Translate

বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

মুসলমানদের বিরুদ্ধে আহলে হাদীস বা লা-মায্‌হাবীদের আক্রমণ ও তার জবাব


      মুসলমানদের বিরুদ্ধে আহলে হাদীস বা লা-মায্‌হাবীদের আক্রমণ তার জবাব         

মায্‌হাব মানা বা তাক্বলীদ করা এবং মায্‌হাব্‌-অবলম্বীদের প্রতি বিরাগ-বিদ্বেষ ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া নিয়েই কথিত আহলে হাদীস মতবাদের আত্নপ্রকাশ। তাই, মায্‌হাব্‌ ও মায্‌হাব্‌পন্থীদের প্রতি ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে অসংগতিপূর্ণ, জঘণ্যতম ও ন্যাক্কারজনক কটুক্তিপূর্ণ বই-পুস্তক তারা বিনামূল্যে ও স্বল্পমূল্যে বিতরণ করে যাচ্ছে।

উদাহরণস্বরূপ তাদের পুস্তকগুলো থেকে কয়েকটি উক্তি নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ


লা-মায্‌হাবীদের বহুল আলোচিত বই কাটহুজ্জাতীর জাওয়াব বইয়ের লিখক মাওঃ আবু তাহের বর্দ্ধমানী লিখেছেঃ
তাক্বলীদ হচ্ছে ঈমানদারদের জন্য শয়তানের সৃষ্ট বিভ্রান্তি। ” ( কাটহুজ্জাতীর জাওয়াবঃ পৃ - ৮৩)
 ২/ অত্যন্ত বিতর্কিত বই তাওহীদী এটম বোম বইয়ের প্রণেতা মাওঃ আব্দুল মান্নান সিরাজনগরী (বগুড়া) লিখেনঃমুক্বাল্লিদগণকে মুসলমান মনে করা উচিত নয় । ” ( তাওহীদী এটম বোমঃ পৃ - ১৫
৩/ রংপুর শোলবাড়ী নিবাসী মোঃ আব্দুল কাদের লিখেনঃমায্‌হাবীগণ ইসলাম থেকে বহিষ্কৃত, তাদের মধ্যে ইসলামের কোন অংশ নেই। ” ( তান্বিহুল গাফেলীন, আব্দুল কাদির রচিতঃ পৃ

/ তেছামুস সুন্নাহগ্রন্থের রচয়িতা মাওঃ আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদী লিখেঃচার ইমামের মুক্বাল্লেদ এবং চার তরিকার অনুসারীগণ মুশরিক ও কাফির। ইতেছামুস্‌ সুন্নাহ্‌: পৃঃ ৭-৮ )


৫/ এভাবে জফরুল মুবিন প্রণেতা মৌঃ মুহিউদ্দীন, তরজমানে ওহ্‌হাবিয়্যাহ প্রণেতা নবাব ছিদ্দীক হাসান খান এবং লা-মায্‌হাবীদের সর্বশ্রেষ্ঠ ফাতওয়ার কিতাব ফতোয়ায়ে নাজিরিয়ার সংকলক মৌঃ নাজিমুদ্দীন প্রমুখ মায্‌হাব-অবলম্বীদেরকে কাফির, মুশরিক, বিদআতী ও জাহান্নামী বলে ফতোয়া দিয়েছে।

(
দ্রঃ জফরুল মুবিনঃ পৃঃ ১৮৯-২৩০-২২৩; তরজমানে ওহ্‌হাবিয়্যাহঃ পৃঃ ৩৫-৩৬; ফতোয়ায়ে নাযীরিয়াঃ পৃঃ ১/৬৯-৯৭)

পর্যালোচনা  ১ / কথিত আছেঃ যে কাপড় খুলে রাস্তার পার্শ্বে মলত্যাগ করে তার তো কোন লজ্জানুভূতি নেই। কিন্তু যে প্রত্যক্ষ করছে সে লজ্জায় কাতর। ঠিক অনুরূপভাবে যারা এ সমস্ত মাতলামী প্রলাপ ব্যক্ত করেছে তাদের কোন লজ্জানুভূতি না হলেও মূলতঃ এগুলোর আলোচনা-পর্যালোচনা করতে আমাদের লজ্জাবোধ হচ্ছে।

 ২ / শিয়া সম্প্রদায় ও লা-মায্‌হাবীদের গুটিকয়েক ব্যতীত মুসলিম উম্মাহর পূর্ববতী ও পরবর্তী শরীয়ত বিশেষজ্ঞগণ, সমস্ত মুফাস্‌সির, মুহাদ্দিস, হাদীস সংকলক, ব্যাখ্যাকারক প্রায় সবাই কোন না কোন মায্‌হাবের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন। ইমাম বুখারী, মুসলিম, আবু-দাউদ, তাহাবী, নাসাঈ, তিরমিযী, ইবনে-মুঈন, ইবনে তাইমিয়্যাহ, মোল্লা আলী ক্বারী, হাফেয যাহাবী, ইবনে-হাজার আসক্বালানী মুহামমদ বীন  আবদুল ওহহাব নজদী  প্রমুখ সকলেই তো এ পথের পথিক।
তারা সবাই যদি কাফির-মুশরিকই হয়ে থাকে তাহলে, তাদের সংকলিত হাদীস ও মতামত তারা গ্রহণ করে কোন্‌ হাদীসের ভিত্তিতে? অনুরূপভাবে হাদীসের বর্ণনাকারীগণও তো কোন না কোন মায্‌হাবের মুক্বাল্লিদ ছিলেন।
এদের বর্ণনার উপর লা-মায্‌হাবীদের আস্থা ও বিশ্বাস হয় কোন্‌ দলীলের মাধ্যমে? দুনিয়ার সমস্ত মানুষকে বিদআতী, কাফির, মুশরিক ও জাহান্নামী আখ্যায়িত করতঃ শুধু তারা গুটি কয়েকজন বেহেশতে বসবাস করতে চায়। আল্লাহর বেহেশত কি তাদের সংকীর্ণ হৃদয়ের মত এতোই ছোট? বিদআতী, কাফির, মুশরিক আর জাহান্নামী আখ্যায় আখ্যায়িত করেছে তারা দুনিয়ার সবাইকে, কিন্তু প্রশ্ন হল, তারা এ যাবৎ মুসলমান ও বেহেশতী বানিয়েছে কয়জনকে? তারা কি মানুষকে কাফির-মুশরিক বানানোর দায়িত্ব পেয়েছে না মুসলমান বানানোর? যেমনটি করেছে বেরোলোভি মাজার পন্থিরা ও সমানে সকল কে  কথায় কথায়  কাফের বানাচ্ছে ,  কিন্তু প্রশ্ন হলো এরা মানুষকে মুসলিম বানাবে কবে ? আল্লাহর নবীর মিশনতো মুসলিম কে কাফের বানানোর জন্য নয় , কিন্তু আমরা কাউকে এমন কঠাক্ষ করার ওকালতি পাইনি বলেই এমন মনতব্য করবোনা ৷ আল্লাহ সকলকেই হেদায়েত নসিব করুন ৷

তাদের এ অবস্থার প্রতি বিব্রতবোধ করেই মুজাদ্দেদে আলফে সানী (রহঃ) কতইনা সুন্দর কথা বলেছেনঃ

মায্‌হাব অমান্যকারীরা যদি এমন বিশ্বাস নিয়ে বসে থাকে, তাহলে তাদের এ ভ্রান্ত ধারণা অনুযায়ী মুসলমানদের সামান্য কয়জন বাদ দিয়ে, বৃহত্তর অংশই তো বিদআতী, মুশরিক, কাফির বা পথভ্রষ্ট হিসেবে বিবেচিত হতে বাধ্য। তাই এমন ধারণা তো শুধু এই মূর্খ বা আহ্‌মকই করতে পারে, যে স্বয়ং তার মূর্খতারই খবর রাখে না।

অথবা সেই যিন্দীক্ব বা নাস্তিকের জন্যই এমন ধারণা-পোষণ শোভা পায়, যার উদ্দেশ্য বা আকাংখা হচ্ছে মুসলমানদের বৃহত্তর অংশের মধ্যে নিরাশা সৃষ্টি করতঃ খোদ দ্বীন ইসলামকেই আংশিক বা পুরোপুরি অচল করে দেয়া। উক্ত ধারণা পোষণকারী শ্রেণীর লোকজন গুটিকয়েক হাদীস মুখস্থ করতঃ শরীয়তের সমস্ত বিধি-বিধান শুধু এই কয়েকটি হাদীসের মধ্যেই সীমিত হবার বদ্ধমূল ধারণা নিয়ে বসে আছে। নিজের অজানা সবকিছুকে তারা অস্বীকার করে চলেছে। ( মাক্‌তুবাতে ইমাম রাব্বানীঃ ২/১০৭-১০৮ মাক্‌তুব নং ৫৫ (ফার্সী) )
কিছু কথাঃ

মায্‌হাব চতুষ্টয়ের {  হানাফী মালেকী শাফেয়ী হাম্বলী} তাক্বলীদের ব্যাপারে মুসলিম উম্মাহর সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে 'ইজমা' সংঘটিত হয়েছে হিজরী ৪র্থ শতাব্দীর পূর্বেই। এবং সাথে সাথে মুসলিম উম্মাহর  উলামায়ে কিরাম ও বিশেষজ্ঞ ফক্বীহগণ সর্বসম্মতভাবে একাধিক মায্‌হাবের অনুসরণের দ্বার রুদ্ধ করে কেবল একই মায্‌হাবের অনুসরণকে জরুরী ও ওয়াজিব বলে ফাত্‌ওয়া দেন। যা প্রায় ১০০০ হাজার বছর পর্যন্ত  চলে আসছে, এসময়ের মধ্যে আহলে হাদীস নামধারী  দের কোন অনাঘোনা ও ছিলনা , হঠাৎ করে মনে হয় যেন গর্তের  থেকে বের হয়ে নতুন রঙ্গীন চশমা পরে  সকল মুসলিম কে কাফের মুশরেক ও বেদআতী বানানোর ইহুদী-খৃষ্টানদের চক্রান্তে মেতে উঠেছে ৷    

নিচে মুহাদ্দিসগণের কিছু মতামত তুলে ধরছিঃ

১। মুসলিম শরীফের প্রসিদ্ধতম ও সর্বশ্রেণীতে গৃহীত ব্যাখ্যা আল্ মিনহাজপ্রণেতা ইমাম নববী (রহঃ) (মৃঃ ৬৭৬ হিঃ) রাওযাতুত তালেবীননামক গ্রন্থে লিখেনঃউলামাগণ বলেন, ইজতিহাদে মুতলাক, ইমাম চতুষ্টয় পর্যন্ত খতম হয়ে গেছে। তাই তাঁরা ইমাম চতুষ্টয়ের কোন একজনের তাক্বলীদমুসলিম উম্মাহর জন্য ওয়াজিব সাব্যস্ত করে দিয়েছেন। ইমামুল হারামাইন জুয়াইনী (মক্কা-মদীনা শরীফের ইমাম সাহেব রহঃ, মৃঃ ৪৭৮ হিঃ) মায্হাব চতুষ্টয়ের তাক্বলীদ ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে ইজ্মাউল্লেখ করেছেন। ”( নুরুল হিদায়া হতে সংকলিত, পৃ ১০; দেখুনঃ ফয়যুল কাদীরঃ পৃ ১/২১০; শরহুল মুহায্যাব, নববীঃ পৃ ১/৯১, আদাবুল মুস্তাফতী অধ্যায় )
অন্যত্র তিনি লিখেনঃ  যে কোন একটি মায্হাব বেছে নিয়ে একনিষ্ঠভাবে তা অনুসরণ করাই বর্তমানে অপরিহার্য।
(
আল্-মাজমুশরহুল মুহায্যাব্, পৃ ১/১৯ )
২। গাইরে মুক্বাল্লিদ্দের অন্যতম মান্যবর ইমাম, আরব বিশ্বের সর্বনন্দিত লিখক শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রহঃ) (মৃঃ ৭২৮ হিঃ) লিখেছেন মুসলিম উম্মাহর ইজ্মাউপেক্ষা করে মায্হাব চতুষ্টয়ের বিপরীতে কোন মায্হাব রচনা বা গ্রহণ বৈধ হবে না। ”( ফাত্ওয়া-ইবনে তাইমিয়্যাঃ পৃ ২/৪৪৬ )  ইচ্ছামত চার মায্হাবের যখন যেটি খুশি সেটি অনুসরণ করা সকল ইমামের ঐক্যমতে হারাম বা অবৈধ বলেও তিনি উল্লেখ করেন।  (ফাত্ওয়া-ইবনে তাইমিয়্যাঃ পৃ২/২৪১ )
৩। প্রখ্যাত উসূলে হাদীস বিশারদ, ইবনি নুজাইম (রহঃ) (মৃঃ ৯৭০ হিঃ) লিখেনঃ যে ব্যক্তি ইমাম চতুষ্টয়ের বিপরীত মতামত পোষণ করবে সে মুসলিম উম্মাহর ইজমাতথা সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত-বিরোধী হিসেবে চিহ্নিত হবে।  ( আল্-আশ্বাহ্ ওয়ান নাযাইরঃ পৃ ১৩১ )
৪। আল্লামা ইমাম ইবনে হাজার মক্কী (রহঃ) (মৃঃ ৯৭৩ হিঃ) তাঁর স্বীয় প্রসিদ্ধ কিতাব ফাত্হুল মুবীনএ লিখেনঃ
আমাদের যুগের বিশেষজ্ঞদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আবু হানীফা, শাফেয়ী, মালেক ও আহমদ বিন হাম্বল এ চার ইমাম ব্যতীত অন্য কারও তাক্বলীদ (অনুসরণ) জায়িয নয়। ”( ফাত্হুল মুবীনঃ পৃ ১৯৬ )
৫। আল্লামা শারানী (রহঃ) (মৃঃ ৯৭৩ হিঃ) তাঁর বিখ্যাত কিতাব আল্-মিযানে লিখেনঃ
রহঃ) (মৃঃ ১১৭৬ হিঃ), লা-মায্হাবীদের কাছেও যিনি গ্রহণযোগ্য, তাঁর সুপ্রসিদ্ধ কিতাব হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগায় লিখেনঃ সু-বিন্যস্ত গ্রন্থবদ্ধ এ চার মায্হাবের উপর সকল ইমামগণের ইজ্মাতথা ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
(
হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগাঃ পৃ ১/১২৩ )

৭। আহলে হাদীস নামক দলের অন্যতম আলিম মুফতী ছদরুদ্দীন বলেনঃ চার মায্হাবের কোন নির্দিষ্ট মায্হাব নির্বাচন করা রসূল (সঃ) এর সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত। ”( তামবীহুদ্দাল্লীনঃ পৃ ৪৫ )
 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন