.সুনামগঞ্জে মসজিদের ওপর বজ্রপাতে নিহত ১৩ ,বজ্রপাত থেকে বাছার উপায়

বাংলাদেশের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় জেলা সুনামগঞ্জের একটি গ্রামে এক অস্থায়ী মসজিদের উপর শুক্রবার রাতে বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন ওই মসজিদের ইমামসহ ১৩ জন মুসল্লি।

বাংলাদেশে প্রতিবছর বহু মানুষ বজ্রপাতে নিহত হবার ঘটনা ঘটলেও ঘরের মধ্যে থাকা অবস্থায় বজ্রাহত হবার ঘটনা খুব একটা দেখা যায়না।

সম্পর্কিত বিষয়

• বাংলাদেশ

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেকোনো ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে বজ্রনিরোধক ব্যবস্থা গ্রহণের একটা বিধান থাকলেও বাংলাদেশে আজকাল তা খুব একটা মেনে চলা হচ্ছে না, যার ফলাফল এই প্রাণহানির ঘটনা।
ঘটনাটি ঘটে শুক্রবার রাতে, বাংলাদেশে চলমান রমজান মাস উপলক্ষে রাতের বেলা, তারাবির নামাজ বলে পরিচিত মুসলমানদের বিশেষ প্রার্থনা চলাকালে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলার সরস্বতীপুর গ্রামের ওই মসজিদ, মূলত অস্থায়ী একটি টিনের ছাউনি দেওয়া ছাপড়ার ঘর।
বিবিসির সঙ্গে আলাপকালে একজন প্রত্যক্ষদর্শী খোকন মিয়া জানান, তারা জনা ত্রিশেক মানুষ তারাবির নামাজ পড়ছিলেন এবং এরই এক পর্যায়ে বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে।

"ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখলাম মসজিদের ছাদে আজান দেবার জন্য যে মাইকটি রয়েছে সেটির তার পুড়ে গেছে এবং আমার ধারণা ওই মাইকের ওপরেই বজ্রপাত হয়েছে।"

খোকন মিয়া, প্রত্যক্ষদর্শী

মিস্টার মিয়া আরো বলছেন, ‘ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখলাম মসজিদের ছাদে আজান দেবার জন্য যে মাইকটি রয়েছে সেটির তার পুড়ে গেছে এবং আমার ধারণা ওই মাইকের ওপরেই বজ্রপাত হয়েছে।‘
ধরমপাশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম বলেন, বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই দুজন মারা যায়, হাসপাতালে নেবার পর আরো ১১ জন মারা যায়, এছাড়া ছয়জনকে হাসপাতালে চিকিতসা দেয়া হচ্ছে যাদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশংকাজনক।
মূলত: মেঘের মধ্যে উচ্চমাত্রায় যে ইলেকট্রিক চার্জ জমা হয়, তার পরিমাণ বেশি হয়ে গেলে তা বাতাসের মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠে চলে আসে এবং সবচেয়ে কাছের বস্তুটিতে আঘাত করে, যা বজ্রপাত নামে পরিচিত।
এই বজ্রপাতের আঘাত থেকে ভবন বা ঘরবাড়িকে রক্ষা করার প্রচলিত উপায় হলো বজ্রনিরোধক দন্ড ব্যবহার করা, যেটি মূলত একটি সূচালো ধাতব দন্ড এবং সেটির সূচালো প্রান্তের উচ্চতা ভবনের উচ্চতা থেকে বেশি হবে এবং অপর প্রান্ত তামা বা যেকোনো বিদ্যুত সুপরিবাহী তার দিয়ে যুক্ত থাকবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থবিজ্ঞান ও ইলেকট্রনিক্স বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আদনান কিবার বিবিসিকে বলেন, একসময়ে বাংলাদেশের ভবনগুলোতে স্বাভাবিক নিয়মে এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের প্রচলন থাকলেও এখন তা ব্যাপক হারে কমে গেছে।

"খরচ কমানোর জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এখন বেশিরভাগ উঁচু দালান কিংবা ভবনেই দেখা যায়না বজ্রনিরোধক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে।"

ডঃ আদনান কিবার, ফলিত পদার্থবিজ্ঞান ও ইলেকট্রনিক্স বিভাগের চেয়ারম্যান

‘খরচ কমানোর জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এখন বেশিরভাগ উঁচু দালান কিংবা ভবনেই দেখা যায়না বজ্রনিরোধক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে।’
ড. কিবার আরো বলছেন, গ্রামের দিকে টিনের ঘরবাড়িতে বজ্রপাত কম হয়, কারণ আশপাশে অনেক গাছপালা থাকে। এসব জায়গায় নতুন একতলা ঘরবাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে বজ্রনিরোধক ব্যবস্থা যদি না নেওয়া যায় তাহলে আশপাশে অনেক গাছ লাগাতে হবে।
বাংলাদেশে প্রতি বছর বজ্রপাতে বহু মানুষ হতাহত হবার ঘটনা ঘটে।
এ ধরণের সব খবর সবসময় জানাও যায় না।
তবে ক্যনাডার জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক একটি তথ্যকেন্দ্র, ক্লাইমেট চেঞ্জ কানেকশানের একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে বজ্রপাতের ঘটনা ক্রমেই আরো ঘন ঘন ঘটান প্রবণতা বাড়ছে এবং এর বিধ্বংসী ক্ষমতাও উত্তোরত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।

http://www.bbc.co.uk/bengali/news/2012/08/120811_mb_bd_lightning_deaths.shtml