Translate

শনিবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২৩

যৌন সমস্যার স্হায়ী সমাধান


ইরেকটাইল ডিসফাংশন কী?

**যৌন মিলনের পূর্বশর্ত হলো, পুরুষের লিঙ্গের উত্থান ঘটবে। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, মিলনের পূর্বে পুরুষের লিঙ্গের পর্যাপ্ত উত্থান ঘটছে না। কিংবা কারো কারো আবার উত্থান ঘটলেও, তা বেশিক্ষণ দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে না। এর ফলে পরিপূর্ণ যৌন মিলনও সম্ভব হচ্ছে না। একজন পুরুষের লিঙ্গের এরুপ উত্থানজনিত সমস্যাকেই বলা হয়ে থাকে ইরেকটাইল ডিসফাংশন।

তবে মাঝে মাঝে কোনো পুরুষের লিঙ্গের উত্থানে সমস্যা হলেই এমনটা বলা যাবে না যে তিনি ইরেকটাইল ডিসফাংশনের শিকার। এগুলো নিছকই বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কিন্তু বিষয়টি কপালে ভাঁজের কারণ হয়ে দাঁড়ায় তখনই, যখন একজন পুরুষ ক্রমাগত এই সমস্যার সম্মুখীন হতে থাকেন। এর ফলে তারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন, অবসাদ তাদেরকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে, তারা আত্মবিশ্বাসহীনতায় ভুগতে থাকেন, এবং তাদের দাম্পত্য সম্পর্কও ঝুঁকির মুখে পড়ে। লিঙ্গের উত্থানে ব্যর্থতা কিংবা তা ধরে রাখতে না পারার পেছনে অন্য কোনো শারীরিক সমস্যাও ভূমিকা রাখ রাখতে পারে।

★★★ইরেকটাইল ডিসফাংশনের লক্ষণ
একজন ব্যক্তি যে ইরেকটাইল ডিসফাংশনের শিকার, তা বলা যাবে যদি তিনি নিয়মিত নিম্নোক্ত সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হন:

লিঙ্গের উত্থান ঘটাতে না পারা;
লিঙ্গের উত্থান ধরে রাখতে না পারা;
যৌন আকাঙ্ক্ষা হ্রাস পাওয়া কিংবা কখনোই আকাঙ্ক্ষা জাগ্রত না হওয়া।

দেখা দিতে পারে কিছু বিরল লক্ষণও;
এছাড়া আরো কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে:

দ্রুত বীর্যপাত হওয়া;
বিলম্বে বীর্যপাত হওয়া;
টেস্টোস্টেরন বা পুরুষের যৌন হরমোনের মাত্রা কম হওয়া;
অ্যানোর্গাজমিয়া দেখা দেয়া, অর্থাৎ পর্যাপ্ত উত্তেজনা সত্ত্বেও অর্গাজম লাভে ব্যর্থ হওয়া।
কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে
ইরেকটাইল ডিসফাংশন হয়েছে, এমন মনে করলে দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। এবং সেক্ষেত্রে অবশ্যই যথাযথ যোগ্যতাসম্পন্ন চিকিৎসকের দ্বারস্থ হতে হবে। তবে যেহেতু অনেকেই লজ্জার কারণে চিকিৎসকের কাছে যেতে সংকোচ বোধ করেন, তাই তারা প্রথমে ব্যক্তিগতভাবে নিজের মধ্যে নিম্নোক্ত সমস্যাগুলো আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে পারেন:

আপনি কি লিঙ্গের উত্থান বা স্থিতাবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট নন?
আপনার কি দ্রুত বা বিলম্বে বীর্যপাত ঘটছে?
আপনার কি ডায়াবেটিস, হৃদরোগ বা অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা আছে?
যদি এই তিনটি প্রশ্নেরই, কিংবা যেকোনো দুটি বা একটির উত্তর 'হ্যাঁ' হয়, তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। তবে ভালো হয় প্রথমে পারিবারিক চিকিৎসক বা যে চিকিৎসকের কাছে নিঃসংকোচে সব সমস্যা শেয়ার করা যায়, তার পরামর্শ গ্রহণ করা।
★★★ইরেকটাইল ডিসফাংশন কেন হয়?

পুরুষের লিঙ্গের উত্থান মূলত যৌনোদ্দীপনার সাথে সম্পর্কিত। আর পুরুষের যৌনোদ্দীপনা খুবই জটিল একটি প্রক্রিয়া, যেটির সাথে সরাসরি সংযোগ রয়েছে তাদের মস্তিষ্ক, হরমোন, আবেগ, স্নায়ু, পেশি ও রক্তসংবহনতন্ত্রের। ইরেকটাইল ডিসফাংশন এগুলোর যেকোনো একটির সমস্যা বা অস্বাভাবিকতার কারণে হয়ে থাকতে পারে। এছাড়া চাপ, বিষণ্ণতা বা অন্যান্য মানসিক সমস্যার ফলেও ইরেকটাইল ডিসফাংশন হতে পারে, বা আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে।

কখনো কখনো ইরেকটাইল ডিসফাংশনের পেছনে শারীরিক ও মানসিক দু'ধরনের কারণই প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন ধরুন, কোনো একটি ছোটখাট শারীরিক সমস্যার কারণে হয়তো সাময়িকভাবে আপনার যৌন উদ্দীপনার মাত্রা কমে গেল। কিন্তু এ নিয়ে আপনি এত বেশি চিন্তিত হয়ে পড়লেন যে, সে কারণে পরবর্তীতে আপনার লিঙ্গের উত্থান ঘটা বা ধরে রাখা আরো বেশি কঠিন হয়ে পড়ল। এভাবেই শারীরিক সমস্যার সাথে মানসিক সমস্যা যোগ হয়ে ইরেকটাইল ডিসফাংশনের মাত্রা বহু গুণে বাড়িয়ে দিল।

ইরেকটাইল ডিসফাংশনের শারীরিক কারণ
বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার কারণে ইরেকটাইল ডিসফাংশন দেখা দিতে পারে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

হৃদরোগ;
রক্তনালী সংকীর্ণ হয়ে যাওয়া, 
উচ্চ কোলেস্টেরল;
উচ্চ রক্তচাপ;
ডায়াবেটিস;
ওবেসিটি;
 , কোমরের কাছে অতিরিক্ত চর্বি ও উচ্চ কোলেস্টরল জন্মানো;
প্রোস্টেট ক্যান্সার;
স্লিপ ডিজঅর্ডার বা ঘুমের সমস্যা;
শ্রোণী এলাকা বা মেরুদণ্ডে জখম।

ইরেকটাইল ডিসফাংশনের মনস্তাত্ত্বিক কারণঃ

লিঙ্গের উত্থানের পেছনে মস্তিষ্ক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মস্তিষ্কের থেকে পাওয়া সংকেতের মাধ্যমেই একজন পুরুষ তার দেহে যৌন উদ্দীপনা অনুভব করতে থাকেন, তার মধ্যে বিভিন্ন শারীরিক পরিবর্তন আসতে থাকে, এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে তার লিঙ্গের উত্থান ঘটে। কিন্তু মস্তিষ্ক যদি স্বাভাবিক না থাকে, তার প্রভাব পড়ে লিঙ্গের উত্থানে, ফলে সৃষ্টি হয় ইরেকটাইল ডিসফাংশন। মস্তিষ্ক স্বাভাবিক না থাকার কারণসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

অবসাদ, দুশ্চিন্তা ও অন্যান্য মানসিক সমস্যা;
মানসিক চাপ;
অন্যমনস্কতা;
সম্পর্কের অবনতি বা অধারাবাহিকতার কারণে উদ্ভূত চাপ;
আত্মবিশ্বাসহীনতা;
ভীতি।

রিস্ক ফ্যাক্টরঃ

একজন পুরুষের বয়স বাড়ার সাথে সাথে যৌন ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। ফলে একজন মধ্যবয়সী বা প্রৌঢ় পুরুষের তরুণ বয়সের মতো সহজেই লিঙ্গের উত্থান ঘটে না, আর লিঙ্গ খুব বেশি শক্তও থাকে না। তখন বারবার স্পর্শ করে লিঙ্গ উত্থিত ও শক্ত রাখতে হয়।

তবে আজকাল বয়স বিশ বা ত্রিশের কোঠায় আসা মাত্রও অনেকে ইরেকটাইল ডিসফাংশনের শিকার হচ্ছেন। এর পেছনে পেছনে বেশ কিছু রিস্ক ফ্যাক্টর কাজ করতে পারে, যেমন:

 বিশেষ করে ডায়াবেটিস বা হৃদরোগ;
তামাক ব্যবহার, যেটি রক্তনালী বা ধমনীতে রক্তপ্রবাহ আটকে দেয়, ফলে সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক জটিলতা দেখা যায়, যা ইরেকটাইল ডিসফাংশনের জন্ম দিতে পারে;
অতিরিক্ত শারীরিক ওজন থাকলে, বিশেষত ওবেসিটি বা অতিস্থূলতার শিকার হলে;
কোনো চোট বা জখম, বিশেষত তা যদি স্নায়ু বা উত্থান নিয়ন্ত্রণকারী ধমনীকে আক্রান্ত করে;
কিছু বিশেষ ওষুধ ব্যবহার করলে, যেমন অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট, অ্যান্টিহিস্টামিন কিংবা উচ্চ রক্তচাপ, ব্যথা বা প্রোস্টেটে সমস্যার ওষুধ;
বিভিন্ন মানসিক অবস্থা, যেমন- দুশ্চিন্তা, চাপ, অন্যমনস্কতা বা অবসাদ;
মাদকের নেশা, বিশেষত কেউ যদি দীর্ঘদিন ধরে নেশা করে আসে বা মাত্রাতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ করে।
উদ্ভূত জটিলতা
ইরেকটাইল ডিসফাংশনের ফলে বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। যেমন:

অসন্তুষ্ট যৌন জীবন;
সঙ্গীর সাথে সম্পর্কে অবনতি;
মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা বৃদ্ধি;
নিজের উপর থেকে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলা;
সঙ্গীকে গর্ভবতী করতে না পারা।

বাঁচার উপায়ঃ-
একবার যদি কোনো ব্যক্তি ইরেকটাইল ডিসফাংশনের শিকার হয়েই যান, সেক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে ওষুধ সেবন করতে হবে,  কিংবা নিছকই নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করতে হবে। আর যারা এখনো ইরেকটাইল ডিসফাংশনের সম্মুখীন হননি, তাদের উচিত হবে সুস্থতা ধরে রাখার জন্য নিম্নোক্ত কাজগুলো যথাযথভাবে পালন করা:

চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ডায়াবেটিস, হৃদরোগ বা অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা;
শারীরিক সমস্যার অতীত ইতিহাস থাকলে, কিংবা না থাকলেও, প্রতিবছর অন্তত একবার চিকিৎসকের কাছে গিয়ে চেক-আপ ও মেডিকেল স্ক্রিনিং টেস্ট করিয়ে আসা;
ধূমপান পুরোপুরি বর্জন করা, অ্যালকোহল গ্রহণের মাত্রা সীমিত করা কিংবা নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ না থাকলে পুরোপুরি এড়িয়ে চলা, অবৈধ নেশাদ্রব্য ব্যবহার না করা;
নিয়মিত শরীরচর্চা করা;
অনিয়মিত খাদ্যগ্রহণের বদলে সুষম ও স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য গ্রহণ করা;
রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমানো ও কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিশ্রাম নেয়া;
মানসিক চাপ, অবসাদ, দুশ্চিন্তা বা অন্যান্য সমস্যাকে অবহেলা না করে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন