Translate

বুধবার, ১ আগস্ট, ২০১৮

নিজের ওয়াজিব কোরবানি না করে জিবীত বা মৃত মাতা পিতার নামে কোরবানীর বিধান

আমাদের সমাজে দেখা যায় যে
নিজের ওয়াজিব কোরবানী নিজের নামে না করে মৃত বা জীবিত মাতা পিতার নামে কোরবানি করে থাকেন এটা কতটুকু যুক্তিযুক্ত? কারণ অনেক সময় দেখা যায় যে ছেলে নেসাব পরিমান সম্পদের মালিক হওয়া সত্বেও নিজের পক্ষ থেকে কোরবানী না দিয়ে মাতা পিতার নামে কোরবানী দিয়ে থাকেন মাতা পিতার প্রতি মহব্বত ও ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ হিসাবে অথচ মাতা পিতা নেসাব পরিমান সম্পদের মালিক নয়।
এমতাবস্থায় সঠিক মাছয়ালা কি?

সর্ব প্রথম আমাদের জানতে হবে যে
কার উপর কি পরিমান সম্পদ থাকলে কুরবানী করা ওয়াজিব?

কুরবানী একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি আদায় করা ওয়াজিব। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি এই ইবাদত পালন করে না তার ব্যাপারে হাদীস শরীফে এসেছে, যে,‘যার কুরবানীর সামর্থ্য রয়েছে কিন্তু কুরবানী করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।’-মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস : ৩৫১৯;। সে হিসাবে এর গুরুত্ব অপরিসীম।

১.এবার আসুন
কার উপর কুরবানী ওয়াজিব-:

প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থমস্তিষ্ক সম্পন্ন প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, যে ১০ যিলহজ্ব ফজর থেকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব।
তাছাডা কারো উপর কোরবানী ওয়াজিব না হওয়া সত্বেও কেউ  করলে, ছাওয়াব পাবেন। ছাওয়াবের বিবেচনায় যথা সম্ভব চেষ্টা করা দরকার।কারন প্রতিটি  লোমের বিনিময়  ১ নেকি।

২.প্রয়োজনের অতিরিক্ত কি? -:
টাকা-পয়সা, সোনা-রূপা, অলঙ্কার, বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজন আসে না এমন জমি, প্রয়োজন অতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও অপ্রয়োজনীয় সকল আসবাবপত্র কুরবানীর নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য।

৩.নেসাব কি?-:
আর নিসাব হল স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত (৭.৫) ভরি, রূপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি, টাকা-পয়সা ও অন্যান্য বস্ত্তর ক্ষেত্রে নিসাব হল এর মূল্য সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হওয়া। আর সোনা বা রূপা কিংবা টাকা-পয়সা এগুলোর কোনো একটি যদি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না থাকে কিন্তু প্রয়োজন অতিরিক্ত একাধিক বস্ত্ত মিলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায় তাহলেও তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব।-আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৫৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪০৫

নেসাবের মেয়াদ হল
কুরবানীর নেসাব পুরো বছর থাকা জরুরি নয়; বরং কুরবানীর তিন দিনের মধ্যে যে কোনো দিন থাকলেই কুরবানী ওয়াজিব হবে।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩১২

৪.এবার আসুন মূল কথায়
মূলত কোরবানি যথা সময়ে সামর্থবান জীবিত ব্যক্তির তরফ থেকেই ওয়াজিব।  মুলত কোরবানীর নির্দেশনা জীবিতদের জন্য মৃতদের জন্য নয়।সে হিসাবে নিজের ওয়াজিব আদায় না করে মৃতের নামে  যেটা নফল আদায় করলে ওয়াজিব তরকের গুনাহগার হবে।
অবশ্য ইচ্ছা করলে তার সওয়াবে জীবিত অথবা মৃত আত্মীয়-স্বজনকেও শরীক করতে পারে। সেটা ভিন্ন কথা  যেহেতু আমরা দেখি রাসূলুল্লাহ [সা.] ও তাঁর সাহাবাগণ নিজেদের এবং পরিবার-পরিজনদের তরফ থেকে কোরবানি করতেন।

অনেকের ধারণা কোরবানি শুধু মৃত ব্যক্তিদের জন্য বা তাদের পক্ষ থেকে করা হবে। এ ধারণা মোটেই ঠিক নয়।
মৃত ব্যক্তির তরফ থেকে পৃথক কোরবানি করার কোন দলীল নেই। তবে মৃত ব্যক্তিদের জন্য কোরবানি করা জায়েয ও একটি সওয়াবের কাজ এতে সন্দেহ নেই কারণ কোরবানি একটি সাদকা। আর মৃত ব্যক্তির নামে যেমন সদকা করা যায় তেমনি তার নামে কোরবানিও দেয়া যায়। মৃতব্যক্তি এর দ্বারা উপকৃত হবে, ইনশাআল্লাহ।

মৃত ব্যক্তি যদি কোরবানির জন্য ওসিয়ত না করে থাকে, তা ওয়াজিব নয়,বরং নফল, তবে তার পক্ষ থেকে দেওয়া কোরবানির গোশতের হুকুম সাধারণ কোরবানির মতো; নিজেরাও খেতে পারবে অন্যদেরকেও দিতে পারবে। পুরোটা সদকা করা জরুরি নয়। তবে মৃত ব্যক্তি যদি অসিয়ত করে যায় এবং তার সম্পদ দ্বারাই কোরবানি করা হয়ে থাকে তাহলে এ কোরবানির পুরো গোশত সদকা করা জরুরি। এ থেকে নিজেদের খাওয়া জায়েয হবে না। [ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/২৯৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৭৩; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৫২; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩৩৫]

তবে একটি কথা মনে রাখতে হবে যে, ওয়াজিব কোরবানিকে নিজের তরফ থেকে না দিয়ে কেবলমাত্র মৃতের জন্য নির্দিষ্ট করা ঠিক নয় এবং এতে আল্লাহ তাআলার সীমাহীন করুণা ও ছাওয়াব থেকে মাহরুমী হতে হয়,এবং ওয়াজিব তরকের গুনাহগারও হবে, বরং উচিত হচ্ছে, নিজের নামের সাথে জীবিত-মৃত অন্যান্য আত্মীয়-পরিজনকে কোরবানির নিয়তে ছাওয়াবে শামিল করা। কারণ জীবিতের উপর সামর্থ থাকলে তা পালন করা ওয়াজিব  কিন্তু  মৃত ব্যক্তির উপর ওয়াজিব নয় এজন্য  সর্ব প্রথম নিজের ওয়াজিব কোরবানি আদায় করার পর চাইলে বা সামর্থ  থাকলে নিজের মাতা- পিতা বা আত্বীয় স্বজন যে কারো পক্ষ থেকে কোরবানী করা যায়।
এমন যেন না হয় নিজের ওয়াজিব কোরবানি বাদ দিয়ে অন্যের নামে যেন না হয়। মাতা পিতার মহব্বত সন্মান আলগ কিন্তু শরিয়তের ব্যপারটা ভিন্ন কারন এতে ওয়াজিব তরক করার কারনে আপনি গুনাহগার হবেন।তবে ছাওয়াবে শরীক করা যাবে।
যেমন- আল্লাহর নবী (সা.) কোরবানি জবেহ করার সময় বলেছেন, হে আল্লাহ! এ (কোরবানি) মুহাম্মাদের তরফ থেকে এবং মুহাম্মাদের বংশধরের তরফ থেকে। সুতরাং তিনি নিজের নাম প্রথমে নিয়েছেন এবং সেই সঙ্গে বংশধরদেরকেও তার সওয়াবে শরীক করেছেন।
আর আপনি যদি একান্ত মাতা পিতার নামেও করতে চান কিন্তু সামর্থ নেই তাহলে গরুর পরিবর্তে ছাগল ব্যটার  কারন যেখানে আপনি ১ ভাগ গরুতে যদি ২০-২৫ হাজার টাকা খরচ করেন সেখানে ৩ টা বা ২ টা ছাগল দিয়েও আপনি কোরবানি করতে পারেন এতে করে যেমন আপনার ওয়াজিব কোরবানি আদায় হবে সে সঙ্গে মাতা পিতার সহানুভূতিও হয়ে গেল এক ডিলে ২ শিকার।

আর একই পরিবারে যদি কয়েকজন সামর্থবান তথা নেসাব পরিমান সম্পদের মালিক হন যেমন বাপ বেটা ইত্যাদি তখন পৃথক পৃথক প্রত্যেকের উপর আলাদা ভাবে কোরবানী ওয়াজিব হবে।

স্বরন রাখবেন বর্তমান সময়ে রুপার নেসাব হিসাব করলে ৬৩ হাজার টাকার + -  মালিকের উপর জাকাত / কোরবানী ওয়াজিব হয়ে যায়। কিন্তু আমরা অনেকে তা জানিনা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন