Translate

সোমবার, ৩০ মার্চ, ২০১৫

মাশরুম খান চাষ করুন,মাশরুম কি ?

     


মাশরুম কি ?
মাশরুম হলো এক ধরণের ভক্ষণযোগ্য মৃতজীবী ছত্রাকের ফলন্ত অংগ। এগুলো মূলত Basidiomycetes অথবা Ascomycetes শ্রেণীর অন্তরগত ছত্রাক। ছত্রাকবিদরা বিশ্বে প্রায় ৩ লক্ষ প্রজাতির ছত্রাক চিহ্নিত করতে পেরেছেন। এই অসংখ্য ছত্রাকের মধ্য থেকে দীর্ঘ যাচাই ও বাছাই করে যে সমস্ত ছত্রাক সম্পূর্ণ খাওয়ার উপযোগী, পুষ্টিকর ও সুস্বাদু সেগুলোকেই তাঁরা মাশরুম হিসেবে গণ্য করেছেন। সুতরাং ব্যাঙের ছাতা এবং মাশরুম এক জিনিস নয়। ব্যাঙের ছাতা প্রাকৃতিক ভাবে যত্রতত্র গজিয়ে ওঠা বিষাক্ত ছত্রাকের ফলন্ত অংগ কিন্তু মাশরুম হলো বিশ্বের সর্বাধুনিক পদ্ধতি (টিস্যু কালচার)-এর মাধ্যমে উৎপন্ন বীজ দ্বারা সম্পূর্ণ পরিচ্ছন্ন পরিবেশে বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে চাষ করা সুস্বাদু, পুষ্টিকর এবং ঔষধীগুণ সম্পন্ন সবজি, যা সম্পূর্ণ হালাল।
পবিত্র কোরআন ও হাদীসে মাশরুমকে অত্যন্ত মর্যাদাকর খাবার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সহীহ বুখারী শরীফে রাসুল (সঃ) বলেছেন, আল কামাতু মিনাল মান্না ওয়া মাহা সাফা আল্ আইন” অর্থাৎ মাশরুম এক শ্রেণীর মান্না এবং এর রস চোখের জন্য ঔধষ বিশেষ। আর মান্না সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে সূরা বাকারার ৫৭ নং আয়াতে বলা হয়েছে - অযাল্লালনা আলাইকুমুল গামামা ওয়া আনযালনা আলাইকুমুল মান্না-ওয়াস্-সালওয়া কুলুমিন তায়্যিবাতি মা রাযাক্বনাকুম; ওমা জলামুনা আলাকিন কানূ আনফুছাহুম ইয়াযলিমূন অর্থাৎ আর আমি মেঘমালা দিয়ে তোমাদের উপর ছায়া দান করেছি এবং তোমাদের জন্য অত্যন্ত সম্মানিত খাবার পাঠিয়েছি মান্না ও সালওয়া। তোমরা খাও সে সব পবিত্র বস্তু যা আমি তোমাদের জন্য দান করেছি। সুতরাং পবিত্র কোরআন ও হাদীসের ভাষায় মাশরুম অত্যন্ত উন্নত ও সম্মানিত খাবার হিসেবে বিশেষভাবে উল্লেখিত।
মাশরুম একপ্রকার অপুষ্পক উদ্ভিদ। সবজি হিসেবে এটি একটি পুষ্টিকর খাদ্য। এটি ছত্রাকের বা ইউমাইসেটিসের অন্তর্ক্তূক্ত। এতে সবুজ কণা (Chlorophyll) নাই বিধায় সবুজ কণাযুক্ত উদ্ভিদের মতো নিজের খাদ্য নিজে প্রস্তুত করতে পারে না। সে কারণে খাদ্যের জন্য এরা প্রাণীজ বা উদ্ভিজ বস্তুর ওপর নির্ভরশীল। মাশরুমের মত দেখতে বন জংগলে ছাতা আকৃতির ছত্রাক জন্মে যেগুলো খাওয়ার অনুপযোগী ও বিষাক্ত। গ্রীকরা মাশরুমকে যোদ্ধাদের শক্তিবর্ধক খাবার হিসেবে গন্য করেন, রোমানরা একে ঈশ্বরের খাবার এবং চাইনিজ লোকেরা মাশরুমকে দীঘজীবি হওয়ার খাদ্য হিসেবে বিশ্বাস করেন। ছত্রাকের উঁচু ও নিচু এই দুটি স্তর রয়েছে, মাশরুম উঁচু স্তরের ছত্রাক এবং প্রধানতঃ ব্যাসিডিউমাইসেটিস শ্রেনীর অন্তর্ভূক্ত, এতে যৌন স্পোর হয়। ক্যারিওগ্যামী (Karyogamy) ও মিওসিসের (meosis) ফলশ্রুতিতে এই স্পোর উৎপন্ন হয় এবং এগুলো এক নিউক্লিয়েট বিশিষ্ট এবং হ্যাপলয়েড (Haploid)| ব্যাসিডিওমাইসেটিস ব্যতিত এসকোমাইসেটিস শ্রেণীর অন্তর্গত কিছু মাশরুম রয়েছে এগুলো স্পঞ্জ মাশরুম বা মোরেল (morels) নামে পরিচিতি। এক্ষেত্রেও যৌন স্পোর হয় তবে তা বেসিডিও স্পোর নয়, তা এসকোস্পোর (ascospore) নামে পরিচিতি। স্পঞ্জ মাশরুমও ভক্ষণযোগ্য। আমরা ছাতার মতো মাশরুমের যে অংশটি দেখতে পাই এটিকে ছত্রাকের ফ্রুটিং বডি (fruiting body) বলা হয়। মাশরুমের ফ্রুটিং বডি বা ভক্ষণযোগ্য অংশটি সাধারণতভাবে চারভাগে
ভাগ করা হয়েছে।
ওয়েস্টার মাশরুম
(১) টুপী বা পিলিয়াস (Pilius), (২) জিল (gills) বা ল্যামেল্যা, (lamellae), (৩) আবরণ বা ভেইল এনুলাস (veil annulus), (৪) দন্ড বা স্টাইপ (stipe),
(৫) মাইসেলিয়াম মাশরুমের দন্ড বা স্টাইপের নিম্নাংশে থাকে যা সাধারনতঃ দৃশ্যমান হয় না।
টুপী (Pilius)
টুপী বা পিলিয়াস অনেকটা ছাতার আকৃতি বিশিষ্ট। এটি সাধারণত: মাংশ (fleshy) এবং পুরু হয়। জাতভেদে টুপী বিভিন্ন আকৃতি, মাপ ও বর্ণের হয়।
জিল (gills)
জিলাস বা ল্যমেলা মাশরুমের টুপীর নীচের অংশ। এর মধ্যে বংশবিস্তারের অতি প্রয়োজনীয় স্পোর (spore) থাকে। জাতভেদে স্পোরের রং বিভিন্ন হয় এবং বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে রংয়ের পরিবর্তন হয়। জিল এক ধরণের অসংখ্যা সমান্তরাল সুতো দিয়ে তৈরী এবং এরই মধ্যে গদাকৃতির কোষের শীর্ষে বেসিডিওস্পোর থাকে। স্পোরগুলো খালি চোখে দেখা যায় না তবে অনেকগুলো স্পোরকে একত্রে ধুলোর মতো মনে হয়। স্পোরগুলো ঝরে পড়লে তা বাতাসে অন্যত্র নিতে হয় । অনুকুল পরিবেশে স্পোরগুলো গজায়। উচ্চবর্ণের উদ্ভিদও যেমন বীজ থাকে, মাশরুমের তেমনি থাকে স্পোর। স্পোর গজিয়ে সুতোর মত এক ধরণের দন্ড জন্ম নেয়। এগুলোকে হাইফা (hypha) বলা হয়। অনেকগুলো হাইফাকো একত্রে মাইসেলিয়াম বলে। মাইসেলিয়াম বৃদ্ধি পেয়ে দীর্ঘায়িত হয় এবং খাদ্যবস্তু সংগ্রহ করে। হাইফাই ছত্রাকের মূল কাঠামো।
আবরণ (veil )
মাশরুমের সদ্যোজাত ফ্রুটিং বডির জিল (gills) এক ধরণের কোষেকলা দিয়ে আবৃত থাকে যা টুপীর (Pilius) প্রান্ত থেকে দন্ড পর্যন্ত বিস্তৃত। এই কোষকলাকে আবরণ বা veil বলা হয়। ধীরে ধীরে ফ্রুটিং বডির বৃদ্ধি হতে থাকলে টুপীর দিককার আবরণ ছিড়ে যায় এবং এর কিছু অংশ টুপীর প্রান্তভাগ সংলগ্ন থাকে অন্য অংশ দন্ডের (stipe) চারিদিকে আংটির মতো থাকে এটিকে এনুলাস বলা হয়।
দন্ড (stipe or stalk)
টুপী বা (Pilius) কে এই দন্ডই (stipe) ধারণ করে রাখে। এই দন্ডটি সাধারণভাবে টুপীর মাঝামাঝি থাকে। কিন্তু ক্ষেত্র বিশেষ এটি একপাশেও থাকতে পারে। দন্ডটির ভেতরের অংশ ভরাট কিংবা ফাঁপা থাকতে পারে। দন্ডটির সর্বাংশ একই ধরণের পরিধি বিশিষ্ট হতে পারে কিংবা মধ্যম বা শেষ প্রান্ত কিছুটা ফুলে থাকতে পারে।
একজন সুস্থ্য লোকের জন্য প্রতিদিন ২০০-২৫০ গ্রাম সবজি খাওয়া উচিত। উন্নত দেশের লোকেরা প্রতিদিন গড়ে ৪০০-৫০০ গ্রাম সবজি খায়। বিশ্বব্যাপী সবজি গ্রহণের তথ্য উপাত্ত থেকে বোঝা যায়, যে দেশ যত বেশি উন্নত সে দেশ ততবেশি সবজি খায়। কারণ সবজিতে পাওয়া যায় দেহকে সুস্থ্য, সবল রোগমুক্ত রাখার প্রয়োজনীয় সুষম খাদ্য উপাদান ও রোগ প্রতিরোধক ভিটামিন ও মিনারেল। অধিক সবজি খাওয়ার ফলে তারা অধিক কর্মক্ষম থাকেন এবং বেশী আয়ু লাভ করেন। অথচ আমরা প্রতিদিন গড়ে ৪০-৫০ গ্রাম (আলু বাদে) সবজি খাচ্ছি। প্রয়োজন ও প্রাপ্তির এই ব্যবধানের কারণে আমাদের দেশের শতকরা ৮৭% লোক অপুষ্টিজনিত রোগে ভোগেন। এ অবস্থা থেকে দেশকে মুক্ত করতে হলে পুষ্টিকর সবজি খাওয়ার অভ্যাস বাড়াতে হবে, আর অধিক পরিমাণে সবজি খেতে হলে অধিক পরিমাণ সবজি উৎপাদন করতে হবে।
আমরা জানি, উৎপাদন বৃদ্ধির প্রচলিত ২টি পদ্ধতি, একটি হলো আবাদী জমি বাড়িয়ে- সমান্তরাল পদ্ধতি (Horizontal Method) এবং অপরটি হলো প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মাধ্যমে- উলম্বিক পদ্ধতি (Vertical Method)। আমাদের দেশে যে হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে ঠিক সমহারে সবজি উৎপাদনের উপযোগী জায়গা কমে যাচ্ছে। এক হিসেব মতে দেখা যায়, জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় ৮০ হাজার হেক্টর জমি কমে যাচ্ছে। এরই ফলশ্রুতিতে বর্তমানে দেশের ভূমিহীনের সংখ্যা প্রায় ৫০ ভাগের মত, যাদের শুধুমাত্র ঘরটিই একমাত্র অবলম্বন। সুতরাং সবজি উৎপাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রথম পদ্ধতি অর্থাৎ সমান্তরাল পদ্ধতিটি এদেশের জন্য অচল। তাহলে শুধুমাত্র উলম্বিক পদ্ধতিই আমাদের সমস্যার সমাধান দিতে পারে। কিন্তু এ পদ্ধতির জন্যও নূন্যতম আবাদী জমির দরকার হয়। অথচ দেশের ৫০% লোকের সে সুবিধাও নেই। তাই আমাদের এখন এমন কোন সবজি উৎপাদন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা দরকার যা চাষীরা তাদের ঘরকে ব্যবহার করে উৎপাদন করতে পারেন, আর তা কেবল মাশরুম চাষের মাধ্যমেই সম্ভব।
বিভিন্ন দেশের মাশরুম খাওয়ার অবস্থা লক্ষ্য করলে আবার দেখা যায় যে দেশ যত বেশি উন্নত সে দেশের মানুষ তত বেশি মাশরুম খায়। উদাহরণ স্বরূপ বিশ্বে মাশরুম খাওয়া ও উৎপাদনের ধারা হচ্ছে - বর্তমানে প্রায় ১০০ টি দেশে মাশরুম চাষ হয় যার ৭০% উৎপাদিত হয় চীনে। উৎপাদিত মাশরুমের ৮৫% ব্যবহৃত হয় গ্রুপ-৬ ভূক্ত ৬ টি দেশে যথা - যুক্তরাষ্ট্র ৩০%, জার্মানী ১৭%, যুক্তরাজ্য ১১%, ফ্রান্স ১১%, ইটালী ১০%, কানাডায় ৬%। বাকী ১৫% মাশরুম খায় অবশিষ্ট বিশ্বের মানুষ। মাশরুমের পুষ্টি ও ঔষধি গুণের কারণে এই চাহিদা দিনে দিনে বহুগুণে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রাচীনকাল থেকেই পৃথিবীর বিভিন্ন জাতি ও ধর্মের মানুষের কাছে মাশরুম একটি জনপ্রিয় খাবার হিসেবে গুরুত্বপূর্ন। এতে খনিজ পদার্থের পরিমান মাছ ও মাংসের তুলনায় বেশী এবং প্রচলিত সবজীর তুলনায় প্রায় দ্বিগুন। মাশরুমে আমিষের পরিমান আলু থেকে দ্বিগুন, টমেটো থেকে চারগুন এবং কমলা লেবুর থেকে ছয়গুন বেশী। হাদিস শরিফে মাশরুমকে বেহেশতী খাবারের সাথে তুলনা করা হয়েছে (সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফ)।
১। মাশরুমে আমিষ, শর্করা, চর্বি, ভিটামিন ও মিনারেল এমন সম্বনিতভাবে আছে যা শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। ফলে গর্ভবতী মা ও শিশু নিয়মিত মাশরুম খেলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
২। এতে চর্বি ও শর্করা কম থাকায় এবং আঁশ বেশী থাকায় ডায়বেটিক রোগীদের আদর্শ খাবার হিসেবে গন্য করা হয়।
৩। রক্তের কোলেষ্টেরল কমানোর অন্যতম উপাদান ‘ইরিটাডেনিন’ ‘লোবাষ্টটিন’ এবং ‘এনটাডেনিন’ মাশরুমে থাকায় এটি হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপ নিরাময় করে ।
৪। মাশরুমে প্রচুর ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিন-ডি থাকায় শিশুদের হাড় ও দাঁত গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
৫। প্রচুর ফলিক এসিড ও আয়রন সমৃদ্ধ বিধায় মাশরুম রক্তশূন্যতা দূরীকরনে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
৬। এতে লিংকজাই-৮ নামক পদার্থ থাকায় হেপাটাইটিস-বি জন্ডিস প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।
৭। মাশরুমের বেটা-ডি, গ্লুকেন, ল্যাম্পট্রোল, টারপিনওয়েড এবং বেনজোপাইরিন ক্যান্সার ও টিউমার প্রতিরোধক।
৮। মাশরুমের ট্রাইটারপিন এইডস প্রতিরোধক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
৯। মাশরুমের এডিনোসিন ডেংগু জ্বর প্রতিরোধক। কান মাশরুম (Auricularia spp.) চোখ ও গলা ফোলায় উপকারী।
১০। বিভিন্ন প্রকার এনজাইম সমৃদ্ধ মাশরুম আমাদের পেটের পীড়ায় উপকারী।
১১। মাশরুমে সালফার সরবরাহকারী এমাইনো এসিড থাকায় তা চুল পড়া ও চুল পাকা প্রতিরোধ করতে সক্ষম।
মাশরুমের পুষ্টিমান
পুষ্টি বিচারে মাশরুম নিঃসন্দেহে সবার সেরা। কারণ আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যেসব উপাদান অতি প্রয়োজনীয় যেমন - প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেল সেগুলো মাশরুমে উচুঁ মাত্রায় আছে। অন্যদিকে যেসব খাদ্য উপাদানের আধিক্য আমাদেরকে জটিল মরণব্যাধীর দিকে নিয়ে যায়, যেমন - ফ্যাট ও কার্বোহাইড্রেড তা মাশরুমে নেই বললেই চলে। প্রতি ১০০ গ্রাম শুকনা মাশরুমে নিম্নলিখিত পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়।
মাশরুমের পুষ্টিমূল্য (১০০ গ্রাম শুকনা মাশরুম)
খাদ্য উপাদানের নাম
পরিমাণ (গ্রাম)
মন্তব্য
আমিষ
২৫-৩৫
উন্নত ও সম্পূর্ণ আমিষ
ভিটামিন ও মিনারেল
৫৭-৬০
সব ধরণের ভিটামিন ও মিনারেল
শর্করা
৫-৬
পানিতে দ্রবনীয়
চর্বি
৪-৬
অসম্পৃক্ত চর্বি

প্রোটিন মূল্য
মাশরুমের প্রোটিন হল অত্যন্ত উন্নত, সম্পূর্ণ এবং নির্দোষ। একটি সম্পূর্ণ প্রোটিনের পূর্বশর্ত হলো মানব দেহের অত্যাবশ্যকীয় ৯টি এমাইনো এসিডের উপস্থিতি। মাশরুমে অপরিহার্য এ ৯টি এমাইনো এসিডই প্রশংসনীয় মাত্রায় আছে। অন্যান্য প্রাণীজ আমিষ যেমন-মাছ, মাংস, ডিমের আমিষ উন্নতমানের হলেও তার সঙ্গে সম্পৃক্ত চর্বি থাকায় তা গ্রহণে দেহে কোলেস্টরল সমস্যা দেখা দেয়। যার ফলে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, মেদভূড়ি ইত্যাদি জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পক্ষান্তরে মাশরুমের প্রোটিন নির্দোষ। তাছাড়াও প্রোটিনের বিপরীতে ফ্যাট এবং কার্বোহাইড্রেটের সর্বনিম্ন উপস্থিতি এবং কোলেস্টরল ভাঙ্গার উপাদান লোভাস্টাটিন, এন্টাডেনিন, ইরিটাডেনিন ও নায়াসিন থাকায় কোলেস্টরল জমার ভয় থাকে না। এ কারণে প্রোটিনের অন্যান্য সব উৎসের তুলনায় মাশরুমের প্রোটিন সর্বোৎকৃষ্ট ও নির্দোষ। নিচের ছকে প্রোটিনের অন্যান্য উৎসের সাথে মাশরুমের তুলনা দেখানো হল
প্রতি ১০০ গ্রাম আহার উপযোগী খাবারে প্রোটিনের পরিমাণ
খাবারের নাম
প্রোটিন (গ্রাম)
মাংস
২২-২৫ গ্রাম
মাছ
১৬-২২ গ্রাম
ডিম
১৩ গ্রাম
ডাল ২২-৪০ গ্রাম
মাশরুম ২৫-৩৫ গ্রাম
মাশরুমের ৯টি অত্যাবশ্যকীয় এমাইনো এসিডের পরিমাণ (গ্রাম / ১০০ গ্রাম)
এমাইনো এডিসের নাম
Agaricus bisporus
Agaricusb edodes
Pleurotus florida
Pleurotus ostreatus
Pleurotus sajorcaju
Volvereilla volvacea
Leucine
৭.৫
৭.৯
৭.৫
৬.৮
৭.০
৪.৫
Isoleucine
৪.৫
৪.৯
৫.২
৪.২
৪.৪
৩.৪
Valine
২.৫
৩.৭
৬.৯
৫.১
৫.৩
৫.৪
Tryptophan
২.০
-
১.১
১.৩
১.২
১.৫
Lysine
৯.১
৩.৯
৯.৯
৪.৫
৫.৭
৭.১
Threonine
৫.৫
৫.৯
৬.১
৪.৬
৫.০
৩.৫
Phenylalanine
৪.২
৫.৯
৩.৫
৩.৭
৫.০
২.৬
Methionine
০.৯
১.৯
৩.০
১.৫
১.৮
১.১
Histidine
২.৭
১.৯
২.৮
১.৭
২.২
৩.৮
Total essential
৩৮.৯
৩৬.০
৪৬.০
৩৩.৪
৩৭.৬
৩২.৯
ফ্যাট মুল্য
মাশরুমের ফ্যাট অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড দ্বারা তৈরি যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এছাড়া স্ফিঙ্গলিপিড ও আরগেস্টেরল থাকায় এর মানকে আরও উন্নত করেছে। স্ফিঙ্গলিপিড থাকায় হাড়ের মজ্জা ও ব্রেন ডেভেলপমেন্টে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং আরগেস্টেরলের উপস্থিতির কারণে ভিটামিন-ডি সিনথেসিসে সহায়ক হয় যা হাড় ও দাঁত তৈরি এবং ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়তা করে। এছাড়া মাশরুমের ফ্যাটে ৭০-৮০% লিনোলিক এসিড আছে যা শরীর সুস্থ্য রাখতে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখে।
কার্বোহাইড্রেট মূল্য
আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় কার্বোহাইড্রেট গ্রহণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি যা সম্পূর্ণ খরচ না হয়ে শরীরে জমা হয় এবং নানা ধরণের স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করে। মাশরুমে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কম এবং তা পানিতে দ্রবনীয়। ফলে মাশরুমের কার্বোহাইড্রেড শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এছাড়া এরমধ্যে অধিকাংশ পলিস্যাকারাইড যেমন- গ্লাইকোজেন, বেটা-ডি-গ্লুক্যান, ল্যাম্পট্রোল, লোভাস্টাটিন, এন্টাডেনিন, ইরিটাডেনিন, ট্রাইটারপিন, এডিনোসিন, ইলুডিন প্রভৃতি থাকায় দেহের জটিল রোগ নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া মাশরুম এ্যাসিডিক সুগার ও এ্যাসিডিক পলিস্যাকারাইড বিশেষ করে H৫১ সরবরাহ করে। মাশরুমে আঁশের পরিমাণও বেশি। জাত ভেদে ১০-২৮% আঁশ পাওয়া যায়। ফলে ডায়াবেটিকস রোগীদের ইনসুলিনের চাহিদা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ভিটামিন ও মিনারেল
ভিটামিন ও মিনারেল দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়। প্রতিদিন চাহিদা মাফিক নির্দিষ্ট পরিমাণ ভিটামিন ও মিনারেল গ্রহণ না করলে দেহে বিভিন্ন জটিল রোগের সৃষ্টি হয়। অল্প পরিমাণে অথচ অত্যাবশ্যকীয় এ খাদ্য উপাদান গ্রহণ নিশ্চিত করা গেলে এ অবস্থার সৃষ্টিই হবে না। ভিটামিন ও মিনারেলের উৎস হিসেবে মাশরুমের অবস্থান খুবই উচ্চে। শুকনা মাশরুমে ৫৭%-৬০% ভিটামিন ও মিনারেল (অত্যাবশ্যকীয় ট্রেস এলিমেন্টসহ) বিদ্যমান। আমাদের শরীরের জন্য প্রতিদিন প্রধান প্রধান ভিটামিন ও মিনারেলের যে পরিমাণ প্রয়োজন এবং ১০০ গ্রাম শুকনা মাশরুম যে পরিমাণ সরবরাহ করে তা নিম্নে দেয়া হল

দৈনিক মানবদেহে ভিটামিন ও মিনারেলের চাহিদা এবং ১০০ গ্রাম শুকনা মাশরুমে এদের পরিমাণ
প্রধান প্রধান ভিটামিন ও মিনারেলের নাম
দৈনিক চাহিদা
মাশরুমে প্রাপ্তি
থায়ামিন (বি ১)
১.৪ মিলি গ্রাম
৪.৮ - ৮.৯ মিলি গ্রাম
রিবোফ্লাভিন (বি ২) ১.৫ মিলি গ্রাম
৩.৭-৪.৭ মিলি গ্রাম
নায়াসিন
১৮.২ মিলি গ্রাম
৪২-১০৮ মিলি গ্রাম
ফসফরাস ৪৫০ মিলি গ্রাম
৭০৮-১৩৪৮ মিলি গ্রাম
লৌহ
৯ মিলি গ্রাম
১৫-১৭ মিলি গ্রাম
ক্যালসিয়াম
৪৫০ মিলি গ্রাম
৩৩-১৯৯ মিলি গ্রাম
কপার
২ মিলি গ্রাম
১২-২২ মিলি গ্রাম

মাশরুমের মোট ash এর মধ্যে পটাসিয়াম, ফসফরাস, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের পরিমাণ প্রায় ৭০ ভাগ, যার মধ্যে আবার ৪৫ ভাগই হচ্ছে পটাসিয়াম। এছাড়া কপার ও সেলিনিয়াম যথেষ্ট পরিমাণে থাকায় চুল পড়া, চুল পাক রোধসহ মহিলাদের ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
মাশরুমের স্বাদ
মাশরুম অত্যন্ত সুস্বাদু সবজি। প্রাচীনকাল থেকে মানুষ মুখোরোচক এই মাশরুমের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে খাদ্য তালিকায় মাশরুমকে অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে। এমনকি রাষ্ট্রীয় অতিথিদের আপ্যায়নে ব্যবহৃত হতো অসাধারণ লোভনীয় স্বাদের মাশরুম। বিশ্বব্যাপী ভোজন রসিকরা মাশরুমকে স্বর্গীয় খাবারের সাথে তুলনা করে। মাশরুম শুধু নিজেই স্বাদই খাবার নয়, মাশরুম অন্য খাবারের সাথে ব্যবহার করলে তার স্বাদ বহুগুণে বেড়ে যায়। তাই মাশরুমকে বলা হল পরশস্বাদু খাবার।
ঐতিহাসিক গুরুত্বঃ মাশরুমের স্বাদ এবং পুষ্টি দুটোই অসাধারণ। যে কারণে খৃষ্টপূর্ব ৫০০ সন থেকে মানুষ মাশরুমকে সুস্বাদু খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে আসছে। প্রাচীন ফারাও সম্রাট মাশরুমকে দেবতার খাবার হিসেবে মনে করতেন। আর গ্রীকরা মনে করতেন ‘ঝুঁকিপূর্ণ লড়াইয়ের ময়দানে জয়লাভের জন্যে প্রয়োজনীয় শৌর্যবীর্য যোগাতে পারে মাশরুম’। চাইনিজরা ‘অমরত্বের সন্ধানে’ মাশরুম খাওয়া শুরু করেন। হাদিস শরীফের সূত্র হতে জানা যায়, ‘মাশরুম হচ্ছে মান্নার নির্যাস থেকে উৎপন্ন অত্যন্ত উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন খাবার’। ছত্রাকবিদদের মতে মাশরুম থেকেই ‘মাইকোলজি’ শব্দটি এসেছে।
পুষ্টিগুনের কারণে মাশরুমকে অধিকাংশ মরণব্যাধির প্রতিরোধক এবং নিরাময়ক হিসেবে স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীরা মনে করছেন। যে সমস্ত কারণে মাশরুম বিভিন্ন জটিল রোগের প্রতিরোধক এবং নিরাময়ক হিসেবে কাজ করে তা নীচের ছকে দেয়া হল।
যে সকল রোগ নিরাময় হয় যে যে উপাদানের কারনে নিরাময় হয়
ইমুন সিস্টেম উন্নত করে আমিষ, শর্করা, চর্বি, ভিটামিন ও মিনারেলের অপূর্ব সমন্বয়
ডায়াবেটিস চর্বি ও শর্করা কম এবং আঁশ বেশী, পলিস্যাকারাইড, ইনসুলিন উপাদানেয় সহায়ক
কোলেস্ট্রেরল, হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ ইরিটাডেনিন, লোভাষ্টাটিন, এন্টাডেনিন ও নায়াসিন
দাঁত ও হাড়ের গঠন ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিন - ডি
রক্ত শূন্যতা
ফলিক এসিড ও লৌহ
হেপাটাইটিস বি, জন্ডিস লিঙ্কজাই-৮, ফলিক এসিড
ক্যান্সার, টিউমার বেটা-ডি-গ্লুকেন, ল্যাম্পট্রোল, টারপিনওয়েড গ্রুপ ও বেনজোপাইরিন অর্গানিক জার্মানিয়াম
এইড্‌স ট্রাইটারপিন
আমাশয় ইলুডিন এম ও ইলুডিন এস
যৌন অক্ষমতা গ্লাইকোজেন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিন-ই
ডেঙ্গু জ্বর
এডিনোসিন
হাইপার টেনশন ও মেরুদন্ড স্ফিঙ্গলিপিড ও ভিটামিন বি-১২, এন্টি অক্সিডেন্ট
পেটের পীড়া
এনজাইম
কিডনি ও এলার্জি নিউক্লিক এসিড ও এন্টি এলার্জেন
চুলপড়া ও চুল পাকা সালফার এমাইনো এসিড, সেলিনিয়াম ও কপার
“রোগ মুক্ত স্বাস্থ্য চান - নিয়মিত মাশরুম খান”
মাশরুম চাষের সুবিধাসমূহ
মাশরুম বিষয়ক সকল তথ্য জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কেন্দ্র, সাভার, ঢাকা এর সৌজন্যে আপডেট করা হয়েছে
বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু মাশরুম চাষের অত্যন্ত উপযোগি। সে সাথে মাশরুম চাষের প্রয়োজনীয় উপকরণও (যেমন- খড়, কাঠের গুড়া, আখের ছোবড়াসহ বিভিন্ন কৃষিজ ও শিল্পজ বর্জ্য) অত্যন্ত সস্তা এবং সহজলভ্য।
মাশরুম চাষের সাধারন সুবিধাসমূহঃ
(১) মাশরুম চাষে আবাদী জমি দরকার হয় না।
(২) ঘরের মধ্যে চাষ করা যায়।
(৩) তাকে তাকে সাজিয়ে একটি ঘরকে কয়েকটি ঘরের সমান ব্যবহার করা যায়।
(৪) অত্যন্ত অল্প সময়ে অর্থাৎ মাত্র ৭-১০ দিনের মধ্যে মাশরুম পাওয়া যায় যা বিশ্বের অন্য কোন ফসলের বেলায় প্রযোজ্য নয়।
(৫) বাড়ির যে কেউ মাশরুম চাষে অংশ নিতে পারে।
ঘরে স্তরে স্তরে সাজিয়ে মাশরুম চাষ
মাশরুম চাষে গৃহিনী
মাশরুম চাষে অর্থনৈতিক সুবিধাঃ
মাশরুম চাষ একটি সর্বোত্তম লাভজনক ব্যবসা। অর্থনৈতিক দৃষ্টিতে কোন ব্যবসা সর্বাধিক লাভজনক তখনই ধরা যাবে যখন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নিম্নের বিষয়গুলো সর্বোচ্চ অনুকূল অবস্থা থাকবে। যেমন-
(ক) কম পুঁজির দরকার হবে।
(খ) বিনিয়োগকৃত অর্থ অল্প সময়ের মধ্যে তুলে আনা সম্ভব হবে এবং
(গ) অল্প শ্রমের মাধ্যমে তা সম্ভব হবে।
অপরদিকে বিনিয়োগের বিপরীতে প্রাপ্তির ক্ষেত্রেঃ
(ক) যদি একক প্রতি ফলন অধিক হয়
(খ) বাজার মূল্য অধিক হয়
(গ) একক প্রতি লাভ অধিক হয়, তবে তা সর্বোত্তম ব্যবসা বটে।
কেবল মাশরুমের ক্ষেত্রেই উপরোক্ত সবকটি বিষয় প্রযোজ্য। তাই মাশরুম ব্যবসা মানেই সর্বোত্তম লাভজনক ব্যবসা। এছাড়া অধিক উৎপাদনের মাধ্যমে বিদেশ থেকে মাশরুম আমদানী কমিয়ে দেশী মুদ্রা সাশ্রয় হবে। আরও অধিক উৎপাদন করা সম্ভব হলে বিদেশে মাশরুম রপ্তানীর মাধ্যমে কোটি কোটি বৈদেশিক মুদ্রা ঘরে এনে জাতীয় অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নয়ন করা সম্ভব হবে।
মাশরুম চাষের সামাজিক সুবিধাঃ
মাশরুম চাষে যে সমস্ত সামাজিক সুবিধা পাওয়া যায় সেগুলো হলোঃ
(১) ঘরে ঘরে মাশরুম চাষ করে অত্যন্ত পুষ্টিকর এই সবজি নিয়মিত খেয়ে দেশে পুষ্টিহীনতা দূর করা সম্ভব হবে।
(২) পুষ্টিহীনতা দূর হলে রোগব্যাধী জনিত ব্যয় সাশ্রয়সহ সমাজের সুস্ততা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
(৩) আর সুস্থ্য সবল দেহই অধিক কর্মক্ষম, ফলে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।
(৪) মাশরুম চাষে, সংরক্ষণে, প্রক্রিয়াজাতকরণেও বাজারজাতকরণে কর্মহীন লোকদের নিয়োজিত করে জনগণকে অধিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে।
(৫) যে সমস্ত শিক্ষিত যুবক-যুবতী বেকারত্বের অভিশাপে জর্জরিত, প্রচলিত সামাজিকতার কারণে শিক্ষিত হবার পর যারা রোদে পুড়ে, মাঠে কাদামাটির সাথে মিশে নিজেদেরকে প্রচলিত উৎপাদন পদ্ধতিতে সম্পৃক্ত করতে অনীহা প্রকাশ করেন, সে সমস্ত বেকার ছেলেমেয়েদের জন্য মাশরুম চাষ একটি আর্শীবাদ। কারণ মাশরুম চাষ করতে রোদে পুড়তে হয়না, কাদামাটির সংস্পর্শে আসতে হয় না, ঘরের মধ্যে তাকে তাকে সাজিয়ে সামান্য শ্রমে অল্প সময়ে ন্যূনতম পুজিতে অধিক এবং স্বাধীন উপার্জন করা সম্ভব। যেহেতু মাশরুম উচ্চবিত্তের সৌন্দর্যচর্চা ও সৌখিন খাবারের উপকরণ। তাই মাশরুম চাষ অত্যন্ত মর্যাদাকর পেশা যেখানে শিক্ষিত যুবক-যুবতীরা কোন রকম হীনমন্যতায় না ভুগে গর্বিতচিত্তে আত্মনিয়োগ করতে পারবেন। সুতরাং বাংলাদেশে মাশরুম চাষ মানেই আছে বেকার সমস্যা সমাধানের এক উজ্জ্বল সম্ভাবনা।
মাশরৃম চাষে নারী
মাশরুম চাষে শিক্ষিত যুবক
(৬) বাংলাদেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। অথচ দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার কারণে পর্দা, পুরুষতান্ত্রিকতা অথবা মহিলা শ্রমের সুব্যবস্থা না থাকার মহিলারা উপার্জন বিমুখ। ফলে দেশের অর্ধেক কর্মক্ষম জনশক্তি উন্নয়নের কাজে সম্পৃক্ত নয়। অথচ মাশরুম এমন একটি সবজি যা চাষ করে মহিলারা আর্থ-সামাজিক বাস্তবতার সাথে সংগতি রেখে, স্বামীর যত্ন এবং সন্তান লালন পালন করেও বাড়তি উপার্জন করতে পারেন। তাই মাশরুম চাষ এদেশে মহিলাদের কর্মসংস্থানের এক উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় দ্বার খুলতে পারে।
মাশরুম চাষে পরিবেশের সুবিধাঃ
১। সচরাচর প্রতিদিন আমরা যে সব সবজি খেয়ে থাকি, তার প্রায় সবটাই রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করে উৎপাদন করা হয়। সবজিতে রাসায়নিক সার বা কীটনাশক শুধুমাত্র ভোক্তাকে ক্ষতিগ্রস্থ করে না বরং এগুলো যখন প্রয়োগ করা হয় তখন বায়ুমন্ডলকে দূষিত বা বিষাক্ত করে, মাটিকে বিষাক্ত করে, বৃষ্টির পানিতে সেই বিষ ধুয়ে পানিকেও বিষাক্ত করে। অথচ অধিকাংশ মাশরুমে রাসায়নিক সার বা কীটনাশক কোনটাই ব্যবহার করতে হয় না। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ঘরে সর্বোচ্চ বিশুদ্ধ উপায়ে মাশরুম উৎপাদন করা হয়। তাই মাশরুম সর্বোচ্চ পরিবেশ এবং শরীরের বান্ধব।
২। মাশরুম চাষে ব্যবহৃত উপকরণসমূহ কৃষি, বনজ ও শিল্পের উপজাত যেগুলোর যত্রতত্র এবং অপরিকল্পিত ব্যবহারের ফলে পরিবেশ দূষিত করে। সেগুলোকে উৎপাদনের উপকরণ হিসাবে প্রক্রিয়াজাত করে সম্পদে রূপান্তর করা সম্ভব। ফলে পরিবেশ অধিক দূষনমুক্ত হয়।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে এ কথাটি এখন জোরের সাথে বলা যায় যে, মাশরুম চাষের মাধ্যমে এদেশের পুষ্টি উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি বা বেকারত্ব দূরীকরণ (বিশেষ করে মহিলাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি), আমদানী ব্যয় হ্রাস এবং রপ্তানী আয় বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিবেশ উন্নয়নের এক অপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব। 
https://www.facebook.com/DiKrsibida/posts/593345240775687 

https://www.youtube.com/watch?v=UTm1T-4_1cg 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন