Translate

শুক্রবার, ২০ জুলাই, ২০১২

তাযাল্লিয়াতে সফদর-৫ (আমি যেভাবে হানাফী হলাম-দ্বিতীয় পর্ব) 02

তাযাল্লিয়াতে সফদর-৫ (আমি যেভাবে হানাফী হলাম-দ্বিতীয় পর্ব)

তাযাল্লিয়াতে সফদর-৫ (আমি যেভাবে হানাফী হলাম-প্রথম পর্ব)‎
কর্ম পদ্ধতি
আমার ব্রেইন যখন পোক্ত হয়ে গেল তখন আমার উস্তাদজি বলতেন-“একবার দু’ তিনজন সাধারণ হানাফী যুবককে ধরে আমি ‎বললাম-‘আমাকে তোমাদের হানাফী মাওলানা সাহেবের কাছে নিয়ে চল, সে যদি আমাকে একটি হাদিস দেখাতে পারে ‎তাহলে আমি হানাফী হয়ে যাব’। সেই বেচারারা আমাকে তাদের মাওলানা সাহেবের কাছে নিয়ে গেল। আমি মাওলানা ‎সাহেবকে জিজ্ঞেস করলাম-“মাওলানা সাহেব! একটি হাদিস দেখাও! যেখানে নবীজী সা. বলেছেন যে, তাকে ছেড়ে আবু ‎হানীফার তাকলীদ করতে বলেছেন”। প্রশ্নটি করার পর আমি তাদের জবাব ভাল করে শুনিনা কখনো। বরং প্রতি দু’ মিনিট ‎পরপর আমি এই দুই যুবককে স্বাক্ষ্য বানিয়ে বলতাম-‘দেখ! মাওলানা সাহেবের একটি হাদিসও মুখে আসেনা। যখন ‎দ্বিতীয়বার আমি মাওলানা সাহেবকে বলতাম যে, ‘আপনারতো একটি হাদিসও মুখ দিয়ে বের হয়না’। তখন তিনি ‎স্বাভাবিকভাবেই ক্ষেপে যান। তখন আমি উঠে চলে আসলাম”। ‎
উস্তাদজি আনন্দচিত্তে আমাকে নিয়ে কয়েকটি গ্রামে ভ্রমণ করেছেন, আর আমার ব্যাপারে প্রচার করতেন যে, ‘দেখ! এই ছেলে ‎ওমুক হানাফী মুফতী সাহেবকে লা-জাওয়াব করে দিয়েছে। সে একটি প্রশ্নের জবাবও দিতে পারেনি। একটি হাদিসও দেখাতে ‎পারেনি। ‎جاء الحق وزحق الباطل ان الباطل كان زهوقا‎ অর্থাৎ সত্য সমাগত, মিথ্যা অপসৃত, নিশ্চয় মিথ্যা অপসৃতই হয়ই, এই ‎স্লোগান দিতে থাকতেন’।
ছয় নাম্বার
উস্তাদজি এই বিষয়ে অভিজ্ঞ ছিলেন। তিনি বলতেন যে, হানাফীদের পর্যুদস্ত করার জন্য কুরআন হাদিস আর ফিক্বহ পড়ার ‎কোন দরকার নাই। নিম্নের কয়েকটি বিষয় ভাল করে পড়েই তাদেরকে পর্যুদস্ত করে একশত শহীদের সওয়াব পেতে পার। ‎
১. যখন কোন হানাফীর সাথে সাক্ষাত হয় তখন তাকে প্রশ্ন কর যে, আপনি যে ঘড়ি হাতে দিলেন এটা কোন হাদিস দ্বারা ‎প্রমাণিত? এরকম প্রশ্নের জন্য কোন ইলমের প্রয়োজন নেই। তুমি একটি ছয় বছরের বাচ্চাকে মেডিকেল ষ্টোরে পাঠিয়ে দাও। ‎সে ওষুধের উপর হাত রেখে প্রশ্ন করবে যে, এই ওষুধের নাম হাদিসের কোথায় আছে? এই প্রশ্নটির পর নিজের মসজিদে এসে ‎বলবে যে, আমি অমুক হানাফী মাওলানা সাহেবকে হাদিস জিজ্ঞেস করলাম, সে বলতে পারেনি। তারপর তখন সকল গায়রে ‎মুকাল্লিদ বাচ্চা ও বয়স্কদের উপর ফরজ হল, তারা প্রত্যেক অলিতে গলিতে এই প্রচারণা চালাবে যে, ওমুক হানাফী মাওলানা ‎সাহেব একটি হাদিসও জানেনা।
২. দ্বিতীয় নাম্বার হল এই যে, আল্লাহ না করুন যদি তুমি কোথাও ফেঁসে যাও, আর তোমাকে জিজ্ঞেস করে বসে যে, তুমি যে ‎পাঞ্জাবীতে পকেট লাগালে তার নাম হাদিসের কোথায় আছে? তখন ঘাবরিওনা, বরং তৎক্ষণাৎ তাকে জিজ্ঞেস কর যে, কোন ‎হাদিসে এর নিষেধাজ্ঞা আছে? আর শোরগোল শুরু করে দিবে যে, নিষেধাজ্ঞার হাদিস দেখাতে পারবেনা, ওমুক কাজ করারও ‎হাদিসও দেখাতে পারবেনা। তখন সকল গায়রে মুকাল্লিদরা এটা প্রচার করতে শুরু করবে যে, সে হাদিস কোত্থেকে পাবে? ‎সেতো সারা জীবন ফিক্বহ নিয়েই পড়ে থাকে।
৩. আর যদি কোন স্থানে এভাবে ফেঁসে যাও যে, ‘কোন হাদিসের কিতাব নিয়েই আসে, আর বলে যে, তুমি আহলে হাদিস, ‎অথচ কত হাদিসের উপর তোমাদের আমল নেই’। একথা শুনে ঘাবরানোর দরকার নেই, তখন হঠাৎ করেই কাশি দিয়ে বলতে ‎শুরু করবে যে, এই হাদিসের কোন ঠিক নেই, কোত্থেকে এনেছ? আমরাতো কেবল বুখারী মুসলিম আর বড় জোর সিহাহ সিত্তার ‎হাদিসই কেবল মানি। বাকি সব হাদিসের অধিকাংশ কেবল শুধু অস্বিকারই করিনা, বরং বিদ্রোপও করি। আর আমাদের হাসি ‎তামাশা দেখে বেচারা এতটাই লজ্জা পাবে যে, সে হাদিসের কিতাব লুকিয়ে জান বাঁচাতে ছুটে পালাবে।
৪. যদি কেউ এই ছয় কিতাবের মধ্য থেকে কোন হাদিস দেখিয়ে দেয়, যা তোমাদের বিপরীত। তখন তাড়াতাড়ি কোন শর্ত ‎নিজের পক্ষ থেকে লাগিয়ে দিবে যে, ‘ওমুক শব্দ দেখাও! তাহলে এক লাখ টাকা তোমাকে পুরস্কার দিব। যেমন মির্যায়ীরা বলে ‎থাকে যে, “এই শব্দে হাদিস দেখাও যে, জাগতিক শরীরসহ হযরত ঈসা আ. জীবিত আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। সেটা সহীহ, ‎সুষ্পষ্ট, আর মারফু’ আর গায়রে মারজুহ, হতে হবে”। যেমন গায়রে মুকাল্লিদরা বলে থাকে যে, “রফয়ে ইয়াদাইন এর সাথে ‎রহিত হবার শব্দ দেখাও”। তখন নিজের বক্তব্যের উপর এতটা চিল্লাফাল্লা করবে যে, বিরোধি ব্যক্তি চুপ হয়ে যাবে।
৫. যদি কখনো সে শব্দটা পেয়েও যায়, আর দেখিয়ে দেয়, যে শব্দ তুমি জানতে চেয়েছিলে, তখন পূর্ণ শক্তিমত্তা দিয়ে জোরে ‎তিনবার ঘোষণা দিয়ে দিবে যে, এটা দুর্বল! দুর্বল!! দুর্বল!! তখন হাদিসও মানতে হলনা, আবার ভীতিও প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে ‎যে, দেখ! মাওলানা সাহেবের তাহকীকই নাই যে, এটা দুর্বল হাদিস।
৬. ছষ্ঠ ও শেষ নাম্বার হল-উস্তাদজি তাগীদ দিয়ে বলতেন যে, ‘যে নামায পড়েনা তাকে তাকে নামায পড়ার কথা বলা যাবেনা। ‎হ্যাঁ যে নামায পড়ে তাকে অবশ্যই বলবে যে, “তোমার নামায় হয়না”। ‎
ব্যাস। এই ছয় নাম্বার আমাদের ইলমে কালাম তথা তর্কশাস্ত্রের মেরুদন্ড ছিল। আমার পিতা নামায, রোযা, আর তাহাজ্জুদের ‎খুব পাবন্দ ছিলেন। তিনি খুবই ইবাদতগুজার মানুষ ছিলেন। প্রতিদিন তার সাথে আমার ঝগড়া হত। আমি বলতাম তাকে-‎‎“আপনার নামায হয়না। আপনার দ্বীন আপনার তাহাজ্জুদ কিছুই কবুল হবেনা। আপনার কোন ইবাদতই গ্রহণযোগ্য নয়”। ‎আমার পিতা বলতেন-“ঝগড়া করনা, তোমার নামাযও হয়, আমার নামাযও হয়”। আমি বলতাম-“কত বড় ধোঁকা এটা! কি ‎এক খোদা দুই নামায নাজিল করেছেন? একটা মদীনায় আর একটা কুফায়? আমাদের নামায নবীজী সা. এর নামায, যা ‎আমাদের জান্নাতে নিয়ে যাবে। আপনাদের নামায কুফাবাসীর নামায। এটা আপনাদের সোজা জাহান্নামে নিয়ে যাবে”। আমার ‎পিতা বলতেন-“ফালতু প্যাচাল করনা”। আমি এটাকে আমার জীবনের বড় বিজয় মনে করতাম। আর অহংকারের সাথে ‎বলতাম-“আমিতো আপনাকে অনেক সম্মান করি, নতুবা ফিক্বহের গোমর ফাঁক করে দিতাম। যার ফলে সবার মাথা গরম হয়ে ‎যাবে”। ‎
এরকম করেই কেটে গেল কয়েক বছর।
স্থানান্তর
আমরা সেখান থেকে অন্যত্র চলে গেলাম। সেখানে কোন উৎসাহদাতাও ছিলনা। ছিলনা কোন সাবাশদাতাও। শহরের এক ‎মাদরাসায় এক সময় পড়তে চলে যাই। সেখানে আসবাকে ইলমুন নাহু আর বুলুগুল মারাম এবং নাসায়ী শরীফ ছিল। শিক্ষার ‎উদ্দেশ্য কোন কিতাব পূর্ণ পড়া ছিলনা, বরং ফাতিহা খালফাল ইমাম, রফয়ে ইয়াদাইন, আমীন জোরে বলা, সীনার উপর হাত ‎বাঁধা, টাখনো মিলিয়ে দাঁড়ানো, ইত্যাদি মাসআলা যদি এসে যেত তাহলে প্রথম বিভাগে পাশ করা সুনিশ্চিত ছিল। অবশ্য তখন ‎গ্রামেও সেই তুলকালাম অবস্থা আর বাকি ছিলনা।
খতমে নুবওয়াত আন্দোলন
সে সময় ৫৩ ঈসাব্দের খতমে নবুওয়াত আন্দোলন চলছিল। আমাদের লক্ষ্ণৌ সাহেবরা সেই আন্দোলনের বিরোধি ছিল। ‎কেননা তারা কাদিয়ানীদের মুসলমান বলত। সে সময় এলাকা ঘেঁটে দুই জন বুযুর্গ মানুষ হযরত মাওলানা সাইয়্যিদ মুহাম্মদ ‎আব্দুল হান্নান সাহেব রহ. আর রাওয়ালপিন্ডির তায়ালীমুল কুরআন রাজাবাজারের সাবেক শাইখুল হাদিস হযরত মাওলানা ‎আব্দুল কাদির সাহেব রহ. গ্রেফতার অবস্থায় ছিলেন। এই দুই হযরতকে সাহওয়াল জেলে স্থানান্তরিত করা হয়। এই জেলে ‎দারুল উলুম দেওবন্দের ফারেগ ওকারার খতমে নবুওয়াত আন্দোলনের নেতা হযরত মাওলানা জিয়উদ্দীন সিহারওয়ী রহ. ও ‎ছিলেন। এই দুই জনই দারুল উলুম দেওবন্দের ফারিগ আর ইমামুল আসর আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী রহ. এর খাস ছাত্র ‎ছিলেন। হযরত সিহারওয়ী রহ. দুইজনকেই রাজী করালেন যে, তারা মুক্তি পাবার পর ওকারাতে শিক্ষকতা করাবেন। সুতরাং ‎মুক্তির পর উভয় শায়েখ ওকারাতে আসলেন। হানাফীরা ওকারার মাঝে ইলম ও মারেফাতের এই অনাবিল বৃষ্টিকে অনেক ‎প্রচার করে। আর এই দুই হযরতকে শানদার অভ্যার্থনা জানায়।
বিতর্কের আকাংখা
সে সময় আমার গায়রে মুকাল্লিদ উস্তাদ খান্ডিলওয়ীর মুহাদ্দিস মাওলানা আব্দুল জাব্বার সাহেব ছিলেন। তিনি আমাকে ডেকে ‎বললেন-“শোন! আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী রহ. এর ছাত্র এসেছে। তাদের সাথে বিতর্ক করতে হবে”। আমি তাচ্ছিল্যের ‎সাথে বললাম-“তারা কি করবে? খোদ ইমাম আবু হানীফা রহ. কবর থেকে উঠে এলেও আমাদের সাথে মুকাবিলা করতে ‎পারবেনা। আমাদের সাথে আছে হাদিস। আর তাদের কাছে কিয়াস তথা যুক্তি”। উস্তাদ সাহেব এতে খুব খুশি হলেন। অনেক ‎দু’আ করলেন। একটি প্রচারপত্র দিলেন, যার শিরোনাম ছিল “সারা পৃথিবীর হানাফীদের এগারো হাজার টাকা পুরস্কারের খোলা ‎চ্যালেঞ্জ”। তিনি বললেন-“এই ইশতিহার নিয়ে যাও! তোমার বিজয় অবশ্যাম্ভাবী।
ঈদাগাহ ময়দানে
সেই হযরতদের অবস্থান ঈদগাহ মাদরাসায় ছিল। আমি দেখলাম যে, হযরত মাওলানা আব্দুল হান্নান সাহেবের আশেপাশে ‎বহুত মানুষ। আর হযরত মাওলানা আব্দুল কাদির সাহেবের কাছে কম মানুষ। প্রথম দর্শনেই আমি আন্দাজ করলাম যে, ‎তাদের মাঝে বড় আলেম কে? আমি পিছনের চেয়ারে বসে গেলাম। হযরতের কাঁধ এবং মাথার উপর হাত বুলাতে শুরু ‎করলাম। হযরত আমার দিকে দুই তিনবার তাকালেন। কিন্তু চুপ রইলেন। চতুর্থবার জিজ্ঞেস করলেন-“কি কর?” আমি এই ‎সুযোগেরই অপেক্ষায় ছিলাম। চট করে পকেট থেকে প্রচারপত্রটি বের করে হযরতের সামনে খুলে দিলাম। আর আরজ করলাম ‎যে, ‘হযরত! আহলে হাদিসের লোকেরা আমাকে খুব চাপে ফেলেছে। তারা হাজার টাকা পুরস্কারও ঘোষণাও করেছে। কিন্তু ‎আমাদের ওলামাদের কাছে কোন হাদিসই নাই। আপনি কষ্ট করে তাড়াতাড়ি আমাকে রক্ষা করুন। আর হাদিস লিখে দিন। ‎যাতে এই এগার প্রশ্নের জবাব থাকবে’। হযরত বললেন-“আমি পাঞ্জাবে অধ্যাপনা খুব কম করেছি। আমার উর্দু বেশি ভালনা। ‎মাওলানা আব্দুল কাদির সাহেব পাঞ্জাবে অনেক অধ্যাপনা করেছেন। তার উর্দুও খুব ভাল। তার এই সকল মাসআলায় আগ্রহও ‎আছে। তুমি তার কাছ থেকে বুঝে নাও”। ‎
আমি উঠে হযরত মাওলানা আব্দল কাদির সাহেবের দিকে চললাম। এদিকে হযরত মাওলানা আব্দুল হান্নান সাহেব আওয়াজ ‎দিয়ে বললেন-“ছেলেটা বুদ্ধিমান তাকে ভাল করে বুঝান, আল্লাহর কাছে এই প্রত্যাশা রাখি যে, প্রথম চান্সেই তার থেকে ‎অন্ধকারচ্ছন্নতা বিদূরিত হবে”। হযরতের বলার পর আমার হাত থেকে মাওলানা সাহেব ইশতিহারনামাটি নিলেন। মাওলানা ‎সাহেব ইশতিহার পড়তে ছিলেন আর আমার চোখ ছিল মাওলানা সাহেবের চেহারার উপর। কিছুক্ষণ পরপর ঠোঁটে মুচকি হাসি ‎দেখা দিত। কখনো চেহারায় অসন্তুষ্টির ছাপ পরিলক্ষিত হত। অবশেষে মাওলানা সাহেব পূর্ণ ইশতিহারটি পড়লেন।
নিয়ত
হযরত সর্বপ্রথম এটা বললেন যে, “বেটা! নিয়ত ঠিক করে নাও! যদি কোন ব্যক্তি এই নিয়তে মাসআলা জিজ্ঞেস করে যে, দ্বীন ‎বুঝে আমল করবে, তো মাসআলা জিজ্ঞেস করার জন্য আলাদা সওয়াব পায়। আর এই মাসআলার উপর আমল করার সওয়াব ‎পায় আলাদা। আর যদি কোন ব্যক্তি এই নিয়তে মাসআলা জিজ্ঞেস করে যে, খারাপ ও ফিতনার জন্য হয়, তাহলে মাসআলা ‎জিজ্ঞেস করা ও ফিতনার গোনাহ আলাদা আলাদা পায়। আমিতো এই নিয়তে তোমাকে মাসআলা বুঝাব যে, এতে ‎একনিষ্টভাবে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টিই উদ্দেশ্য থাকবে। এতটুকুই যথেষ্ট”। আমি বললাম-“আমিও আল্লাহ তায়ালাকে সন্তুষ্ট ‎করার জন্যই বুঝতে চাই”।
দলিল দেয়া কার জিম্মায়?‎
হযরত বললেন-“এই ইশতিহারে অনেক ধোঁকাবাজি আছে। কিন্তু মাওলানা সাহেবের ধোঁকা মাওলানা সাহেবই বুঝতে পারে। ‎সবাই এটা বুঝতে পারেনা। যদিও ইশতিহারের লেখক নিজেকে আহলে হাদিস দাবি করেছে, কিন্তু সে মূলত হাদিস ‎অস্বিকারকারী। কেননা প্রসিদ্ধ হাদিসে এসেছে যে, রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন যে, ‎البينة على المدعى ‏‎ অর্থাৎ “দলিল হল ‎দাবিকারীর জিম্মায়” দুনিয়ার সকল আদালতে সর্বদা বাদির কাছেই দলিল চাওয়া হয়। আর এই এগার মাসআলায় বাদি হল ‎গায়রে মুকাল্লিদরা। সুতরাং দলিল দেয়া তাদের জিম্মায় আবশ্যক। কিন্তু নিজের দুর্বলতার উপর পর্দা ঢাকার জন্য আমাদের ‎জিম্মায় তা প্রয়োগ করার অপচেষ্টা করছে। এর একটি উপমা দেখ-‘রাফেজীরা আযানের শব্দে কিছু অতিরিক্ত শব্দ বলে, যেমন ‎তারা বলে যে, আশহাদু আন্না আলিয়্যান অলীআল্লাহ….’ এখন আমাদেরতো এই অধিকার আছে যে, তাদেরকে এই প্রশ্ন করা ‎যে, “আপনারা কোন আয়াত বা হাদিস কিংবা কমপক্ষে হযরত আলী রা. থেকে এই সকল শব্দ প্রমাণিত তা দেখান”। কিন্তু ‎কিয়ামত পর্যন্ত তারা তার প্রমাণ দেখাতে পারবেনা। তারা তাদের মুর্খ লোকদের ধোঁকা দেবার জন্য এই প্রশ্ন বানায়, যেমন এই ‎গায়রে মুকাল্লিদরা বানিয়েছে। গায়রে মুকাল্লিদদের মত যদি এরকম প্রশ্ন বানানো হয় যে, “সারা দুনিয়ার গায়রে মুকাল্লিদরা ‎এক হয়ে একটি সহীহ সুষ্পষ্ট, মারফু’ এবং গায়রে মাজরুহ এমন হাদিস উপস্থাপিত করুক, যাতে হুজুর সা. অথবা হযরত আলী ‎রা. আজানের মাঝে অতিরিক্ত বাক্য সংযোজিত করতে নিষেধ করেছেন?” আর নিষেধাজ্ঞার হাদিস দেখালে এক লাখ টাকা ‎নগদ পুরস্কার দেয়া হবে মর্মে ঘোষণা দেয়া হয়! তুমি তোমার উস্তাদ থেকে এরকম হাদিস লেখিয়ে নিয়ে আস। নতুবা শিয়া ‎মতবাদ সত্য আর গায়রে মুকাল্লিদদের মতবাদ মিথ্যা একথা মেনে নাও। ‎
কি সারা দুনিয়ার সকর গায়রে মুকাল্লিদরা মিলে একটি হাদিসও দেখাতে পারবে এ ব্যাপারে?”‎
আমি বললাম-“আমরা কেন হাদিস দেখাব? যারা এই বাক্যগুলি অতিরিক্ত দেখাচ্ছে তারা তাদের প্রমাণ দেখাবে। এটাইতো ‎যৌক্তিক। আমাদের নিষেধাজ্ঞার হাদিস তাদেরকে দেখানোর কি প্রয়োজন? এই প্রশ্নটিতো কেবলি একটি ধোঁকা।”‎
তিনি বললেন-“তাহলে রফয়ে ইয়াদাইন তোমরা কর, আর আমাদের কাছে নিষেধাজ্ঞার হাদিস চাওয়াটাও তেমনি একটি ‎ধোঁকা। দেখ! কুরআন পাকের প্রথম সূরা ফাতিহা। এরই নাম উম্মুল কুরআন তথা কুরআনের মা। আর এরই মাঝে অনেক ‎বিবাদ। কেউ ‎فاتحة على الطعام‎ তথা ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্য খানা পাকিয়ে মানুষকে খানা খাওয়ানোর সময় ফাতিহা পড়া ‎নিয়ে ঝগড়া করে। আর কেউবা ‎فاتحة خلف الإمام‎ তথা ইমামের পিছনে ফাতিহা পড়া নিয়ে ঝগড়ায় মাতে। ‎
মৌলিকভাবে ফাতিহার ক্ষেত্রে দু’টি মাসআলা। একটি হল মাসআলায়ে তাওহীদ তথা একত্ববাদের বিষয়। অন্যটি মাসআলায়ে ‎তাক্বলীদ তথা অনুসরণের বিষয়। ফাতিহা আলা তয়ামদের তাওহীদ ভাল নয়। আর ফাতিহা খালফাল ইমাম দলের তাক্বলীদ ‎ভাল নয়। অর্থাৎ ফাতিহাকে মানার মত মন এই দুই দলের কারো নেই”।
তারপর তিনি আমাকে প্রশ্ন করলেন-“আচ্ছা! যদি তোমার বিতর্ক ফাতিহা আলাত তয়াম গ্রুপের সাথে হয়। সে সময় যখন তুমি ‎তাকে প্রশ্ন করবে যে, ‘ঈসালে সাওয়াবের নিয়তে খানা পাকিয়ে ফাতিহা পড়ার উপর হাদিস নিয়ে আস’। তখন কি তাদের এই ‎প্রশ্ন করার অধিকার থাকবেনা যে, ‘সারা দুনিয়ার গায়রে মুকাল্লিদরা মিলে শুধুমাত্র একটি সহীহ সুষ্পষ্ট, মারফু’ এবং গায়রে ‎মাজরুহ এমন হাদিস উপস্থাপিত কর, যাতে হুজুর সা. বিশেষ করে ঈসালে সাওবাবের নিয়তে খানা সামনে রেখে ফাতিহা ‎পড়তে নিষেধ করেছেন। বিশেষভাবে এটা করতে নিষেধ করেছেন এই মর্মে হাদিস দেখাতে পারলে এক লাখ টাকা নগদ ‎পুরস্কার দেয়া হবে’। এরূপ হাদিস কি তুমি দেখাতে পারবে?”‎
আমি বললাম-“আমাদের কাছে নিষেধাজ্ঞার হাদিস কেন চাইবে?”‎
তিনি বললেন- “কি শুয়াইব আ. এর জাতির মত তোমাদের নেবার বাটখারা একটি। আর দেবার বাটখারা অন্যটি সাব্যস্ত ‎করলে নাকি? হুজুর সা. এর ফরমান কি মনে নেই যে, ‘তোমরা নিজের ভাইয়ের জন্য তা’ই পছন্দ কর যা নিজের জন্য পছন্দ ‎কর’”।!‎
পরবর্তি লিখা-আমি যেভাবে হানাফী হলাম (শেষ পর্ব) 
http://jamiatulasad.com/?p=685

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন