Translate

বৃহস্পতিবার, ১৮ জুলাই, ২০১৯

নাস্তিক্যবাদে কেন দাবীত হয় কারণ ও প্রতিকার

            নাস্তিক্যবাদের কারণ ও প্রতিকার

             এম এম আবদুল্লাহ ভূঁইয়া

আজকাল আমাদের নাগরীক জীবনে নৈতীক শিক্ষার অভাবের কারণে শিক্ষা ব্যবস্হায় ধস নামার ফলে যত্রতত্র নাস্তিক্যবাদের দৌরাত্ব্য লক্ষ করা যাচ্ছে।এতে করে আমাদের সামাজীক জীবনে যেমন বিশ্রিঙ্খলা তৈরী হচ্ছে তেমনি ভাবে নতুন প্রজন্মের মনে বিভ্রান্তির দানা বাঁধছে।আজকাল ইন্টারনেট,ফেইজবুক,ব্লগও ইউটোব সহ নানান সামাজীক যোগাযোগের মাধ্যমে নাস্তিক্যবাদিরা ইসলামের বিরুদ্ধে অঘোষিত যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে অসত্য বানোয়াট কূরুচিপূর্ণ কথাবার্তা বলে বিভিন্ন অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে।তারা ইসলাম, মুসলমান ,নবী-রসুল,ছাহাবায়ে কেরাম,এমন কি ইসলামের বিধিবিধান সহ স্বয়ং মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালাকে নিয়েও তারা কটুক্তি করতে কুন্ঠবোধ করেনি।

আজকে যুবসমাজ নাস্তিক্যবাদের দিকে কেন ধাবীত হচ্ছে তার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে আলোকপাত করবো ?নাস্তিক্যবাদে ধাবীত হওয়ার পিছনে ৮টি কারণ চিহ্নিত করেছেন  বিশেষজ্ঞগন।

১ম:- পৃথিবীতে বর্তমানে প্রায় ৪২০টির মত ধর্ম প্রচলীত আছে আমরা সকল ধর্মকে শ্রদ্ধা করি,আপনি নিজের জ্ঞান বুদ্ধি গবেষনা দিয়ে সত্যকে গ্রহন করবেন এটাই বাস্তব,কিন্তু আল্লাহর কাছে একমাত্র মনোনীত সর্বশ্রেষ্ঠ ও শেষ ধর্মই হল ইসলাম।ইসলাম ছাড়া কোন ধর্মই বর্তমানে আল্লাহর নিকট গ্রহন যোগ্য নয়।আল কোরআন: যাই হউক আপনি যে কোন ধর্মেরই অনূসারী হউননা কেন যদি পারিবারিক ভাবে সন্তানদেরকে ছোট বেলা থেকেই ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত না করেন তাহলে কোন একসময় এসন্তান নাস্তিক্যবাদের দিকে ধাবীত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ।এই জন্যই অবিভাবককেই সন্তানদের প্রাথমীক ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্হা করতে হবে।এ ক্ষেত্রে বড় আলেম মুফতি মোহাদ্দেস হওয়া জরুরী নয় বরং যে পরিমান এলেম অর্জনের দ্বারায় হারাম হালাল ও জরুরীয়াতে দ্বীন ও আল্লাহ ও তাঁর রসুলকে চিনতে পারে ততটুকুই যথেষ্ট। রসুল সাঃ বলেন প্রতিটি মানব সন্তানই ফিতরতে ইসলামের উপরই জন্ম গ্রহন করে থাকে কিন্তু তাঁর মাতা-পিতাই তাকে ইহুদী-খুষ্টান বা মূর্তিপুজক বানায়।অর্থাৎ জন্ম সূত্রে প্রত্যেক শিশু ইসলামের উপর জন্ম গ্রহন করলেও মাতা-পিতার কারণে সে হিন্দু-মুসলিম ইহুদী-খৃষ্টান ও নাস্তিক হিসাবে গডে উঠে।

২য়:-পারিবারীক ভাবে ধর্মীয় অনূশাসন মেনে না চললেও ঐ সন্তান-সন্ততি কোন এক সময় নাস্তিক্যবাদের দিকে ধাবীত হতে পারে অথবা নাস্তিক্যবাদকে সমর্থন দিতে পারে।ফলশ্রুতিতে ধীরে ধীরে সে নিজেও নাস্তিক্যবাদের দিকে ধাবীত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ।এজন্য অভিবাবকদের করনীয় পারিবারীক ভাবে যত টুকু সম্ভব ধর্মীয় অনূশাসন মেনে চলা। বিজাতীয় অশ্লীল কালসার থেকে পরিবারকে মূক্ত রাখা।

৩য়:-স্কুল-কলেজ ওবিশ্ববিদ্যালয়ে নাস্তিক্যবাদিদের লেখা পাঠ্যবই পাঠ করলে ধীরে ধীরে ঐ সকল ছাত্র-ছাত্রী সে, যে কোন ধর্মাবলম্বী হউকনা কেন মনে মগজে নাস্তিক্ হয়ে বের হবে ।এই জন্য করণীয়; সরকারকেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে নাস্তিক্যবাদে বিশ্বাসী লেখকদের বই পাঠ্যক্রম থেকে সংকুচিত করে জাগতিক শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক তথা ধর্মীয় শিক্ষার বই অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।একটা সন্তান মুসলমানের ঘরে জন্ম নিলে  মুসলমান হিসাবে গণ্য হয়৷ কিন্তু তাকে যদি ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস ও আদর্শের সাথে পরিচিত করা না হয়, তাহলে সে কি প্রকৃত মুসলমান হতে পারবে?যে দেশের পাঠ্যপুস্তকে ৫৭ থেকে ৮০ ভাগ লেখা বিধর্মীদের, সেদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কি প্রকৃত মুসলমান থাকবে? বাংলাদেশ একটি মুসলিম দেশ। দেশটির রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। সে দেশে শিক্ষাব্যবস্থার ১ম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তকে সেকুলারও বিধর্মী লোকদের লেখা গল্প-কবিতার পরিমাণ প্রায় ৫৭ থেকে ৮০ ভাগ। এসব লেখার মাধ্যমে ১৫ কোটি মুসলমানের ছাত্রসমাজকে তাদের আত্মপরিচয় ও ধর্মীয় ভাবধারা কোন দিকে ধাবীত হচ্ছে তা ভাবনার বিষয়৷

৪র্থ:- ইসলাম আমাদের মত প্রকাশের যে স্বাধীনতা দিয়েছে তা পৃথিবীর কোন ইজম্ দিতে পারেনাই।তবে মত প্রকাশের স্বাধীনতা মানে কারো মানহানী বা কারো অনূভুতিতে আঘাত হেনে নয়।তা সীমানা প্রাচীর ডিঙ্গিয়ে নয়।রাস্তা দিয়ে হাঁটার অধিকার ধনী-গরীব,রাজা বাদশাহ,মন্ত্রি-মিনিষ্টার সকলেরই আছে,তাই বলে কি আপনি নিজেকে মুক্তমনা আর স্বাধীন ভেবে আপনি হাঁটার সময় অন্যকে ধাক্কামেরে রাস্তার বাহিরে ফেলে দিবেন?অথবা অন্যের গায়ে ঢিল্ মেরে থুথু মেরে বা অন্যকোন নোংরামীর মাধ্যমে রাস্তার পরিবেশ নষ্ট করবেন?না,না,না। এমন স্বাধীনতা পৃথিবীর কোন সংবিধান আপনাকে আমাকে দিতে পারেনা। আজকাল মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে ধর্মীয় অনুভূতীতে আঘাত দেয়ার শাস্তি না হওয়ার কারণে মানুষ নাস্তিক্যবাদের দিকে ধাবীত হচ্ছে বলে অনেক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন ।এই জন্য সরকারই কঠোর আইনের মাধ্যমে এ জাতিকে নাস্তিক্যবাদের অভিশাপ থেকে মূক্তি দিতে পারে,কারন শাস্তির ভয়ে হলেও তারা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া থেকে বিরত থাকবে। সুতরাং ১ম ও২য়  আমাদের সাধারণ জনগনকে ব্যবস্হা নিতে হবে এবং ৩য় ও ৪র্থ টি সরকারকেই করতে হবে।

৫ম:- একজন খুব সুন্দর করে বলেছেন- “চোর যে কারনে পুলিশকে খুঁজে পায় না একই কারনে নাস্তিকরা স্রষ্টাকে খুঁজে পায় না”।  আমার মনে আছে আমি যখন মাদ্রাসায় পড়তাম তখন স্যারেরা অনেক সময় অফিসে বেত আনতে পাঠাত। আমরা দেখেও না দেখার ভান করে চলে এসে স্যারকে বলতাম “স্যার বেত নাই।" বেত পেলে তার Consequence তো আমরা খুব ভালভাবে উপলব্ধি করতে পারতাম। নাস্তিকরাও আল্লাহকে খুঁজে পায় না এই ভয়ে যে, তাদের পাপ কাজের হিসাব তাদেরকে দিতে হবে। 

৬ষ্ঠ:- Fransis Becon-  “এটা সত্য যে জীবনদর্শন সম্পর্কে ক্ষুদ্র জ্ঞান মানুষের মনকে নাস্তিকদের দিকে ঝুঁকে দেয়,কিন্তু দর্শনের গভীর জ্ঞান মানুষের মনকে ধর্মের দিকে নিয়ে আসে।“(১)  দর্শনশাস্ত্রের জ্ঞানের স্বল্পতার কারনে মূলত তারা এ জীবনের দর্শনকে উপলব্ধি করতে পারে না। উপলব্ধি করতে পারে না তাদের জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।বিবর্তনবাদ অনুযায়ী মানুষের জীবনের উদ্দেশ্য হচ্ছে বংশ পরম্ভরা রক্ষা করা।হাউ ফানি!এমন স্পল্প জীবন দর্শন নিয়ে তারা নিজেকে এবং মানবতাকে কি দিতে পারবে তা প্রশ্নবিদ্ধ**, স্বল্প জীবনদর্শন সম্পন্ন মানুষ যেমন জীবন সাগরে হাতড়াতে থাকে কিন্তু কোন কুলকিনারা পায় না, তেমনি স্বল্প জীবনদর্শন সস্পন্ন নাস্তিকেরাও তাদের এ জীবনের কোন কিনারা পায় না। 
 জীবনকে স্বল্প পরিসরে চিন্তা এবং স্বল্প জ্ঞানের উপর ভর করেই চিন্তার কারনে নাস্তিকেরা স্রষ্টায় অবিশ্বা্সীতে পরিনত হয়। 

৭তম:-  Werner Heisenberg বলেছেন-  “প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের(জীববিজ্ঞান,রসায়ন,পদার্থ ইত্যাদি) পেয়ালা থেকে প্রথম চুমুক নাস্তিকতা নিয়ে আসলেও, এর তলদেশে স্রষ্টা অপেক্ষমান”।  বিজ্ঞানের জ্ঞানের স্বল্পতা নাস্তিকদের নাস্তিকতার পথে নিয়ে আসে। তারা বিজ্ঞানের পৃষ্ঠে হাবুডুবু খায় কিন্তু এর অন্তঃস্থলের ভান্ডারকে উপলব্ধি করতে কিংবা জানতে চেষ্টা করে না। তারা অনেকে অপবিজ্ঞানকে বিজ্ঞান হিসেবে গ্রহন করে ধোঁকায় পতিত হয়। 
Theory of Evolution কে নিয়ে তাদের বাড়াবাড়ির সীমা নেই। অথচ অনেক বিজ্ঞানী একে পুরোপুরি Reject করেছেন। এটা কোন প্রতিষ্ঠিত সত্য নয়। আর বিজ্ঞানী Coley বলেছেন, “Science is the statement of truth found out.” অর্থাৎ সত্যই একমাত্র বিজ্ঞান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।বিবর্তনবাদের মত hypothesis তো বিজ্ঞানের চৌসীমানায় ও আসে না। তাই এটি অপবিজ্ঞান ছাড়া আর কিছুই নয়। 

৮ম:- আল্লাহ কোরানে বলেছেন-  “ তারা অন্যায় ও অহংকার করে নিদর্শনাবলীকে প্রত্যাখ্যান করল, যদিও তাদের অন্তর এগুলো সত্য বলে বিশ্বাস করেছিল’,সুরা নামল-১৪  ,

আল্লাহ ঠিকই বলেছেন তাদের অন্তর যদিও ইসলামকে মেনে নেয় কিন্তু তারা অন্যায় ও অহংকার বশত দুনিয়ার ক্ষনস্হায়ী লোভ লালসার মোহে পড়ে  আল্লাহকে অস্বীকার করে আল্লাহর বিধান কে অস্বীকর করে। তারা যখন দেখে ইসলাম গ্রহন করলে বা ইসলামের অনুশাসন মেনে চললে তাদের alcohol ছাড়তে হবে, Free sex কে বলতে হবে No, Homo sexuality কে বলতে হবে No, অনেক Atheist রা হয়ত এখন বলবেন নাস্তিকতা মানেই কি alcoholism, Free sex, Homo sexuality. আমার অনুরোধ নাস্তিকদের বই, প্রবন্ধ পড়লেই এ সকল জিনিসকে স্বাধীনতা আর প্রাকৃতিকরনের নামে হালালীকরন, খুব ভালভাবেই উপলব্ধি করতে পারবেন। স্রষ্টাকে বিশ্বাস করে নেয়ার মানেই হচ্ছে মনের প্রবৃত্তিকে দমন করতে হবে। আর এই জিনিসটিই স্রষ্টা বিশ্বাসের পথে নাস্তিকদের কাছে এক বিরাট বাঁধা ।সুতরাং নাস্তিক্যবাদের এমন ঘৃন্য মতবাদ থেকে আমাদের সন্তানদের বাঁচতে হলে ধর্মীয় অনুশাসনের  বিকল্প নেই।

ওয়া-ছাল্লাল্লাহ আলা সাইয়্যেদেনা মুহাম্মাদ্ ওয়া-আলিহী ওয়া-আছাহাবিহী ওয়া-বারিক্ ওয়া-ছাল্লিম।

                 এম এম আবদুল্লাহ ভূঁইয়া

প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক

নুরুল গনি ইসলামি একাডেমী কাটাছরা মিরসরাই চট্টগ্রাম

      ও    লেখক গবেষক ব্লগার অ্যান্ড ইসলামি অনলাইন এক্টিভিস্ট

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন