Translate

বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

কোরআনের আলোকে মাযহাব ,সাহাবাযুগে তাকলিদ বা মাজহাব ,তাবেয়ীদে যুগে মাযহাব বা তাকলীদ


কোরআনের আলোকে মাযহাব
কুরআনের  অসংখ্য আয়াতের মধ্যে মোট ৩ টি আয়াত এবিষয়ে দলীল হিসেবে তুলে ধরছি ।
১ ম আয়াত   فا سئلوا اهل الذكر ا ن كنتم لاتعلمون তোমাদের কোন বিষয়ে জানা না থাকলে আহলে ইলমদের নিকট      জিজ্ঞাসা কর । সুরা, আল আম্বিয়াঃ৭,ও সুরা আন নাহালঃ৪৩,
টীকাঃ এ আয়াত যদিও বিশেষ ঘটনার সাথে যুক্ত । কিন্তু কুরআনের একটি মূলনীতি হল, যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে তা নাযিল হয়েছে তা এতে সীমাবদ্ধ থাকেনা।বরং শব্দের ব্যাপক অর্থ ব্যাবহার হবে।আয়াতে বলা হচ্ছে,অজানা বিষয়ে বিজ্ঞ লোকদের অনুসরণ করার জন্য। এখন আমরা যদি বলি , না তাদের অনুসরণ কারা যাবেনা । তাহলে এটা কি কোরআনের বিরোধিতা হবেনা?আর অজানা বিষয়ে বিজ্ঞদের অনুসরণ করার নাম ই হল , তাকলিদ। সুতরাং তাকলিদ কোরআন দ্বারা প্রমাণিত।
আল্লামা খতীবে বাগদাদি (রাহ)বলেন, রান-সুন্নার যে সকল বিষয়ে সাধারণ লোক সরাসরি শরীয়তের বিধান আহরণে অক্ষম, তাদের জন্য কোন বিজ্ঞ আলেমের তাকলিদ করা আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক জায়েজ।সুত্রঃ আল ফাকিহ ওয়াল মুতাফাককিহ ৩০৬।
আল্লামা ফাখ্রুদ্দিন ও আল্লামা আলুসি উক্ত আয়াতের তাফসীরে লিখেন, উপরল্লখিত আয়াতের ভিত্তিতে অনেকেই মুজতাহিদ ইমামগনের তাকলিদ বৈধ ও অনভিজ্ঞ সবাইকে বিজ্ঞ মুজতাহিদের শরণাপন্ন হওয়া ওয়াজিব বলেন।
সুত্রঃতাফসিরে কাবির১৯/১৯,রুহুল মায়ানি-১৪/১৪৮, মাঝহারি- ৫-৩৪২, লুবাব-১২/৬১, কুরতুবি ১০/৭২

২য় আয়াতঃ اطيع الله واطيع الرّسول وأولى ألامر من كم الخহে ইমানদারগণ ! আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য কর।আর আনুগত্য কর তোমাদের মধ্যে যারা উলিল আমরতাদের । সুরা আন নিসাঃ ৫৯
 
আয়াতে আল্লাহ ও তার রাসুলের পাশাপাশি উলিল আমরের আনুগত্য করতে বলা হয়েছে।আসুন, দেখি এ ব্যাপারে মুফাসসির গণ কি বলেন।তাফসির গ্রন্থাবলিতে উলিল আমরের ২ টি তাফসীর পাওয়া যায়। ১মঃ কুরআন- সুন্নার ইলমের অধিকারী ফাকিহ ও মুজতাহিদগণ। ২য়ঃ মুসলিম শাসক বর্গ । ১ম তাফসীর টি অধিক গ্রহণযোগ্য । কেননা , এর পক্ষে মতামত দিয়েছেন, হযরত জাবের, এবনে আব্বাস, মুজাহিদ, আতা বিন আবি রাবাহ, আতা বিন সাইব, হাসান বাসরি ও আলিয়াহ (রাহ) এর মত সেরা মুফাসসিরগন । মাত্র দু একজন ২য় মত টি ব্যক্ত করেছেন।

আল্লামা রাযি (রাহ) প্রথম তাফসীরের সমর্থনে সারগর্ভ যুক্তি প্রমান অবতারনা করে বলেছেন, বস্তুত আয়াতে উলিল আমর ও উলামা শব্দ দুটি সমার্থক।
ইমাম আবু বাকার (রাহ) বলেন , এখানে মূলত কোন বিরোধ নেই। মূলত উলিল আমর শব্দ টি ব্যপক। সুতরাং ধর্মীয় বিষয়ে ১ম তাফসীর গৃহীত হবে। আর আহকাম ও মাসআলার ক্ষেত্রে ২য় তাফসীর গ্রহন হবে। আয়াতের অর্থ হবে, তোমরা রাজনীতি প্রশাসনিক ক্ষেত্রে শাসকবর্গের কথা আর আহকাম ও মাসআলার ক্ষেত্রে আলিমগণের ইতায়াত কর । সুত্রঃ আহকামুল কুরআন-২/২৫৬,তাফসিরে কাবির-৩/ ৩৩৪ ।
মোট কথাঃ আলোচ্য আয়াতের আলোকে আল্লাহ ও রাসুলের ইতায়াত যেমন ফরয তেমনি কুরআন ও সুন্নার ব্যাখ্যা দাতা হিসেবে আলিম ও মুতাহিদ্গনের ইতায়াত ও ফারয।

আয়াতের শেষাংশের ব্যাখ্যা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলতে পারেন, যেখানে বলা হয়েছে মতবিরোধ পূর্ণ ব্যাপারে আল্লাহ ও তার রাসুলের দিকে ফিরার জন্য । এ ব্যাপারে আমরা বলবো, মূলত এ দ্বিতীয়াংশের মাধ্যমে ফকিহ ও মুজতাহিদদেরকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে। সাধারন মানুষের জন্য নয়। যা আহলে হাদিসদের ইমাম জনাব নবাব সিদ্দিক হাসান খান তার লিখিত কিতাব ফাতহুল বায়ান নামক গ্রন্থে ও স্বীকার করেছেন, তার ভাষায়ঃوالظاهرأنّه خطاب مستقلّ مستأنف موجّه للمجتهدين স্পষ্টতই এখানে মুজতাহিদ গণকে সতন্ত্রভাবে সম্ভোধন করা হয়েছে। এ দুটি আয়াতের আলোচনা বিস্তারিতভাবে করলাম। আশা করি আমার লা মাজহাবী ভাইগণ একটু হলেও চিন্তা করবেন।

 তৃতীয় আয়াত: والتّبع سبيل من أناب اليّ যে আমার অভিমুখী হয়েছে , তুমি তার পথ অনুসরণ কর। সুরা আল লোকমানঃ ১৫ ,এ আয়াতে মূলত আবু বাকার (রা) মতান্তরে সাদ ইবনে ওয়াককাসের ব্যাপারে মন্তব্য করা হলেও কোন কোন তাফসীর কারক বলেছেন, এখানে উদ্দেশ্য হল , ধর্মানুরাগী মুসলমান । আল্লামা জমখসরি লিখেন,আল্লাহ অভিমুখী বলতে মুমিনদের পথ বুঝানো হয়েছে। কাজেই আয়াতের অর্থ হল, তুমি দ্বীন ধর্মের ক্ষেত্রে মুমিনগণের পথ অনুসরণ কর। সুত্রঃ আল কাসসাফ-৩/৪৭৯।
হে আল্লাহ! আমাদের কে সরল পথে পরিচালিত কর ।অর্থাৎ তাদের পথে যাদের কে তুমি নেয়ামত দান করেছ,


যে মুজতাহিদদের ক্ষেত্রে আল্লাহর নবী বলেছেন-

عَنْ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « إِذَا حَكَمَ الْحَاكِمُ فَاجْتَهَدَ فَأَصَابَ فَلَهُ أَجْرَانِ وَإِذَا حَكَمَ فَاجْتَهَدَ فَأَخْطَأَ فَلَهُ أَجْرٌ

হযরত আমর বিন আস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-যখন কোন বিশেষজ্ঞ হুকুম দেয়, আর তাতে সে ইজতিহাদ করে তারপর সেটা সঠিক হয়, তাহলে তার জন্য রয়েছে দুটি সওয়াব। আর যদি ইজতিহাদ করে ভুল করে তাহলে তার জন্য রয়েছে একটি সওয়াব। {সহীহ বুখারী, হাদিস নং-৬৯১৯, সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-৩৫৭৬, সহীহ মুসলিম, হাদিস নং-৪৫৮৪}

তারা ভুল করলেও এক নেকি পাবে, আর সঠিক করলে ডাবল নেকি, তাদের ব্যাখ্যাকে অনুসরণ করি। ব্যক্তিকে অনুসরণের জন্য নয়, বরং তিনি কুরআন সুন্নাহ সম্পর্কে বিজ্ঞ হওয়ার কারণে, এবং নবীজী সাঃ এর বলা শ্রেষ্ঠ যুগের ব্যক্তিত্ব হওয়ায় নিজের ইচ্ছা ও বুঝের উপর নির্ভর না করে বিজ্ঞ ব্যক্তির ব্যাখ্যার আলোকে কুরআন সুন্নাহর উপর আমল করি।

সাহাবাযুগে তাকলিদ বা মাজহাব

প্রশ্নঃ আমাদের অনেক ভাই বলেন, সাহাবা যুগে তাকলিদ ছিলনা। তাই আমরা ও কারো তাকলিদ করবোনা । মাজহাব মানবনা। এটা কি ঠিক ?
উত্তরঃ না ভাই, এটা মোটেও ঠিক নয়। দেখুন , আমি আবারও একটা বিষয় পরিষ্কার করছি। মাজহাব মানা তাকলিদ করার মানে কিন্তু এই নয় যে কোন ইমাম মনগড়া কথা বলে যাবেন , আর আমরা তা মেনে নেব। বরং তাক্লিদ মাজহাব মানার অর্থ হল, একজন ধর্ম বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তি কুরান-সুন্নার আলোকে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দিবেন , আর যারা এ বিষয়ে জানেনা বা জানার সুযোগ নেই তারা তার কথা মতে আমল করবে। এ পদ্ধতি সবসময় ছিল। বরং রাসুলের যুগেও সাধারণ সাহাবায়ে কেরাম , যারা বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকতেন তারা আলেম সাহাবাদের কাছ থেকে জেনে আমল করতেন। আমাদের যে ভাইগণ মাজহাব না মেনে সরাসরি কোরআন হাদিসের উপর আমল করবেন বলেন, তারাও কিন্তু প্রতিটি কাজ কোরআন হাদিস খুলে তারপর আমল  করেন না । করতে পারেনা , তা কিছুতেই সম্ভব না তাদের দাবীই মিথ্যা ৷

বরং তাদের নিকট গ্রহন যোগ্য শাইখ ইমামের কথা মানেন এবং তার রেফারেন্স দেন। যেমন , শাইখ গালিব, জাকির নায়েক, বিন বাজ , আল বানি, ইত্যাদি।
সুতরাং আমরা হানাফি মাজহাব মানার অর্থ হল, ইমাম আবু হানিফা (রাহ”) কোরআন সুন্নার আলোকে যে সমাধান দিয়েছেন তা মানি। অর্থাৎ তার রেখে যাওয়া উসুল অনুযায়ী কোরআন হাদিস বুঝার চেষ্টা করি। এটা অবৈধ কিছু নয়। কেননা হাদিস যাচাই বাছাই করার বর্তমান নিয়ম কিন্তু রাসুলের যুগে ছিলনা । পরবর্তীতে আবিষ্কার হয়েছে। আমরা কিন্তু সেগুলু ঠিকই মানছি । তাহলে উসুলে ফিকহ মানতে সমস্যা কি? এখন আসা যাক মূল আলোচনায়

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা বুঝা গেল, মাজহাব/ তাকলিদ করার অর্থ হল ধর্মীয় অজানা বিষয়ে বিজ্ঞ লোকের কথা মানা। এ অর্থে সাহাবা যুগেও এর প্রচলন ছিল। কিন্তু যেহেতু আমাদের ৪ ইমামের আগমন সাহাবা যুগের পর তাই সাহাবারা আমাদের ইমাম দের অনুসরণ করেছেন কিনা ? এমন প্রশ্ন হাস্যকর । হ্যাঁ , প্রশ্ন হতে পারে এর প্রচলন তাদের যুগে ছিল কিনা? এর উত্তরে আমরা বলব , জি ভাই ছিল ।
যেমনঃ ১ ম প্রমানঃ
হযরত আস ওয়াদ বিন ইয়াযিদ বর্ণনা করেন, মুআজ ইবনে জাবাল গভর্নর হিসেবে ইয়ামানে আগমন করলে আমরা তাকে জিজ্ঞাসা করি, জনৈক ব্যক্তি ১ কন্যা ও ১ বোন রেখে মারা গেছে। এখন তাদের মাঝে সম্পদ বণ্টনের পদ্ধতি কি হবে? তদুত্তরে তিনি প্রত্যেকের অংশ অর্ধেক বলে সমাধান দেন। বুখারি শরিফ ৮/৩৫১, হাঃ ৬৭৩৪

  রাসূল সাঃ যখন মুয়াজ বিন জাবাল রাঃ কে ইয়ামানে পাঠাতে মনস্ত করলেন তখন মুয়াজ রাঃ কে জিজ্ঞেস করলেন-যখন তোমার কাছে বিচারের ভার ন্যস্ত হবে তখন তুমি কিভাবে ফায়সাল করবে?” তখন তিনি বললেন-আমি ফায়সালা করব কিতাবুল্লাহ দ্বারা রাসূল সাঃ বললেন-যদি কিতাবুল্লাহ এ না পাও?” তিনি বললেন-তাহলে রাসূলুল্লাহ সাঃ এর সুন্নাত দ্বারা ফায়সালা করব। রাসূল সাঃ বললেন-যদি রাসূলুল্লাহ এর সুন্নাতে না পাও?” তখন তিনি বললেন-তাহলে আমি ইজতিহাদ তথা উদ্ভাবন করার চেষ্টা করব
তখন রাসূল সাঃ তাঁর বুকে চাপড় মেরে বললেন-যাবতীয় প্রশংসা ঐ আল্লাহর যিনি তাঁর রাসূলের প্রতিনিধিকে সেই তৌফিক দিয়েছেন যে ব্যাপারে তাঁর রাসূল সন্তুষ্ট{সূনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-৩৫৯৪, সুনানে তিরমিযী, হাদিস নং-১৩২৭, সুনানে দারেমী, হাদিস নং-১৬৮, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২২০৬১}

এই হাদীসে লক্ষ্য করুন-রাসূল সাঃ এর জীবদ্দশায় হযরত মুয়াজ রাঃ বলছেন যে, আমি কুরআন সুন্নাহ এ না পেলে নিজ থেকে ইজতিহাদ করব, আল্লাহর নবী বললেন-আল হামদুলিল্লাহ। আর ইয়ামেনের লোকদের উপর হযরত মুয়াজের মত তথা মাযহাব অনুসরণ যে আবশ্যক এটাও কিন্তু হাদীস দ্বারা স্পষ্ট। এছাড়া সাহাবাদের যুগে যে সকল সাহাবাদের মাযহাব তথা মত অনুসরণীয় ছিল। তাদের মাঝে উল্লেখযোগ্য হল-
হযরত ওমর বিন খাত্তাব রাঃ,২ হযরত আলী বিন আবু তালিব রাঃ,৩ হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ,৪ হযরত আয়েশা রাঃ, ৫হযরত জায়েদ বিন সাবেত রাঃ,৬ হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ, ৭হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ প্রমূখ সাহাবাগণ।
পর্যালোচনাঃ
ক* মুয়াজ( রা ) একজন নির্ধারিত ব্যক্তি মাত্র। ইয়ামান বাসী তার অনুসরণ করা ওয়াজিব ছিল। অন্যথায় তাকে প্রেরণ অনর্থক ও অহেতুক গণ্য হবে। যা নবীর সাঃএর, শানের খেলাফ।
, মুয়াজের ইয়ামান গমন রাসুল সাঃ এর  যুগেই ছিল। এর মাধ্যমে নির্ধারিত ব্যক্তির অনুসরণ রাসুলের যুগেই শুরু হল। কেননা , রাসুলের জীবিত থাকাকালীন যাবতীয় বিষয়ে মুয়াজের অভিমত দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য ছিল।
তার প্রতি সুধারনার ভিত্তিতে তার কথা মানতে বাধ্য ছিলেন। এটাই তাক্লিদে সাখছি।

২য় প্রমানঃ
জনৈকা সাহাবী রাসুল (সা) এর কাছে আরয করেন, ইয়া রসুলাল্লাহ!আমার স্বামী জিহাদে গেছেন।তিনি থাকাবস্তায় আমি তার নামায ও অন্যান্য আমল অনুসরণ করতাম। তার আসা পর্যন্ত আমাকে এমন আমল বলে দেন, যা তার সমপর্যায়ে হবে।সুত্রঃ মুসনাদে আহমাদঃ৩/৪৩৯, তাব্রানি ২০/১৯৬,হাঃ৪৪১, মুস্তাদ্রা কে হাকিম২/৭৩ হাঃ ২৩৯৭।
পর্যালোচনাঃ
দেখুন, হাদিসে মহিলা নামায সহ যাবতীয় আমলে তার স্বামী তথা ১ ব্যক্তির অনুসরণ করার কথা বলছেন, অথচ রাসুল কিছুই বললেন না  রসুল সাঃ চুপ থাকাটা রেজামন্দির আলামত ,এতে তাকলিদে জায়েজ হওয়ার ইংগিত পাওয়া যায়।


তৃতীয় প্রমানঃরাসুলুল্লাহ সা, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ রাঃ , ব্যপারে বলেন,আমি তোমাদের জন্য তাই পছন্দ করি ইবনে মাসুদ যা পছন্দ করে।সুত্রঃ রে ইরশাদ মুসতাদরাক ৩/৩১৯ হাঃ৫৩৯৪ । ইমাম জাহাবি ও হাকিম হাদিস টি কে সহিহ বলেছেন।

দেখুন, হাদিসে ইবনে মাসুদের পছন্দই রাসুলের পছন্দ বলে মত ব্যক্ত করা প্রমান বহন করে তার কথা অনুযায়ী অন্যরা আমল করলেও তা রাসুলের নিকট গৃহীত হবে। এর মাধ্যমে ও তাকলিদে শাখসি প্রমাণিত হয়।
উল্লেখ্য, হানাফি মাযহাবের মাসআলা মাসাইল বেশীর ভাগ ইবনে মাসুদের রাঃ বর্ণনা ও আমলের ভিত্তিতে ই হয়েছে।

৪র্থ প্রমানঃ      মক্কা, মদিনা, ইয়ামন ও ইরকাবাসীর  তাকলিদ।

 একদল মদিনাবাসি হযরাত ইবনে আব্বাস কে মাসআলা জিজ্ঞেস করল যে, ফরয তাওয়াপের পর বিদায়ী তাওয়াপের আগে যদি কোন মহিলার ঋতুস্রাব শুরু হয় তাহলে কি করবে? উত্তরে তিনি বললেন, বিদায়ী তাওয়াফ না করে মক্কা শরীফ ত্যাগ করতে পারবে । মদিনাবাসি যাইদ বিন সাবিতের অনুসরণ করতেন। তাই তারা বলল, আমরা যাইদ কে উপেক্ষা করে আপনার কথা মানতে পারিনা। যেহেতু আপনার ফাতওয়া যাইদের বিপরীতে । সুত্রঃবুখারি-২/৫৪১ ( ১৭৫৮-১৭৫৯)দেখুন, এখানে মদিনা বাসী যাইদ(রা) এর অনুসরণ করতেন যা তাকলিদে শাখসি ছিল। তাই তারা ইবনে আব্বাসের কথা সরাসরি না মেনে বলল ,আমরা আগে জাইদ কে জিজ্ঞাসা করি, তারপর। অথচ এ মাসআলায় ইবনে আব্বাস সঠিক ছিলেন। পরে ইবনে আব্বাস তাদেরকে বুঝিয়ে বললেন, তাহলে তোমরা মদিনায় গিয়ে উম্মে সুলাইম কে জিজ্ঞাসা করে নিবে।সুত্রঃ আবু দাউদ-তায়ালাসি প্রঃ২২৯ পরবর্তীতে তারা তাই করল। যাইদ বিন সাবিত ও বিষয়টি তাহকিক করে ইবনে আব্বাসের কথা মেনে নেন। দেখুন, কি অপূর্ব অনুসরণ। সাধারনরা এমনিতেই মেনে নিল । আর যিনি বিজ্ঞ , তিনি তাহকিক করার পর মেনে নিলেন। সুতরাং সাহাবারা কারো অনুসরণ করেননি এমনটা বলা ঠিক হবেনা।  

সাহাবায়ে কিরাম যারা সরাসরি রাসূল সাঃ এর কাছে ছিলেন তাদের জন্য রাসূল সাঃ এর ব্যাখ্যা অনুসরণ করা ছিল আবশ্যক। এছাড়া কারো ব্যাখ্যা নয়।কিন্তু যেই সকল সাহাবারা ছিলেন নবীজী সাঃ থেকে দূরে তারা সেই স্থানের বিজ্ঞ সাহাবীর মাযহাব তথা মত অনুসরণ করতেন। যেমন ইয়ামেনে হযরত মুয়াজ বিন জাবাল রাঃ এর মত তথা মাযহাবের অনুসরণ হত। আব্দুল্লাহ বিন মাসউদের অনুসরণ করতেন ইরাকের মানুষ।

তাছাডা নবী সাঃ পৃথিবী থেকে বিদায়ের পর সাহাবায়ে কেরামের সংখ্যা ছিল প্রায় ১৪৪০০০ তনমধ্যে ১৪৯ জন ছিলেন মুজতাহিদ ছাহাবী ,আর বাকীরা ছিল সাধারন তবকার সাহাবী অথাত তাদের মধ্যে ঐ রকম এজতেহাদ করার ক্ষমতা ছিলনা ,আবার মুজতাহিদ ছাহাবীদের
মধ্যে ৭ জন ছিলেন ১ম তবক্বা ২০ জন ছিলেন ২য় তবক্বার ও ১২২ জন ছিলেন ৩য় তবক্বার , গডে এ ১৪৯জন মূলত এ মুজতাহিদ ছাহাবীদের তাকলীদ করে ছিলেন প্রায় লক্ষাধীক ছাহাবায়ে কেরাম
সুতরাং ছাহাবীদের যুগেই মুলত তাকলীদের সূচনা ৷------------  

 

তাবেয়ীদে  যুগে মাযহাব বা তাকলীদ
তাবেয়ীরা যেই সকল এলাকায় থাকতেন, সেই সকল এলাকার বিজ্ঞ সাহাবীদের বা বিজ্ঞ মুজতাহিদের মত তথা মাযহাবের অনুসরণ করতেন। তাদের মাঝে উল্লেখযোগ্য ছিলেন-
 হযরত সাঈদ বিন মুসায়্যিব রহঃ, হযরত আবু সালমা বিন আব্দির রহমান রহঃ, ৩ হযরত ওরওয়া বিন জুবাইর রহঃ  হযরত কাসেম বিন মুহাম্মদ রহঃ, হযরত সুলাইমান বিন ইয়াসার রহঃ, ৬ হযরত খারেজা বিন জায়েদ রহঃ প্রমূখবৃন্দ।
তারপর মদীনায় যাদের মত তথা মাযহাবের অনুসরণ করা হত তাদের মাঝে উল্লেখযোগ্য হল-হযরত ইমাম জুহরী রহঃ, হযরত ইয়াহইয়া বিন সাঈদ রহঃ২৩ হযরত রাবিয়া বিন আব্দির রহমান রহঃ। আর মক্কা মোকাররমায় ছিলেন আতা বিন আবি রাবাহ রহঃ,  আলী বিন আবি তালহা রহঃ,  আব্দুল মালিক বিন জুরাইজ রহঃ প্রমূখ। আর কুফায় ছিলেন হযরত ইবরাহীম নাখয়ী,  আমের বিন শুরাহবীল, শাবী, ৩ আলকামা, আল আসওয়াদ রহঃ।  আর বসরায় ছিলেন-হাসান বসরী রহঃ। ইয়ামানে হযরত তাওস বিন কায়সান রহঃ। শামে হযরত মাকহুল রহঃ প্রমূখ।


যাদের ফাতওয়া বিধৃত হয়েছে-মুয়াত্তাগুলোতে।, মুসনাদগুলোতে, আর সুনানগুলোতে, যেমন মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, কিতাবুল আসার, শরহু মায়ানিল আসার ইত্যাদী গ্রন্থে। {উসুলুল ইফতা লিল তাক্বী উসমানী দাঃবাঃ}

 

  মুহাদ্দিসগন কি মাযহাব মেনেছেন?                       
এই কথাটি বুঝার আগে একটি কথা আগে বুঝে নিন। সেটা হল-রাসূল সাঃ এর যুগ থেকেই দুটি দল চলে আসছে, একটি দল হল যারা ইজতিহাদ তথা উদ্ভাবনী ক্ষমতার অধিকারী। তারা ইজতিহাদ করতেন তথা মত দিতেন বিভিন্ন বিষয়ে। আর একদল ছিলেন যাদের এই ক্ষমতা ছিলনা, তারা সেই মুজতাহিদদের মতের তথা মাযহাবের অনুসরণ করতেন।

ঠিক একই অবস্থা ছিল সাহাবাদের যুগে। একদল ছিল মুজতাহিদ, যাদের একটি তালিকা ইতোপূর্বে উল্লেখিত হয়েছে। আর বিশাল এক জামাত ছিল যারা ইজতিহাদের ক্ষমতা রাখতেন না। তারা সেই সকল মুজতাহিদদের মাযহাব তথা মতের অনুসরণ করতেন। তেমনি তাবেয়ীদের একই অবস্থা ছিল, একদল মুজতাহিদ, আরেকদল মুকাল্লিদ তথা অনুসারী। এমনি মুহাদ্দিসীনদের মাঝেও দুই দল ছিল, একদল ছিল যারা ইজতিহাদের ক্ষমতা রাখতেন, আরেকদল ছিল যারা ইজতিহাদের ক্ষমতা রাখতেন না। তাই তাদের মাঝে কারো কারো মাযহাব রয়েছে কারো কারো নেই। কেউ কেউ নিজেই মাসআলা বের করেছেন, কেউ কেউ অন্য কোন ইমামের অনুসরণ করেছেন।


যেমন ইমাম বুখারী মুজতাহিদ ছিলেন, তাই তার কারো অনুসরণের দরকার নাই। তবে কেউ কেই তাকে শাফেয়ী মাযহাবী বলে মত ব্যক্ত করেছেন। {আল ইনসাফ=৬৭, তাবাকাতুশ শাফেয়িয়্যাহ-২/২, আবজাদুল উলুম৮১০}

এমনিভাবে ইমাম মুসলিম রহঃ ছিলেন শাফেয়ী মাযহাবের অনুসারী। {আল হিত্তাহ-১৮৬}
নাসায়ী শরীফের সংকলক ইমাম নাসায়ী রহঃ ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহঃ এর মাযাহাবের অনুসারী ছিলেন।,
ইমাম আবু দাউদ রহঃ, ও ছিলেন হাম্বলী মাযহাবের অনুসারী। {ফয়জুল বারী-১/৫৮, আবজাদুল উলুম-৮১০, ইলাউল মুয়াক্কিয়ীন-১/২৩৬}

ইমাম তাহাবী রহঃ ছিলেন হানাফী রহঃ এর অনুসারী। যা তার সংকলিত তাহাবী শরীফ পড়লেই যে কেউ বুঝতে পারবে।
এছাড়াও বাকি সকল মুহাদ্দিস হয়ত মুজতাহিদ ছিলেন, নতুবা ছিলেন মুকাল্লিদ কোননা কোন ইমামের।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন