমানদারদের সমাজে এ ধরণের অশ্লীলতার বিস্তার ঘটায়, দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের জন্য আল্লাহ তা‘আলা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
إِنَّ الَّذِينَ يُحِبُّونَ أَنْ تَشِيعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِينَ آمَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ 

‘‘ যারা মু’মিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে তাদের জন্য আছে দুনিয়া ও আখিরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি..।’’(সূরা আন-নূর :১৯)
বস্তুত যে সমাজেই চরিত্র-হীনতার কাজ ব্যাপক, তথায় আল্লাহর নিকট থেকে কঠিন আযাব সমূহ ক্রমাগত অবতীর্ণ হওয়া অবধারিত, আব্দুল্লাহ ইবন ‘উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন :
… لَمْ تَظْهَرِ الْفَاحِشَةُ فِي قَوْمٍ قَطُّ حَتَّى يُعْلِنُوا بِهَا إِلَّا فَشَا فِيهِمُ الطَّاعُونُ وَالْأَوْجَاعُ الَّتِي لَمْ تَكُنْ مَضَتْ فِي أَسْلَافِهِمِ… 
‘‘যে জনগোষ্ঠীর মধ্যে নির্লজ্জতা প্রকাশমান, পরে তারা তারই ব্যাপক প্রচারেরও ব্যবস্থা করে, যার অনিবার্য পরিণতি স্বরূপ মহামারি, সংক্রামক রোগ এবং ক্ষুধা-দুর্ভিক্ষ এত প্রকট হয়ে দেখা দিবে, যা তাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে কখনই দেখা যায় নি।’’(ইবনু মাজাহ, কিতাবুল ফিতান, হাদিস নং-৪০০৯)
৫. তরুণ-তরুণীরা বিবাহ পূর্ব দৈহিক সম্পর্ক গড়তে কোন রকম কুণ্ঠাবোধ করছে না। অথচ তরুণ ইউসুফ আলাইহিস সালামকে যখন মিশরের এক রানী অভিসারে ডেকেছিল, তখন তিনি কারাবরণকেই এহেন অপকর্মের চেয়ে উত্তম জ্ঞান করেছিলেন। রোমান্টিক অথচ যুব-চরিত্রকে পবিত্র রাখার জন্য কী অতুলনীয় দৃষ্টান্ত! আল্লাহ জাল্লা শানুহু সূরা ইউসুফের ২৩-৩৪ নম্বর আয়াত পর্যন্ত এ ঘটনা বর্ণনা করেছেন এ ভাবে-
‘‘সে যে স্ত্রীলোকের ঘরে ছিল সে তার কাছ থেকে অসৎকাজ কামনা করল ও দরজাগুলো বন্ধ করে দিল এবং বলল, ‘আস।’ সে বলল, ‘আমি আল্লাহ্‌র আশ্রয় প্রার্থনা করছি, তিনি আমার প্রভু; তিনি আমার থাকার সুন্দর ব্যবস্থা করেছেন। নিশ্চয়ই সীমালঙ্ঘনকারীরা সফলকাম হয় না। সে রমণী তো তার প্রতি আসক্ত হয়েছিল এবং সেও তার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ত যদি না সে তার প্রতিপালকের নিদর্শন দেখতে পেত। আমি তাকে মন্দ-কাজ ও অশ্লীলতা হতে বিরত রাখার জন্য এভাবে নিদর্শন দেখিয়েছিলাম। সে তো ছিল আমার বিশুদ্ধচিত্ত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত। ওরা উভয়ে দৌড়ে দরজার দিকে গেল এবং স্ত্রীলোকটি পিছন হতে তার জামা ছিঁড়ে ফেলল, তারা স্ত্রীলোকটির স্বামীকে দরজার কাছে পেল। স্ত্রীলোকটি বলল, ‘যে তোমার পরিবারের সাথে কুকর্ম কামনা করে তার জন্য কারাগারে প্রেরণ বা অন্য কোন মর্মন্তুদ শাস্তি ছাড়া আর কি দণ্ড হতে পারে? ইউসুফ বলল, ‘সে-ই আমার কাছ থেকে অসৎকাজ কামনা করছিল।’ স্ত্রীলোকটির পরিবারের একজন সাক্ষী সাক্ষ্য দিল, ‘যদি তার জামার সামনের দিক থেকে ছিঁড়ে থাকে তবে স্ত্রীলোকটি সত্য কথা বলেছে এবং পুরুষটি মিথ্যাবাদী, কিন্তু তার জামা যদি পিছন দিক থেকে ছিঁড়ে থাকে তবে স্ত্রীলোকটি মিথ্যা বলেছে এবং পুরুষটি সত্যবাদী। গৃহস্বামী যখন দেখল যে, তার জামা পিছন দিক থেকে ছেঁড়া হয়েছে তখন সে বলল, ‘নিশ্চয়ই এটা তোমাদের নারীদের ছলনা, তোমাদের ছলনা তো ভীষণ। হে ইউসুফ! তুমি এটা এড়িয়ে যাও এবং হে নারী! তুমি তোমার অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর; তুমিই তো অপরাধী। নগরের কিছু সংখ্যক নারী বলল, ‘আযীযের স্ত্রী তার যুবক দাস হতে অসৎকাজ কামনা করছে, প্রেম তাকে উন্মত্ত করেছে, আমরা তো তাকে স্পষ্ট ভুলের মধ্যে দেখছি। স্ত্রীলোকটি যখন ওদের কানা-ঘুষার কথা শুনল, তখন সে ওদেরকে ডেকে পাঠাল, ওদের জন্য আসন প্রস্তুত করল, ওদের সবাইকে একটি করে ছুরি দিল এবং ইউসুফকে বলল, ‘ওদের সামনে বের হও।’ তারপর ওরা যখন তাঁকে দেখল তখন ওরা তাঁর সৌন্দর্যে অভিভূত হল এবং নিজেদের হাত কেটে ফেলল। ওরা বলল, ‘অদ্ভুত আল্লাহর মাহাত্ম্য! এ তো মানুষ নয়, এ তো এক মহিমান্বিত ফেরেশতা। সে বলল, ‘এ-ই সে যার সম্বন্ধে তোমরা আমার নিন্দা করেছ। আমি তো তার থেকে অসৎকাজ কামনা করেছি। কিন্তু সে নিজেকে পবিত্র রেখেছে; আমি তাকে যা আদেশ করেছি সে যদি তা না করে, তবে সে কারারুদ্ধ হবেই এবং হীনদের অন্তর্ভুক্ত হবে। ইউসুফ বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! এ নারীরা আমাকে যার দিকে ডাকছে তার চেয়ে কারাগার আমার কাছে বেশী প্রিয়। আপনি যদি ওদের ছলনা হতে আমাকে রক্ষা না করেন তবে আমি ওদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ব এবং অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হব। তারপর তার প্রতিপালক তার ডাকে সাড়া দিলেন এবং তাকে ওদের ছলনা হতে রক্ষা করলেন। তিনি তো সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।(অনুবাদ, সূরা ইউসুফ : ২৩-৩৪)
৬. শরীরে উল্কি আঁকাতে যেয়ে নিজের ইয্‌যত-আব্রু পরপুরুষকে দেখানো হয়। যা প্রকাশ্য কবিরা গুনাহ। যে ব্যক্তি উল্কি আঁকে এবং যার গায়ে তা আঁকা হয়, উভয়য়ের উপরই আল্লাহর লা‘নত বর্ষিত হয়। রাসূলুল্লাহ () বলেন,
لَعَنَ اللَّهُ الْوَاصِلَةَ وَالْمُسْتَوْصِلَةَ وَالْوَاشِمَةَ وَالْمُسْتَوْشِمَةَ *
‘‘যে ব্যক্তি পর-চুলা লাগায় এবং যাকে লাগায়; এবং যে ব্যক্তি উল্কি আঁকে এবং যার গায়ে আঁকে, আল্লাহ তাদেরকে অভিসম্পাত করেন।’’(বুখারী,কিতাবুল লিবাস,হাদিস নং৫৪৭৭)
মূলত যার লজ্জা নেই, তার পক্ষে এহেন কাজ নেই যা করা সম্ভব নয়। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
إِذَا لَمْ تَسْتَحِ فَاصْنَعْ مَا شِئْت
‘‘যদি তোমার লজ্জা না থাকে তাহলে যা ইচ্ছা তাই করতে পার।’’(বুখারী, কিতাবু আহাদীসিল আম্বিয়া, হাদিস নং৩২২৫)
৭. ভালবাসা দিবসের নামে নির্লজ্জতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে যিনা-ব্যভিচার, ধর্ষণ ও খুন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
… وَلَا فَشَا الزِّنَا فِي قَوْمٍ قَطُّ إِلَّا كَثُرَ فِيهِمُ الْمَوْتُ…
‘‘যে জনগোষ্ঠীর-মধ্যেই ব্যভিচার ব্যাপক হবে, তথায় মৃত্যুর আধিক্য ব্যাপক হয়ে দেখা দেবে।’’(মুয়াত্তা মালিক, কিতাবুল জিহাদ, হাদিস নং-৮৭০)
উপরোক্ত আয়াত ও হাদিসগুলোর ভাষ্য কতটা বাস্তব বর্তমান বিশ্বের বাস্তব চিত্র এর প্রমাণ বহন করে। অবাধ যৌন মিলনের ফলে “AIDS” নামক একটি রোগ বর্তমানে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এটা এমনি মারাত্মক যে, এ রোগে আক্রান্ত হলে এর কোন আরোগ্য নেই। কিছু পরিসংখ্যান দিলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে :
1. বিশ্বের ১৪০ কোটিরও বেশী লোক থেকে ১৯৮৮ সালের আগস্ট পর্যন্ত এক লক্ষ এগার হাজারেরও বেশী “AIDS” রোগীর তালিকা পাওয়া গিয়েছে।’’(আব্দুল খালেক, নারী,(ই,ফা,বা.ঢাকা,১৯৮৪ইং) পৃ. ৯৬)
2. ১৯৯২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ২,৪২,০০০ এইডস রোগীর সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। এর মধ্যে ১,৬০,০০০ মৃত্যু বরণ করেছিল। ১৯৯২ সালের গবেষণালব্ধ তথ্য মতে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত ৫০ লক্ষ্য এইডস রোগী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে।(Baron& Byrne, Ibid., P. 329)
3. ৩০ শে ডিসেম্বর ১৯৯৬ এর Time International’ পত্রিকায় পরিবেশিত তথ্য মতে, ৬৫ লক্ষ জীবন ছিনিয়ে নিয়েছে এই ঘাতক ব্যাধি। আগামী ৫ বৎসরে আরও ৩ কোটি লোক মারা যাবে এই রোগে।(মাসিক পৃথিবী, (ঢাকা, ডিসেম্বর, ১৯৯৯), পৃ. ৫)
4. বিশ্ব এইডস দিবস ২০০০-এর প্রাক্কালে জাতিসংঘ যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে তাতে বলা হয়েছে : ‘‘ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক সেবনকারী এবং সমকামিতা, ইতর রীতির যৌনতার মাধ্যমে পূর্ব ইউরোপ, রাশিয়া, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, ল্যাটিন-আমেরিকা ক্যারিবীয় অঞ্চল ও এশিয়ায় এইডস দেখা দিয়েছে। আফ্রিকার কয়েকটি দেশে প্রতি তিনজনের একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ এইডস আক্রান্ত। শিশুদের ৮০ ভাগ এই রোগের ভাইরাসে আক্রান্ত। আফ্রিকার উপ-সাহারা এলাকায় এ বছর ১০ লাখেরও বেশী লোক এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপে নতুন করে এইডস দেখা দিয়েছে। মাত্র একবছরে এইডস রোগীর সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। উত্তর আফ্রিকা এবং মধ্য প্রাচ্যেও নতুন করে এইডস সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে।’’(রয়টার্স, দৈনিক ইনকিলাব, (ঢাকা, ২রা ডিসেম্বর ২০০০ ইং) পৃ .১-২)
5. ৬. জাতিসংঘের দেয়া তথ্য মতে : ‘‘বিশ্বে ৩ কোটি ৬০ লাখ লোক এইডসে আক্রান্ত ২০০০ইং সনে ৫০ লাখ লোক নতুন করে এইডসে আক্রান্ত হয়েছে।’’(প্রাগুক্ত)
6. ৭. ‘‘বিশ্ব এইডস দিবসের আলোচনা সভায় (ঢাকা) বাংলাদেশের তৎকালীন সমাজকল্যাণ, প্রতি মন্ত্রী ড. মোজাম্মেল হোসেনের দেয়া তথ্য মতে, বাংলাদেশে এইডস ভাইরাস বহনকারী রোগীর সংখ্যা একুশ হাজারের বেশী।’’(দৈনিক ইনকিলাব, (স্টাফ রিপোর্টার, বিশ্ব এইডস দিবসে ঢাকায় আলোচনা সভা, ২রা ডিসেম্বর, ২০০০ ইং) পৃ.১)
সিফিলিস-প্রমেহ : বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আমেরিকার শতকরা ৯০% অধিবাসী রতিজ দুষ্ট ব্যাধিতে আক্রান্ত। সেখানকার সরকারী হাসপাতালগুলিতে প্রতি বৎসর গড়ে দুই লক্ষ সিফিলিস এবং এক লক্ষ ষাট হাজার প্রমেহ রোগীর চিকিৎসা করা হয়। (Encyclopedia Britannica, V. 23, P. 45.) এছাড়াও আমেরিকায় প্রতি বৎসর ত্রিশ-চল্লিশ হাজার শিশু জন্মগত সিফিলিস রোগে মৃত্যুবরণ করে। ( আঃ খালেক, নারী, (ঢাকা : ই.ফা. বা., ১৯৮৪ ইং), পৃ. ৯৬)
Dr. Laredde বলেন— ফ্রান্সে প্রতি বৎসর কেবল সিফিলিস ও তদ-জনিত রোগে ত্রিশ হাজার লোক মারা যায়। (প্রাগুক্ত)
হার্পিস রোগ :
ব্যভিচারের কারণে জননেন্দ্রিয়ে সৃষ্ট অত্যন্ত পীড়াদায়ক রোগ হলো Genital Herpes. মার্কিন জনসংখ্যার শতকরা দশ ভাগ (জনসংখ্যা ২৬ কোটি ধরলে তার ১০% হয় ২ কোটি ৬০ লক্ষ) এই রোগে আক্রান্ত। এটাই সব নয়। প্রত্যেক বৎসর প্রায় ৫০০,০০০ মানুষের নাম এই মারাত্মক হার্পিস রোগীদের তালিকায় নতুন করে যুক্ত হচ্ছে। (Baron & Byrne, Social psychology : Understanding Human Interaction, P. 329.)
৮. বিশ্ব ভালবাসা দিবসের এসব ঈমান বিধ্বংসী কর্ম-কাণ্ডের ফলে মুসলিম যুব-মানস ক্রমশ ঈমানি বল ও চেতনা হারিয়ে ফেলছে।
৯. মানুষের হৃদয় থেকে তাকওয়া তথা আল্লাহর ভয় উঠে যাচ্ছে।
প্রিয় মুমিন-মুসলিম ভাই-বোনেরা ! ভালবাসা কোন পর্বীয় বিষয় নয়। এটি মানব জীবনের সুখ-শান্তির জন্য একটি জরুরি সার্বক্ষণিক মানবিক উপাদান। সুতরাং আমাদের মধ্যে ভালবাসা ও সৌহার্দ বৃদ্ধির জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শিখানো সার্বক্ষণিক পন্থাটি অবলম্বন করি।
বিশ্ব ভালবাসা দিবসের নামে এসব ঈমান বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড হতে আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে হেফাযত করুন। শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই যেন কাউকে ভালবাসি এবং শত্রুতাও যদি কারো সাথে রাখতে হয়, তাও যেন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই রাখি। আমীন !!! 



================================================================================================================================ 

ভালোবাসা দিবস আমাদের সংস্কৃতি নয়,ভালোবাসা দিবস নামক সামাজিক এ  ক্যান্সার থেকে আপনার সন্তানদের  দূরে রাখুন।
এম এম আবদুল্লাহ ভূঁইয়া , 

=======================================================

গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ বা ‘ভালোবাসা দিবস’ নামে নতুন একটি দিবস উদযাপন করা হচ্ছে। আগে শুধু এ দেশেই নয়, বেশির ভাগ মুসলিম দেশেই এটা পালিত হতো না। হোটেল মালিকসহ ব্যবসায়ীদের একটি অংশও ব্যবসায় মুনাফার স্বার্থে এটাকে উৎসাহ জোগাচ্ছেন। ‘ভালোবাসা দিবসে’র ইতিহাস ও ভিত্তি কী? ড. খালিদ বেগ এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করেছেন। সেখান থেকে কিছু কথা তুলে ধরা জরুরি।
বিজাতীয় সংস্কৃতি চর্চা করছে যেসব মুসলমান, তাদের বেশির ভাগই জানে না যে, আসলে তারা কী করছে। তারা অন্ধভাবে অনুকরণ করছে তাদের সাংস্কৃতিক নেতৃবর্গকে, যারা তাদের মতোই অন্ধ।



যাকে নির্দোষ আনন্দ মনে করা হচ্ছে, তার শেকড় যে পৌত্তলিকতায় প্রোথিত হতে পারে, এটা ওরা বোঝেই না। যে প্রতীকগুলো তারা আঁকড়ে ধরেছে, সেগুলো হয়তোবা (ধর্মীয়) অবিশ্বাসের প্রতীক। আর যে ধ্যানধারণা তারা ধার নিয়েছে, তা হতে পারে কুসংস্কার। এসব কিছু হয়তো ইসলামের শিক্ষার সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
‘ভালোবাসা দিবস’-এর প্রচলন ইউরোপের বেশির ভাগ দেশ থেকে স্বাভাবিকভাবেই উঠে গিয়েছিল। তবে ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রে এটা উদযাপিত হতো। দিবসটি হঠাৎ করে বহু মুসলিম দেশে গজিয়ে উঠেছে।


ভালোবাসা দিবসের উৎপত্তি নিয়ে কাহিনী-কিংবদন্তি প্রচুর। এটা স্পষ্ট, খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে রোমানরা এটা শুরু করেছিল পৌত্তলিক পার্বণ হিসেবে। 'উর্বরতা ও জনসমষ্টির দেবতা' লুপারকাসের সম্মানার্থেই এটা করা হতো। এর প্রধান আকর্ষণ ছিল লটারি। ‘বিনোদন ও আনন্দে’র জন্য যুবকদের মাঝে যুবতীদেরকে বণ্টন করে দেয়াই ছিল এই লটারির লক্ষ্য। পরবর্তী বছর আবার লটারি না হওয়া পর্যন্ত যুবকরা এই ‘সুযোগ’ পেত।
ভালোবাসা দিবসের নামে আরেকটি ঘৃণ্য প্রথা ছিল, যুবতীদের প্রহার করা। সামান্য ছাগলের চামড়া পরিহিত দুই যুবক একই চামড়ার তৈরি বেত দিয়ে এ নির্যাতন চালাত। উৎসর্গিত ছাগল ও কুকুরের রক্তে এই যুবকদের শরীর থাকত রঞ্জিত। এ ধরনের 'পবিত্র ব্যক্তি'দের 'পবিত্র' বেতের একটি আঘাত খেলে যুবতীরা আরো ভালোভাবে গর্ভধারণ করতে পারবে বলে বিশ্বাস করা হতো। খ্রিষ্টধর্ম এই কুপ্রথা বন্ধ করার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। এই প্রয়াসের অংশ হিসেবে প্রথমে মেয়েদের বদলে সন্ন্যাসীদের নামে লটারি চালু হলো। মনে করা হয়েছিল, এর ফলে যুবকরা তাদের জীবনকে অনুসরণ করবে। খ্রিষ্টধর্ম এ ক্ষেত্রে শুধু এটুকুই সফল হলো যে, ভালোবাসা দিবসের নাম ‘লুপারক্যালিয়া’ থেকে ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ হয়েছে। গেলাসিয়াস নামের পোপ ৪৯৬ খ্রিষ্টাব্দে এটা করেন সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন নামের সন্ন্যাসীর সম্মানার্থে। তবে ৫০ জন ভ্যালেন্টাইনের কথা শোনা যায়। তাদের মধ্যে মাত্র দুজন সমধিক পরিচিত। অবশ্য তাদের জীবন ও আচরণ রহস্যাবৃত। একটি মত অনুসারে, ভ্যালেন্টাইন ছিলেন ‘প্রেমিকের সন্ন্যাসী’। তিনি একবার কারাবন্দী হয়েছিলেন। কিন্তু পড়ে যান কারাগারের অধিকর্তার কন্যার প্রেমে।



লটারি নিয়ে মারাত্মক সঙ্কট দেখা দেয়ায় ফরাসি সরকার ১৭৭৬ খ্রিষ্টাব্দে ভ্যালেন্টাইন দিবস উদযাপন নিষিদ্ধ করে দেয়। এদিকে, সময়ের সাথে সাথে একপর্যায়ে ইতালি, অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি ও জার্মানি থেকে দিবসটি বিদায় নেয়। সপ্তদশ শতকে পিউরিটানরা যখন বেশ প্রভাবশালী ছিল, তখন ইংল্যান্ডেও ভালোবাসা দিবস নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে ১৬৬০ খ্রিষ্টাব্দে রাজা দ্বিতীয় চার্লস আবার এটি পালনের প্রথা চালু করেন।



ইংল্যান্ড থেকে ভ্যালেন্টাইন গেল ‘নতুন দুনিয়া’য়; অর্থাৎ আমেরিকায়। সেখানে উৎসাহী ইয়াঙ্কিরা পয়সা কামানোর বড় সুযোগ খুঁজে পেল এর মাঝে।
ইসথার এ হাওল্যান্ডের মতো কেউ কেউ সর্বপ্রথম ১৮৪০ সালে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ভ্যালেন্টাইন ডে কার্ড বের করেন। হাওল্যান্ড প্রথম বছরই পাঁচ হাজার ডলার দামের কার্ড বিক্রি করেছিলেন। তখন ‘পাঁচ হাজার ডলার’ মানে অনেক। এরপর থেকে ‘ভ্যালেন্টাইন শিল্প’ জমজমাট হয়ে ওঠে।


‘হ্যালোউইন’-এর ক্ষেত্রেও ভ্যালেন্টাইনের ঘটনা ঘটেছে। ওই উৎসবে ভূত-পেত্নীর মতো পোশাক পরে দৈত্যদানব পূজার প্রাচীন পৌত্তলিক প্রথার পুনরাবৃত্তি করা হয় মাত্র। খ্রিষ্ট্রধর্ম পুরনো নাম বদলিয়ে ‘হ্যালোউইন’ রাখলেও উৎসবটির ভিত্তি রয়ে গেছে পৌত্তলিকতাকেন্দ্রিক।

পৌত্তলিক জাতির মানুষরা ভূত-প্রেতকে খুব ভয় পেত। বিশেষ করে তাদের জন্মদিনে ভয়টা যেত বেড়ে। মানুষের দৈনন্দিন জীবনে পরিবর্তনের মুহুর্তে যেমন বয়সের বছরপূর্তি­ এসব অপশক্তি আরো বেশি বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ায় বলে বিশ্বাস করা হতো। তাই পরিবার-পরিজন হাসি-আনন্দে সে ব্যক্তিকে ঘিরে রাখা হতো, যার জন্মদিন পালন করা হতো। তাদের বিশ্বাস, এভাবে মন্দ থেকে তাকে রক্ষা করা যায়।


ইসলামবিরোধী ধ্যান-ধারণা ও বিশ্বাসে যেসব প্রথা ও উৎসবের মূল নিহিত, সেগুলোর ব্যাপারে ইসলাম উদাসীন থাকবে বলে কি মনে করা যায়?
অবিরাম মিডিয়ার প্রচারণাসহ নানাভাবে বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক প্রোপাগান্ডা চলছে। এটা একটা বিরাট ট্র্যাজেডি যে, এ অবস্থায় মুসলমানরাও ভ্যালেন্টাইন, হ্যালোউইন ভূত, এমনকি সান্তাক্লসকে আলিঙ্গন করছে।” ড. খালিদ বেগের এই গুরুত্বপূর্ণ অভিমতগুলো লন্ডনের ইমপ্যাক্ট ইন্টারন্যাশনাল সাময়িকীর মার্চ ২০০১ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল।
কথা হলো পৌত্তলিকতা ও কুসংস্কারের ওপর যার ভিত্তি, সেই ভ্যালেন্টাইন ডে বাংলাদেশের মতো কোনো দেশে­ যেখানে প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ মুসলিম, পালন করা উচিত নয়। ইসলাম আমাদেরকে শিখিয়েছে সবাইকে প্রকৃত অর্থেই ভালোবাসতে। এটা বিশেষ কোনো দিবস, এভাবে উদযাপনের ওপর নির্ভর করে না। আমাদের দেশে ‘ভালোবাসা দিবস’ কিছু তরুণ-তরুণীর অবাধ মেলামেশার উপায়ে পরিণত হয়েছে। এটা মুসলিম সংস্কৃতির অংশ নয়। অশ্লীলতা বাড়িয়ে দেয়­ পাশ্চাত্য সংস্কৃতির এমন কোনো কিছু আমাদের দেশে চলতে দেয়া অনুচিত। বাংলাদেশসহ মুসলিম দেশগুলোতে এসব বন্ধ করার ব্যাপারে পণ্ডিত ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিক, শিক্ষক, ইমাম, সমাজকর্মী প্রমুখের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
============


সত্যি আমরা দূর্ভাগা জাতি।

আমরা না জানি নিজেদের ধর্ম, না জানি নিজেদের কৃষ্টি ও সভ্যতা। এজন্য প্রথমেই এগিয়ে আসা উচিত্‌ রাষ্ট্রকে।

কিন্তু অতি পরিতাপের বিষয় আমাদের দেশের রাষ্ট্র প্রধান থেকে শুরু করে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী যখন "ভ্যালেন্টাইন্‌স ডে বা ভালোবাসা দিবসে" নিজেদেরকে ঐ দিবসে উপস্থিত থেকে জনসাধারণকে ভালোবাসা দিবসে সামিল হওয়ার জন্য আহ্বান জানায়। বক্তৃতা ও বিবৃতি দিয়ে বিদেশী অপসংস্কৃতিকে পালনের জন্য সহজ-সরল মানুষগুলোকে আহ্বান জানায়। বিশেষকরে উড়তি বয়সের তরুন-তরুনী, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে মেয়েরা বেশি আকৃষ্ট হয়।

এই সংস্কৃতি শুধু বেহায়াপনা তৈরী করে না সমাজে বিশৃংখলা সৃষ্টি করে। মুক্তমনা সংস্কৃতির নামে সমাজে আজ নারী প্রগতিবীদ ও কিছু সুশীল! সমাজপতিরা উদার মানসিকতার কথা বলে, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে, নারীদের বেপর্দা করে রাস্তায় নামিয়ে দিয়েছে। সন্তান-সন্ততিদের মায়ের স্নেহ ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করেছে। অথচ ইসলাম কখনো নারীকে অন্তপুরে বন্দি রাখতে বলেনি।

পর্দা করে সকল কাজে অংশীদার হতে বলেছে।
 অনেকের পিতা মাতা আছেন যাঁরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন তবে তাদের ছেলে-মেয়েরা এই সমস্ত অপসংস্কৃতিতে অংশগ্রহণ করছে। তাই আমি মনে করি সর্বপ্রথমে পরিবারের পিতা-মাতাকে সন্তানের মঙ্গলের জন্য এগিয়ে আসা উচিত্‌। আজ শহর থেকে গ্রামেও এই ভালোবাসা দিবস ছড়িয়ে গেছে। গ্রামের ছাত্র-ছাত্রীরা তাঁদের সহজ-সরল বাবা মাকে ভুল বুঝিয়ে অর্থ নিয়ে এই অপসংস্কৃতিকে পালন করছে। আজ ইউরোপ আমেরিকায় ভালোবাসার নামে দিনে দুপুরে সবারই সামনে যেভাবে ভালোবাসার প্রমাণ দেয় তা পশু প্রবৃত্তিকেও ছাড়িয়ে গেছে।
অনেক অমুসলিম দেশে হোটেল রেস্তোরা গুলো অগ্রীম বুকিং দিয়ে রাখতে হয় ,ঐ দিনটি প্রেমিক প্রেমিকাদের ভালবাসার প্রমান স্বরূপ , কথিত আছে যে সারা বছর টানকী মারার পর ঐ দিন নাকী চুডান্ত ফলাফল পাওয়ার দিন হিসাবে তাদের কাছে গন্য করা হয় । ছি, ছি , ছি, এই নগ্নতাকে ধিক্কার জানাই এই বেহায়া পনাকে , ধিক্কার জানাই এই স্বঘোষিত  বেইশ্যা  দিবস কে ।



শুক্রবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

কাবলাল জুমআ চার রাকাতঃ একটি দালিলিক পর্যালোচনা

কাবলাল জুমআ চার রাকাতঃ একটি দালিলিক পর্যালোচনা 

বর্তমানে সরল মুসলমানদের কে ছহিহ ও জাল হাদিসের নামে , কথিত আহলে হাদিস ভাইয়েরা , আজকে অনেক মুসলিমদের  আমল কে তুচ্ছ্য তাচ্ছিল্য করে উপস্হাপন করার  চেষ্টায় মেতে উঠেছে , এতে আহলে হক্বের ওলামান যথা সম্ভব কোরআন হাদিসের আলোকে  তাদের অপপ্রচারের দাঁত ভাঙ্গা  জবাব দিয়ে   যাচ্ছেন । 

এরই ধারাবাহিকতায়  জুমার আগে অর্থাৎ "কাবলিল জুমা "নামাজ পডা যাবে কি যাবেনা ? এই দন্ধের নিরসন এখানেই দেয়া হল । 
"সংকলিত "


আল্লামা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক দা.বা.
একজন সম্মানিত আলিমের একটি কথা, যিনি রিয়াদ থেকে পি.এইচ.ডি করেছেন এবং এখন এদেশের একটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে খেদমতে নিয়োজিত আছেন, আমার খুব ভালো লেগেছে। তিনি বলেছেন, ‘‘আমাদের চলতে হবে সুন্নাহ এবং উম্মাহকে একসাথে নিয়ে।’’ এরপর তিনি একথার ব্যাখ্যা করেন, ‘‘সুন্নাহ হচ্ছে সূত্র ও দলীল এবং উম্মাহর জীবন-ব্যবস্থা। আর উম্মাহকে সাথে নিয়ে চলার অর্থ, মুসলিমজাহানের কোনো অঞ্চলে কোনো কাজ প্রচলিত থাকলে এবং সুন্নাহয় তার কোনো না কোনো দলীল পাওয়া গেলে সে কাজের বিরোধিতা করে উম্মাহকে পেরেশান করা উচিত নয়।’’
‘‘সুন্নাহ এবং উম্মাহ উভয়কে নিয়ে চলা এবং জুমহূর উম্মাহর সঙ্গে থাকার’’ অর্থ উপরোক্ত ব্যাখ্যার চেয়েও অনেক বিস্তৃত ও গভীর। কিন্তু প্রসঙ্গক্রমে যেটুকু তিনি বলেছেন তা-ও স্বস্থানে অতি গুরুত্বপূর্ণ। উম্মাহর মাঝে ব্যাপকভাবে অথবা কোনো অঞ্চলে যে আমল জারি আছে, যদি তার কোনো শরয়ী সনদ থাকে, তখন শুধু একারণে তার বিরোধিতা করা যে, তা অমুক মাযহাবের বিরোধী বা অমুক আলিমের মতে তা দলীলবিহীন, এরপর এর বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা করে সাধারণ মানুষের মাঝে অস্থিরতা ছড়ানো শরীয়তের রীতি ও রুচির সম্পূর্ণ বিরোধী। আল্লাহর নবীর সুন্নাহ এবং সালাফের নীতি-আদর্শের সাথে এর কোনো মিল নেই।
হায়! দ্বীন ও ধর্ম যখন নানামুখি বিপদের সম্মুখীন তখন গোদের উপর বিষফোড়ার ন্যায় এই আপদ দেখা দিয়েছে যে, উম্মাহর মাঝে প্রতিষ্ঠিত ও প্রমাণিত অনেক বিষয় সম্পর্কে (যা শুধু-এই নয় যে, কোনো রকম তার প্রমাণ-সূত্র খুঁজে পাওয়া যায়; বরং যার প্রমাণই তুলনামূলক বেশি শক্তিশালী এবং যা সরাসরি সুন্নাহর ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত) প্রচার করা হচ্ছে যে, ‘তা বিদআত, ভিত্তিহীন ও সুন্নাহ-বিরোধী!’
মুসলমানের বর্তমান মুমূর্ষু অবস্থাতেও যাদের মনে করুণা জাগে না; বরং ‘জ্ঞান-গবেষণার’ নামে এবং ‘হাদীস-অনুসরণের’ শিরোনামে তাদেরকে আরো বেশি অস্থিরতা ও বিক্ষিপ্ততার মাঝে নিক্ষেপ করে চলেছেন তাদের সমীপে বিনীত নিবেদন, ‘অনুগ্রহ করে আপনার অধ্যয়ন-সীমা কিছুটা প্রশস্ত করুন এবং খানিকটা গভীর করুন, আর ‘ফুরু’-এর সাথে ‘উসূল’ পাঠেও খানিকটা অভ্যস্ত হোন। তাহলে প্রতিষ্ঠিত ও প্রমাণিত বিষয়াদিকে ভিত্তিহীন ও প্রমাণহীন বলার পাপ থেকে আত্মরক্ষা সহজ হবে।
দেখুন, এ নিছক একটি পাপ নয়, অনেক পাপের সমষ্টি, যার অন্যতম হচ্ছে, উম্মাহকে তার ঐসব আলিম মনীষী সম্পর্কে আস্থাহীন করা, যাঁদের নিকট থেকে উম্মাহ দ্বীন ও ঈমান এবং সালাত ও সিয়াম শিখেছে। এ যে কোনো পুণ্যকর্ম নয় তা তো বলাই বাহুল্য। এ ঠিক এমনই, যেমন কেউ রিয়াদে গিয়ে শায়খ ইবনে বায রাহ. ও শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে সালিহ উছাইমীন রাহ.-এর ফতোয়াসমূহের বিরুদ্ধে হাদীস ও আছার প্রচার করতে থাকল এবং ঐ অঞ্চলের সাধারণ মুসলমানদের অস্থির ও উদভ্রান্ত করে তুলল।
এ তো জানা কথা যে, যেসব বিষয়ে হাদীস-সুন্নাহ-ভিত্তিক একাধিক ইজতিহাদী মত আছে তাতে এই কাজ করা মোটেই কঠিন নয়। কারণ এসব ক্ষেত্রে দুদিকেই হাদীস ও আছার থাকে। কিন্তু প্রশ্ন এই যে, এ জাতীয় কাজ করলে তা কি দ্বীনের সেবা ও খিদমত হবে, না…?
দুই.
যেসব বিষয় উম্মাহর মাঝে প্রতিষ্ঠিত ও শক্তিশালী দলীল দ্বারা প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও বর্তমান সময়ে অপপ্রচারের শিকার তার একটি হচ্ছে জুমার আগের সুন্নত। খুব বিস্মিত হয়েছি যখন বিভিন্ন জায়গা থেকে এ প্রশ্ন আসা শুরু হয়েছে যে, ‘জুমার আগে সুন্নত পড়ার সূত্র কী, এ তো বিদআত। এর না কোনো দলীল আছে, না কোনো সহীহ হাদীস (নাউযুবিল্লাহ)!’ জানা গেছে, এইসব কথা তাদের পক্ষ হতে ছড়ানো হয়েছে যারা সচেতনভাবে বা অসচেতনভাবে মনে করেন, মানুষের মনে ফিকহ ও ফকীহ সম্পর্কে অশ্রদ্ধা তৈরি করা এবং সাধারণ মানুষকে আলিমদের থেকে বিচ্ছিন্ন করা দ্বীনের এক বড় খেদমত!

এঁরা যদিও মুজতাহিদ ইমামগণের ‘তাকলীদ’-এর চরম বিরোধী, কিন্তু ‘যাল্লাতুল উলামা’ বা আলিমগণের ভুল ভ্রান্তির অনুসরণের বিষয়ে অতিআগ্রহী। তা না হলে এঁরা জুমার আগে সুন্নত পড়ার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতেন না। আমার জানা মতে, সম্ভবত সপ্তম হিজরী শতাব্দীতে কোনো আলিম এই দাবি করেছিলেন যে, সালাতুল জুমুআর আগে সুন্নত পড়া বিদআত (অথচ তা গোটা মুসলিমজাহানে সাহাবা-যুগ থেকে চলে আসছিল)।
আল্লাহ তাআলা জাযায়ে খায়ের দান করুন ইমাম যায়নুদ্দীন ইবনে রজব হাম্বলী রাহ.কে (৭৯৫হি.), যাঁর তালীমের সূত্র ইমাম ইবনুল কাইয়েম রাহ. (৭৫১হি.) ও ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহ. (৭২৮হি.)-এর সাথে যুক্ত, তিনি এ বিষয়ে দুটি পুস্তক রচনা করেন :
١ـ نفي البدعة عن الصلاة قبل الجمعة
٢ـ إزالة الشنعة عن الصلاة قبل الجمعة.
এ দুটি পুস্তিকায় তিনি সুস্পষ্ট দলীল প্রমাণ দ্বারা ঐ অভিনব দাবি জোরালোভাবে খন্ডন করেন। আমার সামনে পুস্তিকা দুটি নেই, তবে ‘সহীহ বুখারী’র উপর তাঁর অপূর্ব ভাষ্যগ্রন্থ ‘‘ফাতহুল বারী’’র পঞ্চম খন্ডে, যা অনেক আগেই মুদ্রিত ও প্রকাশিত হয়েছে, এ বিষয়ে সারগর্ভ আলোচনা রয়েছে। ঐখানে তিনি লিখেছেন, এ বিষয়ে যারা আরো বিশদ ও বিস্তারিত জানতে চান তারা যেন পুস্তিকা দুটি পাঠ করেন।
তিন.
কিছু মানুষ, যারা এই প্রতিষ্ঠিত সুন্নাহর বিরোধিতা করেছেন, আমার জানা মতে, তাদের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন এই যে, ‘আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যামানায় তো জুমার প্রথম আযান ছিল না। এখন যাকে দ্বিতীয় আযান বলা হয় সেটিই শুধু ছিল। অর্থাৎ যে আযান খতীবের সামনে দেওয়া হয়। আযানের পরেই খুতবা শুরু হত। আর খুতবা সমাপ্ত হওয়ার সাথে সাথেই নামায। তাহলে কাবলাল জুমা পড়ার সুযোগ ছিল কোথায়? বোঝা গেল, ঐ যামানায় জুমার আগে কোনো নামায ছিল না। 

এই প্রশ্ন শুনে খুব অবাক হয়েছি। কারণ আম মানুষের কারো কারো এই ধারণা আছে বলে জানতাম যে, আযানের আগে সুন্নত পড়া যায় না, কিন্তু কোনো আলিমেরও এ জাতীয় বিভ্রান্তি হতে পারে, তা জানা ছিল না। যেমন ধরুন, যোহরের সময় সোয়া বারোটায় হয়ে গেল, মসজিদে সাধারণত আযান দেওয়া হয় পৌনে একটায়, আযানের আগে কি যোহরের সুন্নত পড়া যাবে না? নিঃসন্দেহে সবাই বলবেন, পড়া যাবে। তাহলে এ বলে জুমার সুন্নতকেই কীভাবে অস্বীকার করে দেওয়া যায় যে, ‘আযানের পর তো খুৎবা শুরু হয়, আর খুৎবার পর নামায, তাহলে সুন্নতের সময় কোথায়’?! কে না জানে, জুমার সুন্নত দ্বিতীয় আযানের আগে পড়া হত, এখনও আগেই পড়া হয়। সুতরাং এ প্রশ্নই অর্থহীন যে, ‘সুন্নতের সময় কোথায়?’ কোনো হাদীস কি আছে, আযানের আগে সুন্নত পড়া যায় না?
তাছাড়া তৃতীয় খলীফায়ে রাশেদ উসমান ইবনে আফফান রা.-এর যামানায় যখন প্রথম আযান শুরু হল এবং এর উপর সাহাবায়ে কেরামের ইজমাও সম্পন্ন হল তখন তো নিঃসন্দেহে এই আযানও শরীয়তসম্মত আযান, যা সুন্নাহর উপর প্রতিষ্ঠিত। সুতরাং এখন তো এ প্রশ্ন আরো অর্থহীন যে, ‘আযানের আগে সুন্নত কীভাবে পড়া যাবে!’ কিংবা ‘আযানের আগে পড়া নামায কাবলাস সালাহ সুন্নত কীভাবে হবে?’ সুন্নত তো শরীয়তসম্মত আযানের পরই পড়া হচ্ছে।
চার.
অনেকগুলো সহীহ হাদীসে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশনা আছে, জুমার জন্য যেন আগে আগে যাওয়া হয়, মসজিদে পৌঁছে যদি দেখা যায়, ইমাম খুৎবার জন্য আসেননি তাহলে নামায পড়বে, ইমাম এসে গেলে চুপচাপ বসে খুৎবা শুনবে। এ বিষয়ে যদি আর কোনো দলীল না-ও থাকত তাহলেও শুধু ঐ হাদীসগুলো দ্বারাই কাবলাল জুমা নামায প্রমাণিত হত। তবে ঐ নামায কি সুন্নতে মুয়াক্কাদা হবে, না গায়রে মুআক্কাদা সেটা সাব্যস্ত হত অন্য দলীল দ্বারা।

তো সহীহ ও মারফূ হাদীসের মাধ্যমে যখন কাবলাল জুমা নামায প্রমাণিত হল তখন এ দাবির অবকাশ কীভাবে থাকে যে, জুমার আগে কোনো নামায নেই।
আফসোস, ঐ হাদীসগুলোর আলোচনাও এখন কম হয়! নীচে কিছু হাদীস উপস্থাপিত হল।
عن عطاء الخراساني قال : كان نُبَيْشَة الهُذَلي يحدث عن رسول الله صلى الله عليه وسلم : أن المسلم إذااغتسل يوم الجمعة، ثم أَقْبَلَ إلى المسجد لا يُؤْذِيْ أحدا، فإن لم يجد الإمام خَرَج صلى ما بدا له، وإن وجدالإمامَ قد خرج، جلس، فاستمع وأنصت حتى يقضي الإمام جمعته وكلامه، إن لم يُغْفَر له في جمعته تلكذنوبُه كلُّها، أن تكون كفارة للجمعة التي تليها.
(তাবেয়ী) আতা খোরাসানী রাহ. নুবাইশা রা. থেকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস বর্ণনা করতেন যে, মুসলিম যখন জুমার দিন গোসল করে মসজিদের দিকে রওনা হয়, কাউকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকে, ইমাম (খুৎবার জন্য) বের হয়নি দেখলে যে পরিমাণ ইচ্ছা নামায পড়ে, ইমাম বের হয়ে থাকলে বসে যায় ও চুপচাপ শুনতে থাকে, একপর্যায়ে ইমামের সালাত ও কালাম সমাপ্ত হয়, তাহলে এ ব্যক্তির এ সপ্তাহের সকল গুনাহ যদি মাফ না-ও হয় এ তো অবশ্যই হবে যে, পরবর্তী জুমার জন্য তা কাফফারা হয়ে যায়।-মুসনাদে আহমদ খন্ড ৫, পৃ. ৭৫ (২০৭২১)
এই হাদীস ‘সহীহ লি-গায়রিহী’। মুহাদ্দিস নূরুদ্দীন হাইছামী রাহ. ‘মাজমাউয যাওয়াইদ’’ কিতাবে (২/১৭১) লিখেছেন-
رجاله رجال الصحيح، خلا شيخ أحمد وهو ثقة.
২.
সালমান ফারেসী রাহ. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
عن سلمان الفارسي قال : قال النبي صلى الله عليه وسلم : لا يغتسل رجل يوم الجمعة ويتطَهَّر ما استطاعمن طُهر ويَدَّهن من دُهنِه أو يمس من طيب بيته، ثم يخرج فلا يُفَرِّق بين اثنين، ثم يُصَلِّي ما كُتِب له، ثميُنْصِت إذا تكلَّم الإمام، إلا غُفِر له ما بينه وبين الجمعة الأخرى.  

কোনো পুরুষ যখন জুমার দিন গোসল করে, সাধ্যমত পবিত্রতা অর্জন করে, তেল ব্যবহার করে বা ঘরে যে সুগন্ধি আছে তা ব্যবহার করে, এরপর (জুমার জন্য) বের হয় এবং (বসার জন্য) দুই জনকে আলাদা করে না, এরপর তাওফীক মতো নামায পড়ে এবং ইমাম যখন কথা বলে তখন চুপ থাকে, তাহলে অন্য জুমা পর্যন্ত তার (গুনাহ) মাফ করা হয়।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৮৮৩; মুসনাদে আহমদ ৮/৪৩ (২৩৭১০); সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ২৭৭৬
৩.
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
عن أبي هريرة رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال : من اغتسل ثم أتى الجمعة فَصَلَّى ما قُدِّر لهثم أنصت حتى يفرغ من خطبته، ثم يصلي معه، غفر له ما بينه وبين الجمعة الأخرى وفضل ثلاثة أيام.
যে গোসল করে, এরপর জুমায় আসে, এরপর তাওফীক মতো নামায পড়ে, এরপর চুপ থাকে (ইমাম) তার খুতবা সমাপ্ত করা পর্যন্ত, এরপর তার সাথে নামায পড়ে, তার অন্য জুমা পর্যন্ত ও আরো তিন দিনের (গুনাহ) মাফ করে দেওয়া হয়।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৮৫৭
৪.
আবু সায়ীদ খুদরী রা. ও আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- 

عن أبي سعيد الخدري وأبي هريرة رضي الله عنهما قالا : قال رسول الله صلى الله وعليه وسلم : من اغتسليوم الجمعة واستاك، ومسَّ من طيب إن كان عنده، ولبِس من أحسن ثيابه، ثم خرج حتى يأتي المسجد، فلميتَخَطَّ رِقاب الناس حتى ركع ما شاء أن يركع، ثم أنصت إذا خرج الإمام فلم يتكلم حتى يفرغ من صلاته،كانت كفارة لما بينها وبين الجمعة التي قبلها.
قال (الراوي) : وكان أبو هريرة يقول : وثلاثة أيام زيادة، إن الله جعل الحسنة الحسنة بعشر أمثالها.
যে জুমার দিন গোসল করে ও মিসওয়াক করে, তারপর সুগন্ধি থাকলে তা ব্যবহার করে, নিজের একটি উত্তম পোশাক পরিধান করে, এরপর বের হয় ও মসজিদে আসে এবং মানুষের কাঁধ ডিঙ্গানো থেকে বিরত থাকে, এরপর যে পরিমাণ ইচ্ছা রুকু (নামায আদায়) করে, এরপর ইমাম যখন বের হয় তখন থেকে তার নামায সমাপ্ত হওয়া পর্যন্ত কথা বলা থেকে বিরত থাকে, তাহলে এ জুমা থেকে আগের জুমা পর্যন্ত যা (গুনাহ) হয়েছে তার কাফফারা হয়ে যায়। (বর্ণনাকারী) বলেন, আবু হুরায়রা রা. বলতেন, এর সাথে আরো তিন দিনের (গুনাহ মাফ হয়)। আল্লাহ তাআলা নেক আমলকে দশগুণ বানিয়ে দেন।-মুসনাদে আহমদ ৩/৮১ (১১৭৬৭); সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৩৪৩ (كتاب الطهارة، باب الغسل للجمعة)
এ হাদীসের সনদ ‘হাসান’।
৫.
আবুদ দারদা রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
عن أبي الدرداء رضي الله عنه قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : من اغتسل يوم الجمعة، ثم لبسثيابه، ومَسَّ طيبا إن كان عنده، ثم مَشَى إلى الجمعة وعليه السكينة، ولم يَتَخَطَّ أحدا ولم يؤذه، رَكَعَ ما قُضِيله، ثم انتَظَر حتى ينصرف الإمام، غُفِر له ما بين الجمعتين. 

যে জুমার দিন গোসল করে, এরপর তার পোশাক পরিধান করে, তার কাছে সুগন্ধি থাকলে তা ব্যবহার করে, এরপর ধীরস্থিরভাবে জুমার দিকে যায়, কাউকে ডিঙ্গিয়ে (সামনে) যাওয়া থেকে বিরত থাকে, কাউকে কষ্ট দেয় না, তাওফীক মতো রুকু (নামায আদায়) করে, এরপর ইমাম নামায সমাপ্ত করা পর্যন্ত অপেক্ষা করে, তার দুই জুমার মাঝে যা (গুনাহ) হয়েছে তা মাফ করে দেওয়া হয়।-মুসনাদে আহমদ ৫/১৯৮ (২১৭২৯)
এই হাদীস ‘সহীহ লিগায়রিহী’
এই হাদীসগুলোতে ইমাম খুৎবার জন্য উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত যে নামায পড়তে উৎসাহিত করা হয়েছে তা তো কাবলাল জুমা (জুমার আগের) নামাযই। গোসল করে জুমার জন্য ঘর থেকে বের হল এবং ইমামের অপেক্ষায় রইল, ইত্যবসরে যে নামায পড়া হবে তা যে ‘কাবলাল জুমা’ নামায এতে কোনো সন্দেহ আছে? যারা বলেন, জুমার আগে কোনো নামায নেই, তাদের উপরোক্ত হাদীসগুলো মনে রাখা প্রয়োজন।
এখানে এই দাবির সুযোগ নেই যে, ‘‘এই হাদীসগুলোতে যে নামাযের প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে তা নফল নামায।’’ কারণ সুন্নতে কাবলিয়া (ফরজের আগে যে সুন্নত পড়া হয়) তাতে দুই ধরনের নামাযই আছে : সুন্নতে মুয়াক্কাদাও আছে, সুন্নতে গায়রে মুয়াক্কাদাও (নফল) আছে। যোহরের আগের চার রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা, আর আসরের আগের চার রাকাত সুন্নতে গায়রে মুয়াক্কাদা (নফল)। কিন্তু নফল হওয়ার কারণে কি একথা বলা যাবে যে, ‘আসরের আগে কোনো নামায নেই’?
পাঁচ.
কেউ কেউ বলেন, জুমার আগে নামায তো আছে, কিন্তু তা নফল নামায, যত রাকাত ইচ্ছা পড়বে। তাদের দাবি, ‘‘জুমার আগে ‘সুন্নতে রাতিবাহ’ (সব সময় আদায় করার মতো সুন্নত) বা সুন্নতে মুয়াক্কাদা নেই।’’ 


এঁদের সংশয়ের সূত্র বোধহয় এইখানে যে, উপরোক্ত হাদীসসমূহে তো রাকাত-সংখ্যা নির্ধারণ ছাড়াই নামায পড়তে উৎসাহিত করা হয়েছে, যার দ্বারা বোঝা যায়, এটি নফল নামায। কিন্তু তাঁরা যদি এ বিষয়ে অন্যান্য হাদীস ও আছার সামনে রাখতেন তাহলে পরিষ্কার হয়ে যেত যে, জুমার আগের নামায দুই প্রকারের : এক. নফল, যার যত রাকাত ইচ্ছা পড়তে পারে। দুই. সুন্নতে রাতিবা, যার রাকাত-সংখ্যাও নির্ধারিত এবং সে বিষয়ে তাকীদও আছে। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেও তা আদায় করা প্রমাণিত।
খাইরুল কুরূন থেকে মুসলমানদের এ আমল চলে আসছে যে, তাঁরা জুমার আগের নফল নামায ‘যাওয়ালে শামস’ বা সূর্য ঢলে যাওয়ার আগেও পড়তেন, আবার পরেও পড়তেন, কিন্তু এই চার রাকাত পড়তেন সূর্য ঢলে যাওয়ার পরে। আর এরই নাম ‘কাবলাল জুমা’ বা ‘জুমার আগের সুন্নত’।
এ বিষয়ে হাদীস ও আছার লক্ষ করুন।
প্রথমে আছার :
১.
জাবালা ইবনে সুহাইম রাহ. আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণনা করেন, ‘তিনি জুমার আগে চার রাকাত পড়তেন। মাঝে সালাম ফেরাতেন না।’
عن جَبَلة بن سُحَيْم، عن عبد الله بن عمر أنه كان يصلي قبل الجمعة أربعا لا يفصل بينهن بسلام، ثم بعدالجمعة ركعتين ثم أربعا.
-শরহু মাআনিল আছার, তহাবী পৃ. ১৬৪-১৬৫  

আল্লামা নীমাভী রাহ. ‘‘আছারুস সুনান’’ পৃ. ৩০২-এ এর সনদকে সহীহ বলেছেন। ইমাম ইবনে রজব হাম্বলী রাহ. ‘‘ফাতহুল বারী শরহু সহীহিল বুখারী’’ গ্রন্থে (৫/৫৩৯) একে প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. জুমার আগে দীর্ঘসময় নামায পড়তেন। কিন্তু উপরের বর্ণনায় চার রাকাতকে আলাদা করে এজন্যই উল্লেখ করা হয়েছে যে, তা সুন্নতে রাতিবা।
নাফে রাহ. বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. জুমার আগে দীর্ঘ সময় নামায পড়তেন (يطيل الصلاة قبل الجمعة) আর জুমার পরে ঘরে গিয়ে দুই রাকাত পড়তেন। আর বলতেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপই করতেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১১২৮, কিতাবুল জুমুআ)
ইমাম ইবনে রজব রাহ. সহীহ বুখারীর ভাষ্যগ্রন্থে এই হাদীসের আলোচনায় লেখেন-
وظاهر هذا يدل على رفع جميع ذلك إلى النبي صلى الله عليه وسلم : صلاته قبل الجمعة وبعدها في بيته، فإناسم الإشارة يتناول كل ما قبله مما قرب وبعد، صرح به غير واحد من الفقهاء والأصوليين.
وهذا فيما وضع للإشارة إلى البعيد أظهر، مثل لفظة ذلك، فإن تخصيص القريب بها دون البعيد يخالفوضعها لغة.
আহলে ইলম বুঝতে পারছেন, এখানে ইবনে রজব হাম্বলী রাহ. ঐ ব্যক্তিদের বক্তব্য খন্ডন করছেন যারা বলেছেন যে, সুনানে আবু দাউদের উপরোক্ত হাদীস দ্বারা শুধু ‘বা’দাল জুমা’ (জুমার পরের নামায) মারফূ হওয়া প্রমাণিত হয়, কাবলাল জুমা নয়। উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা ‘যাদুল মাআদ’ ও ‘ফতহুল বারী, ইবনে হাজার’-এর আলোচনার দুর্বলতা স্পষ্ট হয়ে যায়।
যাক, এ তো ছিল একটি প্রাসঙ্গিক কথা। আমি কাবলাল জুমা চার রাকাত সুন্নত সম্পর্কে আছার উল্লেখ করছিলাম। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা.-এর আছর উল্লেখ করা হয়েছে। দ্বিতীয় আছর এই-  


২.
আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রা. থেকে বর্ণিত, ‘তিনি জুমার দিন নিজ ঘরে চার রাকাত পড়তেন। এরপর মসজিদে আসতেন এবং জুমার আগে আর কোনো নামায পড়তেন না, জুমার পরেও না।’
عن ابن عباس رضي الله عنهما أنه كان يصلي يوم الجمعة في بيته أربع ركعات، ثم يأتي المسجد فلا يصليقبلها ولا بعدها.
এই আছরটি মুহাদ্দিস হার্ব ইবনে ইসমাঈল আলকিরমানী (২৮০হি.) তাঁর কিতাবে সনদসহ বর্ণনা করেছেন। ইমাম ইবনে রজব রাহ. বুখারীর ভাষ্যগ্রন্থে (৫/৫৮০) তা দলীল হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
উল্লেখ্য, এ বর্ণনায় জুমার পরে কোনো নামায না-পড়ার অর্থ হবে মসজিদে না পড়া।
৩.
সাফিয়া রাহ. বলেন, তিনি (উম্মুল মুমিনীন) সফিয়্যাহ রা.কে দেখেছেন, জুমার জন্য ইমাম আসার আগে চার রাকাত পড়েছেন। এরপর ইমামের সাথে দুই রাকাত জুমা আদায় করেছেন।
عن صافية قالت : رأيت صفية بنت حُيَيّ رضي الله عنها : صلَّت أربع ركعات قبل خروج الإمام للجمعة، ثمصلت الجمعة مع الإمام ركعتين.
তবাকাতে ইবনে সা’দ ; নসবুর রায়াহ ২/২০৭; ফাতহুল বারী, ইবনে রজব ৫/৫৩৯
নারীদের উপর জুমা ফরয নয়, তাঁরা ঘরে যোহর পড়ে থাকেন। তবে কখনো যদি জুমা পড়েন তবে ফরজ আদায় হয়ে যাবে। ঐ অবস্থায়ও তাদের জুমার আগে চার রাকাত পড়া উচিত, যেমনটা সাফিয়্যাহ রা.-এর আমল থেকে জানা গেল।  


৪.
আবু ওবায়দা রাহ. বর্ণনা করেন, (আববাজান) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. জুমার আগে চার রাকাত পড়তেন।
عن أبي عُبَيْدة، عن عبد الله قال : كان يصلي قبل الجمعة أربعا.
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা খন্ড ৪, পৃ. ১১৪ (৫৪০২)
তাবেয়ী ক্বাতাদা রাহ.ও একথাই বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. জুমার আগে চার রাকাত পড়তেন, জুমার পরেও চার রাকাত পড়তেন।
أن ابن مسعود كان يصلي قبل الجمعة أربع ركعات وبعدها أربع ركعات.
-মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক খন্ড ৩, পৃ. ২৪৭ (৫৫২৪)
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. শুধু নিজে চার রাকাত পড়তেন এমন নয়, তিনি অন্যদেরও চার রাকাত কাবলাল জুমা পড়ার আদেশ দিতেন।
তাঁর বিশিষ্ট শাগরিদ আবু আব্দুর রহমান আসসুলামী রাহ.-এর বর্ণনা : আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. আমাদেরকে জুমার আগে চার রাকাত এবং জুমার পরে চার রাকাত পড়ার আদেশ করতেন। পরে যখন আলী রা. আগমন করলেন তখন তিনি আমাদেরকে জুমার পরে প্রথমে দুই রাকাত এরপর চার রাকাত পড়ার আদেশ করেন।
كان عبد الله يأمر أن نُصَلِّي قَبْلَ الجُمْعة أربعا، وبعدها أربعا، حتى جاءنا علي فأمرنا أن نصلي بعدها ركعتينثم أربعا.
-মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক খন্ড ৩, পৃ. ২৪৭ (৫৫২৫)
নফল নামাযের বিষয়ে উৎসাহ দেওয়া যায়, আদেশ দেওয়া যায় না। আদেশ করার অর্থ, এই নামায অন্তত সুন্নতে মুয়াক্কাদা, যেমন পরের চার রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা।
এ বর্ণনার সনদ সহীহ ও মুত্তাছিল। 


এই বর্ণনায় লক্ষণীয় বিষয় এই যে, খলীফায়ে রাশিদ আলী ইবনে আবী তালিব রা. যখন কুফায় এসে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর শিক্ষা দেখলেন এবং তাঁর আদেশ সম্পর্কে অবগত হলেন তখন তিনি কাবলাল জুমার বিষয়ে কোনো পরিবর্তন করেননি, শুধু বা’দাল জুমা চার রাকাতের সাথে আরো দুই রাকাত যোগ করার আদেশ করেছেন। ফলে পরবর্তী সময়ে ইমাম আবু ইউসুফ রাহ.সহ আরো অনেক ইমামের নিকটে, জুমার পরের সুন্নত সর্বমোট ছয় রাকাত। এ থেকেও প্রমাণিত হয় খলীফায়ে রাশিদ আলী ইবনে আবী তালিব রা.-এর নিকটেও কাবলাল জুমার সুন্নত চার রাকাত।
এ শুধু উপরোক্ত চার, পাঁচজন সাহাবীরই আমল নয়, খাইরুল কুরূনে সাহাবা-তাবেয়ীনের সাধারণ আমল এটিই ছিল। দু’টি বর্ণনা লক্ষ করুন :
৫.
তাবেয়ী আমর ইবনে সায়ীদ ইবনুল আস রাহ. (৭০হি.) বলেন, ‘আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণকে দেখতাম, জুমার দিন সূর্য যখন ঢলে যেত তখন তাঁরা দাড়িয়ে যেতেন এবং চার রাকাত পড়তেন।’
كنت أرى أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم، فإذا زالت الشمس يوم الجمعة، قاموا فصلوا أربعا.
এ আছরটি ইমাম আবু বকর আল-আছরাম রাহ. (২৭৩হি.) তাঁর কিতাবে বর্ণনা করেছেন। তাঁর সূত্রে ইমাম ইবনে আব্দুল বার রাহ. ‘‘আততামহীদ’’ (খন্ড ৪, পৃ. ২৬ حديث ثامن لزيد بن أسلم)) গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন।
এই বর্ণনার সনদ নিম্নরূপ :  

قال الأثرم : حدثنا منجاب بن الحارث قال : أخبرنا خالد بن سعيد بن عمرو بن سعيد بن العاص عن أبيهقال : كنت أرى …
আহলে ইলম জানেন, এ সনদটি সহীহ। গ্রন্থকার ‘আছরাম’ তো ইমাম, ‘মিনজাব’ ছিকা রাবী, সহীহ মুসলিম ও অন্যান্য কিতাবে তাঁর সূত্রে হাদীস বর্ণিত হয়েছে। ১৩১ হিজরীতে তাঁর ইন্তিকাল। (তাহযীবুত তাহযীব খন্ড ১০, পৃ. ২৯৭-২৯৮; তাকরীবুত তাহযীব ৬৮৮২)
তাঁর উস্তাদ ‘খালিদ ইবনে সায়ীদের’ রেওয়ায়েতও সহীহ বুখারীতে আছে। ইমাম মুসলিম রাহ. মুহাম্মাদ ইবনে বিশ্র থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি তাকেالثقة الصدوق المأمون উপাধিতে ভূষিত করেছেন। (তাহযীবুত তাহযীব খন্ড ৩, পৃ. ৯৫)
তাঁর পিতা ‘আমর ইবনে সায়ীদ’ তো প্রসিদ্ধ তাবেয়ী, যিনি অনেক সাহাবীকে দেখেছেন। অনেক সাহাবীর জীবদ্দশায় ৭০ হিজরীতে তাঁর ইন্তেকাল।
এই আছরটি আবু বকর আল আছরামের উদ্ধৃতিতে ইবনে রজব রাহ. বুখারীর ভাষ্যগ্রন্থে (খন্ড ৫, পৃ. ৫৪২) উল্লেখ করেছেন। এরপর তিনি আছরাম রাহ.-এর হাওয়ালায় এই আছরও বর্ণনা করেছেন যে, ইমাম আবু বকর ইবনে আইয়াশ রাহ. বলেন, আমরা জুমায় (তাবেয়ী ইমাম) হাবীব ইবনে আবী ছাবিত (রাহ.)-এর সাথে থাকতাম। তিনি জিজ্ঞাসা করতেন, ‘সূর্য কি ঢলে গেছে?’ এরপর নিজেও দেখতেন। সূর্য ঢলার পর তিনি কাবলাল জুমা চার রাকাত নামায পড়তেন।
ইবনে রজব রাহ. ছাড়া ইবনে কুদামা হাম্বলী রাহ.ও এই আছর ‘‘আলমুগনী’’তে (খন্ড ৩, পৃ. ২৫০) উল্লেখ করেছেন। এর আরবী পাঠ এই-
فإذا زالت الشمس صَلَّى الأربع التي قبل الجمعة.
আমর ইবনে সায়ীদ রাহ.-এর বিবরণ দ্বারা সাহাবা-যুগের তা’আমুল (কর্মধারা) সামনে এল। এবার সাহাবা-যুগ ও তাবেয়ী-যুগের কর্মধারা দেখুন :
২.   

(তাবেয়ী) ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. (৯৫হি.) বলেন, ‘তাঁরা জুমার আগে চার রাকাত পড়া পছন্দ করতেন।’
قال إبراهيم النخعي : كانوا يحبون أن يصلوا قبل الجمعة أربعا.
-কিতাবুল ঈদাইন, ইবনে আবিদ দুন্য়া
ইমাম ইবনে রজব রাহ. বলেন, ‘এই আছরের সনদ সহীহ।’ এরপর তিনি ইমাম ইবনে আবী খাইছামা রাহ.-এর ‘‘কিতাবুত তারীখে’’র উদ্ধৃতিতে ইবরাহীম নাখায়ী রাহ.-এর এই বক্তব্য বর্ণনা করেছেন যে, ‘যখন আমি তোমাদেরকে كانوا يستحبون (তারা পছন্দ করতেন) বলব তাহলে তা এমন বিষয় হবে, যার উপর তাঁদের ইজমা ছিল।’ (ফাতহুল বারী খন্ড ৫, পৃ. ৫৪০)
ইবরাহীম নাখায়ী রাহ.-এর বক্তব্য থেকে জানা গেল, তিনি যখন (তাঁরা পছন্দ করতেন) শিরোনামে কোনো আমল বর্ণনা করেন তখন তা অন্তত কুফায় অবস্থানকারী সাহাবা-তাবেয়ীন (যাদের সংখ্যা ছিল কয়েক হাজার)-এর সর্বসম্মত কর্মধারা হবে। তো সে যুগের এই সাধারণ কর্মধারা ইবরাহীম নাখায়ী রাহ.-এর সূত্রে ইমাম ইবনে আবী শাইবা রাহ.ও তাঁর ‘‘আলমুসান্নাফ’’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। (দ্র. আলমুসান্নাফ খন্ড, ৪, পৃ. ১১৫-১১৬; ৫৪০৫)
সাহাবা-তাবেয়ীনের এই সাধারণ কর্মধারা প্রমাণ করে, জুমার আগে নফল নামাযের রাকাত-সংখ্যা যদিও নির্ধারিত নয়, প্রত্যেকে নিজ নিজ ইচ্ছা ও অভিরুচি অনুযায়ী পড়বে। তবে এসময় চার রাকাত নামাযের বিশেষ গুরুত্ব ছিল। আর তা পড়া হত সূর্য ঢলে যাওয়ার পর দ্বিতীয় আযানের আগে।
আর আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর ঐ চার রাকাতের আদেশ দেওয়া এবং খলীফায়ে রাশেদের তাঁর সাথে একমত থাকা, বলাই বাহুল্য, নিছক ইজতিহাদের ভিত্তিতে হতে পারে না। এ কারণে তাঁর এই হুকুম ‘‘মারফূ হুকমী’’ হাদীসের অন্তর্ভুক্ত।
যারা দাবি করেন কোনো হাদীসেই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জুমার আগে নামায পড়া প্রমাণিত নয়-না ঘরে, না মসজিদে, তাদের দাবি সত্য নয়। যদি তা সত্যও হত তবুও উপরোক্ত আছর, সাহাবা-তাবেয়ীনের ব্যাপক রীতি এবং উপরে উল্লেখিত ‘মারফূ হুকমী’ একথা প্রমাণে যথেষ্ট হত যে, জুমার আগে চার রাকাত সুন্নতে রাতিবা (মুয়াক্কাদাহ) রয়েছে।  

ক্বাবলাল জুমআ সুন্নত সম্পর্কে স্পষ্ট মারফূ হাদীস
এ বিষয়ে সুনানে ইবনে মাজাহর একটি হাদীসই তালিবানে ইলমের হাতের কাছে থাকায় শুধু এ হাদীসটির কথাই সাধারণত বলা হয়। আর এর সনদ অতি দুর্বল হওয়ায় বলে দেওয়া হয়, ‘এ বিষয়ে যে মারফূ হাদীসটি আছে তার সনদ অতি দুর্বল। সেটি ছাড়া আর কোনো মারফূ হাদীস নেই।’ এই ধারণা ঠিক নয়। জুমার আগে নামায পড়া আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনেক দলীল দ্বারা প্রমাণিত। এ বিষয়টিই নিবেদন করার ইচ্ছা রাখি। অনুরোধ করি, ধৈর্যের সাথে পুরো আলোচনাটি পাঠ করার।
সুনানে ইবনে মাজায় (কিতাবুল জুমা, বাবুস সালাহ কাবলাল জুমা-র অধীনে) হাদীসটি বর্ণনা করা হয়েছে :
عن بقية، عن مبشر بن عبيد، عن حجاج بن أرطاة، عن عطية العوفي، عن ابن عباس قال كان النبي صلىالله عليه وسلم يركع قبل الجمعة أربعا لا يفصل في شيء منهن.
বাকিয়্যাহ মুবাশশির ইবনে উবাইদ থেকে, তিনি হাজ্জাজ ইবনে আরতাত থেকে, তিনি আতিয়্যা আল আওফী থেকে, তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রা. থেকে বর্ণনা করেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমার আগে চার রাকাত পড়তেন। মাঝে (সালামের দ্বারা) আলাদা করতেন না, (অর্থাৎ আত্তাহিয়্যাতু পড়ে তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে যেতেন)।’-সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ১১২৯
সনদের যে অংশ উল্লেখিত হয়েছে তাতেই ‘আসমাউর রিজাল’-বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা বুঝতে পেরেছেন, এই সনদ অতি দুর্বল, বিশেষত মুবাশশির ইবনে উবাইদ তো এমন রাবী, যার সত্যবাদিতাই সংশয়পূর্ণ। সুতরাং এই সনদ যে নির্ভরযোগ্য নয় তাতে আর সন্দেহ কি। ব্যাস, এখান থেকেই প্রসিদ্ধ করে দেওয়া হল যে, এ বিষয়ে একমাত্র হাদীস ইবনে মাজার হাদীসটি, আর তা অতি দুর্বল। 

‘‘ইলাউস সুনানে’’ ‘‘মাজমাউয যাওয়াইদ’’ এর বক্তব্য থেকে অনুমান করা হয়েছিল যে, এ হাদীস তবারানীতে যে সনদে বর্ণিত হয়েছে তাতে বোধ হয়, মুবাশশির ইবনে উবাইদ নেই, সুতরাং ঐ সনদ নির্ভরযোগ্য হতে পারে। কিন্তু এই অনুমান সঠিক প্রমাণিত হয়নি। তবারানীর ‘‘আলমু’জামুল কাবীরে’’ এই রেওয়াতের সনদ সেটিই যা ইবনে মাজার সনদ। এতে মুবাশশির ইবনে উবাইদ আছে। আর এটা নসবুর রায়া (খন্ড ২, পৃ. ২০৬) থেকেও বোঝা যায়। যাহোক, এতে এই ধারণা আরো প্রবল হয়ে গেল যে, এ বিষয়ে কোনো সহীহ মারফূ হাদীস নেই!
আগেই বলেছি, এই ধারণা সঠিক নয়। আর তা সঠিক নয় কয়েক কারণে। এক. কয়েকজন হাফিযুল হাদীস স্পষ্টভাষায় বলেছেন, হাদীসটি ইবনে মাজা যে সনদে বর্ণনা করেছেন তা জয়ীফ বটে, কিন্তু ইমাম আবুল হাসান আল খিলায়ী রাহ. (৪৯২ হি.) ‘‘আল ফাওয়াইদ’’ কিতাবে তা নির্ভরযোগ্য সনদে বর্ণনা করেছেন। সনদের শেষ অংশ তাঁরা উল্লেখও করেছেন। হাফেয আবু যুরআ ইরাকী (৮২৬ হিজরী) তরহুত তাছরীব গ্রন্থে ( খ. ৩, পৃ. ৩৬) লেখেন-
والمتن المذكور رواه أبو الحسن الخِلَعي في فوائده بإسناد جيد من طريق أبي إسحاق عن عاصم بن ضمرة عنعلي رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم.
সুতরাং এ বিষয়ের প্রথম মারফূ হাদীস যার সনদ নির্ভরযোগ্য তা এই-
১. আবু ইসহাক আস সাবীয়ী আসিম ইবনে দমরা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি আলী রা. থেকে, যে, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমার আগে চার রাকাত পড়তেন।’ (আল-ফাওয়াইদ, আবুল হাসান আল খিলায়ী-তরহুত তাছরীব খ ৩, পৃ. ৩৬)
একাধিক হাদীসবিশারদ ‘‘আল ফাওয়াইদ’’-এর উদ্ধৃতিতে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং সনদ নির্ভরযোগ্য বলেছেন। যেমন :
ক. হাফিয যাইনুদ্দীন ইরাকী (৮০৬ হি.) (দ্র. ফয়যুল কাদীর)
খ. হাফিয আবু যুরআ ইরাকী (৮২৬ হি.) (দ্র. তরহুত তাছরীব ৩/৩৬)
গ. হাফিয শিহাবুদ্দীন আল বূসীরী (৮৪০ হি.) (দ্র. মিসবাহুয যুজাজাহ ফী যাওয়াইদি ইবনে মাজাহ খ. ১, পৃ. ১৩৬)  


ঘ. মুহাদ্দিস আব্দুর রউফ আল
মুনাভী (১০৩১ হি.) (দ্র. ফয়জুল কাদীর খ. ৫ পৃ. ২১৬)
ঙ. মুহাদ্দিস মুরতাজা যাবিদী (১২০৫ হি.) (দ্র. ইতহাফুস সাদাতিল মুত্তাকীন ফি শরহি ইহইয়াই উলূমিদ্দীন খ. ৩, পৃ. ২৭৫)
সনদের শেষ অংশ তো তাঁরা উল্লেখ করেই দিয়েছেন, যা কমসে কম ‘হাসান’ পর্যায়ের। আর আবুল হাসান আল খিলায়ী থেকে আবু ইসহাক আস সাবীয়ী পর্যন্ত সনদের যে অংশ তা উল্লেখ না করলেও তাঁরা একবাক্যে বলেছেন, তা ‘জাইয়েদ সনদ’ যার শাব্দিক অর্থ উত্তম সনদ। আর উসূলে হাদীসের পরিভাষায় ‘জাইয়েদ সনদ’ কে ‘হাসান’-এর উপরে গণ্য করা হয়। (তাদরীবুর রাবী খ. ১ পৃ. ১৭৮)
আবুল হাসান আল খিলায়ীর সনদের সমর্থন ঐ রেওয়ায়েত দ্বারাও হয়, যা তবারানী ‘‘আলমুজামুল আওসাত’’ কিতাবে এবং আবু সায়ীদ ইবনুল আরাবী তাঁর ‘‘আলমু’জাম’’ কিতাবে বর্ণনা করেছেন। বর্ণনাটি এই-
محمد بن عبد الرحمن السَّهْمي، حدثنا حُصَيْن بن عبد الرحمن السُّلَمِي، عن أبي إسحاق، عن عاصم بنضَمْرة، عن علي قال : كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يصلي قبل الجمعة أربعا، وبعدها أربعا، يجعلالتسليمَ في آخرهن.
২.
মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুর রহমান আসসাহমী বর্ণনা করেন, আমাদেরকে হুসাইন ইবনে আব্দুর রহমান আসসুলামী বর্ণনা করেছেন, তিনি আবু ইসহাক (সাবীয়ী) থেকে, তিনি আসিম ইবনে দমরা থেকে, তিনি আলী রা. থেকে, যে ‘‘আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমার আগে চার রাকাত এবং জুমার পরে চার রাকাত পড়তেন এবং সর্বশেষ রাকাতে সালাম ফেরাতেন।’’-আলমুজামুল আওসাত, তবারানী খ. ২, পৃ. ৩৬৮ আলমু’জাম আবু সায়ীদ ইবনুল আরাবী-লিসানুল মীযান খ. ৭, পৃ. ২৭৮, ৫ : ২৪২)  


সনদের মান : সনদের সকল রাবী পরিচিত ও প্রসিদ্ধ এবং উত্তম স্মৃতিশক্তির অধিকারী ও নির্ভরযোগ্য। সামান্য আপত্তি শুধু আছে মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুর রহমান আস-সাহমী সম্পর্কে। তাঁর ব্যাপারে ইমাম আবু হাতিম বলেছেন ليسبالمشهور অর্থাৎ ‘তিনি তেমন প্রসিদ্ধ রাবী নন’। হযরতুল ইমামের এ উক্তি লিসানুল মীযানে এভাবেই আছে। তবে ইবনে আবী হাতিম এর কিতাব ‘‘আলজরহু ওয়াত তা’দীলে’’ (খ. ৩ কিসত : ২ পৃ. ৩২৬) লেখা আছে ليسبمشهور যার অর্থ : ‘তিনি প্রসিদ্ধ নন’। যা হোক, লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে আবু হাতিম রাহ. তাuঁক ‘মাজহূল’ (অপরিচিত) বলেননি। এদিকে ইমাম ইবনে আদী রাহ. ‘‘আল-কামিল’’ কিতাবে (খ. ৬, পৃ. ১৯১-১৯২) তাঁর বর্ণনাসমূহ পরীক্ষা করার পর নিম্নোক্ত ভাষায় তার সিদ্ধান্ত প্রকাশ করেছেন-
وهو عندي لا بأس به.
অর্থাৎ ‘আমার কাছে এই রাবীর মাঝে অসুবিধার কিছু নেই।’
আহলে ইলমের জানা আছে, হাদীস-বিশারদ ইমামগণ এ ধরনের মন্তব্য সাধারণত ঐ সকল রাবী সম্পর্কে করেন যাদের রেওয়ায়েত ‘হাসান’ পর্যায়ের হয়।
এদিকে ইমাম ইবনে হিববান তাঁকে ‘‘কিতাবুছ ছিকাত’’ (খ. ৯, পৃ. ৭২)-এ অন্তর্ভুক্ত করেছেন, যার অর্থ, তিনি তাঁর নিকটে ‘ছিকা’ রাবীদের মধ্যে গণ্য।
‘‘লিসানুল মীযান’’ কিতাবে অবশ্য ইবনে আবী হাতিমের উদ্ধৃতিতে ইয়াহইয়া ইবনে মায়ীন থেকে বর্ণনা করা হয়েছে যে, তিনি এই রাবীকে ‘জয়ীফ’ বলেছেন, কিন্তু ইবনে আবী হাতিমের ‘কিতাবুল জরহি ওয়াত তা’দীলে (খ. ৩, কিসত : ২, পৃ. ৩২৬) এই বক্তব্য আমরা পাইনি, তদ্রূপ ‘‘তারীখে ইয়াহইয়া ইবনে মায়ীনে’’ও না। একারণে এই উদ্ধৃতিটি সংশয়পূর্ণ।   

এই রাবী সম্পর্কে ন্যায়সংগত সিদ্ধান্ত সেটিই যা ইবনে আদী রাহ. বলেছেন। এ কারণে আলোচিত হাদীসটি সনদের বিচারে তো ‘হাসান’ পর্যায়ের, কিন্তু এর মতন (বক্তব্য) সাহাবা-তাবেয়ীন যুগে ব্যাপকভাবে বরিত ও অনুসৃত (মুতালাক্কা বিলকবূল) ছিল, যা প্রবন্ধের শুরুতে উল্লেখিত আছার ও তাআমূল (কর্মধারার) বিবরণ থেকে সম্পূর্ণ স্পষ্ট হয়েছে। ঐখানে বলা হয়েছিল, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. জুমার আগে চার রাকাত পড়ার যে আদেশ করেছিলেন, আলী রা. তা বহাল রেখেছিলেন। বলাবাহুল্য, এর কারণ
এ-ই হবে যে, তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এরূপই করতে দেখেছেন। যার বিবরণ তাঁর বর্ণনাকৃত হাদীসে এসেছে।
৩.
মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুর রহমান আস-সাহমীর এ বর্ণনার সমর্থন আলী রা.-এর ঐ প্রসিদ্ধ হাদীস দ্বারাও হয়, যা সুন্নত ও নফল সম্পর্কে খুবই প্রসিদ্ধ এবং ‘সুনান’ ও ‘মাসানীদ’ গ্রন্থসমূহে বিভিন্ন সনদে বর্ণিত।
আসিম ইবনে দমরা বলেন-
أتينا عليا، فقلنا : يا أمير المؤمنين ألا تحدثنا عن صلاة النبي صلى الله عليه وسلم بالنهار تطوعا؟ فقال : منيطيق ذلك منكم؟ قلنا نأخذ منه ما أطقنا.
আমরা আলী রা. এর কাছে এলাম এবং আরজ করলাম, আমীরুল মু’মিনীন! আপনি কি আমাদেরকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ‘সালাতুত তাতাওউ’ (সুন্নত ও নফল নামাযসমূহের) বিষয়ে অবগত করবেন না? তিনি বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে কে তার (অনুসরণের) হিম্মত রাখে? আরজ করলাম, ‘আমরা সাধ্যমতো আমল করব।’
এরপর আলী রা. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিবসের সুন্নত ও নফল নামাযের বিবরণ দিলেন। প্রথমে ফজরের পর সূর্য মাথার উপর আসার আগ পর্যন্ত দুই নামাযের কথা বললেন : দুই রাকাত এবং চার রাকাত (অর্থাৎ ইশরাকের দুই রাকাত ও চাশতের চার রাকাত)
এর পর বলেন-  


ثم أمهل فإذا زالت الشمس قام فصلى أربعا، ثم صلى بعد الظهر ركعتين، ويصلي قبل العصر أربعا، يفصلبين كل ركعتين بتسليم على الملائكة المقربين ومن اتبعهم من المؤمنين والمسلمين، فتلك ست عشرة ركعة.
‘এরপর তিনি নামায পড়া থেকে বিরত থাকতেন। যখন সূর্য ঢলে যেত তখন দাঁড়াতেন ও চার রাকাত পড়তেন। এরপর যোহরের পর দুই রাকাত পড়তেন, আসরের আগে চার রাকাত পড়তেন। প্রতি দুই রাকাতকে তাশাহহুদ দ্বারা আলাদা করতেন। এ হল সর্বমোট ষোল রাকাত। (আল-আহাদীসুল মুখতারা, যিয়াউদ্দীন আলমাকদেসী খ. ১, পৃ. ১৪২-১৪৩ হাদীস : ৫১৪)
সুনানে ইবনে মাজায় (হাদীস : ১১৬১) এই হাদীসের শেষে আছে-
قال علي فتلك ست عشرة ركعة، تطوع رسول الله صلى الله عليه وسلم بالنهار، وقل من يداوم عليها. قالوكيع : زاد فيه أبي : فقال حبيب بن أبي ثابت : يا أبا إسحاق! ما أحب أن لي بحديثك هذا مِلْءَ مسجدكهذا ذهبا.
অর্থাৎ, আলী রা. বললেন, ‘এ হচ্ছে সর্বমোট ষোল রাকাত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিনের তাতাওউ (নফল ও সুন্নত) নামায। খুব অল্প সংখ্যক মানুষই তা নিয়মিত আদায় করে।’
রাবী বলেন, এই হাদীস বর্ণনা করার পর (উপস্থিত ব্যক্তিবর্গের মধ্যে থেকে ইমাম) হাবীব ইবনে আবী ছাবিত বলে উঠলেন, ‘আবু ইসহাক! আপনার বর্ণিত এই হাদীসের বিনিময়ে তো আপনার এই মসজিদ ভরে যায় এই পরিমাণ স্বর্ণের মালিক হওয়াও আমি পছন্দ করব না!
এ হাদীসে সূর্য ঢলে যাওয়ার পর যে চার রাকাতের কথা এসেছে, খুব সহজেই বোঝা যায়, সপ্তাহের ছয়দিন তা যোহরের আগের সুন্নত আর জুমার দিন জুমার আগের সুন্নত। কিন্তু অধিকাংশ দিনে তা যেহেতু ‘কাবলায যোহর’ আর জুমাও হচ্ছে যোহরেরই স্থলাভিষিক্ত তাই এ চার রাকাতকে অন্যান্য বর্ণনায় এভাবে বলা হয়েছে-   

وأربعا قبل الظهر إذا زالت الشمس
(এবং জোহরের আগে চার রাকাত, যখন সূর্য ঢলে যায়) এবং এভাবে-
ويصلي قبل الظهر أربعا.
(এবং যোহরের আগে চার রাকাত পড়তেন)
এই বর্ণনাগুলোতে ‘যোহর’ শব্দ ব্যবহৃত হওয়ায় অনেকে মনে করেছেন, এই চার রাকাত শুধু ‘যোহরের নামাযে’র আগে পড়তে হবে, কারণ এই হাদীসে তো ‘কাবলায যোহর’ বলা হয়েছে, ‘কাবলাল জুমা নয়!’ বলাবাহুল্য, এটা অগভীর চিন্তার ফল। কারণ,এখানে ঐ সকল সুন্নত ও নফল নামাযের আলোচনা হচ্ছে, যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিনে আদায় করতেন। জুমার দিনও তো দিনই বটে, রাত তো নয়। তাহলে এই ‘দিন’ সূর্য ঢলে যাওয়ার পর চার রাকাত নামায কেন হবে না? এ বিষয়ে জুমার দিনের নিয়ম যদি আলাদা হত তাহলে আলী রা. তা বলতেন। বলেননি যখন বোঝা গেল যে, জুমার দিনেও এ নামায পড়া হত। জুমার দিন কি ইশরাক, চাশত ও আসরের আগের সুন্নতসমূহ নেই? তাহলে সূর্য ঢলে যাওয়ার পরের এই চার রাকাত কেন থাকবে না? এটিও তো ‘আন নাহার’ (দিবস) শব্দের অন্তর্ভুক্ত।
৪.
আব্দুল্লাহ ইবনুস সাইব রা. বর্ণনা করেছেন-   

أن رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يصلي أربعا بعد أن تزول الشمس، قبل الظهر، وقال : إنها ساعةتُفْتَح فيها أبواب السماء، فأحب أن يصعد لي فيها عمل صالح.
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য ঢলার পর যোহরের আগে চার রাকাত নামায পড়তেন। এবং বললেন ‘এই সময় (সূর্য ঢলার পর) আসমানের দরজাসমূহ খোলা হয়। আমি চাই, এ সময় আমার কোনো নেক আমল ওপরে যাক।-আশ শামাইলুল মুহাম্মাদিয়্যাহ, তিরমিযী, হাদীস : ২৯৫; জামে তিরমিযী, হাদীস : ৪৮২; মুসনাদে আহমদ খ. ৬, পৃ. ৪১১, হাদীস : ১৫৩৯৬
ইমাম তিরমিযীর মতে, হাদীসটি ‘হাসান’।
এ হাদীসে সূর্য ঢলার পর চার রাকাত নামাযের কথা এসেছে। এটিই জুমার দিন ‘কাবলাল জুমা’, অন্যান্য দিন ‘কাবলায যোহর’। যেহেতু ছয়দিন তা কাবলায যোহর তাই একে বলা হয়েছে ‘কাবলায যোহর’। নতুবা এ নামাযের যে হিকমত বর্ণনা করা হয়েছে (অর্থাৎ সূর্য ঢলার সময় আসমানের দরজা খোলা হয়, এ কারণে এ সময় কোনো নেক আমল পাঠানো উচিৎ’) তা তো জুমার দিনেও আছে। জুমার দিনও তো সূর্য ঢলে এবং আসমানের দরজা খোলে। সুতরাং ঐ দিন চার রাকাত রহিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। পরবর্তী হাদীস থেকে বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়।
৫.  
আবু আইয়ুব আনসারী রা. থেকে বর্ণিত-
أن النبي صلى الله عليه وسلم كان يدمن أربع ركعات عند زوال الشمس، فقلت : يا رسول الله إنك تُدْمِنهذه الأربع ركعات عند زوال الشمس، فقال : إن أبواب السماء تفتح عند زوال الشمس. فلا ترتج حتىيُصَلي الظهر، فأحب أن يصعد لي في تلك الساعة خير؟ قلت : أفي كلهن قراءة؟ قال : نعم، قلت : هلفيهن تسليم فاصل؟ قال : لا.
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাললাম সর্বদা সূর্য ঢলার পর চার রাকাত নামায পড়তেন। আমি আরজ করলাম, আল্লাহর রাসূল! আপনি সর্বদা সূর্য ঢললে চার রাকাত নামায পড়েন (এর তাৎপর্য কী?) ইরশাদ করলেন, সূর্য ঢলার পর আসমানের দরজা খোলা হয়, এরপর যোহর পড়া পর্যন্ত বন্ধ করা হয় না। আমি চাই, ঐ সময় আমার কোনো নেক আমল ওপরে যাক। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘প্রতি রাকাতে কি কুরআন পড়তে হবে?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ’। বললাম, এর মাঝে কি সালাম ফিরাতে হবে? তিনি বললেন, ‘না’।-আশ শামাইলুল মুহাম্মাদিয়্যাহ, তিরমিযী, হাদীস : ২৯৩; মুসনাদে আহমদ ২৩৫৩২
এ হাদীস বিভিন্ন সনদে মুসনাদে আহমদ সহ বিভিন্ন কিতাবে বর্ণিত হয়েছে। এর সনদগত মান কমসে কম ‘হাসান লিগায়রিহী’। (দ্র. টীকা, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা খ. ৪, পৃ. ২৭৩, (৫৯৯২); পৃ. ১১৫ (৫৪০৫) শায়েখ মুহাম্মাদ আওয়ামা। শায়খ শুআইব আরনাউত তো মুসনাদে আহমদের টীকায় (হাদীস ২৩৫৫১) একে ‘সহীহ লিগায়রিহী’ বলেছেন।
এই হাদীস থেকে জানা গেল, সূর্য ঢলার পর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বদা (কোনো দিন বাদ দেওয়া ছাড়া) চার রাকাত পড়তেন। বোঝা গেল, জুমার দিনও পড়তেন, নতুবা সর্বদা পড়া হয় না। তাছাড়া এ চার রাকাতের যে কারণ বর্ণনা করা হয়েছে তা জুমার দিনেও রয়েছে।
আর এ বর্ণনার ‘যোহর পড়া পর্যন্ত আসমানের দরজা বন্ধ করা হয় না, কথাটির অর্থ ‘দুপুরের ফরয পড়া
পর্যন্ত’। যেমনটি মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবার (খ. ৪ পৃ. ২৭৩, হাদীস : ৫৯৯২) বর্ণনায় আছে। ঐ বর্ণনার আরবী পাঠ এই  

إن أبواب الجنة تفتح عند زوال الشمس فلا ترتج حتى تقام الصلاة، فأحب أن أقدم.
অর্থাৎ, সূর্য ঢলে গেলে জান্নাতের দরজা খোলা হয় এরপর নামায কায়েম হওয়া পর্যন্ত বন্ধ করা হয় না। একারণে আমি চাই, কিছু পাঠাতে।
এই নামায জুমার দিন জুমা, বাকি ছয় দিন জোহর।
এখানে আরো একটি বিষয় পরিষ্কার করে দিতে চাই। সূর্য ঢলে যাওয়ার পরের চার রাকাত সম্পর্কে কেউ কেউ এই সম্ভাবনাও বের করেছেন যে, হতে পারে, এটি সূর্য ঢলার পরের আলাদা একটি নামায। এ কথা সঠিক বলে মেনে নিলেও তো মূল বিষয় অর্থাৎ জুমার দিনও জুমার আগে সূর্য ঢলার পর চার রাকাত পড়া উচিৎ। কারণ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই আমল করতেন ও এর ফযীলত ও তাৎপর্যও বয়ান করতেন। এখন এই নামাযের নাম কী রাখা হবে-কাবলাল জুমা নামায, না সূর্য ঢলার পরের নামায তা আপনার ইচ্ছা। কিন্তু এই দাবির অধিকার তো কারো নেই যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমার দিন জুমার আগে কোনো নামাযই পড়তেন না।
আলোচনা দীর্ঘ হয়ে গেল, তবু কিছু কথা বলা হল না। তবে যা কিছু আরজ করা হল, আশা করি এতে বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে। অর্থাৎ, জুমার আগে যে পরিমাণ ইচ্ছা নফল পড়ুন, তা ছওয়াবের কাজ। তবে কমসে কম চার রাকাত তো অবশ্যই পড়া চাই। কারণ তার আলাদা গুরুত্ব আছে। এর গুরুত্ব ও তাকিদ হাদীস ও আছার দ্বারা প্রমাণিত এবং সাহাবা-তাবেয়ীন যুগে তা ব্যাপকভাবে পড়া হতো। সুতরাং কোনো অপযুক্তি-অপব্যাখ্যার শিকার হয়ে তা পরিত্যাগ ও অস্বীকার করা হবে খুবই দুঃখজনক ভুল।
শোনা যায়, কোনো কোনো মহল থেকে এ সুন্নতের উপর এভাবে প্রশ্ন তোলা হয় যে, আল্লাহর রাসূলের যুগে তো সূর্য ঢলার পরই জুমা শুরু হত। সুতরাং তখন সুন্নত পড়ার সময়ই ছিল না। সূর্য ঢলার আগে হচ্ছে মাকরূহ ওয়াক্ত । আর তার আগে তো জুমার ওয়াক্তই হয়নি। তাহলে ঐ সময় কোনো নামায পড়া হলে তা ‘কাবলাল জুমা’ কীভাবে হবে?   

এই কুট প্রশ্নের জবাবে এখন শুধু দুটি কথা নিবেদন করছি :
১.
কোনো হাদীসে এ কথা আছে যে, নবী-যুগে সূর্য ঢলার সঙ্গে সঙ্গেই জুমা শুরু হয়ে যেত, এমনকি চার রাকাত সুন্নত পড়ারও সুযোগ পাওয়া যেত না? আমাদের জানামতে এমন কথা কোনো হাদীসে নেই।
২.
যারা কাবলাল জুমা সুন্নত অস্বীকার করেন তারা একথাও বলেন যে, সূর্য ঢলার আগেও জুমার নামায পড়া যায়। তা-ই যদি হয় তবে চার রাকাত সুন্নত সূর্য ঢলার আগে পড়লে ‘কাবলাল জুমা’ কেন হবে না? বরং তাদের অনেকে তো বলে, জুমার দিন দুপুরে কোনো মাকরূহ ওয়াক্ত নেই। তাহলে এদের তো একথা উচ্চারণ করারই অধিকার নেই যে, নবী যুগে জুমার আগে সুন্নত পড়ার সময়ই পাওয়া যেত না!
আর উপরে উল্লেখিত হাদীস ও আছার থাকা অবস্থায় এ জাতীয় কথা বার্তার কোনো অবকাশ থাকে কি? আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন এবং উম্মতের চরম দুর্দশার সময় তাদের প্রতি মমতাশীল হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন।
উল্লেখ্য, কাবলাল জুমা সুন্নত শুধু হানাফী মাযহাবের সিদ্ধান্ত নয়। এমনটা হলেও কোনো অসুবিধা ছিল না। কারণ দলীলভিত্তিক সিদ্ধান্ত যে মাযহাবেরই হোক, দলীল-মান্যতার খাতিরেই তা গ্রহণ করা জরুরি। কোনো মুজতাহিদ যদি অন্য দলীলের কারণে ঐ সিদ্ধান্তের সাথে দ্বিমত করেন তবুও তাঁর সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা জরুরি। কিন্তু এখানে
বাস্তবতা এই যে, কাবলাল জুমা নামায ‘সুন্নতে রাতিবা’ ও মুয়াক্কাদা হওয়াই অধিকাংশ ইমামের মাযহাব আর সেটাই দলীলেরও দাবি।
ইমাম ইবনে রজব রাহ. লিখেছেন, ‘এ বিষয়ে ইজমা আছে যে, জুমার আগে সূর্য ঢলার পর নামায পড়া একটি উত্তম আমল।’ মতপার্থক্য শুধু এখানে যে, ঐ নামায জোহরের আগের সুন্নতের মতো সুন্নতে রাতিবা, না আসরের আগের নামাযের মতো মুস্তাহাব। অধিকাংশ ইমামের মতে তা সুন্নতে রাতিবা। আওযায়ী, সুফিয়ান ছাওরী, আবু হানীফা ও তাঁর সঙ্গীদের সিদ্ধান্ত এটাই। ইমাম আহমদ রাহ.-এর বক্তব্য থেকেও তা-ই প্রকাশিত। তবে শাফেয়ী মাযহাবের পরবর্তী অনেক ফকীহ বলেছেন, তা মুস্তাহাব, সুন্নতে রাতিবা নয়।-ফাতহুল বারী, ইবনে রজব, খ. ৫, পৃ. ৫৪১, ৫৪২-৫৪৩   


সুতরাং দলীলের কথা বললেও ‘সুন্নতে রাতিবা’র সিদ্ধান্তই অগ্রগণ্য। আর জুমহূর ও অধিকাংশ মনীষীর সিদ্ধান্তের কথা বললে তাঁদের সিদ্ধান্তও এটিই। 

বিঃদ্রঃ------------------=============================--------------------------------========


আজকাল আহলে হাদিসদের নিয়ন্ত্রিত মসজিদ গুলোতে  মসজিদে প্রবেশের পর দুই রাকাত  {-মুস্তাহাব } নামাজ পডার গুরুত্ব এমন ভাবে প্রচার করে থাকেন , যার ফলে অনেক মুসল্লিগন শুধু ঐ দুই রাকাতই পডেন গুরুত্ব সহকারে , কিন্তু সুন্নতে রাবেতাকে তারা  ছাডতে বসেছেন । মুস্তাহাব  কে  গুরুত্ব দিতে গিয়ে সুন্নতে মুয়াক্কাদা বা গায়রে মোয়াক্কাদাহ  তরক করা  কোন প্রকারেই উচিত নয় ।  তবে ২ রাকাত দুখুলুল মসজিদ পডার পর পর সুন্নতে মুয়াক্কাদা বা গায়রে মোয়াক্কাদাহ পডার ও গুরুত্ব বর্ননা করতে হবে , এবং পডতে হবে 



 এম এম আবদুল্লাহ ভুঁইয়া
কাটাছরা , মিরসরাই , চট্টগ্রাম
মক্কা , সৌদি    প্রবাসী