Translate

মঙ্গলবার, ২১ আগস্ট, ২০১৮

কোরবানী সংক্রান্ত ৭৩ টি মাছয়ালা জেনে নিন

কোরবানী সংক্রান্ত খুব গুরুত্বপুর্ণ ৭৩ টি মাছায়েল, যা জানা থাকা জরুরী।

কুরবানী একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি আদায় করা ওয়াজিব।

সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি এই ইবাদত পালন করে না তার ব্যাপারে হাদীস শরীফে এসেছে, ‘যার কুরবানীর সামর্থ্য রয়েছে কিন্তু কুরবানী করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।’-মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস : ৩৫১৯; আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব ২/১৫৫

ইবাদতের মূলকথা হল আল্লাহ তাআলার আনুগত্য এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন। তাই যেকোনো ইবাদতের পূর্ণতার জন্য দুটি বিষয় জরুরি। ইখলাস তথা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পালন করা এবং শরীয়তের নির্দেশনা মোতাবেক মাসায়েল অনুযায়ী সম্পাদন করা। এ উদ্দেশ্যে এখানে কুরবানীর কিছু জরুরি মাসায়েল উল্লেখ হল।

কার উপর কুরবানী ওয়াজিব

মাসআলা : ১. প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থমস্তিষ্ক সম্পন্ন প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, যে ১০ যিলহজ্ব ফজর থেকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। টাকা-পয়সা, সোনা-রূপা, অলঙ্কার, বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজন আসে না এমন জমি, প্রয়োজন অতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও অপ্রয়োজনীয় সকল আসবাবপত্র কুরবানীর নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য।

আর নিসাব হল স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত (৭.৫) ভরি, রূপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি, টাকা-পয়সা ও অন্যান্য বস্ত্তর ক্ষেত্রে নিসাব হল এর মূল্য সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হওয়া। আর সোনা বা রূপা কিংবা টাকা-পয়সা এগুলোর কোনো একটি যদি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না থাকে কিন্তু প্রয়োজন অতিরিক্ত একাধিক বস্ত্ত মিলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায় তাহলেও তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব।-আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৫৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪০৫

নেসাবের মেয়াদ

মাসআলা ২. কুরবানীর নেসাব পুরো বছর থাকা জরুরি নয়; বরং কুরবানীর তিন দিনের মধ্যে যে কোনো দিন থাকলেই কুরবানী ওয়াজিব হবে।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩১২

কুরবানীর সময়

মাসআলা : ৩. মোট তিনদিন কুরবানী করা যায়। যিলহজ্বের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত। তবে সম্ভব হলে যিলহজ্বের ১০ তারিখেই কুরবানী করা উত্তম। -মুয়াত্তা মালেক ১৮৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৮, ২৩, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৫

নাবালেগের কুরবানী

মাসআলা : ৪. নাবালেগ শিশু-কিশোর তদ্রূপ যে সুস্থমস্তিষ্কসম্পন্ন নয়, নেসাবের মালিক হলেও তাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। অবশ্য তার অভিভাবক নিজ সম্পদ দ্বারা তাদের পক্ষে কুরবানী করলে তা সহীহ হবে।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৬

মুসাফিরের জন্য কুরবানী

মাসআলা : ৫.  যে ব্যক্তি কুরবানীর দিনগুলোতে মুসাফির থাকবে (অর্থাৎ ৪৮ মাইল বা প্রায় ৭৮ কিলোমিটার দূরে যাওয়ার নিয়তে নিজ এলাকা ত্যাগ করেছে) তার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। -ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৪৪, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৫, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৫

নাবালেগের পক্ষ থেকে কুরবানী

মাসআলা : ৬. নাবালেগের পক্ষ থেকে কুরবানী দেওয়া অভিভাবকের উপর ওয়াজিব নয়; বরং মুস্তাহাব।-রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৫; ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৪৫

দরিদ্র ব্যক্তির কুরবানীর হুকুম

মাসআলা : ৭. দরিদ্র ব্যক্তির উপর কুরবানী করা ওয়াজিব নয়; কিন্তু সে যদি কুরবানীর নিয়তে কোনো পশু কিনে তাহলে তা কুরবানী করা ওয়াজিব হয়ে যায়। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯২

কুরবানী করতে না পারলে

মাসআলা : ৮. কেউ যদি কুরবানীর দিনগুলোতে ওয়াজিব কুরবানী দিতে না পারে তাহলে কুরবানীর পশু ক্রয় না করে থাকলে তার উপর কুরবানীর উপযুক্ত একটি ছাগলের মূল্য সদকা করা ওয়াজিব। আর যদি পশু ক্রয় করে ছিল, কিন্তু কোনো কারণে কুরবানী দেওয়া হয়নি তাহলে ঐ পশু জীবিত সদকা করে দিবে।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৪, ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৪৫

প্রথম দিন কখন থেকে কুরবানী করা যাবে

মাসআলা : ৯. যেসব এলাকার লোকদের উপর জুমা ও ঈদের নামায ওয়াজিব তাদের জন্য ঈদের নামাযের আগে কুরবানী করা জায়েয নয়। অবশ্য বৃষ্টিবাদল বা অন্য কোনো ওজরে যদি প্রথম দিন ঈদের নামায না হয় তাহলে ঈদের নামাযের সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর প্রথম দিনেও কুরবানী করা জায়েয।-সহীহ বুখারী ২/৮৩২, কাযীখান ৩/৩৪৪, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৮

রাতে কুরবানী করা

মাসআলা : ১০.  ১০ ও ১১ তারিখ দিবাগত রাতেও কুরবানী করা জায়েয। তবে দিনে কুরবানী করাই ভালো। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস : ১৪৯২৭; মাজমাউয যাওয়াইদ ৪/২২, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২০, কাযীখান ৩/৩৪৫, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৩

কুরবানীর উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত পশু সময়ের পর যবাই করলে

মাসআলা : ১১. কুরবানীর দিনগুলোতে যদি জবাই করতে না পারে তাহলে খরিদকৃত পশুই সদকা করে দিতে হবে। তবে যদি (সময়ের পরে) জবাই করে ফেলে তাহলে পুরো গোশত সদকা করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে গোশতের মূল্য যদি জীবিত পশুর চেয়ে কমে যায় তাহলে যে পরিমাণ মূল্য হ্রাস পেল তা-ও সদকা করতে হবে।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০২, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২০-৩২১

কোন কোন পশু দ্বারা কুরবানী করা যাবে

মাসআলা : ১২.  উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয। এসব গৃহপালিত পশু ছাড়া অন্যান্য পশু যেমন হরিণ, বন্যগরু ইত্যাদি দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়। -কাযীখান ৩/৩৪৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫

নর ও মাদা পশুর কুরবানী

মাসআলা : ১৩. যেসব পশু কুরবানী করা জায়েয সেগুলোর নর-মাদা দুটোই কুরবানী করা যায়। -কাযীখান ৩/৩৪৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫

কুরবানীর পশুর বয়সসীমা

মাসআলা : ১৪. উট কমপক্ষে ৫ বছরের হতে হবে। গরু ও মহিষ কমপক্ষে ২ বছরের হতে হবে। আর ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা কমপক্ষে ১ বছরের হতে হবে। তবে ভেড়া ও দুম্বা যদি ১ বছরের কিছু কমও হয়, কিন্তু এমন হৃষ্টপুষ্ট হয় যে, দেখতে ১ বছরের মতো মনে হয় তাহলে তা দ্বারাও কুরবানী করা জায়েয। অবশ্য এক্ষেত্রে কমপক্ষে ৬ মাস বয়সের হতে হবে।

উল্লেখ্য, ছাগলের বয়স ১ বছরের কম হলে কোনো অবস্থাতেই তা দ্বারা কুরবানী জায়েয হবে না। -কাযীখান ৩/৩৪৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫-২০৬

এক পশুতে শরীকের সংখ্যা

মাসআলা : ১৫. একটি ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা দ্বারা শুধু একজনই কুরবানী দিতে পারবে। এমন একটি পশু কয়েকজন মিলে কুরবানী করলে কারোটাই সহীহ হবে না। আর উট, গরু, মহিষে সর্বোচ্চ সাত জন শরীক হতে পারবে। সাতের অধিক শরীক হলে কারো কুরবানী সহীহ হবে না। -সহীহ মুসলিম ১৩১৮, মুয়াত্তা মালেক ১/৩১৯, কাযীখান ৩/৩৪৯, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭-২০৮

সাত শরীকের কুরবানী

মাসআলা : ১৬. সাতজনে মিলে কুরবানী করলে সবার অংশ সমান হতে হবে। কারো অংশ এক সপ্তমাংশের কম হতে পারবে না। যেমন কারো আধা ভাগ, কারো দেড় ভাগ। এমন হলে কোনো শরীকের কুরবানীই সহীহ হবে না। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭

মাসআলা : ১৭. উট, গরু, মহিষ সাত ভাগে এবং সাতের কমে যেকোনো সংখ্যা যেমন দুই, তিন, চার, পাঁচ ও ছয় ভাগে কুরবানী করা জায়েয। -সহীহ মুসলিম ১৩১৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭

কোনো অংশীদারের গলদ নিয়ত হলে

মাসআলা : ১৮. যদি কেউ আল্লাহ তাআলার হুকুম পালনের উদ্দেশ্যে কুরবানী না করে শুধু গোশত খাওয়ার নিয়তে কুরবানী করে তাহলে তার কুরবানী সহীহ হবে না। তাকে অংশীদার বানালে শরীকদের কারো কুরবানী হবে না। তাই অত্যন্ত সতর্কতার সাথে শরীক নির্বাচন করতে হবে। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৮, কাযীখান ৩/৩৪৯

কুরবানীর পশুতে আকীকার অংশ

মাসআলা : ১৯. কুরবানীর গরু, মহিষ ও উটে আকীকার নিয়তে শরীক হতে পারবে। এতে কুরবানী ও আকীকা দুটোই সহীহ হবে।-তাহতাবী আলাদ্দুর ৪/১৬৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩৬২

মাসআলা : ২০. শরীকদের কারো পুরো বা অধিকাংশ উপার্জন যদি হারাম হয় তাহলে কারো কুরবানী সহীহ হবে না।

মাসআলা : ২১. যদি কেউ গরু, মহিষ বা উট একা কুরবানী দেওয়ার নিয়তে কিনে আর সে ধনী হয় তাহলে ইচ্ছা করলে অন্যকে শরীক করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে একা কুরবানী করাই শ্রেয়। শরীক করলে সে টাকা সদকা করে দেওয়া উত্তম। আর যদি ওই ব্যক্তি এমন গরীব হয়, যার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব নয়, তাহলে সে অন্যকে শরীক করতে পারবে না। এমন গরীব ব্যক্তি যদি কাউকে শরীক করতে চায় তাহলে পশু ক্রয়ের সময়ই নিয়ত করে নিবে।-কাযীখান ৩/৩৫০-৩৫১, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১০

কুরবানীর উত্তম পশু

মাসআলা : ২২. কুরবানীর পশু হৃষ্টপুষ্ট হওয়া উত্তম।-মুসনাদে আহমদ ৬/১৩৬, আলমগীরী ৫/৩০০, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৩

খোড়া পশুর কুরবানী

মাসআলা : ২৩. যে পশু তিন পায়ে চলে, এক পা মাটিতে রাখতে পারে না বা ভর করতে পারে না এমন পশুর কুরবানী জায়েয নয়। -জামে তিরমিযী ১/২৭৫, সুনানে আবু দাউদ ৩৮৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৪, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৩, আলমগীরী ৫/২৯৭

রুগ্ন ও দুর্বল পশুর কুরবানী

মাসআলা : ২৪. এমন শুকনো দুর্বল পশু, যা জবাইয়ের স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে না তা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়। -জামে তিরমিযী ১/২৭৫, আলমগীরী ৫/২৯৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৪

দাঁত নেই এমন পশুর কুরবানী

মাসআলা : ২৫. যে পশুর একটি দাঁতও নেই বা এত বেশি দাঁত পড়ে গেছে যে, ঘাস বা খাদ্য চিবাতে পারে না এমন পশু দ্বারাও কুরবানী করা জায়েয নয়। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৫, আলমগীরী ৫/২৯৮

যে পশুর শিং ভেঙ্গে বা ফেটে গেছে

মাসআলা : ২৬. যে পশুর শিং একেবারে গোড়া থেকে ভেঙ্গে গেছে, যে কারণে

মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সে পশুর কুরবানী জায়েয নয়। পক্ষান্তরে যে পশুর অর্ধেক শিং বা কিছু শিং ফেটে বা ভেঙ্গে গেছে বা শিং একেবারে উঠেইনি সে পশু কুরবানী করা জায়েয। -জামে তিরমিযী ১/২৭৬, সুনানে আবু দাউদ ৩৮৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৪, আলমগীরী ৫/২৯৭

কান বা লেজ কাটা পশুর কুরবানী

মাসআলা : ২৭. যে পশুর লেজ বা কোনো কান অর্ধেক বা তারও বেশি কাটা সে পশুর কুরবানী জায়েয নয়। আর যদি অর্ধেকের বেশি থাকে তাহলে তার কুরবানী জায়েয। তবে জন্মগতভাবেই যদি কান ছোট হয় তাহলে অসুবিধা নেই। -জামে তিরমিযী ১/২৭৫, মুসনাদে আহমদ ১/৬১০, ইলাউস সুনান ১৭/২৩৮, কাযীখান ৩/৩৫২, আলমগীরী ৫/২৯৭-২৯৮

অন্ধ পশুর কুরবানী

মাসআলা : ২৮. যে পশুর দুটি চোখই অন্ধ বা এক চোখ পুরো নষ্ট সে পশু কুরবানী করা জায়েয নয়। -জামে তিরমিযী ১/২৭৫, কাযীখান ৩/৩৫২, আলমগীরী ২৯৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৪

নতুন পশু ক্রয়ের পর হারানোটা পাওয়া গেলে

মাসআলা : ২৯. কুরবানীর পশু হারিয়ে যাওয়ার পরে যদি আরেকটি কেনা হয় এবং পরে হারানোটিও পাওয়া যায় তাহলে কুরবানীদাতা গরীব হলে (যার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়) দুটি পশুই কুরবানী করা ওয়াজিব। আর ধনী হলে কোনো একটি কুরবানী করলেই হবে। তবে দুটি কুরবানী করাই উত্তম। -সুনানে বায়হাকী ৫/২৪৪, ইলাউস সুনান ১৭/২৮০, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৯, কাযীখান ৩/৩৪৭

গর্ভবতী পশুর কুরবানী

মাসআলা : ৩০. গর্ভবতী পশু কুরবানী করা জায়েয। জবাইয়ের পর যদি বাচ্চা জীবিত পাওয়া যায় তাহলে সেটাও জবাই করতে হবে। তবে প্রসবের সময় আসন্ন হলে সে পশু কুরবানী করা মাকরূহ। -কাযীখান ৩/৩৫০

পশু কেনার পর দোষ দেখা দিলে

মাসআলা : ৩১. কুরবানীর নিয়তে ভালো পশু কেনার পর যদি তাতে এমন কোনো দোষ দেখা দেয় যে কারণে কুরবানী জায়েয হয় না তাহলে ওই পশুর কুরবানী সহীহ হবে না। এর স্থলে আরেকটি পশু কুরবানী করতে হবে। তবে ক্রেতা গরীব হলে ত্রুটিযুক্ত পশু দ্বারাই কুরবানী করতে পারবে। -খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১৯, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬, ফাতাওয়া নাওয়াযেল ২৩৯, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৫

পশুর বয়সের ব্যাপারে বিক্রেতার কথা

মাসআলা : ৩২. যদি বিক্রেতা কুরবানীর পশুর বয়স পূর্ণ হয়েছে বলে স্বীকার করে আর পশুর শরীরের অবস্থা দেখেও তাই মনে হয় তাহলে বিক্রেতার কথার উপর নির্ভর করে পশু কেনা এবং তা দ্বারা কুরবানী করা যাবে। -আহকামে ঈদুল আযহা, মুফতী মুহাম্মাদ শফী রহ. ৫

বন্ধ্যা পশুর কুরবানী

মাসআলা : ৩৩. বন্ধ্যা পশুর কুরবানী জায়েয। -রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৫

নিজের কুরবানীর পশু নিজে জবাই করা

মাসআলা : ৩৪. কুরবানীর পশু নিজে জবাই করা উত্তম। নিজে না পারলে অন্যকে দিয়েও জবাই করাতে পারবে। এক্ষেত্রে কুরবানীদাতা পুরুষ হলে জবাইস্থলে তার উপস্থিত থাকা ভালো। -মুসনাদে আহমদ ২২৬৫৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২২-২২৩, আলমগীরী ৫/৩০০, ইলাউস সুনান ১৭/২৭১-২৭৪

জবাইয়ে একাধিক ব্যক্তি শরীক হলে

মাসআলা : ৩৫. অনেক সময় জবাইকারীর জবাই সম্পন্ন হয় না, তখন কসাই বা অন্য কেউ জবাই সম্পন্ন করে থাকে। এক্ষেত্রে অবশ্যই উভয়কেই নিজ নিজ যবাইয়ের আগে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ পড়তে হবে। যদি কোনো একজন না পড়ে তবে ওই কুরবানী সহীহ হবে না এবং জবাইকৃত পশুও হালাল হবে না। -রদ্দুল মুহতার ৬/৩৩৪

কুরবানীর পশু থেকে জবাইয়ের আগে উপকৃত হওয়া

মাসআলা : ৩৬. কুরবানীর পশু কেনার পর বা নির্দিষ্ট করার পর তা থেকে উপকৃত হওয়া জায়েয নয়। যেমন হালচাষ করা, আরোহণ করা, পশম কাটা ইত্যাদি।সুতরাং কুরবানীর পশু দ্বারা এসব করা যাবে না। যদি করে তবে পশমের মূল্য, হালচাষের মূল্য ইত্যাদি সদকা করে দিবে।-মুসনাদে আহমদ ২/১৪৬, নায়লুল আওতার ৩/১৭২, ইলাউস সুনান ১৭/২৭৭, কাযীখান ৩/৩৫৪, আলমগীরী ৫/৩০০

কুরবানীর পশুর দুধ পান করা

মাসআলা : ৩৭. কুরবানীর পশুর দুধ পান করা যাবে না। যদি জবাইয়ের সময় আসন্ন হয় আর দুধ দোহন না করলে পশুর

কষ্ট হবে না বলে মনে হয় তাহলে দোহন করবে না। প্রয়োজনে ওলানে ঠান্ডা পানি ছিটিয়ে দেবে। এতে দুধের চাপ কমে যাবে। যদি দুধ দোহন করে ফেলে তাহলে তা সদকা করে দিতে হবে। নিজে পান করে থাকলে মূল্য সদকা করে দিবে। -মুসনাদে আহমদ ২/১৪৬, ইলাউস সুনান ১৭/২৭৭,

রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৯, কাযীখান ৩/৩৫৪, আলমগীরী ৫/৩০১

কোনো শরীকের মৃত্যু ঘটলে

মাসআলা : ৩৮. কয়েকজন মিলে কুরবানী করার ক্ষেত্রে জবাইয়ের আগে কোনো শরীকের মৃত্যু হলে তার ওয়ারিসরা যদি মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানী করার অনুমতি দেয় তবে তা জায়েয হবে। নতুবা ওই শরীকের টাকা ফেরত দিতে হবে। অবশ্য তার

স্থলে অন্যকে শরীক করা যাবে। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৯, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২৬, কাযীখান ৩/৩৫১

কুরবানীর পশুর বাচ্চা হলে

মাসআলা : ৩৯. কুরবানীর পশু বাচ্চা দিলে ওই বাচ্চা জবাই না করে জীবিত সদকা করে দেওয়া উত্তম। যদি সদকা না করে তবে কুরবানীর পশুর সাথে বাচ্চাকেও জবাই করবে এবং গোশত সদকা করে দিবে।-কাযীখান ৩/৩৪৯, আলমগীরী ৫/৩০১, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৩

মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানী

মাসআলা : ৪০. মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানী করা জায়েয। মৃত ব্যক্তি যদি ওসিয়ত না করে থাকে তবে সেটি নফল কুরবানী হিসেবে গণ্য হবে। কুরবানীর স্বাভাবিক গোশতের মতো তা নিজেরাও খেতে পারবে এবং আত্মীয়-স্বজনকেও দিতে পারবে। আর যদি মৃত ব্যক্তি কুরবানীর ওসিয়ত করে গিয়ে থাকে তবে এর গোশত নিজেরা খেতে পারবে না। গরীব-মিসকীনদের মাঝে সদকা করে দিতে হবে। -মুসনাদে আহমদ ১/১০৭, হাদীস ৮৪৫, ইলাউস সুনান ১৭/২৬৮, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬, কাযীখান ৩/৩৫২

কুরবানীর গোশত জমিয়ে রাখা

মাসআলা : ৪১. কুরবানীর গোশত তিনদিনেরও অধিক জমিয়ে রেখে খাওয়া জায়েয।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪, সহীহ মুসলিম ২/১৫৯, মুয়াত্তা মালেক ১/৩১৮, ইলাউস সুনান ১৭/২৭০

কুরবানীর গোশত বণ্টন

মাসআলা : ৪২. শরীকে কুরবানী করলে ওজন করে গোশত বণ্টন করতে হবে। অনুমান করে ভাগ করা জায়েয নয়।-আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৭, কাযীখান ৩/৩৫১

মাসআলা : ৪৩. কুরবানীর গোশতের এক তৃতীয়াংশ গরীব-মিসকীনকে এবং এক তৃতীয়াংশ আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীকে দেওয়া উত্তম। অবশ্য পুরো গোশত যদি নিজে রেখে দেয় তাতেও কোনো অসুবিধা নেই। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪, আলমগীরী ৫/৩০০

গোশত, চর্বি বিক্রি করা

মাসআলা : ৪৪. কুরবানীর গোশত, চর্বি ইত্যাদি বিক্রি করা জায়েয নয়। বিক্রি করলে পূর্ণ মূল্য সদকা করে দিতে হবে। -ইলাউস সুনান ১৭/২৫৯, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৫, কাযীখান ৩/৩৫৪, আলমগীরী ৫/৩০১

জবাইকারীকে চামড়া, গোশত দেওয়া

মাসআলা : ৪৫. জবাইকারী, কসাই বা কাজে সহযোগিতাকারীকে চামড়া, গোশত বা কুরবানীর পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া জায়েয হবে না। অবশ্য পূর্ণ পারিশ্রমিক দেওয়ার পর পূর্বচুক্তি ছাড়া হাদিয়া হিসাবে গোশত বা তরকারী দেওয়া যাবে।

জবাইয়ের অস্ত্র

মাসআলা : ৪৬. ধারালো অস্ত্র দ্বারা জবাই করা উত্তম।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৩

পশু নিস্তেজ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা

মাসআলা : ৪৭. জবাইয়ের পর পশু

নিস্তেজ হওয়ার আগে চামড়া খসানো বা অন্য কোনো অঙ্গ কাটা মাকরূহ। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৩

অন্য পশুর সামনে জবাই করা

মাসআলা : ৪৮. এক পশুকে অন্য পশুর সামনে জবাই করবে না। জবাইয়ের সময় প্রাণীকে অধিক কষ্ট না দেওয়া।

কুরবানীর গোশত বিধর্মীকে দেওয়া

মাসআলা : ৪৯. কুরবানীর গোশত হিন্দু ও অন্য ধর্মাবলম্বীকে দেওয়া জায়েয।-ইলাউস সুনান ৭/২৮৩, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০০

অন্য কারো ওয়াজিব কুরবানী আদায় করতে চাইলে

মাসআলা : ৫০. অন্যের ওয়াজিব কুরবানী দিতে চাইলে ওই ব্যক্তির অনুমতি নিতে হবে। নতুবা ওই ব্যক্তির কুরবানী আদায় হবে না। অবশ্য স্বামী বা পিতা যদি স্ত্রী বা সন্তানের বিনা অনুমতিতে তার পক্ষ থেকে কুরবানী করে তাহলে তাদের কুরবানী আদায় হয়ে যাবে। তবে অনুমতি নিয়ে আদায় করা ভালো।

কুরবানীর পশু চুরি হয়ে গেলে বা মরে গেলে

মাসআলা : ৫১. কুরবানীর পশু যদি চুরি হয়ে যায় বা মরে যায় আর কুরবানীদাতার উপর পূর্ব থেকে কুরবানী ওয়াজিব থাকে তাহলে আরেকটি পশু কুরবানী করতে হবে। গরীব  হলে (যার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়) তার জন্য আরেকটি পশু কুরবানী করা ওয়াজিব নয়।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬, খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১৯

পাগল পশুর কুরবানী

মাসআলা : ৫২. পাগল পশু কুরবানী করা জায়েয। তবে যদি এমন পাগল হয় যে, ঘাস পানি দিলে খায় না এবং মাঠেও চরে না তাহলে সেটার কুরবানী জায়েয হবে না। -আননিহায়া ফী গরীবিল হাদীস ১/২৩০, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬, ইলাউস সুনান ১৭/২৫২

নিজের কুরবানীর গোশত খাওয়া

মাসআলা : ৫৩. কুরবানীদাতার জন্য নিজ কুরবানীর গোশত খাওয়া মুস্তাহাব। -সূরা হজ্ব ২৮, সহীহ মুসলিম ২২/১৫৯, মুসনাদে আহমদ, হাদীস ৯০৭৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪

ঋণ করে কুরবানী করা

মাসআলা : ৫৪. কুরবানী ওয়াজিব এমন ব্যক্তিও ঋণের টাকা দিয়ে কুরবানী করলে ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। তবে সুদের উপর ঋণ নিয়ে কুরবানী করা যাবে না।

হাজীদের উপর ঈদুল আযহার কুরবানী

মাসআলা : ৫৫. যেসকল হাজী কুরবানীর দিনগুলোতে মুসাফির থাকবে তাদের উপর ঈদুল আযহার কুরবানী ওয়াজিব নয়। কিন্তু যে হাজী কুরবানীর কোনো দিন মুকীম থাকবে সামর্থ্যবান হলে তার উপর ঈদুল আযহার কুরবানী করা জরুরি হবে। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৩, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৫, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৫, ইমদাদুল ফাতাওয়া ২/১৬৬

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে কুরবানী করা

মাসআলা : ৫৬. সামর্থ্যবান ব্যক্তির রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে কুরবানী করা উত্তম। এটি বড় সৌভাগ্যের বিষয়ও বটে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী রা.কে তার পক্ষ থেকে কুরবানী করার ওসিয়্যত করেছিলেন। তাই তিনি প্রতি বছর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকেও কুরবানী দিতেন। -সুনানে আবু দাউদ ২/২৯, জামে তিরমিযী ১/২৭৫, ইলাউস সুনান ১৭/২৬৮, মিশকাত ৩/৩০৯

কোন দিন কুরবানী করা উত্তম

মাসআলা : ৫৭. ১০, ১১ ও ১২ এ তিন দিনের মধ্যে প্রথম দিন কুরবানী করা অধিক উত্তম। এরপর দ্বিতীয় দিন, এরপর তৃতীয় দিন। -রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৬

খাসীকৃত ছাগল দ্বারা কুরবানী

মাসআলা : ৫৮. খাসিকৃত ছাগল দ্বারা কুরবানী করা উত্তম। -ফাতহুল কাদীর ৮/৪৯৮, মাজমাউল আনহুর ৪/২২৪, ইলাউস সুনান ১৭/৪৫৩

জীবিত ব্যক্তির নামে কুরবানী

মাসআলা : ৫৯. যেমনিভাবে মৃতের পক্ষ থেকে ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে কুরবানী করা জায়েয তদ্রূপ জীবিত ব্যক্তির পক্ষ থেকে তার ইসালে সওয়াবের জন্য নফল কুরবানী করা জায়েয। এ কুরবানীর গোশত দাতা ও তার পরিবারও খেতে পারবে।

বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তির কুরবানী অন্যত্রে করা

মাসআলা : ৬০. বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তির জন্য নিজ দেশে বা অন্য কোথাও কুরবানী করা জায়েয।

কুরবানীদাতা ভিন্ন স্থানে থাকলে কখন জবাই করবে

মাসআলা : ৬১. কুরবানীদাতা এক স্থানে আর কুরবানীর পশু ভিন্ন স্থানে থাকলে কুরবানীদাতার ঈদের নামায পড়া বা না পড়া ধর্তব্য নয়; বরং পশু যে এলাকায় আছে ওই এলাকায় ঈদের জামাত হয়ে গেলে পশু জবাই করা যাবে। -আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৮

কুরবানীর চামড়া বিক্রির অর্থ সাদকা করা

মাসআলা : ৬২. কুরবানীর চামড়া কুরবানীদাতা নিজেও ব্যবহার করতে পারবে। তবে কেউ যদি নিজে ব্যবহার না করে বিক্রি করে তবে বিক্রিলব্ধ মূল্য পুরোটা সদকা করা জরুরি। -আদ্দুররুল মুখতার, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০১

কুরবানীর চামড়া বিক্রির নিয়ত

মাসআলা : ৬৩. কুরবানীর পশুর চামড়া বিক্রি করলে মূল্য সদকা করে দেওয়ার নিয়তে বিক্রি করবে। সদকার নিয়ত না করে নিজের খরচের নিয়ত করা নাজায়েয ও গুনাহ। নিয়ত যা-ই হোক বিক্রিলব্ধ অর্থ পুরোটাই সদকা করে দেওয়া জরুরি। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০১, কাযীখান ৩/৩৫৪

কুরবানীর শেষ সময়ে মুকীম হলে

মাসআলা : ৬৪. কুরবানীর সময়ের প্রথম দিকে মুসাফির থাকার পরে ৩য় দিন কুরবানীর সময় শেষ হওয়ার পূর্বে মুকীম হয়ে গেলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে। পক্ষান্তরে প্রথম দিনে মুকীম ছিল অতপর তৃতীয় দিনে মুসাফির হয়ে গেছে তাহলেও তার উপর কুরবানী ওয়াজিব থাকবে না। অর্থাৎ সে কুরবানী না দিলে গুনাহগার হবে না। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬, ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৪৬, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৯

কুরবানীর পশুতে ভিন্ন ইবাদতের নিয়তে শরীক হওয়া

মাসআলা : ৬৫. এক কুরবানীর পশুতে আকীকা, হজ্বের কুরবানীর নিয়ত করা যাবে। এতে প্রত্যেকের নিয়তকৃত ইবাদত আদায় হয়ে যাবে।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৯, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬, আলমাবসূত সারাখছী ৪/১৪৪, আলইনায়া ৮/৪৩৫-৩৪৬, আলমুগনী ৫/৪৫৯

কুরবানীর গোশত দিয়ে খানা শুরু করা

মাসআলা : ৬৬. ঈদুল আযহার দিন সর্বপ্রথম নিজ কুরবানীর গোশত দিয়ে খানা শুরু করা সুন্নত। অর্থাৎ সকাল থেকে কিছু না খেয়ে প্রথমে কুরবানীর গোশত খাওয়া সুন্নত। এই সুন্নত শুধু ১০ যিলহজ্বের জন্য। ১১ বা ১২ তারিখের গোশত দিয়ে খানা শুরু করা সুন্নত নয়। -জামে তিরমিযী ১/১২০, শরহুল মুনয়া ৫৬৬, আদ্দুররুল মুখতার ২/১৭৬, আলবাহরুর রায়েক ২/১৬৩

কুরবানীর পশুর হাড় বিক্রি

মাসআলা : ৬৭. কুরবানীর মৌসুমে অনেক মহাজন কুরবানীর হাড় ক্রয় করে থাকে। টোকাইরা বাড়ি বাড়ি থেকে হাড় সংগ্রহ করে তাদের কাছে বিক্রি করে। এদের ক্রয়-বিক্রয় জায়েয। এতে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু কোনো কুরবানীদাতার জন্য নিজ কুরবানীর কোনো কিছু এমনকি হাড়ও বিক্রি করা জায়েয হবে না। করলে মূল্য সদকা করে দিতে হবে। আর জেনে শুনে মহাজনদের জন্য এদের কাছ থেকে ক্রয় করাও বৈধ হবে না। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৫, কাযীখান ৩/৩৫৪, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০১

রাতে কুরবানী করা

মাসআলা : ৬৮.  ১০ ও ১১ তারিখ দিবাগত রাতে কুরবানী করা জায়েয। তবে রাতে আলোস্বল্পতার দরুণ জবাইয়ে ত্রুটি হতে পারে বিধায় রাতে জবাই করা অনুত্তম। অবশ্য পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকলে রাতে জবাই করতে কোনো অসুবিধা নেই। -ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৪৫, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২০, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৬, আহসানুল ফাতাওয়া ৭/৫১০

কাজের লোককে কুরবানীর গোশত খাওয়ানো

মাসআলা : ৬৯. কুরবানীর পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসাবে দেওয়া জায়েয নয়। গোশতও পারিশ্রমিক হিসেবে কাজের লোককে দেওয়া যাবে না। অবশ্য এ সময় ঘরের অন্যান্য সদস্যদের মতো কাজের লোকদেরকেও গোশত খাওয়ানো যাবে।-আহকামুল কুরআন জাস্সাস ৩/২৩৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪, আলবাহরুর রায়েক ৮/৩২৬, ইমদাদুল মুফতীন

জবাইকারীকে পারিশ্রমিক দেওয়া

মাসআলা : ৭০. কুরবানী পশু জবাই করে পারিশ্রমিক দেওয়া-নেওয়া জায়েয। তবে কুরবানীর পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসাবে দেওয়া যাবে না। -কিফায়াতুল মুফতী ৮/২৬৫

মোরগ কুরবানী করা 

মাসআলা : ৭১. কোনো কোনো এলাকায় দরিদ্রদের মাঝে মোরগ কুরবানী করার প্রচলন আছে। এটি না জায়েয। কুরবানীর দিনে মোরগ জবাই করা নিষেধ নয়, তবে কুরবানীর নিয়তে করা যাবে না। -খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১৪, ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/২৯০, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৩, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২০০।

মাছয়ালা ৭২

হত্যা করে গরু কুরবানী করছেন না তো? স্পাইনাল কর্ড থেকে বিরত থাকুন।

""একটি ছোট্ট ভুল এবং বাতিল হয়ে যাওয়া কুরবানী।""
♦সকল কুরবানী দাতাদের জন্য অত্যন্ত জরুরী একটি বিষয়।
১০-১৫ মিনিট সময় বাঁচাতে গিয়ে আমাদের করা, ছোট্ট একটি ভুলের কারনে সম্পূর্নরুপে বাতিল হয়ে যেতে পারে আমাদের অত্যন্ত যত্নের সাথে আদায়কৃত আল্লাহর মহান হুকুম কুরবানী।

★পশু জবেহ সম্পন্ন হবার পর, একটি ছোট তীক্ষ্ণ ছুড়ি দ্বারা জবেহের স্থানে খোঁচা দেয়ার একটা সিস্টেমের সাথে আমরা কমবেশি প্রায় সবাই পরিচিত, আমাদের অনেকেরই ধারনা এই কাজটার মাধ্যমে পশু দ্রুত মারা যায় এবং কষ্ট কম পায়।
এই ছোট্ট একটা ভুলই আমাদের কুরবানী বরবাদ করে দেবার জন্য যথেষ্ট।

★পশু জবেহ সহীহ হবার শর্ত হলো:-
পশুর অন্তত মূল তিনটি রগ কেটে দেয়া। আর মূল তিনটি রগ কেটে দিলে, রক্তক্ষরনের স্বাভাবিক ফলস্বরুপ পশুটি খুব দ্রুত মারা যায়।

★আমরা একটু অতিরিক্ত তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে, পশুটার মেরুদন্ডের ভেতর তীক্ষ্ণ ছুড়ি ঢুকিয়ে "মেরুরজ্জু বা স্পাইনাল কর্ড" বিচ্ছিন্ন করে দ্রুত মেরে ফেলার চেষ্টা করি। স্পাইনাল কর্ড বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে পশুর মস্তিষ্ক, দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় আর এর ফলে পশুটি হার্ট এটাক করে এবং মারা যায়।
অনেক সময় এভাবে দ্রুত পশুটিকে শান্ত করতে গিয়ে, কুরবানীর উদ্দেশ্য ব্যাহত হয় এবং পশুটি জবেহ না হয়ে, হত্যা হিসেবে পরিগনিত হয়।

★চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতেও এই পন্থা অত্যন্ত গর্হিত এবং বিপদজনক। স্পাইনাল কর্ড কেঁটে গেলে পশুর দেহের মাংশপেশিতেই রক্ত জমাট বেঁধে যায় এবং ফলশ্রুতিতে গোশত দূষিত হয়ে পরে। এই গোশত ভক্ষনে ক্যান্সার, এইচবিএএস, সহ অন্তত ১৮ প্রকার জটিল রোগ সৃষ্টি হতে পারে।

এতএব,
কুরবানী দাতা সকলের কাছে বিনীত অনুরোধ থাকবে, ১০-১৫ মিনিট সময় বাঁচাতে গিয়ে, দয়া করে আপনার কুরবানী কে বরবাদ হয়ে যাবার সুযোগ দিবেন না।। 

মাছয়ালা নং ৭৩

প্রশ্ন:
বিষয়:  আকীকা ও কুরবানী প্রসঙ্গে
মুহতারাম,
আমাদের দেশে অধিকাংশ মানুষ কুরবানীর সাথে আকীকাও দিয়ে থাকেন, অথচ কুরবানী ও আকীকা সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটি আমল। রাসূল সা. বলেছেন সন্তান জন্মের সপ্তম দিনে তার নাম রাখবে ও আকীকা করবে এবং তার চুল কাটবে (তিরমীযি শরীফ:৪২২৯-৪২৩১) জন্মের সপ্তম দিন যদি কুরবানীর দিন না হয় সে ক্ষেত্রে কুরবানীর দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করার অনুমতি কে দিল?
দ্বিতীয়ত-
আকীকার পশু সংক্রান্ত যত হাদীস এসেছে সবগুলোতেই বকরীর কথা এসেছে তাহলে বকরীর পরিবর্তে উট,মহিষ গরু জবাই করার অনুমতি কে দিল? রাসূল সা. এর যুগে কি এসব পশু ছিল না? না-কি রাসূলের কথা বাহিরেও ইসলাম আছে!
তৃতীয়ত-
একই পশুতে কুরবানী ও আকীকা শুদ্ধ হওয়ার অনেক ফিকহের কিতাবে দেখা যায়, এই মতটি গ্রহনযোগ্য হলে কিসের ভিত্তিতে? আলোচিত বিষয়গুলো কুরআন হাদীস ভিত্তিক সমাধান প্রদান করে বাধিত করবেন।

নিবেদক
মাওলানা ইলিয়াস
মুহতামিম,  মহিউস্সুন্নাহ মাদরাসা মাগুরা

উত্তর:
الجواب باسم ملهم الصدق والصواب
প্রথমত-
আকিকা সন্তান জন্মের সপ্তম দিনেই করতে হবে অন্য কোন দিনে করা যাবে না শরীয়তের আলোকে কথাটি সঠিক নয়। বরং পরবর্তী দ্বিতীয় সপ্তম  (১৪তম দিন) ও তৃতীয় সপ্তম (২১তম দিন) আকীকা করার কথাও হাদীসে পাওয়া যায়। যেমন-
হাদীস নং ১
হযরত বুরায়দা রা. থেকে বর্ণিত-
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ্রالْعَقِيقَةُ تُذْبَحُ لِسَبْعٍ، أَوْ أَرْبَعَ عَشْرَةَ، أَوْ إِحْدَى  عِشْرِينَগ্ধ( المعجم الاوسط:৩/৩৭৮, رقم:৪৮৮২)
অর্থ: হযরত বুরায়দা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেন সন্তান জন্মের সপ্তম দিন আকীকা কর। সপ্তম দিনে সম্ভব না হলে ১৪মত দিন, তাতেও সম্ভব না হলে একুশতম দিন।
উক্ত হাদীসের সনদে যদিও কিছুটা দূর্বলটা রয়েছে, কিন্তু বিষয়টি ফজীলত সংক্রান্ত হওয়ায় এবং সর্বযুগের ইমাম, ফকিহ ও মুহাদ্দিসগণের উক্ত হাদীসের উপর আমল থাকায় ও সহীহ হাদীস এর সমর্থনে থাকায় এবং এর বিপক্ষে শরয়ী কোন দলীল না থাকায় উক্ত উক্ত হাদীসটি আমলের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য বিবেচিত।
হাদীস নং ২
আম্মাজান হযরত আয়েশা রা. এ বিষয়ে লম্বা এক হাদীসের শেষাংশে বলেন-
فقالت عائشة رضي الله عنها : لا بل السنة أفضل عن الغلام شاتان مكافئتنان و عن الجارية شاة تقطع جدولا و لا يكسر لها عظم فيأكل و يطعم و يتصدق و ليكن ذاك يوم السابع فإن لم يكن ففي أربعة عشر فإن لم يكن ففي إحدى و عشرين  هذا حديث صحيح الإسناد و لم يخرجاه تعليق الذهبي قي التلخيص  (المستدرك:৪/২৩৮، رقم:৭৫৯৫)
অর্থ- ... বরং আকীকার সুন্নাত হলো সন্তান জন্মের সপ্তম দিনে, সম্ভব না হলে ১৪তম দিনে, তাতেও সম্ভব না হলে একুশতম দিন। ছেলে হলে ২টি, আর মেয়ে হলে ১টি বকরী জবাই করা।
হাকেম রহ. বলেন হাদীসটি সনদের বিচারে সহীহ। সুতরাং উক্ত হাদীসদ্বয়ের মাধ্যমে একুশতম দিন পর্যন্ত আকীকা করার প্রমাণ পাওয়া গেলেও তবে কেউ যদি একুশতম দিনে করতে না পারে তাহলে পরবর্তীতে যেকোন সময় করা যাবে। হাদীসের মর্ম এটাই এবং এব্যাপারেও একাধিক হাদীস পাওয়া যায়। নিম্বে কয়েকটি পেশ করা হলো।
হযরত আনাস  রা. থেকে বর্ণিত-
عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ্রعَقَّ عَنْ نَفْسِهِ بَعْدَ مَا بُعِثَ نَبِيًّا  ( المعجم الاوسط:২/২৮৩, رقم:৯৯৪)
অর্থ: আনাস রা. বলেন, রাসূল সা. নবুওয়াত প্রাপ্তির পর নিজেই নিজের পক্ষ থেকে আকীকা করেছিলেন।
অথচ এই আকীকা ৭,১৪,২১ তম দিনে ছিলনা। চল্লিশ বছর পরেই আকীকা করা হয়েছিল। এই মর্মে তাবেয়ীন ও সালাফদের বিভিন্ন আমলও পাওয়া যায়। যেমন-
হযরত হাসান বসরী রা. থেকে বর্ণিত-
عن الحسن البصرى اذا لم يعق عنك فعق عن نفسك وان كيت رجلا (اعلاء السنن:১৬/৭৮২১)
অর্থ- যদি তোমার পক্ষ থেকে আকীকা করা না হয়ে থাকে,তাহলে নিজেই নিজের আকীকা করে নাও। যদিও প্রাপ্ত বয়স্ক হউ না কেন।
ইমাম তিরমীযি রহ. সুনানে তিরমীযিতে-(৩/৫১৩, হা.১৫২২) আকীকার হাদীস বর্ণনার শেষে তার ব্যাখ্যায় বলেন-
আহলে ইলম সকলের নিকটে সন্তান জন্মের সপ্তম দিনে আকীকা করা মুস্তাহাব। তবে সপ্তম দিনে আকীকা করতে না পারলে ১৪তম দিনে করবে, তাতেও সম্ভব না হলে একুশতম দিনে আকীকা করবে।
উপরোক্ত হাদীস সাহাবা ও তাবেয়ীদের ফাতাওয়ার আলোকে প্রমাণ হলো যে, ২১তম দিনে আকীকা করতে না পারলে পরবর্তী যেকোন সময় করলে আকীকার সুন্নাত আদায় হবে।
সুতরাং কেউ যদি সপ্তম দিনের পর কুরবানীর জন্তুর সাথে আকীকা করে তার শরীয়ত সম্মত। রাসূলে কারীম সা. সাহাবা ও তাবেয়ীদের আমল দ্বারা প্রমাণিত। হ্যাঁ, কুরবানীর সাথে আকীকা করার জন্য সপ্তম দিনে আকীকা করার সুযোগ থাকা সত্বেও তা বিলম্ব করা অনুত্তম। এতে কারো দ্বিমত নেই।

দ্বিতীয়ত-
এ দাবীটিও সঠিক নয় যে, আকীকার পশু সংক্রান্ত যত হাদীস এসেছে সবগুলোতেই বকরীর কথা এসেছে। তাই আকীকা শুধু বকরী দিয়েই করতে হবে এটা কোন জরুরী বিষয় না, কারণ রাসূল সা. বকরী দিয়ে আকীকা করা একথার দলীল হয় না যে, শুধু বকরী দিয়েই আকীকা করতে হবে। অন্য কোন পশু দিয়ে করা যাবে না। বরং রাসূল সা. এর হাদীস ও সাহাবায়ে কেরামের আমল দ্বারা প্রমাণ মিলে যে, আকীকা উট, গরু, বকরী ইত্যাদি যেসকল জন্তু দিয়ে কোরবানী করা যায় সেসকল জন্তু দিয়েও আকীকা করা যায়। নিম্বে কয়েকটি দলীল পেশ করা হলো-
হাদীস নং ১
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : مَنْ وُلِدَ لَهُ غُلامٌ فَلْيَعِقَّ عَنْهُ مِنَ الإِبِلِ أَوِ الْبَقَرِ أَوِ الْغَنَمِ (المعجم الصغير:১/৮৪، رقم شاملة:২২৯)
অর্থ- হযরত আনাস রা. বলেন- নবী করিম সা. ইরশাদ করেন, যার সন্তান ভুমিষ্ট হবে সেযেন সন্তানের পক্ষ থেকে উট, গরু, বকরী যেকোন একটি জবেহ করে আকীকা করে।
উক্ত হাদীস নিযে বিতর্ক থাকলেও ইমাম ইবনে হাজর রহ. এই হাদীসকে দলীল হিসেবে পেশ করেন। (ফাতহুল বারী-১১/৯)
হাদীস নং ২
عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ أُرَاهُ عَنْ جَدِّهِ قَالَ سُئِلَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- عَنِ الْعَقِيقَةِ فَقَالَ ্র لاَ يُحِبُّ اللَّهُ الْعُقُوقَ. كَأَنَّهُ كَرِهَ الاِسْمَ وَقَالَ ্র مَنْ وُلِدَ لَهُ وَلَدٌ فَأَحَبَّ أَنْ يَنْسُكَ عَنْهُ فَلْيَنْسُكْ عَنِ الْغُلاَمِ شَاتَانِ مُكَافِئَتَانِ وَعَنِ الْجَارِيَةِ شَاةٌ (سنن ابى داود:৩/১২২৯، رقم:২৮৪২)
অর্থ- নবী করিম সা. ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তির সন্তান ভূমিষ্ট হয় সে যেন সন্তানের পক্ষ থেকে نْسُك )  ( তথা পশু জবেহ কর। আকীকার ক্ষেত্রে এ হাদীসে নুসুক তথা জন্তু জবাইয়ের কথা দ্বারা বুঝা যায় বকরী আকীকা করা জরুরী না। উট, গরু দিয়েও করা যায়। সাহাবাগণের কয়েকটি আসার দেখুন-
১।
عن قتادة ان انس ابن مالك كان يعق عن بنيه الجزور  (معجم الكبير:৬৮৫)
হযরত আনাস রা. উট জবেহ করে সন্তানদের আকীকা দিয়েছেন।
আল্লামা হাইছামী রহ. বলেন, উক্ত সনদে সকল বর্ণনাকারী সহীহ। (মাজমাউজজাওয়ায়েদ:৪/৯৪)
২।
عن عطاء عن أم كرز و أبي كرز قالا : نذرت امرأة من آل عبد الرحمن بن أبي بكر إن ولدت امرأة عبد الرحمن نحرنا جزورا فقالت عائشة رضي الله عنها : لا بل السنة أفضل عن الغلام شاتان مكافئتنان و عن الجارية شاة تقطع جدولا و لا يكسر لها عظم فيأكل و يطعم و يتصدق و ليكن ذاك يوم السابع فإن لم يكن ففي أربعة عشر فإن لم يكن ففي إحدى و عشرين  (المستدرك: ২৩৮/৪، رقم: ৭৫৯৫)
অর্থ- হযরত আবু কুরযা বলেন, আব্দুর রহমান ইবনে আবু বকরের পরিবারস্থ এক মহিলা এই মান্নত করল যে, যদি আব্দুর রহমানের স্ত্রী সন্তান প্রসব করে তাহলে আমরা উট জবেহ করে আকীকা করব। একথা শুনে হযরত আয়েশা রা. বলেন- না, (উট দিয়ে নয়) বরং উত্তম হলো ছেলের জন্য দুটি, আর মেয়ের জন্য একটি বকরী জবেহ দেয়া।
বি.দ্র. উক্ত হাদীছে আম্মাজান রা. উটের কথা শুনে না করার অর্থ হচ্ছে এটাকে উত্তম পরিপন্থি বলা। উট দিয়ে আকীকা করলে আকীকার সুন্নাত আদায় হবে না একথা বলা নয়। অন্যথায় রাসূল সা. এর উপরোক্ত হাদীসের সাথে সাংঘর্ষিক দেখা দিবে, আর এটাই সকল মাযহাবের ইমামগণের ফাতাওয়া। সুতরাং প্রমাণ হলো আকীকা শুধু বকরী দিয়ে নয় বরং কুরবানী করা বৈধ এমন সকল জন্তু- উট, গরু, মহিষ, ভেড়া, বকরী, দুম্বার যেকোন একটি দিয়ে আকীকা করা জায়েয।

তৃতীয়ত:
আকীকা ও কুরবানী একই জন্তুতে কারা যায় কি-না?
আকীকা ও কুরবানী একই সাথে একই পশুতে দিলে আদাই না হওয়ার উল্লেখযোগ্য কোন কারণ নেই। তবে একই সাথে দেওয়ার ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো হাদীস না থাকায় শরীকদারদের মাকসাদ ও উদ্দেশ্যের প্রতি লক্ষ রেখে জমহুর ফুকাহা ও মুহাক্কিক উলামায়ে কেরামের ফাতাওয়া হলো একই পশুতে কুরবানী ও আকীকা আদায় হবে। কারণ শরীকানা কুরবানী সহীহ হওয়ার জন্য শর্ত হলো সকল শরীকদারদের নিয়্যত শুধু এক আল্লাহর সন্তুষ্টি হওয়া। আর উভয় আমল হতে হবে ”কুরবত” সাওয়াবের উদ্দেশ্যে আল্লাহর সন্তুষ্টি চিত্তে করা। যদিও উভয়ের ধরন ভিন্ন, তবে মাকাসাদ ও উদ্দেশ্য এক। তাই আকীকা ও কুরবানী একসাথে সহীহ বলে গণ্য হবে, তবে পৃথক পৃথক হওয়া ও আকীকা বকরী দিয়ে করাই ভালো।
সারকথা, আকীকা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় হালাল জন্তুর রক্ত প্রবাহের নাম। পর্যায়ক্রমে ৭,১৪,২১ তম দিলে করা অতি উত্তম বা উত্তম। এর পরে করলেও আকীকার সুন্নাত আদায় হবে। বকরী  দ্বারা করা উত্তম তবে উট,গরু এ জাতীয় পশু দ্বারা করলেও মূল আকীকার সুন্নাত আদায় হবে। পৃথকভাবে বকরী দিয়ে করা উত্তম কিন্তু কুরবানীর সাথেও আদায় হবে। কারণ উভয় আমলের মাহাত্ম হচ্ছে “কুরবত” আল্লাহর সন্তুষ্টি। এটাই মুজতাহিদ ইমামগণের ফাতাওয়া ও সিদ্ধান্ত। আমরা সবাই মুকাল্লিদ আমাদের কাজ ইমামের অনুসরণে কুরআন সুন্নাহ মান্য করে চলা, আমাদের চেয়ে অনেক বেশী শরীয়ত বুঝতেন মাযহাবের ইমামগণ, তাদেরকে ডিঙ্গিয়ে অতি মাত্রায় জ্ঞানী হওয়ার দাবী করাই বোকামী ও ফিতনার কারণ। আল্লাহ সকলকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন ॥

الادلة الشرعية
سنن ابى داود:৩/১২২৯، رقم:২৮৪২
عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ أُرَاهُ عَنْ جَدِّهِ قَالَ سُئِلَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- عَنِ الْعَقِيقَةِ فَقَالَ ্র لاَ يُحِبُّ اللَّهُ الْعُقُوقَ. كَأَنَّهُ كَرِهَ الاِسْمَ وَقَالَ ্র مَنْ وُلِدَ لَهُ وَلَدٌ فَأَحَبَّ أَنْ يَنْسُكَ عَنْهُ فَلْيَنْسُكْ عَنِ الْغُلاَمِ شَاتَانِ مُكَافِئَتَانِ وَعَنِ الْجَارِيَةِ شَاةٌ

فتح البارى:১১/৯
وَاسْتَدَلَّ بِإِطْلَاقِ الشَّاة وَالشَّاتَيْنِ عَلَى أَنَّهُ لَا يُشْتَرَط فِي الْعَقِيقَة مَا يُشْتَرَط فِي الْأُضْحِيَّة ، وَفِيهِ وَجْهَانِ لِلشَّافِعِيَّةِ ، وَأَصَحّهمَا يُشْتَرَط وَهُوَ بِالْقِيَاسِ لَا بِالْخَبَرِ ، وَيُذْكَر الشَّاة وَالْكَبْش عَلَى أَنَّهُ يَتَعَيَّن الْغَنَم لِلْعَقِيقَةِ ، وَبِهِ تَرْجَمَ أَبُو الشَّيْخ الْأَصْبِهَانِي وَنَقَلَهُ اِبْن الْمُنْذِر عَنْ حَفْصَة بِنْت عَبْد الرَّحْمَن بْن أَبِي بَكْر ، وَقَالَ الْبَنْدَنِيجِيُّ مِنْ الشَّافِعِيَّة : لَا نَصَّ لِلشَّافِعِيِّ فِي ذَلِكَ ، وَعِنْدِي أَنَّهُ لَا يُجْزِئُ غَيْرهَا ، وَالْجُمْهُور عَلَى إِجْزَاء الْإِبِل وَالْبَقَر أَيْضًا ، وَفِيهِ حَدِيث عِنْد الطَّبَرَانِيّ وَأَبِي الشَّيْخ عَنْ أَنَس رَفَعَهُ " يَعُقّ عَنْهُ مِنْ الْإِبِل وَالْبَقَر وَالْغَنَم " وَنَصَّ أَحْمَد عَلَى اِشْتِرَاط كَامِلَة ، وَذَكَرَ الرَّافِعِيّ بَحْثًا أَنَّهَا تَتَأَدَّى بِالسَّبْعِ كَمَا فِي الْأُضْحِيَّة وَاللَّهُ أَعْلَم .

الفقه الاسلامى وادلته:৪/২৭৪৮، مكتبة رشيديه
تذبح يوم سابع ولادة المولود، ويحسب يوم الولادة من السبعة. فإن ولدت ليلاً، حسب اليوم الذي يليه. وعند المالكية: يحسب يوم الولادة إن ولد قبل الفجر أو معه، ولا يعد اليوم الذي ولد فيه، إن ولد بعد الفجر. وقيل عندهم: يحسب إن ولد قبل الزوال لا بعده. ويندب الذبح ضحى إلى الزوال لا ليلاً. وصرح الشافعية والحنابلة: أنه لو ذبح قبل السابع أو بعده، أجزأه. وأضاف الحنابلة والمالكية: لا يعق غير الأب، ولا يعق المولود عن نفسه إذا كبر، لأنها مشروعة في حق الأب، فلا يفعلها غيره. واختار جماعة من الحنابلة: أن للشخص أن يعق عن نفسه استحباباً. ولا تختص العقيقة بالصغر، فيعق الأب عن المولود، ولو بعد بلوغه؛ لأنه لا آخر لوقتها

فقه السنة:৩-১/১০০৬ دار الحديث
والذبح يكون يوم السابع بعد الولادة إن تيسر، وإلا ففي اليوم الرابع عشر وإلا ففي اليوم الواحد والعشرين من يوم ولادته، فإن لم يتيسر ففي أي يوم من الايام. ففي حديث البيهقي: تذبح لسبع، ولاربع عشر، ولاحدي وعشرين.

بدائع الصنائع:৫/৩০৮ زكريا،
وَلَنَا أَنَّ الْقُرْبَةَ في إرَاقَةِ الدَّمِ وإنها لَا تَتَجَزَّأُ لِأَنَّهَا ذَبْحٌ وَاحِدٌ فَإِنْ لم يَقَعْ قُرْبَةً من الْبَعْضِ لَا يَقَعُ قُرْبَةً من الْبَاقِينَ ضَرُورَةَ عَدَمِ التَّجَزُّؤِ وَلَوْ أَرَادُوا الْقُرْبَةَ الْأُضْحِيَّةَ أو غَيْرَهَا من الْقُرَبِ أَجْزَأَهُمْ سَوَاءٌ كانت الْقُرْبَةُ وَاجِبَةً أو تَطَوُّعًا أو وَجَبَتْ على الْبَعْضِ دُونَ الْبَعْضِ وَسَوَاءٌ اتَّفَقَتْ جِهَاتُ الْقُرْبَةِ أو اخْتَلَفَتْ... وَلَنَا أَنَّ الْجِهَاتِ وَإِنْ اخْتَلَفَتْ صُورَةً فَهِيَ في الْمَعْنَى وَاحِدٌ لِأَنَّ الْمَقْصُودَ من الْكُلِّ التَّقَرُّبُ إلَى اللَّهِ عز شَأْنُهُ وَكَذَلِكَ إنْ أَرَادَ بَعْضُهُمْ الْعَقِيقَةَ عن وَلَدٍ وُلِدَ له من قَبْلُ لِأَنَّ ذلك جِهَةُ التَّقَرُّبِ إلَى اللَّهِ تَعَالَى عز شَأْنُهُ بِالشُّكْرِ على ما أَنْعَمَ عليه

البحر الرائق:৯/৩২৪ زكريا
يجوز بالجاموس لانه نوع من البقر... لان جوازها عرف بالشرع... الخ
والله اعلم بالصواب। 

মুফতি মিজানুর রহমান। সাইদ


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন