Translate

রবিবার, ২৯ মার্চ, ২০১৫

বৈজ্ঞানীক দৃষ্টিকোণে নামাজ

বৈজ্ঞানীক দৃষ্টিকোণে ইসলামের আমল নামাজ

 নামাজ আল্লাহর বিশেষ এক এবাদত,যা আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনের সহায়ক,  একমাত্র  নামাজ মুসলিম-অমুসলিমদের মধ্যে পার্থক্যকারী এক বিশেষ এবাদত,তাছাডা হাজারো উপকারীতার কথা আমরা কোরআন-হাদীস থেকে জানতে পারি। কিন্তু আজকাল বিজ্ঞান আমাদের  নামাজ সম্পর্কে কি বলে তা নিয়েই আলোচনা করবো। তবে একথা দিবালোকের ন্যায়ই সত্য যে কোরআন বুঝতে আমাদেরকে বিজ্ঞান বুঝতে হবেনা তবে বিজ্ঞান বুঝতে হলে কোরআন বুঝতে হবে। তবে আজকাল বৈজ্ঞানিক বিভিন্ন গবেষনার মাধ্যমে আমাদেরকে কোরআন বুঝতে অনেকাংশে সহায়ক হচ্ছে ।


 আমরা অনেকেই জানি নামাজের বিভিন্ন ধরনের বৈজ্ঞানিক উপকারিতা রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হল শারীরিক উপকারিতা। আর মুসলিম হিসেবে আপনি এটাও হয়তো জেনে থাকবেন যে, নামাজের শ্রেষ্ঠতম অংশ হল সিজদা।

তাই এতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই যে পবিত্র কোরআনে সিজদা শব্দটি কম করে হলে ও ৯০ বার উল্লেখ করা হয়েছে। একবার ভেবে দেখুন কিভাবে সিজদা করি আমরা। স্বাভাবিক অবস্থায় আমরা যখন দাড়িয়ে থাকি বা বসে থাকি তখন আমাদের ব্রেইনে রক্ত পৌছায় ঠিকই, কিন্তু তা একটা স্বাস্থ্যকর ব্রেইনের জন্য পর্যাপ্ত নয়। কিন্তু আমরা যখন সিজদায় যাই তখন মস্তিষ্কে/ব্রেইনে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি রক্ত সঞ্চালিত হয়, যা একটা স্বাস্থ্যকর ব্রেইনের জন্য খুবই জরুরী। আর আমরা যখন সিজদা করি তখন ব্রেইনের ন্যায় আমাদের মুখমণ্ডলের ত্বকেও অতিরিক্ত রক্তসঞ্চালন হয়, যা আমাদের চিল্বলাইন(chilblain) নামক এক ধরনের চর্মরোগ এবং এজাতীয় আরও অনেক রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।তাছাড়া সিজদা আমদেরকে সাইনুসাইটিস (sinusitis) থেকেও বাছিয়ে রাখে। কেননা যারা নিয়মিত সিজদা করে অর্থাৎ নামাজ পড়ে তাদের সাইনাসের (sinus) প্রদাহ হবার সম্ভাবনা অনেক কম।


এছাড়াও সিজদার আরও উপকার রয়েছে। যেমন, যারা নিয়মিত সিজদা করে তাদের ব্রঙ্কাইটিস (bronchitis) হবার সম্ভাবনাও অনেকাংশে কম। একটা লোক যখন স্বাভাবিকভাবে নিঃশ্বাস ছাড়ে  তখন আমদের ফুসফুসে থাকা দূষিত বায়ুর কেবল দুই-তৃতীয়াংশ বের হয় বাকি একতৃতীয়াংশ ভিতরেই থেকে যায়। কিন্তু কেউ যখন সিজদায় অবনত হয় তার এবডমিনাল ভিসেরা(abdominal viscera) ডায়াফ্রামের(diaphragm) উপর চাপ প্রয়োগ করে, ফলে ডায়াফ্রাম ফুসফুসের নিছের দিকে (lower lobes) চাপ প্রয়োগ করে।

 ফলে কেউ যখন সিজদায় অবনত অবস্থায় শ্বাসপ্রশ্বাস নেয় তখন ফুসফুসের ভিতরে জমে থাকা এক তৃতীয়াংশ দূষিত বাতাসও বের হয়ে যায়, যা একটা সুস্থ ফুসফুসের জন্য খুবই দরকারি। এর ফলে আমদের ফুসফুসের বিভিন্ন রোগ হবার সম্ভাবনাও কমে যায় অনেকাংশে।


যদি কেউ নিয়মিত সিজদা করে তবে সিজদার সময় করা অঙ্গভঙ্গি ও শরীরের বিভিন্ন রকমের নাড়াচাড়ার কারণে তার অর্শ(hemorrhoid) বা পাইল্‌স(piles) এবং হার্নিয়া (hernia) হবার সম্ভাবনাও কমে যায় অনেকাংশে।

আবার আমরা যখন সিজদা থেকে উঠে দাড়াই তখন শরীরের পুরো ওজন আমদের পায়ের উপর পড়ে এবং আমদের পা আর রানের পেশীতে চাপ পড়ে। তখন সে পেশীগুলু সক্রিয় হয়ে উঠে যা আমাদের নিন্মাঙ্গে রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে দে, যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও নামাজে রুখু সিজদা বসা আর উঠে দাঁড়ানোর সময় আমরা বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করি যার কারণে আমাদের মেরুদণ্ডে ও বিভিন্ন রকমের নাড়াচাড়া হয়, যা আমদের মেরুদণ্ডের বিভিন্ন রকমের রোগ থেকে বাঁচিয়ে রাখে।

নামাজের এরকম হাজারো উপকারিতা আছে যা বলে শেষ করা যাবে না। কিন্তু আমরা মুসলিমরা সালাত আদায় করি শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আর তার প্রশংসা করবার জন্য। তাই আমাদের মুসলিমদের জন্য উপরে উল্লেখ করা উপকারগুল হল এক ধরনের সাইড ডিশ(side dishes)

বলতে পারেন ডেজার্ট(dessert), যা মূল খাবারের পরে সামান্য পরিমাণে খাওয়া হয়। একজন অমুসলিমকে নামাজের গুরুত্ব বুঝানোর জন্য উপরোক্ত উপকারগুলুর কথা বলতে পারেন আপনি; তা হয়ত তাকে নামাজের দিকে আকৃষ্ট করবে, কিন্তু আমাদের মুসলিমদের জন্য প্রধান বা মূল খাবার অর্থাৎ নামাজের মূল উদ্দেশ্য হল আল্লাহর হুকুম পালনে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করার সাথে তাঁর প্রিয় বান্দা ও তার রসূলের বিধান মেনে চলা।


 কেন দৈনিক পাঁচবার সালাত আদায় করি আমরা?

সালাত হল সৎকাজের জন্য একধরনের প্রশিক্ষণ বা প্রোগ্রামিং। আর প্রশিক্ষণের মূল জিনিটিই হল কোন একটি কাজ বার বার করা বা পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে তা আয়ত্ত করা। তাই আমদেরকেও সালাত আদায় করতে হয় দৈনিক কমপক্ষে পাঁচবার। উদাহারন স্বরূপ বলা যেতে পারে, আমাদের শরীর সুস্থ রাখার জন্য অর্থাৎ সুস্বাস্থ্যের জন্য দৈনিক কমপক্ষে তিন বেলা খাবার খেতে হয় আমাদের। একইভাবে আত্তাকে সুস্থ রাখবার জন্য দৈনিক পাঁচবার নামাজ পড়া দরকার আমাদের। এছাড়াও সমাজে যেহেতু পাপের ছড়াছড়ি তাই নামাজের পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে নিয়মিত প্রশিক্ষণ না নিলে সিরাত-উল-মুস্তাকিম অর্থাৎ সৎপথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পরার সম্ভাবনা রয়েছে আমাদের। তাই দৈনিক কমপক্ষে পাঁচবার নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ বা বাধ্যতামূলক। 

 আল্লাহপাক আমাদের দেহের মধ্যে যেসব মূল্যবান অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দান করেছেন তার শুকরানাস্বরূপ আমরা নামাজ পড়ব কেননা হাশরের দিন প্রত্যেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রতি প্রশ্ন করা হবে। কাজেই আমরা যে অনুভব শক্তি প্রাপ্ত হয়েছি তাতে সুখ-দুঃখ দুটি জিনিস অনুভব করতে পারি সেই জন্য ফজরের ২ রাকাত নামাজ। জিহ্বা দ্বারা মিষ্টি, টক, তিতা ও কটু এই ৪টা স্বাদ গ্রহণ করতে পারি এজন্য জিহ্বার শুকারানাস্বরূপ ৪ রাকাত নামাজ জোহর। নাসিকা দ্বারা শ্বাস-প্রশ্বাস, সুগন্ধ ও দুর্গন্ধ অনুভব করতে পারি এজন্য আসরের ৪ রাকাত নামাজ। চক্ষু দ্বারা ডান-বাম ও সামনে দেখি এজন্য মাগরিবের তিন রাকাত নামাজ। কর্ণ দ্বারা চারদিকের শব্দ শুনতে পাই এজন্য এশার ৪ রাকাত নামাজ। সুতরাং মূলকথা প্রত্যেক নামাজ প্রত্যেক অঙ্গের শুকরানাস্বরূপ। 

আল্লাহ তায়ালা মানুষকে চলনশীল দেহ প্রদান করেছেন। এজন্য তার স্বাস্থ্য দেহের চলার (অর্থাৎ ব্যায়াম ইত্যাদি) ওপর টিকে থাকে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মানুষকে সচল রাখে। থেমে থেমে নামাজের জন্য মসজিদে যাওয়ার প্রয়োজন হয়। জামাতে নামাজ পড়া একই সঙ্গে উচ্চমানের ব্যায়াম হিসেবেও কাজ করে।


 ফজরের সময় : যখন রাত শেষ হয়ে আসে, তখন সূর্য উদয় হওয়ার আগে ফজরের নামাজ ফরজ করা হয়েছে। এ সময়ের নামাজ হালকা প্রকৃতির। সারারাত আরাম করার পর ওই সময় পাকস্থলীও খালি হয়ে যায়। এজন্য এ সময় হালকা ও সংক্ষিপ্ত নামাজ নির্ধারণ করা হয়েছে যাতে মানুষের ক্ষতি না হয়। নামাজি এই চার রাকাত নামাজ পড়ে শারিরীক ও মানসিকভাবে উপকৃত হয়। ফজর নামাজ পড়ে লোকেরা নিজ অবসাদগ্রস্ত দেহকে পুনরায় সক্রিয় ও চলমান করে। এরপর সারাদিন নিজ রিজিক ও জীবিকা অর্জন করার জন্য কাজকর্মে মনোযোগ দেয়ায় উদ্দীপনা ফিরে পায়। মস্তিষ্ক চিন্তা-ভাবনার জন্য প্রস্তুত হতে পারে। সুবেহ সাদিকের সতেজ প্রকৃতি এবং আলোতে মানুষ নামাজের জন্য বাইরে বের হয় এবং পায়ে হেঁটে মসজিদে যায়, এতে সতেজ পরিচ্ছন্ন প্রশান্ত পরিবেশ থেকে যে সূক্ষ্ম অনুভূতির সৃষ্টি হয় তা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।


জোহরের সময় : দিন শুরুর সঙ্গে সঙ্গে মানুষ জীবিকা অর্জনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ধুলা-ময়লা তার গায়ে লাগে। রোগ-জীবানু হাত-পায়ে লাগার আশঙ্কাও রয়েছে। কেননা মানুষ জীবাণুযুক্ত বায়ুর মধ্যে থাকে। তখন তার দেহের ওপর জীবাণু আক্রমণ করে। এছাড়াও দুপুর পর্যন্ত কাজ করতে করতে ক্লান্তিও অনুভূত হয়। এ কারণে একজন নামাজি জোহর নামাজের জন্য অজু করে স্বীয় হাত, মুখ, পা ইত্যাদি ধৌত করায় দেহমনে পরিচ্ছন্নতার কারণে প্রফুল্লতা আসে। এর ফলে রোগের কোনো আশঙ্কাও থাকে না।

 ক্লান্ত দেহে জোহরের নামাজ পড়ে আরাম ও প্রশান্তি অনুভব করে এবং পুনরায় উজ্জীবিত হয়, যার দ্বারা ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। এসব উপকারিতা একজন নামাজির জোহরের নামাজের সময় অর্জিত হয়।

 আসরের সময় : জ্ঞানবান ও চিন্তাশীল ব্যক্তি এবং বিজ্ঞ মাত্রেই জানেন, পৃথিবী দুই ধরনের গতিতে চলে। এগুলো হলো : লম্ব ও বৃত্তীয়।

 যখন সূর্য ঢলতে থাকে, তখন পৃথিবীর ঘূর্ণন কমতে থাকে, এমনকি আসরের সময় ঘূর্ণনের পরিমাণ একেবারেই কমে যায়। এ কারণে মানুষের ওপর দিনের অনুভূতি প্রবল হতে থাকে, প্রকৃতির মধ্যে স্থবিরতা এবং অবসাদগ্রস্ততা প্রদর্শিত হতে থাকে। আসরের নামাজের সময় মানুষের সচেতন অনুভূতির ওপর অচেতন অনুভূতির প্রভাব শুরু হয়, যার দ্বারা মানুষ আরামদায়ক অনুভূতি লাভ করে।


মাগরিবের সময় : মানুষ সারাদিন শ্রম ও কষ্টের মধ্যে কাটায় এবং নিজ ও পরিবারের জন্য রুজি-কামাই করে আল্লাহ তায়ালার শোকরিয়া আদায় করে যে, সেই মহান সত্তা এগুলো অর্জন করার জন্য শক্তি প্রদান করেছেন। এটি আনন্দের মধ্যে হয়, যার দ্বারা অন্তর এক বিশেষ প্রকারের আনন্দ অনুভব করে। মাগরিবের সময় সে আল্লাহ তায়ালার নিকট হাজিরা দিয়ে নিজ দাসত্বকে প্রকাশ করে, আল্লাহ তায়ালার শোকর আদায় করে। মানুষের এই আকুতি তাকে নূরানী তরঙ্গমালায় আচ্ছাদিত করে এবং তার আত্মাকে প্রশান্তি প্রদান করে।


এশার সময় : মানুষ স্বভাবগতভাবে রাতে বাড়ি ফিরে সুস্বাদু খাবার খায়। যখন সে কাজকর্ম থেকে ঘরে ফিরে আসে, খানা খায় এবং স্বাদ ও লোভের কারণে অতিরিক্ত খেয়ে ফেলে। যদি সে খাওয়ার পরপরই শুয়ে পড়ে, তাহলে সে ধ্বংসকারী রোগের শিকার হয়। মানুষ সারাদিনের ক্লান্তির পর খাবার খেয়ে তৎক্ষণাৎ শুয়ে পড়লে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। শোয়ার আগে এবং অতিরিক্ত খানা খাওয়ার পরে কমবেশি ব্যায়াম করে নেওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এশার নামাজ সে ক্ষেত্রে আত্নিক চাহিদার পাশাপাশি দৈহিক চাহিদা অর্থাৎ ব্যায়ামের কাজটিও করে।যেমন হাদিসে রসুল সাঃ থেকে আমরাআরও জানতে পারি সুস্বাস্হের জন্য রাত্রে খানা খাওয়ার পর কম পক্ষে ৪০ কদম পথ চলার কথা।


 ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আপনার ধারনা থাকলে আপনি হয়তো জেনে থাকবেন যে, একটা লোক নিরবিচ্ছিন্নভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করতে পারেনা। একটা লোক যদি সকাল ৯টায় অফিসে এসে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত একটানা কাজ করতে থাকে, তবে তার কর্ম উৎপাদনশীলতা বাড়ার পরিবর্তে কমে যেতে পারে উল্টো। আর একারণেই অফিসের কাজের ফাকে ফাকে সংক্ষিপ্ত বিরতির ব্যবস্থা রাখা হয়, যাতে করে নিজেদের চাঙ্গা করে নিতে পারি আমরা। একইভাবে নামাজও আমাদের চাঙ্গা করে আমাদের কর্ম উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।


 এটা আমদের শরীর ও মনকে সতেজ করে তুলে। একজন মুসলমানের জন্য নামাজ হল একপ্রকারের বিনোদন। এখন কেউ যদি বলে যে কাজের ফাকে ১৫ মিনিট একটা লাঞ্চ ব্রেক নিলে সময়ের অপচয় হয়, উৎপাদনশীলতা কমে যায় তবে সেটা হবে অযৌক্তিক। একইভাবে কেউ যদি কাজের ফাকে নামাজটা আদায় করে নেয় নিয়মিত, তবে তার হয়ত অল্প কিছুক্ষণের জন্য কাজ বন্ধ রাখতে হতে পারে, কিন্তু নামাজ আদায় করে সে যখন চাঙ্গা মন নিয়ে ফিরবে আবার কাজে, তখন মোট উৎপাদনশীলতা বেড়ে যাবে তার। তাই একজন যৌক্তিক ও আধুনিক মানুষের এটা মেনে নেওয়া উচিত যে অফিসে কাজের ফাকে ফাকে প্রয়োজনীয় বিরতির ব্যবস্থা রাখা দরকার যাতে করে কর্মীরা চাঙ্গা করে নিতে পারে নিজেদের, আর একজন মুসলমানের জন্য নামাজ হল নিজেকে সতেজ ও চাঙ্গা করে তুলবার সর্বোত্তম মাধ্যম।

  কিছু রোগের জন্য নামাজ ছাড়া প্রেসক্রিপশান নাই
 নামাজ হার্ট এ্যাটাক,প্যারালাইসিস,ডায়াবেটিস,মেলিটাস ইত্যাদির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সৃষ্টি করে। হার্টের রোগীদের প্রতিদিন বাধ্যতামূলকভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা উচিত,নামাজ মানুষকে সব সময় সতেজ রাখে, অলসতা এবং অবসাদগ্রস্ততাকে শরীরে বাড়তে দেয় না। অন্যসব ধর্মের মধ্যে এমন সামগ্রিক ইবাদত আর নেই। নামাজীর জন্য এটা একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য যে, এটা একান্তই সামগ্রিক ব্যায়াম যার প্রভাব মানবের সকল অঙ্গগুলোতে পড়ে এবং সামগ্রিক মানব অঙ্গগুলোতে নড়াচড়া ও শক্তি সৃষ্টি হয় এবং স্বাস্থ্য অটুট থাকে। 

তুরস্কের ডাক্তার হুলুক নূর বাকী নামাজের আত্মিক দিকের ওপর অনেক গুরুত্ব দিয়েছেন, কিন্তু তিনিও এর দৈহিক উপকারিতার দিকে দৃষ্টি দেননি। এভাবে তিনি লিখেছেন—It today even materialist acknowledge that there can be no prescription other than prayer for the relief of joints.‘আজ বস্তুবাদীরাও স্বীকার করে যে, জোড়ার ব্যথা থেকে মুক্তির জন্য আজ নামাজ ব্যতিত আর কোনো ব্যবস্থাপত্র নেই।

ক্যামিস্ট্রির ব্যবস্থাপত্র :নামাজের ব্যায়াম যেমন বাইরের অঙ্গ সুনিপুণ সৌন্দর্য ও বৃদ্ধির মাধ্যম, এটা তেমনি ভেতরের অঙ্গগুলো যেমন-হূদয়, প্লীহা, জঠর, ফুসফুস, মগজ, অন্ত্র, পাকস্থলী, মেরুদন্ডের হাড়, ঘাড়, বুক এবং দেহের সকল গ্লান্ড ইত্যাদি সুদৃঢ় করে ও উন্নত করে এবং দেহের সিডিউল এবং সৌন্দর্য রক্ষা করে। নামাজের প্রচলন যদি হতো তাহলে :কিছু রোগ এরূপও আছে যেগুলো থেকে নামাজ চালু করার দ্বারা রক্ষা পাওয়া যায়, কেননা নামাজ আদায়ের মাধ্যমে দেহে এসব রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।


এর ধারাবাহিকতায় ডাক্তার হাসান গজনবীর এ বাক্যগুলো চিন্তার খোরাক জোগায়। তিনি লেখেন :“In addition to saving us from the sins and elevating us to the hights of spirituality prayers are great help in maintaining our physical health. The keep our body active, help digestion and save us from nuscase and joint diseaes through regular balanced exercise. They help the circulation of blood and also the bad effect of cholesterol. Prayers a vital role in acting as preventive measure against heart attack, Paralyes. diabetes mellitus etc. Hearts patients should offer the five obligatory prayers regularly as they get the permission from their doctor to leave bad. (Islamic Medicine. P. 68).”

(উপরের চিত্রটি দেখুন নিয়মিত নামাজ আদায়কারীর আথ্রাইটিসে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা খুব কম থাকে)আমাদেরকে পাপ থেকে রক্ষা করা এবং আধ্যাত্মিকতার উচ্চ শিখরে আরোহণ করানোর সাথে সালাত আমাদের দৈহিক স্বাস্থ্য রক্ষায় বড় ধরনের সাহায্য করে। এটি আমাদের দেহকে সক্রিয় রাখে, হজমে সাহায্য করে, আমাদেরকে জড়তা ও জোড়ার রোগ থেকে নিয়মিত সুষম ব্যায়ামের দ্বারা রক্ষা করে। এটি রক্ত পরিসঞ্চালনে এবং কলেস্টরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। সালাত হার্ট এ্যাটাক, প্যারালাইসিস, ডায়াবেটিস মেলিটাস ইত্যাদির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হার্টের রোগীদের প্রতিদিন বাধ্যতামূলক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা উচিত, যেমনিভাবে তারা তাদের ডাক্তারদের নিকট খারাপ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য অনুমতি লাভ করে থাকেন’ (প্রাগুক্ত)


পশ্চিমারা আজ হরেক রকমের ব্যায়াম করছেন যাতে তাদের দেহের কলেস্টেরল গড়মাত্রা সীমাতিক্রম না করে। এছাড়াও এদের দেহ সব প্রভাবশীল পন্থায় কাজ করে। তারা এ সত্যকে স্বীকার করে নিয়েছেন যে, ইসলামী নামাজ যা কোনোরূপ ব্যায়াম নয় অথচ তা নানারূপ ব্যায়ামের রূপ পরিগ্রহ করে। তা স্বাস্থ্যসম্মতও বটে।

যেমন জার্মানের প্রসিদ্ধ পত্রিকা ডি হায়েফ’-এ প্রসিদ্ধ জার্মান মান্যবর ও প্রাচ্যবিদ জাওয়াকীম ডি জুলফ এ সত্যকে প্রকাশ করেছেন তার জবানীতে। তিনি লিখেছেন: যদি ইউরোপে ইসলামী নামাজের প্রচলন হতো তাহলে আমাদের দৈহিক ব্যায়ামের জন্য নতুন নতুন ব্যায়াম ও নড়াচড়া আবিষ্কার করার প্রয়োজন হতো না (আল মাসালিহুল আমলিয়াহ লিল আহকামিশ শরইয়াহ পৃ. ৪০৬)।



নামাজ সর্বোত্তম পর্যায়ের চিকিত্সা :এক পাকিস্তানি ডাক্তার মাজেদ জামান উসমানী ইউরোপে ফিজিওথেরাপির ওপর উচ্চতর ডিগ্রি গ্রহণের জন্য গিয়েছেন। যখন সেখানে সম্পূর্ণ নামাজের ব্যায়াম পড়ালেন এবং বুঝালেন তখন তিনি এ ব্যায়াম দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে গেলেন যে, আমরা এতদিন পর্যন্ত নামাজকে এক ধর্মীয় আবশ্যক বলেই জানতাম এবং পড়তে থাকতাম, অথচ এখানে তো আশ্চর্য ও অজানা জিনিসের আবিষ্কার হয় যে, নামাজের মাধ্যমে বড় বড় রোগ নিরাময় হয়ে যায়।

 ডাক্তার সাহেব তাকে একটি তালিকা প্রদান করেন যা নামাজের মতো ব্যায়ামের মাধ্যমে নিরাময় হয়১. মানসিক রোগ (Mental Diseases) ২. স্নায়ুবিক রোগ (Nerve Diseases) ৩. মনস্তত্ত্ব রোগ (Psychic Diseases) ৪. অস্থিরতা, হতাশা ও দুশ্চিন্তা রোগ (Restlessness, Depression and Anxiety) ৫. হার্টের রোগ (Heart Diseases) ৬. জোড়ার রোগ (Arthritis) ৭. ইউরিক এসিড থেকে সৃষ্ট রোগ (Diseases due to Uric Acid) ৮. পাকস্থলীর আলসার (Stomach Ulcer) ৯. চিনি রোগ (Diabetes Mellitus) ১০. চোখ এবং গলা ইত্যাদির রোগ (Eye and E.N.T. Dieases).


মনস্তাত্তিক রোগ নামাজের মধ্যে মনস্তাত্তিক রোগ যেমন- গুনাহ, ভয়, নীচুতা, হতাশা, অস্থিরতা, পেরেশানি ইত্যাদিরও চিকিত্সা রয়েছে। যার বর্ণনা পুস্তকের কলেবর দীর্ঘ হওয়ার ভয়ে বাদ দিতে হচ্ছে। যা হাদীসে রসুল অধ্যয়ন করলে আমরা জানতে পারবো। তবে এখানে একটা কথা না বললে  নয় তাহল উপরোক্ত বৈজ্ঞানীক উপকারীতা গুলো আমরা সকলেই উপভোগ করতে পারবো যদিনা আমরা রসুল সাঃ এর পূর্নাঙ্গ বাতানো তরীকা মোতাবেক নামজ আদায় করি ।কিন্তু নামাজের রুকু সেজদাহ গুলো যথাযথ সুন্নত মোতাবেকই আদায় করতে হবে ছেলে খেলা বা মুরগীর ঠোকরের ন্যায় তাড়াহুড়ো করে ধায় সাড়া নামাজ আদায় করলে হবেনা


একই সঙ্গে নামাজ দ্বারা পূর্বোক্ত উপকারিতা ছাড়াও দৈহিক ও মেধাগত উপকারিতাও হয়। আজ ইসলামি ইবাদতের বৈজ্ঞানিক যুক্তিগুলো সামনে আসছেনামাজের প্রত্যেকটি রুকন কোনো না কোনো চিকিত্সাগত ও মনস্তাত্তিক উপকারের বাহক।

ব্যায়াম ও নামাজ :- নামাজের রুকনগুলো এককভাবে ব্যাখ্যা করলে তার আলোকে দেখা যায় নামাজের প্রত্যেক রুকন আদায়ের মধ্যেই বিশেষ অঙ্গ ও জোড়ার আন্দোলন সৃষ্টি হয় এবং বিশেষ অঙ্গগুলোর ব্যায়াম হয়। শরীরতত্ত বিদ্যার (Physiology) একটি মূলনীতি এই যে, যখন মানুষ নড়াচড়ার ইচ্ছে করে তখন সংশ্লিষ্ট মস্তিষ্কের কেন্দ্র থেকে নড়াচড়া স্নায়ুর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট অঙ্গে পৌঁছায় এবং অঙ্গগুলো স্থানভেদে সংবর্ধিত, সংকুচিত হয়ে উদ্দিষ্ট কাজ করে থাকে এবং যখন নামাজ আদায়ের শুরুতে বারবার নামাজের রুকনগুলোর পুনরাবৃত্তি ঘটে তখন এ আকার একটি ব্যায়ামের প্রকৃতি গ্রহণ করে যার দ্বারা অঙ্গ ও জোড়াগুলোর বর্ধন ও উন্নতি এবং শক্তি বৃদ্ধি পায়।

এভাবে নামাজের সব রুকন আদায়ের মাধ্যমে মানবের সব অঙ্গের ব্যায়াম হয়ে যায়। যার দ্বারা মানব দেহের সতেজতা ও শক্তি বহাল থাকে এবং দৈহিক কার্যাবলি প্রাকৃতিক মাপকাঠির ওপর চলতে থাকে। সামগ্রিক ইবাদত নামাজ একটি উত্তম ইসলামি ব্যায়াম, যা মানুষকে সর্বদা সতেজ রাখে। অলসতা ও অবসাদকে দেহের মধ্যে বাড়তে দেয় না কিন্তু অন্য কোনো ধর্মে এমন কোনো সামগ্রিক ইবাদত নেই যা আদায়ের মাধ্যমে মানুষের সব অঙ্গের নড়াচড়া ও শক্তি বৃদ্ধি পায়। এ বৈশিষ্ট্য শুধু নামাজের মধ্যেই রয়েছে যে এটা সমগ্র ইসলামের সামগ্রিক ব্যায়াম যার প্রভাব সমগ্র মানব অঙ্গের ওপর সমভাবে পড়ে এবং দেহের সব অঙ্গের নড়াচড়া ও শক্তি সৃষ্টি হয় এবং স্বাস্থ্য রক্ষিত থাকে (ইসলামি স্বাস্থ্য বিধি, পৃ-৩৬)।


কঠিন বস্তু সচল করা :- নামাজ আত্মা ও দেহ উভয়ের জন্য ব্যায়াম-এ জন্য এর মধ্যে দাঁড়ানো, বসা, রুকু, সিজদা এগুলোর বিভিন্ন ধরনের নড়াচড়া হয়ে থাকে এবং নামাজী এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থার দিকে পরিবর্তিত হতে থাকে। নামাজে দেহের অধিকাংশ জোড়া নড়াচড়া করতে থাকে এবং এর সাথে বেশির ভাগ অদৃশ্য অঙ্গগুলো পাকস্থলী, অন্ত্র, শ্বাসযন্ত্র, এবং খাদ্যের অঙ্গগুলো এসবের গঠনে নড়াচড়া এবং পরিবর্তন আসে। অত:পর এ অবস্থায় কোনো কথা নিষেধকারী যে এ সব নড়াচড়ার দ্বারা কিছু অঙ্গ শক্তি অর্জন করবে এবং অপ্রয়োজনীয় আবশ্যিক জিনিসগুলো সচল না হবে? (তিব্বে নববী, পৃ.-৩৯৯)।সুতরাং কোরআনের সাথে বিজ্ঞানের কোন সংঘর্ষ নেই বরং বিজ্ঞানের কারণে আজকাল সাধারন লোকের সাথে সাথে অমুসলিমরাও  ইসলামকে বুঝার চেষ্টা করছে।যদিও কোরআন কে বুঝার জন্য বিজ্ঞানের প্রয়োজন নেই।











কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন