Translate

মঙ্গলবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১১

;যিনার শাস্তি কার্যকর করার শর্তাবলী: যিনার শাস্তি কার্যকর করতে হলে কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে নচেৎ শাস্তি কার্যকর করা যাবে না।

এম. আবদুল্লাহ নিজামী ভূঁইয়া




অনেকেই ইসলামের বিভিন্ন বিধান নিয়ে সমালোচনা করেন। কেউ কেউ সুযোগ পেলে ইসলামের বিধানকে বর্বর বলে চালিয়ে দেন।

কেউ কেউ সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াতে চান। জুলিয়া বিনতে খানম নামের একজন ব্লগার আফগানিস্তানে মা ও মেয়েকে পাথর ছুঁড়ে হত্যার ব্যাপারে জানতে চেয়েছেন- বিষয়টি ইসলামসম্মত হয়েছে কি-না?



এখানে দুটি বিষয় লক্ষনীয়:



এক. যারা এ কাজটি করেছে তারা এটি করার ক্ষমতা রাখেন কিনা?



দুই. শরীয়ত বহির্ভূতভাবে নারী-পুরুষ শারীরিক মিলন করলে তার বিধান কি?



জবাব:

এক.

ইসলামের দৃষ্টিতে কোন বিধান কার্যকর ক্ষমতা কেবল সরকারকেই দেয়া হয়েছে। কোন ব্যক্তি ইচ্ছা করলেই অপরের উপর এ ধরণের কোন দন্ড কার্যকর করতে পারে না।

উপরের ঘটনায় যারা দন্ড কার্যকর করেছেন তারা সরকারের কোন লোক নন তাই তাদের এ কাজ শরীয়ত সম্মত হয়নি। এছাড়া একটি দন্ড কার্যকর করতে অনেক শর্ত পূরণ করতে হয় তা এখানে পূরণ হয়েছে কিনা সেটি একটি বড় প্রশ্ন।



দুই.

শরীয়ত বহির্ভূতভাবে নারী-পুরুষ শারীরিক মিলন (যিনা) করলে তার বিধান হচ্ছে-

ক. অবিবাহিত হলে বেত্রাঘাত।

দলীল: 'ব্যভিচারিণী নারী ব্যভিচারী পুরুষ; তাদের প্রত্যেককে একশ করে বেত্রাঘাত কর।' সুরা নুর আয়াত ২।

খ. বিবাহিত হলে রজম অর্থাৎ পাথর ছুড়ে হত্যা করা।

দলীল:

উবাদাহ ইবনুস সামিত এর হাদিস:

والثيب بالثيب جلد مائة والرجم

অর্থাৎ- বিবাহিতের শাস্তি বেত্রাঘাত ও রজম। (সহীহ মুসলিম, হাদসি নং: ১৬৯০)





বেত্রাঘাত ও রজমের মধ্যে কোন বিরোধ নেই। কুরআনের আয়াত দ্বারা শুধু অবিবাহিত নর-নারীর যিনার বিচার সাব্যস্ত হয়েছে। আর নবী স. ও তাঁর সাহাবাগণ বিবাহিত যিনাকারীদের শাস্তি হিসেবে রজম দিয়েছেন। নবী স. নিজেই অনেকগুলি রজমের দণ্ড কার্যকর করেছেন।



হযরত মইয ইবনে মালিক আল আযলামী, গামিদ গোত্রের জনৈকা মহিলা, ও দু ইয়াহুদীকে রাসূল স. কতৃক রজমের দণ্ড প্রদান করার ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।





এ প্রসঙ্গে হযরত উমর রা. এর একটি কথা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।



তিনি বলেন: ‍"আল্লাহ তায়ালা মুহাম্মদ স. কে সত্য সহকারে পাঠিয়েছেন। তাঁর প্রতি কিতাব অবতীর্ন করেছেন। সে অবতীর্ণ বিষয়াবলীর মধ্যে রজমের আয়াতও ছিল। আমরা তা পড়েছি এবং তা সংরক্ষণও করেছি। স্বয়ং রাসূলও রজমের দণ্ড দিয়েছেন। পরে আমরাও তা করিয়েছি। আমার আশঙ্কা হচ্ছে, সময়ের ব্যবধানে লোকেরা হয়ত বলবে, আল্লাহর কিতাবে আমরা রজমের আয়াত পাচ্ছি না। এভাবে তারা আল্লাহর নির্ধারিত ফরজ ত্যাগ করে পথভ্রষ্ট হবে। মনে রেখ, রজম আল্লাহর কিতাবেরই বিধান। বিবাহিত নার-পুরুষ যিনা করলেই তা কার্যকর হবে। তিনি আরো বলেন, আল্লাহর শপথ! উমর আল্লাহর কিতাবে বৃদ্ধি করেছে লোকেরা এ কথা বলে বেড়াবে- এ আশঙ্কা না হলে আমি অবশ্যই কুরআনে আয়াতটি লিখে দিতাম" (আবু দাউদ, ৪৪১৮)







চার মাযহাবের সকল ইমামই বিবাহিত যিনাকারীদের শাস্তি রজমের উপর ঐক্যমত হয়েছেন।

এ বিধানের উপর উম্মতের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।



কেউ কেউ বিবাহিত যিনা কারীকে পাথর ছুড়ে মারা মানবিক নয় বলে আখ্যা দেন।



আসলে আল্লাহর সব বিধানই মানবের কল্যাণের জন্য।ইসলাম ন্যাচারাল ধর্ম। যৌন ক্ষুধা মানুষের সহজাত বিষয়। ইসলাম প্রত্যেক মানুষের যৌন ক্ষুধা মেটানোর বৈধ পথও বাতলিয়ে দিয়েছে। সেটি হচ্ছে শরয়ীভাবে বিবাহ। বিবাহের মাধ্যমে একজন নারী-পুরুষ তাদের প্রয়োজনীয় হাজত পূরণ করতে পারেন।



একজন বিবাহিত নর অথবা নারী যিনা করলে সমাজের বিশাল ক্ষতি হতে পারে। যেমন: সংসার ভেঙ্গে যেতে পারে, খুনাখুনি হতে পারে, বিবাহ বিচ্ছেদের ফলে সন্তানাদিদের ভবিষ্যৎ হুমকির মধ্যে পড়তে পারে। তাই বিবাহিত যিনাকারীদের শাস্তিটা একটু কঠিন যাতে মনের ভূলেও কেউ এই পথে না আসে। তাছাড়া যিনি বিবাহের মাধ্যমে বৈধ যৌনতার স্বাদ পেলেন তিনি কেন এরকম অবৈধ কাজ করবেন এবং ফেতনা সৃষ্টি করবেন?







এই অবৈধ কাজ করার ফলে ইসলামী সরকার যদি তার বিচার শরীয়া আইন অনুযায়ী করেন তাহলে সমাজের অন্য মানুষেরা শিক্ষা পেয়ে যাবেন।



যিনার শাস্তি কার্যকর করার শর্তাবলী: যিনার শাস্তি কার্যকর করতে হলে কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে নচেৎ শাস্তি কার্যকর করা যাবে না।



শর্তগুলি হচ্ছে-

১. উভয়কে মুসলিম হতে হবে।

২. প্রাপ্ত বয়স্ক ও সুস্থ মস্তিস্ক হতে হবে।

৩. পুরষাঙ্গ নারীর জননেন্দ্রিয়ে প্রবিষ্ট করা।

৪. যিনার নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে জানা থাকা।

৫. স্বেচ্ছায় হতে হবে, জোরপূর্বক হলে চলবে না।

৬. ইসলামী রাষ্ট্রে যিনা হওয়া।

৭. যিনাকারীকে বাকশক্তিসম্পন্ন হতে হবে।

৮. জীবিত মহিলার সাথে যিনা হওয়া।

৯. দুজনের একজন পুরুষ আরেকজন নারী হওয়া।

১০. সন্দেহমুক্ত হওয়া



যিনা প্রমাণের পদ্ধতি:





১. মৌখিক স্বীকৃতি: যারা যিনা করেছে তারা যদি নিজেরাই যিনা করার কথা স্বীকার করে তাহলে যিনা প্রমাণিত হবে। তবে সেখানেই শর্ত রয়েছে।

শর্তগুলি হচ্ছে-



ক. প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া

খ. সুস্থ বিবেক থাকা, পাগল না হওয়া।

গ. বাকসম্পন্ন্ হওয়া

ঘ. পূর্ণ স্বাধীনতা থাকা।







২. স্বীকারোক্তির কিছু শর্ত:



ক. চার চার বার স্বীকার করা।

খ. ভিন্ন ভিন্ন এজলাসে স্বীকারোক্তি দেয়া।

গ. বিচারকের এজলাসে স্বীকারোক্তি করা।

ঘ. স্বীকারোক্তি স্পষ্ট হওয়া।

ঙ. স্বীকারোক্তির উপর অটল থাকা।



৩. সাক্ষীদের মাধ্যমে যিনা প্রমাণ: এখানেও কিছু শর্ত আছে-





ক. সাক্ষীদেরকে মুসলিম হতে হবে।

খ. বয়ঃপ্রাপ্ত হতে হবে।

গ. ন্যায় পরায়ন হতে হবে।

ঘ. সাক্ষেদের পুরুষ হতে হবে।

ঙ. সাক্ষীদের সংখ্যা চার হতে হবে।

চ. সাক্ষীদেরকে বাশক্তি সম্পন্ন হতে হবে।





সাক্ষ্যের সাথে সংশ্লিষ্ট কিছু শর্ত:





ক. চারজন সাক্ষীর সাক্ষ্য একই মজলিসে হতে হবে।

খ. সাক্ষীদের সাক্ষ্য স্পষ্ট হতে হবে।

গ. সাক্ষ্য মৌলিক হতে হবে। অর্থাৎ প্রত্যক্ষদর্শী হতে হবে।

ঘ. প্রত্যেকের সাক্ষে মিল থাকতে হবে।



উল্লেখিত শর্ত পাওয়া গেলেই কেবল যিনার শাস্তি কার্যকর করা যায়। কেউ চাইলেই মনগড়াভাবে করতে পারেন না।



লেখাটি দীর্ঘ হওয়ার ভয়ে দলীলগুলো দেয়া হল না। আশাকরি যারা নাস্তিকদের কথায় বিভ্রান্ত হচ্ছেন এখন আর হবেন না।



ইসলাম বর্বর ধর্ম নয়। বর্বর নয় এর বিধানও। ইসলাম বিরোধীরা একে বর্বর বলে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। আমরা তাতে ভায়াস্ট হচ্ছি।



প্রিয়া বন্ধুরা! সারাবিশ্বে আমরিকা ও তার দোসররা অসংখ্য বর্বর কান্ড করে যাচ্ছে। সেগুলি কিন্তু বিবিসি ফলাও করে প্রকাশ করে না। প্রকাশ করলেও এমনভাবে রিপোর্ট করে তাতে আমরিকার দোষ ফুটে উঠে না। কিন্তু মুসলমানরা পাছা দিয়ে একটু বায়ু ছাড়লেও তাকে তারা বোমা বানিয়ে ছাড়ে। আমরাও ওদের রিপোর্ট দেখে বিভ্রান্ত হই। সত্য মিথ্যা যাচাই করি না।



এ সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুন:

ড. আহমদ আলী, ইসলামের শাস্তি আইন, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার। ঢাকা।









কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন